top of page
birds.jpg
কবিতা মঞ্জরী - ২
Prithibi
Dwibidha
Bakita
Duratma
Chaya Brittanto
Prayasha Ami
Biswas Karun
Arab Basanta
AnuKobita
Udan
Block Head
Prasthan
Premikake
Saap Khala
Bhanga Biscuit
GroupStudy
Nishsango
Ekushe
Byakti Sadhinata
একটি মেয়ে
ইচ্ছে
তোমার আড়ালে
রাধাচূড়া
খাচার পাখী
তুমি আর আমি
পুকুর ঘাটে
তাই কি হয়
শিক্ষাগুরু
সুখে থাক
স্মৃতির আয়নায় দেখা
আমার শহর

ব্যক্তি-স্বাধীনতা 

- সৌভিক দা' (ধানমন্ডী, ঢাকা, বাংলাদেশ )

 

সংকট-উত্তরকালে পাখিরা উড়ে যাচ্ছে নিম্নমুখী গন্তব্যে

যদিও.. উড়ছে বলে আপাতঃদৃষ্টিতে সেটি বোঝা যাচ্ছে না।

 

পক্ষীকূল! সাবধান!

তোমাদের রঙসর্বস্ব পালকগুলো -

দিন শেষে পড়ে থাকবে ব্যারেন আইল্যান্ডে...

দ্বিবিধ ৩

- সৌভিক দা' (ধানমন্ডী, ঢাকা, বাংলাদেশ )

১। দুরত্ব বজায় রাখি সমানুপাতিক

 

২। দাড়কাকটি কিছুতেই তার গায়ের রঙের

      সাথে অন্য পাখিদের মেলাতে পারেনা

 

৩। সরন ও ত্বরনের সুত্র জানিনা এই প্রাচীন প্রেমিক!

 

৪। মানুষের মধ্যে বাস করে এক গোত্রচ্যুত কাক

 

৫। মনের ভেতর বর্ষা নাই, শুধু শরীরভর্তি ক্ষুধা

 

৬। পরাগরেণুর মত বাতাসে উড়ে আসে

          কীর্তনখোলা নদীর হাহাকার -

 

বাকিটা ব্যক্তিগত

- সৌভিক দা' (ধানমন্ডী, ঢাকা, বাংলাদেশ )

সেইসব দুঃখগুলো এতই ব্যক্তিগত ছিল যে

আমি গোপন করেছি আমার ব্যক্তিগত ডায়েরীর কাছে,

আমার নির্জনতার কাছে,

এমনকি আমার মস্তিষ্কের কাছেও...

 

কিছু ব্যক্তিগত অপমান।

ভুলে যেতে চেয়েছি যে কোনভাবে,

যেন ওরা আমার নয়...

যেন ওরা রাস্তার কোন লম্পট পথচারীর।

 

আমি কিছুতেই বলতে পারিনি সেসব

আমার ফুলেদের কাছে, বৃক্ষ ও পাতাদের কাছে

আমার ব্যক্তিগত দীনতাগুলো

এতই ব্যক্তিগত ছি! …

দূরত্ব

-  রাজকুমার 

ঘুড়িটির মাঞ্জা জুড়ে ক্ষয়
ঘুড়িটির সুতো কেঁটে গেছে
ধসে যাচ্ছে একাকী নাটাই
ঘুড়িটি আর উড়ছে না।

ছায়াবৃত্তান্ত

- রাজকুমার 

একটা হাইব্রিড ভোর পাঠিয়ে দিয়েছেন বৈজ্ঞানিক পরমেশ্বর
এখন ইচ্ছেমত দরজার ওপাশ থেকে নামাতে পারি
সকাল, দুপুর, বিকাল এমনকি লাল টুকটুকে সন্ধ্যাও
সূর্যকে আর দেবতা বলে প্রণাম করতে হয় না।

একটা হাইব্রিড কাগুজে প্লেন উড়িয়ে দিয়েছেন প্রযুক্তিবিদ ঈশ্বর
এখন অনায়াসে পানির উপর কতৃত্ব ফলাতে পারি কুমিরের মত
আকাশে খরগোশ জীবন থ্যাবরানো চ্যাবরানো লৌহ ঈগল
এমনকি ডাঙায় অগ্নি গোলক ওগরাতে ওগরাতে পায়চারি রত মস্ত ডাইনোসরও।

কিছু হাইব্রিড তুলি পাঠিয়ে দিয়েছেন শৈল্পিক পরমেশ্বর
এখন ইচ্ছেমত আকতে পারি বন্ধুর বয়সী মেঘ,
বান্ধবীর বয়সী লজ্জায় লাল হওয়া সাবালিকা রোদ
এমনকি দাদীর বয়সী বুড়ো শ্যাওড়া গাছের ঘুটঘুটে ছায়াও।

শুধু আঁকতে পারিনি আজও নিজের ছায়া
ছায়ার কি নিজস্ব কোন ছায়া থাকে?

