

জুলাই
২০২৪

প্রচ্ছদঃ সুরজিত সিনহা
লেখক/লেখিকাবৃন্দ
প্রচ্ছদ - সুরজিৎ সিনহা

প্রবন্ধ
পিসেমশাই বাবাকে বললে "না, না, পিন্টুদা কত কি জানার কত কি বোঝার আছে বিয়ে না করলে জানতেই পারতাম না"। বাবা মুচকি হেসে বললে "কি কি জানলে?"
- "খুব সিম্পল, যে আমি কিছুই জানিনা সেটাই তো জানতাম না। মাথায় গোবর পোড়া। মা আমাদের ঠিকমত মানুষই করেনি। এমন কি জানো দাঁত মাজা ও নাকি শেখায় নি।" বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে আসে পিসেমশাইর।
বাবা মুখে অসাংবিধানিক কথা বলে না। বেকায়দায় পড়লে আছি অথচ নেই টাইপ হাসি দিয়ে ম্যানেজ করে। বাবা সেরকম ই হাসি দিলে ঠোঁট চেপে।
মেজকা ঘরে ঢুকেই ক্যাঁচটা লুফে নিল।
- "ঠিক বলেছ সুভাষ। আমরা কেউই মানুষ হইনি। কোন এটিকেট সেন্স নেই। শব্দ করে চা খাই, বোতল থেকে গলায় ঢেলে ধক ধক করে জল খাই। কচ কচ করে গাজর চিবিয়ে খাই। জোরে জোরে কথা বলি। লুঙ্গি পড়ি বাড়িতে। পুরো প্রিমিটিভ ব্যাপার স্যাপার। কোনো ব্যাটা সভ্য এটা করে না। সব অসভ্য ব্যাটা চাকরি, ব্যবসা করে খাচ্ছে। দেশের উন্নতি করছে।
পিসেমশাই চারিদিক তাকিয়ে গলা নামিয়ে প্রায় ফিসফিস করে বললে "সভ্য হল বউ। উনি যা যা করেন সেটাই সভ্যতা। বাকি সব বুঝতেই পারছেন।
মা চা নিয়ে ঢুকে দাড়িয়ে পিসেমশাই এর কথা শুনে ফেলেছে। চা এর ট্রেটা রেখে মা হাসতে হাসতে বললে "দাড়ান, ছোড়দি কে বলছি"।
পিসেমশাই ভীতু মানুষ। মুখ কাঁচুমাচু হয়ে গেল "এই দেখো বৌদি, আমি তো ইয়ার্কি করছিলাম।"
বাবা, মেজকা ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগল। বাবা বললে
- "সুভাষ ভয় পেয়েছে। তোমার নামের সঙ্গে ভয় কিন্তু মানায় না"। পিসেমশাই প্রথম একটু হাসব কি হাসব না ভেবে তারপর সবার সাথে মিলে হাসতে থাকলে।
রবিবারের সকালবেলা ছোট পিসি আর পিসে মশাই চলে এসেছে। আমাদের বসার ঘর জমজমাট। পিশেমশাই এমন মানুষ যে এলে বেশ একটা হালকা হাসির হাওয়া বয়ে যায়। ছোট বড় সবার সঙ্গেই সমান আড্ডা চালাতে পারে। একটা সহজিয়া ব্যাপার আছে পিসেমশাইয়ের মধ্যে। মা, মেজ কাকিমা খুব পছন্দ করে পিসেমশাইকে। গোবেচারা সরকারি অফিসে চাকরি করে। বাবা যে বাবা সে ও দুচার বার মুচকি মুচকি হেসে ফেলে। প্রশ্রয় ও আছে তাতে, মজাও আছে তাতে।
মেজ কাকা এই ব্যাপারে বেশ মজা পেয়ে বললে "দাদা থাকলে হয়ত কেনিয়া বা ঘানার পুরুষরা কি ভাবে বিয়ের পর নিজেকে নতুন করে জানত সেটা জানা হত"।
বাবা বললে "কি আর করা, দাদার মিশন স্কুলের গরমের ছুটি অনেক দেরী"।
আজ ছুটির দিন। ঠাকুমা তার ভাইয়ের বাড়ি গেছে দুপুরের পর ফিরবে তাই মুরগির মাংস হবে বাবা ডিক্লেয়ার করে দিয়েছে গতকাল রাত্রেই। ছোট পিসি খুব মুরগি ভালো বাসে।
