top of page
সূচীপত্র
Saraswati3.jpg
মার্চ ২০২১
girl.JPG

মার্চ ২০২১ ।। মতামত ।। সূচীপত্র

দেবাশিস পট্টানায়েক - কবিতা
Debashis Pattanakye.jpg

কবিতা

দেবাশিস পট্টনায়েক

জন্ম ১৯৬৭ সালে মেদিনীপুর জেলার (বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুর) তমলুক মহকুমায়। চাকরি সূত্রে দিল্লী নিবাসী, গবেষণা ও অধ্যাপনায় নিযুক্ত। কবিতা লেখা শখ।

ভাটিয়ালি গান


পাশাপাশি, জলের ধারে, খুব কাছে -
নদীর দিকে মুখ করে তুমি, তোমার দিকে তাকিয়ে আমি।
ভেসে আসছে তোমার থেকে বেলফুলের গন্ধ,
আর খুব চেনা প্রেম-পর্যায়ের একটা রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর।
নেচে বেড়াচ্ছে গাছের উপর পাগল দুটি পাখি,
মনের রঙ চুরি করে অকারণে ঝরে পড়ছে কৃষ্ণচূড়া।
আটকে পড়া ফুলের দলকে সরিয়ে দেওয়ার অছিলায়
খেলছে খোলা চুল নিয়ে আমার পথহারা আঙুল.
মনের তরঙ্গের দোলাতে থমকে দাঁড়ানো গানের কলি,
নদীর জলে, কুন্তলে রোদের ছটা, নত মুখে অস্ফুট হাসি।
এলোমেলো হয়ে উড়ছে কথা মনের ঝোড়ো হাওয়ায়,
সময়ের ধারা বয়ে চলেছে নীরবতার দাঁড় টেনে।
লোভীর মতো জোয়ারের জল ছুঁতে চাইছে তোমার পা,
ছুঁড়ে মারলাম এক টুকরো পাথর প্রতিদ্বন্দ্বীর উদ্দেশ্যে,
নদী এমনি বয়ে গেল, ঢেউ উঠল আমার মনে।
সাহসের দেউড়ি পেরিয়ে রাখলাম হাত তোমার হাতে,
সলাজ অনুমতি মুখ ঘুরিয়ে আরক্ত চোখের উপর চোখ রেখে,
হারিয়ে গেল দৃষ্টি ওপারের ঘন সবুজ আভায়।
জলের কুল-কুল, ঝাউয়ের শনশন, মৌমাছির গুনগুন -
বকুলের গন্ধে মাদক চৈতালী হাওয়া;
খেয়ার নৌকা মুখর অচেনা যাত্রীর কলরোলে।
মন্দিরে পূজার ঘণ্টায় কি যেন আকুল মিনতি -
ঢেকে যাক রুষ্ট রোদ, থেমে যাক চঞ্চল বেলা,
নীল আকাশে উড়ন্ত গাংচিলের সোনালী ডানায়।

সারথী

মেলেনি ক্লেশিত ডানার অধিকার,
বহু শত বছরের উপেক্ষা,
রক্ত শোষণ,
উপেক্ষিত সাম্যের দাবি,
পেষিত বিবর্তনের চাকায়;
বহুরূপী চায়নি রাজার কাছে
দুপা জমি ওদের জন্য।
চিনতে পারিনি অবতারের রূপ 
ধূলার মাঝে।
সেই কবে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে
দুর্গম মরুভূমি অতিক্রম করে
বাঁধা পড়েছিলাম শস্যের বাঁধনে,
ধীরে ধীরে অনুশাসনের শৃঙ্খলে,
অবশেষে আবদ্ধ 
ধূসর পিঞ্জরের মায়াজালে।
হারিয়ে ফেলেছি সংগ্রামের মনোবল,
শরীর শুধু ব্যস্ত
আগুন নেভানোর কাজে।
তবুও থামতে দেয়নি রথের গতি,
অসংবেদনশীল সাথীকে নিয়ে
মাথা নিচু করে আত্মগোপনের ছলনায়
দক্ষ নিপুণ হাতে 
লাগাম ধরে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল 
সভ্যতার রথ, রণভূমির মধ্য দিয়ে
মহাকালের দিগন্ত রেখার পানে।
 