প্রায়শঃ আমি

- রাজকুমার 


পারিবারিক চায়ের কাপ থেকে মিশকালো ধোঁয়া উড়ছে।
আমি কি আমার ঘুমের জড়তা গুটিয়ে নেব?
আমি কি আর ঘুমাব না?
যেহেতু আমি শেষ রাত্রে দুঃস্বপ্ন দেখি
সাদা অ্যাম্বুলেন্সের নখরওয়ালা হুইসেলের মতন।

প্রায়শঃ
নিজের ছায়াকে আবিষ্কার করি উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবে
হতবিহবল -
কারন, আমি রাগ বুঝি না;
একটা কালো, কুচকুচে কোকিলের মতন।

বিশ্বাস করুন, আপনিই একটি কবিতা

- রাজকুমার 


মনে করুন, আপনি একটি কাশফুল
আপনার শরীর, সাদা সাদা পালক নামক প্রেমিক তুবড়িতে ভরপুর
আপনার চোখে নূতন বউয়ের মতন রোদ
মনভোলা কুটুম পাখির ঢঙে আপনার শিস।

হাওয়াদের দুষ্টুমির ঢেউ আপনাকে নাড়িয়ে যায়
সূর্যের নির্লজ্জ্ব আলোক-দলা আপনাকে চুমু খায় প্রকাশ্যেই!
আপনাকে একপলক দেখার জন্য উঁকি দেয়ঃ
সারি সারি রপ্তানিযোগ্য ইলিশের চোখ;
তাদের পিছু পিছু সওদাগির বোয়াল মাছ;
মুখ হা করা কালো কুমির;
অদ্ভুত বিশ্রী বেঢপ গোসাপ;
এমনকি দেবতা তুল্য চালাক ডলফিনও।

মনেকরুন, আপনি একটি কাশফুল
আপনার শরীর, পাকা শীতের ভোরের মতন

নাড়ার আগুনের রেখায় ভরপুর।
নাম না শোনা প্রেমিকা আপনাকে হাতের আঙুলে পেচিয়ে রাখে
মিহি করে আদর ছোয়া দেয় স্কুল পড়ুয়া নূতন মেয়ে।


নিকোটিন পড়ায় পাড়ায় আপনি বিক্রি হন স্বস্তির সাথে
চাকুর বসার ঘরে আরামে বসেন -
ফুসফুস ভর্তি করেন অজস্র ফড়িঙের রক্তের জলীয় বাষ্পে। আপনি - হ্যা, আপনিই ঘাসদের ঘোলাটে চোখে শব্দের বাখান খোজেন
বিশ্বাস করুন, আপনার দাম (কেজি প্রতি)মাত্র দশ টাকা।


মনে করুন, আপনি একটি কাশফুল
বিশ্বাস করুন, আপনিই একটি কবিতা।

আরব বসন্ত

- রাজকুমার 


অঙ্কটি সহজ ছিল না............
তবু পাখিরা নাছোড়
পাখিদের ছোট্ট দুটি ডানা
বঞ্চনার ক্ষতে জরজর।


মৃদু চাঁদ টপকে দিয়ে উঁকি দেয় কালো কালো রাত,
তবু জ্যোৎস্নার পিদিম জ্বেলে
ঘুমহীন, রাতজাগা প্রজাপতির মিছিল
কানপাতি, শুনি, বসন্ত আছড়ে পড়ার স্বর।

অনুকবিতা ষষ্ঠক:
- মৌ দাশগুপ্তা, বেলপাহাড়, ওড়িশা 

(১) পরকীয়া
অলিতে ফুলেতে, পরাগে ভ্রমরে, খেলছে প্রেমের খেলা,
নদীতে জলেতে, আকাশে আলোতে, আদিম খুশীর মেলা,
মোমবাতি ভোর, আলোছায়া দিন, ঘুমঘুম চোখ দ্বীপ,
আদম ভেসেছে পরকীয়া প্রেমে, নিজেতে মগ্ন ঈভ।

(২)  পোড়া এ মন
উছলে ওঠে মন খারাপের হাওয়া,
সাঁঝের বেলায় ধুলো মাখা অঞ্চলে,
সময় এঁকেছে উদাসীন আঁকিবুঁকি
পোড়া মন ডোবে ভালোবাসা নদী জলে।

(৩)  সীমান্তে প্রজাপতি
প্রজাপতি অবাধ গতি হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে
দেশ ভাগের কাঁটাতারে যায় কি বাঁধা তারে?
এ দেশ ও দেশ স্বদেশ বিদেশ তুচ্ছ প্রজাপতি
কে রুখবে হাওয়ায় ভাসা স্বাধীন ডানার গতি?

