top of page
srikrishna.jpg
কবিতা সমগ্র
sea1.jpg
সূচীপত্র
প্রদীপ সরকার 
ডালাস, টেক্সাস
প্রদীপ সরকার

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

লেখকের জন্ম বালুরঘাট, পশ্চিম দিনাজপুরে। ছাত্রবস্থা থেকেই কবিতা চর্চা করে চলেছেন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে লিখেছেন। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ডালাসে থাকেন। 

ত্রিপর্ণ

সাঁঝ

 

(১)

মি এক ছোট্ট পাখির গল্প বলি

সাঁঝ বিকেলে,

গোধূলির স্বয়ম্বরে।


(২)

দামাল সাঁঝের নীলাভ বেতাল সন্ধি,

ঘূর্ণির বাতায়নে,

আমার বিভোল স্পন্দিত মনপদ্ম।

 

(৩)

সাঁঝে বৃষ্টি মেঘ-মল্লার বীণ।

মৃদুতা, বাদল, সন্ধ্যার ঝড়,

নিপুন ধূলার কঙ্কন-চুড়ি নিক্কন।


(৪)

তৃষিত নয়নে তোর সাঁঝ নামে,

নীড়ে ফেরা পাখালি বাতাস,

সোনালি রোদ্দুর-প্রাণ আগামী সকাল প্রত্যাশে।


(৫)

স্বপ্ন ও নক্ষত্রের আলো

সাঁঝে সান্ধ্য-ইমন কল্যান,

গহীন আকাশ নীলজল সবুজ প্রবাল।

 

(৬)

মস্ত পৃথিবী স্থবীর হয়ে গেলে

বাতাস থাকে না বসে নিরুত্তর ঘাস-পানে চেয়ে;

তবু আমি ভালোবাসি ভালোবাসি সাঁঝ-গোধুলির ভাষা।

(৭)

বাই হাসতে পারে,

কিন্তু সবাই হাসাতে পারে না,

হাস্যরসের সৃষ্টি এক শৈল্পিক অবদান।

(৮)

ড় এক অদ্ভুত সময় - বিবর্ণ সাজানো দিন ক্লান্ত,

আঙ্গিনা ভরানো ছিল সুখ-ফুলে

নিঃশব্দে লুকালো তারা, ফুটিলো না আর মনদুখে।

(৯)

মার প্রাচুর্য্য, আমার অভাব, আর্তি,

আমার দেনা পাওনার বিনিময়

আমার শঙ্খনীল ওড়ার ধূমকেতু।

(১০)    

লছুট ওই রঙিন হরিণ,

বাঘের চোখ,

প্রতিবাদী ভাষা কঠিন হোক।

(১০)    

লছুট ওই রঙিন হরিণ,

বাঘের চোখ,

প্রতিবাদী ভাষা কঠিন হোক।

(১১)

জ্যোৎস্নার পারাবত ধীরগতি বয়ে যায়

অবসাদ কিছুটা দাঁড়িয়ে গেল গলিপথে

কাটাতে সময়।

 

(১২)

বিরল জ্যোৎস্না

ঢেউ লহরী ছন্দ

ঊর্বশী অনাবিল সৈকতে

 

(১৩)

চেনা সখী

তব আঁখি সুরে

ভাসে গোধূলির রূপকথা।

 

(১৪)

রোদ্দুরে পিঠ সেঁকছে নদীর কন্যা,

এবং বন্যা

গেছে সুপ্ত গুহায় নিদ্রায়।

 

(১৫)

তীব্র দহন,

বসে আছি মেঘ জলকণা তোর জন্যে,

বাদল অঝোর বিদ্যুৎ তোর জন্যে।

(১৬)

পোতীর প্রেমে মশগুল সাঁঝবেলা,

পারাবত-প্রিয়া সহজে ধরেছে মেঘ-মল্লার তান,

নীল কন্যা আকাশের গাঙে উজানে বাইছে দাঁড়।

(১৭)

ময় পালটে যায় কালের ভ্র ুকুঠিতে

কে যে আজ বাইছে উজানে

সময়ের অনন্ত গাঙ্গে।

 

(১৮)

মি চলে যাব আজ কিংবা কাল

উদিচী ঊষার অন্ত্রে

আগ বহ্নি সুখে।

 

(১৯)

এক অন্য আমি

ক্ষুব্ধ বিকেল ক্ষিপ্ত সকাল

অপমান সইতে নারি।

 

(২০)

মৃত জীবের গন্ধ বয়ে আনে ভয়াল সংকেত।

মৃত্যুর গন্ধ বয়ে আনে বিপদের সংকেত

গুঁড়ি মেরে দিন এগোচ্ছেঃ  প্রতিশোধ।

 

(২১)

দুইটি মূর্খ তখন উঠিয়াছে জেগে

ঘুরিতেছে তপোবন মাঝে।

 

(২২)

তোমার চোখে নিদ্রা এলে দুঃখ পেল চাঁদ।

আর দুমুঠো ভাত দিবি মা,

পেটের খোলের কোনে।

 

(২৩)

ক্ষীণায়ু সন্ধ্যায়,

প্রিয়তমা নিয়ে এস সমুদ্রে প্রলয়

উপত্যকা জুড়ে আনো মেঘের কুয়াশা।

 

(২৪)

নিরাপদে নীড় বাঁধছে মেঘের কন্যা

ঢুকছে দ্বীপে মৌসুমি প্রিয় বায়ু।

 

(২৫)

তুমি আমার মন ছুঁয়েছ,

আমি তোমার মন ছুঁয়েছি গভীরতায়।

 

(২৬)

ফিরে এস বৃত্তে আবার,

এস থাকি এক সাথে বৃত্তের ভিতরে,

নিয়ামক বৃত্ত ঘোরে শ্বাশত জ্যোৎস্নায়।

 

(২৭)

লাবদ্ধ নিম্ন ভূমিরা বাড়ছে।

সরল আদিমতা জানে নাকো, খোঁজে নাকো পথ

কেমনে দমিয়ে রাখা যায় কামনা ও প্রবৃত্তির স্রোত।

 

(২৮)

লোভী এক সমুদ্রের ঢেউ ছুঁয়ে দিল বালুকাবেলা,

আর শঙ্খ হেসে সরে গেল আরো একটু দূরে

গোধূলির বাতাসের সাথে কবোষ্ণ রোদে।

 

(২৯)

ন ছাড়,

সে গতি কতটা দ্রুত হবে তুমি জানো।

অন্ধকারে ডুবে আছে মৃত হাঙরের ফিন্।

 

(৩০)

মুদ্রের উপকূলে বাস, সমুদ্রের তীরে ঘাস ঘর,

সামুদ্রিক হাওয়া, মধ্যাহ্নে হাজার বছর

রূপকথা হয়ে যায় কাঁখে করে নিয়ে আসা জল।

 

(৩১)

ক দীর্ঘশ্বাস গভীর, অচেনা অন্তর,

এক বুক সতেজ বাতাস, উপকূল ঝড়,

এক বুক আমার প্রশ্বাস।

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

প্রদীপ সরকার 
ডালাস, টেক্সাস

চতুর্ষ্পর্নী

(১)

দৃশ্য আঁধার ভাসে,

অভিমানী স্বপ্ন ভাসে,

এসে যায় নিশ্চিন্ত রাতের আড়ালে,

মেঘলিমা কোমল কঙ্কনে।

 

(২)

কুঁড়ে ঘর ছাদে খড়ের আড়ালে চাঁদ যে লুকালো মুখ

ঝোপে ঝিঁঝিঁ ডাকে সাঁঝের বেলাতে,

শিউলি ফুটবে কাল,

এই নির্জনে তুচ্ছ প্রেমের সুখ।

 

(৩)

শ্চর্য্য মানুষের সাথে পরিচয় হলে পরে

আলাদীন আশ্চর্য্য প্রদীপ

আশ্চর্য্য কিছু অভিজ্ঞতা জড়ো হয়

মনের অলিন্দে, আনাচে কোনাচে।

 

(৪)

ভালোবাসা এক সবুজ প্রাণের ক্ষেত,

স্বর্নের বেলাভুমি,

আলো-আঁধারির আবছায়া মাখা

গোধুলির ধুলিকণা।

 

(৫)

তুমি কি সেই তরুণ ফাল্গুনী 

এস আজ গান শোনা যাক

অন্য এক নিথর

অথচ সবাক শূণ্যের কথকথা।

 

(৬)

ময় কিছু ভুল ছিল

তাই আলগা বাঁধন,

সময় কিছু ভুল ছিল

তাই মিলনহীনা।

 

(৭)

লস সময় জাবনা কাটে

নদীর ধারে

বাদল মেঘ বৃষ্টি ধরে

জলকন্যার আঁচল ভরে।

 

(৮) ।।প্রেরণা তুমি।।

মার প্রেরনা ঘুরে ফিরে দেখে

চোখ মুখ অবয়ব,

হারানো ডানার সুর ফিরে আসে

কোটি কোটি সময়ের পর।

 

(৯)

সেই কবে থেকে

ঘুম আসেনাকো চোখে!

অনেক দিন,অনেক রাত,

অনেক প্রহর  ধোঁকে। 

(১০)

যাজ্ঞসেনী, সাদা পোষাকে

তোমাকে দারুণ লাগে,

লাগে দারুন তোমার অমন

সাদা দাঁতের হাসি।

 

(১১)

নমনে উড়ে চলা পাখি

মুছে ক্লান্তি সব 

সূর্য্যের অলস উত্তাপে,

মন তোকে ফেরাবে রোদ্দুরে। 

 

(১২)

পাগলাঝোরা কল্পনাতে সকাল বিকাল,

মেঘলা দিন কেমন হবে, উড়বে ময়ূর,

পাহাড় গ্রীবায় ‘শাঁওলী’-নামী কন্যা কেমন,

সহজ কথার উপাসনা শূণ্য প্রতীক।

 

(১৩)

নের মিল তোমার আমার সখি,

উড়ে যাওয়া, ডানা মেলা এক পাখি,

ইতি টানব তোমার আমার কথায়?

সে তো ক্ষণস্থায়ী সময়ের প্রলাপ।

 

(১৪)

কটা বিন্দু বৃত্ত ঘুরছে গতিময় কাব্যের মত,

ক্রমশঃ ভেসে উঠছে পূর্ণিমা চাঁদ,

নীল শিখা কাঁপছে, নড়ছে, ব্যাপ্তিতে ছড়িয়ে পড়ছে

ব্রহ্ম মানসে।

 

(১৫)

লবায়ু, জলাশয়,

বেলে হাঁস, জলের ডাহুক,

রাজহংসী বসে আছে সুর্যাস্তের শেষে

জলাভূমে রাজার টিলায়।

 

(১৬)

গুনের তাপ ঝলসে দেয় মনআর পুরানো অতীত,

আগুনের তাপ নিয়ন্ত্রণ জোগায় উত্তাপ ও অন্ন,

অথচ সেই পাবক হয়ে ওঠে দারুন দাহক

যদি না তাকে বশ মানাতে পারো।

 

(১৭)

রূপকভাবে লিখছি,

তবু তুমি তো কিছু বলছ না।

ব্যস্ত আছ বুঝতে পারি,

অলীক কথা ভাবছি না।

 

(১৮)  ।।তুমি।।

জকে তুমি বইছ অন্য স্রোতে

পৈঠা আছে অন্য হাতেতে আলগা, 

পশমী মেঘ উড়ছে, খেলছে, দুলছে,

নীল কাব্যে বসছে শিকড় একটা।

 

(১৯)  ।।মন।।

র্ণরেখায় ভরিয়ে দিচ্ছে মন,

আমার সুজন জন।

আমার আপন জন,

মনের থেকেও প্রিয় আমার জন।

 

(২০)

ঘেঁটে দেখে নিও ছাইয়ের ভিতর

আগুন কিছু থাকল কি না। 

থাকলে আগুন, আঁচও আছে,

হাপর নিও ফুলকি হবে।

 

(২১)

দুলকি চালে চলতে পারো

অতীত বাতায়নে,

দুরন্ত ঝড় ছড়িয়ে দিও

দীর্ঘ ঘুমে তুষার চিরে দিয়ে।

 

(২২) ।।ভোর।।

খন রাত প্রায় শেষ হয়ে আসে,

ক্রমে সূর্য্য এই প্রায় উঠে এলো পুবের সীমায়,

ছুঁয়ে ফেলি দিকচক্রবাল

এ সময় মসৃণ সময়।

 

(২৩)  ।।সময় কম।।

তোমার এখন সময় আছে ঘৃণা করার?

জীবন এত প্রচুর না কি যুদ্ধ হবে?

তোমার এখন সময় আছে ভালবাসার?

জীবন আমার অল্প, খানিক ভালবাসো। 

 

(২৪)

মি এক রাজার নীরব অট্টহাসি

পাগলাখাকি জ্যোৎস্না ভেজা ভগ্ন বাঁশি

আলোর রেখা প্রাণ আঘাতি ঝর্ণাতলা

মাটির কলস শুষ্ক পুরুষ, আগুন গোলা।

 

(২৫)  ।।জীবনের সত্যি কথাগুলি।।

রূপকথা

এই সব জীবনের সব সত্যি কথা

ঘুরে ফেরে কালজয়ী হয়ে

বন্ধ্যা স্বপ্ন জন্ম নেয় নতুন বিকেলে।

 

(২৬)

সোনার ক্ষেতের ধান

ফুরিয়েছে অঘ্রাণের মাঠে, 

জীবন বিষন্ন হ’লে

নীল ডিমে ঢেকে রাখো বিষ।

(২৭)

পকূলে উদাসীন হাওয়া কিঞ্চিত হারায় উৎসাহ।

তাই, বঙ্গোপসাগরের থেকে কে জানি

এনেছে বয়ে উদ্যমী ঈশানি বাতাস।

সন্ন্যাসিনী সূর্য্য দেখে সভ্যতার প্রথম ভোরেতে।

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

প্রদীপ সরকার 
ডালাস, টেক্সাস

(১)

আগুন কেমন আগুন!
দগ্ধ করো ফাগ বাতাসে 
উষ্ণ ডানায়!
দুখীর তারায়, আর্তি-হারা
স্বপ্ন মাখা বালুর চরা
স্রোতের টানে
সাঁঝ বিকালে দহন পাখায়।

 

(২)   
।।জ্যোৎস্না।।

জ্যোৎস্না অমন অবিশ্বাস্য ভালো,
ঝরনা জলের স্পর্শে ভেজা ঝিরঝিরে সন্ধ্যায়।
মিহিন বাতাস ফুরফুরে উল্লাস,
উড়ায় কাহন একতারা হাতছানি।
শ্রবণ স্নিগ্ধ মুগ্ধ নিশির ডানা
আঁধারে জ্যোৎস্না আলোর তরল ধূম।
নির্ঝর ঝড় আলোর তরুণ তরু,
বোধন মায়ায় উদ্ভাসই গুন্ঠন।
 
(৩)

ন্ধ্যা শেষ,
নিথর একাকী রাত;
খেয়ালি বাতাস
প্রত্যয়ী প্রণয়ে
ডানা মেলে ভাসে আদুল আহ্লাদে,
অন্তহীন উদোম চাতাল।
 
(৪)

বাষ্পীয় জল নদীর ওপর ঊর্ণনাভ,
এলানো নদী,
গড়ানো জল,
ইচ্ছামতীর হালকা বায়,
রূপালি ঝিলিক জলের ঢেউ,
আকাশ এখন সোনালি রোদের উষ্ণ প্রস্রবণ।
 
(৫)

শৈত্য তুহীন ঠান্ডা জোনাকি রাত,
ধীর পায়ে গত রূপালি বরফ নিশা,
বসন্ত আজ তরুণ বুকের খুন
রোদ্দুরে পিঠ সেঁকছে তুষার চিতা,
হরিণী-বালার উদ্দাম হুটোপুটি,
নীল অম্বরে উথালি সোনালি ঢেউ,
চেনা কুয়াশা উধাও বিলীন ভোরে,
উষ্ণ রোদেরা কিঞ্চিৎ ফুরফুরে।
 
(৬)

শ্বর দিয়েছে ডুব অনন্ত সমরে,
প্রান্তর, মরু, ডোবা, খাল, বিল, আসমুদ্র পাহাড়,
ধু ধু আর শুধু ধু ধু বারুদ আঘ্রাণ,
স্বচ্ছ-নীল প্রলেপিত ধোঁয়ার বলয়,
ছমছমে তল্লাট,
নেমে আসে কালো শঙ্কা পাঁশুবর্ণা ছাই,
যুদ্ধের প্রলম্বিত দীর্ঘ শ্রান্ত নিঃশ্বাসের মতো,
বিষণ্ণতা পূরবী সন্ধ্যায়।
 
(৭)

পাথরের বুকে ছেয়েছি আমার
সবুজ ঘরোয়া গান,
জল কল্লোল লহরী মেশানো
আকাশের খেলাঘর,
বালুচর, নদী, দূর দিগন্ত
জংলার কিংখাব।
 
(৮)

নির্জনে বেরিয়ে জাগে ক্রমশ সাঁতারু রোদ্দুর,
ঋজুরেখা টিকালো
শব্দহীনা ডানার দাপটে
বিনম্র আস্তিনে
ঝড় নামে ঠুনকো ঝিলিকে।
পুষ্প ফোটে বিদ্রোহে পরিচর্যাহীন।
 
(৯)

হাজার বছর,
ভেজানো পাথর,
প্রাচীন ঘ্রাণ,
পুবালি বায়,
চৈতি রাত,
গুহাচিত্র, গোলানো রঙ,
পাতা ঝরা পথ,
আদুরে দুপুর,
জিরোনো স্বেদ,
আদুল গা।
শিস দিলো দিল,
ছেঁড়া দুন্দুভি,
ডানা ঝাপটালো পাখীর ঝাঁক।

 ​

​(১০)

স্বপ্নের অঙ্কুর মাটি ফেটেকুঁড়ি আর কোলাহল প্রজাপতি হয়ে যায়। 

অগ্নি-গিরির বুকেপাথরের পাষাণী মায়ায়ফুল ফোটে স্বপ্নের

মনের গানে, কবিতায়।

(১১) 

।।বোঝে না সে।।

পূর্ণিমা রাত,প্রেমিক চাঁদমেঘ আঙ্গিনায় ভাসল,

ভাসল মেঘের ডানার কোনায়

জ্যোৎস্না রাতে হাঁটল,

বেচারা চাঁদ হাজার যোজন হাঁটল,

আকাশ জুড়ে হাজার তারা, নীহারিকায়,

মেঘের ছোঁয়ায় নিশীথ রাতে

নৌকা হয়ে নীরব অভিমানে

শূণ্য হৃদয় বাইলো।

(১২)

চেনা মুখখানি ছায়ায় লুকোনো

হারানো সুরের গানে,

হারানো মনের ছন্দ,

তবু হাসি মুখ মনে পড়া আঁখি

পুরোনো দিনের দ্বন্দ্ব।

(১৩)
র্ণমালায় হারিয়ে যাচ্ছে দিন,
ভাবছে বসে ডুবুরি এক পাখি,
নাইছে রোদে সজল চুলে মেঘমল্লার বীণ
বাল্যকালের প্রাচীন উপত্যকায়,
গাইছে পাখি জলের কণায় বিবর্তনের গান।
 
(১৪)   
।।মৃত্যু এক রোমাঞ্চের বীথি।।

পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যাওয়া আজ আর মৃত্যু নয়,
মৃত্যু আজ সত্য নয়, দিগন্তের ইমন ভূপালি।
মহাকাল উজানের ডানায় ভাসিল চেতনা-মন–প্রাণ।
সৌরলোক ছায়াপথ
হাজারটি পরিপাটি
করে রাখা নীহারিকা অঙ্গুরীমালা,
পুঞ্জীভূত ঝিকিমিকি নক্ষত্র-সম্রাজ্ঞী
দেহহীনা আত্মার রাতচরা দিশাহীন পাখি,
কানাকানি না কি হাতছানি,
অজানার রোমাঞ্চকর অন্ধকার বীথি।
 
(১৫)  
।।মৃত্যু এক সন্ন্যাস।।

মৃত্যুকে ভয় পাও তুমি!
মৃত্যু থাকে ঘাসের নিবিড়ে
আস্থা-নীড়ে
ঘুমন্ত গভীরে।
মৃত্যু এক উদাসী সন্ন্যাস।
 
মৃত্যু কোনও যন্ত্রণায়
মূঢ় তূর্য নয়,
তিনি এক উড়ন্ত মিতভাষ,
তিনি এক একাকী হদিস,
গূঢ় ব্রহ্ম কালের স্বনক।
মৃত্যু এক অযুত দিগন্ত
বৈতালিক শুণ্যতার গান,
অনন্য শান্তি,
মৃত্যু এক প্রতীক্ষিত অহল্যা তাপসী।
 
(১৬) 
।।মুক্তির গান।।

ক্ষী ও পক্ষিনীর রূপকথা
ডানার গভীর প্রত্যয়ে
স্বচ্ছ ও স্বাধীন সুন্দর।
 
খাঁচাহীন বন্ধহীন বাধাহীন
রৌদ্রনীল মসৃণ
বহুদূর দিগন্তের গানভাসি দিকচক্ররেখা,
আকাশেরও নামকরণ হয় বুঝি
কবিতার প্রেয়সী আহ্লাদে।
পাহাড়ে প্রতিধ্বনি ফেরে
এ গান কল্লোলিনী উচ্ছ্বসিত মুক্তির গান।
 
(১৭)   
।।ঝড় ও স্বপ্ন।।

শাণের কোণে দূরভিসন্ধি মেঘ,
দূরন্ত ঝড়,
ধূলায় ঢাকবে ঘর,
আগুনের পাখি ঝলক দেবে কি জানো?
ঘূর্ণি-সায়র সৌখিন ‘ফিবোনাসি’,
যাযাবর নাকি স্বপ্নের ডানা মেলে!

(১৮)     

।।রইবে না আর।।

ইবে না আর আমার কথা তোর ঘরে,

দীর্ণ আশা এক পলকে যায় সরে।

প্রহর ফুরায়, বাতাস আসে আনমনে,

আমার তুমি, তোমার আমি, ক্রন্দনে।

ক্লান্তি শেষ, অস্থি ঘুমায় চিৎ শুয়ে,

যুদ্ধ শেষ, রণের ভূমি রয় চেয়ে,

নিষ্পলক, একপেশে,

লজ্জাহীন শর শয্যা দর কষে।

 

(১৯) 

।।দু’জনায়।।

ভেঙ্গেছি পাথর, ভেঙ্গেছি আগড় একসাথে

তাই ভেঙ্গেছে ঘর।

দেখেছি যে ঝড় উথাল পাথাল

কলকল্লোল একসাথে

তাই বেঁধেছি ঘর।

দেখেছি দুজনা স্রোতস্বিনী, পাহাড়ি পথ,

হেসেছি দুজনা, খেলেছি দুজনা একসাথে

তাই স্বয়ম্বর।

ভেঙ্গেছি ঘর, বেঁধেছি ঘর, স্বয়ম্বর।

 

(২০) 

।।ভালবাসা চয়নিকার ছলে।।

ভালবাসা চিরন্তন অন্তহীন পাখি

দুরন্ত সকাল কিংবা

অর্থহীন বিকেলের ক্লান্তিহীন সখি,

হিরণ্য ঝলক,

অনাবিল বহমান স্রোতস্বীনি

তটীনির উজানেতে ভাসা,

বাউলের দার্শনিক তথ্য-কথা

মেঠোপথে একতারা গান,

ছন্নছাড়া ছন্দ-কোলাহল,

তূর্যনাদ,

বেদুইন, উড়ন্ত ডানা।

(২১)

জেনো, সত্যি জেনো,

আমি লিখেছি তোমার জন্যে,

নির্জনে ঝরা একাকি ঝর্ণা

ঝরেছে তো কারো জন্যেই।

তাই এ থাক তোমার আমার প্রিয়তমাসুর কাহিনী।

 

(২২)

মুদ্রের গভীর শয্যায়

ক্ষণস্থায়ী ওঠা-নামা বালির অতলে,

কোটি অশ্রু, প্রেম ভালবাসা,

লড়াই-এর অবশেষগুলি

জলে ওই দেবতার বরুনের শান্ত সমাহিত

কবরে শায়ীত তারা।

অক্ষৌহিণী বছরের

মৃত ইতিহাস।

অবহেলে মানুষের অধুনা সভ্যতা

ভুলে গেছে তাহাদের নিস্তব্ধ অতীত।

(২৩)   

।।প্রতীক্ষা।।

প্রতীক্ষায় ছিলাম তো আমি,

তুমি বুঝলে না,

তুমি এলে না।

ক্লান্ত প্রহরগুলি চলে গেল,

ঝরে গেল

প্রত্যুষ ও গোধূলির বিরহী সময়

ঝিরিঝিরি উদাস ডানায়।

ভালবাসা ধূসর খানিক

বকুলের গন্ধ নেভা সাঁঝে।

ভালবাসা কি বাল্যখিল্য বালির পুতুল!

প্রতীক্ষিত ফিরে গেল

অগোছালো পুরোনো সে আকাশের বাঁকে।

(২৪)

ভালবাসা পান্ডুলিপি তরুণীর খোলা এলো চুল

ধূসর বাগান,

আনমনা আঁখি আর আখরের

অনবদ্য

স্বরচিত প্রত্যয়, প্রতিশ্রুতি ও নতুন ঠিকানা,

সময় মানে না মানা।

বহু ভাষ্য শীতের শিশির

প্রত্যুষের মিহি রোদে শিল্পী সাজে,

ঈষদুষ্ণ কারু-কন্যা কাহার দুহিতা!

(২৫)

ঠোনে দিয়েছি ফুল,

ঝড় এসেছিল,

বাতাস কুড়িয়ে নিল ফুল,

ছিল ভুল –

ছড়ানো ঝড়ের দিনে

শিলা বৃষ্টি পাংশু আকাশের মেঘে ছড়ানো আমার বকুল।

 

(২৬)

ক্ষিণ সমুদ্রের তীরে

নিসর্গ কবিতা শুরু মাঝরাতে

জলের প্রবাহে ।

থমথমে মেঘের ওপর দূরে বহু দূরে

অনিপুন অবিন্যস্ত স্বপন তখন ঘুমায়ে

ভগ্নস্তুপে কারুকার্য করে,

বর্ণ আনে,

গান বাঁধে,

বাহ্যজ্ঞানশূণ্য হয়ে কাহার গহীনে

খুঁড়ে আনে কবিতার আরণ্যক দ্যুতি

বিনয়ী নম্রতায়!

 

(২৭)

পাখির পালক ডুবসাঁতারেতে

মগ্ন নাকি হয়েছিল কোনো এক কালে!

দুর্গম পাহাড় নাকি শুনেছিল 

প্রাচীন পৃথিবী থেকে অপরাহ্নে সবুজের গান,

অঝোর বৃষ্টিরধারা কখনো কি বুঝেছিল অশ্রুর ভাষা! 

 

(২৮)

দিনের প্রয়োজন খেয়ে ফেল বুভুক্ষু সময়,

তুমি কিছু রেখে যেও ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট পশ্চিমের আলো।

ফেলে যেও কিছু আলো গোধূলির মরুভূমি থেকে।

আমি সেই আলো জড়ো করে জ্বালাবো আগুন,

রেখে দেব সেঁকার জন্যে শীতের সকাল।

কিছু দেব মেঘকে আগুন ।

 

(২৯)

তুমি কোন মূর্ছনার দ্বীপে ছিলে,

তুমি কোন সায়রীর কারুকার্য্যে

নাবিকের গতিপথে সমুদ্রের গন্ধঘন

কৃষ্ণকুমারীর মতো লবনাক্ত বাতাস ছোঁয়ালে, 

কেন জানি মনে হ’ল

ঝলসানো জলদস্যুর তরোয়ালের মতো

ঠিকরানো অদ্ভুত চাহনি তোমার, মহুয়া।

 

(৩০)

সাগর বেসেছ ভালো?

উড়ে এল শঙ্খ আরো কিছু কাছে,

ভেসে এল সমুদ্রের ঢেউ

বালুকা কন্যার তটে আরো একবার। 

 

আমার প্রেমিকা হতে গেলে

অল্প পরিচয়ে,

নীল শূণ্যে শঙ্খচিল হয়ে

আরো কিছু বালুকণা দিয়ে

বাতাসের গতিপথে লেখিকা লিখিও তব নাম।

 

(৩১)

সেদিন তুমি আমার চেনা হ’লে,

সেদিন তুমি আমার দ্বারে এলে,

সেদিন তুমি অল্প খানিক করে

আমার চেনা হলে।

 

সেদিন তুমি মেঘ সরিয়ে ফেলে,

আমার কাছে এলে,

সেদিন তুমি ভুল সরিয়ে ফেলে, 

তুষাররাতে ঊষ্ণ হয়েএলে,

ফুল ফুটিয়ে এলে,

সেদিন তুমি আমার চেনা হলে।

(৩২)

।।বৃত্ত।। 

মাদের সবারই সংসার আছে,

আমাদের নিজস্ব সংসার,

তা একটি বৃত্ত দিয়ে ঘেরা,

এ কোন স্থির বৃত্ত নয়,

এ বৃত্ত গতিময় সত্তা।  

একটা দু’টো করে বৃত্তের কিছু অংশ

কখনো কখনো ছিটকে বেরিয়ে যায়,

কিছু টুকরো কখনো ঢুকে পরে বৃত্তের ভিতরে, মধ্যিখানে,

বৃত্ত ঘুরতে থাকে আবার, চরৈবেতি চরৈবেতি।

দেওয়া আর নেওয়া চলতে থাকে নিরন্তর

অথবা খানিক সময়ের জন্যে।

বৃত্ত ঘোরে নিরন্তর একমুখী সময়ের দিকে।

সময় সময়ের জন্যেই বিশ্রাম নেয় শুধু।

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

প্রদীপ সরকার 
ডালাস, টেক্সাস

(১)

তোমার প্রতীক্ষায় কেটে গেল

বেশ কিছু বিরহী সময়।

তুমি কেন  সংযত এতো?

কেনো তুমি আমারই মতো

আকুল ও ব্যাকুল হলেনা,

কেনো ভাসালেনা ভেলা, একাকিনী,

জোয়ারের জলে খরস্রোতা!

না কি রেখে দিলে ঢেকে

সে উতরোল জাহ্নবীর ঢেউ

না দেখানো ভাবে

অকূল সে অসীম মনের পাথারে!

একনিষ্ঠ নিজস্বতা একান্ত বাগানে।

 

(২)

।।শূণ্যতা।।

কটা শূণ্যতা ভরে উঠছে ক্রমশঃ,

শূণ্যতা ভরে উঠছে ঝড়ো বাতাস দিয়ে,

ক্রমশঃ ভরে উঠছে শূণ্য ফাঁকা জায়গাগুলি,

করতল, হৃদয়, মন।

ঝড়ো বাতাস কি ভরাতে পারবে শূণ্যতা

পুরোপুরি ভাবে!

ঝড়ো বাতাস কি শূণ্যতায় ঘূর্ণি তুলবে!

না কি আবার অতীত হবে,

বাতাস ফিরে যাবে ঝড়ের কাছে অন্য

কোন দিগন্তে উড়বে বলে,

অন্য কোন মোলায়েম শূণ্যে ঢুকে

স্থিত প্রজ্ঞায় চিরকাল আবদ্ধ র’বে!

 

(৩)

লোমেলো বাতাস সরিয়ে,

তুমি কি গৃহিণী হবে মোর

আশ্চর্য সময়,

তোমাকে আমার ছন্দে, তোমারই প্রিয় নিজস্বতায়

সাজাবো গোধূলি আলোয়

সাতটি মায়াবী বনে আলোকে রেখেছি ধরে

আকাশে উত্তরীয় মেলে।

 

(৪)

ক বিন্দু বিবেকের কাছে

নতজানু তোমার সমাজ

ইচ্ছাপূরণের বেয়াদপ খেলায়।

তুমি কার পূজায় বসেছ?

 

তৎপর নিয়তি জেনো লিখে চলে রোজনামচা

ক্রমাগত নির্ভেজাল স্নায়ু-বিপর্যয়ে।

দাপট ক্ষমতাহীন হবে কবে?

 

(৫)

ব্যাধের শরের মতো

মেঘের পাখালি বেয়ে

তির্যক রোদ পড়ে শায়িত শিশিরে।

কৃপণ আকাশ কেন তুমি অন্তহীন

আলোর কাকলি

আনোনাকো পৃথিবীর জটিল জটায়।

 

(৬)

জীবন দক্ষিণা দিয়ে

চোখে চোখে তাকাবো কখনও,

তখন এ চরাচরে প্রাচুর্য্য তরুণ তৃষা

ডালে ডালে মুখরিত পাখি,

সপ্তবোধ হয়েছে খচিত

অনামী পাহাড়ে।

মাঠে ঘাটে নিরন্নের ফসল তোলে

সফল ধমণী।

(৭)   

।।কবির মগজে।।

বির মাথার ভিতরে মগজে মগজে

সময় বা অসময়ে,

বেলা যাই হোক 

শব্দেরা খুঁড়ে চলে হাজার খনি।

চকিত বজ্রের মতো

কখনো বা বেয়ে আসে

মসৃণ নরম পায়ে অর্থময় ধ্বনি।

 

(৮)   

।।রৌদ্রের রূপ তুমি দেখছ কি।।

রৌদ্রকে কখনো দেখেছ কি

সমুদ্রের সাদা ঐ ফেনাটির মতো?

নাকি সময়ের কালে

হলুদকন্ঠী সে হয়ে যায়

নীলাদ্রীর দুপুরবেলায়!

না কি সে জোনাকির মতো

সবুজ ও সাদায় ভাসে

নক্ষত্রের অন্য কোন আলোকের সাথে 

কিছুটা সময় নিয়ে হাতে!  

 

(৯)    

।।ভাষণ।।

ই নদী আমার,

এ পাহাড় আমার,

এই আকাশ, বাতাস, সবুজ,

প্রাণ, ঝড়-ঝঞ্ঝা

সবইতো আমার

এই মাটি আমার শপথভূমি

আমি এই মাটিতে লালিত-পালিত

আমি তোমাদের,

এ আমার আজন্ম শৈশব ও  কৈশোরের বেলাভূমি,

তারুণ্যের দিকচক্রবাল,

বার্ধক্য কাটাবো হেথায়’।

 

‘দাদা, আপনি বেশ হাসান কিন্তু’।

(১০)

।।মন।।

মানুষের মন কী ভাবে নাড়া চাড়া করে চিন্তা, 

শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে আসে পরের শতাব্দীতে

অচিরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে সময়ের সাথে

এত দূরে থেকে অহল্যা বাতাস

কী ভাবে দুপুর ছুঁয়ে কানামাছি খেলে আসে

বিকেলের হালকা রৌদ্রের দানা,

আমাকে এ কোন তৃষ্ণায় তুমি পেয়েছ কবোষ্ণ

মনের আঁধার!

(১১)  

।।তুমি।।

বে তুমি শিখবে যুবী, ধন্যবাদ দিতে,

কবে বীণে শুনে অক্লান্ত মরমিয়া গান

বেদুইন বুকে আলোড়ন তুলে যাবে,

কবে তুমি ধূলো খেলে উঠে

মাখাবে ধূলায় প্রাণভরা স্মিত হাস্যের কোণায় কোণায়

নীড় বেঁধে তাকাবে আকাশে,

উদ্ভ্রান্ত হবে রাজহংসের ডানার ভিতরে

ভেজাবে বুকের আগুন পাপবোধ ভুলে গিয়ে।  

ইতস্তত কিছু রাজহংস প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

 

(১২)

ল্পেরা সব দ্রুত হেঁটে সরে যাচ্ছে,

একাকী আয়না নিজের ছবিতে মগ্ন,

অক্ষরগুলি মন্ত্রের মত জপছে

অজানা কুমারী কন্যা

আপন গোপন পত্রে,

অতি চেনা এক নিবিড় বিকেল

ক্রমে জনপথে নামছে

বিদূষী বিধূর আলোকিত অরুবর্ণা।  

(১৩)

ই কুয়াশায় সূর্য্য উদয়

ধোঁয়ায় ঢাকা থাকছে,  

মনে জমে ওঠা দোলের আবীর

শিশুর মতো খেলছে,

স্পষ্ট এবং অস্পষ্ট প্রিয়ার কাহন, 

রোদ উঠে গেলে এলোমেলো মনে হচ্ছে।    

 

(১৪)   

।।প্রবাসী হৃদয়।।

শিশিরের গোলার্ধগুলি এইখানে আমার ভিতরে

ভিজিয়েছে প্রবাসী হৃদয়।

ডেকে গেছে সাহসী তরুণী

একতারা দিয়ে

নিজ হাতে এঁকে দিয়ে আত্ম-প্রকৃতি

ব্যাকুল বিচ্ছেদে

“কান্দো কেনে!” বলেছে গোপনে।

(১৫) 

।।ছত্রাকার।।

ত্রাকার সত্যিকার বৃত্তাকার,

আসবে ফিরে সন্দ নেই, বারংবার,

গুছিয়ে রাখ্ বন্ধ গৃহে, যত্ন কা’র? 

 

কাব্য রাখ্, স্বপ্ন রাখ্, গদ্য থাক্।  

পরীর ডানায় রঙ-বেরঙ লুকিয়ে রাখ্,

আসলে ফিরে দেখবি সবি ফুড়ুতকার।

 

স্বপ্ন থাক, কাব্য থাক, মুক্ত দ্বার। 

(১৬)     

।।তুমি কি জানো?।।

তুমি  কি জানো? আবার কোনদিন দেখা হবে কি না আমাদের?

তুমি কি জানো? হঠাত কোন একদিন

আকাশের বজ্রের মেঘ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে

উদ্দাম বাতাসে, উড়ে যাবে সব কিছু মেঘের রাজ্য ছেড়ে

খোলা মনে নীলের সাম্রাজ্যে?

নারীর অলীক গল্প রোদে সেঁকে আরো উষ্ণ আরো অনড় হবে?

ঝলসানো জলদস্যুর তরোয়ালের মতো চাহনিরা

ডুব দিয়ে চলে যাবে সমুদ্রের খাঁড়ি আর জলাভূমি ছেড়ে

আলেয়াকে ছুঁয়ে উপমা প্রাচীন পাথরে?

 

(১৭)  

।।বর্ষা।।

ঘুরছ ফিরছ বনের ভিতর,

এক পশলা বৃষ্টি হবে ভাবছো।

দুলছে লতা, কাঁপছে পাতা,

জলের কিছু ঝাপটা গায়ে লাগছে।

‘জ্যোৎস্না রাতে আষাঢ় আকাশ!’,

হরিণগুলি ভাবছে!

‘মত্ত ভাবে দুরন্ত ঝড়, বর্ষা কি আজ আসছে!’

 

(১৮) 

।।সৃজন।।

প্রিয়তম সুন্দর, দীক্ষা নিও বাসনার মন্ত্রে তুমি

লিপ্ত হ’য়ো প্রজনন লিপ্সায়,

নান্দনিক, এ তোমার জৈবিক যৌবনের প্রয়োজন নয়,

গভীর গভীরতর জ্ঞানের ভিতর এ এক অণূঢ়া রাগিনী

মিতভাষী সৃষ্টির সৃজন, 

এ জন্ম মনীষার, অহল্যা প্রতীক্ষার,

মৌলিকতা দিয়ে এ সুন্দর গাঁথিও বিন্যাসে।

(১৯) 

।।আমার সময়।।

মার পৌষের শীত কাটেনি এখনও,

মাঘের নিশুতি রাত নিশির কন্যার মতো অস্ফূটে ডাকে।

বুকের এ প্রকোষ্ঠে হাঁসফাঁস বাতাসের মেঘ।

এই তো দিন যাপন। এই তো সুতীক্ষ্ণ কাঁটা।

নিদ্রাহীন তুমি, এই তো তোমার ঐ অভিমান ছোঁয়া

আড়ালে একক স্বপ্ন অন্তরালে রাখা

চোখে জলবিন্দু পরাণের, 

সংসার বেদনার যুদ্ধ সাজ, পাগলের অনর্গল হাসি।

 

(২০)

দুঃখগুলি হারিয়ে গিয়েছে।

গেছে কি? সত্যি বলেছো?

না কি গালে ঠেশে ঠোঁট ধরে আছে

কোণা জোড়া শূণ্যতার অবলুপ্ত হাসি!  

আমার হাতের করতলে জমে ওঠে 

সভ্যতার স্তব্ধ অবয়ব।

অরণ্যে পায়রাগুলি ওড়েনা

আচ্ছন্ন রাতের চাঁদেতে। 

অতিন্দ্রীয়া, ঘুমিও না তুমি।

তোমার ঘুম পেলে

বিষন্ন জলের ফোঁটা না পেয়ে 

এসে ফিরে যাবে রাতের হরিণ।

(২১)  

।।সাঁঝ আসে।।

এক অনন্য মেদিনী,

শীতের এ পৃথিবীতে বিকেলের মোহময়ী আলো চলে গেলে

অন্য সব কলরব ফেলে

কোন এক নামহীনা পাখি উড়ে এসে বসে

নিকট পাহাড়ে

ক্ষীণ এক স্রোতস্বীনি ঝর্ণার জলে ভেজা প্রস্তরের ‘পরে

অজানা সময়ে গেয়ে যায় গান আবেগে সোহাগী পাখি আনমনে।

সাঁঝকাল নুয়ে ধীরে নেমে আসে, 

সীমান্তে ডানার ঝাপটায় ডুব দেয়, 

বেয়ে পড়ে প্রগাঢ় রূপসীর বুঁদ হয়ে থাকা জাফরানি তনিমা সুন্দর।

 

(২২)  

।।দ্রাব্য ভালবাসা।।

লিত দ্রবণের মত ভালবাসা মিশে যায়

গোধূলির লাজুক হাসিতে।

আকাশে দ্বাদশীর চাঁদ তখনও ভরেনি পুরো

সূর্যাস্ত তখনও ছিল বাকি মধ্যমাঠে।

আমার আর্দ্র হাতে গন্ধরাজ ফুল,

আলে শুয়ে আজ আমি উদ্দালক হয়েছি দ্রাবিতা।

 

(২৩)    

।।আরুণি, প্রশ্ন তোমাকে।।

তুমি কি দুর্বোধ্য? তুমি কি অবুঝ আরুণি? 

তুমি কি শব্দের সাথে পায়ে পা মেলাও? 

অশ্বখুরে না?

দুর্দান্ত সবুজ ঘেঁসে জল ছুঁয়ে থাকো?

শ্বাপদ সূর্য্যের মতো গুঁড়ি মেরে

ললাটে কয়বার আলো নিয়ে হয়েছ প্রহরী

সঙ্গীহারা বিষন্ন আকাশে?

এই সব প্রশ্নগুলি মিথ্যা হ’তে পারে?

ওই দেখ সপ্ত ঋষি চেয়ে দেখে তোমাকে নীরবে।

(২৪)

ড়ে যায় কিছু পাখি, কিছু মৌমাছি, কিছুটা সময়,

কিছু কাব্য, কিছুটা রসদ।

থেকে যায় কিছু দুঃখ, খানিক পাহাড়,

কিছু চিরন্তনী,

আমি আর থাকি না এখানে। 

থাকে কিছু অবসর, উত্থান পতন,

আকাশকে ব্যাখা কোরো তুমি, 

কি করে এ রহস্য মিথ্যা হতে পারে?

