

কবিতা সমগ্র

কবিতা
কবিতা
কবিতা
কবিতা
কবিতা
কবিতা
কবিতা
কবিতা
কবিতা

প্রদীপ সরকার
ডালাস, টেক্সাস
ত্রিপর্ণ
সাঁঝ
(১)
আমি এক ছোট্ট পাখির গল্প বলি
সাঁঝ বিকেলে,
গোধূলির স্বয়ম্বরে।
(২)
দামাল সাঁঝের নীলাভ বেতাল সন্ধি,
ঘূর্ণির বাতায়নে,
আমার বিভোল স্পন্দিত মনপদ্ম।
(৩)
সাঁঝে বৃষ্টি মেঘ-মল্লার বীণ।
মৃদুতা, বাদল, সন্ধ্যার ঝড়,
নিপুন ধূলার কঙ্কন-চুড়ি নিক্কন।
(৪)
তৃষিত নয়নে তোর সাঁঝ নামে,
নীড়ে ফেরা পাখালি বাতাস,
সোনালি রোদ্দুর-প্রাণ আগামী সকাল প্রত্যাশে।
(৫)
স্বপ্ন ও নক্ষত্রের আলো
সাঁঝে সান্ধ্য-ইমন কল্যান,
গহীন আকাশ নীলজল সবুজ প্রবাল।
(৬)
সমস্ত পৃথিবী স্থবীর হয়ে গেলে
বাতাস থাকে না বসে নিরুত্তর ঘাস-পানে চেয়ে;
তবু আমি ভালোবাসি ভালোবাসি সাঁঝ-গোধুলির ভাষা।
(৭)
সবাই হাসতে পারে,
কিন্তু সবাই হাসাতে পারে না,
হাস্যরসের সৃষ্টি এক শৈল্পিক অবদান।
(৮)
বড় এক অদ্ভুত সময় - বিবর্ণ সাজানো দিন ক্লান্ত,
আঙ্গিনা ভরানো ছিল সুখ-ফুলে
নিঃশব্দে লুকালো তারা, ফুটিলো না আর মনদুখে।
(৯)
আমার প্রাচুর্য্য, আমার অভাব, আর্তি,
আমার দেনা পাওনার বিনিময়
আমার শঙ্খনীল ওড়ার ধূমকেতু।
(১০)
দলছুট ওই রঙিন হরিণ,
বাঘের চোখ,
প্রতিবাদী ভাষা কঠিন হোক।
(১০)
দলছুট ওই রঙিন হরিণ,
বাঘের চোখ,
প্রতিবাদী ভাষা কঠিন হোক।
(১১)
জ্যোৎস্নার পারাবত ধীরগতি বয়ে যায়
অবসাদ কিছুটা দাঁড়িয়ে গেল গলিপথে
কাটাতে সময়।
(১২)
বিরল জ্যোৎস্না
ঢেউ লহরী ছন্দ
ঊর্বশী অনাবিল সৈকতে
(১৩)
অচেনা সখী
তব আঁখি সুরে
ভাসে গোধূলির রূপকথা।
(১৪)
রোদ্দুরে পিঠ সেঁকছে নদীর কন্যা,
এবং বন্যা
গেছে সুপ্ত গুহায় নিদ্রায়।
(১৫)
তীব্র দহন,
বসে আছি মেঘ জলকণা তোর জন্যে,
বাদল অঝোর বিদ্যুৎ তোর জন্যে।
(১৬)
কপোতীর প্রেমে মশগুল সাঁঝবেলা,
পারাবত-প্রিয়া সহজে ধরেছে মেঘ-মল্লার তান,
নীল কন্যা আকাশের গাঙে উজানে বাইছে দাঁড়।
(১৭)
সময় পালটে যায় কালের ভ্র ুকুঠিতে
কে যে আজ বাইছে উজানে
সময়ের অনন্ত গাঙ্গে।
(১৮)
আমি চলে যাব আজ কিংবা কাল
উদিচী ঊষার অন্ত্রে
আগ বহ্নি সুখে।
(১৯)
এ এক অন্য আমি
ক্ষুব্ধ বিকেল ক্ষিপ্ত সকাল
অপমান সইতে নারি।
(২০)
মৃত জীবের গন্ধ বয়ে আনে ভয়াল সংকেত।
মৃত্যুর গন্ধ বয়ে আনে বিপদের সংকেত
গুঁড়ি মেরে দিন এগোচ্ছেঃ প্রতিশোধ।
(২১)
দুইটি মূর্খ তখন উঠিয়াছে জেগে
ঘুরিতেছে তপোবন মাঝে।
(২২)
তোমার চোখে নিদ্রা এলে দুঃখ পেল চাঁদ।
আর দুমুঠো ভাত দিবি মা,
পেটের খোলের কোনে।
(২৩)
ক্ষীণায়ু সন্ধ্যায়,
প্রিয়তমা নিয়ে এস সমুদ্রে প্রলয়
উপত্যকা জুড়ে আনো মেঘের কুয়াশা।
(২৪)
নিরাপদে নীড় বাঁধছে মেঘের কন্যা
ঢুকছে দ্বীপে মৌসুমি প্রিয় বায়ু।
(২৫)
তুমি আমার মন ছুঁয়েছ,
আমি তোমার মন ছুঁয়েছি গভীরতায়।
(২৬)
ফিরে এস বৃত্তে আবার,
এস থাকি এক সাথে বৃত্তের ভিতরে,
নিয়ামক বৃত্ত ঘোরে শ্বাশত জ্যোৎস্নায়।
(২৭)
জলাবদ্ধ নিম্ন ভূমিরা বাড়ছে।
সরল আদিমতা জানে নাকো, খোঁজে নাকো পথ
কেমনে দমিয়ে রাখা যায় কামনা ও প্রবৃত্তির স্রোত।
(২৮)
লোভী এক সমুদ্রের ঢেউ ছুঁয়ে দিল বালুকাবেলা,
আর শঙ্খ হেসে সরে গেল আরো একটু দূরে
গোধূলির বাতাসের সাথে কবোষ্ণ রোদে।
(২৯)
মন ছাড়,
সে গতি কতটা দ্রুত হবে তুমি জানো।
অন্ধকারে ডুবে আছে মৃত হাঙরের ফিন্।