(৪)  জীবন মহীরুহ
শেষ বলে কিছু নেই সময় যাযাবর,
অন্তহীন যাত্রাপথে নেই কোন অবসর।
জীবন মহীরুহ সহে জীবন শোক তাপ,
ভ্রান্ত মনের বনসাই তোলে অপেক্ষায় অবসাদ।

(৫)  রাই
মর ঘন মেঘ রুধেছি দিয়েছি ক্রোধের বাঁধ,
তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে তবু লবন জলের স্বাদ।
আঁধারে বহতি অশ্রু যমুনা একাকিনী আমি রাই,
লোকলজ্জা সমাজ ভীতিতে ইচ্ছেরা বনসাই।

(৬)  আমার গল্প
দুঃখটাকে লুকিয়ে নিলাম আজকে মেঘের ভাঁজে,
ইচ্ছের নীল আকাশ থেকে আনবো পেড়ে সাঁঝে।
সুখ সোহাগের পরাগ রেণু হাওয়ায় এল উড়ে,
গল্প আমার মিশিয়ে দিলাম রূপকথাদের ভিড়ে।

 

 

একটি মেয়ে

-  জ্ঞানেন্দ্র প্রসাদ সরকার, কলকাতা 

 

ট্রেনে উঠেই দরজার ঠিক বাঁপাশে -

একটি মেয়ে, কোলে একটা ছোট্ট বাচ্ছা।

আমি দাঁড়িয়ে অন্যপাশে –

ভিড় কম ।

শিশুটির বয়স হয়তো সাতমাস কি একটু বেশি।

একটা ময়লা সবুজ জামা, উলঙ্গ –

কোমরে একাধিক মাদুলি, তাবিজ।

মেয়েটির পরনেও একটা ময়লা শাড়ি, বসে।

নাবালিকা অনুমানে আশ্চর্য হব না।

আমাদের মত ভদ্রজাতি নয়!

শিশুটি লাফালাফি করছে, হয়তো খিদেয়।

দেখি মেয়েটি স্তন্যপান করায় –

স্তম্ভিত –

নিশ্চয় ইচ্ছামাতৃত্ব নয়,

তবুও তো এখন সন্তান শুধুই তার।

হাজার দুঃখ কষ্ট,

সমাজের সাথে লড়াই –

শিশুটিকে মানুষ করার দায়িত্ব -

শুধুই তার।

তার জন্য কোনো আন্না হাজারে নেই,

কোনো আলোচনা হবে না বিধানসভায়।

তবুও এই মেয়েটি কবিতার বিষয়,

ক্যামেরায় অথবা রং তুলির ছবি।

এগজিবিসনে পুরস্কার,

আবার হয়তো মোটা দাম।

তৈরি হবে সিনেমা – অস্কার নিশ্চিত।

তবুও এই মেয়েটিকে আবার দেখব –

একই ভাবে –

অন্য কোনদিন, অন্য কোনখানে।

কিছুপরে নেমে যায় মেয়েটি,

আমি আর একটু পর।

আবার ব্যস্ততা –

নিজের কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর বাকীই রয়ে গেল,

পাই নি।

তোমার আড়ালে 
-  যশ চক্রবর্তী , শিকাগো, ইলিনয়
 
মেঘে মেঘে মেলেছো ডানা আবেগ চলাচলে 
খেয়ালী বৃষ্টির জল ধোয়া কার্নিশে 
ঢিমেলা একলা মন বৃষ্টি বাতাসে
শুনেছি তোমার কথা ভোরের আকাশে 
জ্যোৎস্নার আঁচড় জাগে পাহাড়ের কোলে 
জানালায় রেখেছি আলো তোমার আড়ালে

প্রজাপতি জেগে ওঠে
আঙ্গুল ছোঁয়ালো ঠোঁটে
হাওয়ায় ভাসে সুর দূর কোনো দেশে
বর্ষা ফিরলো স্রোতে
তোমার চলাচলে
পেয়েছি তুলির খোঁজ তোমার ক্যানভাসে
 
