মার্চ ২০২১
কবিতা
কবিতা
দেবাশিস পট্টনায়েক
জন্ম ১৯৬৭ সালে মেদিনীপুর জেলার (বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুর) তমলুক মহকুমায়। চাকরি সূত্রে দিল্লী নিবাসী, গবেষণা ও অধ্যাপনায় নিযুক্ত। কবিতা লেখা শখ।
ভাটিয়ালি গান
পাশাপাশি, জলের ধারে, খুব কাছে -
নদীর দিকে মুখ করে তুমি, তোমার দিকে তাকিয়ে আমি।
ভেসে আসছে তোমার থেকে বেলফুলের গন্ধ,
আর খুব চেনা প্রেম-পর্যায়ের একটা রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর।
নেচে বেড়াচ্ছে গাছের উপর পাগল দুটি পাখি,
মনের রঙ চুরি করে অকারণে ঝরে পড়ছে কৃষ্ণচূড়া।
আটকে পড়া ফুলের দলকে সরিয়ে দেওয়ার অছিলায়
খেলছে খোলা চুল নিয়ে আমার পথহারা আঙুল.
মনের তরঙ্গের দোলাতে থমকে দাঁড়ানো গানের কলি,
নদীর জলে, কুন্তলে রোদের ছটা, নত মুখে অস্ফুট হাসি।
এলোমেলো হয়ে উড়ছে কথা মনের ঝোড়ো হাওয়ায়,
সময়ের ধারা বয়ে চলেছে নীরবতার দাঁড় টেনে।
লোভীর মতো জোয়ারের জল ছুঁতে চাইছে তোমার পা,
ছুঁড়ে মারলাম এক টুকরো পাথর প্রতিদ্বন্দ্বীর উদ্দেশ্যে,
নদী এমনি বয়ে গেল, ঢেউ উঠল আমার মনে।
সাহসের দেউড়ি পেরিয়ে রাখলাম হাত তোমার হাতে,
সলাজ অনুমতি মুখ ঘুরিয়ে আরক্ত চোখের উপর চোখ রেখে,
হারিয়ে গেল দৃষ্টি ওপারের ঘন সবুজ আভায়।
জলের কুল-কুল, ঝাউয়ের শনশন, মৌমাছির গুনগুন -
বকুলের গন্ধে মাদক চৈতালী হাওয়া;
খেয়ার নৌকা মুখর অচেনা যাত্রীর কলরোলে।
মন্দিরে পূজার ঘণ্টায় কি যেন আকুল মিনতি -
ঢেকে যাক রুষ্ট রোদ, থেমে যাক চঞ্চল বেলা,
নীল আকাশে উড়ন্ত গাংচিলের সোনালী ডানায়।
সারথী
মেলেনি ক্লেশিত ডানার অধিকার,
বহু শত বছরের উপেক্ষা,
রক্ত শোষণ,
উপেক্ষিত সাম্যের দাবি,
পেষিত বিবর্তনের চাকায়;
বহুরূপী চায়নি রাজার কাছে
দুপা জমি ওদের জন্য।
চিনতে পারিনি অবতারের রূপ
ধূলার মাঝে।
সেই কবে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে
দুর্গম মরুভূমি অতিক্রম করে
বাঁধা পড়েছিলাম শস্যের বাঁধনে,
ধীরে ধীরে অনুশাসনের শৃঙ্খলে,
অবশেষে আবদ্ধ
ধূসর পিঞ্জরের মায়াজালে।
হারিয়ে ফেলেছি সংগ্রামের মনোবল,
শরীর শুধু ব্যস্ত
আগুন নেভানোর কাজে।
তবুও থামতে দেয়নি রথের গতি,
অসংবেদনশীল সাথীকে নিয়ে
মাথা নিচু করে আত্মগোপনের ছলনায়
দক্ষ নিপুণ হাতে
লাগাম ধরে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল
সভ্যতার রথ, রণভূমির মধ্য দিয়ে
মহাকালের দিগন্ত রেখার পানে।
আজ যখন ঝড় উঠল,
ডমরু বাজিয়ে শুরু হল
মহারুদ্রের প্রলয় নাচন,
অদৃশ্য আণুবীক্ষণিক শক্তিশেল
আঘাত হানল জীবন দ্বারে -
নেচে উঠল উষ্ণ শোণিত
ঘনশ্যামের শিরায় শিরায়,
বাজিয়ে পঞ্চাজন্য
রথ ছেড়ে নেমে দাঁড়াল পথে,
রুদ্রের নাচের তালে তাল মিলিয়ে
সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে
পদক্ষেপ পিছন পানে।
দৃঢ় প্রতিজ্ঞা,
কোদাল কাস্তের ছোঁয়ায়
আবার আঁকতে হবে সবুজের ছায়া,
ধরিত্রীর জঠরে।
চয়ন করতে হবে বিশল্যকরনি,
লাগাতে হবে প্রলেপ
মানবতার ক্ষতস্থানে।
দুখের মেঘ ভেদ করে
উদিত হবে আসার সূর্য;
মানব গঙ্গাধারা
উচ্ছল কলস্রোতে রবে প্রবহমান;