(৩০)
সমুদ্রের উপকূলে বাস, সমুদ্রের তীরে ঘাস ঘর,
সামুদ্রিক হাওয়া, মধ্যাহ্নে হাজার বছর
রূপকথা হয়ে যায় কাঁখে করে নিয়ে আসা জল।
(৩১)
এক দীর্ঘশ্বাস গভীর, অচেনা অন্তর,
এক বুক সতেজ বাতাস, উপকূল ঝড়,
এক বুক আমার প্রশ্বাস।

প্রদীপ সরকার
ডালাস, টেক্সাস
চতুর্ষ্পর্নী
(১)
অদৃশ্য আঁধার ভাসে,
অভিমানী স্বপ্ন ভাসে,
এসে যায় নিশ্চিন্ত রাতের আড়ালে,
মেঘলিমা কোমল কঙ্কনে।
(২)
কুঁড়ে ঘর ছাদে খড়ের আড়ালে চাঁদ যে লুকালো মুখ
ঝোপে ঝিঁঝিঁ ডাকে সাঁঝের বেলাতে,
শিউলি ফুটবে কাল,
এই নির্জনে তুচ্ছ প্রেমের সুখ।
(৩)
আশ্চর্য্য মানুষের সাথে পরিচয় হলে পরে
আলাদীন আশ্চর্য্য প্রদীপ
আশ্চর্য্য কিছু অভিজ্ঞতা জড়ো হয়
মনের অলিন্দে, আনাচে কোনাচে।
(৪)
ভালোবাসা এক সবুজ প্রাণের ক্ষেত,
স্বর্নের বেলাভুমি,
আলো-আঁধারির আবছায়া মাখা
গোধুলির ধুলিকণা।
(৫)
তুমি কি সেই তরুণ ফাল্গুনী
এস আজ গান শোনা যাক
অন্য এক নিথর
অথচ সবাক শূণ্যের কথকথা।
(৬)
সময় কিছু ভুল ছিল
তাই আলগা বাঁধন,
সময় কিছু ভুল ছিল
তাই মিলনহীনা।
(৭)
অলস সময় জাবনা কাটে
নদীর ধারে
বাদল মেঘ বৃষ্টি ধরে
জলকন্যার আঁচল ভরে।
(৮) ।।প্রেরণা তুমি।।
আমার প্রেরনা ঘুরে ফিরে দেখে
চোখ মুখ অবয়ব,
হারানো ডানার সুর ফিরে আসে
কোটি কোটি সময়ের পর।
(৯)
সেই কবে থেকে
ঘুম আসেনাকো চোখে!
অনেক দিন,অনেক রাত,
অনেক প্রহর ধোঁকে।
(১০)
যাজ্ঞসেনী, সাদা পোষাকে
তোমাকে দারুণ লাগে,
লাগে দারুন তোমার অমন
সাদা দাঁতের হাসি।
(১১)
আনমনে উড়ে চলা পাখি
মুছে ক্লান্তি সব
সূর্য্যের অলস উত্তাপে,
মন তোকে ফেরাবে রোদ্দুরে।
(১২)
পাগলাঝোরা কল্পনাতে সকাল বিকাল,
মেঘলা দিন কেমন হবে, উড়বে ময়ূর,
পাহাড় গ্রীবায় ‘শাঁওলী’-নামী কন্যা কেমন,
সহজ কথার উপাসনা শূণ্য প্রতীক।
(১৩)
মনের মিল তোমার আমার সখি,
উড়ে যাওয়া, ডানা মেলা এক পাখি,
ইতি টানব তোমার আমার কথায়?
সে তো ক্ষণস্থায়ী সময়ের প্রলাপ।
(১৪)
একটা বিন্দু বৃত্ত ঘুরছে গতিময় কাব্যের মত,
ক্রমশঃ ভেসে উঠছে পূর্ণিমা চাঁদ,
নীল শিখা কাঁপছে, নড়ছে, ব্যাপ্তিতে ছড়িয়ে পড়ছে
ব্রহ্ম মানসে।
(১৫)
জলবায়ু, জলাশয়,
বেলে হাঁস, জলের ডাহুক,
রাজহংসী বসে আছে সুর্যাস্তের শেষে
জলাভূমে রাজার টিলায়।
(১৬)
আগুনের তাপ ঝলসে দেয় মনআর পুরানো অতীত,
আগুনের তাপ নিয়ন্ত্রণ জোগায় উত্তাপ ও অন্ন,
অথচ সেই পাবক হয়ে ওঠে দারুন দাহক
যদি না তাকে বশ মানাতে পারো।
(১৭)
রূপকভাবে লিখছি,
তবু তুমি তো কিছু বলছ না।
ব্যস্ত আছ বুঝতে পারি,
অলীক কথা ভাবছি না।
(১৮) ।।তুমি।।
আজকে তুমি বইছ অন্য স্রোতে
পৈঠা আছে অন্য হাতেতে আলগা,
পশমী মেঘ উড়ছে, খেলছে, দুলছে,
নীল কাব্যে বসছে শিকড় একটা।
(১৯) ।।মন।।
বর্ণরেখায় ভরিয়ে দিচ্ছে মন,
আমার সুজন জন।
আমার আপন জন,
মনের থেকেও প্রিয় আমার জন।
(২০)
ঘেঁটে দেখে নিও ছাইয়ের ভিতর
আগুন কিছু থাকল কি না।
থাকলে আগুন, আঁচও আছে,
হাপর নিও ফুলকি হবে।
(২১)
দুলকি চালে চলতে পারো
অতীত বাতায়নে,
দুরন্ত ঝড় ছড়িয়ে দিও
দীর্ঘ ঘুমে তুষার চিরে দিয়ে।
(২২) ।।ভোর।।
যখন রাত প্রায় শেষ হয়ে আসে,
ক্রমে সূর্য্য এই প্রায় উঠে এলো পুবের সীমায়,
ছুঁয়ে ফেলি দিকচক্রবাল
এ সময় মসৃণ সময়।
(২৩) ।।সময় কম।।
তোমার এখন সময় আছে ঘৃণা করার?