চা খেতে খেতে মেজকা ঘোষণা করে দিলে আজ উনি ওনার শিল্প কর্ম দেখাবেন। আমি শিউরে আছি। কি হয়, কি হয়। পিসেমশাই একবার আবদার তুলে ছিল উনি নাকি দারুন একটা চিকেনের পদ শিখেছেন আজ রেঁধে তাক লাগিয়ে দেবেন। মেজকা ঠাকুমার অনুপস্থিতির সুযোগ ছাড়তে নারাজ। কাকিমাকে হুকুম করলে আমার রান্না করার ড্রেস টা নিয়ে এস।
কাকিমা চোখ গুল্লু গুল্লু করে বললে "কেন? ওটা কিসের জন্যে লাগবে? তুমি আবার নাটক করবে নাকি? ওটা তো তোমার নাটকের ড্রেস ছিল। তাহলে তো আমাদের দুপুরের খাওয়া আর হলো না"।
মেজকা বললে "উঁহু, আজ আসল রান্না হবে। ওটা নাহলে চলবে না। যে কাজ করব সেটাই সুন্দর করে করা চাই। মা এই সুযোগে বলে দিয়েছে "যা খুশি কর। কিন্তু রান্না হলে রান্না ঘরের সব কিছু গুছিয়ে, ধুয়ে রাখতে হবে। যেমন তেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলে চলবে না। তাহলে কাল রান্না করতে গিয়ে আমাদের কাল ঘাম ছুটে যাবে।
সে যাই হোক। মেজকা একটা জম্পেশ তেলে ঝোলে মাখা মাখা কালো ব্রাউন একটা কিছু রান্না করেছে। মা জিজ্ঞাসা করলে "কি আইটেম করলে ঝন্টু?"
খুঁন্তি নাড়তে নাড়তে উত্তর এল "চিকেন ঝিনচাক"
- "এ্যাঁ, কি বললে? মার হেঁচকি ওঠার মত অবস্থা।
- "চিকেনের ধিন তাক? একি তবলার বোল নাকি?"
- "বৌদি? মেজকা হতাশ। এটা হচ্ছে চিকেন ঝিন চাক"।
বাবা ও কেমন নার্ভাস হয়ে গেল "খাওয়া যাবে তো"?
একটু নুন কম ছিল। একটু ঝাল ঝাল পানসে তবু মেজকার মুখে যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। দেখলে তো সবই ছেলেরা পারে। আসলে ছেলেরা পারে না এমন কিছু হয় না।মেজ বৌদি তেমন কিছু বললে না। কারণ মেজকা শুনবো না।
বিকেল অবধি পুরুষ রা সব পারের জয়ধ্বনি উড়িয়ে তিনজনে পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের খুঁটি যখন পুঁতে ফেলেছে তখন প্রায় ক্লান্ত হয়ে ঠাকুমা ফিরলে। ঘরে ঢুকেই মেজকা, বাবা আর পিসে মশাইয়ের সবজান্তা ভাব দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে দেখলে তারপর আর থাকতে পারলে না ।ঠাকুমা বললে "তোরা বলছিস রান্না জানিস।"
- "হ্যা, জানি তো।" মেজকা অকুতোভয়। ঠাকুমা বললে
- "তাহলে এক কাম কইরা দ্যাখা। কাল রান্না কইরা খাওয়া তালের বড়া, চিতই পিঠে, চিতল মাছের মুঠ্যা, তেঁতর ডাল লাউ দিয়া,বাবা প্রতিবাদ করে উঠলে "ওসব স্পেশাল রান্না বাদ দাও। রোজকার যা মন চায় বল।" মেজ কাকিমা এতক্ষণে একটু বুকে বল পেয়েছে, বললে
- "কেন? ওগুলো তোমাদের আমরা রান্না করে খাওয়াই না? কর, করে খাওয়াও"। ঠাকুমা বললে
- "ছাড়ান দে"। বলে বাবাকে বললে
- "তোর জামাখান দে।" বাবা অবাক।
- "কেন কি করবে?"