উড়িয়ে জয়ধ্বজা
স্থাবর বিবর্তনের রথ
আবার গতিশীল হবে
হয়তোবা নূতন পথ ধরে।
বাণিজ্য
লিখব একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা
মনে জোয়ার এনে,
তোমার সান্নিধ্য, তোমার ছোঁয়া,
যদি থাকে দিনে রাতে।
যদি দাও যুদ্ধের সাজ,
কেড়ে নাও ভয় আলো হারানোর,
বন্দুকের বাণীতে শত্রু শোণিতে
লিখে দেব প্রেমের জয়।
বৈশাখের রোদ শরীরে মেখে,
শ্রাবণের ধারা বুকে পেতে,
হাল কষবো -ছড়াব ফসলের বীজ,
তুলির ছোঁয়ায় আঁকব
নীল আকাশ -ঘন সবুজ বন,
ঝরিয়ে দাও যদি
শুকনো পাতা ঝড়ের হাওয়ায়।
সাজাবো মনের রঙে,
দেব আভরণ সকল সঞ্জয়ের,
যদি এঁকে দাও স্নেহ চুম্বন
তপ্ত কপালে আমার।
ভাটার টানে পাল তুলে,
ভাটিয়ালি গান গেয়ে
যেতে পারি সঙ্গমে,
ভরিয়ে দাও যদি
আমার ছোট্ট ভেলা
শুধু সাদা ফুলে।
হাত ধরে নিয়ে যাও যদি
দূর আদিগন্ত ফেনিল সলিলে,
শোনাও যদি ঘুম পাড়ানি গান,
চার বেহারা পালকির সুর,
হাসব বিজয়ীর হাসি
সব হারানোর গর্বে।
মানসী
তুমি আমার -
বকুল ছায়ে নিদাঘ দুপুর,
নিশীথ রাতে নিদ্রাহারা
অচিন পাখি বেদনা মুখর।
তুমি আমার -
সুরঞ্জনা মনের সাদা খাতায়,
রুদ্ধ দুয়ার, ঘূর্ণি আবেগ,
নীরব বাণীর দীর্ঘশ্বাস কবিতায়।
তুমি আমার -
গোপন চিঠি, অলখ ব্যথা,
নিঝুম রাতে স্বল্প আলোয়
আশ না মিটা চোখের ক্ষুধা।
তুমি আমার -
একলা পথের গুনগুন
পাঁপড়ি বোজা গানের কলি,
চৈতী হাওয়ায় মনের দোলন।
তুমি আমার -
সুরভি ভরা কুহেলী সকাল,
শিশির ভেজা স্নিগ্ধ মলয়
হিন্দোলিত দোলন চাঁপা ফুল।
তুমি আমার -
তপ্ত মরু শরীর পরে
নীলাঞ্জনা বাদল ছায়া,
বিন্দু বারি চাতক নীড়ে।
তুমি আমার -
পদ্মদীঘি অতল গহীন,
বুকের মাঝে সাঁতার কাটা
ইচ্ছা কোরক অসিত গোপন।
তুমি আমার -
কাজল আঁখি অশ্রু মেদুর,
মুক্ত কবরী অভিমানী মেঘ
অবুঝ নীরব বৃষ্টি অঝোর।
তুমি আমার -
যাত্রা বেলায় থমকে যাওয়া
কি যেন হায় ভুল,
দুয়ার থেকে ফিরে আসা -
মৃদুল চুম্বন প্রেমের।
সবুজ দ্বীপের আহ্বান
ও বন্ধু রে-
তোর মনের ফাগুনি হাওয়ায়
আশার পাল উড়াইলাম
উথাল -পাথাল জীবন দরিয়ায়।
ভাঙা আমার পারের তরী
আঁধার ঘেরা দুই কিনারা
দিতে হবে পাড়ি স্মরি ভবের কান্ডারী।
ও বন্ধু রে -
মনের খামে যখন হে নূতন দিলি নিমন্ত্রণ
দেহের বীণার প্রতিটি তারে তারে
উঠল বেজে মধুর মধুর ভাটিয়ালি গান।
ছিন্ন পালে লাগল বুঝি রঙের ছোঁয়া
মাঝি হেঁই সামালো, হেঁই সামালো
কালস্রোতে এই অবেলায় তরী বাওয়া।
ও বন্ধু রে -
অতল সাগর আবেগ জোয়ার,
বারে বারে দেয় যে হানা
রাশি রাশি ঊর্মি অলীক ব্যথার,
টলমল এ ছোট্ট তরী,
যত অলখ স্বপন তোর লাগিয়া
সে যে হাল, সে মোর পারের কড়ি।
ও বন্ধু রে
তোর মুখের অরূপ হাসি
তিমির মন আকাশে
জোছনা হয়ে সদাই পরকাশি।
কাজল কালো চোখের পারা
মমতা মাখা অমিয় ভরা
হিয়ার মাঝে ভাসে হয়ে নীল ধ্রুবতারা।
ও বন্ধু রে
ছড়িয়ে দে তোর মনের সুবাস
উড়িয়ে দে তোর প্রেমের আঁচল
লাগুক প্রাণে তোর সুরেরই পরশ।
জীবন নদে খুশির দোলা
মরমে মরমে মায়ার বাঁধন
বাঁধুক নগর আমার ভেলা -
তোর সবুজ মনের চরে।।
স্মৃতি ও নীড়
আলো আঁধারী সকাল,
হাওয়ার গলা জড়িয়ে
আবেশে নিদ্রামগ্ন শীতলতা।
আকাশে সাদা রেখা -