(২৫)  

।।বেদনার রূপ।।

বেদনায় এক অনবদ্য শূণ্য ভরে আছে,

বেদনা রাখেনা মনে নিজেকেই,

কখন কেমন ছিল সেটা,

এর আছে আগামী মূর্চ্ছতা

ফিরে দেখা অতীতের।

 

(২৬) 

।।আমাদের মগজের রেখাগুলি।।

মাদের মগজের রেখাগুলি সাঁতরায়,

নিজস্ব কোঠরে এঁকে বেঁকে খেলে যায়

অনেক অনেক গভীরে,

গভীর সত্তা,

সুতানুটি বেয়ে নামে প্রবাহ স্পর্ধা,

স্নায়ুতে ঈষৎ বিদ্যুৎ 

দ্রুত চিরে বয়ে যায় মনের কোণায়

অসীম মাধুর্য্যে গড়া তুমি।

 

(২৭) 

।।বিশ্বাস।।

 বিশ্বাস

ক সুন্দরতা, এক নির্ভরতা,

এক লাবণ্য, এক ভালবাসা,

এক অনবদ্য শব্দ অনুভব, 

ডেকে নেয় কাছে অতি কাছে,

বিশ্বাস এই সভ্যতার এক বিস্ময়, 

আণুবীক্ষণিক সূক্ষ্ম নির্যাস,

বিশ্বাস এক সমর্পণ,

এক দারুন উল্লাস।  

(২৮)

।।ঘর।।

র যদি ভাব, ঘর ঘিরে থাকে মমতা, উষ্ণতা,

ঘর যদি ভাব, ঘরেতে থাকেনা অশ্রুরা রাশি রাশি,  

থাকেনা মেঘের স্পর্শ, কিংবা উত্তেজনা, পাপের বীজাণু, 

ঘর যদি ভাব, ঘরেতে থাকেনা কোন ঝড়,

ঘরেতে বিশ্বাস থাকে, ঘরেতে আশা থাকে নিবিড় সুজন।

সতেজ কানন।  (জানুয়ারি ৬, ২০১৬)

(২৯)

।।জন্মদিন।।

বিষ্কার ক’রে নাও,

জমাট বেঁধে গেছে, তালগোল গিয়েছে পাকিয়ে 

রূপকের বেড়াজালগুলি।

অবয়বে এসে গেছে স্মৃতি

সহজাত রমণীয় শিলা।

সেদিন ওই ছবি ছিল যৌবনের নীড়ে,

আজ না কি সেটা ছোটবেলা হয়ে গেছে, 

অগণিত প্রান্তরের ভীড়ে,

চোখে ঝাপসা এলোমেলো অতীতের হাওয়া,

শেষবেলা, পরিধিতে কয় বিন্দু দাগ; 

ফিরে এসো এই ক’দিন, তথৈবচ জন্মদিন কেটে গেলে পরে।                         

(৩০)

হারজিৎ সমস্ত তোমারই

সব কিছু তোমারই করতলে

সাজানো বিন্যাস।

মূহুর্তে বর্তমান, ভবিষ্যৎ

একমুঠো মৌসুমি বাতাসের মতো।

খেলাঘর অগোছালো সংসার।

এক স্থির বিন্দু কেঁপে চলে এধার ওধার

আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ভিটেমাটি, দীর্ঘক্ষণ করে।

 

(৩১)

।।আজান।।

কাশ এখনো কালো,

আলতো উঁকি দিয়ে উঠে আসে

আলোকের ছায়া একটুক, দেরি নেই,

এখনি শুরু হবে মসজিদ মিনারে

আজানের ডাক।

রাত কেটে ডানা মেলে অবসাদ কেটে

রোদেরা ভ্রমণে এলে পান্ডুলিপি পড়ে নেবে,

মূহুর্তে শায়রী হবে মির্জা গালিব, 

ভালবাসা মুগ্ধতা হলে গজলই খোয়াব।                             

 

(৩২)

।।সন্ধ্যে নামছে।।

ন্ধ্যে নামছে,

টিমটিমে কিছু বাতি জ্বলে ওঠে, 

চেনা গলি, ব্যর্থ পান্ডুলিপি। 

 

চনমনে চাঁদ পুরানো হাভেলির দিকে

যুবতী তারাদের থেকে ধার করে নেয়

রূপালি ঘুঙুর। 

তুলি টেনে বড় ইচ্ছে টুপ করে ডুব দেবে

রাত কেটে গেলে ভোর কিছু উদাসীন হলে।             

(৩৩) 

।।ঠিকানা হারিয়ে গেছে বেমালুম।।

ঠিকানা হারিয়ে ক্লান্ত কেউ ফিরে যায় খালি হাতে,

সন্ধ্যা নিভে আসে, রাত বেড়ে ওঠে ধোঁয়া অবসাদে,

ক্ষমতার পায়ের নিচে খোলামের কুচি, 

ফাঁকি দিয়ে চুপিচুপি শুয়ে পড়ে ফুটফুটে কবরের ছায়া, 

চোখের নিচের কালি ভরা অভিমানে।     

(৩৪) 

।।রহিত।।

দে আর তেমন কোন নেশা নেই,

গান বন্ধ গানের শহরে,

দীর্ঘশ্বাসে কেঁপে ওঠে কোকিলা বাতাস,

নেশা কাটে এই রাজপথে,

ভারী রাত অনুবাদে মগ্ন হয়ে থাকে।                    

(৩৫) 

।।থাকো তুমি, চললাম।।

থাকো তুমি!

আমি চললাম জোয়ারের কাছে,

ঢেউ এলে দেব পা ডুবিয়ে,

ছিটাবো জল, নোনাজল, জলকণা।

যেদিন যুদ্ধ শেষ হবে

দেখো এতটুকু ঘাস থাকবে না সেদিন,

বললাম, দেখো।

গাঁয়েই ভাল থাকি আমি, 

এখানে যুদ্ধ থেমে থাকে কোনো কোনো দিন।            

 

(৩৬)

।।নিশুতি রাত, বাদামী শ্বাপদ।।

নিশুতি রাত।

হাঁটা পথ শেষ হলে

থমকায় দলছুট বাদামী শ্বাপদ,

অপরূপ উদাত্ত পুরুষ,  

ছুটে যায় পাহাড়িয়া বেজি,

চাঁদনীর রাতে ফেরা পথ,

লেগে যায় ষোড়শীর স্নিগ্ধ কিছু ছোঁয়া, 

নিঃসঙ্গ ছোঁয়া।                                                 

 

  

(৩৭)

ন্ধ্যাও শাড়ি পরে থাকে,

আর থাকে বে ভুল সময়

সময় কি ভুলকরে নাকি

অনেক অনেকক্ষণ?

নদীর শব্দগুলি থামে না কখনো।

Indranil Sengupta.jpg
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
কলকাতা
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

লেখকের জন্ম কলকাতায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন পদে থেকে সচিব পর্যায়ের আধিকারিক (আই এ এস) হিসাবে ২০১৩য় অবসরপ্রাপ্ত। নিয়মিত লেখেন ওয়েবজিন ও দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্রপ্রত্রিকাতে। বর্তমানে বেশিরভাগ সময় টেক্সাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা তিন। 

(১) সে আসে ধীরে

 

জস্র বৃশ্চিকরাশি জমিয়েছি পরাভূত সমুদ্রের আস্তাবলে

বালির দুর্গের উন্মুক্ত জানালা দিয়ে খেলে যায়  অনিমিখ কালজয়ী রোদ্দুর

একলা থাকতে বলেছিল  বৈশাখের মেঘ

সমুদ্র স্নানে ডেকেছিল হিম জ্যোৎস্নার সারস

 

জলধারা আসে কোথা থাকে বৃষ্টির ঝাপটা নাকি

পাহাড়ে আঘাত করে সমুদ্র ঢেউ

উড়ে আসে মেঘের পতন নিয়ে এলোমেলো হাওয়া

শান্ত সমুদ্রের তীরে অকস্মাৎ

উঠে আসে জলকন্যা মৎস্য নারী

বিসর্জিত লেজ পাখনা

অপুষ্ট অপটু টলোমলো পায়ে

সে কাছে আসছে ধীরে

 

(২) ট্র্যান্সসাইবেরিয়ান এক্সপ্রেস

 

নের মধ্যে কান্নাকাটি,

পাগল খুঁজছ ঘর বসত।

তাকাও চোখের দিকে

ও আমার মনের পাগল,

রয়েছ নিশ্বাসে রয়েছ বিশ্বাসে –

রয়েছ মিথ্যায়-

একের পর এক দেশ পার হয়ে যায় ট্রেন -

ট্র্যান্সসাইবেরিয়ান এক্সপ্রেস।

 

আমি কি চলে যাব সন্তর্পণে হেঁটে

চলন্ত কামরার বাইরে?

যেতেও তো পারি,

বলো যেতেও তো পারি,

ঐ যে শায়িত তুমি নিদ্রাকাতর সে যদি দেহ হয়,

আমি তো তবে ছায়া এক মর্বিড কবিতা।

যেতেও তো পারি বলো,

যেতেও তো পারি,

তোমাকে ঘুমন্ত রেখে এদিক সেদিক-

বাইরে ছুটেছে পৃথিবী গাছপালা বরফ ঢাকা পাহাড়,

অথবা ডুব দিতে পারি মনের গভীরে,

অন্তর্লীন নিজস্ব হ্রদে।

 

 

(৩) শব্দহীন

 

পেরিয়ে যায় শব্দহীন রেলগাড়ি,

শব্দ ঢাকা পড়ে যায়;

কথা হয়নি বলা অরণ্যের কানে,

অনুরণিত তা একান্তে মনে,

কথা বলা নয়,

কিছু অনুভূতিই স্তব্ধতাতে প্রকাশিত,

এমতাবস্থায় নিজস্ব জগত,

কার সাধ্য বলো ভাঙ্গবে খোলস?

 

ভাবনাদের বাঁধতে চাওয়া ভুল,

ছোট ছোট প্রজাপতি হয়ে ওড়ে,

উড়তেই থাকে,

জ্বেলেছ আগুন

কেন কাঁদো মৃত্যুতে?

 

থামিও না বলতে দাও,

ভারি হয়ে যাবে ঠোঁট শব্দহীন আলোড়নে।

আমার সঙ্গে অপেক্ষা করছে শেষ বিকেল,

হাত ছুঁয়ে দৌড়ে যায় ঝোড়ো হাওয়া;

রোদ্দুর চলে যায়- মানুষ চলে যায়,

একের পর এক যায় লোকাল ট্রেন,

শেষ গাড়ি চলে যায়।

 

অপেক্ষায় সন্ধ্যে রাত হালকা কুয়াশারা,

তারপর চাঁদের আলোয় পথ হাঁটি

রাতের পাখিরাও খবর নেয়।

বিভিন্ন সঙ্গতে বেজে ওঠে সঙ্গীত,

না পাওয়ার দুঃখ নিয়ে গাইতে হয়।

শেষ গাড়ি চলে যাবার পর আরও ভারি ঠোঁট,

নিজেই শুনতে পাই কেবল নিজের অস্ফুট।

 

 

(৪) নালায়েক

 

ই বাদাবনে ভাসিয়ে এনেছ কাঠের ঘোড়া গোপনে!

জ্বলছে তোমার মুর্দাফরাস চোখ,

ধর্ষণ কর এক চন্দ্রাহতা-

প্রেম থাকে না লালসা থাকে,

অন্য কোন ক্ষুধা থাকে।

ধর্ষণ করো ক্ষুধাকে লালসাকে,

তুমি ধর্ষণ কর এক কাষ্ঠঘোটকী,

নালায়েক।

 

তুমি কি ভালোবাসা জানো,

ভালোবাসা কি জানে ঘোটকী?

 

তুমি কি দেখেছ কমলাকায়া,

বিটপীছায়ায় মানসীমায়া?

 

 

(৫) লাল পরী

 

লাল পরী হারিয়েছে পথ লাল পিঁপড়ের মত মেলেছে ডানাটি

সত্যি কি লাল সাদামাটা বিপ্লব না ফ্যান্টাসি অতীব হিপোক্রিসি

গোলমাল হয়ে যায় লাল কি এ যাবৎ পৃথিবীর যাবতীয় ক্ষতি

কে জানে কোথায় কতটা লেনিন স্ট্যালিন মাও

কতটা হিপোক্রিসি

লাল পরী জানে না কিছুই উড়ে বেড়ায় প্রান্তরে বটমূলে

 

লালপরী আসলে ফ্যান্টাসি গোপন গন্ধ তার গোপন যৌনতা

আপাত সারল্যে সে ডোবায় মানুষ জলে আবার তুলে ধরে

সব প্রতিবাদ ব্ল্যাসফেমি মার্ক্স বলেছেন ধর্ম আফিং

মার্ক্স তবে কী

 

এই সব লেখা জানি পর্যুদস্ত হবে

এদিকে ক্রমশ  মার্ক্সিয় বিজ্ঞান অপাংক্তেয়

দেখা যাক ভবিষ্যৎ কি দেবে কোন নিশ্চিত

 

(৬) থাকা

 

হাওয়া ঠেলে দিচ্ছে খাদের দিকে,

মাটিটা ফেটে গেলে আশ্রয় হতো ভেতরে,

চলে যাওয়ার কোনও মানে হয় না-

থাকাটাই সব।

আর এই যাঁদের আজ ভুলে গেছো-

ভেবে দেখো তাঁরা কি প্রবল ছিলেন একদা

মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।

 

তারপরেই তো এইসব স্মৃতিস্তম্ভে

ধূপ, বাতি, পুজো আচ্চা ইত্যাদি।

 

 

(৭) চলে গেলি এভাবে

 

খন দেখা হলো আবার

আমরা যে যার পথে

সেদিনের মতো ভালোবাসিনি আগে,

এটা বুঝেছি এতদিনে।

 

আমাকে গ্রাস করল সবুজ বন,

তারাদের ফ্যাকাসে শরীর,

পরিচিত ফ্যাকাসে মুখ দেখলাম,

তোকে দেখলাম না,

এদিকে শহরে ফিরেছে জগু অনেক দিন বাদে,

তার দাঁত হীরের মত ঝলসায়,

ঝলসায় কুমিরের মত।

 

আমি তোকে আর দেখিনি,

দেখিনি রাজকীয় চলন,

লোকে বলে খুব সকালে এক কবন্ধ

ঝাঁপ দিয়েছিলো জলে।

 

জগুর হীরের দাঁত ঝলসায় কুমিরের মত,

অনেকদিন বাদে নদীর জলে বেগুনি আভা।

 

 

(৮) রমণীরাও কি একই রকম

 

কোন জটিলতা ছিল না আকাশে,

আমরা প্রান্তরে হাঁটছি ঈষৎ বৃষ্টিপাতে,

কুড়িয়ে নিচ্ছি বালকের সারল্য,

সংগ্রহশালা ক্রমশ ভরে গেলো।

 

আমরা এখন দীর্ঘস্থায়ী শীতকালে,

আমরা এখন শীতের বিকেলে,

আমাদের কোন দৃষ্টিপাত নেই,

বিবশ মৃত্তিকা শুধু জানে

নিয়মিত হলকর্ষণ,

শস্য আহরণের পরে সুদীর্ঘ মুগ্ধতা।

আমাদের চারপাশে ক্রমশ যারা ভিড় করে আসে

তারা কি একই রকম সমস্ত ঋতুতে?

এমনকি রমণীরাও

কি একই রকম হাসে ইদানীং?

(৯) নতুন ভগবান

 

ফুল্লকুসুমিত কোন এক সকালে চলে গেলেন তিনি,

তাঁর শেষ যাত্রায় তিনি ভগবান,

স্বর্গরথ নাম কেউ দিয়েছিলো বাহনের।

কোন এক সকালে তিনি আর খেতে পারলেন না,

এমনকি ঠোঁটের কোণা থেকে গড়িয়ে পড়ল জল,

তাঁর শরীর পোড়া বিভূতি ছড়িয়ে দিলো কেউ কেউ-

নদীর পুত পবিত্র জলে।

 

খুলে ফেলা যাবতীয় সিলিন্ডার নল,

খুলে ফেলা সমস্ত ড্রিপ, স্যালাইন,

শরীর তাহার রয়েছে এক বিশাল ড্রয়ারে।

 

ফুল্লকুসুমিত কোন এক সকালে,

শবানুগামীরা হতচকিত দেবত্ব আরোপে,

সারি সারি হাত ছুঁয়ে ফেলে কপাল,

এই মৃতদেহ আজ এক নতুন ভগবান।

 

 

(১০) বৃথা

মার সকাল বৃথা গেলো,

শুনতে পাইনি নাম কীর্তন,

কি করব?

আকাশ এত রঙিন হলে কিছু করার থাকে?

সূর্যটাও সেরকম!

মেঘের ফাঁক দিয়ে এমন এমন ছুঁড়ছে রোদ্দুর!

জানি উঠোনে জমেছে ঝরাপাতা,

জানি জমি ছেড়ে দিতে হবে লাঙ্গলের কাছে,

জানি কর্ষিত হতে হয় সব কিছু নির্ধারিত পবনের হাতে।

তবু কেড়ে নিয়ে সারাদিন,

আমাকে মাঝে মাঝে দিও এমন এক,

নিরুদ্বেগ নিজস্ব সকাল।

(১১) অপর সূর্য

 

মি তাকে গুড মর্নিং বলার সাথে সাথেই

সে আমাকে একটা থাপ্পড় মারল,

আমি পড়ে যাবার আগেই সে আমাকে

হ্যাঁচকা টানে দাঁড় করালো ফুটপাতে,

আমি হতভম্ব হয়ে দেখলাম তাঁর স্মিত হাসি,

গুম্ফায় বুদ্ধদেব,

‘হা হতোস্মি’ কথাটা খুব আস্তে বললেও

ঠিক কানে গেলো-

আমার গালে হাল্কা ভাবে সে একটা-

চুমু খেলো।

 

গালটা যেন পুড়ে গেলো,

হামিটা যেন উড়ে গেলো,

উড়ে গেলো আগুনের গোলা হয়ে আকাশে,

অন্য এক সূর্যের মত।

 

 

(১২) তিন তাস

 

মার হাতে তিন পাত্তি-অতীত বর্তমান আগামী,

আমি একলা ঘরে বসে -নেমে এলো প্ল্যানচেটে

প্রবক্তা, বলল সে সংসার পেতে আছে সমুদ্রের  

ধারের কোন শহরে।

 

যে চলে গেছে তাকে কে ভাবে, বাকী থাকছে দু’টো

তাস। আজকের দিনটা কাটতে চাইছে না অথচ এতগুলো

বছর পেরোলাম লহমায়।

 

বললাম আমার কোন দুঃখ নেই, তাকে কোনদিন

ভালোবাসি নি, প্রবক্তা মুচকি হাসলো, বলল মিথ্যে

বলতে তোমার কষ্ট হয়।

 

দুটো তাসও হাতে নেই, ভবিষ্যতের স্রোত দ্রুত ছুঁয়ে

যায় বর্তমান, পৌঁছে যায় অতীতে।

 

মৌচাক তাক করে ছোঁড়া গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়,

কিন্তু বিদ্ধ করে আঙুর ক্ষেত, চুইয়ে চুইয়ে বিষ   

পড়ে মধুপাত্রে।

(১৩) তোমার জন্য

 

তোমার জন্য বিছিয়েছি এই মখমলি মাঠ,

অঢেল পাহাড়;

পাহাড় নদী,

নদীর ধারে নির্জন সেই স্ফটিক প্রাসাদ।

 

তোমার জন্য উঠোন জুড়ে

সূর্যদেবের স্বর্ণজালি

পাতার ফাঁকে আলপনা,  

তোমার জন্য চন্দ্ররাতে

রূপোলী আলোর ঝর্ণা

তোমার জন্য খুলেছি হাট

জানালা কপাট।

 

মনে পড়ে না কবে শেষ

দেখেছি প্লাবিত রাস্তা মাঠ;

কিভাবে রাত্রি দিন একাকার,

কিভাবে পাতার ফাঁকে সূর্য ডোবে ডোবে,

দেউড়িতে বসে শুনেছি কবে শেষ

পাখীর গান।

 

হঠাৎ আলো ঝলসে ওঠে অন্তিমে

তুমি দাঁড়ালে আচমকা পাশে,

তারপর

তোমার চলে যাওয়া

অসংখ্য তীব্র ছুঁচ এখনও ফোটে

মনে আছে বৃষ্টিতে ভেজা

দু’চোখে কান্না আজো।

 

এখনো বুকে বিঁধে আছে ছুঁচ;

কিছু ব্যথা মনে থাকে আপন,

যত্নে লালিত গভীর গোপন,

অপেক্ষায় কাটে প্রহর,

আবার মিলবো কবে,

হাত ধরে পার হব নির্জন বাতিঘর

এতগুলো বছর।

 

এ যদি ভালবাসা না হয় তবে যা হয় হোক

সে তো অনেক,

বলতে পারো ভালবাসা কোথায় শুরু

আর কোনখানে শেষ;

কে জানাবে ব্যাকরণ!

কোন গণ্ডিতে আটকাবে বাঁধবে বাঁধ ভাঙা ঢেউ,

কেন থামাতে চাও অমোঘ?

 

এখন তো বালুকাবেলা নির্জন মরুভূমি

বার বার মাথা ভেঙ্গে সমুদ্র উজাড়

দুধ ফেনার সাদা ধারা,

ভাঙ্গনে উধাও ঝাউবন

আমার একদার বিচরণ।

 

জমছে কিছু লতাগুল্ম ওধারে অগভীর খাঁড়িতে,

সমুদ্র পাখীর দল ঘিরেছে নির্জন চুড়ো

আমার আশ্রয়গুহার মাথার ওপরে।

 

বাতিঘর ছাড়িয়ে দূরে

অনেকটা গিয়েছি হেঁটে,

শেষবার এখানেই

ধরেছিলে বাড়ানো হাত,

একে একে দেখি ফিরছে মাছ ধরার নৌকো

ট্রলার।

 

আবার বৃষ্টি নামল,

নেমে যাই একছুটে

বসি কালো পাথর খণ্ডে

দূরে সত্যি ভ্রমনডিঙ্গি

দেখছি পতাকা ওড়ে মাস্তুলে,

বন্দরে যাত্রীর ভিড়ে খুঁজি তোমাকে

ফিরে যদি  আস হয়ত মনের ভুলে।

 

স্বপ্নের মসলিন জাল বোনে

ঘুমপরী আমার বিছানায়,

পথ হারিয়েছে ছোট্ট একলা পাখী

আমার ছড়ান বিকেল আকাশে,

হারানো পাখীর বাসা খুঁজে ফেরা

এদিক সেদিক আকাশ অন্ধকারে,

স্বপ্নের মসলিন জাল বোনে ঘুমপরী

শুনি হতাশ পাখীর আর্তনাদ।

 

তোমার জন্য বিছিয়েছি এই মখমলি মাঠ অঢেল পাহাড়,

পাহাড় ছুঁয়ে নেমেছে নদী, নদীর ধারে স্ফটিক প্রাসাদ।

তোমার জন্য সূর্যদেবের স্বর্ণজালি পাতার ফাঁকে

উঠোন জুড়ে আলপনা,

তোমার জন্য চন্দ্ররাতে রূপোলী আলোর ঝরনাধারা।

তোমার জন্য অনেক আগেই খুলেছি হাট জানালা কপাট।

 

(১৪) আমি যখন

 

মি যখন বইয়ের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম,

তখন এক মায়াবী আলো যেন এক অট্টালিকা,

আসবাবেরা একে একে জমছে ঘরে,

বাগানে গাছে রুপোর পাতা সোনার ফুল,

কল্পনারা আসতে থাকে,

যেমন হয় একে একে ।

 

আমি যখন বইয়ের ভেতর ছুটতে লাগলাম,

খাবি খেলাম, হোঁচট খেলাম,  চমকে উঠলাম,

সঠিক তখন  কাচ ঝনঝন প্রবল আওয়াজ।

 

স্বপ্নগুলো সিলিকনের সূক্ষ্ম গুঁড়ো,

একটা একটা কুড়িয়ে নিলে-

কেমন ভাবে কাচের টুকরো বিঁধল হাতে,

হাতের মধ্যে জমল রুবি

রক্তবিন্দু একটি ফোঁটা।

(১৫) দুঃখ

 

কোন একটা কারণে আমার দুঃখ হ’লো

একরাশ নীল নীল ফুলের মত,

আমি গেলাম বাবার কাছে,

বাবা পাঠালেন ভূমার কাছে,

ভূমা এক রাশি-এক সর্বব্যাপী পুরুষ -এক নক্ষত্র

তিনি পাঠালেন হেমার কাছে,

হেমা বললেন মালিনীকে,

মালিনী বললেন দাঁড়াও চুপ করে,

দেখো আমি গাঁথছি মালা,

তোমার দুঃখগুলোকে ফুলের মত সাজিয়ে রাখ

টেবিলের ওপরের ঐ সাজিতে।

 

আমার কোন দুঃখ রইল না,

চোখের জল জমে মুক্তো হয়ে গেলো।

(১৬) হঠাৎ আগুনে

 

ঠাৎ আগুনে পুড়ে গেলো খালপার,বাক্স প্যাঁটরা।

 

দগ্ধ কেঁদে উঠল,

ছুটে এলো বিদগ্ধ, সুশীল এবং এনজিও।

বিদগ্ধ কবিতা লিখলো

সুশীল গান গাইল

এনজিও গেলো সূর্পণখার কাছে।

 

সূর্পণখার নাক ও কান ব্যান্ডেজ বাঁধা,

বাহাত্তর ঘণ্টার আগে কিছু বলবে না আইসিইউ।

(১৭) ছেলেবেলা

 

গ্রীষ্মের দাবদাহ; তাতানো দুপুর,

আমাকে ডাকল ছায়াছায়া আমবন

দিঘীর কালো জল।

ডাকলো অবগাহন শীতল;

ছোটবেলার মত সাঁতার কাটলাম,

আমাকে ডাকলো

আমারই ছোটবেলা;

বলল- কেন বড় হলে,

কেন ছেড়ে গেলে-

চলে গেলে?

 

আমি বললাম-

বড় তো হতেই হয়,

না চাইলেও,

ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ছেলেবেলা শীতল জল

বাষ্প হয়ে মেঘ হয়ে যায়,

বড় হতে থাকি মেঘ জমানোর খেলায়।

 

বৃষ্টির দিনগুলি-

আহা, মেঘ তুমি কবে ঝড় বৃষ্টিতে ফিরিয়ে আনবে ঠাণ্ডা ছেলেবেলা।

(১৮) তুমি

 

তোমাকে নিয়ে অনেকেই লিখল

গান কবিতা গাঁথা-

আমিও তাই কিছু লিখি-

নাই বা থাকল মুণ্ডু মাথা।

অনেক দূর থেকে একটা সুর

তোমার সারাদিন গুনগুন

ভাষা বুঝি না অদ্ভুত নরম সুর মুখস্থ করেছি

শরীরে মেখেছি কথা অর্থহীন

এক বিলাপ লালাবাই

আমি সান্ত্বনা দেবো না

কানে বাজে দূরাগত শব্দরেশ

তোমার প্রেমের মতো

 

আমি তোমাকে বুঝি না

তোমার কথা বুঝি না

তোমার সংসার বুঝি না

তোমার দুঃখ বুঝি না

কেবল বুঝি তুমি আমাকে ভালোবাসো খুব।

 

তোমার একরাশ গুনগুন মনের কথা গেয়ে চলুক

অজানা ভাষায় আকাশ বাতাস

আমি বুঝে নেবো ছোট ছোট ক্ষোভ

কিভাবে লোকে ভুল বোঝে তোমায়

এগুলোর ভাষা লাগে না

লালাবাই অদ্ভুত লালাবাই একঘেয়ে সুর

বলে দেয় সবটুকু যাতনার নীল নীল হ্রদ।

 

আকাশ ক্রমশ ভরে তোমার গানের দীপ্তিতে

সন্ধ্যে নামে দূরে বনানীতে।

তোমার সঙ্গে আমার কিছু ব্যক্তিগত চূড়ান্ত ক্ষোভ,

ভরে নিলাম ঝুলির ভেতর ফাঁকা মাঠে,

একটু পরে রাত্রি হ’লে রাতপাহারা দেবে যখন একান্ত চোখ,

জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখো অনেক দূরে,

মাঠের মধ্যে শুয়ে আছি নিথর দেহ

জ্যোৎস্না রাতের আবছায়াতে।

 

এমন ভাবলে ভুল হবে আমি মরে গেছি,

ঠিক তা নয়,

সময় অনেক আসে এমন দূরে যাওয়া উচিৎ হলেও

চলচ্ছক্তিহীন হয়ে থাকছি কাছাকাছি,

দূর থেকেই বলতে চাই –

ফিসফিসানি

তোমায় আমি ভালোবাসি।

 

(১৯) যন্ত্রণা

 

ক হ্যালুসিনেশনের পরে রাতের গভীরে প্রবল জলতেষ্টায় জেগে ওঠো,

শেষ ডবল ডেকার রাস্তায় চলেছে কুড়ি বছর আগে,

হাওড়া যাচ্ছে আসছে এক কামরার ট্রাম,

তাও তো দেখে ছিলে,

ভুলে গেছ সব নকশাল আমল,

কচি খোকা তুমি জানো না কিছু,

মুখ ছুঁয়েছে তরুণ দূর্বাদল ঘাস।

 

এক হ্যালুসিনেশনের পরে হাজার বছর পেরিয়ে,

ভালোবাসা রং বদলে বেগুনী হয়,

রং বদলায় যন্ত্রণারও।

আইসক্রিম শিলা তুমি

 

থমকে গেলো পরিভাষা-

ক্লীবতা জ্ঞাপক মাথানিচু হতে পারো তুমি ভাবিনি  কখনো,

আমারই কান থেকে নির্গত হ’লো অসম্ভব,

আমারই কান দিয়ে বাষ্প বের হয়ে এলো,

টগবগ করে ফুটছে ভেতরের কেটলি ফোটা জল,

অথচ তুমি আইসক্রিম শিলা শীতল চুপ করে

শুনে যাচ্ছ উচ্চতার ধৃষ্টতা।

 

আমার ঠোঁট কাঁপছিল,

মনের মধ্যে অসহায় প্যারানোয়িয়া,

আমি পালাতে চাইছি আমার বিশ্বাস থেকে,

আমি পালাতে চাই  নিজের কাছ থেকে,

হাওয়া টেনে টেনে ঢাকছি শরীর,

ঢাকছি  হাওয়ার বর্মে।

এক বল্লমের মতো,

শরীরে বিঁধে আছে অবিশ্বাস,

       

আশাভঙ্গ।

(২০) প্রেক্ষাগৃহে

 

কোলাহল থেমে গেছে,

শেষ পর্দা নেমেছে প্রেক্ষাগৃহে,

আমি কি থেকে যাব নাকি,

আমি কি জানি না কিভাবে আমার আগে

হারিয়ে গেছে লক্ষ মানুষ আলোর বৃত্ত থেকে-

জীবন থেকে। 

আমি কি জানি না কিভাবে সুদিন আনে

সুসময়ের বন্ধু অজস্র মাত্রাবিহীন,

আমি কি জানি না কিভাবে শূন্য চেয়ারের সারি

গ্রাস করে নিদ্রাহীন রাত,

আমি কি জানি না

দাঁড়াব খোলা বিশ্বে আবার অন্ধকারে,

সরে গেলে সবটুকু আলো।

(২১) ক্লান্তিকর সবুজ

 

গাছের পাতায় লেগে থাকা হলুদ বিষণ্ণতা আমায় ঘিরে ধরার আগেই

আমি প্রবল বেগে ছুটে গেলাম,

সবুজ তখন ক্লান্তিকর,

লাল টকটকে সূর্যটাও ক্লান্ত-

ডুবে যাচ্ছে সমুদ্রের জলে আরব সাগরে।

 

আজকাল মাঝে মাঝে হেরে যাই,

এই স্বীকারোক্তি ভালো,

পাখির ডাকের মতো সকাল কবে যে দেখতে পাবো,

খোঁয়াড়ি ভেঙ্গে কবে যে ছুটব প্রান্তরে

বালুকা বেলায়,

কবে যে আশা আবার নির্যাসের মত

ভরে দেবে সবটুকু।

(২২) কবিতা

 

এক।

 

ঠিক শেষ রাতে আকাশ সাদা হবার আগে এক তারা জন্মাল

লেবার লাইনের বস্তিতে, সংকটে ঘুরপাকেরা এমন ভাবল;

যেন জন্মেছে এক মহাপুরুষ যে কখনো মদ খাবে না,

গলির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের এড়িয়ে কাজ নিয়ে

চলে যাবে দূর দেশে, ছাড়িয়ে আনবে বন্ধকী জমি সে।

 

অত ভোরে খবর রটে গেল চতুর্দিক, অ্যান্টেনায় বসে

থাকা কাকেরা এই কথা জানিয়ে দিলো বাবুদের মহল্লায়।

 

রাত শেষ হলে খুব ভোরে মারা গেলো কানহাইয়া পঞ্চান্ন

বছর বয়সে, জীর্ণ শরীরে রক্তের বদলে শিরা ধমনীতে তার

খেলা করে চলেছিল চোলাই মদের ধারা, নিরলস।

 

সদ্য প্রসূতি ডুকরে কেঁদে উঠল, মুঝে লড়কি কিঁউ নহি

দিয়া ভগবান, কিউ নেহি কিউ নেহি ভগবান।

 

দুই।

 

নেক ঝগড়া করেও কুকুরগুলো সিদ্ধান্তে আসতে পারল না,

কে খাবে ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট সমূহ, অকুস্থলে হঠাৎ

চলে আসা বালক সারমেয় তার কৌতূহলী জিজ্ঞাসা

ভুলে গেলো আবিষ্কার করল ঝরঝর রক্ত ঝরছে কানের

পাতা থেকে, সমস্ত পৃথিবী ভুলে খিদে ভুলে ছুটে

চলে সে অনন্তকাল,  নাকি কয়েক মুহূর্ত! ট্যাক্সির কাছে

ছুটন্ত সারমেয়দের হিসেব থাকে না।

আরও একটা গেলো চাকার তলায়, যেমন যায়।

 

 

(২৩) মেডুসা

 

তোমাকে দেখলে পাথর হয়ে যাব?

এজিয়েন সাগরের থেকেও সবুজ চোখ রূপের বন্যা,

জলপ্রপাতের মত চুল,

তুমিই নার্সিসাস কী ভয়ঙ্কর,

নিজের রূপে পাগল বালিকা

পার্থিয়ান মন্দিরে দেবী অ্যাতিনার ভাঙ্গালে ঘুম।

 

শরীরে বয়ে চলেছ অতঃপর অভিশাপ,

সাপেরা কিলবিল খেলা করে বিকৃত কেশদাম।

 

(২৪) ব্ল্যাক প্যান্থার

 

ব্ল্যাক প্যান্থার লোকালয়ে থাকে না থাকলেও খাঁচাতে,

মানুষ যখন বাঁচাতে পারে না মন,

বুকের ভেতর বাসা বাঁধে প্যান্থার,

রক্তের ঘুণপোকা,

ক্রমশ খেয়ে নেয় মন শরীর,

হাড় মজ্জা মাংস,

শাইনিং সিল্ক ব্ল্যাক মুখে তার লেগে থাকে রক্তের দাগ।

 

নিস্তব্ধ নির্জনে জমতে থাকে শীত,

টিনে, পাথরে, কাঠে শব্দের টুংটাং,

তুমি ভাব বুঝি শীত আরোপ করে এই সব শর্ত বরফের সাথে।

আসলে তা নয়,

প্যান্থার হেঁটে যায় পাঁচিলে, ছাদে, ফলস সিলিঙের ফাঁকে,

এই সব আসলে একান্তই প্যান্থারের শব্দ।

 

প্যান্থারকে নিজের বলে ভাবো,

ভাবো এক বিশাল কালো সিল্কের বেড়াল,

পুষেই রাখ মনে,

আত্মস্থ করো তার হুঙ্কার,

ক্রমশ তুমিও হয়ে ওঠো প্যান্থার।

 

(২৫) ভেঙ্গে পড়ল পাঁচিল

 

লাফিয়ে উঠল কাঁটাতার ভেঙ্গে পড়ল পাঁচিল,

জানি গুরুচণ্ডালী হয়ে যাচ্ছে,

ওটা প্রাচীর হলে ভাল হতো

এরপর ব্যবহার করব স্বচ্ছতোয়া।

 

স্বচ্ছতোয়া ভাসিয়ে নিয়ে গেলো আশ্রয়ের শেষ মাটি,

তুমি শ্বেত কবুতর ডানা মেলে কোজাগরী রাতে,

কেবল উড়ছ সাদা আকাশে,

নীচে অতল প্রবাহ।

 

উড়তে উড়তে দেখছ তুমি

ভেঙ্গে যাচ্ছে বোধ বুদ্ধি আশ্রয়,

উড়ে চলা নিজের মত,

পূবদিকে এগিয়ে চলেছে একটা জাহাজ,

উড়ছে তার পাল,

উড়ছে কালো পতাকায়

স্কাল অ্যান্ড ক্রসবোন ছবি।

 

এই নিস্তরঙ্গ সমুদ্রে সার্বিক ছন্দে শেকল,

এমনকি গতি প্রকৃতি বেঁধে ফেলছে ঢেউকেও,

মোহনায় মিশছে নদী এই এলাকায়

পাইরেট শিপ টহল দিচ্ছে

শিকারের খোঁজে।

 

আশ্রয়ের শেষ মাটি চলে গেলে কবুতর

তুমিও কি বসবে পাইরেট শিপে?

(২৬) ডেমনের সাথে

 

জ দেখলাম তিন প্রাজ্ঞ নরনারী কথা বললেন ডেমনের সাথে,

যথা বৃষ্টি হবে কিনা অথবা ফসলের সম্ভাবনা।

 

আমি তো দেখছি নগরীর পথ কেমন ছুঁয়েছে বন্দর,

ফুলে ফুলে ঢেকেছে ড্রাইভ,

তবুও বেদনায় নীল ঈশ্বরের মুখ,

ঈশ্বরের কিছু হলে তিনি কোথায় যাবেন,

হতে পারে এ আমার ভুল,

ব্ল্যাসফেমি ক্ষমা কোর,

ভুল হলে বোলে দিও,

অন্ধজনে আলো দিও,

যদিও ধারণা ঈশ্বরও সময়ে সময়ে অসহায়,

গুনে রাখছেন পুরনো কয়েন।

 

(২৭) গুপ্তঘাতক

 

গুপ্তঘাতক সুপ্ত থাকে অতল অন্ধকারে,

মনের গহ্বরে,

এই শহরে রাস্তাগুলো পাথর মোড়া,

তার ওপরে দাঁড়িয়ে আছে আধপোড়া সব কাঠের বাড়ি,

গুলির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে মন্দিরে আর গির্জা ঘরে,

গুপ্তঘাতক লড়াই করে নিজের সাথে।

 

এরকমই হতে থাকে যখন কোন নিয়ম ভাঙ্গে কৃষ্টি ভাঙ্গে,

ভাঙ্গতে থাকে পরিবেশ আর পরিচ্ছেদের রকম সকম,

চলন বলন কথা বলা,

ভাঙ্গতে থাকে ভালবাসা মূল্যবোধ আর সহানুভূতি,

সবাই কেমন মরিয়া হয়ে লড়তে থাকে ছায়ার সাথে,

সবার মনে গুপ্তঘাতক ফনফনিয়ে বেড়ে ওঠে।

 

(২৮) ভোরের স্বপ্ন

 

য়েদখানা থেকে বেরিয়ে এলো ভোরের স্বপ্ন,

চোখে ঝলসে উঠল খোলা আকাশের নীল,

কান পেতে শুনল এত পাখির ডাক-

জীবনে শোনেনি আগে।

 

ভোরের স্বপ্নদের জন্য ফুলের মালা নেই,

যাবার ঠিকানা নেই,

খালপাড়ের ঝুপড়ি ভেঙ্গে উঠেছে বহুতল।

তবু,

এখনও ট্রামের সেকেন্ড ক্লাস খিদিরপুর যায়,

চলে যায় ভোরের স্বপ্ন-

তার চোখে এখনও মায়ার কাজল।

 

(২৯) নিজস্ব সমুদ্রে

 

ই একলা ঘর তোমাকে দিয়েছে বিষণ্ণতা,

নীল নীল অন্ধকারে তুমি খুঁজেছ মুখ,

বালিশে জমিয়েছ কান্নার ফোঁপানি,

এতই নিবিড় তখন পারদ।

 

তোমার অভিমান তুমি লিখেছ আকাশে,

একা একা কথা বল যন্ত্রণার সাথে,

আয়নায় কতদিন দেখনি নিজের মুখ,

ভুলগুলো জমা করেছ হাত বাক্সের চোরকুঠুরিতে।

 

তবুও যন্ত্রণা ভালো লাগে,

ভালো লাগে একলা ঘর,

মাঝে দূরের বাতিঘর থেকে ছিটকে আসে সন্ধানী আলোর বন্যা।

 

নিশ্চিন্ত থাক তোমাকে কেউ খুঁজবে না,

তোমার বেদনা একান্তই নিজস্ব সমুদ্র,

ভোরের আলো আড়চোখে তোমায় দেখে,

সন্তর্পণে ডিঙ্গিয়ে যাবে চৌকাঠ,

মাঠের আল ছোঁবে,

ছুঁয়ে যাবে গাছের স্তব্ধতা,

সমুদ্রে ভেসে বেড়াবে একটাই মুখ,

তুমি জাল বুনে যাবে স্মৃতির সূক্ষ্ম সুতোয়।

 

 

(৩০) একলা ড্রাইভে বিষণ্ণ নীলে

 

কলা ড্রাইভে যদি মেঘ দেখ আলগা ঝুলে আছে আকাশে,

বাদল মেঘ যে কোন সময় ভাসিয়ে দেবে এই প্রান্তর,

গাড়ির ওয়াইপার ক্লান্ত হয়ে পড়লে

তুমি দাঁড়িয়ে যাবে গ্রামের পাশে।

 

দেখবে অমন যে বাঁশঝাড় সেও নুয়ে পড়ে ধরতে চায় শেকড়,

আর তুমি এক তালহীন কালহীন বিস্ময় মানুষ,

জানালার কাঁচ নামিয়ে ধরালে সিগারেট,

ছুঁড়ে দিলে একমুখ অহমিকা ধোঁয়া।

 

সব কিছু থেমে গেলে তাকাও বিষণ্ণ নীলে,

কষ্ট পেতেই তাকালে না হয়,

মাঝে মাঝে কষ্ট ভাল লাগে সুখের কোলাহলে।

(৩১) কবিতার কাছে

 

ঠিকানা পাল্টে ইদানীং কবিতার কাছে থাকি,

লিঙ্গ বিচার করিনি,

আবছা এক নারী আতরদান সুগন্ধ,

অঞ্জলিভরে ছড়িয়ে দেয় মায়া।

 

জনপদ এক সার্বিক ছবি আঁকে,

পোল ভল্টে পেরিয়ে যাচ্ছি বিষণ্ণতা,

তারের জঞ্জালে ঢেকে গেছে আকাশের নীল ও গাছের পাতা,

আমি যেন এক লয় ক্ষয় হীন প্রাচীন বৃক্ষ,

বুকের ভেতর লালন করেছি চাঁদের পাহাড় স্মৃতির কারুকাজ,

কিছু কিছু দাহ্যে আগুন জ্বলে

উষ্ণতা নিয়ে সরে যায় দূরে,

এই দহন অতর্কিত গ্রাস করে একলা ঘর।

 

হাইওয়েতে পড়লেই প্রতিটি বাঁক বিন্দু চেনা,

কোথায় টোল প্লাজা কোনখানে ফ্লাইওভার,

কোথায় পাশাপাশি চলে রেললাইন,

কোথায় কোন চিমনী থেকে ওঠে ধোঁয়া,

এমনকি পথের ধারের বিল বোর্ডও,

ঘিরে থাকে অজস্র অচেনা কিশোরী গ্রাম।

 

দ্রুত ছাড়িয়ে আসি

ফেলে আসি পথের ধারের শিরীষ গাছের মিছিল

কৃষ্ণচূড়া লাল ফুল,

অনেক দূর যেতে হবে।

 

সুন্দরীর নোলকের মত

বিকেলের আকাশে তখনও সূর্যটা

দোল খায়।

 

হঠাৎ স্তব্ধতা নেমে আসবে,

হঠাৎ থেমে যাবে কথা বলা, নিঃশ্বাস;

জীবনের ঘাতক হাইওয়েতে পড়ে থাকবে অবশেষ,

তুমি কি কাঁদবে কবিতা।

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

Indranil Sengupta.jpg
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
কলকাতা
fisherman.jfif

(৩২) কী ভাবো

             

নিজেকে কী ভাবো আলাদা স্বয়ম্ভূ কবি,

ছুঁড়ে দিচ্ছ যা মনে আসে,

তুমি কোন ক্ল্যানের বাহক বিশ্লেষণ আছে?

নাকি ঠোঁট বাঁকানো স্বভাব তোমার মুখের মানচিত্র বদলে দিয়েছে,

হাসতেও পার না প্রাণ খুলে,

হাসা উচিৎ মনে করলে কোন কোন ক্ষেত্রে একটা সাংঘাতিক খ্যাঁকখ্যাঁক,

অদ্ভুত আওয়াজে উড়ে যায় পাড়ার কাকেরা,

এবং কুকুরেরা তারস্বর কোরাস গায়।

 

কি তোমার গৎ,

কোন গোষ্ঠীর ধারক তুমি,

কোথায় লাগিয়েছ টোটেমীয় পোল।

 

তুমি যা লিখেছ নিজে মানে জান?