- "দে। খুইলা দে।" বাবা বিরক্ত হয়ে জামা খুললে । ঠাকুমা উঠে আলমারি খুলে সূঁচ সুতো বার করে দিলে। দেখা গেল বাবার পাঞ্জাবির একটা বোতাম নেই। ঠাকুমা কি করতে চাইছে ঠিক বুঝতে পারছি না। বোধহয় লাগিয়ে দেবে বোতাম। ঠাকুমা সে পথে গেল না। বললে
- "শুধু সূঁচে সুতো ভইরা দে। তারপর কথা ক। দেখি তোদের দৌড়"। মেজকা হাঁ, হাঁ করে অবহেলার হাসি দিয়ে বলল
- "মা, তুমি কি আমাদের কচি খোকা পেয়েছ? আমি এটা ছোটবেলা থেকেই জানি। এত জলের মত সোজা। এমন কি এটা যে সোনা মুখী সূঁচ সেটাও জানি। আগে বাবার শার্টের বোতাম সেলাই করার সময় কে ভরে দিয়েছে মনে নেই?" ঠাকুমা মুচকি মুচকি হাসছে। মেজকার আর তোর সইছে না, বাবা কে বললে "দে, দে, দাদা দে"। বাবা বললে
- "আমাকে দিয়েছে, আমিই ভরে দেখিয়ে দিচ্ছি। মা তুমি আরেকটু কঠিন কিছু দিলে পারতে"। এই বলে অবহেলা ভরে সূঁচটা বাবা এদিক ওদিক দেখলে। সুতোর রিম থেকে সুতো বার করে বললে
- "এই দেখো এমনি করে ধরবে আর আসতে করে ফুঁটো দিয়ে সুতোর মুখটা ঢুকিয়ে দেবে ব্যস কাজ শেষ"। এবার বাবার মুখটা একটু ত্যারছা হল।
- "ও হয় নি? এই তো। অনেকদিনের প্র্যাক্টিস নেই তাই। ঠিক আছে, এই দেখো" বলে বাবা আবার সুতোটা ঠেললে। দেখলাম সুতোটা ফুটোর মুখে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে পাশ দিয়ে চলে গেল। এবার বাবা একটু সিরিয়াস। ও মনে পড়েছে, বলে সুতোর মুখটা মুখ দিয়ে ভিজিয়ে নিল। হাতে নিয়ে ঠেলতে ঠেলতে বললে
- "অনেকদিন বাদে তো তাই প্রথম মনে পড়ছিল না।" এবারও কিন্তু ঢুকলে না । ঠাকুমা দূরে হাত পাখার হওয়া খাচ্ছে। আর মুচকি মুচকি হাসছে। এবার বাবার চোখের মণি দুটো কাছাকাছি চলে এল। বেশ গম্ভীর লাগছে যেন মন দিয়ে দড়ির গিঁট খুলছে। পিসেমশাই একবার বললে
- "পিন্টুদা এটা আমাকে দিন। অতি সহজ ট্রিক আছে। বাবা নাছোড়। আবার নতুন করে সুতো মুখে ভিজিয়ে সরু করে গভীর মনোযোগ দিয়ে সুতোটা ঢোকালে। এবার দিব্যি সুতোটা ভিতর দিয়ে চলে গেল। বাবা মুখ সরিয়ে তাচ্ছিল্য দেখিয়ে বললে
- "এই নাও মা। এত সোজা কাজ আমায় দিয়া দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাবা অতি উৎসাহে ঠাকুমার সঙ্গে বাঙাল ভাষায় কথা বলে। কিন্তু পর মুহূর্তে বাবার মুখ শুকিয়ে গেল। সুতোর মধ্যে সূঁচ নেই। কি ষড়যন্ত্রে সূঁচ আলাদা সুতো আলাদা। মেজকা বললে
- "দেখলি তো ওত কনফিডেন্স ভালো নয়। তুই ভাবছিস হয়ে গেছে কিন্তু দেখ হয় নি"। এবার ঠাকুমার দিকে চেয়ে বললে