বক পঙক্তি নীড় ছেড়ে
অনির্দেশ্য খাল বিলের পানে।
সুর সাধার আগে
গলা ভিজিয়ে নিচ্ছে কোকিল
পাকা বকুলের রসে।
পুকুর ঘাটে আনমনে
ছাই দিয়ে বাসন মাজছে
খড়ের লুটি হাতে
এলোকেশে নবোঢ়া বধূ।
পোষা হাঁস মুনিয়া
চরে বেড়াচ্ছে আপন মনে।
খাঁচায় বাঁধা হাঁস দুটো
ব্যথায় ছটপট।
লাঙ্গল ধরা কড়া পড়া হাত,
সারাদিনের জমে থাকা আগুন,
রাতে হ্যারিকেনের আলো নিভতেই
দপ করে জ্বলে উঠে।
ঝলসে যাওয়া শরীরে
ঘামের জ্বালা ঘুম চাতক চোখে
খুলে দেয় স্মৃতির জানালা।
‘চৈ চৈ, মুনিয়া, আয় আয়’ -
হাঁস ধরার নামে খালের ধারে
বকুল তলায় সন্ধেবেলা;
সযত্নে গাঁথা হিজল ফুলের মালা,
নীরব প্রত্যয় ভরা চোখ;
দুটি কম্পিত হাত অন্ধকারে
খুঁজে বেড়ায় ভীত কোমল হাঁস।
তড়িৎ শিখা -
উন্মুক্ত আবেগের গিরিমুখ,
অনাবিল সুখের আবেশে
থর থর শরীর
ডানা মেলে মেঘের দেশে।
'পোড়ামুখী, ওলাউঠি,
নম করবি না হরি মন্দিরে?!'
মুনিয়াকে জড়িয়ে ধরে
লজ্জা জড়ানো পা,
মনে শিহরন,
মন্দিরে সন্ধ্যা আরতির ঘণ্টা।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ,
বিধির বিধান -
এক রাস্তা কারখানার কড়িকাঠে,
অন্য রাস্তায় হলুদের ছিটে।
গোধূলি বেলায় নীরব দীর্ঘশ্বাস
বকুলের পাতায় পাতায়।
ধান সেদ্ধ করার হাঁড়ি
সামনেই জলে ডোবানো,
কোমরে জড়ানো গামছা -
হাতে মুনিয়ার ছোঁয়া,
ব্যথার মলম।
চোখের জলে সিক্ত হাত
করুন বেদনায় মুনিয়ার গায়ে।
প্যঁক প্যঁক -
'এই যাস কুথায়!'
লেজ নাড়িয়ে মুনিয়া
দূরের ঘাটের পানে
নূতন বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে।
গাছের ফাঁকে আলোর উঁকি,
পাতার আড়ে বৌ কথা কও।
ধোয়া বাসন হাতে
রাস্তায় বিছানো হিজল ফুল মাড়িয়ে
ঘোমটা টেনে
ঘরের পানে বধূ।
গান্ধারীর প্রতি পত্রালিকা
জানতে ইচ্ছে করে
কেমন লেগেছিল
স্বেচ্ছা অন্ধত্ব?
ঘন তমিশ্রায়
দীর্ঘ বন্ধুর পথ
অতিক্রম করা!
মনে কি হয়নি
এ যেন একাকী পথ হাঁটা
ঘন জঙ্গলের রাস্তায়!
প্রতিটি পদক্ষেপে
ওঠেনি কি বুক গুমরে -
এই বুঝি ঝাঁপিয়ে পড়ল
তীক্ষ্ণ দন্তক হিংস্র শ্বাপদ
ডাইনে, বাঁয়ে, সামনে,
বা পেছন থেকে!
কি করে অতিক্রম করলে
এ দূর্গম জীবনপথ
মাথা উঁচু করে হেঁটে?
তোমার মত
আমিও অন্ধকারের পথিক;
অন্ধকার বরণ করেছিলে তুমি,
আমি নিক্ষেপিত অন্ধকূপে।
চার দিগন্তে অন্ধকারের কালি,
নেই কোন আলোর রেখা
চোখের সামনে।
জীবন নদের চরে
পথহারা পথিক,
যেতে হবে মোহনার বাঁকে।
হাতড়ে হাতড়ে হোঁচট খেয়ে
অনির্দিষ্ট পথে চলতে চলতে
মনে হয় যেন কোন
মায়াবিনী মরীচিকার মোহে
পথভ্রষ্ট ঘুরপাক খাচ্ছি
একই বৃত্ত পথে।
সময়ের জালের ফাঁকে
রঙিন প্রজাপতিরা
পাখনায় মেখে ফাগের রঙ
কখন হারিয়ে গেছে চুপিচুপি!
বর্ষণ শেষে
সোনালী আলোয় ঝিকিমিকি মুক্তো
কদম্বের বুক থেকে
ঝরে গেল বুঝি একে একে!
ঝাউয়ের পাতায়
দীর্ঘশ্বাসের ঢেউ
তুফান হানে বুকে,
হাবুডুবু খাই
চাঁদ সওদাগরের মত।
সকল সঞ্চয় হারানোর ব্যথা,
তার থেকে বেশি
না হারিয়ে যেতে পারার ব্যথা
উত্তাল বিশাল অন্ধকার
সমুদ্রের মাঝে।
উড়ে আসা সুবাসের পানে
হাত বাড়াতে গিয়ে
সংশয়ে থমকে যাই -
আত্মগোপন করে নেইতো
বিষধর কাল সর্প
ভেসে আসা শতদলে!