নাকি নানা শব্দের অদ্ভুত হারাকিরি?

আসলে তুমি এক অতি ভণ্ড,

প্রমাণ করতে চাইছ যা নও তাই।

 

(৩৩) বিট অফিসের পাশে

 

তনপুর বিট অফিসের পাশ দিয়ে শাল সোনাঝুরি শিরীষের পথ,

তুমি ভাবছ একা একাই কাটাবে বাকি জীবন,

চল হাঁটি একসাথে কিছুটা পথ,

তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম,

উদিত সূর্যের এই ভোরে

জানি তোমার নীল চোখের তারার আড়ালে লুকিয়ে থাকে দুঃখ,

সে দুঃখ দিও আমায়,

আমার সব ভালবাসা দিলাম তোমায়,

আজও জিজ্ঞেস করে লোকে

একা থাকতে কি আমার এতই ভাল লাগে?

 

(৩৪) সোজা

 

সোজা থাকাই ভাল,

বাঁকতেও পার কিন্তু কতটা,

কতটা মোচড় নিতে পারে শরীর মন,

গাছের মত কি ততটাই দুলবে হাওয়ায় হাওয়ায়?

কি জানি সম্ভব কিনা।

 

সোজাসুজি একছুটে পেরিয়ে যেতে পার প্রান্তর,

লতাগুল্ম ঘাসেরা তোমাকে ডাকবে আয় আয়

থেকে যা কিছু ক্ষণ,

ঐ দেখ কেমন মেঘের ভেতর থেকে উঁকি দেয় সোনালী রোদ্দুর,

আয় আয় ছুঁয়ে দেখ বাদল হাওয়া।

 

সোজাসুজি বড় সোজাসুজি দেখে যাও জীবন,

দেখ কি ভালই না লাগে,

ফেলে দাও মুখোসগুলো ,

ছিঁড়ে ফেল কষ্টকর ভারি আলখাল্লাটা।

 

(৩৫) তাকে দেখে

 

তাকে দেখে চমকে উঠল গোটা অফিস,

কেউ এনে দিল জল,

আরেকজন টেনে দিল চেয়ার,

অনর্থক রেগুলেটর বাড়াতে গিয়ে কেউ কেটে ফেলল প্যাঁচ।

 

অনেকে কাছে এলো না,

মেলে ধরা খবরের কাগজ মাঝে মাঝে সরিয়ে দেখতে থাকল তাকে।

 

সেও জানে এরকম হবে,

এরকম হয়,

তাকে দেখে ছুটতে থাকে এক শহর লোক,

চুল ঠিক করতে থাকে প্রৌঢ়েরা,

আয়নায় মুখ দেখে নেয় যাবতীয় বৃদ্ধ ভামেরা।

 

তবু মাঝে মাঝে বুক কেঁপে ওঠে,

একদিন আসবে সময়,

লোলচর্ম শক্তিহীন পরনির্ভর বীভৎস সময়,

আহা যদি তার আগে পড়ে যায় শেষ নিঃশ্বাস,

আহা সে কি কাম্য!

বড় ভাল এমন মরণ।

 

 

(৩৬) কয়েকটা

 

এক

 

ভাবে হবে না চারদিক ধুধু,

গার্হ্যস্থযাপনের শিলালিপি দেখল আকাশ,

বিমূর্ত সময়ে ক্রমশ জল ছেড়ে ডাঙ্গায় ওঠে,

কানকোয় ভর করে হেঁটে যায় কইমাছ।

আবার ট্রাইপডে টাইমার,

আবার সকালের ঘোলাটে মুখ,

নিজের ছবি তুলছি,

এখনও কাটে নি কাল রাতের সিরাজির খোঁয়াড়ি।

 

ক্রমাগত পাখির ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে ডানে বাঁয়ে,

আমি প্রপিতামহ অতিবৃদ্ধ,

আলখাল্লা জোব্বায় ক্রমশ লেগে থাকছে কবিতার রঙ,

গীটার হাতে সুদর্শন তরুণ পেরিয়ে যায় কলোনির মাঠ,

ইটের পায়ে চলা পথ,

সন্তর্পণে ডিঙ্গিয়ে যায় পড়ে থাকা রজ্জুগুলো।

 

দুই

 

আকাশ মেলে ধরল স্বচ্ছ নীল ক্যানভাস,

এখানেই ছবি আঁকতে বলল মেঘ,

চারদিক বরফে ঢেকে যাচ্ছে এতটাই তুষার।

 

তিন

 

এমন পাগলামো দেখিনি কখনো

তোকে পাগল বলি সাধে

চলে যাবি যা আমার কেটে যাবে দিন মাস বছর যুগ

শুধু মনে রাখিস আমার জন্যই বেঁচে থাকবি তুই

তোর জন্য আমি।

 

বুকের মধ্যে সব সময় তুই,

থাকবি হৃৎস্পন্দনে,

এভাবেই বাঁচি আমি

এভাবেই চলে যেতে চাই,

আমার ঘুমের মধ্যেও

তোর কথাগুলো রিন রিন স্বপ্ন হয়ে বাজে।

 

কেন অমন তাকালি বল,

কত বছর আগে সেই সর্বনাশা বিকেলে।

 

 

(৩৭) মৃতদেহ

 

মি যখনই মৃতদেহ দেখি তারা নিশ্চুপ থাকে,

আমি যখনই খোলা আকাশ দেখি তারায় ভরা,

তখন ভাবি ওটাই কি মৃতদের ঠিকানা,

মৃত্যু হলে কোথায় যায়,

সত্যি কি কোন কিছু থেকে যায়

একমাত্র স্মৃতি ছাড়া?

 

অনেক কাহিনী শুনেছি,

উৎকর্ণ অপেক্ষায় থাকি যদি মুখোমুখি হই কারো,

নানা শব্দ একাকী ঘরে উঠোনে বারান্দায় ছাদে,

অবশেষে সব শব্দেরই কারণ জানা যায়,

হাওয়ায় নড়ছিল পলিথিন মোড়ক খানা,

অথবা গাছের খেয়ালে পেকে ওঠা ফল টুপ করে খসে যায়।

 

একে একে জীবন

ছেড়ে চলে যায় বহু চেনা দেহ,

সব চিহ্নগুলো ক্রমশ ম্লান হয়ে,

তলিয়ে যায় প্রবল অন্ধকারে।

 

এখনও পর্যন্ত কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় নি,

কোথায় যাও তোমারা,

কেমন থাক।

 

(৩৮) পরমেশ্বর

 

রমেশ্বর তোমাকে অনুভব করতে পারি,

অসীম শক্তি,

এক প্রান্তরে আমি একা

আকাশ ছুঁয়ে উঠেছে দেয়াল,

ঝড় উঠলেই আমি ছুটে যাই দেয়ালের কাছে,

আঁকড়ে ধরি প্রোথিত লৌহ শলাকা।

তুমি নেমে আস অপ্রকাশিত অলিখিত কবিতার মত,

আমার প্রয়োজনে,

এক ব্যক্তিগত ঈশ্বর।

 

আমি মেজে ঘষে ঝকঝকে করি লন্ঠন চশমার কাঁচ,

নিকনো স্বপ্নভেজা উঠোনে চারপাই পেতে আকাশ দেখি,

ঘর দেখি টালির চালা,

উঠে গেছে মাটির দোতলা,

অদূরে গোয়ালে বাছুরের ডাকে নড়ে ওঠে গাভী।

 

পরমেশ্বর তোমাকে অনুভব করি,

আমার মায়ের মত।

 

 

(৩৯) তোকেও নদীর মতো

 

মি নদীর ধারে বাসা বেঁধেছি বুকে ধরেছি জলধারা,

তোকেও ভালবাসি নদীর মত,

নদী আমার শিরার ভেতর বয়ে চলেছে রক্তধারা,

ইউফ্রেটাস কঙ্গো নীল মিসিসিপি,

দেখেছি গঙ্গার বুকে সোনালি আলো।

 

কিভাবে ভালবাসি তোকে,

কিভাবে ভালবাসা ছড়িয়ে যায় ত্রিমাত্রিক হয়ে,

দৈর্ঘ্য প্রস্থ গভীরতায়।

 

 

(৪০) প্রজন্ম

 

প্রজন্ম বল এ দায় কার তোমার আমার,

আমি তো নীল নীল অন্ধকারে ভাসিয়েছিলাম জীবনের ভেলা,

যদি সে ডুবে যায় বল এ দায় কার,

তোমার আমার।

 

আমি জীবনের গান শুনেছি গেয়েছি দেখেছি ওঠাপড়া,

তবু বল এ দায় কার তোমার আমার,

তমসাবৃতা যে রজনী ধায় অধিকতর বেদনায়,

এ দায় একান্ত আমার,

মাথা পেতে নিই হলাহল আমি বিগত প্রজন্ম

কি রেখেছি সঞ্চয়।

 

দুরপনেয় কলঙ্করেখা যদি আঁখিতারা সজল করে

বল আমি কি এড়াতে পারি দায়,

আমি কি এড়াতে পারি এই বিচ্যুতি,

কি করেছি আমি,

শুধু কাটিয়েছি সময়,

এখন তীব্রতর বেদনায় শুধু হাহাকার হাহাকার।

 

উপাখ্যান উপাদান প্রোথিত গহ্বরে,

শিলালিপি হাহ্‌ শিলালিপি গ্রাম থেকে সোজা ছিন্নমূল শহরে,

ঢাকা বরিশাল ফেলে এসে

জমাট বাঁধা শহরের প্রান্তসীমায় চালাঘর।

 

আমারে ভালবাসল কাঠকুড়ানি,

তার লগে প্রেম নাই,

প্রেম বড় হিসাব নিকাশ,

ভাউচারে কি প্রেম লেখা যায়?

বল কি করি উপায়,

আত্মগত বড় আত্মগত এই বেঁচে থাকা।

(৪১) তিনি

 

তিনি আমাকে আঁকতে বলেছেন গোলাপ বাগান,

তিনি বলেছেন ঐ যে রুপোলী চাবি তাতে খোলা যায় কোষাগার,

আমি তাই এই বারান্দায় মেঘে চৌকাঠে ছড়িয়ে দিয়েছি শব্দস্নান,

তিনি বলেছেন তাই দীর্ঘতর হয় ছায়া;

ছায়ার মধ্যে আমার আঁকা কৃষ্ণ গোলাপ মরবিড ফোটে।

 

যথা প্রদীপ্তং জ্বলনং পতংগা বিশন্তি নাশায় সমৃদ্ধবেগাঃ।

তথৈব নাশায় বিশন্তি লোকাস্তবাপি বক্ত্রাণি সমৃদ্ধবেগাঃ।

যত কিছু প্রত্যয় যা কিছু ধারক,

গলনাঙ্ক পেরিয়ে যায় তাপ প্রবাহ,

আজানু বিস্তৃত তৃণভূমি,

চেতনা জুড়ে তীব্র শিহরন,

আকণ্ঠ আকাশ নিয়ে প্রান্তর জেগে থাকে,

জেগে থাকে ধূপ ধুনো ইজেল প্যাস্টেল।

(৪২) ধূসর বেড়াল

 

জেগে ওঠে ধুসর বেড়াল,

বেড়াজাল ছিঁড়ে দ্রুত চলে যায় দূরে,

ঝড়জলে নামছি আমি প্যারাট্রুপার,

নামতেই হবে অন্ধকারে,

ডিঙ্গিয়ে যাব মনখারাপের একশো নালা,

আমার আগে ছুটেছে এক আদিম জানোয়ার।

পিঠ তার টান টান ধনুকের ছিলা,

মুহূর্তে পেরিয়ে যায় যাবতীয় বিষাদের স্তূপ,

চারপাশ শুনশান নগরী ঘুমোয়,

মাঝে মাঝে ঝোড়ো হাওয়া ফিসফাস সনেটের মতো,

গান গায় ধারাপাত বৃষ্টি ফোঁটায়,

জানোয়ার ছুটে চলে সুতীব্র বেগে,

দহিত অনলে বাষ্প শরীর নিয়ে

আমিও পেরোতে থাকি একরাশ মায়া।

 

(৪৩) টেল লাইট লাল

 

কটু সাহস দিলে তোমাকে প্রেম বলতে পারতাম,

একটু তাকাতে যদি আমার চোখে,

সাগর দেখতে পেতে,

এর চেয়ে আর বেশী কিছু বলব না,

বলা ঠিক নয়।

 

একটু ভালবাসা দিলে পেতে শতগুণ,

একটু স্পর্শ দিলে ছড়িয়ে যেত ওম,

তুমি তো আলুলায়িত কুন্তলা,

আলসেতে ঝুঁকে দেখছিলে পাখিদের এ ডাল সে ডাল,

অথচ আমি একনিবিষ্ট আবদ্ধ দেখছি তোমাকে।

 

আমার দৃষ্টিতে তুমি,

আমার মনে তুমি,

আমার ভেতরে তুমি,

বাইরে হাহাকার গরম হাওয়া,

লু বইতে থাকে এ সময়ে।

 

একটু সাহস দিলে না আমাকে,

তাকালে না চোখ তুলে,

আর তো মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা,

চলে যাব দূরে,

বিকেলের ট্রেনে,

প্ল্যাটফর্মে দেখবে টেল লাইট লাল।

 

(৪৪) প্রবাহ

 

য়নায় তাকালাম কেন জানি না,

এত বৃদ্ধ আমি!

আয়না ভুল বলে না,

বয়েস বাড়লে বৃদ্ধই হয়।

মাটির বয়েস নেই,

সবুজ বনের বয়েস হয় না,

পাহাড়কে কেউ বৃদ্ধ বলে না,

নদীও চিরন্তন।

 

আমি প্রকৃতি হব,

মিশে যাব মাটিতে ঘাসে সবুজে তারুণ্যে,

বর্ষার ভরা নদী নামলে পাহাড় থেকে,

জেনো আমিই আসলে রয়েছি জলে।

সাগরের ঢেউয়ে আমি,

আমি রোদ্দুরে সুবাতাসে,

যখন দাবানলে পুড়ে যাবে গাছ মাটি ঘাস,

হাওয়ার সঙ্গে আসবে ছুটে আমারই দীর্ঘশ্বাস।

 

কেন ভাব আমি জীবিত কি মৃত,

কেন ভাব না আমি আমি আমিতে নেই আমি,

আমি চলে যায় মহাস্রোতে জীবন প্রবাহে,

অনন্ত পথিকের মত,

থামে না  পথ চলা কথা বলা

প্রবাহ বেঁচে থাকে।

 

চল দাঁড়াই নদীতীরে সাগর পারে,

ছুটে যাই পাহাড়ে ঝরনার কাছে,

প্রবাহ প্রবাহ তোমাকে ধরব হৃদয়ে,

শুনব কলতান সঙ্গীত।

 

 

(৪৫) আমার ঘর

দরে আমার ঘর –

তুমি দেখলে ভাববে ঝড় বয়ে গেছে,

এতো অগোছালো।

 

এই আমার দেহাতী বাগান,

এখানে পাখিরা গান গায় স্বরলিপি ছাড়া।

 

ওইদিকে পুকুরের ধারে আমার পোড়ামাটি চারুকলা ওয়ার্কশপ,

তার পাশেই শুয়ে আছে লালি ছটি ফুটফুটে বাচ্চার মা,

সপরিবারে দ্বিপ্রাহরিক আধোজাগরণে,

পুকুরে হাঁসেদের ওঠানামা দেখে মিটমিটে চোখে।

প্রাচীন পরিত্যক্ত জৈন দেউলে

আর্কিওলজিকাল সার্ভেকে বিদ্রূপ করে শুকচ্ছে তিলের খড়,

ইকো পার্কের বোটগুলো সার সার রোদ পোহায়,

উঁই ঢিপিতে ছেয়েছে সেগুন বন।

 

আমার ঘর,

তুমি দেখলে ভাববে ঝড় বয়ে গেছে,

এতো অগোছালো।

চিন্তায় আছি,

সত্যিই ঝড় উঠতে পারে,

ঘর ভাঙ্গতে পারে দু’একটি পাখির,

যারা গান গায় স্বরলিপি ছাড়া।

ঝড়ের আগেই পৌঁছতে চাইছি বাগানে,

হে সারথি ওড়াও পঙ্খীরাজ আকাশের নীলে।

(৪৬) আবার যদি শুরু করা যায়

 

কি ভাবে জানলে বল আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস

কিভাবে আমার গভীরে তোমার বাস

কিভাবে জানলে আমার না বলা কথা গুলো

 

অনেক দুঃখ তুমি কুড়িয়ে নিয়েছ

আমার হতাশার যত বিষফল

আবার চল যাই নদীর অগভীরে গোড়ালি ডুবে যাওয়া কাদাজলে

আবার যদি শুরু করা যায় বাকী পথ একসাথে চলা

তোমার সঙ্গেই শুরু আর শেষ আমার যত কথা বলা

চাইছি ভুলতে বল কি করে ভোলা যায়

বল কি করে ফেলে আসি জীবন যা হারিয়ে গেছে তারায় তারায়

কেন যে এখনও দেখি তোমাকে

স্মৃতির পর্দা সরে যায়

মনে হয় এই বুঝি ছুঁয়ে ফেলব তোমায়

তোমাকে ভাল না বেসে কি করে থাকি বল

কি করে ভুলি বল

তোমার পিঠ ছুঁয়ে নেমে আসা চুলের জলপ্রপাত

 

আবার যদি শুরু করা যায়

(৪৭) নিজের মতো

 

মার জীবন বাঁচি আমি নিজের মত,

দূরে থাক;

আমার নেশায় মাতাল হয়ো না,

সামলে নিও।

আমি বড় আত্মকেন্দ্রিক,

নিজেকে নিয়েই থাকি বেশ;

কাছে এলে দুঃখ পেতে পার,

সেটাও আমার সয় না,

আমি চাই না আমার জন্য কাঁদুক বনলতা।

 

এই আমার পাতার কুটির,

ওদিকে গান গায় পাহাড়ি ঝর্ণা;

ঝর্নাও নিজের মত।

 

আমি ছুটে বেড়াচ্ছি ইউক্যালিপটাসে সোনাঝুরিতে,

আমি দেখছি নদীতে স্নান করা ললনা,

মাথায় বোঝা নিয়ে চলে যাওয়া অরণ্য রমণী,

ফসলের ক্ষেত,

 

 

 

চাষিবৌ,

কৃষকের মাঠ ভরা ধান নীল নীল আকাশ,

আকাশভরা মেঘের ছবি,

আমি নেশাগ্রস্ত যুবক

ইহকাল পরকাল বিসর্জিত।

তুমিও কি মাতাল হবে?

হয়ো না।

দুঃখ পাবে।

(৪৮) নিশ্চিন্ততার অলীক

 

মার না বলা কথারা জমে থাকে রাতের নীরবতায়,

এই নির্জনতায়

সাম্প্রতিকতম স্বপ্ন দেখছি দু’টো হলুদ প্রজাপতির চিত্রিত শরীর,

বনপথ

আর হঠাৎ থমকে যাওয়া দ্রুতপদ কাঠবেরালি,

এছাড়া চেনা শালিকের অচেনা চাউনি।

 

আমার রাত ভাল লাগে,

দ্রুততার সারাদিন এক চলচ্চিত্র ছবি হয়ে উঠে আসে চোখের পর্দায়।

 

ভাঙ্গা মন ছেঁড়া সুখের আফিং ঘোর,

অজস্র ধর্ষিত মৃত শিশুর মুখ,

কাজ খুঁজে ক্লান্ত ঘরে ফেরা হাজার সবল হাত,

সুখী সচ্ছল গৃহবাসীর কন্ট্রাস্ট,

সব সব দেখি আধো ঘুমে!

একটা সর্পিল অন্ধকার মাঝে মাঝে নেমে আসে,

মনে হয় তলিয়ে যাচ্ছি,

টুকরো হয়ে যায় কাঁচের মেঝে নিশ্চিন্ততার অলীক,

মাথা ঠুকে যায় সমুদ্র অতলে,

চিৎকারে জেগে উঠি,

নিজের শব্দ কি এতই কর্কশ।

 

(৪৯) মার্জিনাল ম্যান

 

ই দেখ সরসিজ ফুটেছে,

সায়াহ্নের ছায়া বনানীতে,

আকাশে নীল ক্যানভাসে কেবল মেঘের নানা ছবি

এটা কি কল্পনার জাল না সত্যি?

 

ভাল লাগে না,

যায় আসে না কিছুই,

থাকুক অথবা চলে যাক ঝড়।

 

আমি তো হত্যা করেছি নিজেকে,

আমার জীবন শুরু করেছি,

নাকি শেষ?

যায় আসে না কিছুই থাকুক না ঝড়।

 

যদি আগামীকাল আমাকে না দেখতে পাও?

আমি তো মার্জিনাল ম্যান

একটা ল্যান্ডস্লাইড ধরে নামছি পাহাড় থেকে।

আকাশ দেখ শুধু ,

আমাকে দেখ না,

বেঁচে থাকতে আমার কোন দয়া লাগবে না।

না, কিছুই হয় নি, থেকো নিজের মত।

 

(৫০) দেরী করে

সেই তুমি এলে এলে বড় দেরী করে দিলে

কেন চলে গেলে মাতিয়ে তাতিয়ে তোমাকে কেড়ে নিলো কে কেন

কেন কেড়ে নেয় তাদের কারা যেন যাদের থাকার কথা ছিল

কাদের থাকার কথা থাকে আর কে থেকে যায় শেষ পর্যন্ত

কে জানে

 

কে জানে কখন মন উচাটন কোন স্বপ্ন সন্ধানী তার স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়

কেন ভেঙ্গে যায় অতঃপর এক একটা তাসের ঘর

কে কি চালায় সমাজ সংসার

হাহাকার শুধু হাহাকার

 

কে কোথায় জ্বালাবে দীপশিখা

সৃষ্টিকর্তা কোন আগুনে পোড়ান কোন খাঁটি সোনা

নাকি সীতাকেই বারবার পরীক্ষা

 

তুমি এলে কেন এলে এ তোমার সময় নয়

আরও আগে অথবা কিছু পরে তোমাকে মানিয়ে যেত বেশ

(৫১) এখানে কেন

 

মি কেন এখানে কেন ঘুরছি ভাবনার সীমানায়;

আমি কেন এখানে থাকতে পারতাম ওখানেও;

এ পাশে বসছি কেন ওপাশে কেন নয়?

আমি বরাবর কেন এপাশেই থাকি?

কেন বাঁধা থাকি নাগপাশে, কেন দাদা লাগে;

কেন ধাঁধা লাগে, কেন গুরু লাগে;

কেন নতজানু সবকটা পাথরের কাছে;

কেন দেবতা দিয়েছ এত চাহিদা এত হাহাকার।

 

(৫২) কে তুমি?

 

তুমি কি কবি?

যদি তাই ভাব, তবে কেন ভাব?

তুমি তো কশাই হয়ে পারতে,

অথবা চাষা হয়ে ফসল ফলাতে খাসা,

কিম্বা মালী অথবা ফুল বিক্রেতা।

তবু কেন কবি?

হতাশ প্রেমিক নাকি?

চাইছ প্রেমিকা পরুক কবিতা,

হা হুতাশ করুক সে করেছে ভুল,

তোমার মত হীরে ফেলে তুলেছে কাঁচ,

জড়িয়ে ধরেছে কাঁটাগাছ,

আর তুমি ছিলে এক মহতী সুললিত ফুলের বাগান।

 

কেন তুমি কবি হতে গেলে?

হবার জন্য অপেক্ষায় ছিল অনেককিছু,

রাইস মিল শাঁসালো মনসবদারি, বাগিচা।

হবার জন্য অপেক্ষায় ছিল অনেককিছু,

কেন তুমি ছুঁলে না সেসব কিছু,

আচ্ছন্ন থেকে গেলে কবিতায়।

 

(৫৩) জনপদে

নপদে থেমে যাওয়া শান্ত বিকেলের মত

লঘুপায়ে নেমে এলো ক্ষোভ

ভালবাসার গণ্ডী ঘুচে গেছে

টাকা আনা পাই গোনে আনমনা উদাস বালক

হিসেবের খাতায় জমা খরচের দাগ সদর্থক তো নয়ই

চোখে তার আগুণ

প্রতারিত নিঃশেষিত স্বাধীনতার সন্তানেরা ক্রমশ

দেশে দেশে হারিয়ে ফেলে একাকীত্বে।

জনপদে থেমে যাওয়া শান্ত বিকেলের মত

লঘুপায়ে নেমে এলো ক্ষোভ

প্রান্তিক মাতা শুষ্ক স্তন তার কোলে মৃত শিশু

তাঁর কোন জাত নেই দেশ নেই

কোন জাত দেশ থাকে না গোলাতে গুঁড়িয়ে যাওয়া বিদ্যালয়ের আর হাসপাতালের।

অসাম্যের কোন জাত থাকে না,

অত্যাচারের কোন দেশ ভাগ নেই,

আমি জানি না কোনটা দেশ কোনটা বিদেশ,

আমি জানি না

ভিন্ন বেড়ার মানুষেরা কেন গায় একই সুরে গান।

 

 

(৫৪) নীরা এবং

 

ঘু মরালীর মতো নারীটিকে নিয়ে গেলে বিদেশী বাতাস

আকস্মিক ভূমিকম্পে ভেঙ্গে গেলে সবগুলো সিঁড়ি

বড়ই প্রাসঙ্গিক হয়ে যান তিনি

অন্দরের বাগানে তখন অনায়াসী সুবাস

আশ্চর্য অর্বাচীন নক্ষত্র

দীর্ঘ অপরাহ্ণের ছায়া তাকে কাঁদাতে তো পারেই না

বরং ঠিক বিপরীত

আকাশের আয়নায় মুখ দেখে

নিক্ষেপ করেন অতি দীর্ঘ বল্লম

দেশান্তরী রোদ্দুর

তাঁর সাহসী  চুম্বনে

বেলাশেষের জলজ পাপড়ি অবনতা হয় আশ্লেষে।

 

থমকে দাঁড়িয়ে তিনি নীরার চোখের দিকে....

ভালোবাসা এক তীব্র অঙ্গীকার, যেন মায়াপাশ

সত্যবদ্ধ অভিমানে চোখ জ্বালা করে ওঠে

সেই অমোঘ মুহূর্তে আমারও পৃথিবী তখন নির্ঘুম জ্যোৎস্না আলোকে

ঘুমিয়ে পড়ে শুনশান চারপাশ

নদী থেকে তুলে এনে যাবতীয় দীর্ঘশ্বাস

ইতিহাস প্রাণ ফিরে পায় অলীক উল্লাসে

অতীত জীবিত হয় আমার যাদুঘরে

পৌরাণিক প্রাগৈতিহাসিক থেকে শুরু করে নিকট অতীত

অপেক্ষায় থাকে সেই অমোঘ মুহূর্তের

যখন রাত গভীর হয়

আর

নিখুঁত গোল চাঁদ কে হঠাৎ সম্পূর্ণ ঢেকে দেয়

এক ফালি মেঘ।

 

চাঁদের নীলাভ রং এ লেগে আছে নীরার বিষাদ

আমি ছুটে যাই ঐরাবতের কাছে

তাকে শোনাই নীরার কথা

আন্তরিক জীবনবোধের গান।

 

ঐরাবত ভাবেনি সেভাবে কোনদিন নীরা এবং মানুষের দৈনন্দিন,

একদিন সেও আসবে শুঁকবে মাটীর ঘ্রাণ বুনো গন্ধ

ভাববে নীরাকে নিয়ে

বকুলমালার তীব্র গন্ধ এসে বলে তাকে বলে দেবে নীরা আজ খুশি

হঠাৎ উদাস হাওয়া এলোমেলো পাগলা ঘণ্টি বাজিয়ে আকাশ জুড়ে

খেলা শুরু করলে

ঐরাবতও জেনে নেবে নীরা আজ বেড়াতে গিয়েছে।

আমিও পৌঁছে যাই নীরার কাছে

যাই যাই করেও শীত যায় না

উদাসী সকালে মেঘেরা নানা ছবি আঁকে

অনায়াস ফর্মেশনে ভেসে ওঠে অসংখ্য মুখ

ভাবনার খেই কেটে পূব আকাশের সূর্য ছুঁয়ে

বাঁদিকে ঘুরে যায় নিঃসঙ্গ বিমান

ঠিক সেই পুরনো মুখ 

সেই ভঙ্গী সেই গ্রীবা সেই চকিত চাহনি

আমার মনে আমার কাব্যে আবার সেই তুমি নীরা।

 

যদিও জানি এ সত্যি নয়

এই প্রৌঢ়

সায়াহ্নে হাতড়ে বেড়াচ্ছে হারানো অধ্যায়

সে সব বলার কথা নয়

কিছু কিছু ক্ষত জমাট রক্ত ক্ষরণ

মনিমুক্তো জমাই থাকে মনের গভীর সিন্দুকে

সমুদ্রের ঢেউ ভাঙে বালিতে

আমার  পা স্পর্শ করে ফিসফাস বলে যায়

অজস্র একান্ত এমন কথা আমি ভাবি গর্জন

ছুঁয়ে থাকি ভাঙা ঢেউ –

আগামী বসন্তের পতনোন্মুখ বৃক্ষদের

আগামী বর্ষার ক্রন্দসী ধানক্ষেতদের

সমুদ্রের তরঙ্গ বালুকণাদের কান্না কথা গান শুনব

উদাসী আকাশকে বলব তাদের কথা

চাঁদ ডুবে গেলে

বলব নীরার কথা।

 

(৫৫) দেখি কেমন পারো

 

র একটা টেস্ট কেস

ছড়াতে হবে স্পেল

গিনিপিগ খুঁজছ তুমি

এই তো আমি

কর হিপ্নটাইজ

দেখি কেমন পারো

 

আমি ঠিক করেছি

আমার চোখের পলক পড়বে না

আমি ঠিক করেছি

আমার চোখের মুখের একটা মাংসপেশিও কাঁপবে না

 

দেখি তুমি কেমন নাড়াও রূমাল জাদুকাঠি

আমি না নড়লে কেউ আমাকে নাড়াতে পারবে না

 

(৫৬) নিকষিত হেম

 

ই আমার কলুষিত প্রেম নিকষিত হেম

প্রেম কাকে বলে আমি জানি না জানি মোহ

মোহ টেনেছিল তোমার দিকে

তোমার হিসেবের বাইরে আমার ঘুরপাক

 

তোমার মোহে ডুবলে কি ভাল হতো

কে জানে

কেটে গেল সুতো ঘুড়ির ভোকাট্টা দেখলাম আমি

তুমি ও দেখলে

জানি না হাততালি দিয়েছিলে কিনা

জানি না কেন দেখালে তোমার ক্লিভেজ

সমস্তটাই কি অকারণ?

ক্লিভেজ দেখ অনেক রকম হতে পারে

বুকের পিঠের মনের

তুমি কোন ক্লিভেজ দেখিয়েছিলে মনে রাখতে বল

এত দিন বাদেও?

 

হা হতোস্মি আমার কি এতই স্মৃতিশক্তি

বড় বেশি আকাঙ্ক্ষা তোমার আমকে নিয়ে

আগেই বলেছি কি না জানি না

এ তোমার বড় দোষ

দু’রকম মানে

এমন কথা বললে কেন

খেলতে হয় খেল না এক্কা দোক্কা

মানুষ নিয়ে খেলার কি কারণ!

 

(৫৭) চলো

 

ল আমরা থাকি আপন আপন

যে যার ঘ্যামে

গরমে ঘেমে

এবং নিজের পা বাঁচিয়ে

ল্যাং মারি

একে অপরকে নির্বিশেষে

 

সকলে মিলে অবশেষে

পতিত হই

তোর ভাল আমার কি

আমার ভাল তোর কি

আমাদের ভাল কার কি

কারো ভাল দেখতে নেই

দেখতে পেলেও বলতে নেই

আমি আমি আমিই সব

আমার জন্য রাজপ্রাসাদ তন্বী নারী

হীরের আংটি সোনার ফুল

আমিই সঠিক বেবাক ভুল

 

 

(৫৮) শৈত্য-প্রবাহে

শৈত্য প্রবাহে সব রং ঢাকা পড়ে যায়

বৃত্তের ভেতরে চাঁদের গোল আকার

পৃথিবী অক্ষরেখায় ঘুরে যায়

ঘোরে কক্ষের সীমানায়

প্রবল ঘোরে কাঁটা

দ্রুত মুছে ফেলে সময়

কবজার ওপর দরজা ঘুরে যায়    

ফিরে আসি পুরনো টানেলে

একা এক খুঁজতে থাকি পুরনো সময়

সূত্রপাতে ফিরতে থাকে

আসি মূল প্রসঙ্গে

স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দেখি মুখ

 

(৫৯) কবিতার শাসন

 

মানুষ কবে পৌঁছে যাবে নির্বিবাদী কবিতার ভোরে?

কবিতা চালাবে শাসন ভাঙ্গবে হাহাকার

অনুলিপি পৌঁছে যাবে সব অনুশাসনে।

জলছবিতে ঢেকে যাবে সমস্ত বিজ্ঞাপন

গান আর কবিতাই হবে রাষ্ট্রভাষা,

সংবিধান প্রণেতার আবশ্যিক হবে কাব্যতীর্থ উপাধি।

 

কবে যে ভালবাসা জুড়বে সব ছন্নছাড়া হৃদয়,

হবে সমস্ত পাঠক্রমের আবশ্যিক বিষয়।

 

(৬০) মেয়ে

মেয়ে সে একজন দুঃখ চেনে নি

তাকে চেনাবে এই ভাবে?

এত কষ্ট দেবে তাকে?

 

মেয়ে একজন গড়ে উঠছিল ধীরে ধীরে

সে মা হতে পারত ধারণ করত জীবন

তার দেবার অনেক কিছু ছিল পৃথিবীকে।

 

থামিয়ে দিলে?

এভাবে!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

(৬১) সে

 

সে কখনো আসে নিদ্রায় কখনো জাগরণে।

কাল্পনিক নয় বাস্তব ও নয়।

বড় কাছের।

রোজ তার সাড়া পাই।

নিদ্রায় বা জাগরণে।

 

সে তার কথা বলে যায়।

সাদা এক দোতলা বাড়ির কথা।

পড়াশুনোর কথা ভবিষ্যতের কথা।

 

একটা প্রান্তর দেখতে পাই।

তাকে দেখতে পাই।

উজ্জ্বল বুদ্ধিদীপ্ত চোখ সারল্যে ভরা।

সামনা সামনি হলে অনেক কিছু ভেঙ্গে যায়।

ভাঙ্গতে চাই না।

 

(৬২) নদীর চরে

 

কলা নদীর চরে বিষাদ জেগে ওঠে ভোরের বাতাসে

কেটেছে আরও একটা নির্ঘুম রাত গত রাত

চাঁদের হলুদ আলোয় ছড়ানো ছিল একরাশ মায়া

গ্রীষ্মের দিন জিটি রোড দুপুরের বটগাছ

এখনো চোখের পাতায় এখনো অজস্র চলচ্চিত্র দেখে যাই

একলা নদীর ধারে চর জেগে ওঠে

হাওয়াতে দুলতে থাকে অজস্র বিষাদের কাশফুল

 

(৬৩) না বোল না

 

বছা চাঁদের আলোয় যে মানুষটা তোমাকে সঙ্গ দেয়

তাকে না বোল না

তার জন্য জমিয়ে রাখ তোমার সেই বিখ্যাত হাসি

যে হাসির জন্য ছুটেছি বহু মাইল

সে চাইলে তুমি নাচতে পার যুগলবন্দী

 

মন রেখে দিও আমার জন্য কেবল

রেখে দিও শেষ নাচ

বনের পথে তার সঙ্গে বাড়ি ফিরো না

তাকে বলে দিও

আমার বাহুলগ্না হবে তুমি

তুমি আমার তুমি আমার তুমি আমার

এই কথা বলে দিও

 

বলে দিও শেষ নৃত্য তুমি নাচবে না তার সাথে

ওটা আমার জন্য তুলে রেখেছ তুমি

বলে দিও

বলে দিও সব হবে তার সাথে নাচ গান

শুধু আমার সঙ্গে ফিরবে তুমি একই ঘোড়ায় একসাথে

 

​(৬৪) যাচ্ছি ডুয়ার্স

 

নভূমি নদী আর পাখিদের এক আশ্চর্য দুপুর

ডুয়ার্সে অপেক্ষায় ছিল আমার

কালিমাটি নদীর বেডই রাস্তা

আগে জানতাম না পাহাড় থেকে যেখানে নামে নদী

সুনসান এই দুপুরে

কিষাণগঞ্জ এক অদ্ভুত সঙ্গম

পাশাপাশি এন এইচ থার্টিফোর ও শতাব্দী

রাতের রাস্তা জুড়ে ট্রাকেরা মালবাহী

আর এই এক ঘর চলমান লোক

কলকল কলকল

ক্রমাগত মোবাইলে বাজে রিংটোন

হঠাৎ চমকে উঠি সশব্দে পেরিয়ে যায় বিপরীত ট্রেন

 

কলকাতার প্রবল দুপুরে চড়েছি বাতানুকূলে

ছিমছাম এই যান্ত্রিক

একে একে পার হয় কালভার্ট লেভেলক্রসিং

আর না থামা ষ্টেশনে প্ল্যাটফর্মের সারি সারি মুখ

 

আলো জ্বলে জনপদে

যদিও নির্জন পথঘাট

কালো কাঁচের আড়ালে আমার সমস্ত বিকেল দুপুর দেখে যায়

চলমান মায়াবী বায়স্কোপ

 

মাঠের কোথাও ধান

জড়ো করা খড়ের  গাদা

গবাদি পশুর ভিড়ে একলা রাখাল

আর কত নদী  

বাঁশলোই গঙ্গা অজয় ময়ূরাক্ষী মহানন্দা

একরাশ রেল সেতু কালভার্ট ঝনঝন

 

আসছে অন্য জনপদেরা

অন্য এক আত্মীয়তা গায়ে মেখে

অপেক্ষায় উত্তরবঙ্গের কিছু মানুষজন

কবি পুণ্যশ্লোক তাঁদের একজন

যারা জানে তারা বোঝে

এই সব মনের আকুতি

এক পশলা বৃষ্টির পর বনস্থলী নিস্তব্ধ

পাখির ডাকের সকাল ক্রমশ প্রকাশ্য বলা ভুল

সে যেন দাঁড়িয়ে আছে

এখন কি সত্যি সকাল

এক ভাবে ডেকে যাচ্ছে পাখিরা পালা করে

ছন্দোবদ্ধ টুইটকার

(৬৫) শরীর মাপছিলো

 

নে কোন পাপ ছিল না শরীর মাপছিল দুটো চোখ

শরীরের মাপ ছিল চোখে

শরীরে উত্তাপ ছিল

উত্তাপ ছিল বুকে 
 

গলে যাচ্ছিল বরফ চূড়া

টানেলে টানেলে পাহাড় পেরিয়ে বরফ

পেরিয়ে ছুটেছে ট্রান্স সাইবেরিয়ান এক্সপ্রেস

কোথা থেকে কোথায় চলে গেল কল্পনা এবং ট্রেন 

জিভের লাগাম দিলাম ছেড়ে

 

মনে কোন পাপ ছিল না

শরীর তবু কাঁপছিল তিরতির

মাপছিল দুটো চোখ

চোখের আয়নায় কম্পমান আলম্বিত রেখা

শরীর রেখার মত নাকি আগুনের ছায়া

আগুন নড়ে চড়ে

আগুনের পাপ থাকে না

খাদ গালিয়ে বের করে নেয় পাকা সোনা

 

আগুন পরীক্ষা করে শরীরে

শরীরে পাপ ছিল কিনা

শরীর আগুনের রেখা নড়ে চড়ে কম্পমান

শরীর ধরা পড়ে যায় চোখে

চোখে চোখ পড়লে চোখ তাকায় নির্জনে

মনে মনে  খুঁজে বেড়ায় মুখ শরীর

চেনা বালিয়াড়ি ক্যাম্প ফায়ার

 

(৬৬) জন্মদিন

 

লোমেলো হাওয়াতে ঈশ্বরের বাগানে পেকে যায় গ্রীষ্মের আমেরা

বালিকারা যুবতী হন

এই প্রৌঢ় ক্রমশ নারী দর্শন দিক দর্শন সমাজ দর্শন ও

নাবালিকা ধর্ষণের কাহিনীর প্রেক্ষাপটে

বৃদ্ধ হতে থাকে

কি আশ্চর্য মুদ্রিত হয় বর্ণমালা কি বোর্ডে

 

তিনশো চৌষট্টি দিন আলাদা নয় জন্মদিনের চেয়ে

প্রত্যর্পণের কিছু সৈনিক

তাঁদের দৈনিক বক্তব্য এখানে কেন ভুল মণ্ডপে

আমি কি দিয়েছি বল প্রত্যর্পণ কেন

সোনালি রেলিং আমি পাতি নি হ্রদের ধারে

এই সুবিশাল হাওয়া জাহাজ আমার তৈরি নয়

নদীর ধারের প্রস্তর খণ্ডে বসে থাকি অকর্মণ্য এক

 

তিনশো পঁয়ষট্টিতম দিনে তার কি কার কি

কেন জন্মদিন

জান আমার মরণ হলে কোন এপিটাফ লিখবে না কেউ

এমনও কি শরীর কর্তিত ঊর্ধ্বাংশও

যাকে আবক্ষ বলে

বসবে না

 

তবুও মণ্ডপে বক্তব্য রাখছে কেউ

গালে হাত দিয়ে শুনছি

ভুল ভাঙ্গাবো না

তিনশ পঁয়ষট্টিতম দিনে

কারা যেন কেক প্যাস্ট্রির ক্রিম মাখিয়ে দেয় সর্বাঙ্গে

 

(৬৭) নতুন সকাল

 

দি ঘুম ভেঙ্গে উঠে দেখি নতুন সকালে

কোলাহল থেমে গেছে সমস্ত আস্তাবলে

প্রভাত সমীরে সূর্যালোকে উজ্জ্বল নগরী গ্রাম

বিশাল শক্তিতে জেগে উঠছে আমার দেশ

 

সমস্ত ভয় ভীতি বাধা দূর করে মানুষ

ডিঙ্গিয়ে যায় সব সীমানা

বুকে জড়িয়ে ধরে একটাই পরিচয়ে

জাত নয় ধর্ম নয় রং নয় বর্ণ নয়

সে পরিচয় ঈশ্বরের সন্তান

 

আমাকে বোল না কেউ এ দুরাশা বাস্তব নয়

সত্যি বলছি বাঁচব না তবে

 

হানাহানি শেষ কর নীতি একটাই ধর্মনীতি মানবধর্ম

নীতি একটাই অর্থনীতি

(৬৮) শেষ দেশলাই

বুকের মধ্যে জমে থাকা প্রেম

নীল কার্ডিগানের সর্বত্র সাদা লবঙ্গছাপ বুটি

মুহূর্তে হাউয়ের মত উড়ে যায় সবটুকু বারুদের একরাশ ধোঁয়া

ধোঁকাদারি দুনিয়ায়

আজকাল প্রেম কেনাবেচা হয়

না কি হতো বরাবর

হা হতোস্মি প্রাগৈতিহাসিকেও

 

মেঘের মিনার সরিয়ে ক্রমশ দুরের পাহাড়ে উজ্জ্বল হয়

এক নির্জন বাতিঘরের মত দুঃখ জমানো সিন্দুক

আবার ঢাকা পড়ে মেঘে

অতি শীতল হাওয়ার সাথে ভেসে আসে বরফের কুচি

আজানুলম্বিত ঘাসের ফাঁকে

হঠাৎ হারিয়ে যায় শেষ দেশলাই

 

(৬৯) বৃষ্টি নামে

বুকের মধ্যে রাস্তাঘাট সালটা সত্তর

কলেজ স্ট্রীট বিবেকানন্দ রোড

বৃষ্টি নামে

তরুণীর চুলে ট্রামের শরীরে

কৃষ্ণচূড়া গাছ বেয়ে

 

বৃষ্টি বরফ সমস্ত শিকাগো জুড়ে

স্টারবাক আর পারফিউমের সুঘ্রাণে

ভেসে যায় বিদেশী এয়ারপোর্ট

উড়ানের এখনও  কিছুটা দেরী

 