জীবন এত প্রচুর না কি যুদ্ধ হবে?
তোমার এখন সময় আছে ভালবাসার?
জীবন আমার অল্প, খানিক ভালবাসো।
(২৪)
আমি এক রাজার নীরব অট্টহাসি
পাগলাখাকি জ্যোৎস্না ভেজা ভগ্ন বাঁশি
আলোর রেখা প্রাণ আঘাতি ঝর্ণাতলা
মাটির কলস শুষ্ক পুরুষ, আগুন গোলা।
(২৫) ।।জীবনের সত্যি কথাগুলি।।
রূপকথা
এই সব জীবনের সব সত্যি কথা
ঘুরে ফেরে কালজয়ী হয়ে
বন্ধ্যা স্বপ্ন জন্ম নেয় নতুন বিকেলে।
(২৬)
সোনার ক্ষেতের ধান
ফুরিয়েছে অঘ্রাণের মাঠে,
জীবন বিষন্ন হ’লে
নীল ডিমে ঢেকে রাখো বিষ।
(২৭)
উপকূলে উদাসীন হাওয়া কিঞ্চিত হারায় উৎসাহ।
তাই, বঙ্গোপসাগরের থেকে কে জানি
এনেছে বয়ে উদ্যমী ঈশানি বাতাস।
সন্ন্যাসিনী সূর্য্য দেখে সভ্যতার প্রথম ভোরেতে।

প্রদীপ সরকার
ডালাস, টেক্সাস
(১)
এ আগুন কেমন আগুন!
দগ্ধ করো ফাগ বাতাসে
উষ্ণ ডানায়!
দুখীর তারায়, আর্তি-হারা
স্বপ্ন মাখা বালুর চরা
স্রোতের টানে
সাঁঝ বিকালে দহন পাখায়।
(২)
।।জ্যোৎস্না।।
জ্যোৎস্না অমন অবিশ্বাস্য ভালো,
ঝরনা জলের স্পর্শে ভেজা ঝিরঝিরে সন্ধ্যায়।
মিহিন বাতাস ফুরফুরে উল্লাস,
উড়ায় কাহন একতারা হাতছানি।
শ্রবণ স্নিগ্ধ মুগ্ধ নিশির ডানা
আঁধারে জ্যোৎস্না আলোর তরল ধূম।
নির্ঝর ঝড় আলোর তরুণ তরু,
বোধন মায়ায় উদ্ভাসই গুন্ঠন।
(৩)
সন্ধ্যা শেষ,
নিথর একাকী রাত;
খেয়ালি বাতাস
প্রত্যয়ী প্রণয়ে
ডানা মেলে ভাসে আদুল আহ্লাদে,
অন্তহীন উদোম চাতাল।
(৪)
বাষ্পীয় জল নদীর ওপর ঊর্ণনাভ,
এলানো নদী,
গড়ানো জল,
ইচ্ছামতীর হালকা বায়,
রূপালি ঝিলিক জলের ঢেউ,
আকাশ এখন সোনালি রোদের উষ্ণ প্রস্রবণ।
(৫)
শৈত্য তুহীন ঠান্ডা জোনাকি রাত,
ধীর পায়ে গত রূপালি বরফ নিশা,
বসন্ত আজ তরুণ বুকের খুন
রোদ্দুরে পিঠ সেঁকছে তুষার চিতা,
হরিণী-বালার উদ্দাম হুটোপুটি,
নীল অম্বরে উথালি সোনালি ঢেউ,
চেনা কুয়াশা উধাও বিলীন ভোরে,
উষ্ণ রোদেরা কিঞ্চিৎ ফুরফুরে।
(৬)
ঈশ্বর দিয়েছে ডুব অনন্ত সমরে,
প্রান্তর, মরু, ডোবা, খাল, বিল, আসমুদ্র পাহাড়,
ধু ধু আর শুধু ধু ধু বারুদ আঘ্রাণ,
স্বচ্ছ-নীল প্রলেপিত ধোঁয়ার বলয়,
ছমছমে তল্লাট,
নেমে আসে কালো শঙ্কা পাঁশুবর্ণা ছাই,
যুদ্ধের প্রলম্বিত দীর্ঘ শ্রান্ত নিঃশ্বাসের মতো,
বিষণ্ণতা পূরবী সন্ধ্যায়।
(৭)
পাথরের বুকে ছেয়েছি আমার
সবুজ ঘরোয়া গান,
জল কল্লোল লহরী মেশানো
আকাশের খেলাঘর,
বালুচর, নদী, দূর দিগন্ত
জংলার কিংখাব।
(৮)
নির্জনে বেরিয়ে জাগে ক্রমশ সাঁতারু রোদ্দুর,
ঋজুরেখা টিকালো
শব্দহীনা ডানার দাপটে
বিনম্র আস্তিনে
ঝড় নামে ঠুনকো ঝিলিকে।