পশ্চিমের ঝঞ্ঝাকে
সমাহিত করে মনে
জ্বলালে ত্যাগের দিব্য জ্যোতি;
যুগ, কাল অতিক্রম করে
তার স্নিগ্ধ শিখা
ভারতের ঘরে ঘরে
আজও নীরবে জ্বলে
অদৃশ্য কালো কাপড়ে বাঁধা
ভাষাহীন আঁখির পলে।
ইচ্ছা, অনিচ্ছা, ত্যাগের
সূক্ষ্ম গন্ডির বাইরে
শুষ্ক, নিরুপায়, অপলক
মনের আয়নার হিম শীতলতায়
মাথা কুটে মরে
স্বপ্নের আগুন।
তোমার মত কি তারা পারেনা
একবার, শুধু একবার
চোখ খুলে তাকাতে!
স্নেহ কাতর মায়ের
কল্যাণ প্রলেপ আঁকতে নয়;
বিদ্যুতের আঘাত হানতে,
উড়িয়ে দিতে কালো কুয়াশা,
জ্বালিয়ে দিতে
ওই ছদ্মবেশীদের,
যারা খেলা করে
অন্যের ভাগ্য নিয়ে
দেবতার দোহাই দিয়ে।
নিশীথ অভিসারিণী
ঝিলের নীলে চাঁদনি খেলে,
শশীর খেয়া ইন্দুলেখা,
মৃদুলা গামিনী কুহকী যামিনী।
মৌমিতা ঝুমে মহুয়া চুমে,
কানন দোলে হাওয়ার তালে।
ডাকিছে ডাহুক, কাঁদিছে চাতক,
মত্ত দাদুরী, মদির বিভাবরী।
তুলির ছোঁয়া অলীক কায়া,
কুহেলী কবিতা নিশীথ ঈশিতা ।
বসি একাকিনী ভীরু কামিনী
হিজল কোলে ঝিলের নীলে ।
নীলাঞ্জনা, মৃগ নয়না,
কাহার দুহিতা চম্পক শোভিতা!
কুঞ্জিত কুন্তল, কুমুদ কুন্ডল,
কুমকুম চর্চিতা তনু ললিতা,
সুচন্দ্র্রা, মৌন পারমিতা ।
মন কস্তুরী হয়েছে অভিসারী,
আঁখির কাজল ছড়ায় আঁচল,
কাহার লাগি আজ বিবাগী!
মঞ্জু চাঁদ, চাঁদনি দূত
যাচিছে প্রেম, জোছনা কুসুম
লাজুক কপোলে ঝিলের নীলে।
ইচ্ছা প্রজাপতি
পাগল মনের চাওয়া
হয়ে বাদল হাওয়া,
মিথ্যা খেয়ায় শ্রাবণ ছায়া আনে
হরিণ আঁখি কাজলা দীঘির উপর অকারণে।
রাতুল অধর, চোখে সৌদামিনী,
তপ্ত কায়া মরুতে যাচ্ছে বারে বারে হানি।
রিমঝিম রিমঝিম তানে কুন্ডলিত কানে
মন্দ্র মধুর ভাষ - আজ নিভৃত গোপন বরিষণে।
অভিমানীর মৃণাল বাহুর পাশে,
লতায়িত দিঘল কেশের সুবাসে,
মাদল রাগ গোপন অভিসারে
দেহের শিরায় শিরায় নাচবে চুপিসাড়ে।
জানি বৃষ্টি থেমে যাবে,
মেঘের ফাঁকে চাঁদ হাসবে,
আকাশে নয়, বঁধুর কাজল ধোয়া চোখের
তারায় জোছনা শত খুশির !
রামধনুগো তোমার সাতরঙা রঙ ছড়িয়ে দাওনা,
হৃদয় কাননে ফুলের কোরক মেলুক পাখনা।
কবিতা
ডাঃ উজ্জ্বল মিশ্র
আসানসোল, পঃ বঙ্গ
অজানা অসুখবোধ
পিঠময় খোলা চুল কোমর ছুঁয়েছে,
পৌষের বিকেলের শীতমাখা রোদ
জানালার আলপনা পিঠেতে এঁকেছে।
হাঁটুতে রেখেছো মুখ, যতো দুঃখ বোধ।
সে বিষাদ ছড়িয়েছে পৃথিবীর বুকে,
বাতাসেরও নিশ্বাসে, অদ্ভুত সময়।
যে আলো মাখানো ওই আকাশের মুখে -
প্রভাহীন, নিষ্প্রাণ কী বিষাদময়।
সে আলো মেখেছো গায়ে, মননে ও বোধে।
‘ভালো নেই’ অনুভূতির সংক্রামক জ্বরে -
ভেঙে চুরে বসে আছো বিকেলের রোদে।
অজানা অসুখবোধ গভীর শিকড়ে।
কবিতা
ভাস্বতী মন্ডল
সোনারপুর, কলকাতা
দূষণ
পরাধীন হচ্ছে মনন–
বাড়ছে স্বৈরী রিপুর শাসন;
জঞ্জালের কায়েমে মানসপুরী:
দুর্গন্ধে বন্দী মনুষ্যত্ব
হারাচ্ছে মানবিকতায় কর্তৃত্ব;
মানসিকতা কুড়চ্ছে কলুষের নুড়ি।
ধরছে ফাটল মানসপুরীর প্রাচীরে,
উপচে পড়া আবর্জনার ভীড়ে–ওই ছুটে আসছে ওরা, আলেয়ার দল!