একমুঠো গুড়ো রোদ
এ মন হারালো বোধ
খুঁজেছি তোমায় কতো ভিড়ে
সেতারের তারে ঝড়
গোপন বালুচর
জুড়েছি তোমায় আবদারে
 
ইশারায় আধোঘুম
কিনারায় নির্ঘুম
ছুঁয়েছি  তোমায় আজ ভীরু আদরে
আনমনা হলো কথা
ধুয়ে যায় নীরবতা
ঢেকেছি চাঁদ আজ নীল চাদরে

ঘাসেদের কানাকানি স্তব্ধতার জলে 
হিম হলে যাবে হয়ে তোমার শরীরে 
জানালায় রেখেছি আলো তোমার আড়ালে

তুমি আর আমি
 - আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ 


তুমি থাকো আলিশান বাড়ীতে, 
আর বুলেটপ্রুফ কালো গাড়ীতে। 
মগ্ন তুমি সাউন্ড সিস্টেমে। 
রেইন সার্কুলেশন শুনতে তুমি পাওনা! 

ডেকোরেটেড বাসায় চ্যানেল দেখছো, 
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে আন্দোলিত ফরেস্ট,পশুপাখি । 
আর স্টার-তারায় ড্যান্স, চোখ জুড়ানো সব দৃশ্য ! 
কার, ম্যানশন আর আর্টিফিসিয়ালে ভুলে গেছো ন্যাচারালকে। 

আমার কৃষকেরা শোনে জারি, মাঝিরা গায় ভাটিয়ালী, 
শ্রমিকেরা গায় সারি। 
শোনে শ্রাবণের অফুরাণ বৃষ্টির ধারাপাত। 
কী অপূর্ব! 
দেখে চড়ুই, শালিক আর শোনে ঘুঘুর ডাক। 

আমি শিখি রাখালের কাছে, কৃষকের থেকে। 
দেখি দুরন্ত কিশোর-কিশোরী’র জলক্রীড়া। 
শিখি পথ-শিশু থেকে। 

তাই কি হয়
 - আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ 


শুধুই তুমি গোলাপ নেবে? 
এমনি এমনি সৌন্দর্য নেবে?   
একটু কাঁটার ছাপ নেবে না! 
তাই কি হয়! 
তাই কি হয়! 

শুধুই তুমি মৃদু বাতাস নেবে? 
এমনি এমনি সুবাস নেবে? 
একটু ঝড় নেবে না! 
তাই কি হয়! 
তাই কি হয়! 

তুমি কি শুধুই প্রেম নেবে? 
এমনি এমনি বন্ধু নেবে? 
একটু তিরস্কার, একটু জ্বালা নেবে না? 
তাই কি হয়! 
তাই কি হয়!

 

শিক্ষাগুরু
- মিজানুর রহমান মিজান


যাঁদের সান্নিধ্যে আজ এ পর্যন্ত
আদিতে জানাই তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন
পেয়েছি আলোর সন্ধান-দিয়েছেন যাঁরা অকৃপণ হস্তে।
থকো যতই দুরে , স্মরি সর্বক্ষণ।
হয়তবা স্বচক্ষে দর্শনের অন্তরালে , অলক্ষ্যে
তবুও হৃদয় কোঠরের একান্ত আপনজন
পদধূলি যাঁদের মোর পাথেয়।
ক্ষণতরে হলে ভূমিকম্প নেমে আসে
ধ্বংস যজ্ঞ অগণিত।
জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে যদি হয়ে থাকে ভুল
ক্ষমা চাচিছ বারে বারে নতশিরে বিগ্রহ নেত্রে।
পুত্র যতই মাকে দু:খ দেয়
তব পুত্রের মঙ্গল কামনায় আত্মবলি।
হে শিক্ষা গুরু
শিক্ষার আলো বিলিয়ে
দিয়েছ যারে শূন্য পাত্র ভরে
জ্ঞান বারি সিঞ্চনে
বিড়ম্বিত এক বন্দির আঁখি
অশ্রুসিক্ত তব নাম স্মরণে।


সুখে থাক
- মিজানুর রহমান মিজান

 

তোমাকে ভালবাসি এ কথা জেনেও যদি
থাক দুরে সুখি হও থাকবে কেন অনাবাদি।
আমার কাছে না এসে সুখি যদি হও
চিরদিন সুখে থেকো সুখ খুঁজে নেও।
তোমার মনে স্থায়ী আসন দাও তাকে
সমব্যথী হবে যে অনন্তকাল তোমার ডাকে।
ভালবাসা উজাড় করে দিয়েছি, নাওনই
চাইবে একদিন অবশ্যই দেখবে আমি ক্ষমতাহীন।
কুঠারাঘাতে জর্জরিত করলে হৃদয় পিঞ্জর
ও পাষাণী ও নন্দিনী সুখে থাকো এ কামনা নিরন্তর।