পুষ্প ফোটে বিদ্রোহে পরিচর্যাহীন।
(৯)
হাজার বছর,
ভেজানো পাথর,
প্রাচীন ঘ্রাণ,
পুবালি বায়,
চৈতি রাত,
গুহাচিত্র, গোলানো রঙ,
পাতা ঝরা পথ,
আদুরে দুপুর,
জিরোনো স্বেদ,
আদুল গা।
শিস দিলো দিল,
ছেঁড়া দুন্দুভি,
ডানা ঝাপটালো পাখীর ঝাঁক।
(১০)
স্বপ্নের অঙ্কুর মাটি ফেটেকুঁড়ি আর কোলাহল প্রজাপতি হয়ে যায়।
অগ্নি-গিরির বুকেপাথরের পাষাণী মায়ায়ফুল ফোটে স্বপ্নেরই
মনের গানে, কবিতায়।
(১১)
।।বোঝে না সে।।
পূর্ণিমা রাত,প্রেমিক চাঁদমেঘ আঙ্গিনায় ভাসল,
ভাসল মেঘের ডানার কোনায়
জ্যোৎস্না রাতে হাঁটল,
বেচারা চাঁদ হাজার যোজন হাঁটল,
আকাশ জুড়ে হাজার তারা, নীহারিকায়,
মেঘের ছোঁয়ায় নিশীথ রাতে
নৌকা হয়ে নীরব অভিমানে
শূণ্য হৃদয় বাইলো।
(১২)
চেনা মুখখানি ছায়ায় লুকোনো
হারানো সুরের গানে,
হারানো মনের ছন্দ,
তবু হাসি মুখ মনে পড়া আঁখি
পুরোনো দিনের দ্বন্দ্ব।
(১৩)
বর্ণমালায় হারিয়ে যাচ্ছে দিন,
ভাবছে বসে ডুবুরি এক পাখি,
নাইছে রোদে সজল চুলে মেঘমল্লার বীণ
বাল্যকালের প্রাচীন উপত্যকায়,
গাইছে পাখি জলের কণায় বিবর্তনের গান।
(১৪)
।।মৃত্যু এক রোমাঞ্চের বীথি।।
পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যাওয়া আজ আর মৃত্যু নয়,
মৃত্যু আজ সত্য নয়, দিগন্তের ইমন ভূপালি।
মহাকাল উজানের ডানায় ভাসিল চেতনা-মন–প্রাণ।
সৌরলোক ছায়াপথ
হাজারটি পরিপাটি
করে রাখা নীহারিকা অঙ্গুরীমালা,
পুঞ্জীভূত ঝিকিমিকি নক্ষত্র-সম্রাজ্ঞী
দেহহীনা আত্মার রাতচরা দিশাহীন পাখি,
কানাকানি না কি হাতছানি,
অজানার রোমাঞ্চকর অন্ধকার বীথি।
(১৫)
।।মৃত্যু এক সন্ন্যাস।।
মৃত্যুকে ভয় পাও তুমি!
মৃত্যু থাকে ঘাসের নিবিড়ে
আস্থা-নীড়ে
ঘুমন্ত গভীরে।
মৃত্যু এক উদাসী সন্ন্যাস।
মৃত্যু কোনও যন্ত্রণায়
মূঢ় তূর্য নয়,
তিনি এক উড়ন্ত মিতভাষ,
তিনি এক একাকী হদিস,
গূঢ় ব্রহ্ম কালের স্বনক।
মৃত্যু এক অযুত দিগন্ত
বৈতালিক শুণ্যতার গান,
অনন্য শান্তি,
মৃত্যু এক প্রতীক্ষিত অহল্যা তাপসী।
(১৬)
।।মুক্তির গান।।
পক্ষী ও পক্ষিনীর রূপকথা
ডানার গভীর প্রত্যয়ে
স্বচ্ছ ও স্বাধীন সুন্দর।
খাঁচাহীন বন্ধহীন বাধাহীন
রৌদ্রনীল মসৃণ
বহুদূর দিগন্তের গানভাসি দিকচক্ররেখা,
আকাশেরও নামকরণ হয় বুঝি
কবিতার প্রেয়সী আহ্লাদে।
পাহাড়ে প্রতিধ্বনি ফেরে
এ গান কল্লোলিনী উচ্ছ্বসিত মুক্তির গান।
(১৭)
।।ঝড় ও স্বপ্ন।।
ঈশাণের কোণে দূরভিসন্ধি মেঘ,
দূরন্ত ঝড়,
ধূলায় ঢাকবে ঘর,
আগুনের পাখি ঝলক দেবে কি জানো?
ঘূর্ণি-সায়র সৌখিন ‘ফিবোনাসি’,
যাযাবর নাকি স্বপ্নের ডানা মেলে!