ছোঁয়াচে রোগ, ছড়াচ্ছে ওদের উল্লাসে;
নামছে ত্রাস সমাজের চারপাশে!
সংসার শীর্ণ হচ্ছে, হারাচ্ছে বল।
জমছে পাঁক পৃথিবী জুড়ে;
উঠে আসছে কীট পাতাল ফুঁড়ে–
মর্ত্যে পড়ছে নরকের ছায়া!
অসুস্থ আবহ, বিষাক্ত দংশনে;
মুকুলেই নষ্ট পঙ্কজ, মালিন্যের বারণে;
দুনিয়া দমিয়ে বাড়ছে দূষণের দানবীয় কায়া!
কবিতা
সপ্তর্ষি গাঙ্গুলী
খড়দা, কলকাতা
প্রেম প্রতীতি
মনের কোণে আসে করে ভিড়
কুয়াশালিঙ্গনে আবিষ্ট শীতের সেই মনোহর প্রভাতগুলি।
যখন দুজনার অনাবৃত চরণপটে
অবিরত বুলিয়ে যেত কুহেলিসিক্ত তৃণদল এক স্নেহের তুলি।
বর্ণাঢ্য এক জীবনকক্ষে ছিল হর্ষালোকের অবাধ আনাগোনা,
বিষাদের আঁধার কেমনে তারে করল গ্রাস থাক সে উপাখ্যান সকলের অজানা।
কার ছিলো ভুল!? দিলো কে মাশুল!?
মেলেনি কভু সেই সমাধান।
কি নাম দেবে!? ঠুনকো প্রণয়,
পাবে না খুঁজে প্রেমের কোনো অভিধান।
আপন প্রেম পরিহারে অনভিলাষী
যে ছিল এক স্বার্থপর —
অমাবস্যার এক রজনীতে সে
তার ভালোবাসার মাল্যটি করল অন্যের পাত্রে দান।
দিলো তার হৃদয়ে রচিত
স্নিগ্ধ ভালোবাসার অপরূপ রূপের নিঠুর বলিদান।
সুখাবশিষ্টের আচ্ছাদনে ভালোবাসাকে সযতনে মুড়িয়ে শেষ বিদায় জানিয়ে সেদিন সে হয়ে উঠল প্রথম 'পরার্থপর'।
একদিন সহসা মনের অলিন্দে
অগোচরে ঢুকে খুলে দিলে তুমি
অনেকদিনের রুদ্ধ এক বাতায়ন।
তোমার হাতের কোমল পরশে
আজ এক নবীনালোকে সেজে উঠল
আমার তমসাচ্ছন্ন হৃদয়প্রাঙ্গন।
মৃদুল পবন উড়িয়ে জীমূত
ঠিক যেমন ভাঙায় গগনের সুপ্তি
কেশপুঞ্জের অন্তরাল সরিয়ে তোমার
নিদ্রাতুর আনন দর্শন এ যেন এক পরম প্রাপ্তি।
প্রাণের দোসর
চাওয়া পাওয়ার দীর্ঘ যোজন মাঝে,
প্রত্যাশার এই বেহালার তারে বিষাদের সুর বাজে,
হৃদয়ে আজ জমেছে তোমার অনুরাগের এক বালুচর,
বিভেদের মাঝে বলো তবে দেখি কে আপন আর কে পর!
উথাল পাথাল জীবন জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে কল্পনারে,
একদিন ঠিক পাড়ি দেবে মন উজ্জ্বল এক আলোকমিনারে।
সেই আলোকে ঘুচে যাবে জেনো তোমার অতীতের সকল আঁধার,
অভিমানী হৃদয়কে জিগায়েই দেখোনা তুমি বৈ আমি অন্য কাহার!?
সংকোচের বেড়াজাল সরিয়ে; করি তবে চলো প্রণয়পুরী বিচরণ,
চলার পথে কুড়োবো তোমার সকল হারানো মর্যাদার আভরণ।
একে অপরের পাশে থেকে তিলে তিলে গড়ি ভালোবাসার এক অটুট পাহাড়,
সব ব্যবধান মুছে একসুরে তবে গাই 'তুমি আমার, আমি তোমার'।।
স্নেহময়ী মা
টুকরো টুকরো শৈশব স্মৃতিগুলি আজ ভিড় করে আসে মনের ফ্রেমে
পাই না ভেবে ব্যস্ত কর্মসূচীতে তারে কেমনে বন্দী করব পর্যায়ক্রমে!
ভাগ্যতটিনীর প্রবহমান ধারায় ভেসে যেতে যেতে পেয়েছিলাম গিয়ে তোমার গর্ভে নিরাপদ ঠাঁই
ধরিত্রীর আলোয় বিস্মিত নয়ন মেলে প্রথম যারে দেখেছিলাম সে আর কেউ নয়, আমার 'মা'-ই।
বক্ষমাঝের শীতল ছায়ায় রেখেছিলে মোরে আগলে অপার স্নেহসুখে
দিবানিশি তখন হতে না কি ব্যাকুল প্রথম 'মা' বুলিটা শুনতে আমার মুখে!?