(৭০) স্বাধীনতা

 

জো মার খায় অর্ধমৃত

ভরা জোছনাতেও তাদের হাতের তালুতে দোল খায় না

স্বপ্ন

আজো মরে যায় পুড়ে ধর্ষণে গুলিতে ছুরিতে

এখানে ওখানে মানুষ আহা তোমার দেশের

সহনাগরিক

জাঁকিয়ে বসেছে পাপ

 

আমার লজ্জা সফেদ জামার আস্তিনে গুটিয়ে

আমার লজ্জা ইংরেজিতে বলি লিখি

আমার লজ্জা ভাল খাওয়া থাকা

 

আমার লজ্জা

অকাম্য ব্যবস্থাপনা অভাব দুর্বলতা

সীমাহীন লোভ লোভ লোভ

আর আত্মকেন্দ্রিকতা

সোনায় মুড়িয়ে দেয়া যেত

প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেয়া যেত সুখ

 

রোল মডেলের মৃত্যুতে সুদীর্ঘকাল নৃত্যরত

চুহাগন দৃষ্টি দূষণ

 

(৭১) সারসেরা

 

কাগজের সারস বসেছিল সেন্টার টেবিলে

হাওয়াতে নড়ে

নড়ে তার পাখা

দুবলা পাতলা সে এক সারস

 

সারস ভেঙ্গেছে অহমিকা বোধ

তার ক্ষোভ ভেসেছে জলে

আকাশ ছুঁয়ে নেমেছে বাতাসে ভেসে অবশেষে

সেন্টার টেবিলে

কাগজের সারসেরা সার সার টেবিলে বসে

চক্রবৃদ্ধি বাড়ে

হাজার হাজার সারস বসে থাকে

হাজার হাজার চেয়ারে টেবিলে

একই রকম তারা একই মুখ চোখ

হাওয়াতে নড়ে কাগজের ডানা

সারসের শরীর নড়ে

(৭২) ঘুমপরী পতঙ্গ

 

ঘুমপরী পতঙ্গ অনেক উড়ে উড়ে চলে স্বাধিকার বোধ

অন্যায় অনেক উড়ে যায় সীমানায় অপরাধ

ভালবাসাটাসা ছেঁদো কথা

প্রতিশ্রুতিগুলো বহুশ্রুত

থামাও গল্পগাছা

এরপরে কি বলবে তুমি কাঠপুতুলি

সবটাই জানা

বাজাও শুধু তাকধিনাধিন

টেবিল বাজনা

 

(৭৩) সেরা

মান্যবর রেখেছি ডাবের জল

আচমন  আহ্নিক সমাপনে হয়ে উঠুন দুর্দম

 

সুবিশাল উপত্যকার সব কটি ধানের শীষ

এই পাহাড়ি ঝর্ণার সুশীতল

ওই আকাশের ক্যানভাসে মেঘের চারুকলা

গাছের আড়ালে কোটরে  পাখিদের ডাকাডাকি কথা বলা

আপনার অপেক্ষায় রয়েছে

 

আসুন প্রকৃতির কোলে

ভ্রু যুগল বেয়ে শরীর বেয়ে

নেমে আসুক শান্তি স্রোত

 

আপনি বড় একলা জানি

সাথী তাই থাক প্রকৃতি 

 

 

(৭৪) প্রেম

 

গ্লাসে রয়েছে পুনর্নবীকরণ নির্যাস

তলানিতে ভীরু প্রেম

প্রেম না ছাই চোখের মোহ

প্রেম কবার হয়

পুরুষ নারীর ভাল লাগাই প্রেম না কি

প্রেম হলেই শুতে হবে

 

প্রেম এক শিরশিরানি ভাল লাগা রাত জাগা

সাত পাঁচ ভাবা

ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে যাওয়া

 

প্রেম মানে কোথা দিয়ে বয়ে যায় ভরা দুপুর বেলা

প্রেম মানে প্রতিটা কথা চলন বলন অর্থ খোঁজা

প্রেম মানে ছেড়ে না যাওয়া

প্রেম এক আবদ্ধতা

 

যাও ছেড়ে দিলাম তোমাকে

খেলো না প্রেম প্রেম খেলা

অভিনয় জমছে না

না তোমার না আমার

ছুঁড়ে দিলাম গ্লাস সমেত পুনর্নবীকরণ

রিচার্জ করছি না ভালবাসা

হলে হবে এমনি

থাকলে থাক এমনি

গেলে চলে যাক

নিজের সঙ্গেই অতঃপর খেলব প্রেম প্রেম খেলা

দিন রাত সারা বেলা

 

(৭৫) কথা

 

থা কি বলতেই হয়

এলোমেলো কথা ব্যথা

ব্যথা কি পেতেই হয়

 

দৃষ্টি কি দিতেই হবে

দৃষ্টিহীন চোখ কি ঈশ্বরের দান নয়

আমরা কেউ রাতের আকাশকে ব্ল্যাকবোর্ড ভাবি না

আর্মিলারি স্ফিয়ার ধরতে চায় আকাশ

আমরা জানি চন্দ্রগ্রহণ

রাতফুল ও পাখিদের বিভ্রান্ত করে

 

কথা কি বলতেই হয়

ব্যথা কি পেতেই হয়

 

 

(৭৬) শান্ত নদীতীর

তুমি শান্ত নদীতীর  ঝোপের আড়ালে

তরঙ্গহীন কেন

কোন নারী কি দেখবে তার মুখ

করবে শৃঙ্গার

প্রসাধন চর্চিত রূপ লাবণীর তৃষ্ণায় অধীর

নাকি নিষ্কম্প জলরাশি

বুকে ধরেছে আকাশের নীল সংলগ্ন মেঘেদের

আসা যাওয়া সাগর স্রোতে ভাসে ভেলা

 

চল বসলাম না হয় তোমার তীরে

আমরা দু’জনেই তো একাকীত্বের গুনছি প্রহর

আসুক কিছু হাওয়া

ছোট ছোট ঢেউ কিছু ছুঁয়ে যাক কিনারার মাটি

আমার ভাবনারা যত

সমতুল তরঙ্গ রাশি

 

 

(৭৭) ডুয়েল

 

ঘোড়া থেকে নেমেছি স্টিরাপে ছিল আলতো পা

চল ধরো হাতিয়ার শেষ লড়াই হয়ে যাক

হাতে থাক সাঁই সাঁই লিকলিকে তরোয়াল

 

আমরা দুজনেই আলখাল্লায় ঢেকেছি শরীর

মুখোস বর্মে একাকার চোখ মুখ আর দৃশ্যমানতা

আমরা সত্যিই যথাক্রমে তো

নাকি প্রক্সি ওয়ার লড়ছে অন্য কেউ

 

ভোজসভা ব্যাহত এই আকস্মিক ডুয়েলে

আমাদের শিভালরি অসাধারণ

আমরা ভীত নই মৃত্যুতে

হোক না বীর গতি

ক্ষতি নেই তাতে

 

সামলাও আমার আঘাত

তোমার বর্ম ভেদ করে রক্তপাত শুরু

আমিও আহত হব

 

ওই দেখ জনতা পলায়ন মুখী

ওরা শান্তির খোঁজে ব্যাঙ্কোয়েট থেকে অনেক দূরে জমায়েত মাঠে

সন্ত্রস্ত ললনারা চোখে হাত

তোমাকে আমাকে দেখে আঙ্গুলের ফাঁকে

আমরা লড়াই নিয়ে কখনও টেবিলে

কখনও সিঁড়িতে কখনও ব্যালকনি পরিক্রমায়

 

ওই দেখ তোমার তরবারি ফালা ফালা করে দিল পর্দা

ঝনঝন ভেঙ্গে গেল উজ্জ্বল শ্যান্ডেলিয়ার

পালাবার পথ নেই

আমরা নিজেরা নিজেদের বেঁধেছি মৃত্যুতে

হয় তুমি নয়ত আমি

অথবা দুজনেই

লড়ছি শেষ মোলাকাত

 

 

(৭৮) শেষ কথা

থা কি শেষ হয় শেষ কথা কে বলে

বাতাস নাকি মানুষ

হৃদয় নিংড়ে দিলে উজাড় করে কি আর থাকে

শেওলা পিছল দিঘীর পারে পা রেখেছ সাবধানে

ভেজা কাপড় শুকিয়ে যাচ্ছে গায়ে

তুমি নাকি বাউণ্ডুলে ভবঘুরে

হতেই পারে

 

এমন ভাবে জড়িয়ে যায় শব্দ পাহাড় কিসের নেশায়

বাসায় ফেরার আগে ঝোড়ো হাওয়ায় পাখি ডানা ঝাপটায়

কুলুঙ্গির পিদিম নেভায় হুহু বাতাস

আকাশ মেতেছে ঝড়ের নেশায়

 

ঘরের ভেতর অন্ধকার বাইরে প্রবল বজ্র হুঙ্কার

কোথায় তুমি যাবে এখন

তুমি কার কে তোমার

কবে কথা শেষ হবে

কবে তোমাকে পেরিয়ে যাবে তুমি

 

আমার স্বপ্নের মাঝে কেন ভুল জড়িয়ে দিলে

এমন তো কথা ছিল না

 

(৭৯) অন্য কারও

 

ফুলের সাজ খুলে গেছে প্রবল ঝলসায় বিদ্যুৎ

দমকা হাওয়ায় ওড়ে বসন ওড়ে আঁচল

তুমি নও অন্য কেউ

অন্য কারো

সশব্দে ভেঙ্গে পড়ল ডাল ওপড়াল গাছ

এই তাণ্ডব চলবে কিছুক্ষণ

আকাশের ওপর ছিল রাস্তাঘাট মেঘের মিনার

অথবা দানবের মুখ

ক্রমশ দিগন্তে ঝলকানি

মেঘেরা ক্রমশ কালো হয়ে একাকার

আমার এই ঘর খোলা কপাট

বাইরে এসেছি

 

তুমিও কি হার মান মাঝে মাঝে স্মৃতির কাছে

হয়ে যাও ভাবনার অধীন

তোমারও কি দুর্যোগে গান আসে মনে

যা সম্পূর্ণ বিপরীত

 

কেন যে আমার মত খুঁজি তোমাকে

তুমি তো তুমি

সহজাত বেড়ে ওঠো অনায়াস লতা

 

আমার দুয়ারগুলো নাড়ায় ঝড়ের হাওয়া

আমার রক্তে তখন শান্ত সঙ্গীত

তুমি ভাল থাক ভাল থাক ভাল থাক

 

আমার যা হয় হোক

ঘরে যাব ঝড় থেমে গেলে

 

(৮০) খুঁজছি

আঁতিপাঁতি খুঁজছি তোমায় মাঝরাতে

খুঁজছি আমার বিছানাতে

খুঁজছি কেন যদিও জানি নেই তুমি

থাকার কোন কথা ছিল না কোনকালে

 

হৃদয় নিংড়ে যাকে দেহ মন সব কিছু দিয়েছিলাম

দেবাশীষ কোনার 
দেবাশীষ কোনার

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ 

 

র তোমাকে, সেই বালুকাবেলার মতো লাগে না;

তুমি শুধু প্রয়াসের নিভৃত ইতিহাস।

 

সেজন্য এখন একা এই নিশীথে ফিরে দেখি

পাপড়ির কারুকাজ, বৃত্তির কর্মকাণ্ড, স্তবকের বিন্যাস

ফুলের রূপ - রস - গন্ধের সাথে প্রতিস্থাপন

 

এখন ঘূর্ণাবর্তে থামে অন্দোলিত ছায়া শরীর

মধুপের ধেয়ে আসা গুঞ্জন

এখন বাতাস চায় প্রত্যাশার গভীরের ঘ্রাণ- - -

শিকড় সমেত গর্ভকোষে পাক খায় রেণুর অমৃত।

 

তবুও রাজপথ ডেকে আনে গভীর রাত্রি, উপেক্ষিত

অন্ধকারের পাতাল, উতরাইয়ের মহাফেজখানা

আর তুমি, তৃণ নও, ঊষাকালের বিভ্রম

তুমি নদীও নও, তুমি এক তারার চমক।

অনু কবিতা

 

ই অদ্ভূৎ কোলাহলে ধানি লঙ্কার ঝাল

ক্ষমা করো হে প্রভু তুমিই সুমহান।

 

আমি পর্বত নাকি পাললিক বলবে সময়

এখন চলছে খেলা ভাঙলেই মহা ভয়।

লবণাক্ত

 

তদিন ছিলাম হার্মাদ, এবার তলিয়ে যাওয়া পাগল

হয়তো এরপর তোমাদের বিশেষণে খামতি পরলে

বলে ফেলবে ছাগল।

এখন সময় ছলছে নির্বাক চলচিত্র।

প্রতিরোধ থমকে আছে শহরের কলরবে যুবতি সমান

কজের জায়গায় বিচিত্র অভ্যুত্থান সচিত্র পরিচয়পত্র

বামাল ধরা পরে নাজেহাল নিয়ামত চাচা বাকরুদ্ধ

জন্ম যার এই দেশে সে নাকি বাংলাদেশী?

লবণাক্ত জল খেয়ে পেটে মোচড় মারছে কমবেশি ।

হাহাকার করছে মনটা, এই কি তার জন্মভুমি?

কাঁধে কোদাল নিয়ে পরিতক্ত আঙিনায় বসে

ঘাস কাটছে যে সমস্ত জোয়ান, জেনে রেখো

মাতাল জীবন

সম্ভব দৃঢ় অভিমানে ছিটকে যাই জটিল ও নিঃসঙ্গ জীবনে
বিবাহ-বিচ্ছিন্না নারীর মতো,

পুরুষের সান্নিধ্য থেকে বহু দূরে শূন্য একাকীত্বে নিষ্কাম মনে প্রভাবশালী পুরুষের মতো,

একঘেয়ে মিছিলের ভিড়ে মিশে গিয়ে
উকিল বন্ধুর সাথে বদ্ধ ঘরে বসে পান করি
যত পান করি, তত মাতাল হই

- চারদিকে ছাড়ান থাকে গ্লাস, জগ
মৃদুমন্দ গান বাজে বক্ষ জুড়ে

- খেলা করে ঘুমন্ত অতিথি!

যত পান করি,  তত প্রবেশ করি জনশূন্য দ্বীপে
ব্যর্থ প্রেমিকের বেদনা জমা হয় পরিত্যক্ত,

নির্বাসিত প্রাণীর মতো
ভেসে যায় স্মৃতিগুলো একে একে -------
পার হয়ে সাগর - উপসাগর এবং কাজল চোখের জল

ভালোবাসা কি তাহলে কোনও অবান্তর পক্রিয়া?

মধ্যরাতের নিশি-ডাক?
বুকের খাঁচায় নৈশব্দর সঙ্গ না পাওয়া কড়া নাড়া?
আঙিনার জ্যোৎস্নায় নগ্ন ও গোপন অলংকৃত ক্যানভাস?

যত পান করি তত পাতালের গহনে প্রবেশ করি
ছিন্ন সাম্পানের মতো ভেসে যাই সুরের তুফানে

কিন্তু কেন করি পান?
পান করলে কি বিস্ফোরিত ঘূর্ণিজলে মুক্তো পাওয়া যায়?
পানে কি কোনও চক্রান্ত থাকে?
যদি তাই ভাবো, তাহলে চাপা স্বরে বলি 
আমি তোমার সান্নিধ্য পেলে সব কিছু ত্যাগ করতে পারি
আমার হাত ছেড়ে যেও না কক্ষনও, কোথাও!

 

 

বাঁচার নির্ঘন্ট

দাঁড়িয়ে আছি বাসস্টপে একা শুনশান কেউ কোথাও নেই
নিশ্চুপে নিরুপদ্রুপে যেন খাঁচায় বন্দী পাখি
দূর থেকে তাক করে আছে কেউ।

লক্ষভেদ করলেই

আমার মাথা থেকে ধর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
আমার জীবন এক সুতোর ওপর নির্ভর করে আছে
একটু এদিক সেদিক হলেই তাল কেটে যাবে
জবাবদিহী করবার কোনও আধিকার নেই আমার
মৃত্যু পরোয়ানা লেখা চিঠিতে শুধু সময় সংক্ষেপ
আমি তবুও দমতে পারি না, মনে হয় ঘুড়ে দাঁড়াই
জানি জীবনে একবার মরতে হবে।

তবে কেন মরার আগে মরব?

বৃষ্টি এসে আমাকে ভেজায় প্রবল ভাবে
এখন আমি বাঁচা মরার সন্ধিক্ষণে অপেক্ষারত
আমার এতদিনের জীবনের সব হিসেব-নিকেশ
চুকিয়ে দিতে হবে।

কোনও গড়মিল খুঁজে পেলেই
জারি হবে আদেশনামা।

সভ্য সমাজের আমি এখন কলঙ্ক
আমার চারপাশে এখন শকুনের দল

ছিঁড়ে খাবে বলে অপেক্ষা করে আছে ।

জীবন বাজি রেখে আমি এখন ডুব সাঁতার দিতে প্রস্তুত
চোরা অভিমানে আমার দেহ থেকে খসে পড়ছে বিদ্যুত
লড়াই করতে করতে আমি এখন ক্লান্ত
আমাকে গ্রাস করে নষ্ট চাঁদ 
পরিযায়ী ক্ষোভে জর্জরিত আমি
মাদক সেবনের উপকারিতার বিজ্ঞাপন দিলেই মুক্তি।

 

 

শত যোযন দূরে 

ত যোযন দূরে মস্ত ভীড়ে
হারিয়ে যাই ডাউন ট্রেনের জবরজংএ
উৎস্য কোথায় জানি না তার তীর
পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলে

চলতে গিয়ে খেই হারিয়ে যাই
হাপুস নয়ন কাঁদছে দেখি মা-ই
চুলের ওপর হালকা হাসি ঘ্রাণ
তুমি তখন সাধছ কোনও গান

ঝগড়া ছাড়া এই অবহে আর কি আছে
হতাশ আশায় স্বস্তি যদি বৃষ্টি নামে
পয়সা বাদে নগদ কিছু অর্থ চাই
মুখ লুকিয়ে কে চলে যায় কে জানে?

 

 

লাগামছাড়া 

সংখ্য যে বাক্যবানে মৃত্যু তুফান ছুট
সহ্য করা সহজ সে কী দূরন্ত অদ্ভূৎ
নরক যেথা গুলজার আর স্বর্গ কলঙ্কিত
বোধের ঘরে মূর্খ থাকে চির অপরিচিত
বিশ্বাস যার মুখ লুকিয়ে আড়াল খোঁজে দ্রুত
প্রভুর কাছে ভিক্ষা মাগে আবেগে আপ্লুত

 

গায়েব কথার ইতিহাস 

রোমন্থন করতে করতে বাঙ্গালি কেবল হাত বাড়ায় অতীতে
সন্ধে থেকে মইপাট টিভির পর্দায় চোখ একের পর এক সিরিয়াল
আজ দূর্ঘটনা সমুদ্র স্নান করতে গিয়ে তিন জনের সলিল সমাধি
চোরা স্রোত বড় বেয়ারা কখন যে কার ওপর বদলা নেবে ...
ব্রেকের সময় এক আধবার খবরের আপডেট

দুখঃজনক ঘটনা ।

প্রতিদিন এভাবেই আমাদের মোসাহেবি ইতিহাস দোলে
পেন্ডুলামের মতন।

স্মৃতি আঁকড়ে ভাসতে থাকি উথাল-পাতাল
পথ শেষ হয়ে কানাগলি দেওয়ালে পিঠ -

এবার ঘুড়ে না দাঁড়ালে
রক্ষা করতে কেউ আসবে না।

নদীর জল বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলবে
চল নতুন করে ইতিহাস লিখি .........

 

অনার কিলিং


বাউন্ডারির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকিস রাত্রিদিন
হারিয়ে ফেলিস মখমলের সঙ্ঘা 
দাঁতাল হাতির পায়ে পায়ে খেলিস রাত্রিবাস
খুলিস জঙ্ঘা মধুবাতা রিতায়তে
চলছে ভালই বাঁধাগতে কেমন

ধাং কুর কুর বাদ্যি বাজে আর সাজে
তপস্বিনী বালিকা বধূ হলে মানায়?
দরদ উথলে উঠছে ফেনার মত
সফেন সাঁতার কাটার এমন মোহ
যা হিম্মত থাকে তো এলিট সমাজে


ঢ্যামনা ডোম পাড়ায় কেন?
ধানি লঙ্কায় যদি অত লোভ 
ভুলিয়ে দে না পুত্র শোক
খ্যাতির পাহারে চড়ে এ বিড়ম্বনা
যুতসই একটা জবাব চাই যে

মাতঙ্গিনী গোয়াল ঘরে 
নামাজ পড়ে সাহাদাত 
কে বলেছে মিলমিশ হবে
অনার কিলিং দেখেছেন
আরুশি হত্যা মামলা ঘুম ভাঙাক!

সন্তানের সাথে ছলনা

 

মার প্রতিটি চলা বলে দিচ্ছে আমি প্রতারক
মধ্য দুপুর বেলা ভাবছি পাগল সাজিয়ে নিজেই নিজেকে
কেন পাঠিয়ে দিলাম না শলাকার অভ্যন্তরে?
যখন ফুল ফোটার আগে কুঁড়িটিকে লালন করার
প্রয়োজন ছিল, তখন মেতেছিলাম লোভ-লালসায়
অন্ধকার সেই পথের শেষ প্রান্তে এসে উপলব্ধি ---।

সন্তানের সাথে ছলনা আমার নিদারুণ ব্যথার
চোখ থেকে ঝরে পড়ছে জল, তবু অভিমান
সে একটি কথাও বলেনি আমাকে।
তার সমস্ত সম্বল কেড়ে নিয়ে আমি একা
বসে আছি অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের মতো।
কে কার আবেগ মেখে সম্মুখে যায়?

ওকে দিশা দেখাতে না পারার জন্য কে দোষী?
ভাবছি নিজেই একটা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার খুলে
সেখানে নিজের চিকিৎসা করাবো।
কেননা আমার মত মানসিক ভারসাম্যহীনকে
সবার আগে পাগলা গারদে পাঠানো উচিৎ।
আমি শঠ শুধু যে তাই নয়, প্রতারণা করেছি সন্তানের সাথে।

চিঠি

 

চোদ্দই ফাল্গুন ঊনিশশো ঊনআশি।

প্রাণ খুলে চিঠি লিখব বলে এক দিস্তা খাতা কিনে ফেললাম। ফাউনটেন পেন খুলে বসলাম মেশ বাড়ির এক চিলতে ঘরে।

এই ঘরই তখন আমার পরাণ বন্ধু।

আগামীর কথা ভেবে শিরায় শিরায় রক্ত নাচে।

প্রহরের পর প্রহর পার হয়ে যায়।

খরস্রোতা নদীর ঢেউয়ে পাড় ভেঙ্গে পড়ে যেন।

সমস্ত খাম পৌঁছে গেলেও কোন উত্তর আসে না

যা অস্বাভাবিক আজ বৃষ্টিঝড়া মেঘলা তোমার মতো নরম দিন। ভোর চারটেয় মধুমেহ রোগ সারাতে হাঁটতে বের হয়েছি

সবুজ পথ ধরে স্নিগ্ধ তোমার চুলের ঘ্রাণের মতো রোদ

মেখেছি সমগ্র শরীরে।

এই ভাবে এক একটা দিনের শুরু প্রবাহ থেকে প্রবাহের গভীরে

ছড়িয়ে পড়ে অনাগত সম্ভাবনার অঙ্কুর।

বাড়ি ফিরে চা আর সস্তার খাবার,

বাজার যাবার তাড়া, গতানুগতিক স্নান সেরে

পাটকরা ট্রাউজার-সার্টে ধোপদুরস্ত অফিস যাত্রা।

মাঊশ-কীবোর্ড আর চোখ থকে মনিটরে।

দিন শেষ হয়ে রাত নামে।

ক্লান্তি এসে জড়িয়ে ধরে সমগ্র চিন্তা চেতনার বাইরের খোলস।

এখনও অপেক্ষা করে আছি যক্ষের মতো

উত্তর লেখা খাম আসবে বলে

মেঘের দীর্ঘ চারণক্ষেত্র ছাড়িয়ে তুমি

মরুভূমির বালিতে ফুল ফোটাবে,

পৃথিবীর আঁধার কাটিয়ে রোদ্দুর আনবে।

আমি হতে চাই পরিপূর্ণ।

আমার ইচ্ছাগুলো সব জমে আছে।

মাঝরাতে জবাবী খাম খুলে

ঠিক আবার একদিন পরিপূর্ণ হবো, হবোই ।​

City.jpg

নিঃসঙ্গ তমাল

খন নিঃসঙ্গ লাগে নিজেকে ভাবতে থাকি
অভিমান আর অহংকার এসে ঘিরে ধরে
সেই জন্য নির্জন তমাল গাছটির উদ্ধত ভঙ্গি
আমাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে।

বৈশাখে ভরপুর রসসিক্ত সে
বর্ষায় ভিজে যাওয়া ঔদার্য নিয়ে
সে দাঁড়িয়ে থাকে পুকুরের খুব কাছে
একা আকাশের নিচে
মেখে নেয় রোদ্দুর, বিকালের আলো
কোথাও যাবার নেই, কোনও ব্যস্ততা থাকে না
শুধু নিজস্ব স্মৃতি নিয়ে, ভাবনা নিয়ে
নিজস্ব দুঃখ ও ঐশ্বর্যে মত্ত সে।

নিঃসঙ্গ তমাল গাছটি তাই অমোঘ বিকর্ষণে
আমাকে ক্রমাগত তার থেকে দূরে ঠেলে দেয়।

আমার জন্য নয় 

ব কিছুই আমার জন্য নয়
ঘেরা থাক কাঁচের দেওয়ালে সুসজ্জিত,
সভ্যতার নিদর্শন এবং বাদশাহী তাম্রপত্র৷
কেবল তুমি দেখবে দু'চোখ ভ'রে সবকিছু-
দর্শকের মতো, বিচারকের দৃষ্টিতে।
আর বেশ মজা করে ইচ্ছে হলে মাঝে মাঝে
টিফিন আর প্যাকেজ ড্রিকিং ওয়াটার চাইতে পার।

ঠান্ডা সভাগৃহে শীতের রোদের মতো ঝরে আনন্দফুল,
দীঘ্ড় লাউঞ্জ ভেদ করে অ্যানাউন্সমেন্ট, মেটাল ডিটেক্টার
সিকিউরিটির নজর এড়িয়ে ধূমপান নো স্মোকিং জোন
আর রুফটপ রেস্টুরেন্টে বিন্দাস ভোজ।
এ তো স্পষ্টই দেখা যায়, তাই না?

তোমাক শুধু তার ভিতর থেকে খুঁজে দেখি আর
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি মেট্রো চ্যানেলে ব্যস্ততার মাঝে
ফুচকার দোকানে। হয়তো তখন ফুচকাও
তোমার কাছে মোগলাই-যা কিনতে আমাকে প্রয়োজন .......

অবগাহন

         

শুকনো জল ছিটিয়ে 

মনের উথাল পাথাল বন্ধ করি।

 

চল চলে যাই,

হাত ধরতে পারি আর নাই পারি

চেনা সুরে গুনগুনিয়ে উঠতে 

আমার বাধা নেই বিন্দুমাত্র,

পাশের কেউ কিছু শুনুক না শুনুক 

কোন উত্তর দিক না দিক

চলার ছন্দে আমরা সামনে এগিয়ে যাবই।

 

যতই মেরুদণ্ড বরাবর শিরশির করা

লাভার স্রোত নামুক 

যুজতে তো হবেই।

 

আর খুব খুব তেষ্টা পেলেই 

তোমার কাছে বসে  

তোমার দেওয়া জলে 

আমার প্রাণের তৃষ্ণা মিটিয়ে নেব 

আর আবার চলব।

বিষয় যখন বিষ

ঙ্গা স্নানের মজাটাই আলাদা বুঝলেন দাদা
মরাকে পুড়িয়ে নাভিটাকে কৌটোয় পুরে
যখন আপনি অঙ্গার কি রূপ খতরনাক ভাবছেন
শান্ত করে দেবে আপনাকে হিমশীতল হিমবাহের মত
ভাই, বিষ পান করে মরে গেল অথচ দাদা
বিষয় নিয়ে ভাবতে একটুও বিলম্ব করল না।
আমাদের মাতঙ্গিনী, জহ্লাদের আর্তনাদ শুনে কাতর
বনময়ুরীর কর্কষ কণ্ঠস্বর তাকে অসহ্য লাগে
লাগাটাই তো স্বাভাবিক, কেননা শের কি কিমত
হিসাব সে নেহি হোতা। অস্ত্রগুলি সব ভোঁতা
এমনকি কাস্তে - তাতেও ধার নেই। তোতাপাখি।
যখন যা শেখে তাই বলে এরাও তেমন।
নিরুপদ্রব একটি ডুবসাঁতারের প্রয়োজন যে কতটা
সেটা তো বুঝেছিল ভাই - সে তো চলেই গেল।

 

 

কামোফ্লেজ 

মি এক নান্দনিক চাবিকাঠি আবিষ্কার করেছি, যা দিয়ে
খুলে ফেলা যায় গুটিয়ে থাকা শরীরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 
ভাবছি কিভাবে এটা কাজে লাগাবো? ছড়িয়ে দেব
জনে জনে! বৃদ্ধ বাউল সন্ন্যাসী যেমন গান শোনায়
বাস্তবের ঘুণ ধরা শরীর নিয়ে বালিয়াড়ি টপকানো?
আমার পক্ষে তো সহজ নয়, তাই ভেবে চিন্তে এগোতে চাই।
কামোফ্লেজের মতো সটান আমাকে ছুটিয়ে নিয়ে যাবে,
নাকি মরুভূমির ধূলায় ছুটিয়ে মারবে, তা জানি না।
তবে আজ এতদিন পর মনে হচ্ছে আমার সবকিছু
আবার ফিরে আসছে। যৌবন হাসছে।

পাদপ্রদীপের আলোয় দেখতে পাচ্ছি

সমুদ্র খেলছে জলতরঙ্গ হোলি।
অনুগ্রহ করে, এই সময়ে আমাকে আর বিরক্ত করো না!
আমি এবার সমুদ্রে যাব পাল তোলা নৌকায় - - - ।

নক্ষত্র পতন

 

কামড়ে খাবার মতো এতো জিনিস থাকতে তোমাদের

পছন্দ যাকে, ---
যা, ফুস করে উড়ে গেল সেই 
নাকানি চোবানি খেল

মাতব্বর যত পথের ধূলায় কাঁদে গ্লিসারিন চোখ।
ওরা আহাম্মক পাগলের প্রায়।

আয় আয় ক'রে ডাকছে তবু
প্রলোভনে পা দেবার ফাঁদে কখনও পরবে না -
জেনে গেছে ঘিন ঘিন করা সারমেয় শাবক।
#
এবার এস্কেপিসট পালা, কানে তালা ধরে যায় 
হাজার চিৎকার পৌঁছায় না কর্ণকুহরে
নক্ষত্র পতনে কাঁপে আকাশ - বাতাস।
গায়ের জোরে কেড়ে নেবে ইজ্জত?
এতোই তুচ্ছ নাকি ধেড়ে ইঁদুর তাই
না বলা কথা ভাসে প্লাবনের জলে।
#
চুষে নেওয়া মাধুর্য রস নোংরা ঘাঁটে আকণ্ঠ পাঁকে
জবু থবু বসে নান পরোটা খায় অহংকারী রানী
জানি, আমি সব জানি, কারা আলোর জ্যোৎস্না ভেঙ্গে
নামিয়ে এনেছে আঁধার এই বিষ্ণুপুরে।
এই খেলায় যুদ্ধ জয় অথবা মুছে যাওয়া কালির আঁচড় 
#
জহ্লাদের অভিপ্রায় শাসকের জানা, তাই পালা শেষ- - -

sumankumar.jpg
সুমন কুমার সাহু
হলদিয়া, পঃ বঙ্গ 
সুমন কুমার সাহু

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

কবি পরিচিতিঃ  সুমন কুমার সাহু পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া শহরে বসবাস করেন। মৎস্য বিঞ্জান শাখায় স্নাতকত্তোর করার পর পেশাগত ভাবে সরকারি আধিকারিক হিসেবে কর্মরত। উনি দুই বাংলার বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ও অনলাইনে লেখালিখি করেন। প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ “কবিতা তোমাকে”, “পকেট প্রেম”, কবিতা সংকলন “Café কবিতা”, “নক্ষত্রানী”। এছাড়া বাংলা দেশের “বাংলা নামা” সহ বিভিন্ন খবরের কাগজে ওনার কবিতা প্রকাশিত হয়। ওনার কাছে  কবিতা মানে জীবন, মানুষ, প্রকৃতি আর মনের প্রেয়সী। সব কবিতায় যেন প্রেম খুঁজে পান, আর প্রেম করে চলেন ওনার কবিতার প্রেয়সীর সাথে। আর এই প্রেয়সী লুকিয়ে আছে এই মানুষের মাঝে। মানুষের জীবন কথাই ওনার কবিতা। 

অদ্ভুদ জীবনের ছবি

জি এ অদ্ভুদ জীবনের ছবি

আমি এঁকে চলি বারে বারে

জীবনের শত রঙ হাতে

তবুএ রঙে ডোবেনি

               -মোর তুলি 

 

যে ছবি এঁকেছি আগে

সে কবে ধুয়ে মুছে গেছে

তাই এঁকে চলি বারে বারে

জানি এও যাবে মুছে

          -এ জীবনের সাথে 

 

আমার এই অদ্ভুদ  ছবি

কবে গেছে মিশে জীবনের সাথে

শেষ হয়েও রয়ে যাবে সব ই

যদি কোনো দিন হাতে

             -তুলে নাও তুলি

 

শত রঙে রঙিও না

আমি যে শুধু তোমার রঙেতে রঙি

সে রঙ যদি না দাও তুমি

হতে প্রস্তুত আমি

           -অদ্ভুদ জীবনের ছবি।

 

বৃষ্টি ভেজা মন

বৃষ্টি ভেজা মন যে আমার

শুধু তোমাকেই চায়

থমকে দাঁড়ায় জীবন পথে

কখন বৃষ্টি থেমে যায়।

 

জমে ওঠা অভিমানী মেঘ

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ঝরে

কখন ও আবেগ ঝড়ো হয়ে

মুষলধারায় কাঁদে।

 

তবু এ বর্ষায় মন

ভরসা রাখে প্রাণে

প্রেমের বন্যা বয়ে

তুমি আবার আসবে ফিরে!

উষা

হুদিন পর আজ

মিশেছে কলম

সাদা নির্জীব কাগজে

সজীব সতেজ মন

উধাও চোখের ঘুম

-জেগে রোই তন্দ্রা আচ্ছন্নে

 

নির্মম শানিত

কলমের ধার

কেটে চলে বুলি খাতার 'পরে

ওই বুঝি ভোর হলো

ওই বুঝি উঠলো রবি

-মন পড়ে রয় জানালার ধারে

 

রাতের এই অন্ধকারে

মোমবাতি গলে চলেছে

ধীরে ধীরে নিঃশব্দে

ভোরের আলো ওঠার আগে

যদি যায় নিভে

-কলমের নিপিড়ন যাবে বুঝি থেমে

 

মনের এই দ্বন্দ খেলা

কলমের ছুটে চলা

একদিন যাবে থেমে

হয়তো সেদিন ঘুমিয়ে যাবো

মিলিযে যাবো অথৈ জলে

-চোখের বালি মিশে।

তীরের খোঁজে

কলা মনের রাত্রি কাঁদে

হায়েরে ভালবাসা

গভীর চোখের সরোবরে

ঝিলমিল আলেয়া।

 

পলক ফেলে মুক্ত ঝরে

শোকায়ে গভীর নিশ্বাসে

আকাশ কালো ঘন মেঘে

এখনো বুকের মাঝে।

 

কাটছে সময় ভাঙছে ঢেউ

ভালবাসার তীরে

অথেই জলে আমার কেউ

রয়েছে তীরের খোঁজে।

birds.jpg

​একলা মনে

তোমার কথা ভাবলে পরে

জল আসে চোখে

বুকের ভেতর শূণ্য লাগে

একলা মনের মাঝে।

 

রয়েছো তুমি তোমায় নিয়ে

আমার থেকে দুরে

নেমে আসো দুগাল বেয়ে

তোমায় ভাবলে পরে।

 

বুকের মাঝে মেঘ হয়ে

থেকো চিরতরে

ভালোলাগার স্বপ্ন ধুয়ে

বৃষ্টি নামাও চোখে।

 

 

তুমি

তুমি আমার ভোরের আকাশ

স্বপ্ন মাখা দিন

তুমি আমার ঘুম ভাঙা চোখ

অনুভুতি দূরবিন।

তুমি আমার মেঘলা হাওয়া

বিদ্যুত ঝলকানি

তুমি আমার দুরন্ত রোদ্দুর

আলোক সন্ধানী।

তুমি আমার গোধূলির সুর

সন্ধ্যা রজনী

তুমি আমার রাতের তারা

মিটিমিটি লজ্জবতী।

তুমি আমার হৃদয়ের স্পন্দন

শব্দ সৃজনে

তুমি আমার জীবন কথা

কবিতা তোমাকে।

ঈপ্সিতা মন্ডল 
ওয়াটারলু, অন্টারিও, কানাডা
ইপ্সিতা মন্ডল

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

মাটির টানে


বাদল ঝরা দিনের শেষে মেঘবালিকা এসে,
বললে আমার কানে কানে, বললে আমায় হেসে,
আসো যদি আমার সাথে ওই পাহাড়ের চূড়ায়,
তোমায় নিয়ে উধাও হব পাগল মেঘের ভেলায়;
রামধনুকের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে শেষে,
হাজির হব আমরা দু'জন ইন্দ্রদেবের দেশে;
শোক-দুঃখ-আঘাত-ব্যথা নেই তো সেথায় কিছু,
সারাটা দিন কাটিয়ে দেব মেঘের পিছু পিছু!
সূর্যদেবের রথে চড়ে ঘুরব সারা আকাশ;
কিংবা নেব মনের সুখে পারিজাতের সুবাস।
তোমার তরে নদীর তীরে রইব অপেক্ষায় –
পক্ষীরাজে উডিয়ে নেব একটি লহমায়!'
মেঘবালিকার কথা শুনে সইল না আর তর, –
রাঙামাটির পথটি বেয়ে চললেম নদী-চর।

গোধূলিবেলার আকাশ তখন খেলছে রাঙা সিঁদুর; –
এমন সময় শুনতে পেলেম করুণ বাঁশির সুর!
সে যে আমার রাখাল ছেলে – ডাক দিয়েছে আমায়, –
তারে ছেড়ে যাচ্ছি আমি কোন সে সুখের আশায়?
সেই তো আমার ইন্দ্রধনু, সেই তো আমার পারিজাত,
তারই স্পর্শে ভুলব সকল শোক-দুঃখ-আঘাত;
তার মধুর হাসি ভাসাবে মোর জগৎ-পারাবার,
তার বাঁশির সুরে দেব পাড়ি তিন-ভুবনের-পার!
ছুটব দু'জন হাওয়ার সাথে তেপান্তরের মাঠে;
সাঁঝের বেলা কাটবে মোদের কাজলাদিঘির ঘাটে; –
কাজলাদিঘির কালো জলে দেবে তখন ধরা,
স্বর্গলোকে আছে যত চন্দ্র-গ্রহ-তারা! 

তুষারদেশে


বৃষ্টির টুপটাপ নয়,
শুধুই নিঃশব্দে ঝরে যাওয়া,
প্রকৃতি যেন সাদা-কালো ক্যানভাস --
সূর্য-মেঘ আঁকে আলো-ছায়া।
মেতে যখন ওঠে পাগল হাওয়া
সে স্তব্ধতা হঠাৎ ভেঙে যায়;
ধূসর কালির আবছায়াতে মুড়ে,
সব কিছু সে উড়িয়ে নিতে চায়! 

তারই মধ্যে দুর্দমনীয় মানুষ,
চলেছে তার দৈনন্দিন কাজে;
শৈত্য প্রবাহ হোক না যতই প্রবল
অকর্মণ্য স্থবিরতা কি সাজে ?
অসহায় হয়ে থাকেনি সে বন্দী,
হিমেল হাওয়ার কঠোর নাগপাশে;
প্রকৃতিকে তার নিজের করে নিয়ে,
জয় করেছে নিতান্ত অনায়াসে।

সুবিস্তৃত তুষার ক্ষেত্র মাঝে
যন্ত্র পায়ে বরফের বুক চিরে,
দাপিয়ে বেড়ায় প্রবল উল্লাসে
পাখির মত হাওয়ায় ভর করে!
বরফ জমা শীতল ঘেরাটোপ
হয়েছে তার গতির মাধ্যম, --
হার-না-মানা প্রাণশক্তির কাছে
কিছুই যেন নয় আর দুর্গম।

সাদা-কালো


জানালা দিয়ে চাইলেই দেখা যায় --
বিস্তীর্ণ প্রান্তর, সাদা বরফে ঢাকা;
তারই কোণে ক'টি পর্ণমোচী বৃক্ষ,
বরফের পরতে মোড়া তাদের কৃষ্ণবর্ণ শাখা ।

মধ্যেমধ্যে সে প্রলেপ ঝরে পড়ে,
উস্কানি দেয় তীব্র হিমেল হাওয়া;
খামখেয়ালী ভাঙন যেন ছোট্ট সাদা প্রাচীরে;
ভ্রুক্ষেপহীন কাঠবিড়ালির ক্ষিপ্র আসা-যাওয়া।

মাঠের অন্য প্রান্তে চোখে পড়ে,
সগর্বে মাথা উঁচিয়ে গগনচুম্বী আবাসন;
বেড়ার গায়ে মোটরগাড়ির সারি,
তাদের দেহেও সাদা বরফের পুরু আস্তরণ।

এরই মাঝে আবার শুরু হয়
দমকা হাওয়া, নতুন তুষারপাত;
তুলোর পরতে আবার ভরতে থাকে
সযত্নে সাফ করা আবাসন-ফুটপাথ।  

অনুভব

ধূলি-ধূসর আঁধার রাতে,
দেখা হল তোমার সাথে;--
জাদুর কাঠি মনের ছোঁয়ায়
ভেসে গেলেম মাতাল হাওয়ায়;
চেয়ে দেখি, 'একি হল?'
আঁধার রাত মিলিয়ে গেল!”
সপ্তরঙের রামধনু ভোর
এঁকে দিলে দুই চোখে মোর!
তোমার আলোর অমলধারা
ভাঙল বুঝি রুদ্ধ কারা,
শুনতে পেলেম পাখির কূজন,--
ছিঁড়ল শিকল টুটল বাঁধন;
দুঃস্বপনের সুপ্তি শেষে
এলেম যেন হাসির দেশে!
জগৎজোড়া খুশির মাঝে
নিজেকে আজ পেলেম খুঁজে।

আজকে আমায় ডাক দিয়েছে
সাগরপারের দিগন্ত,--
আজকে আমার মনের মাঝে
চিরনবীন বসন্ত;
আজকে আমি মুক্ত পাখি
বাধা-বাঁধন ছাড়া,
আজকে আমায় স্বপ্ন দেখায়
দূর আকাশের তারা;
আজকে আমার মনের কথা
শঙ্খ-চিলের পাখায় পাখায়
নীলাম্বরের বক্ষপটে
মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়ায়!
তোমার স্নিগ্ধ করস্পর্শে
সাজল জগৎ নতুন সাজে,
আজকে তোমায় আপন করে
পেলেম আমি নিজের মাঝে।

স্বপ্নের ভোর

দীপ্ত সূর্য বাজাও তূর্য ঘুচাও কুজ্ঝটিকা,--

আর যেন মোরে ডরাতে না পারে আঁধারের বিভীষিকা;
হে প্রভাকর দাও এই বর তব মঙ্গল আলোকে,
অন্ধ-তমসা দুখের অমানিশা না রহে এ ধরালোকে;
হে জ্যোতির্ময় করিবারে জয় মিথ্যার কালরাত্রি,
ঘুচাও মূঢ়তা জাগাও দৃঢ়তা কর সত্যের যাত্রী।

যেদিকে তাকাই ধূসর কালো,
দিকে দিকে শুধু নিবিছে আলো,--
হে দেব, পুনঃ প্রদীপ জ্বালো
অন্ধ হৃদয়-গহ্বরে;
চক্ষু মোদের স্বপ্ন-বিভোর :--
আসবে কি সেই 'স্বপ্নের ভোর'?
গুনগুনিয়ে উঠবে ভ্রমর
রুক্ষ মনের কন্দরে!
উদিত হও হে নবারুণ,
ছড়াক ধরায় অরুণ কিরণ,
ঊষার আলোয় 'সোনার বরণ'
প্লাবিত হোক ধরিত্রী;
হিংসার আজি হোক পরাজয়,
পুষ্পের রঙে রাঙুক হৃদয়,
মানবজীবনে হোক অক্ষয়
প্রেম-ভালবাসা-মৈত্রী।

 

 

স্বপ্ন ছিল

স্বপ্ন ছিল বুকের মাঝে

যত্ন করে গাঁথা;
স্বপ্ন যে হায় পাখির মত
যায় কি তারে বাঁধা?
ভেবেছিলেম সোনার খাঁচায়
শিকল দিয়ে ধরে
রাখব তারে সারাজীবন
কেবল নিজের করে!
মুক্ত পাখি গায়ের জোরে
বন্দী করা যেই
বদ্ধ হলেম নিজেই যেন
সেই কারাগারেই;
'লালন করা স্বপ্ন তুমি
বাঁধন হয়ে শেষে
এলে আমার জীবন জুড়ে
দুঃস্বপনের বেশে?
কেন তবে এমন করে
চেয়েছিলেম তোমায়?
দুলিয়েছিলে হৃদয় কেন
এমনি দুরাশায়?'