- "মা এটা কেমন ঠাট্টা হল? আমাদের আর কোন কাজ নেই? এসব কাজ মেয়েরা করে। কিন্তু আমরাও জানি। কোন ব্যাপার নয়। তুমি অন্য কিছু দাও। দেখছো দাদার চোখের পাওয়ার বেড়ে যাচ্ছে"। বাবা এক ধমক দিল,
- "ঝন্টু, বড্ড বার বেড়েছিস। আমি তো তোকে চিনি। তুই এসব কোন দিনই পারবি না।"
ঠাকুমা হাত পাখা নাড়িয়েই যাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। পিসেমশাই বললে,
- "আমাকে দিন পিন্টুদা। এটা কোন ব্যাপার নয়। আগে যত রকমের ঘুড়ির কল করা, পায়জামার দড়ি ভরা সব সুক্ষ কাজ আমিই করতাম"। বাবা কোন চান্সই পেল না। পিসেমশাই সূঁচ আর সুতো হাতে নিয়ে বললে,
- "এই দেখো, এই তুমি সুতো নিলে। তারপর হাত দিয়ে সুতোটাকে সরু করে নিলে। চাইলে ভিজিয়ে নিতে পারো।" যেন স্কুলের বিজ্ঞান টিচার পড়াচ্ছে। মেজকা আর ধৈর্য রাখতে পারলে না।
- "তারপর তারপর? আগে বারো"। পিসেমশাই বললে,
- "সূঁচটা সোজা করে ধরতে হবে। ঠিক এইভাবে। সুঁচের ওপরের দিকে গর্ত তার মধ্যে দিয়ে অবলীলায় তোমাকে বেরোতে হবে। ঐটাই তোমার টার্গেট। ভালো করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হবে যেন তুমি অর্জুন। সূঁচ শুধ্ব সুতো পরালে তবেই দ্রৌপদীকে পাবে। কোন তাড়াহুড়ো নয়। আসতে আসতে লক্ষ্যের দিকে সুতোর মুখ চেপে ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে"। বাবা দূরে বসা ঠাকুমার দিকে তাকিয়ে পিসেমশাইকে বললে,
- "কি তুমি কি খেলার ধারাবিবরণী দিচ্ছ?"। এরপরটা খুব গৌরবের হল না। তিন চার বার গোত্তা খেয়ে সুতো সূঁচএর গা বেয়ে কোন বার পাশ দিয়ে কোন বার নীচের দিকে চলে গেল। পিসেমশাই চারিদিকে হতাশ চাহনি দিয়ে বললে এরকম আলো কম হলে কি করে চলবে? মা এটা তো ষড়যন্ত্র"। মাঠে আলো কমের অ্যাপিল করলে। ঠাকুমা দুর থেকে হেসে জামাইকে বললে,
- "আমি ভইরা দেই?" মেজকা অপমানে লাল হয়ে উঠলে।
- "মা তুমি সবাইকে ঠকাতে পারলেও আমাকে পারবে না"। বলে পিসেমশাই এর হাত থেকে ঝপাত করে সূঁচ সুতো নিয়ে নিলে। বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললে,
- "আমি এতক্ষণ সবাইকে দেখছিলাম কি করে। এইবার বল মা সুতো পরালে কি দেবে?" মা মেজ কাকিমা হৈ, হৈ করে উঠলে।
"মা ওরা কিছু করলে কেন প্রাইজ চায়? আমরা তো রোজদিন এই করছি। এই সামান্য সুঁচে সুতো পড়াতে পারছে না আবার পরালে প্রাইজ চাইছে। এসব চলবে না"। ঠাকুমা আজ পণ করেছে বাবা, কাকা, পিসেমশাইকে ল্যাজে গোবরে করবেই। ঠাকুমা কোন উত্তর দিলে না, বললে