সুমিষ্ট এই বুলির মাধুর্যে একদিন হয়ে উঠল এই বসুধা আলোময়ী
জানি না কেমনে শুধিব তোমার অগণিত ঋণ ওগো মমতাময়ী!
সংসার ধর্মপালনে নিবৃত্ত তোমারে প্রত্যহ দেখেছি দিবাশেষে বড় ক্লান্ত
তবু্ কতিপয় পরিজন প্রত্যাশা আর চাহিদার কণ্টকে তোমারে বিঁধতে হয়নি কভু এতটুক ক্ষান্ত।
জীবনে তোমার সকল অবদান ভুলে যেন আজ তোমারই সুখদুঃখের ভাগীদার না হবার হাজারো ছল
অথচ জীবনের ঘোর দুর্দিনেও জানি জীবনসংগ্রামে জয়ী হবার এই 'মা' ডাকটাই একমেবাদ্বিতীয়ম বল।
বিত্তদনুজ
হৃদয় নীরবে সইবে কত
সযতনে তোমাদের নিক্ষেপিত লাঞ্ছনার বাণ যত!
পথের ধার ধরে খসে পড়ে থাকা ফুলের যত পাঁপড়ি
হাতে তুলে ধরে লালন করে দেয় কি বলো কেউ আজ তাদের হারানো প্রাপ্য স্বীকৃতি?
অর্থস্তূপের উদ্ধত আস্ফালনে প্রতিনিয়ত নিষ্পেষিত হতে থাকা
আমারও ন্যায় এমন অগণিত সব জীবন চেয়ে দেখো নিরন্তর চাইছে কেবল একটু নিষ্কৃতি।
অর্থসম্পদমাপক দাঁড়িপাল্লায় শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণায়ক প্রতিযোগীতায় সকলের চোখের তারা যেন আজ হয়েছে এসে স্থির ঐ পাল্লা কার তরফে রয়েছে ঝুঁকে!?
সেই ভীড়ে মাথা খুঁজে পাবে না কেউ আমার ; আমি আপনসৃষ্টি হরণের ভয়ে সন্তর্পণে ঘরের এককোণে বসে আঁকড়ে তারে রেখেছি ধরে নিজেরই বুকে।
যতই করো হেয়; না হয় আমারে এভাবেই দমিয়ে রাখতে চেয়ো,
বিষবিত্তের এই চাবুক বিজলির মতন ঘুরিয়ে যত করবে অন্তরে আমার নির্মম প্রহার
জেনে রাখা শ্রেয় ; সইবে না আর অন্তরাত্মা তোমাদের এই আঘাত,
নীরব প্রতিবাদের ভাষাস্বরূপ বলিষ্ঠ লেখনীতে ততই হতে থাকবে আমার এই অমূল্য কলমটি ক্ষুরধার।
কবিতা
সুব্রত মিত্র
অনুকম্পপ্রবণ পরিধেয়
অগোছালো প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির মাঝে
তোমাকে মিলিয়ে নিতে পারিনি এখনো,
শতবছর পর পৃথিবীর বয়স বেড়ে যাবে
আমি অনীহার প্রকট মাখা
কোন দুর্নিবারের আচ্ছাদনে তোমাকে ঢাকব না কখনো।
পিছিয়ে আসা বালুচর সমুদ্রের কাছে ঋণী থাকে আজীবন
ঋণী থাকে আকাশ মেঘের কাছে প্রাণপণ;
পরিশ্রান্ত পৃথিবীর আমি এক ক্লান্ত পথিক
দুটি মাপকাঠির সমরেখার প্রান্ত হতে
ভিন্ন সমরেখার পাইনি নাগাল; তাই তোমায় পারিনি ছুঁতে
পরিপাটি বলে কিছু নেই আমাতে এখন
এখন নেহাৎ জীবন যাপন সঙ্গ হয় নিত্য
গহীন জলের তলানিতে গিয়েও তৃষ্ণা গ্রহণ অসহ্য
এই অব্যক্ত ভাষার ব্যাপ্তি যদি হয় সমাপ্তি
আমি শিহরণ জাগানো পৃথিবী রেখে যাবো
তলদেশের তলায় চির অপরিণত ভাষায়
মাপবো নিরবধি তোমার মুক্ত বাসনার তৃপ্তি
ক্ষমা করো;ক্ষমা করো; ক্ষমা করো বনলতা,
প্রকাশের পাহাড় এসেও ঠোঁটে
তবু তুমি রয়েছ যতনে হৃদয় কোণে
পৃথিবীর মানুষ বোঝেনি; জানতে চায়নি মোটে,
কলহের সমারোহে কাল হতে কালান্তরে
অস্পৃশ্য দেবতার মতো করে তোমার স্মরণ হয় বারেবারে
আমি কৌতুহল ভেঙে দিলেও প্রশ্নরা ছুটে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে
প্রকৃতির সাথে যেন প্রকৃতির মায়া-লতা চলমান জীবনের ঘূর্ণি পথের বাঁকে
দেখি সেই বনলতা নামক দেবতার অনুভূতিটাকে
এভাবেই হয়ে সুপ্ত থেকো লিপ্ত
আত্মবিলীন পথের সাথী আমিই সেই অভিন্ন প্রদীপ্ত।
কবিতা
মিজানুর রহমান মিজান
বিশ্বনাথ, সিলেট, বাংলাদেশ