উড়িয়ে দিলেম বন্দী পাখি
মুক্তি পাওয়ার আশায়,
কঠিন কঠোর বাস্তবেতেই
যুঝতে হবে আমায়;
থাক না পাখি বনের মাঝে
থাক না অমনি ছাড়া -
জানলা দিয়ে দেখব তারে
নাই বা দিল ধরা?
ভালবেসে নিজেই যদি
আসে আমার তরে,
বরণ করে নেব তখন
নেব আপন করে।

robinghosh.jpg
রবীন ঘোষ
বরিশাল, বাংলাদেশ
রবীন ঘোষ

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

রবীন ঘোষের জন্ম বরিশালে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'হিরণ্ময় তোমার হাতে' প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৬ তে। 'পিলসুজে সাঁঝের বাতি' তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। কবিতা লেখার শুরু ১৯৭৩-৭৪ সালে। 'সুনীল করতল' নামে তখন বহুল প্রশংসিত কবিতা পত্রিকার সম্পাদকদ্বয়ের একজন। সেই সময় নিয়মিত সাময়িকী বা পত্র পত্রিকায় কবিতা লিখেছেন। কর্মব্যস্ততায় অনেক বছর লেখালেখির জগতে না থাকলেও ২০১৩-১৪ সাল থেকে আবার লিখতে আরম্ভ করেন। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ। ছাত্রজীবন শুরু বরিশালের 'প্রভাতী স্কুলে'। পরবর্তীকালে 'ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের' পরিধি ছাড়িয়ে 'ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ' থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। 'শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ' থেকে এম বি বি এস পাশ করেন। থাইল্যান্ড থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন। বিদেশেও ছিলেন কয়েক বছর। বর্তমানে রবীনবাবুর কর্মস্থল ও বাসস্থান বরিশাল শহরেই।

১) একলা ডিঙা

 

যেন হোঁচট খেয়ে উঠোনে চলে এলো রোদ

মিহিদানা মেঘে ছেয়ে আছে আকাশের মুখ

 

ভেবেছিলে মুঠোহাত খুলে দিলে অন্ধকারে চিতার অঙ্গার

ভেবে নিলে, বৈঠকখানার রঙচটা সোফায়

আসনপিঁড়ি করে বসে থাকে বিষন্ন গোধূলি

 

সুবর্ণ ঘোড়ায় টানা রথ থেমে যায় দিগন্তের পাড়ে,

নদীর শিরশিরে হাওয়া, জ্যোৎস্না খেয়ে নেয়া বিস্তৃত জল

বাঁকের মুখে শতবর্ষী বটবৃক্ষের মূল

 

সেইখানে চকমকে জলে দোলে আনন্দীর খেয়া

                                       একা -

আমাদের বেদনায় ঋষি, একাকিত্ব আর নক্ষত্রের আলো

জলের আলোড়নে সবই একাকার।

 

ভোর হয়। দূরে শোনা যায় স্তোত্রধ্বনি কার -

২) দাগ পড়ে থাকে

 

নিকষ কলসের গায়ে ফুটে ওঠে বাসনা-মুকুর

সন্তর্পণে - - - অতি ধীরে

হে আমার প্রিয় সখী, অধীত প্রণয়

 

হৃদের বিস্তৃত শানকীতে মুখ দেখে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চাঁদ

হেমন্তের ঝরাপাতায় কোন দূরের আগুনের ধূলো

বিরান ঝিলের বুকে জন্মের শোধ হাসে কুমারী শালুক

 

বুকের ভেতরে তান্ডব বর্ষণ

বুকের ভেতরে অস্ফুট দুধধান

বুকের ভেতরে ঝগরুটে রাগী শালিক

fisherman.jfif

কুয়াশা ঢাকা ভোরে আকুল খেয়াটির কাছে ফিরি

যেইখানে রূপটান দিয়ে এইমাত্র জেগেছে দিগন্ত

 

সেইখানে প্রার্থনার দুইহাত তুলে ধরি ,

যদি জলের দাগ পড়ে থাকে বিশীর্ণ খাড়ির উপরে

শিঙ্গাধ্বনি অন্তরিক্ষে, ভুল জীবনের ছায়া পথ থেকে --

 

হে আমার প্রিয় সখী, অধীত প্রণয়

৩) দূরের তুমি

 

বৃত্তের শহর থেকে বেরিয়ে আসি, নর্তকিরাও সাজঘরে

মুখোশ পরে আজ যে মেয়েরা মজলিস মাতিয়ে গেলো

তারাও পায়ের মল খুলে ফিরে গেছে আবাসনে।

 

টেবিলে আধাশেষ গ্লাস; টুকরো খাবার ইতস্তত ছড়িয়ে চারিদিকে।

একটু পরে কেতাদুরস্ত বালকেরা এসে সব ধুয়ে মুছে দেবে।

 

জলের ধারা এসে শুকিয়েছে জঙ্গলেরই এইপাশে

ত্রস্ত চোখ হরিণীরা গুটিপায়ে ক্ষীনকায়া নদীটির ধারে

বাতাসের মর্মর শুনি, তোমার বসতী বুঝি অরণ্য ছাড়িয়েও

-  আরো দূরে?

৪) জ্বলে যায়

 

যেখানেই হাত রাখ, সবুজের গহীন অরণ্য

নিমিষেই ছাই হয় আবাদী জমিন

পাখপাখালির আওয়াজ, ভয়ার্ত বনভূমি;

 

শ্রমণের গৈরিক বসন

নির্বাসনে হেঁটমাথা দেহাতী দোতারা –

 

ঋতু বদল হলে পাতাঝরার দিন

পাহাড়ের মাঝ দিয়ে চলা সরুপথ

বিবর্ণ শুকনো পাতায় নিজেকে ঢেকে ফেলে –

 

তোমারও সময় হল এবার

বুকের সবুজ শ্বাস যেটুকুই বাকি ছিল

হাত রাখ, জ্বলে যাক সেইটুকু দাবানলে।

৫) অক্ষর

 

কটি অক্ষরের মত থাকে স্বপ্নে ও পথে

রক্তের শতদল

ফুটে আছে পদ্মঝিলে গভীরে অতলে –

 

একটি অক্ষরের মতই উৎফুল্ল অরণ্যে

প্রাকৃতিক সুবর্ণ আভা

কতো মমতায় জেগে ছিল মিছিলের হাতে –

 

আমারই কবিতার ভাষা, মায়া বসনের রঙ!

 

  

৬) মায়াজাল 

 

ষা মুহূর্তের আলোর অন্যরকম মায়া থাকে

নদীজলে মায়াজাল –

ডুব দিলে আলোময় সমস্ত শরীর।

কপালের ঠিক মধ্যখানে কোন এক হিরন্ময়

স্পর্শ লেগে উজ্জল হয়ে ওঠে নিম্নগামী দেহ

 

ঢেউ ভেঙে আদর মাখে নদীপাড়ের বালুকণা,

পাখিদের কলরব, আড়মোড়া ভেঙে জাগে অরণ্যসংসার,

অবারিত ধানক্ষেত, বল্কলে আবৃত মোহ –

এই আমি, এই তুমি শুয়ে থাকি আলোময়

তটিনী প্রান্তরে, নিস্কলুষ আদুল শিশুদের মতো –

cremation.jfif
তাপস কিরণ রায়
tapaskironroy.jpg
তাপসকিরণ রায় 
জব্বলপুর, মধ্যপ্রদেশ

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

ঢাল নেমে গেল
            

কাশ দেখে উদার হতে পারো নি 
বাতাসের স্পর্শে পারো নি 
শিশুর চঞ্চলতা শরীরে মাখতে 
বৃষ্টির ধারাপাতে জীবনের 
    অবিন্যস্ত শরীর তোমার 
     নিয়ম ভেগেছে বারবার
চৈত্রের খরায় তৃষিত মৃগ হয়ে 
ছুটে গেছ মরীচিকার মুখে 
বৈশাখের জন্মে ঝড়ের দাপটে 
ভাঙ্গা শান্তির মোহ তোমার নেই 
শ্রাবণের ধারায় বয়ে যায় মন
দুরের প্রিয়র মর্ম ব্যথা...
কাঁদে বকুল কুড়োনো বেলা 
মেঘলা আকাশ বাষ্পে 
ঝাপসা ছবির মলাট
প্রকৃতির নিয়ম ভাঙ্গার 
সৃষ্টি ছাড়া খেলায় মেতেছ তুমি 
অস্থির চৈতন্য তোমায় 
        সাগরে ভাসায়...
সবুজ দ্বীপের স্বপ্ন ভেঙ্গে বন্যা এলো
ছন্ন ছাড়া জীবনের 
ঢাল নেমে গেল 
ভয়াবহ খাই ধরে। 

 

 

একটি জোনাকী

ন্ধকারকে লজ্জা দিয়ে  যায় একটি জোনাকি
তোমার আলোকিত স্নাত দেহ 
সূর্যের আলো নিয়ে খেলা করে,
সূর্য ডোবা কালো আঁধারের ওপারে ওঠে চাঁদ
সন্ধ্যার রাগিণী উদাসী সুরে 
করুণার গোধূলি ছড়ায় 
গৃহ গৃহবধূর চোখে জ্বলে ওঠে প্রদীপ শিখা
চন্দন তিলকে সাজা চর্চিত শরীর তোমার 
চাঁদের শরীরে কি সত্যি কলঙ্কের টিকা!
নাকি,ঈর্ষার জ্বালায় গালে দাও কাজলের ফোঁটা 
সর্বনাশী নজর এড়াতে!
কৃষ্ণ তিলে তুমি রাঙ্গাও মন--
কৃষ্ণ বিহীন যমুনা তীরে  
গোপী চরে ব্রজ হীন 
ডুবে থাকে উলঙ্গ চাঁদ।
আলোর পিপাসা নিয়ে এ কি সর্বনাশা
খেলা তোমার!     

 

 

এঁদো পুকুর, মশার ডিম
                  

মিষ্টি চাঁদের রুপোলি চামচের  
ভাঙ্গা দাঁতে মুখ দেয় কুব্জি বুড়ি, 
এঁদো পুকুরের মাছহীন নর্দমা ভাসে 
                                মশার ডিমের ঝাঁক, 
অস্থিরতা জমে কুমীরের মুখে 
হাঁ-করা হাঙ্গরের লেজ কে যেন দেখে ছিল

আজ মনে নেই! 
              ভুতের শিশুর অন্য জন্মে মানুষের শ্বাসে 
বাসা বাঁধার আশায় আকাশের আগুনে সেঁকে রুটি,
সবুজের মাঠে ছেঁড়া স্বপ্নরা মেঘে করে অন্ধকার,
          আগুনে যন্ত্রের মানুষ বুকে তাপে আগামী বীজ.
কালো ছেলেটার পেটে জমা পাথরের কুঁচি,
                     অবুঝ চিৎকারে বনের বধিরতা-- 
অন্ধকার গ্রহণের দিনে চাঁদ তারা ছেঁটে 
                      বাগান পেড়িয়ে সময়ের পথ গড়ে।
ফুটে উঠা ভ্রূণ প্রাণিত স্পন্দন হারায়
মৃত শরীরে ফোটে অচেতন বৃদ্ধিতা
যন্ত্র মানব শাসিত পৃথিবীটা হেঁটে পার করে ... 

কাপালিকের ফুসলানো চিতা আগুনে 
                           খাদ্যের অভয়ে চাল ফোটে,
শামুকের লক্ষ বছর গুটানো ফসিল  
লক্ষ বছর পেছন থেকে বেরিয়ে এলো কদাকার কোনো জীব।

​​কেউ তো জ্বলে 

কেউ তো জ্বলে 

তাই আলো দেয় সে 

  প্রদীপের বুকে কাঁপে 

তেলের ঔযষে 

প্যাঁচানো সলতের পীড়ায় 

        মৃত্যুর ধীর যন্ত্রণা 

তেজস্ক্রিয় আত্মার খোলসে 

    বিস্ফোরণের বোমা ফাটে 

প্রতিবাদী সংজ্ঞায়।

আকাশ ফাটে সূর্যের বেদনায় 

রং ঝরে গোধুলির 

শক্তির সততা বুকের অগ্নি-দাবে

অঙ্গারে ভাঙ্গে গড়ে

হীরকের উজ্জল দ্যুতি। 

ক্ষয়িত লাভা আগুনের বন্যায় ছোটে

লৌহ সভ্যতার হাতিয়ার। 

মন পোড়ে

আঁখির পলকে জমে বরফের ছেঁটা পরশ।

উমোষ হৃদয়ে পোড়ে

সবুজ রং, পাখীর পালক 

ভোরের পূব আকাশে 

শেষ চিহ্নের ঈশ্পাতি ধোঁয়া ওড়ে।   

kite.png

ঘুড়ির ঠিকানা

 

ছোট বেলায় ঘুড়ি উড়িয়েছি

দুপুর বেলায় আঠা ও কাঁচ গুঁড়োয় দিয়েছি মাঞ্জা

লাট খেয়েছে ঘুড়ি, প্যাঁচের মারণে

অবশেষে সেই ভোঁ কাটা...

 

ছুটেছি ঘুড়ির পেছনে

অলঙ্ঘ সে ডোরে

হাতের মুঠোয় তাকে নামিয়াছি

 

আজ বড়বেলাতেও ঠিক তেমনি

হাঁটু গেঁড়ে সুত ছাড়ি

অবলীলার এ ঘুড়ি কাটাকাটি

আজও চলেছে ...

 

আজও অদৃশ্য ঘুড়ির শিকড়ে

জল ঢালি

চিহ্নহীন সে আকাশ স্বপ্ন

বৃন্তচ্যুত সে ঘুড়ির মত

হাতে ধরা অনিয়ন্ত্রিত লাটাই

পাই নি সেই ঘুড়ির ঠিকানা।।  

ঘষে মুছে দিলে দাগ

 

য়না দেখলে বারবার
কোথাও তো নেই সে চিহ্ন 
মনের ভিতর 
       স্মৃতি ছেঁড়া বাকলে
দেওয়াল লিখনে, শিল্পীর আঁকা চোখ
ভেসে ওঠা তুমি,
লিখে নেও তুমি কোনো নাম হৃদয়ে তোমার  
'ইতি'-লেখা কোনো চিঠির পাতায় 
ছাপা দাগ, ছাঁচের পরতে লাগা অবিকল তুমি 
উঠে আছে পুবের তীর বাওয়া 
নাবিকের ছায়া শরীর--মিশে গেল জনতার ভিড়ে 
মুছে নিলে মুখ --সমস্ত এঁটো কাঁটা যা ছিল লেগে
বিকিরণ ফাঁদে--হৃদয়ের কাঁটা ছিল বেঁধা 
ব্যথার জানালা দিয়ে  
পরিচ্ছদের পৃষ্ঠা থেকে কেটে দিলে 
তবু খচ খচ ব্যথার সাল গড়া জলে ভিজে,
খরায় শুকোয়--টন টন জমা দুঃখ 
মুছে ফেলতে পারো নি তুমি 
নিজের রূপ দেখে নিজেই হয়েছ মোহিত 
কে ছড়ালো সাত রঙা বর্ণ চোরা রং!  

পলাশের বসন্ত ঠোঁটে

 

মারও বয়স ছিলো
মনের উঁকি ঝুঁকি ইচ্ছাগুলি...
আকাশের ছায়া এসে আমার গায়ের 
ওড়না উড়াত... 

আমার য়ে ছিলো ভালবাসা 
গোলাপের বৃন্তে তবু কাঁটার আঁচড়  
আমার ঘুমন্ত মুখ সুপ্ত গহ্বরে 
পাতা কাটা কিছু কীট 
বিরক্তির ঘিন ঘিন ভাবনায় 
জেগে ওঠা মন ছিলো...

সীমান্তের ভাঁজ চুলে
লালিম গোধূলি আঁকা 
ললাট লিখন আঁচরে ছিলো 
গোল ছবি চাঁদ!

আমার ইচ্ছে ছিলো
সমস্ত সবুজতায় পৃথিবী ছুঁয়ে যাক
আঁকিবুঁকি মন্দাক্রান্তা 
কবিতার ছবিতে নীল সমুদ্র
কিম্বা  ভোরের জেগে ওঠা 
মিষ্টি রোদ্দুরে স্থির বসে থাকি 
ঘ্রাণ নিই মুকুলের
পলাশের বসন্ত ঠোঁটে 
শেষ চুম্বন আঁকা থাক আমার।

girl.jpeg

অবাধ বাগানে 


হাভাতে ভিখারী রাস্তার পাতা চাটে,
খোলসের নীচে কে রাজা কে ফকির!
জীবনটা তো জামা পাল্টাবার মতো নয়  
ক্ষণস্থায়ী তামাশার চমক। 
ম্যাজিকের খালি হাত 
সোনা ধরে আকাশের মুঠোয়্,
পুরনো রাজবাড়ি ঘুমোয় নিশীথে,
অঙ্কের ছকে সরে না কুয়াশার আস্তরণ।
          
গাছের তালে ও বেধেছে বাসা,
অনাম এ পৃথিবী ঘুরছে তো ঠিক ঠাক!
মন-প্রানের ঠিকানা কোথায়,
জীবনকে ঘিরে থাকা দেওয়াল নিরাপত্তা--
মানুষ নয়, পোষা কুকুর ঘুমায় বিছানায়।
                   

গরম ঠান্ডা কিছু নয়,
তুমি ঘুমাছ না জেগে আছ 
অথবা স্বপ্নের ঘর ভাঙ্গা খেলায় 
সাদা কাপড় জড়িয়ে 
দেওয়াল ভেদের খেলায় মেতেছ।
আছি,নেই হওয়ার দোলায়
কেমন চলছি, বলছি, হাসছি, খেলছি দেখ--
এই জ্যোৎস্না রাতের অবাধ বাগানে 
কেউ কি আছ কথাও?

​​আর এক জন...

পেলেই থেমে যায় চাওয়া পাওয়া

তার চেয়ে কিছু না পাওয়া থাক না মন জুড়ে!

তাকে মনে পড়ে, অনেক পথ এক সাথে

এগিয়ে যাবার যে স্মৃতি

হারিয়ে গেল, এখনো কোন আস্বিনের ঝড়ে

সে কথা মনে পড়ে

সে শীতল বিছানো পাটিতে

এক হলেও আর এক জন...

কিছু আঁচড় চিহ্ন

 

লিখি 

তবু থেকে যায় আরও কিছু না বলার প্রচ্ছদ,

পৃষ্ঠার মলাট ছবি ভরাতে পারে না মন।

সে নদী ছোট হতে হতে

কিছু আঁচর চিহ্ন নেয় ঠাঁই 

কিছু বালি রেখার নীচে সে থাকে ঘুমিয়ে...

 

একান্ত আপন কোনো লেখা

যদিও স্পর্শ করে বুকের সান্নিধ্য।

সীমিত শব্দের ছকে কতটুকু পায় প্রাণ!

কতটুকু এঁকে তোলা সে ছবি 

নৈরাশ্যের শুন্যতা পেরেছে ভাঙতে?

 

কখনো স্তব্ধতায় মুখর থাকে ভিতর কলহ।

নিদ্রায় কল কল শব্দ ভাঙে ঢেউ!

ভাঙা চোরা সে কল কব্জা জুড়ে 

কখনো কি 

একত্রতা খুঁজে পাবে?

তবু একান্তে নদীর কুল ভাঙবে,

কিছু আঁকিবুকি রেখা নিয়ে 

তার লেখা চলবে অতল মানসে!

 

 

মৃত শরীর  


বেমানান শিশুদের গাম্ভীযর্তা,

শ্বাশত সত্য কি আত্মার অমরতা?

ক্ষমা যেচে যায়, 

মৃত শরীর পালায়

বিছানা খালি রেখে,

রঙ্গিন কাগজ ঢেকে 

ফুলদান

বাড়ায় মান,

খোলা আকাশ ছাদে

বেদনা কাঁদে!

রাতের আঁধার 

চোখ ধাঁধার,

স্বপ্ন কাটে

পথে ঘাটে,

শুন্য হাতে 

কি তুমি চাও?

দেবতার চরণে তাও

চড়েছে নৈবেদ্য,

দুর্ভেদ্য 

সুচিকায় গাঁথা মালা--

জ্বালা

বেঁধা বুক, 

ধুক ধুক 

 

পাখীর দুঃখ নিয়ে 

খাঁচা ভোলানোর গান দিয়ে

আমায় আটক করেছ তুমি!

তুমি ছুঁয়ে আছ ভূমি

মাথায় আকাশ নিয়ে 

ভাবনা ভুলিয়ে

অস্থির

স্থবির।।

birenmukherjee.jpg
বীরেন মুখার্জী
বীরেন মুখার্জী

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

বীরেন মুখার্জী: কবি ও প্রাবন্ধিক। পেশা সাংবাদিকতা। বর্তমানে দৈনিক যায় যায়দিন পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে কর্মরত। কবিতাগ্রন্থ: উদ্ভ্রান্ত সময় (১৯৯৮, কলকাতা), প্রণয়ের চিহ্নপর্ব (২০০৯), প্লানচেট ভোর কিংবা মাতাল বাতাস (২০১১), নৈঃশব্দ্যের ঘ্রাণ (২০১২), পালকের ঐশ্বর্য (২০১৩), মৌনতা (দীর্ঘকবিতা ২০১৩), জলের কারুকাজ (২০১৪), হেমন্তের অর্কেস্ট্রা (২০১৬)। গল্পগ্রন্থ: পাগলী ও বুড়ো বটগাছ (২০১৬)। প্রবন্ধগ্রন্থ: কবির অন্তর্লোক ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০১২), সাহিত্যের প্রতিপাঠ (২০১৪), কবিতার শক্তি (২০১৭)। সম্পাদিত প্রবন্ধগ্রন্থ: বাংলা কবিতায় ঐতিহ্য (সম্পাদনা ২০১৪)। সম্পাদিত ছোটকাগজ: ‘দৃষ্টি’ (প্রথম প্রকাশ ১৯৯৪। ১৫টি সংখ্যা প্রকাশিত)

জীবনমুদ্রা

যে ভাবেই দেখো- জীবন এক প্ররোচনাময় টগবগ, কতিপয় ঘোরেই সুস্থির!

 

বরং অননুমোদিত সেইসব দিনের কথা ভেবে হেঁটে যাও প্রাগ্রসর পথে, হয়তো শুনতে পাবে- পর্যটনপ্রিয় ঘোড়াদের হ্রেষাধ্বনি মিলিয়ে যাচ্ছে শ্রাবণভ‚মির অচেনা সন্ধ্যায়, বুঝে নিও- অশ্রু ও বর্ষার শাশ্বতরূপে প্রোথিত রয়েছে রূপান্তরের বিপুল সম্ভার। কিংবা, ঊরুস্তম্ভে উল্কি এঁকে বিকল্প উৎসেও খুঁজে পেতে পারো জীবনের প্রকৃত নৈর্ঋত!

 

এভাবেই- হাঁটতে হাঁটতে ভেঙে ফেলো অক্ষরের শব আর কাচের মহিমা; প্ররোচনা এড়িয়ে- ভাবে ও আচারে পুনরাধুনিক হয়ে ওঠাই বরং শ্রেয়তর!

জাস্টিসিয়া

নৈরাজ্যের দিকে চলে যাচ্ছে একটি পথ, জাস্টিসিয়া। এই বিরূপ গ্রীষ্ম সাক্ষ্য দেবে, সেদিন কোথাও সুশীতল ছায়া ছিল

 

নৈরাজ্যের দিকে চলে যাচ্ছে একটি পথ- দুঃখ করো না জাস্টিসিয়া। এই বিরূপ গ্রীষ্ম সাক্ষ্য দেবে, কোথাও সুশীতল ছায়া ছিল না। ছিল না ঋতুর অঙ্গীকার- প্রতিশ্রুতি। শুধু বর্ষণসম্ভবা মেঘ উড়ে গেছে পূর্ব থেকে পশ্চিম। এই নিরর্থক দিন, তবুও প্রতীক্ষা- হয়তো গৌরবান্বিত কোনও ঋতু আবারও ডেকে নেবে- অনুভবের খুব কাছে! বায়ান্নো কিংবা একাত্তরের মতো উজ্জ্বল প্রেম উঁকি দিয়ে যাবে আবারও, অন্ধকার চূর্ণ করে জ্বলে উঠবে প্রগতির আলো, জাস্টিসিয়া- সেদিন নিশ্চিত,মেঘও ঝরাবে- প্রত্যাশিত জলধারা।

 

দুঃখ করো না জাস্টিসিয়া; গ্রীষ্মরোদে গলতে গলতে এই নুনঘাম, বিকেল ফেরি করে একদিন হয়ে উঠতেও পারে ভবিষ্য পাহাড়! ভূ-বিশ্বের যাবতীয় অহঙ্কার তো চূর্ণ হয়েছে এভাবেই। শুধু সংশয়, আগামীর চেতনা খুব গোপনে, অন্ধকারের দাস হয়ে উঠবে না তো!

 

চলো, নির্লিপ্ত হেঁটে যাই

 

মোহনীয় সেই গোধূলি- আমরা হাঁটছিলাম। এবড়ো-থেবড়ো আলপথে ছড়িয়ে পড়ছিল রক্তিম আলোক। চোখের পর্দায় গলিত সবুজ এবং সম্ভ্রান্ত একটি সংসারের প্রতিধ্বনির ভেতর ফুটে উঠেছিল হলুদ হাওয়া- উদ্দেশ্যহীন! তবুও কয়েক শতাব্দী হেঁটে সেইসব প্রণয়বেলা আমরা গড়িয়ে দিয়েছিলাম প্রান্তরের ঘাসে-

 

আমরা সাক্ষী ছিলাম ঝরে যাওয়া সময়ের; ভেবেছিলাম- হাস্যকর কোনও ভোর নিয়ে যাবে প্রস্তর যুগের ভোজসভায়! কিংবা, নরম অন্ধকার উসকে জেনে নেবে ক্ষরিত জীবনের সমগ্র রসায়ন। ভাঁজ হওয়া বিকেলের মসৃণতা থেকে জাগিয়ে দেবে অদেখা ভুবন; পাঁজরভাঙা চিহ্নলোকও ফিরে আসা অমূলক নয়। অথচ, শেষাংশ গণনায় দেখি- দণ্ডিত পৃথিবী!

 

অরণ্য প্রাচীন হলে, তার ছায়াতলে, জেনেছিলাম- গড়ে ওঠে পরিবর্তিত বসতি! কথারও অলঙ্কার আছে, সময়ের মোচড়ে ধ্বনিত হতে পারে প্রত্যাশিত রাগিনী ফের; চলো, নির্লিপ্ত হেঁটে যাই- ধূলিরাঙা প্রাচীন গোধূলির পথে...

রাতকে ডেকে বলি

 

গোধূলিসারস, অবিরাম উড়ে যায় ঘনসন্ধ্যার পথে-

রাতকে ডেকে বলি- অন্ধত্বের সুতো ছিড়ে প্রাচ্যের আকাশে জাগো;

কেননা, গুমোট আঁধারেগোল হয়ে আছে সময়- মৃতবৎ!

 

গতিশীল হতে গিয়ে- যে দেয়াল প্রলম্বিত চারিপাশে

প্রত্নযুগে রচিত সে ইতিহাস! অসংখ্য খুন বিধৌত মৌনহাসি

মূলত, স্বার্থ আর ভোগের ঝরনাধারা; কলস্বরে বাজায়-

তাপানুকুল হাওয়ার সমঝোতা!

 

যে অরণ্যগুহায় সমাধিস্থ সাম্প্রতিক বিবেক,

তার রংমহলজুড়েও সাপিনীপ্রেম ফোটে টগবগ,

ফণাশীর্ষে লোভনীয় স্বর্ণমণি; আর-

বাস্তুসাপের তাড়া খাওয়া ধাবমান যাত্রীরাও দেখছে,

তেঁতুলনগর দাউদাউ- পিশাচ তাড়ানোর হোমাগ্নি!

 

চারু, উদগীরণ মানেই আগ্নেয় লাভার বিকিরণ-

রাতকে ডেকে বলি- গুমোট ইতিহাস পুড়তে দাও...

girl.jpeg

যোগফল

ময় খুললে হাওয়ার গন্ধ ভাসে- দারুচিনি ধূপ;

 

অসংখ্য মীড় হাতড়িয়ে পাওয়া সুরের পাশে

তোমাকে দেখি অর্ধমৃত যোগফল, যখন উড়াল চিহ্নে-

লেগে থাকে নিদ্রিত দিনের সবটুকু বিভ্রাট!

 

সময়ের গেরো খুলে উঁকি দিয়ে দেখো-

বাস্তব স্বীকৃত এই মোহ তৃষ্ণার পাশেই অকৃত্রিম;

ঋতুর পাথর গড়িয়ে উজ্জ্বল হয় দিনের স্বয়ম্বর,

বিপন্ন অশোকে বাজে- নীতির বেহাগ!

 

সময় খুললে অসংখ্য অরণ্য- শাদা ভাতফুল;

চারু, সহস্র রঙে তবুও লীলায়িত নিজস্ব ত্রিভূজ!

 

 

প্রাগৈতিহাসিক

বিপন্ন এ খেলা, যখন ঝরতে থাকে জলধারা

দেখতে পাও না, অথচ এইসব রাতে-

সম্পর্কের চাঞ্চল্য বাজিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি ছিল;

 

কতটুকু উৎকীর্ণ হলে-

পেরিয়ে যেতে পারবে তপ্ত মরুভূমি

তারচে’ বেশিই ছিল কৌতূহল ও আড়ম্বর...

 

অথচ, যখন পান করতে চাই সেই দৃশ্য-

ভুলে যাই, পৃথিবীও রং পাল্টাচ্ছে অবিরাম;

আগাম ফোটা কদম, সৌন্দর্যের ভেতরই

লুকিয়ে রেখেছে রহস্য অপার, আর-

গর্জনের মধ্যে গুঁটিসুটি জাগতিক দ্বৈরথ;

 

এমন রাতেই উড়িয়ে দিতে চাই তামাসার আয়ু

কৌশল বিপন্ন করে পৃথিবীর সমস্ত ভূখণ্ডে-

গতিরোধক   

রা কটালের ভীড় ঠেলে অনন্য রাত্রির ভেতর

সমর্পিত হতে চেয়েছিল- একটি দুপুর;

আলোর মুখোমুখী হতে গিয়ে পুনর্বার ভেবেছিল,

সুখবাদী পণ প্রশ্রয় পাবে না কখনও

অথচ ‘সস্তা’ শব্দটি তার বিস্তারে গতিরোধক হয়ে ঝুলে গেল।

 

চৈত্রের বর্ষণে প্রাচীন বৃরো দেখো-

যেনবা, হয়ে উঠেছে শৈশবের বোধগম্য জল-তরু-লতা!

 

এখন বৈকালিক বৃষ্টি ছুঁয়ে যাবে সেই কল্পিত স্বপ্নরেখা-

সফল একটি আহ্বানের পথে। বয়সের মিথ যুগপৎ ভাটির প্রবাহে

নিমজ্জিত হতেও পারে। চারু, প্রশ্ন হলো-

অঙ্কিত যোগচিহ্নের পাশে বিলম্বিত লয়ে হেঁটে আসা ব্রজবধূকথা,

লেখা হবে কী কখনো- হীরক অক্ষরে!

দুঃখ করো না

 

দীর প্রসঙ্গে মনে পড়ে নিঃসঙ্গ মানুষের মুখ

যাদের ছুড়ে ফেলা হয়েছে বিনাশ সমুদ্রে...

 

দুঃখ করো না অরণ্য, জলাভ‚মি-

কুয়াশাপৃষ্ঠার ওপারেই বসন্তের প্রত্যুষ প্রতীক্ষারত;

একদিন ঠিক দূরীভূত হবে বিরহ জঞ্জাল

দু’তীরের সম্রাজ্ঞী বাগান ভরে যাবে বাদামী ভ্রমরে

পুষ্পচঞ্চলতায় হেসে উঠবে বিরহসমগ্র-

 

এখন তো অবগুণ্ঠন খোলার সময়...

 

দুঃখ করো না জরাজীর্ণ আগামী-

সময়ের বিপন্নতা সরিয়ে তোমাকেই প্রমাণ করতে হবে

কতটা শক্তি ধারণ করেছো আমুল পাল্টাতে-

অঞ্জন আচার্য্য 
অঞ্জন আচার্য্য

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

তবুও আশা রাখি
 

যেভাবে বেঁচে আছি, মন্দ কী?
সব যে ভালো হবে তার তো মানে নেই,
কলি যে ফুল হবেই গ্যারান্টি কী?
তবুও আশা রাখি, কিছু না-কিছু হবেই।
এভাবে বেঁচে থাকা, মন্দ না
আঁধার আছে বলেই আলোর এত দাম,
ঘুম যে ভাঙবেই কেউ তা জানে না;
আঁকড়ে ধরি তাই বাঁচার ছদ্মনাম।
জেগে যে স্বপ্ন দেখি, সেসব কল্পনা
সব যে হতেই হবে তার তো মানে নেই,
যা কিছু ঘটে গেছে, সবটা গল্প না;
তবুও আশা রাখি, কিছু না-কিছু হবেই।

 

 

চিতি-পড়া বসন্ত ও অনাহারী বৈশাখ
 

কৃষ্ণচূড়ার ডালে লুকিয়ে কোকিল ডাকলে
কিংবা পথের ধারে শিমুল-পলাশ ফুটলেই বসন্ত আসে না।

প্রত্যেক ঋতুরই আলাদা ঘ্রাণ আছে- 
বসন্তও এর ব্যতিক্রম নয়; বরং আরো বেশি ঘনিষ্ঠ।
বাতাসেই যদি তা না-ছড়ায় তবে সে আবার কীসের বসন্ত?

এখানে রক্তপাত, বারুদের গন্ধময় সকাল
এখানে বৃষ্টিপাত, সময়ের শব্দহীন বিকাল।

দূরে কোথাও যাই, ঘুম ও স্বপ্নের মাঝে ব্যবধান রেখে
এ তো দেখি কাক, কাকপুচ্ছ কোথায়?

কাগজ্যোৎস্নায় ভিজে গেছে রাত্রির মশারি,
বসন্তের জামায় চিতি-পড়া দাগ; বৈশাখ অনাহারী!

drunk.jpeg

অঙ্গার
 

মুদ্রে ফিরে পকেটে ভরে নিই যাবতীয় ঢেউ 
মরা হাঙরের হাড়ে তৈরি করি নিজের বিছানা; 
জল থেকে লবণ আলাদা করার কৌশল আছে জানা। 
সফেন তরঙ্গতলে সেরে নিই গোপন অবগাহন, 
একটু দাঁড়াও, জলের রঙে নিজেকে হারাও কেউ।

বহুকাল রক্তিম অঙ্গার খাই না শীতের শানকি ভরে 
পাঁজরে তাই জমা-শেওলার রং কালচে হয়ে গেছে, 
বাতাসের ছাদে হাঁটতে হাঁটতে একদিন পথ ভুল করে—
দেখি, আমার জ্বলজ্বলে চোখ দুটো গেছে পুড়ে সূর্যের আগুনে।

 

বসন্তের মৃত্যুতে শোক
 

ত রাতের ঝড়ো-বাতাসে ভেঙে গেছে বসন্তের ডানা
প্রাতঃভ্রমণে আসা স্বাস্থ্য-সজাগ মানুষের দল
গোল হয়ে দেখেছে মৃত চড়ুইয়ের মতো উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে;
ঝরা-পাতার গায়ে লেগে থাকতে প্রাণহীন বাসন্তী-পালক।

এমন খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে শহরের আনাচেকানাচে
দলে দলে ভিড় করে মানুষ,

যেখানে কৃষ্ণচূড়া কিংবা পলাশ আছে।
ঘটনায় দোষারোপ করছে কেউ কোকিলকে,

কেউ-বা খোদ কৃষ্ণচূড়াকেই
তবে কোনো এক রহস্যে চোখে-মুখে কালো কাপড় বেঁধে রাখে গণমাধ্যম
নইলে কোত্থাও কোনো খবর প্রকাশ নেই কেন?

ছবি তো দূরস্থ।

যেখানটায় প্রকাশ পেতে পারতো এ রিপোর্ট,

সেখানে ফলাও করে প্রচার হচ্ছে
মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি,

ইলিশের আকাশ-ছোঁয়া দাম,

পোশাকে বৈশাখীর ফ্যাশান।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয়- ফেসবুকেও নেই কোনো টু-শব্দটি কোথাও
কেবল এক নিরীহ কবি ছবিসহ পোস্ট দিলো তার ফেসবুক ওয়ালে-
“বসন্ত মরে গেলে কী করে জন্ম নেবে বাংলার বৈশাখ?”

বিশ্বরূপ রায় 
বিশ্বরূপ রায়

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

deadbody.jpg

(১) অস্থির সময়ের পাখি

স্থির সময়ের পাখি তুমি,
যা তোমার, আজ তাতে অন্যের অধিকার।

যা সহজ সরল সভ্য,আজ তা সময়ের
যাঁতাকলে পিষ্ট নিষ্ঠুর ভবিতব্য।

খোলা মনে উড়বার অধিকার নেই কারও,
চোরাবালির পাঁকে মানবতা তলিয়ে যাচ্ছে
আরও! আরও! আরও!

ঝটপটানি শুনলেই ভয় বাসা বাঁধে মনে।
নীতি, বিবেক, সংস্কৃতি বর্জিত ব্যভিচারীরা
দাপিয়ে চলেছে অতি সাধারণ মননে।

মুক্তিকামীর মর্মবেদনা গুমরে গুমরে কাঁদে,
ওদের স্তব্ধ করতে হবে; প্রতিযোগিতায়
মেতেছে যত বর্বর জহ্লাদে।

ভয় পেয় নাকো, ডানা ঝাপটাও,
যত আঘাতেই হও বিক্ষত,
এ তোমারই জয়, মুক্তিধারার অমৃতবারি
তোমারই পক্ষস্নাত।

(২) মৃত্যুর রূপ

মৃত্যু তুমি কি কালো? নাকি
রঙ্গমঞ্চের শেষ যবনিকাপাত,
মৃত্যু তুমি কি কঠোর? নাকি
বাস্তবতার নিষ্ঠুর আঘাত।

তুমি কি শীতল গঙ্গোত্রীর হিমবাহের মত!
জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুক্ত,
স্নিগ্ধ, সমাহিত।

তুমি কি বেদনাময়,জীবনযুদ্ধের পরাজিত- মুখ!
রোগক্লিষ্ট জীর্ণ দেহে রোগমুক্তির নির্মল- সুখ।

তুমি কি বাঁধনহারা,নতুন পথে চলার- খুশিতে!
চিরচেনা জগৎ থেকে বিচরণে অজ্ঞাত- অপরিচিতে।

রূপ যাই হোক না কেন তুমিই চিরন্তন- জগতে,
আগমন তোমার তাই- অতর্কিতে,নিঃশব্দে,নিভৃতে।

(৩) নীলা

ফোন নম্বর পাল্টাবে না বলে কথা দিয়েছিল নীলাকে,
সে কথা রেখেছে সমীরণ।
প্রথম প্রথম ভালোবাসে বলে পাল্টায় নি,
কিন্তু পরে এত জায়গায় নম্বর দেয়া হয়েছে যে পাল্টাতে পারেনি।
দিন গড়িয়ে বছর গেছে অনেক,
মনের কোনায় এক চিলতে আশা ঝিলিক দিত মাঝে মাঝে।
হয়তো নীলার ফোন আসবে, কিন্তু আসেনি।
বহুদিন বাদে বাদে অজানা নম্বরের কোনো মিসকলে জেগেছে আশা।
কিন্তু কথা দিয়েছিল নীলাকে কোনোদিন বিরক্ত করবে না তাই উল্টে ফোন করেনি কোনোদিন।
আজ তার ভরা সংসার,ভালোবাসার অভাব নেই।

তবুও মনের মাঝে চোরাগোপ্তা আশা বেঁচে থাকে।

হয়তো কোনোদিন ফোন করবে নীলা, করেনি।
হয়তো ভালো আছে, সুখে আছে নীলা।

(৪) ২৬শে জানুয়ারী

হু শহীদের রক্তস্নাত আমাদের স্বাধীনতা।
১৫ই আগস্টের মধ্যরাতে যে জাতি উঠল জেগে,
১৯৫০ এর ২৬শে পেল তার অধিকার।
অধিকার পেল স্বাধীনভাবে বাঁচার, কথা বলার।
অধিকার পেল মত প্রকাশের, সমাজতান্ত্রিকতার।
কিন্তু যে দেশে জাতপাত আর ধর্মীয় ভেদাভেদ,
এখনও চলছে সমানে, সে কি সত্যিই স্বাধীন?
যেখানে আজও লোক মরে অনাহারে,
যেখানে দাঙ্গাবাজের তরবারিতে সভ্যতা হয় ম্লান!
যেখানে রাজনীতি মানে শুধুই ভোটের হিসাব করা,
মানবিকতার টুঁটি চেপে ধরে সন্ত্রাসী আর সমাজবিরোধীরা।
যেখানে ধর্মের নামে, জাতের নামে সংবিধান দেয় সংরক্ষণ,
যেখানে চলে ধর্মীয় শিক্ষা চলে ধর্মীয় শাসন,
সে দেশ কিভাবে হয় ধর্মনিরপেক্ষ?
যে দেশে প্রদেশ ভেদে একই কাজ করে

কেউ পায়না সমান পারিশ্রমিক,
সে দেশ কি করে হতে পারে সাধারণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক?
ভাবার সময় এসেছে বন্ধু,

আগামীটা আমাদেরই নিতে হবে গড়ে,
তবেই উঠবে নতুন সূর্য নবচেতনার ভোরে।

(৫) এই কি তবে সভ্যতা?

মরা সভ্য মানবজাতি, সত্ত্ব মোদের সবই,
চিন্তা-ভাবনা, সাজপোশাকে তারই প্রতিচ্ছবি।
যে জন প্রথম জ্বাললো আগুন কাঠ-পাথরে ঘষে,
মানবতাই জ্বলতেছে আজ দানবতার বিষে।
যে দিন প্রথম মারল পশু পেটের ক্ষুধার তরে,
মনের ক্ষুধায় আজকে মানুষ,মানুষ শিকার করে।
ছাল জড়িয়ে নিল গায়ে সভ্য হবে বলে,
লজ্জা, ভয়, শীত, গ্রীষ্ম কাটবে অবহেলে।
আজকে মানুষ নগ্ন বড়ই বিবেক-মানবতায়,
স্বার্থসিদ্ধিই মূলমন্ত্র, কিই বা আসে যায়।
কার কতটা ক্ষতি হল নেই প্রয়োজন জানার,
আমি-তুমি-ছোট্ট উঠোন, এটুকুই সংসার।
এই কি তবে সভ্যতা? যার বড়াই করি মোরা,
এযে বড়ই লজ্জাদায়ক, হারার পরেও হারা।
আমরা যাদের পশু বলি তারাই আসল সভ্য,
বিবেক বিহীন দু-পেয়ে জীব, এটাই ভবিতব্য।

(৬) জীবন খুঁজে বেড়াই

জীবন খুঁজে বেড়াই আমি রাতে দিনে যখন তখন।

কখনো নিজের মধ্যে, কখনো অন্যের মধ্যে, কখনো বা প্রকৃতির নিবিড় শীতলতায়।

দখিনের মৃদু মন্দ হাওয়ায়, গ্রীষ্মের গরম বাতাসে কিংবা বর্ষার ভেজা মাদকতায়।

কোকিলের কুহুতান জীবনের নবযৌবনের বার্তা নিয়ে আসে।

মাটির দেয়ালে ডিম মুখে হেঁটে চলা পিঁপড়ের সারিতে,

ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ানো প্রজাপতির ডানায় অনুভব করি তার স্পন্দন।

বসন্তের কচি পাতার গন্ধে তারই সুবাস ভেসে আসে। টুনটুনির সেলাই করা কাঁচা পাতার ঘরে তার ছোট্ট ছানার কচি ঠোঁটের ফাঁকে জীবন ঝিলিক দেয়।

আহা কি সুন্দর তার স্বাদ!