(১৮)
।।রইবে না আর।।
রইবে না আর আমার কথা তোর ঘরে,
দীর্ণ আশা এক পলকে যায় সরে।
প্রহর ফুরায়, বাতাস আসে আনমনে,
আমার তুমি, তোমার আমি, ক্রন্দনে।
ক্লান্তি শেষ, অস্থি ঘুমায় চিৎ শুয়ে,
যুদ্ধ শেষ, রণের ভূমি রয় চেয়ে,
নিষ্পলক, একপেশে,
লজ্জাহীন শর শয্যা দর কষে।
(১৯)
।।দু’জনায়।।
ভেঙ্গেছি পাথর, ভেঙ্গেছি আগড় একসাথে
তাই ভেঙ্গেছে ঘর।
দেখেছি যে ঝড় উথাল পাথাল
কলকল্লোল একসাথে
তাই বেঁধেছি ঘর।
দেখেছি দুজনা স্রোতস্বিনী, পাহাড়ি পথ,
হেসেছি দুজনা, খেলেছি দুজনা একসাথে
তাই স্বয়ম্বর।
ভেঙ্গেছি ঘর, বেঁধেছি ঘর, স্বয়ম্বর।
(২০)
।।ভালবাসা চয়নিকার ছলে।।
ভালবাসা চিরন্তন অন্তহীন পাখি
দুরন্ত সকাল কিংবা
অর্থহীন বিকেলের ক্লান্তিহীন সখি,
হিরণ্য ঝলক,
অনাবিল বহমান স্রোতস্বীনি
তটীনির উজানেতে ভাসা,
বাউলের দার্শনিক তথ্য-কথা
মেঠোপথে একতারা গান,
ছন্নছাড়া ছন্দ-কোলাহল,
তূর্যনাদ,
বেদুইন, উড়ন্ত ডানা।
(২১)
জেনো, সত্যি জেনো,
আমি লিখেছি তোমার জন্যে,
নির্জনে ঝরা একাকি ঝর্ণা
ঝরেছে তো কারো জন্যেই।
তাই এ থাক তোমার আমার প্রিয়তমাসুর কাহিনী।
(২২)
সমুদ্রের গভীর শয্যায়
ক্ষণস্থায়ী ওঠা-নামা বালির অতলে,
কোটি অশ্রু, প্রেম ভালবাসা,
লড়াই-এর অবশেষগুলি
জলে ওই দেবতার বরুনের শান্ত সমাহিত
কবরে শায়ীত তারা।
অক্ষৌহিণী বছরের
মৃত ইতিহাস।
অবহেলে মানুষের অধুনা সভ্যতা
ভুলে গেছে তাহাদের নিস্তব্ধ অতীত।
(২৩)
।।প্রতীক্ষা।।
প্রতীক্ষায় ছিলাম তো আমি,
তুমি বুঝলে না,
তুমি এলে না।
ক্লান্ত প্রহরগুলি চলে গেল,
ঝরে গেল
প্রত্যুষ ও গোধূলির বিরহী সময়
ঝিরিঝিরি উদাস ডানায়।
ভালবাসা ধূসর খানিক
বকুলের গন্ধ নেভা সাঁঝে।
ভালবাসা কি বাল্যখিল্য বালির পুতুল!
প্রতীক্ষিত ফিরে গেল
অগোছালো পুরোনো সে আকাশের বাঁকে।
(২৪)
ভালবাসা পান্ডুলিপি তরুণীর খোলা এলো চুল
ধূসর বাগান,
আনমনা আঁখি আর আখরের
অনবদ্য
স্বরচিত প্রত্যয়, প্রতিশ্রুতি ও নতুন ঠিকানা,
সময় মানে না মানা।
বহু ভাষ্য শীতের শিশির
প্রত্যুষের মিহি রোদে শিল্পী সাজে,
ঈষদুষ্ণ কারু-কন্যা কাহার দুহিতা!
(২৫)
উঠোনে দিয়েছি ফুল,
ঝড় এসেছিল,
বাতাস কুড়িয়ে নিল ফুল,
ছিল ভুল –
ছড়ানো ঝড়ের দিনে
শিলা বৃষ্টি পাংশু আকাশের মেঘে ছড়ানো আমার বকুল।
(২৬)
দক্ষিণ সমুদ্রের তীরে
নিসর্গ কবিতা শুরু মাঝরাতে
জলের প্রবাহে ।
থমথমে মেঘের ওপর দূরে বহু দূরে
অনিপুন অবিন্যস্ত স্বপন তখন ঘুমায়ে
ভগ্নস্তুপে কারুকার্য করে,
বর্ণ আনে,
গান বাঁধে,
বাহ্যজ্ঞানশূণ্য হয়ে কাহার গহীনে
খুঁড়ে আনে কবিতার আরণ্যক দ্যুতি
বিনয়ী নম্রতায়!
(২৭)
পাখির পালক ডুবসাঁতারেতে
মগ্ন নাকি হয়েছিল কোনো এক কালে!
দুর্গম পাহাড় নাকি শুনেছিল
প্রাচীন পৃথিবী থেকে অপরাহ্নে সবুজের গান,
অঝোর বৃষ্টিরধারা কখনো কি বুঝেছিল অশ্রুর ভাষা!
(২৮)
দিনের প্রয়োজন খেয়ে ফেল বুভুক্ষু সময়,
তুমি কিছু রেখে যেও ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট পশ্চিমের আলো।
ফেলে যেও কিছু আলো গোধূলির মরুভূমি থেকে।
আমি সেই আলো জড়ো করে জ্বালাবো আগুন,
রেখে দেব সেঁকার জন্যে শীতের সকাল।
কিছু দেব মেঘকে আগুন ।
(২৯)
তুমি কোন মূর্ছনার দ্বীপে ছিলে,
তুমি কোন সায়রীর কারুকার্য্যে
নাবিকের গতিপথে সমুদ্রের গন্ধঘন
কৃষ্ণকুমারীর মতো লবনাক্ত বাতাস ছোঁয়ালে,
কেন জানি মনে হ’ল
ঝলসানো জলদস্যুর তরোয়ালের মতো
ঠিকরানো অদ্ভুত চাহনি তোমার, মহুয়া।
(৩০)
সাগর বেসেছ ভালো?