নির্মল স্মৃতি
অনুতাপের মালা কণ্ঠে পরে
কত নিশি ভিজে শিশিরে
ভাঙ্গিলাম অনুরাগের প্রাচীর।
দু’হাতে মুছিলাম আঁখি জল
অষ্ট প্রহর ভাবনার ফল
হিসাব মিলাতে গন্ডগোল সুগভীর।
অবিশ্রান্ত কত না কেঁদেছি
আপন করতে শত চেষ্টা করেছি
চেষ্টা বিফল প্রতিফল পাতায় স্মৃতির।
স্বপ্নের জাল বুনি অবিরত
বাস্তবে রূপ দানে মগ্ন সতত
ব্যথার কাটা উপড়ে ফেলে নিষ্ফলা আবির।
জয়ের মালা হল না পরা
শূণ্যতার বইছে শ্রাবন্তী খরা
ভাবান্তর উদাসী স্তূপীকৃত নির্মল স্মৃতির।
অহংকার পতনের মুল
বুঝে না বুঝে নারে ভাই কথার মর্মার্থ
বুঝে বুঝে বুঝেরে ভাই সে-ই যথার্থ।
বুঝে নাতো গাধা, খায় পানি মিশিয়ে কাদা
রসবিহীন যেমন আদা, ফল অনর্থ।
যৌবনে বাহাদুর, রূপের ঝলক সুর
শক্তি কিছুদূর, ক্ষমতা অচিনপুর
সময়ান্তে নেই কোন অর্থ।।
জোয়ার এল, ভাটা হল
ক্ষমতার দাপট গেল, কদর্যতা র’ল
অবশেষ ফলাফল নেই সতীর্থ।।
অহংকার পতনের মুল
ভেবে দেখ নহে ভুল
ঝরে পড়ে বাসি ফুল
বিষণ্ণতায় করে কান্না মর্ত্য।
বিষে অঙ্গ জ্বলে
কষ্টের বুকে ভাসি জলে
বারে বারে দাও গো টেলে
আর যাব কই ছেড়ে দিলে।
তুমি বিনে নাহি আশ্রয়
বিন্দু জলে পাথরও ক্ষয়
অন্যত্রতো নেই যে অভয়
সর্বত্র বিরাজ দেখি চক্ষু মেলে।
ধরার যথাতথা তোমারই একক রাজত্ব
খেয়ে পরে দেখে শুনে সবই সত্য
দুর্বল মারে, অসহায়ের নেই গুরুত্ব
দেখে সহ্য করি দু’হাত তোলে।
লোভ হিংসা স্বার্থের ধান্ধায়
অহরহ নির্মম মিথ্যা নির্যাতন চালায়
বল তুমি ভাল করতে, তবু জলে হিংসায়
নিন্দার কাটা অবিরত বিষে অঙ্গ জ্বলে।
তুমিতো সবারই মালিক
নাম রেখেছ প্রচারে খালিক
তবে কেন ঘুরাও দিক-বিদিক
যতই হোক আশায় আছি আশ্রয় তলে।
স্বপ্নাশা
আর তো নাই কোন আশা
শুধু চাই তোমার ভালবাসা।
দুর করে মনের কালিমা
বাজাতে চাইলাম দামামা
প্রতারণায় ছাড়ায় সীমা
জুলুমে বানায় বেদিশা।
দাও করে মানুষ
ফিরে আসুক হুশ
কিবা ছিল তাতে দোষ
বুঝার তওফিক হারাল বেদিশা।
যাবার ইচ্ছা অনেক দুর
পথের বাঁধায় উঠে না রোদ্দুর
হয়ে দাঁড়ায় মহিসুর
মনের সুখে গাইতে গান স্বপ্নাশা।
ভ্রমণ
সমুদ্রমন্থন
সৌমেন্দ্র দরবার
বাগুইআটি, কলকাতা
কর্মব্যস্ত জীবন। একটু বিরতি হলে মন্দ হয় না। রোজকার অফিসের দিনগত পাপক্ষয়, বসের লাল চোখ, সংসারের প্রাণান্তকর ব্যস্ততা কিংবা পড়শির পি এন পি সি। কি দুর্বিসহ জীবন। মন চায় একটু ছুটি, একটু বিরতি ----- দু - তিন দিন! বনানীর সবুজ, আকাশের নীল আর উত্তাল ঢেউ। সমুদ্র আলিঙ্গন করে বলে "এসো মোর কাছে, একান্ত নিভৃতে", সবুজ ঝাউ হাত নেড়ে বলে "অবগাহন করো মোর রূপ", নির্মল আকাশ ডাক দেয়" ডানা মেলো খোলা হাওয়ায়, হে পথিক"।সবুজের মধ্যে দিয়ে আঁকা বাঁকা রাস্তায় পায়ে পায়ে যেতে যেতে মনে পড়বে ছোট্টবেলার দিনগুলো। রাস্তার দুপাশে প্রজাপতি, মথ শরীর ছুঁয়ে অভিবাদন জানাবে। তাদের কত রং, কি বাহার।
গাছের ডালে নাম না জানা পাখির কুজন মন কে নিয়ে যাবে কল্পলোকে। এরই মধ্যে হঠাৎ পায়ের সামনে কাঠবেড়ালি প্রণাম ঠুকলে বুকটা ভোরে যাবে গর্বে।
দূরে ভোঁ বাজিয়ে ট্রলারেরা পাড়ি দেয় অতল সমুদ্রে। অন্বেষণ শেষ হলে ফিরে আসে রুপোলী মাছের ডালি নিয়ে।