 

 

স্মৃতি আয়নায় দেখা

- মিজানুর রহমান মিজান


শৈশব কাটে সকলের মুক্ত স্বাধীন
ডানা মেলে নীল আকাশে আনন্দ অন্তহীন।
নাই দায়িত্ব, কর্তব্যবোধ শুধু বয়ে চলা
নদী সমতুল লক্ষ্য সাগরে মেলা
দুই তীরে যোগায় উর্বরতা তাড়ায় পুষ্টিহীন।
শৈশবে লজ্জা থাকে একটু বেশি পরিমাণে
যৌবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে সে জানে
বার্ধক্যে মিতব্যয়ী দূরদর্শী ধারণা সমীচীন।
শেষ বেলা স্মৃতি আয়নায় দেখা
কৈশোর কাল মধুরতম নয় অদেখা
যৌবন কাল যন্ত্রণাদায়ক রোগী পথ্যহীন।

উড়ান

- সৌভিক দা' (ধানমন্ডী, ঢাকা, বাংলাদেশ)

উড়ে যাওয়ার মত ডানা থাকলে

কোন পাখির শিকড় গজাতো না কোনদিন।

আর যেসব পাখি খোলা বাজার থেকে

স্বল্পমুল্যে ডানা কিনে নিয়েছে, 

মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে তারাও একদিন

শেয়ার বাজার কেলেংকারির নামে,

সর্বস্বান্ত করে দিয়ে নিঃস্ব বালক, 

সহসাই পাড়ি জমায় নিশীথ সূর্যের দেশে।

আদতে পাখিদের কোন শিকড় হয়না।

যদিও বাস্তু-সংস্থানের সকল ধারনা ভুল প্রমান করে

সকল পাখিই যায় শেকড়ের সন্ধানে...

ব্লক হেড 

- সৌভিক দা' (ধানমন্ডী, ঢাকা, বাংলাদেশ )

 

কোপারনিকাসের সময়েও কিছু আহাম্মক ছিল।

আর্কিমিডিসের সময়েও ছিলো নিশ্চই।

আমারও আছে।

যদিও নিজেকে আমি কোপারনিকাস বা আর্কিমিডিস

বলে দাবী করি না।

বিজ্ঞানে আমার কোন আগ্রহ নাই।

অইসব আমি শুনতেও যাই না:

বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা নিয়া কীসব সেমিনার হয়।

সিম্পোজিয়াম হয়।

নির্বাচন হয় বিএমএ অডিটোরিয়ামে।

প্রেসক্লাবে।

জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশানের সভাপতি পদ নিয়া কাড়াকাড়ি হয়। হাইকোর্টে কুত্তার মত কামড়াকামড়ি হয় বার কাউন্সিল নিয়া।

ভূখা মিছিল হয় জ্যাকসন হাইটসের সামনে।

ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

আমার শুধু হাসি পায় এইসব নির্বুদ্ধিতা দেইখা।

বিকট হাসি পায়।

আমি পেট চাইপা হাসতে থাকি।

হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাইতে থাকি।

হো হো কইরা হাসতে থাকি।

 

উচ্চকন্ঠে হাসি দেয়া ছাড়া

ইদানিং আমি আর তেমন কিছুই পারি না!

প্রস্থান

- সৌভিক দা' (ধানমন্ডী, ঢাকা, বাংলাদেশ )

আমি চলে যেতে পারি আজও।

আমি চলে যেতে পারি কালও।

আমি চলে যেতে পারি যে কোনদিন।

ভীষণ ব্যক্তিগতভাবে আমি চলে যেতে পারি।

যেভাবে অগোচরে চলে যায় একটি ফুল,

কিংবা একটি পাখির মৃত্যু হয়।

রোদের অবহেলায় একটি স্বর্নলতা পাতা ঝরে যায়।

অকালে জন্ম নেয়া কোকিল,

খড়কুটো-বাসা ভেঙে উড়ে গেছে যে চড়ুই,

উঠোনের সবুজ ঘাস কখন হলুদ হয়েছে।

কে কবে খবর রেখেছে তার।

আমি চলে যেতে পারি সেভাবে।

তুমুল গোপনে।

যে কোনদিন...