আমৃত্যু আমি নিংড়ে শুষে নিতে চাই এর সবটুকু,

যতটুকু পারি।

এ আমার অধিকার,

এ আমার অহংকার।

এই জীবন শুধু আমার-আমার-আমার!!

BibhasRoychoudhury.jpg
বিভাস রায়চৌধুরী
চাঁপাবেড়িয়া, বনগাঁ
বিভাস রায়চৌধুরী

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

জন্ম ১৯৬৮ সালে সীমান্ত শহর বনগাঁয়। তিনি নব্বই দশকের এক স্বতন্ত্র কবি। কাব্যগ্রন্থঃ নষ্ট প্রজন্মের ভাসান, উদ্বাস্তু শিবিরের পাখি, শিমুলভাষা পলাশভাষা, জীবনানন্দের মেয়ে, যখন ব্রিজ পেরোচ্ছে বনগাঁ লোকাল, চন্ডালিকা গাছ, পরজন্মের জন্য স্বীকারোক্তি, সমস্ত দুঃখীকে আজ, শ্রেষ্ঠ কবিতা, আমার সামান্য দাউদাউ ইত্যাদি। উপন্যাসঃ কলাপাতার বাঁশি, অশ্রুডানা, বাইশে শ্রাবণ। পুরস্কারঃ কৃত্তিবাস পুরস্কার (নবপর্যায়) - ১৯৯৭, বাংলা আকাদেমি পুরস্কার - ২০১৪। দশকঃ নব্বই।  

একটি স্বপ্ন 


লাল ঘোড়া ছুটে যায়

            নীল মানুষের দিকে ...
নিজেকে একলা লাগে!

এবারের কথা বলছি না।
পরের বার ভালবাসবে তো?
যদি অসম্ভব আসে আকাশের জানালায়?

আজ স্বপ্ন উচ্চারণহীন।

লাল ঘোড়া ছুটে যায়
            নীল মানুষের দিকে ...

আমি তো প্রান্তরহীন।
ধুলো-টুলো মেখে দেখলাম,
কবিতার বাইরে এল আশ্চর্য কবিতা ...
কান্নার ওপাশে আজ 
                        নির্জন অভূতপূর্ব কান্না ...
ভিজে-যাওয়া বালি আয়নার মতো
                        চকচক করছে!

লাল ঘোড়া আর নীল রঙের মানুষ
            নিজেদের মধ্যে কত বাক্য বানিয়েছে।
শুধু আমি নেই ?
            আয়না ভেঙে ঘুম মৃত?

এবারের কথা বলছি না।
পরের বার ওষুধ খেয়েছ?
            বিষণ্ণ হতে ভোলোনি তো?


জোছনা

চাঁদে ঘুম লেগে গেল জলের আকাশে

নৌকা এক স্বাভাবিক প্রাণী

যেন অন্ধ লেপ্টে আছে ওপারের বনে

পাখি ডাকে অনন্তের...
কিছু পরে মৃত্যু ডেকে আনি...

দুঃখের দিনের বন্ধু
বিভাস রায়চৌধুরী 
বিশ্বাস
অনেক গাছের নীচে তুমি নেই কোনওদিন...

হাওয়া এসে ঘুরে যায়
জল থেকে চুপচাপ উঠে আসে হাঁস

পৃথিবী বিশ্বাস চায়... একটু বিশ্বাস...

কত গাছ অপেক্ষা করছে
এক জীবন... দুই জীবন!

এত শূন্যতায় বেঁচে থাকতে ভাল্লাগে না কারও

যেসব গাছের নীচে তুমি নেই কোনওদিন,
একাই দাঁড়িয়ে থাকি...

কী একটা বিশ্বাস ফিরে আসতেও পারো...

touch.jpg

কেউ

মানুষ অবুঝ প্রাণী। তার একটাই ভাষা।

কোনও গাছ, কোনও প্রাণী কাঁদে না কখনও, কবি।

তারা হয় পায়, নইলে মরে যায় চুপিচুপি।

মানুষ অবুঝ। কান্না তার এক ধরণের দাবি।

তুমি কি তেমন অবুঝ?
তবে কাঁদো... কাঁদো, কাঁদো...
কান্না হোক নিয়ত ধারালো!

মানুষ অতৃপ্ত প্রাণী।
বৃষ্টির ভেতর কবে বেরিয়ে পড়েছি
প্রাণহীন... আবরণহীন...
চকিতে তবুও মনে হয়,
নেতুর ওপরে চুপিচুপি
একনিশ্বাসে কেউ কি দাঁড়াল?

শূন্যতা

ঠোঁটের অভাব বুঝি।

পাখির অভাব।

ক্রমশ ফুরায় আয়ু...
ক্রমশ জগৎ ঘন...

আমার জীবন আর
প্রসবকাতর গাছ
যদি এক ভোরবেলা
কাছাকাছি আসে,
কোনো কথা বলবার নেই...

কোনো কথা বলবার ছিলো না কখনও


প্রবল বৃষ্টির পর


দুঃখগুলো পার হয়ে আসি...
পার হতে হয়...

মরা ডালে পাতা গজানোর
দিনে বুঝি মনেই পড়ে না
দুঃখ এক শাশ্বত বিষয়...

কোনও একদিন
প্রবল বৃষ্টির পর
সামান্য ঝিঁঝিঁর ডাকে
হাউমাউ ফিরে আসতে পারে!

কাকে বলে বেঁচে-থাকা?
দুঃখের দিনের বন্ধু চোখে জল এনে
চেনা দিয়ে যায় বারেবারে...

 

বিষাদের মাছগুলি

ই জল মূলত আমাকে 
চিন্তা দেয়, আমি তার
পাশে জুবুথুবু বসে থাকি...

একটি অর্জুন গাছ মায়াবী জন্মের
ছায়া ফ্যালে জলে...
বিষাদের মাছগুলি ঘোরে ফেরে আর
আমি ভাবি শিরায় শিরায়
অন্ধকার বাজায় নিজেকে!

এভাবেই দেহত্যাগ নিয়ম হয়েছে...
সকল নির্জনে
জল প্রবাহিত হয় জলের অধিক

ভাটিয়ালি

বুকের ভেতরে গান... আছে আছে পাখিদের বাড়ি
বুকের ভেতরে ডিঙি... আমি কিন্তু মাঝি হতে পারি

বুকের ভেতরে রাগ... তুলে দিই সব কাঁটাতার!
রক্ত দিয়ে মুছে দিই দেশভাগ, এপার-ওপার

বুকের ভেতরে তির... ভাষাব্যাধ হয়ে পাহারায়
রাত্রিদিন জেগে থাকি, চোখ লিখি রোজ কবিতায়

বুকের ভেতরে চোখ... চোখে চোখে বাংলাভাষা বীর
বর্ণমালা জুড়ে আছে কত কত শহিদশিবির

কত কত ভাঙ্গা পাড়... কত বজ্র... কত ঘুর্ণিঝড়...
মাথাভরতি স্বপ্ন আর কুলুকুলু বাঙ্গালীর স্বর

বুকের ভেতরে আমি আগলে আগলে রাখি ভাঙাবুক
ভাঙা বাংলা জোড়া লাগলে সেরে যাবে আমার অসুখ...

 


কুঞ্জবন

ক-আধটা চুমু ওড়ে, বেশি বেশি ঝগড়া-ঝাটি হয়
মনে আছে আমি তোর দুষ্টু দুষ্টু লালন ফকির?
মনে আছে আমাদের বাংলাভাষা ঘুঙুর-পায়ে ‘ঝুম্‌’...
এক-আধটা চাঁদ অড়ে, বেশি বেশি আকাশ কুসুম
সখী, এই কুঞ্জবন দিগন্তের রং মিলেমিশে
যুগে যুগে জাতিস্মর, যুগে যুগে প্রেমের বাগান
সখী, এই কুঞ্জবন পাত্র চাই- পাত্রী চাই মুছে
হয়ে উঠতে পারে আলো, প্রেমানন্দে জাগা বাংলাগান

আলো সূত্রে আমরা পাখি, আলো সূত্রে আমরা রোজ ভোর
দুই পাখি উরে যাচ্ছি শূন্য থেকে পেড়ে আনতে ভাষা
ঝলসে যায় ডানা, তবু মুখ থুবড়ে কখন পড়ব না
গান আনছি ঠোঁটে ঠোঁটে, কুঞ্জবন ফিরছি ভালবাসা

এক-আধটা গান অড়ে, বেশি বেশি গুন-গুন চলে
সখী এই কুঞ্জবন পেয়ে গেছি চাকরির বদলে

 


কবিতা

নিজেকে ভেতর থেকে প্রথমে কিছুটা উপড়ে নেবে,
নিয়ে নিজেকে প্রতিভা ভাববে, তুমি বিরল প্রতিভা।
টাটকা জখমের দাগ মুছে দেবে গাছেদের গায়ে,
ন্যাংটো গাছেদের গায়ে, ঈশ্বর তখন স্নানরত...
অস্ফুট পিপাসা পাবে, কিন্তু এই খেলা বিনয়ের!
এই খেলা সাধকের বুকের ভেতরে ঘুণপোকা!
দিনকাল গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ঝরে পড়ে অবিরত...
অতএব, হে শাশ্বত ক্ষত, তুমি একে কবিতাই
ভাববে, না, অন্যকিছু ভাববে, সে তোমার ব্যাপার,
আমি শুধু এই আজ অভিজ্ঞতা থেকে বলে যাই
মাথার ভেতরে গুজবের মতো আসে কবিতারা...কিছু ঘটে অবশ্যই, বাকিটুকু শুধু রটে যায়!

উদয়শঙ্কর দূর্জয়
উদয় শঙ্কর দূর্জয়

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

আনমনা রোদ্দুর ভেজায় হৃতমহল 

 

বাদামী এনভেলাপ খুলতেই উড়ে যায় গুচ্ছ গোলাপ; টুপটাপ 

লাজুক শব্দগুলো লুকোতেই পশ্চিমে ওঠে মেঘের দেয়াল।

তখন জানালায় নেমেছে ঘনঘটা, আঁচলের আড়ালে রোদনসূত্র গুছিয়ে নিয়ে 

এক ঝাঁক বিহগ ঠিকানা ভুলে উড়ে যায়। মোহনচূড়ার পিঞ্জরে লেখা গিরিখাদের 

পাণ্ডুলিপি পড়তে পড়তে অশ্রুপাতের রং বদলায়। বালিকা তখনো খণ্ড খণ্ড মেঘপুঞ্জের

মাঝে দৃষ্টি ফ্যালে; প্রত্যাশিত আলোক বিন্দু দেখাবে বৈকুণ্ঠের দুয়োর। 

 

সব ভাঙা স্যুটকেস, জামার বোতাম, স্কুল ইউনিফর্মের ছেঁড়া হাতা, পিতলের মেডেল

গোছাতে গোছাতে অভাগিনী, শুকিয়ে ফ্যালে অদৃশ্য সজল প্রপাত। ফিরে যায়

লিখিত দলিলে, যেখানে কালির স্বাক্ষরে ঘটেছিল শুধুই দেহ বদল। তবু বদলে যায়নি

মনের অভিধানে লেখা যত সুখ-যাতনার ত্রিলিপি। পুরুষতান্ত্রিক নীতির কাছে হেরেছে

মূল্যবোধের সবক’টি অনুরাগ; চুর চুর হয়ে গ্যাছে ছান্দসিক ইচ্ছে যত। 

 

একদিন দখিন হাওয়ায় সরে যায় বুকের কাপড়; হু হু করে ঢুকে পড়ে কোনো ইংলিশ

হ্রদের বৈকালিক ঐকতান। উদ্বেলিত ঢেউ, আঁধার চৌচির ক’রে এসে দাঁড়ায় অন্দরচিত্তে।

কবিয়াল যেন ঠিক ঠিক অস্পৃশ্য অবয়ব।  যেদিন বেডরুমের সব ধুলো সরিয়ে একদল প্রজাপতি

ঘরময় ওড়ে, সেই থেকে রপুর সব অজানা সৈকত হঠাৎ শ্রাবেন ড্যাফোডিল আর পুরুষ

জিনিয়ার বাগান হয়ে ওঠে।

আনমনা রোদ্দুর ভিজিয়ে দিয়ে যায়, পড়ে থাকা হৃতমহলের ঝিমানো বাতিগুলো।

উড়ছে মেঘের পালক শ্রাবণের মাঠে

 

ড়ছে মেঘের পালক শ্রাবণের মাঠে, আঁধারে পুড়ছে আলো বৈকালিক প্রিয়টানে

সবকটি জানালা খুলে গেলে রোষাবেশে, মুঠো ভরা আর্তি ঢুকে পড়ে কঙ্কণ সুরতানে

ঝরে গেলে দগ্ধ অশ্রু বিষাদ অনুরণনে, ঝাঁক সাজবাতি জোনাক কুড়িয়ে আনে

অমন করে ফেলে গেলে চিহ্ন হৃত-পাথরে, শুধু ছুঁয়ে দ্যাখ রক্ত-রঙ দীপ্ত অভিমানে 

 

ও চোখের উদ্যানে সবুজ গাছালি মৃদুমন্দ পায়ে, বহুকাল পরে সে খুলেছে মন বিচরণে

একদল হরিণ শাবক দাঁড়ায় সচকিত চোখে, ভোরের ভেজা তৃণ মেখে খোঁজে সমীরণে

রুপোলি মাছ শিকারের কৌশল রেখে গেলে, স্রোত এসে খুঁজে যায় তিথির অবলম্বনে

এক মাঘী পূর্ণিমায় আকাশ পাশে হাঁটলে, পাল তুলে হৃতমনা নৌকা বয়ে যায় উজানে

 

এক মধ্য দুপুরের ছাই উড়িয়ে নিলে আঁচলে, একাকী মাঠ পেরুবার কালে আনমনে

শৈশবের সব ফুল স্মৃতির পৃষ্ঠা ভুলে গেলে, শুকনো পাতায় লেগে থাকে ধুপ সন্ধ্যা নভমনে

কুয়াশা কাল পেরুলে হঠাৎ উজ্জ্বল আঁধারে, জপে যাবে এক শুক্লপক্ষ সে নাম প্রাণমনে

এক মরু মিছিল রেখে মৃদু সুবেহসাদিকে, এক ভীরু খরগোশের মতো লুকিয়ে যাবে সন্তর্পণে

নিমগ্নতায় ইস্টিমারের অন্তরিপা গীত 

 

তোমাকে দেখার পর এক অবিরাম সোনালি মেঘ নেমেছে  সমুদ্রালয়ে। 

তামাটে তানপুরায় বেজেছে হাওয়াই বাঁশি। ভেজাভোর আলোকরাশি ছড়িয়ে দাঁড়িয়েছে

গৃহমন্দিরে। তারপর থেকে দিকভোলা হরিণ বালক ইচ্ছে করেই ভুলে যায় ফেরার ঠিকানা।

 

তোমাকে দেখার পর ক্লাক্টন সীর সব মধ্যরাতের বাতিরা নেমেছে

বালুর সংসারে। আঁজলা ভরা এক শীতল-শুভ্রতা পান করতেই

কলরোল বেজে উঠেছে নির্জন রথে। সেই দেখার পর চৈতন্যের ভেতর

আলোর জোনাক ছুটছে গ্রহপুঞ্জের মতো। 

 

বিষাদসূত্রে বাঁধা যত দগ্ধ ঋতুর গান, সব যেন মুছে ফেলেছে উইলোদের বেলান্তের ছায়া।

উড়াল পর্বত থেকে কাস্পিয়ান সমুদ্রে ঝরে পড়া নিশ্চুপ বিরহ থেকে রাগিণী শিখেছে

উন্মাদনার স্বরলিপি। অম্বলা নদীর বুকে দাঁড়িয়ে ওয়াটারমিল খুঁজেছে

রুপুর হাতে জড়ানো অদৃশ্য মায়ার প্রপাত। 

 

তোমাকে দেখার পর থেকে তুষার ওমে মুছে গ্যাছে

ডী-নদীর নিঃসঙ্গ অস্থিরতা। সোয়ানের ডানায় জলবায়ু ফেলেছে

সবুজ চিহ্ন; শিমুল তুলর মতো উড়ছে সফেদ ঢেউ শৈতিকা ভূ-গ্রহে।

 

তোমাকে দেখার পর

লণ্ডভণ্ড করা টিসুনামি, ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক ফিরে গ্যাছে, ব্যাকওয়ার্ড দৃশ্যের মতো।

ঠিকঠাক পত্রারাণ্যে নেমেছে আনন্দআলো। কার্জন পার্ক গাইছে নিমগ্নতায় ডুবে থাকা

ইস্টিমারের অন্তরিপা গীত।

ছেড়া ছেড়া মেঘপুঞ্জ

 

১।

প্রাচীনা রূপবতী বন্দরে ভিড়েছিল সাইরেন পেরিয়ে আসা আলবার্টাস,

ঘুম চোখে মানচিত্র দেখতে দেখতে জেনেছিল, কাঁটাতারহীন ভূগোলকের কথা। একদিন প্রত্যাশার দেয়ালে ফুটবে জোস্নার ফুল, তাইতো তামাটে ডানায় জমে থাকা ওম, ভুলে গ্যাছে ফেরার ঠিকানা।

 

২।

দক্ষিণ পাঁজরে জমে থাকা একশ’টি প্রপাত, বিস্ময়বোধক চিহ্ন ঢেকে দিতে 

কিছু সোনালি মাছ বদলে ছিল গতি। তবু সে প্রপাত এখনো বহমান

 

৩। 

যুদ্ধাহত জাহাজ সব বিষাদ কুড়িয়ে এনে দাঁড়াত উঠোনঘাটে, এক মৃত্যুজাত ট্রাক

দিব্য ফেলে যেত খবরের কাগজ। মৃতের নামের জায়গায় লিখত ফুলের নাম, 

আমরা সেসব ফুলের নাম জেনে নতুন অবলম্বন খুঁজতাম পারা ঝরা আয়নায়...

           

৪।

সূর্যের নষ্ট আলোয় ভোরগুলো রোজ রোজ পুড়ে যায়, স্ট্রবেরির শরীর থেকে খসে পড়ে

শিশুদের রক্তের হিমোগ্লোবিন, তবু লেন্সের পর লেন্স লাগিয়ে ঘাতক খুঁজে পাই না। 

 

৫।

ভোর হতেই ক্ষয়ে যাওয়া জীবনের নামগুলো  কুয়াশার মত ঝরে কফি কাপের বারান্দায়

এত অন্ধকার এত বিভেদের দেয়াল তবু স্বপ্নের সোনালি মেঘ নামে আকাঙ্ক্ষার দরজায় 

তোমার জন্য অপেক্ষায় আছে

তোমার জন্য অপেক্ষায় আছে

                ছাপ্পান্ন হাজার রাই সরষে মাঠ

                শাপলা শালুক রক্ত জবা প্রথম সুর্যোদয়।

অপেক্ষায় আছে

                ধরেশ্বরী, কর্ণফুলির কুল কুল তান

                যমুনার ঢেউ আর পদ্মার পাড় ভাঙ্গা শব্দ

                কৃষকের ঘাম ঝরা মেঠো পথ, পাকা ধান ক্ষেত

                মাটির সোদা গন্ধ, দুর্বাদল।

 

এই ময়দান, শিশু পার্ক, রমনা বটমূল

কার্জন হল গর্জে ওঠা ঊনিশ পাঁচ দুই

টি.এস.সি চত্ত্বর নির্মল আকাশ

অপরাজেয় বাংলা এই বুকের সৌধ

রক্তমাখা পিচ ঢালা পথ শহীদ মিনার

                                     অপেক্ষা করে আছে।

 

অপেক্ষায় আছে

                ধানমন্ডি লেক জল ধারা

                বত্রিশটি অপলক কপোত দৃষ্টি

                সংসদভবন খোলা প্রান-র অথই সবুজ সমাহার।

অপেক্ষায় আছে

                সুদূর রেল লাইন বৃষ্টি মেঘ জল পবন

                সারি সারি সুপারি বৃক্ষ, মধুপুরের বন

                সূর্য্য ্লান সেরে কোন নারী পুজোর ফুল হাতে।

 

তোমার জন্য অপেক্ষায় আছে

                চোদ্দ কোটি প্রদীপ, ছয় ছয়টি ভোর

                বেতার কেন্দ্র রৌদ্রময় কঁথার কাপন

                জন সমুদ্র উন্মুক্ত মঞ্চ কল রেডি

                মায়ের গিট বাঁধা শাড়ীর আঁচল

                গলার তাবিজ দরগায় মানত

                মুক্ত দিগন-, বিশুদ্ধ সরোবর

                রণতরী কুচ্‌কাওয়াজ স্যালুট সম্ভাষণ,

                তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে

                বিজয় মাল্য সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সম্মান।

কখনও জানা হবে না

জ জ্যাকসন হাইটের সব আলোগুলো যেন 
নিভে গেল একসাথে! নীরবতার একরাশ কালো ধোঁয়া 
সাঁঝের বেলাটাকে গাঁঢ় থেকে আরও গাঢ় করে তুলল! 

আমি জীবন জীবিকায় নিয়ত ন’টা পাঁচটা 
আফিস করে চলেছি, কান্তির অভাবে অথবা 
খুব অজান্তে, হয়তো ব্যস্ততার নিয়ম-অনিয়মে 
কোন শারদীয় পড়ন্ত বিকেলে
ক্যামন আছে সে আর জানা হ’ল না। 

আর একটি বারের জন্যও জানা হবে না; সুমিতা 
তুমি ক্যামন আছো। আজ আমার প্রতিটি কোষে 
রক্ত কণিকায় মাতাল অনুভূতি, নিঃশব্দ পথে 
অজানা পথিক। 

আমার চেতনার বিছানা জুড়ে নেমে আসে 
আঁকা আঁকি আর কাদা মাটির এলোমেলো গল্প গুলো। 
সন্ধ্যা বাতি জ্বালতে যখন দেশলাইয়ের জন্য 
আমার বাড়ীর দরজায় দাঁড়াতে আমি আবেগাপুত 
অপলক নিস্তব্ধ বালক, ভালোবাসার কী আকুতিই না ছিল! 
রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপলব্ধিতে, অনুভূতির ভ্যাজানো দুয়োর 
খুলে যায়...। 

তুমি যোজন দূরে, আর এই আমি পড়ে আছি আটলান্টিকের 
এপারে সংসার ব্যঞ্জনায়, নাট্য রচনায় কাটে, 
ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতির অন্তরাতে বেঁধে সুর বাঁধি তোমাকে, 
তবু কখনও জানা হবে না সুমিতা তুমি ক্যামন আছ! 

অহোরাত্র জেগে পাহারায় অনাদিকাল 
 

গ্নেয়গিরি সমস্ত জ্বলন্ত আভা এই হাতের 
মুঠোয় তুলে এনেছি। তোমাকে খুশি করার জন্য 
হিমালয় খুড়ে অতল গহ্বরের সবচেয়ে শীতল জলে অবগাহন। 
দ্যাখো একটুও ফাকি নেই, তপ্ত বালু রাশির উপর দাঁড়িয়ে 
তবু করিনি এক খণ্ড মেঘের আশা। প্রার্থনা করেছি 
যদি মুক্ত বলাকা হতে পারি 
একবার তোমার স্বর্গীয় সংসারে 
উঠোনে ছড়ানো পৌষ ধানের পাশে লুকিয়ে দেখে নেবো এক পলক 

বিপুল জলরাশির উপর দাঁড়িয়ে, নায়াগ্রার জলপ্রপাত 
বুকে ধারণ করে দানবের মত শক্তিশালী 
তবু, যখন তোমার সামনে 
এই অসীম ধরণী নত নয়! আমি তো ধূলিকণা। 

শুনেছি মালিনীর বেশে খুব ভোরে সদ্য ঘ্রাণ মেখে নিতে 
যদি প্রজাপতি হতে পারি 
অহোরাত্র জেগে পাহারায় অনাদিকাল, দেখে নেবো 
দলগুলো কিভাবে ম্যালে চোখ তোমার অনিন্দ্য অনুপ্রবেশে। 

একদিন হতে চাই ঘাস নরম উদ্যান 
হেঁটে চল এই বুকের জমিনে 
আর কোন প্রার্থনা নেই। 

সোনালি মেঘের দল

কদিন লিখতে লিখতে সোনালি খণ্ড-মেঘেরা বাজালো নূপুর

তরঙ্গ পায়ে উচ্ছল নদী উঠলো সেজে, খুন করে মধ্য দুপুর

যাতনার শহর পার হয়ে, শঙ্খচূড়া পেলো সুদূর আলোর দেখা

আকাশ বাতাস পিছনে ফেলে, কপালের টিপ ছুঁয়ে দেখল একা

 

একদিন গাইতে গাইতে হরিণীর সুরে, হেঁটে গেলে জুনিপার দেশে

হাতে বকুল সৌরভ, পলাশ আর রক্ত জবার ছোঁয়া নিয়ে বাঙালি বেশে

সিঁথিতে সূর্যের গুড়ো, হাতে রুপোলী বীণা, ধীরে ধীরে নামলে কিনারায়

ম্যাপল পাতা স্বাগত জানিয়ে, রেখে গেলো মুকুট এক শুভ্র বিছানায়

রংতুলির জলসায় আনন্দ মহল

হেমেন মজুমদারের ক্যানভাসেই এমন সিক্ত বসনারা ঝরিয়ে যায় বহুমাত্রিক 

রামধনু। সমুদ্র শরীরে জড়িয়ে অঙ্গনা কখনও হয়ে ওঠে অবিরাম ইরোটিক

প্লাবিত ঝর্ণারাশি গতিপথ বদলে ন্যায়, রুপালি লিরিল বালিকাদের সৌম্য

দেখে। ঝুলন্ত মেঘ সলিটারি রিপারের গুঞ্জন শুনে আরও কাছাকাছি ভৌম

নেমে এলে, অন্তর্বাসের গোপন চৌকাঠে ছাপ ফেলে যায় বয়ঃসন্ধি বালিকা

 

জিবনানন্দীয় পুকুর ঘাট এখন শোবার ঘরেই। কৃত্রিম জলজ ধারায়

শুধু সিক্ত এখন ত্রিমাত্রিক তনু। ভ্যানগগ পিকাসো; চকচকে রং মেখে

হয়েছিল পশ্চিমের। রূপের বাঙলায় সুলতান দেখেছিলেন বিশালকায়

রংসিক্ত রমণী। অঙ্গে জমে ছিল হিম পুলক। উন্মাদনা ফুটেছিল চিবুকে 

 

এখন নগ্ন পুকুর-জল আর সিক্ত আঁচলে সাজবে কোন সে পোড়ামুখি

কোন বেহায়াপানা এখন দুরন্ত পায়ে; ঝংকার মনে রাখবে জল দাপানি

সিক্ত বেহালার ভৈরবী সাজ

 

তুমি চাইলে কতটা মেঘ পথিক হয়ে ওঠে

এক বৃষ্টি-বারান্দা হঠাৎ নদী হয়ে বইলে

অমন সিক্ত বেহালা উজানেতে বাইলে

সব অভিমান শীতের পেয়ালা ভ’রে ওঠে

 

তুমি গাইলেই বাদল, রাগিণীর সুরে বাজে

উদ্যান; পাইনের বাকল আঁচল হয়ে উঠলে

জল কল্লোল সোনালি বৈভব মুছে ফেললে

নকশি হাতে আলোরা ছোটে ভৈরবী সাজে

 

তুমি ভেড়ালে ঢেউ, যাতনা নদী হয়ে নাচে

পাথর জল হরিৎ শরতের কোনো মহাকালে

বৃষ্টি মাখা সফেদ পারাবাত সামনে দাঁড়ালে

আরেকবার অনঘ পরান পাগল হয়ে বাঁচে

সমুদ্র ও শহরিকা

 

মুদ্র এবং শহরিকা  -১

এ শহর কবিতাহীন ইস্পাত আর কাঁচের। হিম আর বরফের। ভীষণ একলা

টেমসের ঢেউয়ে ঢেউয়ে হারায়ে কুল। বার্চ পাইন উইলোদের সংসার। এবেলা

কেড়ে নিয়েছে ঘুম বারটেন্ডারের। অস্তরাগের কোলাহল ডুবতেই ঝাঁক সীগাল

ভুলে গিয়ে তুষার-ওম, দীঘল গ্রহপথ পাড়ি দিতে দিতে পৌছে যায় ক্রান্তিকাল

তবু কবিতার উপাদান নাগরিক হাওয়ায় ওড়ে অনিঃশেষ। সে যে বালিকার শর্ট

স্কাটের ন্যায় ছান্দসিক, পালকবিহীন ইষ্টিমারের খুলে দেয়া বোতাম। লুটপাট

 

 

সমুদ্র এবং শহরিকা  -২

উড়ছে মেঘ ধূলি, মুঠো মুঠো; লেপ্টে যাচ্ছে শরীর। অনিরুদ্ধ মেঘের ঠাস ছায়া

মেখে নেমেছে সমুদ্রবতী। ডানায় ছড়িয়ে বালি, রোদ্দুর ছোঁবে বলে তুমুল মায়া

ফেলে বৃক্ষবিভাস থেকে উড়ছে ধোয়া। রুপোলি বন্যায় আরো কিছু ধুলিজাল

সাইরেনে যাচ্ছে বেজে। সমুদ্র-ফেনায় নিশিকালের সঙ্গমে পড়ে থাকা অনাদিকাল

শঙ্খের গহবরে আদীম চুম্বন খুঁজতে। অজাত অশ্রুপাত। অঙ্গার ও আগুণের

আত্মিক ঘ্রাণ ভুলে জলজ ভ্রমণে তুলে নিয়ে যাচ্ছে গুহ্যসূত্র নিষ্প্রভ ঢেউয়ের

 

সমুদ্র এবং শহরিকা -৩

নিসর্গের ডানা বেয়ে কুয়াশা নামলে, লিরিল বালিকা ড্যাফোডিল পেরুতে পেরুতে

ফেলে যায় তারাগুচ্ছ। বিনির্মিত পথ রেখে শিলাখণ্ডের জমানো খনিজ পেয়ালাতে

পান করে সবুজ আপেলের জন্মান্তরবাদ। দূরে। বহুদূরে ঘাসের সমুদ্রে বেড়ে ওঠা

বাকলহীন বৃক্ষ ঠিক যেন প্রতীক্ষিত যুবক। খুলে যায় গিট। জটিল সমাধানের রিমোট

শহরের আন্তর্জালিক চিঠির বলাকা ফেলে গেলে দীর্ঘশ্বাস, দাঁড়িয়ে ল্যাম্পপোস্ট

ঠিক এক শতাব্দীর পর সমুদ্রের কংক্রিট ঢেউ উড়বে অরন্যার ঝুল বারান্দায়

সমুদ্র এবং শহরিকা  -৪

ক্ল্যাকটন সৈকতের গ্রীবা থেকে মুছে যায় ধুলোপাহাড় বালির প্রাসাদ; বেলাশেষে। আলোছায়া

নেমে যায় উজ্জ্বল নীল গহনে। বৃষ্টি হ্রদ পেরিয়ে যেতে, থোকা থোকা ঝুমকো আলোর ফুল

অন্ধকার গ্রহণকালে মুছে ফ্যালে তীব্র দহন। ব্যাথিত প্রতিধ্বনি খুঁজতে আজো কলরবের দুকুল

অপেক্ষায়, স্থির জলরাশির কাছে। হ্যারিস পাখির বাদামী চোখেই বিষাদ কলতান; মোহ-মায়া

এক শুক্লপক্ষের কাছে গুহ্য চিত্রলিপি জমা রেখে অন্য দিগন্তে লেখাতে চায় নাম। এরপর

রাত্রিদেবীর সব বাতি ঝলসে উঠলে মায়া ভুলে যায় সব ফিনিক্সরা। নিস্তব্ধতা অতঃপর

 

সমুদ্র এবং শহরিকা  -৫

আরও একটি অগ্নি তুষার অপেক্ষার কাল। এ শহর ভিজবে বলে আড়িপাতা গুহাতেই

বুনেছিল প্রার্থনার নকশি করা শিশির। রিজেন্ট লেকের শীতল জলগুচ্ছ প্রত্যাশারই

শেকল বেয়ে উড়োহাওয়ায় ছড়িয়েছে ডানা। সমুদ্র-পথ জেগে ওঠে। বিরাম চিহ্ন এঁকে

স্টারলিংক উষ্ণ-গিরি-পর্বত পেরিয়ে দাঁড়িয়েছে নগর কার্নিভালে। ধুলোস্নাত এ শহর

ভিজবে বলে ডুবসাঁতার নেমছে পথে। পাললিক তটে রকবাঁধা সমুদ্র কল্লোল

সন্তর্পণে সয়ে যাচ্ছে অগ্নিরথের বিরহ বেহালা; কান পেতে শুনছে জলমহল

 

সমুদ্র এবং শহরিকা  - ৬

জাগ্রত রক যেন শৈবালিক পাহাড়, অনাবৃত জলসমগ্র আহ্লাদে আচ্ছাদিত

শঙ্খ-গহ্বরে কান পাতলেই সমুদ্র গর্জন উঠে আসে; স্বাপ্নিক নিরবধিত

ঢেউয়ের প্রপাত তাড়িয়ে দিয়ে যায়, নুড়ি পাথরের মৃত আকাঙ্ক্ষাগুলো

আর কিছু ক্লান্ত আকাশ একে একে পেরিয়ে যায় ফেরার গুঞ্জন শুনে। আলো -

আন্ধকারে এ নগর গুছিয়ে নেয় গণিতের পৃষ্ঠাশীল্প। আর আমরাও বিদায়ীপাঠ

লিখতে লিখতে মায়ার লবণাক্ত ক্লেদ লুকিয়ে রাখি দ্বিপ্রহর। ফেলে যাই হারভেস্টার-মাঠ

নিরুপম প্রার্থনা ছিল 

ভিবাদন এই মেঘ বৃষ্টি জল ধারায় 
এই সমুদ্র স্নান জল কল্লোল এই অসীম নীল 
অথই গভীরে নামা শুধু তোমাকে দেবো বলে 
   কি নিরুপম প্রার্থনা ছিল 
মুঠো খুলে দেখি সবটাই ছাই 
মেঘেরা দল বেঁধে ফিরে গেছে 
তবে কি ডেকে ফিরে গেছে 
   পড়ে আছে হলুদ পত্রাঞ্জলি 
কি অন্ধকার কি মুষল ধারায় ভিজছে অধরা 
তোমাকে দেবো তাই 
রুমাল খুলে দেখি বিবর্ণ বিষণ্ণ পুষ্পাঞ্জলি 
তোমাকে দেবো বলেই 
   কি আরাধনাই না করেছিলাম 

আকাশ হলো কালো কাক 
বৃষ্টি ধুয়ে দিচ্ছে তো দিচ্ছে 
   কিন্তু অন্তর দেয়ালে লেপ্টে থাকা কাজল 
তার কি হবে 
পড়ে থাকা অবশ দেহ তবু প্রচেষ্টা নিরন্তর 
তবু তোমাকে দেবো বলেই 
   নিঃশ্বাস এখনও জীবিত। 

হৃদভূমে জন্ম নেবে কি ইচ্ছার বর্ণমালা
 

কি মমতায় বেঁধে ফেলেছো। 
তবে কি আবার মন পাখি খুঁজবে আলো 
আলোর শেষে। 

একদিন রূপালী বর্ষা ধারা 
নামবে তেপান্তরের বিলে, সে লিলুয়া হাওয়ায় 
কান্ত ছায়ায় রৌদ্র পোড়া গন্ধ মুছে ফেলে 
আবার বুকের টেনে নেবে। বলবে 
নীল মাখ প্রিয় দু’হাতে। বিশ্বস্ত চোখে 
যে ঢেউ জেগে উঠতো গোপনে, সেখানে গভীরে নামো আরো গভীরে। 

রাতভোর গল্প হবে, আবার বিষণ্ণতা কাটিয়ে 
লেকের ধারে আবৃত্তির আয়োজন জুড়ে 
থাকবে নিরুপম প্রার্থনা। 

আবার সুরের পাখি ঝরাবে পালক 
আমি পড়ব ধারাপাত তুমি খুঁজবে অরণ্য চোখে। 
দু’হাতে কুড়াবো রাশি রাশি শিউলি 
ঘাস ফুলে ভরা আঁচল ছেড়ে 
প্রিয় ঘ্রাণ মেখে নিও, আবার 
শারদ সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বলবে 
এই নীপবন এই গড়ের মঠকে স্বাী মেনে। 

কিন্তু মনকে চিনি ভালো করে 
সে কোষে জাগবে কি স্পন্দ 
দীপালী আলোয় হৃদভূমে জন্ম নেবে কি 
ইচ্ছার বর্ণমালা। 

 

 

একদিন ভালোবাসা ছিল 

কদিন জমা ছিল প্রেম বিশাল আটলান্টিকের মত 
           উচ্ছ্বাস ছিল, ছিল কৌতূহল অসীম। 
একদিন কথা হোত গোপনে 
বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে, 
ধ্র“বতারা জ্বলতো চোখের তারায় 
বৃষ্টির উদ্যানে ঘ্রাণ ছিল অবিরাম, 
একদিন পড়তাম ধারাপাত বর্ণমালা 
       ব্যাকরণ আর শ্লোক বেলা। 
একদিন গল্প হত রাত ভোর 
একদিন হেঁটে যাওয়া ছিল সবুজ ঘাসে 
সরষে ক্ষেতে, মটরশুঁটির বনে 
বটের নীচে অতি গ্রীষ্মে অথবা অতি হেমন্তে। 

একদিন অপোয় ছিল ভীষণ সুখ 
প্রাপ্তির টান ছিল চুম্বকের মত, হারানোর ভয় ছিল 
তবে কোন সংশয় করেনি পিছুটান। 

একদিন তোমার জন্য জমানো বরফ ছিল চোখে 
রূপোলী ভোর, সদ্য ঘ্রাণ, পুজোর ফুল 
ধূপ ছিল সন্ধ্যায়, নিশি প্রদীপ, গানের আসর ছিল। 
একদিন তোমার জন্য ফুল ফুটতো বাগানে, প্রজাপতির ডানায় 
খচিত প্রাসাদ ছিল 
আকাশ থাকতো নীল, বলাকার নীল মেখে নিতো ডানায় 
আকাশ মেঘলা হরে বিষণ্ণ মন হয়ে যেত লীন। 
একদিন পাহাড়ের বুকে 
       তারারা জ্বালতো দীপ 
জ্যোৎস্না গলে পড়ত পাদদেশে 
সুগন্ধীর বাতাস ছিল, ঢেউ ছিল বুড়ি ভৈরবে 
একদিন তোমার জন্য কোলাহল ছির স্কুল মাঠে 
অশান্ত দুপুর বেলা, স্কুল ফাকি ছিল 
একদিন ভুল করে চিঠি লিখতাম 
তোমার জন্য ভুল কলে ফেলতাম পাকা খাতায়। 
একদিন ভালোবাসা ছিল 
একদিন ভালোবাসতাম আমি তোমাকে।

mrinal.jpg
মৃণাল বসুচৌধুরী
মৃণাল বসুচৌধুরী
প্রিন্স গোলাম হোসেন শাহ রোড, কলকাতা 

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

কবি মৃণাল বসু চৌধুরী - কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ পাশ করেছেন। কবির প্রথম কবিতার বই 'মগ্ন বেলাভূমি' প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। তারপর 'শহর কলকাতা' ১৯৭০ সালে, 'যেখানে প্রবাদ' ১৯৭২ সালে, 'গুহাচিত্র' ১৯৭৬ সালে, 'এই নাও মেঘ' ১৯৮১ সালে, 'শুধু প্রেম' ১৯৮২ সালে এবং 'ধারাবাহিক অবহেলা'১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৯৯ তে 'কবিতা সংগ্রহ',  ২০০০ সালে প্রকাশিত হয় 'এবার ফেরো সন্ন্যাসে', ২০০১ সালে 'শব্দ নির্মাণ', ২০০২ সালে 'যদি ওড়ে উড়ে যায়', ২০০৩ সালে 'নির্বাচিত কবিতা' এবং 'মায়াবী উত্তাপ', ২০০৪ সালে 'স্বর্গ থেকে নীল পাখি', ২০০৫ এ 'স্বপ্নে সমর্পণে','শূন্যতার ছায়া'', ২০০৭ সালে 'যাদুঘরে শব্দহীন', ২০০৯ সালে 'মায়া বন্ধরের দিকে', ২০১০ এ 'ঘুম উড়ে আসে' ২০১১ তে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে 'বিকল্প চাঁদের কাছে'। 

কবি সম্মান - কবিপত্র, রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র সম্মান, প্রমা পুরস্কার, বিষ্ণু দে পুরস্কার, অরুণ মিত্র পুরস্কার, শীলিন্দ্র, জিগীষা, লোকসখা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অ্যাকাদেমির 'বিভা চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার। বাংলাদেশ টাঙ্গাইল থেকে 'অরণি পুরস্কার, 'কবিতা বাংলা' ঢাকার আন্তর্জাতিক কবি সম্মান। 

তথ্য সংগ্রহঃ মিলনসাগর, কবির সভা। 

এখন না যাই যদি   

 

       ই দীর্ঘ  অসুস্থতা ঘিরে  তোমাদের প্রছন্ন বিদ্রুপ আর   

        অলস মুর্খামি  নিয়ে    তেমন  ভাবিনা

        রঙিন টিশার্ট    গোঁফ   কিম্বা

                   নিখুঁত হিসেবি ঐ  গরদের  শাড়ির বিভ্রম   

                           কোনকিছুই আর ক্লান্ত করছে না এখন  

                                                                                     

                     এখন সামান্য রোদ

                           দু’ ফোঁটা বৃষ্টির জল

                           মাটিগন্ধ মাখানো দুপুর

                     নির্জন খেলার মাঠ   একতারা

                ভাঙা  দূরবীনে     চেনা চেনা দুঃখ নিয়ে

                            অস্পষ্ট সেতুর নীচে  একলা যুবক  

                                 অনন্ত বিষাদ ছুঁয়ে পড়ে থাকা                                                                 মাটির প্রদীপ

                   এ সমস্ত আমি আর দেখেও দেখি না

 

      রাজরক্তে রাঙিয়েছি সব উত্তরীয়                                                    

পরিখার  ওপারে এখন

                        দাঁড়িয়েছে দ্রুতগামী ঘোড়া

            এসো 

          এখন না যাই যদি

                          কবে আর কখন সময়

শীতের হাওয়ায়

 

শীতের হাওয়ায় কাঁপতে কাঁপতে যে মোমবাতিটা  জ্বলছিল...তার পাশেই

পড়েছিলো এলোমেলো জীর্ণ পাণ্ডুলিপি..শব্দহীন স্মৃতির পাহারা ....  

 বসেছিল সতর্ক বেড়াল      যার চোখ মাছ নয় দুধ নয়  আগুনের দিকে

উড়ছিল ময়ূর পালক ...মাটিচাপা বারুদের স্মৃতি .