স্থানীয় জেলেদের সরলতা সত্যি মন কেড়ে নেয়। সমুদ্রে গা ভেজানোর আগে সবুজ ডাবের মিষ্টি জল তৃষ্ণা আরো বাড়িয়ে দেবে বই কমবে না।
সমুদ্রতটে ছোটদের বালিয়াড়ি আর ঝিনুক সংগ্রহ মনকে শৈশবে নিয়ে যেতে বাধ্য। বালির ওপর অতি যত্নে লেখা নিজের অথবা প্রিয় মানুষটির নামকে সমুদ্র ভরিয়ে দিয়ে যায় ওষ্ঠের চুম্বনে। সমুদ্রগাহনে পায়ের তোলার ছোট্ট ছোট্ট নুড়িগুলো এঁকে দেয় আদরের রেখা। আদুল গায়ে লেগে থাকে নোনতা তরল, সাক্ষী থাকে উন্মুক্ত আকাশ আর একরাশ ঝাউ।
মৎস্যবন্দরের অবিরাম কর্মব্যস্ততা, দুপুর রোদে মাঠের ধরে জেলেদের জালবোনা কিমবা সমুদ্রে নৌকা বাওয়া আর জাল টেনে তটে তোলা - সে যেন এক অন্য জগৎ। কুলিং টাওয়ারের অবিরাম জলধারায় সূর্যের আলোয় তৈরি রামধনু থেকে চোখ ফেরানো ভার।
ভোরের আবছা আলো আঁধারিতে সমুদ্র থেকে সুয্যিমামার উত্থান অথবা রঙিন বিকেলে সূর্যের বাড়ি ফেরা তুলতে তুলতে ক্যামেরার স্টোরেজ ফুল হয় যাওয়া। পড়ন্ত বিকেলে লাল পাথরের ওপর বসে সাদা ক্যানভাসে পেন্সিল ড্রয়িং নতুবা ডাইরির পাতায় দু কলম কবিতা লিখতে মন্দ লাগবে না!
ঝাউয়ের দোলায় দোল খেতে খেতে নির্জন সৈকতে ভ্রমণকালে গলায় গুনগুন করে উঠতেই পারে "আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি, আর মুগ্ধ হয়ে শুধু চেয়ে থেকেছি"। সন্ধ্যার আলো ঝলমল সমুদ্রতটে উষ্ণ চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে সান্ধ্য ভ্রমণ আর ক্লান্ত হয়ে পাড়ে বসে শুক্লপক্ষের চাঁদের আলোয় রুপোলী ঢেউয়ের অবিরাম আস্ফালন। রাত আহারের পর নির্জন সমুদ্রসৈকতে সমুদ্র গর্জন মন ভালো করার আর এক নৈবেদ্য। মৎস্যবিলাসীদের রসনায় এখানের সমুদ্র জীবেরা সদা দণ্ডায়মান। স্থানীয় মানুষদের সরলতা আর আন্তরিকতায় দু তিন দিন কোথা দিয়ে চলে যাবে বোঝাই যায় না। অমৃত না উঠলেও এ ভ্রমণের স্বাদ মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে দেবে। না এবার বলেই ফেলি গন্তব্য কলকাতার খুব কাছে মাত্র ১৬৬ কিলোমিটার দূরের সমুদ্রতট শঙ্করপুর আপনারই পথ চেয়ে। মনস্থির করে ব্যাগ গুছিয়ে চলুন পাড়ি জমাই দুদিনের নিশ্চিন্ত অবকাশে। সাধ্যের মধ্যে স্বপ্নপূরণ।
পথের ঠিকানা:
দিঘাগামী যে কোনো বাসে বা গাড়িতে ১৪ মাইল। সেখান থেকে বাঁ দিকে ৪ কিলোমিটার। ট্রেনে রামনগর স্টেশন থেকে গাড়িতে, অটোতে বা টোটোতে ১৫-২০ মিনিট।
গৃহের ঠিকানা:
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বেনফিশএর অথিতি নিবাস কিনারা ও তটিনী। ছিমছাম এ সি অথবা নন এ সি ঘর সাধ্যের মধ্যে। অনলাইন বুকিং করে নেওয়াই ভালো। দূরভাষ - ০৩২২০ ২৬৪ ৫৭৭। আর আছে পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য দপ্তরের অথিতি নিবাস মৎস্যগন্ধা। এখানেও এ সি অথবা নন এ সি ঘর সাধ্যের মধ্যে। দূরভাষ - ৮৭৫৯৬২০৩৬৭ বিলাসবহুল থাকতে আছে হোটেল নেস্ট। এছাড়া নিউ শঙ্করপুরে বেশ কয়েকটি সমুদ্র লাগোয়া হোটেল আছে।
রাসনাবিলাস:
ইলিশ, চিংড়ি, পমফ্লেট, পার্শে, ভেটকি - টাটকা তাজা খেতে মজা। চাইলে খেতে পারেন কাঁকড়ার কষা।
কেনাকাটা:
বেশকিছু দোকান আছে সামুদ্রিক গিফট আইটেমের। পকেট পারমিট করলে মন খুলে কেনাকাটা করুন।
ভ্রমণকাল:
সারাবছর
গল্প
মার্চ ২০২১ ।। মতামত ।।