আজ যখন ঝড় উঠল,
ডমরু বাজিয়ে শুরু হল
মহারুদ্রের প্রলয় নাচন,
অদৃশ্য আণুবীক্ষণিক শক্তিশেল
আঘাত হানল জীবন দ্বারে -
নেচে উঠল উষ্ণ শোণিত
ঘনশ্যামের শিরায় শিরায়,
বাজিয়ে পঞ্চাজন্য
রথ ছেড়ে নেমে দাঁড়াল পথে,
রুদ্রের নাচের তালে তাল মিলিয়ে
সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে
পদক্ষেপ পিছন পানে।
দৃঢ় প্রতিজ্ঞা,
কোদাল কাস্তের ছোঁয়ায়
আবার আঁকতে হবে সবুজের ছায়া,
ধরিত্রীর জঠরে।
চয়ন করতে হবে বিশল্যকরনি,
লাগাতে হবে প্রলেপ 
মানবতার ক্ষতস্থানে।
দুখের মেঘ ভেদ করে
উদিত হবে আসার সূর্য;
মানব গঙ্গাধারা
উচ্ছল কলস্রোতে রবে প্রবহমান;
উড়িয়ে জয়ধ্বজা
স্থাবর বিবর্তনের রথ
আবার গতিশীল হবে
হয়তোবা নূতন পথ ধরে।

বাণিজ্য

লিখব একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা
মনে জোয়ার এনে,
তোমার সান্নিধ্য, তোমার ছোঁয়া,
যদি থাকে দিনে রাতে।
যদি দাও যুদ্ধের সাজ,
কেড়ে নাও ভয় আলো হারানোর,
বন্দুকের বাণীতে শত্রু শোণিতে
লিখে দেব প্রেমের জয়।
বৈশাখের রোদ শরীরে মেখে,
শ্রাবণের ধারা বুকে পেতে,
হাল কষবো -ছড়াব ফসলের বীজ,
তুলির ছোঁয়ায় আঁকব
নীল আকাশ -ঘন সবুজ বন,
ঝরিয়ে দাও যদি
শুকনো পাতা ঝড়ের হাওয়ায়।
সাজাবো মনের রঙে,
দেব আভরণ সকল সঞ্জয়ের,
যদি এঁকে দাও স্নেহ চুম্বন
তপ্ত কপালে আমার।
ভাটার টানে পাল তুলে,
ভাটিয়ালি গান গেয়ে
যেতে পারি সঙ্গমে,
ভরিয়ে দাও যদি
আমার ছোট্ট ভেলা 
শুধু সাদা ফুলে।
হাত ধরে নিয়ে যাও যদি
দূর আদিগন্ত ফেনিল সলিলে,
শোনাও যদি ঘুম পাড়ানি গান,
চার বেহারা পালকির সুর,
হাসব বিজয়ীর হাসি
সব হারানোর গর্বে।

 

মানসী

তুমি আমার -
বকুল ছায়ে নিদাঘ দুপুর,
নিশীথ রাতে নিদ্রাহারা
অচিন পাখি বেদনা মুখর।

তুমি আমার -
সুরঞ্জনা মনের সাদা খাতায়,
রুদ্ধ দুয়ার, ঘূর্ণি আবেগ,
নীরব বাণীর দীর্ঘশ্বাস কবিতায়।

তুমি আমার -
গোপন চিঠি, অলখ ব্যথা,
নিঝুম রাতে স্বল্প আলোয়
আশ না মিটা চোখের ক্ষুধা।

তুমি আমার -
একলা পথের গুনগুন
পাঁপড়ি বোজা গানের কলি,
চৈতী হাওয়ায় মনের দোলন।

তুমি আমার -