প্রেমিকাকে

- রাজকুমার 

 

নৌকোডুবির শতভাগ সম্ভাবনা সত্ত্বেও
আশৈশব আমি নৌকো চড়তে ভালোবাসতাম
এবং নৌকো আমায় ডুবোয়নি কখনও;

আমি একটা ঘাসফুলকেও ভালোবাসতাম খুব
বিশ্বাসী ছিলাম এই আপেক্ষিক মহাবিশ্বে
শেষপযর্ন্ত ঘাসের যৌবনই একমাত্র অবানিজ্যিক
অথচ ঘাসফুলই সাঁতার কাটল সওদাগরি নৌকোর গলুইয়ে;

এখন আমি রাত জেগে জেগে তারাদের কম্পন শুকি
জোনাকির আসর ছাড়া আর কোথায় ঠাই আছে বল
আমিতো সেই কবেই নিশাচর হয়ে গেছি
সূর্যদের মুখ দেখতে মানা।

 

 

সাপ খেলা

- রাজকুমার 


সাপখেলা খেলতে খেলতে ক্লান্ত
আমি এক নির্বিষ সাপ,
ক্রমাগত নিজেকে লুকোতে চাই ছায়াদের আবডালে
অথচ ছায়ারাই আমাকে হাঁটে তোলে ঘটা করে
লম্বাশ্বাস নিয়ে ধারালো বীণ বাজায়
আমি বিষন্ন ফণা তুলে নাচি।

পুজির বাজারে এছাড়া কী-বা করার আছে।

 

ভাঙা বিস্কুট 

- রাজকুমার 


উৎসর্গঃ  হুমায়রা আক্তার পুনমকে


স্বাপ্নিক ফ্লাইওভার থেকে যে গাড়িটি রোজ আকাশে উঠত
গাড়ি নয় এক কৌটো ফুলের শরীর
যার দুটো মার্বেল চোখে ঠাসাঠাসা স্বপ্ন ছিল;
যা কখনো ঝরে পড়ত চকমকে রুপার ফুলের মত
হয়ত সকালের সূর্য হয়ে আলো্ও দিত বেশ।

সেই ছোট্ট ফুলটি এখন এক সুটকেস আতঙ্কের স্তুপ
লাল ঠোট লেপ্টে গেছে সওদাগরি পোকার কামড়ে
ফুলটি আজ বড়ই নিষ্প্রভ অনেকটা ভাঙা বিস্কুটের মত;
হতোদ্যম সেলস বালিকাও পাথর চিন্তিত
ভাঙা বিস্কুট কি বাজারে চলে?

পৃথিবী

- রাজকুমার 


ক্রমশ মিষ্টি হয়ে উঠছে কফিন!
বাজারজাত করন চলছে ধুমধাম অন্তেষ্ট্যিক্রিয়া
শিশির পতনের সুর
ব্যাঙের প্রেম আরাধনা
এমনকি সাদা ভাতের মতন সুশ্রী, সিমসাম সেই মেয়েটি
যার দুটো চোখ আজ সিঁদুরে মেঘের মত লাল।

গোলাপী হয়ে উঠছে পৃথিবী
প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে লাজুক লাজুক আমাদের প্রথম চুমুও
খোকার খিলখিল হাসি
ছোট বাবুর ট্যা ট্যা কান্না
কিংবা কিশোরী মেঘ যে আজও উড়তে শিখেনি

 

তার বাম স্তনের দু আঙুল নিচে অবিরত ঢিব ঢিব...
তাড়া খাওয়া হরিণের ক্ষুর।

ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী!
ছায়া রুপে আগাচ্ছে মানুষ?

 

গ্রুপ​  স্টাডি

- রাজকুমার 

 

গ্রুপস্টাডি
প্রথমে বর্ণ পরিচয়
অতঃপর শব্দ পরিচয়
অমনি অসতর্ক শব্দ গুলো উড়তে লাগল

সাদা-কালো মেঘদের ছুয়ে ছুয়ে
সিমফুল ঠোট গুজে নেমে এল নতুন বউয়ের মত রোদ।

আমরা গন্ধ শিখলাম;
নিকষ কালো রাত্রির টাটকা গন্ধ
মিটিমিটি জ্বলা জোনাকি পোকার গন্ধ
জোৎস্ন্যা রঙে খসে পড়া  বাঁকা চাঁদের শরীরী গন্ধ
এমনকি উদাসীন, চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা ছাইরঙা নদীটির গন্ধ ।