উড়ে এল শঙ্খ আরো কিছু কাছে,
ভেসে এল সমুদ্রের ঢেউ
বালুকা কন্যার তটে আরো একবার।
আমার প্রেমিকা হতে গেলে
অল্প পরিচয়ে,
নীল শূণ্যে শঙ্খচিল হয়ে
আরো কিছু বালুকণা দিয়ে
বাতাসের গতিপথে লেখিকা লিখিও তব নাম।
(৩১)
সেদিন তুমি আমার চেনা হ’লে,
সেদিন তুমি আমার দ্বারে এলে,
সেদিন তুমি অল্প খানিক করে
আমার চেনা হলে।
সেদিন তুমি মেঘ সরিয়ে ফেলে,
আমার কাছে এলে,
সেদিন তুমি ভুল সরিয়ে ফেলে,
তুষাররাতে ঊষ্ণ হয়েএলে,
ফুল ফুটিয়ে এলে,
সেদিন তুমি আমার চেনা হলে।
(৩২)
।।বৃত্ত।।
আমাদের সবারই সংসার আছে,
আমাদের নিজস্ব সংসার,
তা একটি বৃত্ত দিয়ে ঘেরা,
এ কোন স্থির বৃত্ত নয়,
এ বৃত্ত গতিময় সত্তা।
একটা দু’টো করে বৃত্তের কিছু অংশ
কখনো কখনো ছিটকে বেরিয়ে যায়,
কিছু টুকরো কখনো ঢুকে পরে বৃত্তের ভিতরে, মধ্যিখানে,
বৃত্ত ঘুরতে থাকে আবার, চরৈবেতি চরৈবেতি।
দেওয়া আর নেওয়া চলতে থাকে নিরন্তর
অথবা খানিক সময়ের জন্যে।
বৃত্ত ঘোরে নিরন্তর একমুখী সময়ের দিকে।
সময় সময়ের জন্যেই বিশ্রাম নেয় শুধু।

প্রদীপ সরকার
ডালাস, টেক্সাস
(১)
তোমার প্রতীক্ষায় কেটে গেল
বেশ কিছু বিরহী সময়।
তুমি কেন সংযত এতো?
কেনো তুমি আমারই মতো
আকুল ও ব্যাকুল হলেনা,
কেনো ভাসালেনা ভেলা, একাকিনী,
জোয়ারের জলে খরস্রোতা!
না কি রেখে দিলে ঢেকে
সে উতরোল জাহ্নবীর ঢেউ
না দেখানো ভাবে
অকূল সে অসীম মনের পাথারে!
একনিষ্ঠ নিজস্বতা একান্ত বাগানে।
(২)
।।শূণ্যতা।।
একটা শূণ্যতা ভরে উঠছে ক্রমশঃ,
শূণ্যতা ভরে উঠছে ঝড়ো বাতাস দিয়ে,
ক্রমশঃ ভরে উঠছে শূণ্য ফাঁকা জায়গাগুলি,
করতল, হৃদয়, মন।
ঝড়ো বাতাস কি ভরাতে পারবে শূণ্যতা
পুরোপুরি ভাবে!
ঝড়ো বাতাস কি শূণ্যতায় ঘূর্ণি তুলবে!
না কি আবার অতীত হবে,
বাতাস ফিরে যাবে ঝড়ের কাছে অন্য
কোন দিগন্তে উড়বে বলে,
অন্য কোন মোলায়েম শূণ্যে ঢুকে
স্থিত প্রজ্ঞায় চিরকাল আবদ্ধ র’বে!
(৩)
এলোমেলো বাতাস সরিয়ে,
তুমি কি গৃহিণী হবে মোর
আশ্চর্য সময়,
তোমাকে আমার ছন্দে, তোমারই প্রিয় নিজস্বতায়
সাজাবো গোধূলি আলোয়
সাতটি মায়াবী বনে আলোকে রেখেছি ধরে
আকাশে উত্তরীয় মেলে।
(৪)
এক বিন্দু বিবেকের কাছে
নতজানু তোমার সমাজ
ইচ্ছাপূরণের বেয়াদপ খেলায়।
তুমি কার পূজায় বসেছ?
তৎপর নিয়তি জেনো লিখে চলে রোজনামচা
ক্রমাগত নির্ভেজাল স্নায়ু-বিপর্যয়ে।
দাপট ক্ষমতাহীন হবে কবে?
(৫)
ব্যাধের শরের মতো
মেঘের পাখালি বেয়ে
তির্যক রোদ পড়ে শায়িত শিশিরে।
কৃপণ আকাশ কেন তুমি অন্তহীন
আলোর কাকলি
আনোনাকো পৃথিবীর জটিল জটায়।
(৬)
জীবন দক্ষিণা দিয়ে
চোখে চোখে তাকাবো কখনও,
তখন এ চরাচরে প্রাচুর্য্য তরুণ তৃষা
ডালে ডালে মুখরিত পাখি,
সপ্তবোধ হয়েছে খচিত
অনামী পাহাড়ে।
মাঠে ঘাটে নিরন্নের ফসল তোলে
সফল ধমণী।
(৭)
।।কবির মগজে।।
কবির মাথার ভিতরে মগজে মগজে
সময় বা অসময়ে,
বেলা যাই হোক
শব্দেরা খুঁড়ে চলে হাজার খনি।
চকিত বজ্রের মতো
কখনো বা বেয়ে আসে
মসৃণ নরম পায়ে অর্থময় ধ্বনি।
(৮)
।।রৌদ্রের রূপ তুমি দেখছ কি।।
রৌদ্রকে কখনো দেখেছ কি
সমুদ্রের সাদা ঐ ফেনাটির মতো?
নাকি সময়ের কালে
হলুদকন্ঠী সে হয়ে যায়
নীলাদ্রীর দুপুরবেলায়!
না কি সে জোনাকির মতো
সবুজ ও সাদায় ভাসে
নক্ষত্রের অন্য কোন আলোকের সাথে
কিছুটা সময় নিয়ে হাতে!
(৯)
।।ভাষণ।।
এই নদী আমার,
এ পাহাড় আমার,
এই আকাশ, বাতাস, সবুজ,
প্রাণ, ঝড়-ঝঞ্ঝা
সবইতো আমার
এই মাটি আমার শপথভূমি
আমি এই মাটিতে লালিত-পালিত
আমি তোমাদের,
এ আমার আজন্ম শৈশব ও কৈশোরের বেলাভূমি,
তারুণ্যের দিকচক্রবাল,
বার্ধক্য কাটাবো হেথায়’।
‘দাদা, আপনি বেশ হাসান কিন্তু’।
(১০)
।।মন।।
মানুষের মন কী ভাবে নাড়া চাড়া করে চিন্তা,
শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে আসে পরের শতাব্দীতে
অচিরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে সময়ের সাথে
এত দূরে থেকে অহল্যা বাতাস
কী ভাবে দুপুর ছুঁয়ে কানামাছি খেলে আসে
বিকেলের হালকা রৌদ্রের দানা,
আমাকে এ কোন তৃষ্ণায় তুমি পেয়েছ কবোষ্ণ
মনের আঁধার!