- "দেখি ঝন্টুর ক্যারামতি। মেজকা পিসেমশাই আর বাবাকে বললে "তোমরা সূঁচএর গর্তটাই ঠিক মত দেখতে পাওনি। আমি আর বিশেষ কিছু বলব না। করে দেখিয়ে দিচ্ছি তাহলে তো শান্তি হবে? ঠাকুমা ফোঁকলা দাঁত বার করে খিক খিক হাসতে লাগল। মেজকা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে সামনের চুলগুলো পিছনে ফিরিয়ে দিল।তেল চক চকে নাকটা মুছে এবার সূঁচ সুতো হাতে নিয়ে মেজকা প্রথম যেটা করলে পাঞ্জাবির হাতাটা গুটিয়ে ফেললে। বাবা ফোরণ কাটলে।
- "হাতা গোটাচ্ছিস? মারবি নাকি? মেজকা তীব্র দৃষ্টিতে সূঁচএর দিকে তাকিয়ে বললে,
- "ওটা একাগ্রতার জন্যে লাগে। এবার দেখ আমার কামাল"। কাকিমা, মা কাছে এসে ঝুঁকে পড়েছে। আমি অপারেশনটা দেখতে মার ঘাড় সরিয়ে তাকিয়ে আছি নিস্পলক কি হয় কি হয়। এতক্ষনে শেষ হবে ঠাকুরমার টাস্ক। ঠাকুমা খানিক দূরে খাটে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছে।কোন হেলদোল নেই। কোন উত্তেজনা নেই। মিটিমিটি হাসছে। হাতা গুটিয়ে বললে
- "ইসস এই কয়দিন আগেই ফেস বুকে এসেছিল। কেন যে সেভ করে রাখলাম না কে জানে। পিসেমশাই উৎসাহ দিলে "সুতোটা পরিয়ে দিন তারপর জমিয়ে চা আর মুড়ি খাব। কাকিমা ফুট কাটলে" চা আর মুড়িটা খেয়ে নিলেই ভালো করতে। দেখুন খাওয়া হয় কিনা"। মেজ কাকা এর মধ্যে তুলে নিয়েছে সুতো আর সূঁচ। মেজকার দুটোকে সামনে নিয়ে এসেছে। বাবা, আমি পিসে মশাই জানি এবার ঠিক পারবে ঝন্টু। এরপর মেজ কার মুখটা একটা হল বটে। বেশি কনসেন্ট্রেশন করতে গিয়ে মুখ টা ছুঁচলো হয়ে গেছে। জিভটা বেড়িয়ে এসেছে কোন দিয়ে। দুই ভুরু প্রায় লেগে যায় আরকি। যেন ঘড়ির মেকানিক। চোখ দুটো কুঁচকে ছোট হয়ে এসেছে। একটু একটু করে নিয়ে এসে ঢোকালে। কিন্তু বেমালুম বেড়িয়ে গেল পাশ দিয়ে। আজ কি হল কে জানে। আমার মোবাইল নেই তাই তুলে রাখতে পারলাম না সেই জোকারের মতন মেজকার মুখ। ঠাকুমা বললে
- "হইসে তোদের? আর কবি মেয়েরা যা পারে তোরাও তাই পারিস? মেজকা একটু নরম হয়ে বললে
- "অনেকদিন প্র্যাকটিস নেই। আরেকটু সময় দাও ঠিক করে দেব। মাথা চুলকে একটা যুক্তি খাড়া করে বললে" সত্যিই আলোটা বড় কম। আগে তো আমি তোমায় করে দিয়েছি। এটা মা তুমি ঠিক করো নি। সকালে করলে দেখে নিতাম তোমার চ্যালেঞ্জ"। ঠাকুমা বললে