আমরা গন্ধ শিখলাম;
ঘোর হয়ে ওঠা ঘামে ভেজা খোলা গরলের গন্ধ।
আমরা পাপী হলাম
অবিরাম বিষের পুকুরে ডুবে যেতে যেতে..................
আমরা শিখলাম, পৃথিবীর শিরায় শিরায় কত বিচ্চ্ছিরি ধূলো।

নিঃসঙ্গতার প্রতিচ্ছবি

- সবুজ, মিরপুর, বাংলাদেশ 

                

রোড লাইটের নিয়ন আলোয়

আমাকে অচেনা মনে হয় ,

হাজারো মানুষের ভিড়ে

আমি নিজেকে খুজি ।

গাড়ি গুলো যখন ছুটে চলে

বিরতিহীন... দিকের পানে,

শান্ত আমি দেখি তাদের

অজানায় ফিকে হয়ে যাওয়া ।

যান্ত্রিক জীবনে আমি

অভাবে তাড়িত হই,

প্রকৃতির...

বাবা, মা, শৈশবের প্রেমের।

এক মুহূর্তে চোখ ঝাপসা হয়

ছলছল চোখে সান্তনা খুঁজি আমি

উদার আকাশের কাছে।

একুশের মতো

- সুশীল রায়

বিংশ শতকে একুশ এনেছ

একুশ শতকে আজ আবার 

ত্রস্ত বিশ্ব হারায়েছে পথ 

তোমরা নিয়েছ য্জ্ঞ-ভার

 

জাগো আগামীর ইতিহাস, জাগো

কবি-লেখকের বাংলাদেশ

জাগো প্রজন্ম-চত্বরে পুনঃ

ঘাতকেরা আজও হয়নি শেষ।

 

ঘাতকের কোন ধর্ম থাকে না,

ধর্ম থাকে না ধর্ষকের;

নামের মুখোশে মৌলবাদীরা

দেশে দেশে শুধু রকমফের।

 

এই কথা শুধু তোমরা বুঝেছ

গর্জনে জাগে এক শপথ

ভাষা-শহীদের পূন্য-বেদীতে

জন্ম নিয়েছে নতুন মত।

 

আরও একবার জেগেছে বাঙালি

ধরাতলে যেন ভূকম্পন

সিঁদুরে মেঘের ইঙ্গিতে দ্যাখো

কাপুরুষ করে উল্লম্ফন।

 

অনতিদূরের সূর্যে দেখেছি

মানবিকতার এ সংগ্রাম

লেখা হয়ে আছে; লেখা হয়ে রবে

একুশের মতো আরেক নাম ।

ইচ্ছে
-    জ্ঞানেন্দ্র প্রসাদ সরকার,কলকাতা 

রবি হব, কবি হব,
ইচ্ছে করে এটা হব, ইচ্ছে করে ওটাও হব।
পথের ধারে পথিক হব, এক্কাগাড়ির চালক,
ছোট্ট মনে ভাবছে এসব, ছোট্ট একটি বালক।
উড়োজাহাজ সঙ্গে নিয়ে, দূর দেশে ভাই পারি দেব -
আবার ভাবি ফেরিওয়ালা, এ গ্রাম ছেড়ে ও গ্রাম যাব।
নদীর বুকে মাঝি, আবার মাছ ধরব জেলে,
ইস্কুলেতে মাস্টারমশাই, পড়বে কত ছেলে।
মিষ্টি দেখে ময়রা হব, মুদী হতেও নেইকো দোষ,
গোঠের রাখাল মিষ্টি ভারি, গয়লা নন্দ ঘোষ।
আদালতে উকিল হব, রোগীর কবিরাজ,
রাজমিস্ত্রি দালান গড়ে, ওটাই হব আজ।
আচ্ছা, যদি হতাম পাখি! বাঁধন ছাড়া মন,
মনের সুখে নীল আকাশে অবাধ বিচরণ।।

 