(১১)
।।তুমি।।
কবে তুমি শিখবে যুবী, ধন্যবাদ দিতে,
কবে বীণে শুনে অক্লান্ত মরমিয়া গান
বেদুইন বুকে আলোড়ন তুলে যাবে,
কবে তুমি ধূলো খেলে উঠে
মাখাবে ধূলায় প্রাণভরা স্মিত হাস্যের কোণায় কোণায়
নীড় বেঁধে তাকাবে আকাশে,
উদ্ভ্রান্ত হবে রাজহংসের ডানার ভিতরে
ভেজাবে বুকের আগুন পাপবোধ ভুলে গিয়ে।
ইতস্তত কিছু রাজহংস প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
(১২)
গল্পেরা সব দ্রুত হেঁটে সরে যাচ্ছে,
একাকী আয়না নিজের ছবিতে মগ্ন,
অক্ষরগুলি মন্ত্রের মত জপছে
অজানা কুমারী কন্যা
আপন গোপন পত্রে,
অতি চেনা এক নিবিড় বিকেল
ক্রমে জনপথে নামছে
বিদূষী বিধূর আলোকিত অরুবর্ণা।
(১৩)
এই কুয়াশায় সূর্য্য উদয়
ধোঁয়ায় ঢাকা থাকছে,
মনে জমে ওঠা দোলের আবীর
শিশুর মতো খেলছে,
স্পষ্ট এবং অস্পষ্ট প্রিয়ার কাহন,
রোদ উঠে গেলে এলোমেলো মনে হচ্ছে।
(১৪)
।।প্রবাসী হৃদয়।।
শিশিরের গোলার্ধগুলি এইখানে আমার ভিতরে
ভিজিয়েছে প্রবাসী হৃদয়।
ডেকে গেছে সাহসী তরুণী
একতারা দিয়ে
নিজ হাতে এঁকে দিয়ে আত্ম-প্রকৃতি
ব্যাকুল বিচ্ছেদে
“কান্দো কেনে!” বলেছে গোপনে।
(১৫)
।।ছত্রাকার।।
ছত্রাকার সত্যিকার বৃত্তাকার,
আসবে ফিরে সন্দ নেই, বারংবার,
গুছিয়ে রাখ্ বন্ধ গৃহে, যত্ন কা’র?
কাব্য রাখ্, স্বপ্ন রাখ্, গদ্য থাক্।
পরীর ডানায় রঙ-বেরঙ লুকিয়ে রাখ্,
আসলে ফিরে দেখবি সবি ফুড়ুতকার।
স্বপ্ন থাক, কাব্য থাক, মুক্ত দ্বার।
(১৬)
।।তুমি কি জানো?।।
তুমি কি জানো? আবার কোনদিন দেখা হবে কি না আমাদের?
তুমি কি জানো? হঠাত কোন একদিন
আকাশের বজ্রের মেঘ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে
উদ্দাম বাতাসে, উড়ে যাবে সব কিছু মেঘের রাজ্য ছেড়ে
খোলা মনে নীলের সাম্রাজ্যে?
নারীর অলীক গল্প রোদে সেঁকে আরো উষ্ণ আরো অনড় হবে?
ঝলসানো জলদস্যুর তরোয়ালের মতো চাহনিরা
ডুব দিয়ে চলে যাবে সমুদ্রের খাঁড়ি আর জলাভূমি ছেড়ে
আলেয়াকে ছুঁয়ে উপমা প্রাচীন পাথরে?
(১৭)
।।বর্ষা।।
ঘুরছ ফিরছ বনের ভিতর,
এক পশলা বৃষ্টি হবে ভাবছো।
দুলছে লতা, কাঁপছে পাতা,
জলের কিছু ঝাপটা গায়ে লাগছে।
‘জ্যোৎস্না রাতে আষাঢ় আকাশ!’,
হরিণগুলি ভাবছে!
‘মত্ত ভাবে দুরন্ত ঝড়, বর্ষা কি আজ আসছে!’
(১৮)
।।সৃজন।।
প্রিয়তম সুন্দর, দীক্ষা নিও বাসনার মন্ত্রে তুমি
লিপ্ত হ’য়ো প্রজনন লিপ্সায়,
নান্দনিক, এ তোমার জৈবিক যৌবনের প্রয়োজন নয়,
গভীর গভীরতর জ্ঞানের ভিতর এ এক অণূঢ়া রাগিনী
মিতভাষী সৃষ্টির সৃজন,
এ জন্ম মনীষার, অহল্যা প্রতীক্ষার,
মৌলিকতা দিয়ে এ সুন্দর গাঁথিও বিন্যাসে।
(১৯)
।।আমার সময়।।
আমার পৌষের শীত কাটেনি এখনও,
মাঘের নিশুতি রাত নিশির কন্যার মতো অস্ফূটে ডাকে।
বুকের এ প্রকোষ্ঠে হাঁসফাঁস বাতাসের মেঘ।
এই তো দিন যাপন। এই তো সুতীক্ষ্ণ কাঁটা।
নিদ্রাহীন তুমি, এই তো তোমার ঐ অভিমান ছোঁয়া
আড়ালে একক স্বপ্ন অন্তরালে রাখা
চোখে জলবিন্দু পরাণের,
সংসার বেদনার যুদ্ধ সাজ, পাগলের অনর্গল হাসি।
(২০)
দুঃখগুলি হারিয়ে গিয়েছে।
গেছে কি? সত্যি বলেছো?