 স্বপ্নহীন সমাধির   শব্দ ও অক্ষর থেকে উড়ে আসে মুগ্ধ ইহকাল

উড়ে আসে সুগন্ধি অতীত

            বাতাসবাহিত প্রেম

                    নান্দনিক মায়াবী অভ্যাস

উড়ে আসে ছাইমাখা সুখের শরীর

আসে       হাওয়ায় জড়ানো শীত

                    শীতের মোড়কে মেঘ

                    মেঘের আড়ালে স্মৃতি

                    স্মৃতির  উঠোন ঘিরে   

                       আলো    প্রতিবাদী আলো

 সমস্ত দেওয়াল জুড়ে বিদ্রোহী আলোর সঙ্গে

                            নেচে ওঠে ছায়ার শরীর

এতদিন    

 

     ভুল অর্থে প্রদক্ষিণ

            নিরন্তর মুগ্ধ চতুরালি

     যুদ্ধের বদলে সন্ধি

        পাপোষের কাছাকাছি মোম

                    গবেষণা

       এতদিন

           ভুল অর্থে খাঁচা

             অহংকারী            বারুদের বিরুদ্ধে নালিশ

          এতদিন 

             নির্ভুল নিয়মে চাষবাস

                         শস্যাহীন এই বেঁচে থাকা

স্বপ্নঢাকা শাক

             

                 চালচুলো ভেঙে

                 সুখ আর শান্তির সন্ধানে     

                 সকলেই চলে গেছে বন্দরের দিকে

                 নেভা উনুনের  পাশে পড়ে আছে

                                   স্বপ্নঢাকা শাক

                          জরাজীর্ণ    মলিন চাদর

                    ক্রমশ পচনশীল  স্মৃতির শিকড়

                    পড়ে আছে ধর্মহীন প্রতীকী বিষাদ

 

                     ঝুলিভরা সর্বনাশ  নিয়ে

                         কোনদিকে যাবো ঠিক বুঝতে পারি না

                      জাহাজঘাটায় নয় 

                      হয়ত বা দেখা হবে

                                 ভেজাঘাসে

                        জ্যোৎস্নায়

                                        উন্মত্ত জোয়ারে

                         দেখা হবে         প্রতিরোধে

                             নিয়ত স্বাধীন কিছু দীপ্ত উচ্চারণে

                          দেখা হবে

                         অবিরাম হেঁটে যাওয়া     ছিন্নমূল      মানুষের ভিড়ে     

 

পাপ

 

                তুমি নেই

                 চুপি  চুপি পাপ ঢোকে ঘরের ভেতরে

                  কবিতা বা ছবি নয়

                   তহবিল চেটে খায় বর্ণচোরা সাপ

                তুমি নেই

                   এলোমেলো মেঘ জমে ভ্রমরের চোখে

                    পদ্মনাভি থেকে মধু নিয়ে

                   শব্দনদী  জেগে উঠে ভেজায় শিকড়

 

                   তুমি নেই

                    দীর্ঘতম ছায়া নিয়ে

                    মহুয়ামিলন থেকে  উড়ে আসে  নির্বিবাদী হাওয়া

                     প্রতিবাদী শৃগালেরা

                               স্নায়ুহীন যুদ্ধের দামামা ছেড়ে

                      পেতে চায় জমির দখল

                 তুমি নেই

                এ সমস্ত ধুলোবালি  মেখে 

                    অমোঘ অস্ত্রের পাশে 

                     পড়ে থাকা  শান্তিজল দিয়ে

                সযত্নে ভিজিয়ে দিই সাপ আর শব্দের শরীর

শৈশবের চাঁদ

         

        শৈশবের চাঁদ এসে বসে আছে দূরের পাহাড়ে

        কাঠের আগুন জ্বেলে

                অনাবাদী জমির ওপরে

               শুয়ে আছে গর্ভবতী  উদাসীন নারী

 

          শব্দহীন ঘুমের ভেতরে  কখনো আসো না তাই

          এমন নিশ্চুপ জেগে আছি

          জ্যোৎস্নায় জেগে আছে রাত

                         শাঁখের করাত

         এই জীবনের সুতো ধরে 

                    কে কোথায় কখন নাড়ায়

         এ সব বোঝার আগে          এসো

         বিষণ্ণ আড়াল ভেঙে

                 বিন্দু বিন্দু সুখ নিয়ে  

              শেষবার       শুরু করি

                           স্মৃতিময় স্বপ্নবাহী খেলা

যার বুকে অনন্ত আগুন

 

                                     কে কাকে পোড়ায়

                           বিপন্ন আগুনে পোড়ে কাঠ      নাকি              

                                         নীতিহীন  অন্ধ প্ররোচনা

                                 নিঃশব্দে পুড়িয়ে দেয়

                                         সম্পর্ক-বিলাস

                        কাদামাখা বিষয়ী শরীর

                    নিজের আঙুল ধরে হেঁটে যায়   অলীক শ্মশানে                                      

                     ঘোলাজলে  স্নান সেরে  

                ফিরে এসে                                                                                                                                  

                          হিমাগারে জমা রাখে অন্তর্বাস     

                                 নামাবলী                                                                              নির্জীব কবিতা

                  পরশ্রীকাতর কিছু সাপেদের ঠোঁটে

                  সযত্নে মিশিয়ে দেয় সোহাগি গরল                  

                   অক্ষম আক্রোশে

                   ভেঙে দেয়  যা কিছু সুন্দর

                 কে কাকে পোড়ায়

                            অস্থির লাবণ্য ঘিরে

                        যার বুকে  অনন্ত আগুন

                            সে কাউকে পোড়াতে পারে না

পিছুটান  

 

          তোমরা যারা ঘৃণা জমাও বুকে 

          এবং যারা প্রচণ্ড কৌতুকে

           ঝাউদরিয়ায় ছুটছো আপন মনে

 

            তোমরা যারা দাঁড়িয়ে আছো দূরে

            বলছো কথা  প্রাতিষ্ঠানিক সুরে   

                গাইছো মেকি মানবতার গান          

 

             হয়ত জানো বিষাদপুরের কাছে              

             সবার জন্য নৌকা বাঁধা আছে             

             নেই শুধু ঐ মোহের পিছুটান

অবস্থান

 

      প্রথম সারির এক কোণে নাকি  দ্বিতীয় সারির মধ্যমণি

      পছন্দের অবস্থান নিয়ে  দ্বিধা ও দ্বন্ধের মধ্যেই

                                        শব্দ হলো দরোজায়

        পলাশের মালা হাতে

                  কে যেন এগিয়ে এসে ছড়ালো আবির

            কে যেন বাজালো বাঁশি

        ফেরিঘাটে একলা দাঁড়িয়ে

                                কে যেন ডাকলো খুব জোরে

       তোমরা কোথায় সব

        স্বচ্ছতার পরিভাষা নয়

               শিকড় বা পরম্পরা নয়

        অবৈধ দখল নিয়ে

                     এখনও কি যুদ্ধবেশে ক্লান্ত জেগে আছো

        এসো

           দ্যাখো আজ    শবাগারে কি দারুণ বসন্ত নেমেছে

নীলাদ্রী দেব
neladrideb.jpg
নিলাদ্রী দেব
কোচবিহার, পশ্চিমবাংলা

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

traveller2.jpg

এক

চাঁদ প্রতি রাতে ভেঙে ভেঙে যায়।
আমিও।
আর ভাঙে প্রেম।
প্রেম পূর্ণিমায় নাইট বাল্ব জ্বালতে হয় না।

তারা হয়ে জেগে থাকা ভালবাসা
সাদা চাদরের আড়াই ফুট ওপরে ছড়িয়ে থাকে।
ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করি, ওদের কাছেই।

সূর্যের সমান্তরালে আমি না, আমরা।

দুই

দরপুকুরের বুকে
ছেঁড়া আকাশ ডুবে যায়, ভেসে ওঠে।
সে আকাশ দেখতে দেখতে
চোখ বুজে আসে।
কখন যে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসি!
পদ্ম পাতার নিচে কবিতা শোনায় কবি মাছ।
ডুবে থাকি কবিতায়, শ্যাওলা জলে।
জলের ওপর জেগে থাকে খানিকটা হাত
আর না-নেভানো সিগারেট।

সে আমার অস্তিত্বের মত এখনও জ্বলছে।

তিন

ন্দুক থেকে চেরি ফল বেড়িয়ে আসে না। এ ফলের বিনিময়ে বন্দুক কেনাও যায় না। উঁচু উঁচু সশস্ত্র পুতুলগুলো তাই এ ফলের সাথে খুব একটা পরিচিত নয়।
সশস্ত্র পুতুল চেরি খায় না। ওদের কালো পোশাকে চেরি রস দাগ ফেলে না।

যাবার আগে ছোট্ট আয়লান জেনে গেছে- কালো পুতুলের হৃদয় শুকনো রক্তের মতই ঝুরঝুরে।

চার

পেলগুলোকে ভালবাসা ছুঁয়ে যায়। জমাট ভালবাসা লেগে থাকে ওর গায়ে। ঠোঁটে। চোখের পাতায়।এমনকি ভ্রূ'র আলসেমিতে।

আপেলে ছুরি বসালে তাই হয়তো রক্ত ফিনকি দিয়ে ওঠে।
আমরা কেউ কেউ দেখি। কেউ দেখি না।

শুনেছি
মানুষে মানবতার আরোপে আপেল...
আবার আপেলই বিজ্ঞানের ঘরে ছাদ হয়ে দাঁড়িয়ে।

এ আপেলের ভেতরই আমরা সবাই।
আর বাইরে
ছুরি হাতে আমাদের ঘাতক- আমরা।

পাঁচ
 

অচিনপুরে পুণ্যশ্লোক
(পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত স্মরণে)

 

ধূপের ধোঁয়ায় সাজানো বাগান
হাওয়ায় ভাসে জমাট শোক
অচিনপুরের রাস্তা ধ'রে
এগিয়ে গেলেন পুণ্যশ্লোক

অক্ষরেতে জন্মেছিলে
অক্ষরেতে শেষবিদায়


হঠাৎ ক'রে পালিয়ে গেলে
মিলিয়ে গেলে কবিতায়

স্তব্ধ বুকের ওঠানামা
চশমা-কাঁচে কুয়াশা
মিস্ট্রিগুলো জমতে জমতে
তোমার প্রতি ভালবাসা

তোমার খাতা আজও খোলা
ভাসতে থাকে রঘুর শ্লোক
অচিনপুরের রাস্তা ধ'রে
এগিয়ে গেলে, পুণ্যশ্লোক?

ছয়

মেঘলাবেলা ... নিম্নচাপ ...

নিম্নচাপের আভাস ছুঁয়ে
দুপুর হতেই সন্ধ্যে নামে।
আমার হৃদয় বন্দি থাকে
তোমার দে'য়া চিঠির খামে।

জানলা-কাঁচে বৃষ্টিফোঁটা।
জানিনা, আমি চুপ কখন!
স্বপ্নরাজ্য_ মেঘের ভেলা_
ভাসছে দেখি পরিযায়ী মন।

ভাসতে ভাসতে তোমার ছাদে ...
একলা তুমি_ জ্বরের ছাপ_
তোমায় আমায় মিলিয়ে দিল
হালকা হাওয়া. নিম্নচাপ।

জাপটে ধরে স্বপ্নটাকে
সুখের পারদ চড়ায় সুখ।
মেঘ ভেজানো চশমা-কাঁচে
তোমার হৃদয়. তোমার মুখ।

সিপাহী রেজা
সিপাহী রেজা 
প্রিন্স গোলাম হোসেন শাহ রোড, কলকাতা

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

আবছা আলোর ঘোর !!! 

 

কটা লাল চোখ নিয়ে তোর দিকে তাকিয়ে আছি

               তুই ভয় পাস না?

 

আমি পুরুষ !

তোকে কিন্তু কখনোই বলবো না ‘একটু সরে বস, বরং

হুট করে জিজ্ঞেস করতে পারি,

"তোর গায়ে এত কড়া ঘ্রাণ কিসের?”

 

আচ্ছা বাদ দে ওসব! তুই বরং গ্লাসে আরও একটু ঢাল,

বাদামের গায় ভিনেগার, পেঁয়াজ; মরিচের ঝাল!

 

তুই এত নির্বিকার থাকিস কেন?

এখন চোখের ভিতর হয়ে যদি তোকে মস্তিষ্কে নিয়ে যাই!

যদি বেফাঁস কিছু বলে ফেলি, অশ্লীল!

যদি ঘুমুর ছুঁড়ে বলি “নাচ, চুমকি নাচ!”

 

               হা হা হা  যদি আরও বলি,

               তোর তরতর করে কাঁপা শরীর চাই!

               চনমনে, একটু দ্বিধা – একটু তৃষ্ণা

               অর্ধেক প্রেম – অর্ধেক ছলনা

               কড়া খুবই কড়া!!! হা হা হা...

 

আচ্ছা বাদ দে ওসব! তুই বরং আরও একটু বরফকুচি ঢাল,

বাদামের গায় ভিনেগার, পেঁয়াজ; মরিচের ঝাল।

 

কি যেন বলছিলাম... ও... বিড়িটা দে,

একটা সুখটান, একটা চুমো, একটা নিশপিশে হাত,

একটা আঁচড়, একটা, একটা... ধ্যাত মনে পড়ছে না।

 

               তুই হাসছিস!!

               হা হা হা... ওভাবে ভাবিস না!

 

আমি পুরুষ!

নারীকে মোম ভেবে আগুন জ্বালানো আমার স্বভাব!

 

আচ্ছা বাদ দে ওসব!

তুই বরং গ্লাসে আরও একটু ঢাল,

বাদামের গায় ভিনেগার, পেঁয়াজ; মরিচের ঝাল।

chair.jpg

স্পার্ক্‌!

 

কটা অসহ্য দিন,

আরও আছে চ্যাটের বালের অস্থিরতা!

কোথাও কিচ্ছু নেই!

যারা আসে, বুঝায় নানাবিধ ধুনফুন –

তাদের স্রেফ ভরে দিতে ইচ্ছে করে

 

একদম চুপ! রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম! বাইরে বৃষ্টি!

ভিতরে দগদগে ঘা!

পাঁচিলে গজায় সম্ভাবনার নতুন নতুন বাল!

অথচ গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে ঠিক আগের জায়গায়।

 

এতদিনের দেখা ভরপুর যৌবনের শহর

হঠাৎই যদি বলে বসে -

আজ দিতে পারবো না, চলছে মাসিকের দ্বিতীয় দিন!

যদি ঢেকে দেয় জরায়ু; গুঁজে রাখে ন্যাপকিন!

তবে পরিণত এই টাটানো অসুখ,

মৌলিক সুখ কীসে মিটাই?

 

মাথার মধ্যে সাউয়ার সেই উরকি – ধুরকি পেইন...

ইশ একটুর জন্য,

স্রেফ একটুর জন্য ছুটে গেল লাস্ট ট্রেন!

 

কোন এক শালা হয়তো বলেছিল - বাঁচো নয়ত মরো!

উফফ কী অসহ্য! কী নির্মম!

বুকের মধ্যে শুধু ঘাই মেরে যায়;

চুথিয়ার মত হাঁসি হেসেই যায়,

বলেই যায় – আজই বুঝি মরে যাওয়ার দিন,

হেরে যাওয়ার দিন!

নেশাগ্রস্ত চাহিদা 

 

মি বড় বেশী অস্থির!

একটা হুলুস্থুল রকমের প্রেম চাই

তোমার চুল থেকে পায়ের নখে মোড়ানো প্রেম চাই!

কনকনে শীতে আগুনের মত চাই তোমার স্পর্শ!

 

বলতে দ্বিধা নেই-

চাই তোমার সম্পূর্ণ ওম, দিনে কিংবা রাতে

চাই শরীর কাঁটা দিয়ে উঠা, তোমার প্রতিটি চুম্বন।

যতটুকু লিখে প্রকাশ করা যায় না তারও অধিক...

চাই নেশাগ্রস্থ যুবকের মত –

“তুমি” নামক প্যাথিড্রিন।

 

সিনেমার মত একরোখা; উন্মাদ পাগলের মত,

অত বাধা – অত প্রতীক্ষা – অত ভূমিকা নয়

বাচ্চাদের আবদারের মত তোমাকে চাই,

ফুচকার টঙে।

শুধু বিশেষ উৎসবে আয়োজনে-

সাজানো পুতুল রুপে নয়

চাই দৈনন্দিন চলাফেরায় -

রিক্সায় জনবহুল ফুটপাতে।

 

 আল্লাহ্‌র কিরা লাগে! একটা প্রেম চাই-

    অনেকটা তেঁতুলের মত-

    যেন জিব ছোঁয়াতেই শিউরে উঠে অনাবাদি শরীর।

village1.jpg
গৌতম ঘোষ 
বিড়া, উঃ চব্বিশ পরগণা 
gautamghoshbira.jpg
গৌতম ঘোষ

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

জীবন হচ্ছে কবি সম্মেলনের মত।
সবার বোরিং ঘ্যান ঘ্যান শুনে শুনে,
একেবারে শেষে যখন তোমার টার্ন
আসবে তখন দূর দূরান্ত তাকিয়ে দেখবে
তোমারটা শোনার জন্য কেউ নেই...

তর্পন

এক পৃথিবী জমিয়ে রাখা, বুকের ভেতর ঘর কোণে,
প্রেমপুজো এক কঠিন আচার, শান্তি কেবল তর্পনে,
ছিলে, আছো, থাকবে কালও,
দূরত্ব কার কি আটকালো,
তুমিই আমার শ্রেষ্ঠ ঠাকুর, মনের গোপন দর্পণে,
প্রেমপুজো এক কঠিন পুজো, শান্তি কেবল তর্পনে।

******

আসলে, সব মনখারাপ ই যে 'মন ভালো নেই' এমন নয়।
কখনো কখনো মন ভালো থাকলেও 'মনখারাপ' থাকে...

*****

আমার মৃত্যু গচ্ছিত থাক মৃত পাহাড়ের বুকে,
শিরদাঁড়া বেয়ে বিষ নেমে যাক সমাজের ভুলচুকে,
রক্ত দিয়ে হোক লেখা হোক মানুষের নামাবলি,
ক্ষুদিরাম ফের জন্মে উঠুক পৃথিবীর অলি গলি।

"হাসি হাসি পরবো ফাঁসি, দেখবে জগৎবাসি,
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি..."
আজ ক্ষুদিরাম বসুর মৃত্যু দিন ১১ই আগস্ট... আমার তরফ থেকে অজস্র প্রণাম... 
*********

 

আমার মৃত্যুর দিন

ভর করা এক শ্রাবণ, আর মেরুন রঙের শাড়ি,
তোমায় আমি কেবল শুধু দুঃখ দিতে পারি,
এই পৃথিবী আজকে ভুল,
পৌছে দিয়ো গোলাপ ফুল,
স্মরণ-সভায় ভাসছে যখন একলা আমার বাড়ি,
তোমায় দিলাম দুঃখ, তবু দেওয়াটা দরকারি।

********

একা...
জেনো শুধু পথ একা। পথিকেরা তার কিছু নয়...
সব ব্যথা বুকে চেপে, আজীবন বয়ে যেতে হয়।
তবু কিছু মন আছে,
হারাই তাদের কাছে,
নদীদের মনে বাঁচে পলি সঞ্চয়...
একটা জীবন তার কত কিছু নাম,
যে পাখিটা ফিরে গেছে তাকেও দিলাম,
ভালবাসা, অমলিন সুখ...
স্পর্শ করিনি তাকে,
ছুয়ে থাকি কবিতাকে,
সব ব্যথা বুকে চাপা, হৃদয়ে অসুখ...
জেনো শুধু মন একা। সঙ্গীরা তার কেউ নয়...
কিছুতো পাথেয় করে এজীবনে টিকে যেতে হয়।

*****

 

হিংসে করতে করতে,
নদীরাও একদিন পাথর হয়ে যাবে...

*****

 

মন ভিজেছে চোখের জলে; জলতো চোখের মোতি,
প্লাবন আসে আসুক তবু, জল হারালেই ক্ষতি,
হারিয়ে গিয়েও বাঁধবো দানা,
তোমার মনে এক ঠিকানা,
ঘর বেঁধে এক থাকবো সেথায়; দেবেনা সন্মতি?
প্লাবন আসে আসুক শুধু জল হারালেই ক্ষতি।

*****

 

তোমার কোনো দোষ ছিল না আমার কোনো দোষ ছিল,
বুকের ভেতর শব্দ গুলোর ফুটন্ত আফশোষ ছিল,
এই পৃথিবীর হাজার জাত,
এক চালেতেই কিস্তিমাত,
তোমার ইয়াসমিন ছিল আর, আমার শেষে ঘোষ ছিল,
তোমার তাতে দোষ ছিল না আমার তাতে দোষ ছিল।

*****

 

আমাকে ভুলের মত ভেবে, 
সাজানো ফুলের মত ছিঁড়ো, 
অথবা নদীর মত ভেবে, 
সহসা স্রোতের কাছে ফিরো...

*****

 

আসলে, ব্যথাদের ডাকনাম নেই।
নতুন করে দিতে হলে 'তুই' নাম দিতাম....

*****

 

"খুদ সে ভি মিল না সাকো, ইতনা পাস মত হোনা,
ইস্ক তো করনা,মগর দেবদাস মত হোনা...
দেখনা, চাহানা, মাঙ্গনা, ইয়া খো দেনা,
ইয়ে সারে খেল হে, ইসমে উদাস মত হোনা..."

*****

 

তুমি যাচ্ছ প্রেম দূরে দূরদেশে,
ওড়া পাখিদের চেনা মেঘ ঘেঁষে...

*****

 

"সব ফ্যায়সলা হোতে নাহি, সিক্কে উছালকে...

ইয়ে দিলকা মামলা হে, জরা দেখ ভাল কে...."

*****

 

যেদিন তুমি বৃষ্টি দিনের মিষ্টি কোনো সুর....
পাড় ভাঙছে, তখন আমার নদীরা ভরপুর...

*****

 

ভেবেছিলাম জীবন যেন পথ হারা এক গলি,
ভেবেছিলাম মনের কথা তোমায় খুলে বলি,
কিন্তু তোমার চোখের ওপর,
অবাধ্য এক সোলার টোপর,
আমায় তুমি ভাবলে শুধুই পাপড়ি ছেড়া কলি....

*****

 

#জীবনে দূর্দান্ত রকমের কিছু তো আমাকে করতেই হবে,
না হলে যার প্রেমে পড়ে ভাবুক কবি হয়ে গেছি, 
তাকেও কিছু প্রমান করার থাকবে না...।
একটা গোটা জীবনের ইনভেস্টমেন্ট,
এত সহজে লসে রান করানো যাবেনা।
যার জন্য জীবনের বহুমূল্যবান রাতগুলো জেগে পেন কামড়াচ্ছি,
এটলিস্ট তাকে তো আঙুল কামড়াতে বাধ্য করতেই হবে।

#এটা শুধু আমার কাহিনী কি? তোমার নয়?
তুমি চাওনা?
ভিড়ের মধ্যে তোমাকে ঘিরে হাজার লোক থাকুক....
কিন্তু "সে" দূরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে নিজের কপাল কে দোষারোপ করুক?
এমন কিছু করো, যাতে "সে" রোজ তোমার ফেসবুক প্রোফাইলে এসে তোমার কর্মকান্ডের স্ক্রিনসর্টে "তার" মোবাইল ভর্তি করুক।
অতচ এতটুকু সাহসে না কুলাক যে, তোমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে পারে....
*****

 

এজীবনে অজস্র প্রেম নেমে আসুক....
কিছু না কিছু করে ফেলবোই একদিন....

*****

দুঃখ আমার অশেষ,
শুধু পিয়াজ কাটার সময়....

*****

 

তিনটে নদী। এক চালা ঘর। বাড়তি কিছু ধার আর দেনা।
সময়, তো সে। খুবলে খাবেই। অপেক্ষাদের মান রাখেনা।

*****

 

রোপন করেছি ক্ষত!
ফুটে ওঠে সহস্র কবিতার গাছ,
তুমি শুধু জল দিও আনাচ-কানাচ...

*****

..হলদে রঙে ঢেকে যাচ্ছ সূর্য ডোবার দিক।
বুক হাতে ঠায় দাড়িয়ে আছে কিশোরপ্রেমিক...

*****

 

মরে গেলে তাকে এত মানুষ দেখতে এলো।
বেঁচে থাকতে কেউ আসেনি কেন?...

বুকের ওপর ছড়িয়ে থাকা দু'এক বিঘা জমি,
তাকেও দেখি ভাগ করেছে ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমী...

*****

 

মেঘলা দিনের বৃষ্টি শেষে ঝোরো হাওয়ার গান,
বোধহয় কিছু কমলো তোমার বাড়তি অভিমান...

*****

 

যে লোকটা নিজেকেও বিশ্বাস করে না,
সে লোকটাই সত্যিকারের নাস্তিক...

হপ্তা খানেক চোখের জলে ভেজার পরে জ্বর,
আজকে আমার স্মরন-সভা তোমার সয়ম্বর...

*****

 

আমি ফুলকে বলি, ফোটো,
তুমি সাগর হয়ে ওঠো ...
প্রিয় ফুল বলেছে, পারি,
শুধু তোমার সাথে আড়ি।

আমি রাগ করিনি তাতে...

প্রিয় ফুল গিয়েছে ছেয়ে,
আমার উঠোন ভরে; মেয়ে
ওগো ফুলের সুবাস মেখো,
তুমি সময় হলে দেখো....

আমি একলা বারান্দাতে....

*****

 

কোনও তারার মত বাড়ি
পেলে, হারিয়ে যেতে পারি

*****

 

সময় যেন সেতু। আর নির্দ্বিধায় এক লোক-
পার করে নেয় জীবন নদীর সমস্ত দুর্যোগ...

*****

 

মন রেখেছি ডুব সাঁতারে, তলিয়ে গেল খেরোর খাতা,
তুমিই আমার বিপদরেখা, তুমিই আমার পরিত্রাতা.

*****

 

 

সরকারি স্কুল
তুমি হিসেব দেখাও নদী, আমি ভাঙছি চোরাবালি-
আমার বইয়ের পাতা ভরাট কিছু অবাধ্য চুনকালি,
আমার ইস্কুলে এক পাল-
বাড়ে জীবন্ত কঙ্কাল,
তোমার মিড্ডেমিলে পেট ভরে যায়, মগজ থাকে খালি।
~ গৌতম

*****

 

দূর দেশের এক আলো,
তাকে না আটকানোই ভালো...
তাদের চিনতে পারি আজও
যারা দূর থেকে চমকালো...
তারা স্বপ্নে ভাসা তরী,
তারা ক্লান্ত দিগম্বরী,
তারা বুকের ভেতর ফুল ফোটানো
স্বপ্নদেশের পরী...

*****

 

দু'এক মুঠো কল্পনা আর বৃষ্টি মুখর রাত,
তোমার কাছে ফেরত যাওয়ার ব্যর্থ অজুহাত...

*****

 

 

হারানো সবুজ দিন। পিঠে বেঁধে বাড়ি ফেরা মন-
তুমিতেই বেঁচে আছে, তুমিহীনা জীবন-যাপন....

*****

 

খবরের পরে খবরে লেগেছে গুলি,
কবরের পরে কবর জমেছে লাশে-
তুমি ঘুমিয়েছ মূহুর্তে, কোনো ভুলে,
আমি ঘুমিয়েছি ঠিক তার আসে-পাশে...\\

*****

 

জীবন আজও স্পর্শকাতর, তোমার চোখের ঘায়,
শরীর বিহীন মৃত্যু মিছিল বের হল সন্ধ্যায়...

*****

 

হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো আজ ফিকে,
তাকাই, শুধু আজকে তোমার দিকে...

*****

 

কারো প্রশংসা করতে পারাও একটা প্রতিভা।
সবার সে প্রতিভা থাকেনা। আমারও নেই....

*****

 

দু'হাতে ছড়ানো চিঠি।
আলগোছে ফেলে রাখা মন...
মনে মনে ভুলে গেছি নিজেকে কখন...

 

উড়ে গেছে দূরদেশে, নিজেদর বাসভূমি ছেড়ে,
স্মৃতির সারনী থেকে যে পাখিরা গান নিয়ে ফেরে...

*****

 

ভাগ করে নিই চিংড়ি-ইলিশ, ভাগ করে নিই সুরা,
তোমার থেকে অনেক সহজ পুরনো বন্ধুরা...

*****

 

তুমিতো পুরনো ঘুড়ি। 
না জানি সয়েছ কত ঝড়...
আবারো হেরেছি আমি, 
এ মাস শেষে হিসেবের পর...

*****

 

রেখেছি গোপনে ব্যাথা, ওপরে ছেঁয়েছে শতদল,
তুমি তো দেখেছো শুধু, চোখ থেকে গড়িয়েছে জল..

*****

 

খোঁজোনি পাগোল তুমি, 
বোঝোনি মনের কোনও দ্বেশে...
স্রোতে হারা নদী জানে,
অভিমান জলে গেছে ভেসে...

*****

 

কয়েকদিনের ঝড়ের পরে তোমার দিকে ফেরা,
বুকের ভেতর মনগুলো আজ হাজার ক্ষতে চেরা...

*****

 

তোমার কাছে যা শিখেছি আমি,
শব্দ আমার সহজ এবং দামি.....

*****

 

খবর শুধু কবর খোঁড়ে নিজে,
রক্ত আমার কঠিন এবং ভিজে...

*****

 

শহর জুড়ে আলো। আর মোমবাতির আজ শোক।
ছোট্ট বেলার নামতা গুলো আজ হল স্বার্থক...

*****

 

হাজার কথার বৃষ্টি আজও ঝরে,
আমায় তবু ভুলেই যাবে তুমি,
জীবন নামের দারুন মহ‌ৎসবেও,
পায়ের নীচে একলা মরুভূমি....

*****

 

তোমার সাথে আমার মিল খায় না কিছুতেই,
আমি এলোমেলো, অগোছালো কাউকে চেয়েছিলাম....

*****

 

প্রেম...
জীবন আজও হিসেব কষে পাস্কেলে,
লক্ষ ব্যাথা খরচ শুধু মাস গেলে,
আজব প্রেমের থার্মোমিটার,
জিন্দেগী তাও ওয়ান সিটার,
আমরা তবু মন রাখি ব্যাস পাশ-ফেলে...

*****

 

পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি,
অনেক দূরে ফেরত যাওয়ার পর,
লক্ষ তারার ঠাঁই হয়েছে, 
তোমার আমার ভালোবাসার ঘর..

*****

 

যাবেই তুমি বেঁকে, জানি নদীর মত ধায়,
শ্রাবণ তোমার স্পর্শ খোঁজে বুকের কিনাড়ায়,
জীবন বড় দামি
কী দেবো আর আমি,
হারিয়ে যাওয়ার পরেও আজও আকাশ চেনা যায়...

*****

 

মেঘ হারালো পথের হদিশ,
মন হারালো জলে,
তোমার প্রিয় কাব্য শুধু
ভাঙার কথাই বলে...

*****

 

সময় শুধু অপেক্ষা আর সর্বনাশের খেলা,
তোমার ঘরই গড়বে, যেদিন আমার ভাঙার বেলা...

*****

 

ভুলে যাওয়ার পরেও তবু পড়বে মনে যাকে,
আমার প্রিয় শ্রাবণ তাকে বন্ধু বলে ডাকে..

*****

 

ত ভাবি মোহনায় ফিরে যাব, চল...
তত এসে ধরা দেয় সীমাহীন জল....
শুভ রাত্রি..... বন্ধুগণ

*****

 

একটা ছোট ঢেউ এর পরে উঠে দাঁড়ায় একটা টেথিস,
এমন কোনও ঝড় বাদলে তুইও যদি পাল্টে যেতিস...
ভালোই হত সাগর দিয়ে তৈরী হত আরেক পাহাড়,
যাকগে ওসব যা হয়নি থাক, সেসব নিয়ে ভাবছিনা আর...

*****

 

আমি, শ্রাবণের কাছে কান্না লুকিয়ে, মেঘেদের দলে ভিড়ে যাব...
আমি মনের গভীরে লুকিয়েছি যাকে, আজ তার কাছে ফিরে যাব...

*****

 

এ মন চিলেকোঠা। সিড়ি বেয়ে উঠে আসা ভয়।
যে চুমুটি প্রেমে ভরা, সে ওষ্ঠ প্রেমিকার নয়....!

*****

 

আজকে যিনি পাথর সে কাল তারাও হতে পারে,
তোমার ফেলা বীজগুলো ফুল চারাও হতে পারে,
এতই বা কোন অহংকার-
কোন ইতিহাস মানছে হার!
তোমার নিজের শত্রুতো আয়নারাও হতে পারে।
________________ গৌতম

*****

 

ওগো বিনুনি, আমায় চিনুনি,
সস্তা দরে সাজতে গিয়ে, গোলাপ কিনুনি....

*****

 

ফিরিয়ে দেওয়া প্রদীপ জানে আলোর কত দাম,
আমার প্রেমে পিছলে তোমার জীন্দেগী বদনাম...

*****

 

সুর হারানো পাখির মত গান জুড়েছে পথ,
ওদের ডানায় দিলাম বেঁধে আমার ভবিষ্যত...

*****

 

পাথরে গোপন চোট। ফুটপাতে ফেলে আসা ঝড়...
ভাসতে শিখেছি আমি, নোঙরেরা হারাবার পর।

*****

 

মুখ ফেরানো সময় চেনে নামতা পড়া গাছ,
ও বেদুইন, তোমার দেশে পালিয়ে যাব আজ....

*****

 

ঝাউবনে জেগে থাকে জল, 
মনে মনে চারাগাছ পুঁতি..
বাঁধ ভাঙে আবেগের ঢল, 
কথারা এখনো নিশুতি...

*****

 

শরীর একাই আজও, সাথে এক বেমানান মন...
জীবন নাটক তাই, রিয়েসাল আরও কিছুক্ষণ...

*****

 

আমি মেঘ নই কোনও রোদ্দুর,
আমি ঝড় শেষ কোনও গান নই...
আমি মন নই কোনও মন্দির,
আমি চিরতর অভিমান নই...

আমি সুখ নই কোনও সৌখিন,
আমি দুখ নই কোনও বন্দীর...
আমি ভোগ নই কোনও রোগ নই,
আমি ভাগ নই কোনও সন্ধির...

 

*****

 

সমুদ্র, স্রোতে মেশে আজও, নুড়ি বয়ে খরস্রোতায়,
সবকিছু খুঁজে পাই শুধু, নিজেকেই খুঁজে পাওয়া দায়...

*****

 

নিঃশ্বাস চাই,
একমুঠো নিঃশ্বাস....
আর অনেকটা বেঁচে থাকা....

*****

 

কাগজে মুড়িয়ে রাখা জীবনের যাবতীয় ঋণ,
ফিরিয়ে দিলাম সবই; আজ ঘরে ফেরবার দিন..

*****

 

অজস্র জল আর, ভেসে যাওয়া একলা জাহাজে..
তোমাদের গান আজও, হৃদয়ে বাঁশির মত বাজে..

*****

 

আমার কোন উত্তর নেই আর,
প্রশ্ন আছে হাজার মেঘে ঢেকে....
ফিরিয়ে দেওয়া বে'বাক হাওয়া জানে,
ঝড় উঠেছিল কোন অচিন পুর থেকে....

*****

 

আঁচলে লুকানো ঋণ, আলগছে পুঁতে রাখা চিঠি...
তোমার ঠিকানা আর খুঁজে দিতে পারেনা পাখিটি...

*****

 

চিঠির গভীরে ক্ষত, উপরে লেখা তার নাম,
তুমি যে দিয়েছ প্রেম, বিনিময়ে ফুরিয়ে এলাম...

*****

 

দেখি তোমার দিকে ফিরে
আজ রাস্তা অনেকদূরের..
দুপুর, কাটে আকাশ গুনে
মন ভেজানো রোদ্দুরের...

চোখ একলা হবে আরও,
মন একলা হবে মনে...
দেখি অনেক ভিড়েও একা
মেঘ, হাজার আপন জনের...

 

*****

 

বলবো বলবো ভাবি,কিন্তু বলতে পারছি কোথায়?
মনের কথা বনের ভেতর মিলছে খরস্রোতায়...

*****

 

বুকের ওপর ট্রোপোস্ফিয়ার,
তোমার দেওয়া মোমবাতি, আর-
দু'এক কলি গান।
মেলানকলি আলগা স্রোতে,
পেরিয়ে যাওয়া বসন্ততে,
জমছে অভিমান।

*****

 

ঋণ

জল ছুঁয়েছে লক্ষে আমার,
সাবধানীদের পক্ষে আমার,
কার কাঁধে দিই হাত-

আকাশ ঢাকে পলকা তুলোয়,
বাতাস এসে কান্না ভুলোয়,
অজস্র সংঘাত।

বৃষ্টি আসে মিষ্টি দিনে,
বান্ধবীদের শ্যাম্পু কিনে,
ব্যাপক কাটে দিন-

তন্দ্রা এসে স্পর্শ ঢাকে,
কার হাতে আজ দিই, তোমাকে-
একাত্তরের ঋণ।
______________ 

*****

 

প্রথম প্রেম; এবং শেষ

একটা দিন, ভাবতে দাও। ভাবতে দাও, একটা রাত।
সেই সেবার, দারুন জ্বর। দারুন জ্বর, ব্যাপক শীত।
খুব রঙিন, চোখের ভুল। চোখের ভুল, সে সাক্ষাৎ।
একটা দিন, বাল্য কাল। বাল্য কাল, চু-কিতকিত।

সেই সেটাই, প্রথম প্রেম। প্রথম প্রেম, এবং শেষ।
স্কুল কামাই, বর্ষা খুব। বর্ষা খুব, দারুন জ্বর।
খুব নালিশ, তোমার মা'র। তোমার মা'র, আর্জি পেশ।
ক্লাস নাইন, আজ তোমার। আজ তোমার, সয়ম্বর।

একটা দিন, ভাবছি তাও। ভাবছি তাও, ফিরবে রাত।
আজ বুঝি, সেটাই ঠিক। সেটাই ঠিক, চোখের ভুল।
একটা দান, তোমার মা'র। তোমার মা'র, কিস্তিমাত।
ভাবছিলাম, ফুটবে ঠিক। ফুটলো ঠিক, বিয়ের ফুল।

সেই আমার, প্রথম প্রেম। প্রথম প্রেম, এবং শেষ।
আজ একাই, সঙ্গিহীন। সঙ্গিহীন, থাকছি বেশ।
__________________ গৌতম

*****

 


তোমাকে চিঠিতে জানিয়েছি আগে, আমাদের পরিনাম;
বাসি ফুল গুলো শুকিয়ে গিয়েছে, ভুলে গেছে কত দাম!

ইতিহাস হয়ে পিপিলিকা গুলি, বুকের মধ্যে ধায়,
এজীবন পুড়ে যবনিকা যত, হিংসার কথা বলে।
দাবানল হয়ে পুড়ে গেছে সেতু, আমাজন আঙিনায়।
মিশরের বালি মিশে যায় শেষে নীল নদীদের জলে।

এরপর ফিরি। এভাবে ফেরার সত্যিই মানে নেই।
ভুলের বাগানে ফুটে ওঠা কলি আর কোনও গানে নেই।


এখানে দালান বাড়ি। এখানে শীতল কোনো দেশে ;
এখানে একলা হওয়া বায়বীয় তাপ এসে মেশে।

যে কোনো ফাগুন হাওয়া, এখানে আগুন হয়ে জ্বলে।
এখানে কথার ক্ষণে, এখানে সেনার কোনো শিরে,
কপালে চন্দন আঁকে, ধর্মশাসক রূপি পীরে।
যে কোনো সবুজ পাতা, মিশে যায় জ্বালানির দলে।

যে কোনও মায়ের রাতে, ঢেকে যায় অজস্র তারা।
এখানে কান্নাদেরও কাজ নেই ; নিভে যাওয়া ছাড়া।


এও যে মুক্তি ; বুকের পাথরে সীমাহীন দাগ রেখে।
ফিরে আসি ফের বনানীর দিকে, বদ্ধ আগোল থেকে।

তারপর ফের জানালার গায়ে, শ্যাওলারা দেয় উঁকি।
নিভে আসে যত প্রদীপের ঘ্রাণ ; নিভে আসে গোলাবাড়ি...
মুক্তির ভারে কাতর, তবুও বেঁচে আছি এই টুকি,
অস্তরাগের স্তিমিত আলোতে, আমি ভেসে যেতে পারি।

ভেসে গিয়ে ফের, বেঁচে উঠি কোনো কবিদের কবিতায় ;
এ মুক্তির চেয়ে বড়ো ছিল যেটা - জন্ম নেওয়ার দায়...


সকাল হলেই, ব্যাপক আওয়াজ। চা দোকানি। পেপার বালা।
তোমার কাছে ফেরত যাওয়ার, অপেক্ষা আর, ফুলের মালা।

কিনতে পারি যা যা লাগে, চিনতে পারি ঊষার আলোয়।
যা গেছে যাক; নতুন কিছুর, নেই আশা নেই, ফেরত পাবার...
কেটে গেছে অনেক গুলোই; কেটেও যাবে ভালোয় ভালোয়
বাকি গুলোও, আনতে পোশাক, আনতে ওষুধ, আনতে খাবার।

এমন করেই দিন চলে যায়, রাত চলে যায় ; যায় কী আদেউ?
চুপ করে মেঘ দাঁড়ায় এসে, রাত ঘনালেই, বাড়ির ছাদেও!


মন ভাল নেই। বিরক্তি রাত। কিন্তু ভুলের পশমিনা চাই।
দূরের কোনো দেশ কে নিয়েই, ক্ষুরের ধারে গল্প সাজাই।

তার চে' সহজ কাব্যি করা, তার চে' সহজ রাত কাটানো...
চোখ খুলে ভোর। ক্লান্ত বাতাস। একটু দূরেই ভোরের আজান।
একলা হতে লোক লাগেনা; বাঁচতে হলে রাস্তা জানো।
ভোরের দিকেই গান ভিখারি, হালকা সুরের বেহাগ বাজান।

বেরিয়ে পড়ি, দু'চার কথায়, গল্প শোনায় রবীন্দ্রনাথ...
এমন করে কেটেই যাচ্ছে, বেঁচে থাকার দু'একটা রাত।

*****

 

এ এক কঠিন দিন, পিঠ পেতে সয়ে নিই ঘা,
এসময়ে শিরদাঁড়া বাঁকা, এসময় মাথা তোলে না...

*****

 

সাজানো তোড়ার মত,
ফুঁ দিয়ে ওড়ার মত,
কপালে উঠেছো তুমি,
বেহায়া ফোঁড়ার মত.....

মুখ খুলে দে লাগুক হাওয়া, বুক খুলে তার গন্ধ নে...
কেমন যেন আটকে আছে, অদৃশ্য এক বন্ধনে...

*****

 

যে নদী ফুলের কাছে মেনে নিলো হার,
তাকে ছুঁই অনুভবে দুঃখ ধোয়ার।
একাকি নাউ-এর মত, বুকে তুলে হাল-
ভেঙে যায় ভেঙে যায় লক্ষ দোয়ার।

তবুও স্বপ্ন বাঁধি বাসি আঙিনায়,
তবুও ফুলের রাজি নদী ছুঁতে চায়।
কখনো এলিয়ে দিয়ে, লতা পাতা ডাল-
হবে কী সময় ওগো, আলতো ছোয়ার?

হবে সে সময় বলো সত্যি কখন?
সাজাবে বাসর দিয়ে লতা পাতা বন,
গোধুলি আকাশ হবে নীল থেকে লাল-
বেদনা ভুলিয়ে দিয়ে আনবে জোয়ার।

ফিরবে ফুলের কাছে আজ নয় কাল,
এ নদী আপন ভোলা প্রেমের কাঙাল।

*****

 

দলছুট মেঘ নিজের খাতায় লিখিয়ে নিচ্ছে নাম,
আমি আবার নতুন করেই, বৈরাগী হলাম...
আমি আবার পূবের দিকে ভেসেই যাচ্ছি আর..
একান্তে ফের দীক্ষা নিচ্ছি নতুন দেবতার...

*****

 

মুখ বুঝে নেয় স্পর্শ প্রাচীন, বুক বুঝে নেয় ফন্দিকে,
আমরা কেবল কথার ফাঁকে, বাঁচাই জবানবন্দিকে...
ফেরার পরেও আকাশ হারায়,
পশ্চিমি মেঘ ঘনিয়ে দাঁড়ায়,
তোমার কাছে ফিরতে হবে, রাস্তা বলো কোনদিকে?

*****

 

আকাশে একলা মেঘ। বুক ছুঁয়ে বেচে থাকে স্টেথো...
যে দেশে পালিয়ে গেলি, আমাকে নিয়েও যাওয়া যেতো...