রাধাচূড়া
-  তাপস কুমার সামন্ত, কলকাতা 


কত সুন্দরী হয়ে সেজেছ রাধাচূড়া

আঁখি ফিরাতে পারিনি ফুলে ফুলে ভরা

তুমি যে কত সুন্দরী আগে তো দেখিনি 

দৃষ্টি আমার খুলে দিলে মনোহারিণী 

যেদিকে তাকাই তোমাকে দেখিতে পাই 

তুমি ছাড়া দুনিয়াতে আর কেহ নাই 

মন যে আমার কেমন কেমন করে 

আনন্দে ভরে যায় রূপের ডালি তরে। 

পৃথিবীতে তোমার কি অপরূপ সৃষ্টি 

মৌ ফুলে ভরে গেছে মধুকরীর বৃষ্টি

প্রাতঃ সন্ধ্যা তুমি যে আমার প্রেয়সী 

ভুলিতে পারি না আর তুমি যে রূপসী। 

আকাশে বাতাসে দোদুল দোলে ঐ রূপ 

মম চিত্তে ভরে যায় হয় না বিরূপ 

রাধা সজ্জিত হয়েছ চূড়ামণি দিয়ে 

বিস্মিত চঞ্চল মন দিয়েছি ডুবিয়ে। 

সারাদিন চলছে কত পাখির গান 

উলুধ্বনি শুনে মন হয় আন চান 

লেগেছে যেন তোমার বিয়ে 

তুমি মোরে ডাকিতেছ হাতছানি দিয়ে। 

আমি যেন বিহঙ্গ নিমেষে ছুটে যাই 

হৃদয় মাগে যেন তোমায় কাছে পাই 

শত চেষ্টা করেও হলাম না ফলঃপ্রসূ 

বিরহে মোর দু-নয়নে ভরে গেল অশ্রু। 

পুকুর ঘাটে
- গৌতম ঘোষ, মুম্বাই


সাঁঝেরবেলা পুকুর ঘাটে 
একলা কায়া
জ্যোৎস্নালোকে সলিল পটে 
তারই ছায়া,
আলিঙ্গনে উষ্ণ অলীক হৃদয়
দুলছে জলের মৃদু দোলায়।
আলো আঁধারীর ইন্দ্রজালে
গোপন কথার যাদু খেলে!
অশ্রু শুকায় কপোলতলে,
দীর্ঘশ্বাসে বাতাস দোলে।
হে রমণী, জীবন-রণে
পরাজয়ের অভিমানে,
হারিয়ে গেলে অনির্দেশে
এই পুকুর ঘাটে এসে?
প্রশ্ন করে ঘাটের জল,
ছলাৎছল! ছলাৎছল!

খাঁচার পাখি
- গৌতম ঘোষ, মুম্বাই


খাঁচার সবুজ তোতা,
রাঙা ঠোঁটে বলছে কত কথা,
চোখ পাকিয়ে দেখছে এদিক ওদিক,
সময় ধ’রে চলছে সবই ঠিক।
খাঁচার ভিতর ছোট্ট জীবন,
মানুষ হল কেমন!
তবু, সে কেন করছে কোলাহল?
বাইরে বসে বলছে কথা মুক্তো তোতার দল।
খাঁচার তোতা বোঝে না তাদের ভাষা,
ভাবছে ওরা আজব, কতই সর্বনাশা!
দুপুরবেলা কাছের মানুষ নেইকো আশেপাশে,
খাঁচার তোতার মনও তাই দূর গগণে ভাসে।
সেথায় উড়ছে পাখি দিকে দিকে,
তারা হারায় কোথায় এক পলকে
নেই তা জানা তার।
খাঁচার জীবন, এটাই বেশ মজার।

আমার শহরে
- কাকলী দাস ঘোষ

আমার শহর দিয়ে বয়ে চলা নামহীন নদী ,
ওর বুকের উপর কংক্রিটের ব্রিজটা পার হয়ে 
এপারে এসো তুমি l
তুমি কী বহু দূর দেশে থাক বন্ধু -?
তবে মেঘের বাড়ি ছুঁয়ে
উড়ে এসো তুমি আমার শহর কোলে ,
ছুঁয়ে যাও আজ নরম সকালের নদীজলে বিভা l
উড়ে এসো বন্ধু আমার কল্লোলিনি শহরের নীল গড়ানে ঢেউ নদী বুকে ,
ছুঁয়ে যাও আমার শহরের অজানা নদীর নামহীন বন্দর l 
কুয়াশা নিমগ্নতায় শায়িত এখন 
সমাসীন ঘুম ভেঙে ও যে অজানিত মুখ মায়ায় চায় 
আজকের সূর্যোদয় l 
নিরাশ কোর না ওকে ,
এরপর তো সেই পুরাতন নিয়মকানুন ,
ছপছপ জলে জাহাজের ডেক -লঞ্চ হল্লা -চিমনির আকাশ ছোঁয়া 
চুলে ঢাকা মেঘের বাড়ি l 
তখন আর উড়তে পারবে না বন্ধু মেঘবাড়ি ছুঁয়ে l 
তাই বড় কাতর অনুরোধ -আকুতি আমার বন্ধু ,
উড়ে এসো মেঘবাড়ি ছুঁয়ে এইক্ষণে 
আমার শহরে l

Please mention the "name of the articles and the authors" you would like to comment in the following box... Thank you.

bottom of page