- "আমার সন্ধার পুজো হয় নাই। আমি উঠলাম। তোরা লইরা যা"। সে এক বিশ্রী করুন দৃশ্য। এত বড় বড় বিরাট দেশ উদ্বার করা, বুলি আওড়ানো মানুষগুলো ল্যাজে গোবরে মাখামাখি অবস্থা। বুলি সব শেষ। শুধু সুতো নিয়ে গুঁতোগুঁতি চলছে তো চলছেই। ছেড়ে পালিয়েও যেতে পারছে না। রাত বাড়ছে, রাগ বাড়ছে। চেষ্টা চলছে তো চলছে। এমন সময় মা এসে বললে চিও বই গুছিয়ে রাখ, তুমি খেয়ে নাও, কাল সকালে স্কুল আছে। বুঝলাম মা হাল ছেড়ে দিয়েছে। খেয়েদেয়ে ওপরে চলে গেছি। মেজকা, বাবা, পিসেমশাই লড়ে যাচ্ছে। আমার ভোর বেলা স্কুল। ছয়টার সময় নীচে নেমে বেরোচ্ছি দেখি মাটিতে টানা ঢালা বিছানায় বাবারা তিন মূর্তি চিৎপাত হয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। তিন রকম অদ্ভুত ঘড় ঘড় শব্দ ঘর কাঁপাচ্ছে। গতকাল খুব পরিশ্রম গেছে। সামনে টেবিলে সূঁচ আর সুতোটা আলাদা আলাদা পড়ে আছে। ওদের সারারাতেও এক করা যায় নি।
কবিতা
মিজানুর রহমান মিজান
বিশ্বনাথ, সিলেট, বাংলাদেশ
ভাবিয়া আপন
তরে ভাবিয়া আপন
রাখলাম করে যতন
এ দেহ পিঞ্জরায়।।
আশ্বাসে ভর করিয়া
বুকে বিশ্বাস রাখিয়া
জীবন যাত্রা বাহিয়া
আসা যাওয়া তোমার ইচ্ছায়।।
যাবার যদি ছিলো ধান্ধা
করালে কেন মায়ায় বান্ধা
এ পিরিতের জালে কান্দা
পদে পদে বিপদ ঘনায়।।
আদর সোহাগে ছিলো না কমতি
তবুও ভালবাসায় বসালে যতি
ফিরে না চাইলে একরত্তি
বুকের পাঁজর ভাঙ্গে ব্যথায়।।
চলে যাওয়ায় হারালাম হুস-
জ্ঞানশূন্য পিঞ্জিরা নাহি সেথা প্রাণ
লাশ বলে সবাই নিয়ে যান
অন্ধকার মাটির ঘরে রাখার দায়।।
নীতি আছে মুখে
নীতি আছে মুখে, কাগজে
রীতি শুধু অমান্য কাজে
নাই নীতির ধারা এ সময়ে।।
কোন আশার আশে
মন স্বপ্ন দেখে ভাল সাজে
প্রীতিহীন নীতি,দু:খ বুকে লয়ে।।
মন মানে না বাঁধা
নির্বাসনে ভক্তি শ্রদ্ধা
বিষাদে ঘুরে গুরু হয়ে।।
নীরব রাতে ঘুম ঘুম প্রাতে
ভাবি নিরলে হারালাম সাথে
রীতি নীতির কথা ক্ষয়ে।।
আর কি হবে না সুপ্রভাত
আচরণে নাকি দীপ্তির আঘাত
চিত্তে বোধ শ্রদ্ধা হারিয়ে।।


কবিতা
সাহেব সেখ
মুর্শিদাবাদ, প: বঙ্গ
শৈশব হারিয়ে গেছে
শৈশব হারিয়ে গেছে, দারিদ্রের অন্ধকারে,
সময়ের যাঁতাকলে, মানুষের জীবন ঘোরে।
শৈশব হারিয়ে গেছে, দারিদ্রের অন্ধকারে,
সময়ের যাঁতাকলে, মানুষের জীবন ঘোরে
শুধু একটি আশা, রয়ে যায় মনের ভেতর,
সেই আশায় মানুষ বাঁচে, খুলে যায় খুশির দোর।
শুধু একটি আশা, রয়ে যায় মনের ভেতর,
সেই আশায় মানুষ বাঁচে, খুলে যায় খুশির দোর।
দারিদ্রের কষ্টে মানব, নিজের আবেগ করে দান,
না পাওয়ার বেদনায় সরব, চোখের জলে সব ভাসান।
একটু একটু করে মানুষ, ক্ষুধার আগুনে পোড়ে।
জীবনটা তীর বিহীণ ধনুষ, সেটাকে সম্পূর্ণ বোঝে।
শৈশব হারিয়ে গেছে, দারিদ্রের অন্ধকারে,
সময়ের যাঁতাকলে, মানুষের জীবন ঘোরে।
শুধু একটি আশা, রয়ে যায় মনের ভেতর,
সেই আশায় মানুষ বাঁচে, খুলে যায় খুশির দোর।