না কি গালে ঠেশে ঠোঁট ধরে আছে
কোণা জোড়া শূণ্যতার অবলুপ্ত হাসি!
আমার হাতের করতলে জমে ওঠে
সভ্যতার স্তব্ধ অবয়ব।
অরণ্যে পায়রাগুলি ওড়েনা
আচ্ছন্ন রাতের চাঁদেতে।
অতিন্দ্রীয়া, ঘুমিও না তুমি।
তোমার ঘুম পেলে
বিষন্ন জলের ফোঁটা না পেয়ে
এসে ফিরে যাবে রাতের হরিণ।
(২১)
।।সাঁঝ আসে।।
এ এক অনন্য মেদিনী,
শীতের এ পৃথিবীতে বিকেলের মোহময়ী আলো চলে গেলে
অন্য সব কলরব ফেলে
কোন এক নামহীনা পাখি উড়ে এসে বসে
নিকট পাহাড়ে
ক্ষীণ এক স্রোতস্বীনি ঝর্ণার জলে ভেজা প্রস্তরের ‘পরে
অজানা সময়ে গেয়ে যায় গান আবেগে সোহাগী পাখি আনমনে।
সাঁঝকাল নুয়ে ধীরে নেমে আসে,
সীমান্তে ডানার ঝাপটায় ডুব দেয়,
বেয়ে পড়ে প্রগাঢ় রূপসীর বুঁদ হয়ে থাকা জাফরানি তনিমা সুন্দর।
(২২)
।।দ্রাব্য ভালবাসা।।
গলিত দ্রবণের মত ভালবাসা মিশে যায়
গোধূলির লাজুক হাসিতে।
আকাশে দ্বাদশীর চাঁদ তখনও ভরেনি পুরো
সূর্যাস্ত তখনও ছিল বাকি মধ্যমাঠে।
আমার আর্দ্র হাতে গন্ধরাজ ফুল,
আলে শুয়ে আজ আমি উদ্দালক হয়েছি দ্রাবিতা।
(২৩)
।।আরুণি, প্রশ্ন তোমাকে।।
তুমি কি দুর্বোধ্য? তুমি কি অবুঝ আরুণি?
তুমি কি শব্দের সাথে পায়ে পা মেলাও?
অশ্বখুরে না?
দুর্দান্ত সবুজ ঘেঁসে জল ছুঁয়ে থাকো?
শ্বাপদ সূর্য্যের মতো গুঁড়ি মেরে
ললাটে কয়বার আলো নিয়ে হয়েছ প্রহরী
সঙ্গীহারা বিষন্ন আকাশে?
এই সব প্রশ্নগুলি মিথ্যা হ’তে পারে?
ওই দেখ সপ্ত ঋষি চেয়ে দেখে তোমাকে নীরবে।
(২৪)
উড়ে যায় কিছু পাখি, কিছু মৌমাছি, কিছুটা সময়,
কিছু কাব্য, কিছুটা রসদ।
থেকে যায় কিছু দুঃখ, খানিক পাহাড়,
কিছু চিরন্তনী,
আমি আর থাকি না এখানে।
থাকে কিছু অবসর, উত্থান পতন,
আকাশকে ব্যাখা কোরো তুমি,
কি করে এ রহস্য মিথ্যা হতে পারে?
(২৫)
।।বেদনার রূপ।।
বেদনায় এক অনবদ্য শূণ্য ভরে আছে,
বেদনা রাখেনা মনে নিজেকেই,
কখন কেমন ছিল সেটা,
এর আছে আগামী মূর্চ্ছতা
ফিরে দেখা অতীতের।
(২৬)
।।আমাদের মগজের রেখাগুলি।।
আমাদের মগজের রেখাগুলি সাঁতরায়,
নিজস্ব কোঠরে এঁকে বেঁকে খেলে যায়
অনেক অনেক গভীরে,
গভীর সত্তা,
সুতানুটি বেয়ে নামে প্রবাহ স্পর্ধা,
স্নায়ুতে ঈষৎ বিদ্যুৎ
দ্রুত চিরে বয়ে যায় মনের কোণায়
অসীম মাধুর্য্যে গড়া তুমি।
(২৭)
।।বিশ্বাস।।
বিশ্বাস
এক সুন্দরতা, এক নির্ভরতা,
এক লাবণ্য, এক ভালবাসা,
এক অনবদ্য শব্দ অনুভব,
ডেকে নেয় কাছে অতি কাছে,
বিশ্বাস এই সভ্যতার এক বিস্ময়,
আণুবীক্ষণিক সূক্ষ্ম নির্যাস,
বিশ্বাস এক সমর্পণ,
এক দারুন উল্লাস।
(২৮)
।।ঘর।।
ঘর যদি ভাব, ঘর ঘিরে থাকে মমতা, উষ্ণতা,
ঘর যদি ভাব, ঘরেতে থাকেনা অশ্রুরা রাশি রাশি,
থাকেনা মেঘের স্পর্শ, কিংবা উত্তেজনা, পাপের বীজাণু,
ঘর যদি ভাব, ঘরেতে থাকেনা কোন ঝড়,
ঘরেতে বিশ্বাস থাকে, ঘরেতে আশা থাকে নিবিড় সুজন।
সতেজ কানন। (জানুয়ারি ৬, ২০১৬)
(২৯)
।।জন্মদিন।।
আবিষ্কার ক’রে নাও,
জমাট বেঁধে গেছে, তালগোল গিয়েছে পাকিয়ে
রূপকের বেড়াজালগুলি।
অবয়বে এসে গেছে স্মৃতি
সহজাত রমণীয় শিলা।
সেদিন ওই ছবি ছিল যৌবনের নীড়ে,
আজ না কি সেটা ছোটবেলা হয়ে গেছে,