*****

 

কথা দিই, আসবোনা কোনোদিনও ফিরে,
যদি তবু ভেসে উঠি স্মৃতিদের ভিড়ে,
পাগল রাখাল নই,
ক্লান্ত সাগর হই,
আমাকে ডুবিয়ে দিয়ো পাড় ভাঙা তীরে...।

_________ গৌতম

*****

 

আসল সময় অবাধ্য খুব, দু'চোখ জুড়ে কান্নারে...
একলা থাকা তানপুরাটাও হারিয়ে যাওয়া গান নারে..

*****

 

চেতনা খুঁজেছে অশরীরি স্পর্শ
চলতে থাকা সমাজের অভিধানে৷
পালটে গেছে বেশ কিছু নববর্ষ,
পাল্টায়নি তবু চেতনার মানে৷৷

*****

 

সময় শিশুর মত। জানে না সে, ভুল তার কিসে!
তেষট্টি নেমে আসে, আজ এই একলা তেইসে...

*****

 

অনেক ভালোবাসতে পারি তোমায়,
ভালোবাসা কম হয় না দিলে...
তবু তুমি আমার নামের পাশেই
আদর করে দুঃখ লিখেছিলে...

*****

 

অল্প আগুন, তবু পুড়ে যায় সমস্ত রাত,
আমাকে আত্মীয় করো ওগো জলপ্রপাত...

*****

 

সেতু...

হাওয়ায় প্রদীপ ওড়ে,
গন্ধে ভাসে লক্ষ আলোর ফুল...
অজস্র কুড়ুল --
লুকানো থাকে,
এখানে, ওখানে,
যদিও তারা জানে,
কথা রাখা বলে কাকে...
তবুও দোরে দোরে
পাতা থাকে ফাঁসিকাঠ, পাঠাদের হেতু--
এখনো অদৃশ্যমমান অজস্র সেতু....

*****

 

 

জ্বলা নেভা আলো, স্থির হয় কখনও, আবশ্যিক...
নির্বাক রাতের মায়ারা আমাকে কল্পতরু দিক...!

*****

 

জ্যোৎস্না মেখে দাড়িয়ে আছে একলা থাকা রাতও,
তুমিও তাকে দেখবে যদি এবার দু'চোখ পাতো....
দেখতে পেলে? পেলে কি তুমি? কাছে কিংবা দূরে...
এই দেখে নাও ছরিয়ে দিলুম মনের সমুদ্দুরে..

*****

 

জয়ি নই তবু আজও মানিনি তো হার,
এর থেকে বেশি কিছু আসে না আমার....

চেষ্টা করিলাম আপ্রান, কিন্তু হলোই না....

*****

 

যেখানে অভিনয় থামে, সেখানেই নেমে আসে শীত,
অজান্তেই বড় হয়ে ওঠে, আমাদের বিরহ সংগীত...

*****

 

ফেরবার পথ নেই কোনও,
নেই কোনও ভেরবার দল।
প্রকট নিদ্রায় শুয়ে, আসমুদ্র এ হিমাচল...

*****

 

সে এক প্রেমের দেশ, হাত ছুঁতে নেমে আসে তারা।
এখানে বেঁচে থাকে কেবল, স্বাধীনচেতারা...

*****

 

ভাল্লাগেনা তৃষ্ণা আমার ঝাল লাগেনা বেণী..
তোমার দেশে আজো আমি অচ্ছুত এক শ্রেনি...

*****

মনে ছুঁয়ে থাক মন্দির আর কোণ ছুঁয়ে থাক স্পর্শ,
তোমার কাছে ফিরতে পারাই আমার নববর্ষ...

*****

 

ভিড়ের মধ্যে অনেক চেনা, তবুও মন পোশাক খোঁজে,
তোমার মত এমন কে আর আমার কঠিন কাব্য বোঝে..

*****

 

হাওয়ায় পেয়েছি খুঁজে নিজের হারিয়ে যাওয়া নাম,
আহা, এ কোন কালবৈশাখীর দেশে এলাম...

ভেবেছে হারিয়ে যাবে, তবু তার পর সে
দেখে ফের বেঁচে থাকে, সব নববর্ষে...

*****

অনেক দূরে তাকিয়ে দেখি, তারা...
বৃষ্টি নামায় অজস্র মাস্তুলে...
আমার বাড়ির ছোট্ট গোলাপ চারা,
তোমায় খোঁজে, একান্তে, পথ ভুলে...

*****

 

মনখারাপ।
কেউ দাঁড়াক..
আজ এসে,
জানলাটায়...
একলা চাঁদ,
রাজপ্রাসাদ...
সুর বিহিন, 
রাতকাটায়....

*****

 

মৃত্যু' আসলে একটি দু'অক্ষরের উপন্যাস...

*****

 

সে এক স্মৃতির মত,
একদিন ভুলে যাবে গানও..
তুমি তার ডাকনাম জানো..!

*****

 

যে পাখির উড়ে যাওয়া বারণ, 
বলো তার ডানার কী দায়!
বারবার চলে গেছে চিঠি, ভুল ঠিকানায়...

*****

 

ছোট্ট চায়ের দোকান। আর, না পড়তে পাওয়া পাতা...
দেখতে দেখতে কেমন যেন শুকোচ্ছে কলকাতা..

*****

 

পাঁচ জনেতে দুইপা দোলায় একটা ছোট বেঞ্চিতে...
কারোর মাথায় হেয়ারব্রেন্ড তো কারো মাথায় লাল ফিতে...
দেখেই ব্যাপক ইচ্ছে করে,
ছোট্ট বেলার এই শহরে,
হঠাৎ করেই হারিয়ে যেতে ঘোরেঞ্চু আর কীতকীতে...

*****

 

সূর্য

নিখুঁত শিল্পী তিনি
আলোর আধার,
দায়ভার দিই তাকে
জগৎ বাঁধার।

চাঁদ

চিক চিক আলো ছায়া
সারা বাড়ি ময়,
সে আমার ভালোবাসা
আমি তার নয়।

তারা

দূরে কোনো পরীদের 
ফুলের প্রাসাদ,
হৃদয় প্রকোষ্ঠে তার
সঙ্গিনী চাঁদ।

 

*****

 

কেমন আছো ব্যস্ত শহর,
রঙ বেরঙে ইটের ভাষায়?
কেমন আছো তপ্ত দুপুর,
শুকিয়ে যাওয়া ভালবাসায়?

কেমন আছো রাত প্রহরি,
ভোরের আলো, স্নিগ্ধ হাওয়ায়?
কেমন আছো দিগম্বরী,
চাওয়ার কাছে ফুরিয়ে যাওয়ায়?

কেমন আছো?*****

 

আদতে প্রেমিক নই, সবই তার ভেবে নেওয়া ভুল,
যাকে তুমি মোহ ভাবো, সে নেহাতই মোমের পুতুল...

*****

 

আসলে সবটা পিছোল, পথ বলে কিচ্ছুটি নেই...
কেননা হেরে যাওয়া যায় খুব অল্প দিনেই...

*****

 

আসলে ফেরার পথে ফুটে আছে অজস্র ফুল,
তুমি তাকে ছায়া বলো, আমি বলি গুণের মাসুল...

*****

 

এখনো বানানে ভুল, এখনো কবিতা জুড়ে ক্ষত.. 
কিছুই গড়েনা তবু নিজেকে ভেঙেছি অবিরত...

*****

 

এখনো 
ক্ষুধার্ত মন, বুক জুরে বালিয়ারি বাঁধ,
ক্রমেই বাড়ছে ক্ষতে, ভ্রমের প্রাসাদ...

*****

আসলে তো দুঃখী নই, বুক জুরে খা খা মরুভূমি,
আমার শবের পাশে সেদিন দাঁড়াবে এসে তুমি...

*****

 

আমি হিন্দু নই, মুসলিম নই, নই বৌদ্ধ, শিখ,
ঈশ্বর এসে আজকে আমায় মানব ধর্ম দিক...

*****

 

মন চলে যায় সুদূর নীলে, দিন চলে যায় কেঁদে..
মেঘ চলে যায় একলা একাই, বিচ্ছেদে বিচ্ছেদে...

*****

 

আসলে অপেক্ষা করো, বুকে তার ক্ষত হবে ফের.. 
এনদী ভাঙনের দিকে, এ পৃথিবী যন্ত্রণা দের....

*****

 

কতক রয়েছে দূরে, কতক বা কাছ থেকে ছোঁয়..
এ জীবন অবাধ্য গান, বেঁধেছি পলকা সুতোয়...

*****

 

আসলে মিথ্যে নদী, কুয়াশায় মাঝিদের দল,
পার হওয়া যাবে না এভাবে, পাড়ে ফিরে চল...

*****

 

যেহেতু ভুলে গেছে স্রোতও,
একই নৌকায় করে, 
সবাইকে চলে যেতে হত...!

*****

 

সমস্ত কিছুই খুব দামি...
কেননা, বেঁচে আছি আমি.

*****

 

আষাঢ়ের মেঘ এসে ফাগুনের শেষ হাওয়া ঢাকে,
নিজেকে পেয়েছি খুঁজে তোমাকে হারাবার ফাঁকে...

*****

 

এ বুকে ওঠে ব্যথা হৃদয়ে কাঁপনে,
সে ব্যথা বেঁচে থাকে জীবনযাপনে...

*****

 

এ হাওয়া ভিনদেশী, এ হাওয়া বেদুইন ঝড়,
এ মন নদীই খোঁজে তোমাকে হারাবার পর..

*****

 

কখন জানিনা ঢেউ-এ ভেসে গেছে ক্লান্ত চোখের কোন,
ভালোবাসা ছিলো দাবানল হয়ে, এখন সংক্রমন...

*****

 

স্মৃতিদের ও পা থাকে, গান থাকে দু'চার কলিও,
আমরা সলিড'ই ছিলাম, এখন ক্ষয়ে ক্ষয়ে জলিয়...

*****

 

যতবার ভাঙে প্রান্তর,
আমি ততবার ফিরে আসি,
এখনো বোঝোনি নদীটির নাম, প্রিয়তম বানভাসি...

যতবার ওঠে রোদ্দুর,
আমি ততবার গাই গান,
এখনো মানোনি পাখিটির নাম, চিরতর অভিমান...

আমায় যদি চিন্তে পারো অনেক তারার ভিড়ে,
জন্মালে ফের তোমার কাছেই আসবো আমি ফিরে..

*****

 

আমায় তুমি পর করেছো,
নতুন ইটের ঘর করেছো,
রাগ করিনি আমি,
আমিও তোমায় পর করেছি,
পথের ধুলোয় ঘর করেছি,
ইটের চেয়ে দামি....

*****

 

কত রং রেখেছি গোপনে,
একান্তে, অসমাপ্ত মনে....

*****

 

নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি..

একটা শিশু এক এক করে সবার থেকে শেখে,
আমরা তবু ভাগ হয়ে যাই প্রত্যেকে প্রত্যেকে..

*****

 

আমার বুকে তেপান্তরের বীজ রয়েছে পোঁতা,
তাই নদীটা একলা হয়েও ভীষন খরস্রোতা..

*****

এমন করেই
বদলে যাবে দিন,
এমন করেই 
বদলে যাবে পাড়া,
এমনই এক 
বিশাল গাছের নীচে
ফুটে উঠবে 
হাজার হাজার চারা..

*****

 

দাগের মতই জলের রেখা বুকের ভেতর বাড়ে,
কালও ছিলাম আজও আছি কালও অন্ধকারে
থাকবো আমি রাখবে তুমি থাকবো ততদিনও,
তোমার আঁধার সরলে আমায় নতুন করে চিনো..

*****

 

ছড়া ৫
বাঘা বিড়াল

গিন্নি মারেন বিড়াল ছানা,
লকড়ি দিয়ে খুব জোরে,
হুলো বিড়াল ফন্দি আটে
কি দেবে তার উত্তরে,

শেষ মেশ এক ফন্দি আসে,
বন্দি ঘরের জানলাতে,
একটা বাঘের ছাল রয়েছে,
পাশের বাড়ির আলনাতে,

দামড়া বেড়াল চামড়া ছেড়ে,
গায়ে বাঘের ছাল পড়ে,
বললো এসে মুচকি হেসে,
সামনে আস্ত কাল পড়ে।

*****

 

ছড়া ১
মাটি ঘুমোয় না!

আকাশ ঘুমোয় মাটির ভেতর,
মাটি কোথায় মা,
সে কি তবে জেগেই থাকে,
কোথাও ঘুমোয় না?

মা বলেছে জানি না রে,
বলতে পারি কি,
আমিও তাকে সারাজীবন
জাগতে দেখেছি!

*****

 

ছড়া ২
ভোট এসেছে!

অনেক কদিন ক্ষুধায় ছিলাম,
পেট ভরেনি, মাগো
আজকে শুনি বস্তা বস্তা 
চাল দিয়েছে, জাগো..

এবার ওঠো ভাত খেয়ে নাও,
আসবে খুশির দিনও,
আসছে পুজোয় মাগো তুমি
নতুন শাড়ি কিনো..

আর দিয়েছে কিরিং কিরিং,
আর দিয়েছে জুতো,
নগেনরা তো ঘরও পাবে,
রাস্তা ঘাটে শুতো..

মা বলেছে ঢের বকেছিস,
এবার তবে ঘুমো,
এখন অনেক কিছুই দেবে,
দেবেও টাটা সুমো..

জানিস কিসের কিরিং কিরিং,
জানিস কিসের জুতো,
ওসব কথায় কান দিতে নেই
ভোট হাতাবার ছুঁতো...

*****

 

জেনো, অন্ধকারেও আলো,
লুকিয়ে ছিলো, আজকে ছিলো,
থাকবে কিন্তু কালও...
*****

.

যদি, একলা একাই হাসো,
জেনো কাছেই থাক বা দূরে, তাকে
অনেক ভালোবাসো।

*****

 

যদি, একলা কাটে রাত,
জেনো অপেক্ষাতে জেগেই আছে,
সহস্র প্রভাত।

*****

 

যদি, মেঘলা করে মন,
ভেবেই নিও দূরে কোথাও
কাঁদছে আপনজন!
*****

.

 

যদি, বৃষ্টি আসে কাঁদো।
তোমার সাথে ভিজবে তোমার,
পাশের বাড়ির ছাদও।

*****

 

আমার মনে ফাগুন তো নেই। রং চেনে কী আহাম্মকে?
আমার হয়েও আদর দিও তোমার দেশের বসন্তকে...

*****

হ্যাপ্পি হোলি

হামার বাড়ি তেতুল তলা
উহার বাড়ির পাশে,
মনে মুর লাগছে দোলা
আইজগে ফাগুন মাসে৷

কাইলকে জুলির হ্যাপ্পি হোলি
রঙ মাইখবে কত,
দফায় দফায় লাইন পরে
রেশন দুকান মত৷

হামার রঙ-ই মাইখবে জুলি
বুল্লে দিছে মুরে,
কাল বিকেলে কইরবে দেখা
মদনমোহনপুরে৷

হামিই জুলির একাই প্রেমিক
যতই লাইন থাক্কে,
বে কইরলে করবো উরেই
বুল্লে দিছি মাক্কে৷

জুলি হামার সোন্টা মনা
নরম পানা মন,
তাইতো হামি পয়শা ঝেরে
গিফ্ট করিছি ফোন৷

*****

উপায় ছিল হাজার, শুধু পথ চিনিনি তাই,
তোমার আমার বাড়ির দিকের রাস্তা আলাদাই...

*****

রাতপ্রহরী
----------
রাতের শেষে রাত প্রহরী ভাবে,
আর একটু পরে সকাল হয়ে যাবে,
রাত প্রহরী ভাবে।

সকাল হবে সূর্য ওঠার সাথে,
সকাল হবে সন্ধ্যে নামা রাতে,
সকাল হবে সকল পাড়া গাঁ'তে,
মিষ্টি মেয়ে ভৈরবী গান গা'বে,
রাত প্রহরী ভাবে।

দোকান পসার জুটবে এসে হাটে,
পায়রাতে ধান খুঁটবে এসে মাঠে,
একটু পরে তিনটে উনোষাটে,
সকাল হয়ে যাবে-
রাত প্রহরী ভাবে।

পাখির দলে বাঁধবে এসে জুটি,
চায়ের সাথে ভিজবে যে পাউরুটি,
একটু পরে মিলবে তবে ছুটি,
আর এক নতুন দিনের দেখা পাবে,
রাত প্রহরী ভাবে।

সকাল হবে সকল পাড়ায় পাড়ায়,
বিদায় দেবে হাজার তারায় তারায়,
ফুটবে রে ফুল সকল ফুলের চাড়ায়,
তার দুটো চোখ একটু বিরাম পাবে,
রাত প্রহরী ভাবে।

 

 

কই!
বল্লেনা তো সই!
আমি যদি অনেক দূরের রাতের তারা হই!
কেমন হবে তবে?

তুমি আমায় খুঁজবে তখন
তোমার অনুভবে?

কই!
বল্লেনা তো সই!
বল্লেনা তো কথা?
এ কেমন তোমার চুপটি থাকা ক্লান্ত নীরবতা!

কই!
বল্লেনা তো সই!
বল্লে না তো কিছু?
আমি তবে চলেই যাবো আলোর পিছু পিছু।

আজকে মনের সঙ্গী তো নেই, ব্যাপক অবসর,
তোমার দিকে উড়িয়ে দিচ্ছে আমার দিকের ঝড়।
গোপন ব্যাথা লুকোই কোথায়,
ভাঙছে পলি খরস্রোতায়,
ঘিরছে আকাশ বিষন্নতায়
অনেক দিনের পর...
আজকে মনের সঙ্গী তো নেই, দারুণ অবসর।

*****

 

খরস্রোতায় গভীর হচ্ছে মেঘ,
বুকের কাছের সমস্ত ঢেউ নোনা,
হতেও পারে হঠাৎ যাচ্ছি থেমে,
কিন্তু তোমায় হারাতে পারবোনা...

*****

 

খেলার পুতুল...

খেলার পুতুল আমি যে তোর
বর-বউ তুই খেললি,
স্বাদ মিটেছে যেই না
ওমনি ছুঁড়ে ফেললি!

আবার যখন ইচ্ছে হবে
সাজাবি তুই বর,
আমি আবার সবটা ভুলে
বাঁধব খেলাঘর!

তখন যে তুই যত্ন করে 
স্বপ্ন দিবি ছুঁড়ে,
আঘাত পাব জেনেও তবু
থাকব না আর দূরে!

আমি মাতি আনন্দেতে
তবুও মনে ভয়,
কখন জানি এ খেলাঘর
ভাঙতে ইচ্ছা হয়!

আমি যে তোর খেলার পুতুল
সাজাস নিজের হাতে,
ভাঙা-গড়াই চলতে থাকে
অবুঝ ধারাপাতে!
*****

 

 

অনেক বছর পর আজ আবার বাসের পেছনের সিটে বসে সেইদিনটির কথা মনে পড়ছে...
সেই সেইদিনটির কথা...

যেদিন আলাপ হয়েছিলো কলেজ ফিরতি সাবানার সাথে,
সাবানা আমার বাড়ি থেকে মাত্র কয়েকটা বাড়ি দূরে থাকতো... অথচ তার আগে কোনোদিন দেখিনি তাকে,
সত্যিই দেখিনি তাকে... 
দেখলে অনেক দিন আগেই প্রেমে পড়তাম নিশ্চই ! 
যাইহোক,
তারপর প্রেম হয়... 
ঘনিষ্ঠতা বাড়ে...
সে প্রেম শুধুই বাসেই আটকে থাকেনি,
বাস থেকে পার্ক, পার্ক থেকে সিনেমাহল, সিনেমাহল থেকে কোচিংক্লাস, 
ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র, সিজেনিং ভাইরাসের মত...

দুজনেই প্রচন্ড ধার্মিক ছিলাম,
তাই প্রতি রোববারে চার্চে থাকতাম সারাটাদিন, 
চার্চ যাওয়ার পথে একটা মসজিদ আর একটা মন্দির পড়তো...
মন্দিরে বা মসজিদে যাই নি কোনোদিন... তার ও কারণ ছিল, 
আমার মন্দির আর সাবানার মসজিদ পছন্দ ছিলো না...
আসলে প্রচন্ড ধার্মিক ছিলাম তো...

তার পর আর কি? 
এক গোধুলিতে সব ভুল ভেঙে গেলো, আমার কিংবা সাবানার কিংবা দুজনের...

দুই বাড়িতে সব জানতে পারলো... তার পর খুনো খুনি... 
তবে কোনো মানুষের নয়.. দুটো মনুষত্বের...

আমরা দুজোনেই প্রচন্ড ধার্মিক ছিলাম
তাই বাকি অধার্মিক পৃথিবীকে আর বোঝাতে যাই নি...

সেদিনের পর থেকে আমাদের ধর্মকে বিলিয়ে দিয়েছি আমার মন্দির আর ওদের মসজিদের হাতে....

তবে আজও একটা অতৃপ্ত ধর্ম নিয়ে বেঁচে আছি, মানব ধর্ম...
*****

 

পুরনো ঋণের মত বাজো,
লুকনো দিনের মত বাজো,
বেহাগী সুরের কাছে এসে,
হৃদয়ে বীণের মত বাজো..

সহসা ভোরের মত তুমি,
ভেজানো দোরের মত খোলা,
দমকা হাওয়ার কাছে এসে, 
বৃষ্টি -টিনের মত বাজো...

*****

আমিও একার কাছে একা, দু'হাতে বুকের কাছে দৃঢ়,
আমাকে মোমের মত এসে, বেহায়া মেঘের মত ঘিরো...

*****

যে পথে ছড়ানো ফুল কাঁটা হয়ে আছে,
সে পথে ফিরে যাব তারাদের কাছে...

*****

 

হৃদয়ে চোরাবালি ভাঙছে বাঁধ,
কে আর পুষে রাখে লুকানো ঢেউ...
তোমাকে ছুঁতে চাওয়া চোখের সাধ,
ফাগুন ধরা দেয় দূর থেকেও...

*****

তোমাকে চাওয়ার মত ভুলে,
নিজেকে পাওয়ার কাছে ক্ষমা..
যদিও বিষের মত লাগে,
যাকিছু হৃদয়ে আছে জমা...

*****

গির্জার গেটে পড়ে পড়ে শুকোচ্ছে
একগোছা লাল গোলাপের পাপড়ি,
তবুও আকাশ পাঠাচ্ছে ম্রিয়মান ভালোবাসার নৈবেদ্য...
এখনো ছয় ঋতু নিয়ম করে আসে,
দিন এবং রাতের সময়ও স্থির..

বিকেলের ফুচকাওয়ালা ফিরে ফিরে তাকায়,
যেন সাহস হয় না তার, কিছু বলার..
ওরো তো হৃদয় আছে,
স্রোত আসে, পলিজমে, বালিয়াড়ি মিশে যায় দিগন্তে...
যাক গে, একাই বসে আছি মন খারাপ করে...

এখনো ইতিহাস ঘাটলে, 
পাওয়া যায়--
জীবাশ্মের হৃদয়ে ছোপ ছোপ হলুদের দাগ...

আর তুমি আমাকে ভুলে যেতে বলো!

*****

 

একটুকরো কাগজে, 
কবেই মন রেখে দিয়েছিলাম...

নরম স্পর্শ গুলো, যাদের আঁচ তুমিও পাওনি কোনোদিন,
ও সব জানে,
গোপনে বেড়ে ওঠা ঝড় কিংবা সহসা নিভে যাওয়া হারিকেনের আলো,
ও সবার খবর জানে...

সে কখন নৌকা হয়ে ভেসে গেছে জলে,
তাকে বারণ করিনি আমিও...
শুধু বলেছি ফিরে এসো...

*****

কখন খাবার পাতে অজান্তে ফুরিয়েছে নুন,
আমাকে প্রদীপ ভেবো কিংবা গ্যাসের বেলুন...

*****

আরেকটা পুরনো কবিতা...

তোমাকে খুঁজেছি ছায়াপথ হয়ে
চাঁদের পাহাড় ধরে
তোমাকে খুঁজেছি ধূসর সকালে
ঘুম ঘুম ঘুম ভোরে

তোমাকে খুঁজেছি অট্টালিকায়
অলি গলি কুঁড়ে ঘরে
তোমাকে খুঁজেছি কৃষ্ণচূড়ায়
গুন গুন গুন স্বরে

তোমাকে খুঁজেছি স্বপ্ন শয়নে
আকাশের নীলিমায়
তোমাকে খুঁজেছি দিগন্ত জোড়া
পৃথিবীর কিনারায়

তোমাকে খুঁজেছি দুকুল হারানো
একলা নদীর চড়ে
তোমাকে খুঁজেছি প্রবল বরষে
কিংবা ঘূর্ণিঝড়ে

তোমাকে খুঁজেছি সুদুর আকাশে
দিশেহারা পাখি হয়ে
তোমাকে খুঁজেছি রোদে তাপে পুড়ে
বৃষ্টিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে

তোমাকে খুঁজেছি একলা দুপুরে
অবসন্নতা ঘিরে
তোমাকে খুঁজেছি ব্যস্ত মিছিলে
মানুষের ভীড়ে ভীড়ে....

*****

 

 

পুরনো কবিতা...

বসন্ত লেগে আছে খামে,
সেই চিঠি আজও তোর নামে
পাঠিয়েছি কই ?

সারা পথে চিক চিক বালি,
কেন শেষ বেলা খালি খালি,
জল থৈ থৈ?

মরুভূমি জলে গেছে ভিজে,
ভিজেছি আমিও নিজে নিজে,
জানলোনা কেউ,

মোহনার চোরাবালি স্রোতে,
মিশে গেছে শেষ হতে হতে,
সাগরের ঢেউ...

*****

 

রাত ছুঁতে চায় চোখের পাতা, চাঁদ ছুঁতে চায় হাতে,
এমন সময় কে আর তোমার থাকছে অপেক্ষাতে..

*****

পরতের পর পরত জমে জমে
স্পষ্ট যখন চোখের জলের দাগ....
তোমার দুঃখ তোমারই থেকে যাবে
কেউ নেবেনা হৃদয়রেখার ভাগ....

 

বিছানার কোণে চাঁদ লেগে আছে,
দাগ লেগে আছে গায়..
এখনো আমার বুকের বালিশে
ভালোবাসা হেঁটে যায়...
*****

 

একাকী ভ্রমের মত, কত ভুল ফুল হয়ে ওরে,
এখনো আদিখ্যেতা জাগে, আমাদের শহরে শহরে...

*****

দু-এক কুচি ঠোঁটের কাছে ফুটেও উটছে খই,
আমি যেমন ছিলাম আজও তেমন অবাধ্যই..

*****

সময় বড় দূর্বিসহ, সময় বড় ভয়,
কার কাছে আর হার মেনেছে এমন অবক্ষয়..
তাও যদি যাই তোমার দেশে,
বাঁধভাঙা সব ক্লান্তি শেষে,
দারুণতর নদীর কাছে হারিয়ে যেতে হয়...

*****

হাত ধুয়েছ অনেক বছর তুমি
হাতের সাথে ধুয়েও নিও মন
পায়ের নীচের বিস্তারিত ভূমি
তোমার পায়েই করবো সমর্পণ...

*****

 

 

যেভাবে যাবে না ধরা; তাকে সেভাবে কী ধরে রাখা যায়?
যে আঁধার আলোর অধিক, তাকে খুঁজে পাওয়া দায়....!

*****

তুমিই আমার আগুন কিংবা হারানো মৌমাছি,
এমন দিনেও বৃষ্টি নিয়ে একলা জেগে আছি,
সাজিয়ে রাখা হুলে,
আলতো করে ছুঁলে,
অল্পদিনেও এক এক সময় এক পৃথিবী বাঁচি...

*****

 

অঝরে ঝরে যায় ঝড়-বাদল, কেননা মেঘে মেঘে কাটছে দিন,
কুয়াশা ফিরে গেছে লাস্ট ট্রেনে, তবুও আমি একা সঙ্গিহীন...

*****

আমাকে ভুলে যাও পাখির দল,
আমিও ছুটি চাই মেঘের কোন,
আমার ভেতর জেগে মফঃস্বল,
আমার বুকের মাঝে সম্মোহন..
আমার গল্পটা কেউ লিখুক,
আমার নামেও খুব কাব্য হোক,
আমার পরিচিতি ক্লান্ত মুখ,
আমার পরিচিতি পথের লোক..
যা কিছু বলে গেছি সবটা ভুল,
বাতাসে কেউ ফের রং লাগাক,
আমাকে ফিরিওনা নদীর কূল,
আমার নামেই সব বেদনা থাক..

বুকের ওপর চাপ আর মুখের ওপর ঢেউ,
বনের মত হতেও পারে মনের মত কেউ..!

*****

স্বপ্নেরা প্রান হীন হয়ে পড়ছে,
মিষ্টতা ঘ্রান হীন হয়ে পড়ছে ,
নদীরা বান হীন হয়ে পড়ছে ,
সুরেরা গান হীন হয়ে পড়ছে ,
মানুষ মান হীন হয়ে পড়ছে ,
আর,
সম্পর্ক টান হীন হয়ে পড়ছে ....

শব্দেরা জড় হত নিজেকে বোঝাবো বলে ফের,
ভালোবাসা চোরা বালি। এ পৃথিবী শান্তনাদের..

*****

তোর ঠিকানায় প্রেম পাঠাবো
অনেক দিনের সখ্ ছিলো৷

তাই পোষ্ট খামে বড় বড় করে লিখেছিলাম---
টু, অন্তরের অন্তরা
ঠিকানায় - মনজুরে৷

অার চিঠি ভরিয়েছিলাম
অামার সব মানে সব কিছু দিয়ে৷

পৌছুই নি জানিস !

বাড়ি যখন চিঠি ফেরত ত্রলো , পিত্তন অামাকে বুঝিয়েছিলো,
'মন' কারো ঠিকানা হয়না, অার নাম কারো 'অন্তরের অন্তরা' হয় না৷৷

সত্যি বলতে সেদিন অামার ভুল ভেঙেছিলো৷

তবু অাজ ত্ত তোর ঠিকানার পরিবর্তন হয়নি৷ 
তোর নাম 'অন্তরের অন্তরা' অার তোর ঠিকানা 'অামার মনজুরে' ৷৷

তাতে যদি অামার প্রেমপত্র বারবার ফেরত অাসে
তবু ত্ত....................৷৷

*****

আমি ফুটিয়ে খাচ্ছি হাওয়া,
আমি গুটিয়ে যাচ্ছি মেঘে,
আমি হাটতে হাটতে হাপিয়ে উটছি একান্তে উদ্বেগে...
আমি একলা থাকছি একা,
আমি একাই মাখছি আলো,
আমি পাল্টে পাল্টে ভেবেই যাচ্ছি না পাল্টানোই ভালো...
যদি বৃষ্টি নামে, আবার
যদি দৃষ্টি টিষ্টি হারায়,
যদি বলার পরেও, না বলা কথারা বারবার এসে দাড়ায়....
তবে ফিরিয়ে আমাকে দিও,
আমি ভিরিয়ে নিয়েছি তরী,
একাকিত্ব এখনো আমারি, প্রিয়তম... সহচরী...!
*****

 

অনেক মেঘ'ই উড়ছে এদিক ওদিক,
কোন মেঘ আর আমার কথা বলে!
তবুও কোনো দলছুট মেঘ যদি....
ভুল বসত আমায় ডাকে দলে..!
তাই ভেবে রোজ আকাশ পেতে বসি.....

*****

প্রেম মানে,
" এই জানো তোমার নিশ্বাসের শব্দে আমার সারা শরীর শিহরিত হয়...."

*****

আজ বোশেখে বৃষ্টি দিও, কাল বোশেখে ঝড়,
আমার বুকে বাঁধছে দানা তোমার বালুচর...

****

তুমি দিলে দেবো, না দিলে দেবো না, শর্তে
তারা বেচে আছে আজও জীবনের পরিবর্তে...

*****

বুকের কাছে প্রবল কলরব;
আড়াল করে দেখতে গেলাম যেই,
পোড়ে শুধু একান্তে শৈশব,
আমি,তুমি, কোথাও কিছু নেই....

*****

আমাদের সমস্ত কিছু আছে, না থাকার মধ্যে শুধু এই,
মমতাকে দেওয়ার মত, আর কোনো গালাগাল নেই....

*****

মনখারাপ নিয়মিত আসে; ভালোবাসা আকষ্মিক হয়,

যদিও মুঠো খালি, 
তবুওতো সব
আছে, তাই জেগে আছে, 
আজো বিপ্লব...

*****

যাদের মেঘের মত মন,
তারা আমার আপনজন...

*****

যাদের কষ্টে ভেজা চোখ,
তারা দীর্ঘজীবি হোক...

*****

সব শোধ, বাকি নেই,
অবেলার পাখি নেই...

*****

না টিকে থাকার কোনো মানে নেই। ছিলোও না কোনোদিন।
সিনেমার সব শেষ হয়ে গেছে। পরে আছে শুধু লাস্ট সিন।

*****

শীত বলেছে, আজকে তোমায় ছুঁতে,
মন বলেছে, সে সব না হয় থাক....
রোদ বলেছে, উড়িয়ে দিয়ে ফুঁ তে,
ভালোবাসা ! তফাৎ হয়ে যাক.....!

*****

দূরের থেকেই উরে যাচ্ছে ঘুড়ি, 
আমার বাড়ি মেঘের সয়ম্বর,
একলা হাওয়ার দেমাক বড় বেশি,
বৃষ্টি নামাক শীতের দেশের ঝড়.....

*****

 

সময় অবাধ্য, ওরা স্মৃতিটাও মুছে দিতে চায়,
তবু তোমাকে বাঁচিয়ে রাখি কবিতার পাতায় পাতায়...

*****

কোনোদিনও বুঝবে কী কেউ? কে আর নিজের মত বোঁঝে?
কথাগুলো বেদনার মত, লিখেফেলি খাতার কাগজে।

কোনোদিন বুঝেছিলো যে, সে ও কি বুঝেছিল কিছু?
আলো ভেবে চলে গেছি দূরে ছায়া ঘেরা আলেয়ার পিছু।

এখানে পাইন বনে আছি , পরে আছে সব অবসর...
একাকি চুৃড়াটির পাশে কোন দিন বেধে নেব ঘর...

*****

কত বোঝাপড়া, জীবনের মানে
শৈশব জানে, যৌবন জানে;
তবুও জানোতো এখানে সেখানে-
ছড়িয়ে যাচ্ছে তাস...

তার কাছে লেখা কত কিছু কথা,
ধার করে কেনা বাসি মৌনতা,
মন ভিজে যাওয়া বিকেলের কাছে -
ফেলে রাখা ইতিহাস.....!

তবুও জানোতো এখানে ওখানে ছড়িয়ে যাচ্ছে তাস.....

নাব্যতা চীরকালীন। দিকশূন্য পথিকের মত,
সময়ে শুকিয়ে গেছে ঘা, ব্যাথারা আজও অক্ষত...

*****

সহসা বুক কেঁপে ওঠে,
বুক কেঁপে কেঁপে ওঠে গো রাতে...
কবেই শ্মশান হয়ে গেছি,
নিজেকে পোড়াতে পোড়াতে...

*****

ভুলে ভরা স্মৃতি, ভাঙা বিবৃতি,
একঘেয়ে..., উদ্বেগ নেই,
রাতের আকাশে চাঁদ, তারা আছে,
তুমি ছাড়া কোন মেঘ নেই...

কালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে তোতা,
পেনের নীচে মন্ত্রী, সাবক ঢল...
জীবন মানে জীবন্ত সমঝোতা,
লেখার মত হয়না অবিকল.....

*****

যে কথাটাই শুরু। এবং শেষ।
আমার শহর বিতর্কিদের দেশ।

*****

মন ভেঙেছে নদী, আর কাঁধ ভেঙেছে শোক,
আমি এখন নিজের ঘরেও অন্য পাড়ার লোক..

*****

বরফ গলছে, বরফ গলছে খুব,
মুখের দিকে তাকিয়ে আছে হাওয়া..
দিগন্তে এক রাত প্রহরীর মত,
তোমার চুলে আকাশ ছুঁতে চাওয়া..

*****

আকাশ ছুঁবে উত্তুরে কোন মেঘ,
তোমার কাছে গরম চাওয়া শীতে..
এক পশলা দাড়িয়ে আছি আমি,
রোদের পাশে তুষার ঘাটিটিতে...

*****

আজ যা ছিল, বাদবাকি সুখ...
সব ভেসেছে জলে,
তোমার গল্প বলার ছলে.....

*****

যতটা আকাশ আছে
তার চেয়ে ভালোবাসা বড়?
তবে কেন বলেছিলে 
আঙুলে আঙুল চেপে ধরো...
সবটা মিথ্যে জানি ...

*****

বেমালুম গিলে ফেলে যে যার খুন,
পৃথিবীটা আজ শুধু গ্যাস বেলুন...

*****

যে লোকটা মৃতদেহ,
তার কোনও দেশ নেই আর,
রক্তের নদী ভেদ করে চলে যায়
সমস্ত বর্ডার...

*****

ভাবনারা নিছক ভাবনা নয়...
যেহেতু ভাবনারো এক দেশ থাকে,
তাই লুকোনো অভ্যেস থাকে...

সৈন থাকে... বর্ডার থাকে...
সজাক থাকার অর্ডার থাকে।
নইলে হয়তো জঙ্গি হাতে খুন হত...
তারপর হিসেব.. নিকেশ, অংক হত, গুন হত..

না, সৈনরা তো খুন হয় না, শহীদ হয়,
জঙ্গিদেরও ধর্ম একই... সব ভাই ভাই..
কালাম, রফিক, ওহিদ হয়...

আচ্ছা, ওরাই কেন জঙ্গি হবে?
ওদের কী রক্ত স্নানে পূর্ণ হয়?

না.... ওরা গরীব,
ওদের পেটের খিদে চূর্ণ হয়..
অল্প টাকায় যা কাজ পায় তাই করে,
নিজে মরুক ঘরের লোকের পেট ভরে।

বাহ, বেশ ভালো তো..
আচ্ছা যদি এমন হত..
ঠিক জানিনা কেমন হত!
বাদ দাও.... থাক 
রিক্সা চালাক,
কিংবা মাঠে হাল ধরুক,
রাখাল হয়ে বুনো মোষের পাল ধরুক,
যাকগে ওসব, যা ইচ্ছে তাই করুক..

কোথায় যেন ছিলাম?
মানে কোন দেশে?

ছোট্ট বেলার গল্প বলার অভ্যেসে।

ওহ, ভাবনারাও নিছক ভাবনা নয়,
যেহেতু ভাবনাদেরও দেশ থাকে,
তাই অনেক পোশাক, অনেক রঙের ড্রেস থাকে...

কোথাও রঙিন, কোথাও সাদা কালো হয়,
রাত্রি বেলাও অনেক সময় আলো হয়।

কোথায় সে তোর?

মনের ভেতর...
মনের ভেতর মন থাকে, মন্দির থাকে,
সুখ ঘেঁষা এক দারুন নদীর তীর থাকে,
হোক না ছোট, তবুও এক বীর থাকে।

মনের সাথে যুদ্ধ করে, পাল্লা দেয়...

যখন আবার রেশন দোকান মাল না দেয়,
তখন না ঠিক পেট ভরে না,
রাগ করে তাই ভাত খাই নে,
যত্ ক্ষণে বাপ গাল না দেয়...
কী করি বল...

আসলে, ভাবনারা নিছক ভাবনা নয়,
যেহেতু ভাবনাদেরও ঘর থাকে,
তাই নিজের ঘরেও অনেক আপন,
আবার অনেক পর থাকে।

যেমন আমার মাকে,
চিনিস তো তুই তাকে।

ভাই এর বেলা আদর কোরে,
উলের বোনা চাদর কোরে,
দেয় চাপা...

আমার তো সেই খড়কুটো,
ঘরের ভেতর ঘর দুটো,
শীতের ভেতর রাত কাঁপা।

থাক গে সেসব হক কথা,
এখন শুধু মনের সাথে সখ্যতা,
মনই শুধু মনের মত বন্ধু হয়...

আর কেউ কি এই পৃথিবীর বন্ধু নয়?

তা কেন নয়..
কেউ যেন নয়...!
এই বাঁশ ঝাড়, পুকুর পারের শিউলিফুল,
আর... একটা মেয়ের বৃষ্টি ভেজা কানের দুল।

যাক গে সেসব যায় গো বেলা..
জীবন মানে দারুন খেলা,
বিশ্ব ভরা খেলার মাঠ,
একটা মোটে বই পৃথিবী,
কত্ত রকম তার মলাট!

উল্টে দেখো পাল্টে দেখো,
ভাবনাদেরও ঘর থাকে,
এই পৃথিবী গুণের বাজার,
গুণের মনি হাজার হাজার,
সত্যি কারের বাজারে আজ
তাদের ভাবার দর থাকে...

*****

 

একটি মেয়েকে আমি গত জন্মে ভালবাসতাম,
মেয়েটিও আমাকে গত জন্মে ভালবাসতো....
মেয়েটিকে আমি এ জন্মেও ভালবাসি,
মেয়েটি আমাকে এ জন্মেও ভালবাসে....

কিন্তু মেয়েটি এজন্মে বর্ডারের ওপারে জন্মেছে....

আমি দেশদ্রোহী....

*****

 

খাপ ছেড়েছে মনের ভেতর,
চাপ ছেড়েছে বুকে,
তোমার জন্য প্রেম রেখেছি
বন্দুকে বন্দুকে...

*****

বৃষ্টি নেমে আসে দু'কাঁধে তার,
সময় বয়ে চলে ভাঙা সেতার।

মেঘেরা জমে জমে কবিতা হয়,
যা কিছু পুড়ে গেল তা চিতা নয়।

আমারো চোখ দুটো স্বভাবে লাল,
কে কবে জ্বেলে ছিল রঙমশাল।

*****

 

যে পাখিটা গৃহ হারা, যে পাখিটা মন,
যে পাখিটা আকাশেই বেঁধেছে ঠিকানা,
যে পাখিটা মেঘে মেঘে তোলে আলোড়ন,
যে পাখির জুটে যাচ্ছে খাঁচাতেই দানা,

যে পাখিটা মাঠে মাঠে ধান খুঁটে খায়,
যে পাখিটা কথা বলে, বাঁধা নেই যার,
যে পাখিটা সীমাহীন নীলে ভেসে যায়,
যে পাখিটা একা থাকে ছোট সংসার,

যে পাখিটা গান গায়, যে পাখিটা নাচে,
যে পাখিটা পথ ভোলা খুঁজে ফেরে ঘর,
যে পাখিটা জেগে থাকে আনাচে কানাচে,
যে পাখিটা ভালবেসে মনে পোষে জ্বর,

সব পাখি ভাল থাক সব দেশে দেশে,
সীমাহীন আবেগের বুদবুদে ভেসে

*****

 

যত বৃষ্টি ডুবিয়ে দেয় অফুরন্ত গ্রাম,
তত কান্না আজ আমি কেঁদে ফেললাম..

*****

বুক ভর্তি চওড়া ভাষন। নমনীয় শিরা।
আসলে কোনও কাজেই লাগেনা কবিরা।

*****

এখনো রক্ত হিমঘরে দিকে দিকে,
পুড়ছে পুড়ুক তোমার আমার দেশ,
কবেই মরেছে, লাল হয়ে গেছে ফিকে,
আমার খিদেকে লুকোনোই অভ্যেস...
আসলে জীবতো উড়ে আসা এক পাখি,
নিজেকে ছাড়া কিছুই বোঝেনি আর,
অল্প খাবার যা রয়েছে বাদবাকি,
তাদেরও তো আছে অনেক অংশীদার..

*****

কী কী চাই? কত চাই? কী বা তার দাম?
এসব প্রশ্ন গুলো অধুনা , অতীত ;
এখানে পাওয়া যায় খাস্তা বাদাম
দিয়ে মাখানো হৃদয়। খেলে কী ক্ষতি?

আসুন আসুন, নিন দেখে বারবার
দামে আর নামে আছে রকমারি রূপ,
মুচকি পাঁজর ভাজা, টাটকা লিভার,
বারো মেসে শিশুটির রক্তের সুপ...

আহারে দারুন স্বাদ, ফেলে দিয়ে নুন
চেখে যান ফুসফুস, শাসালো নীলয়;
না খেলে যে মিস হবে এত তার গুন,
এহেন আহার ও কী রোজ রোজ হয় ?

সরু মাথা, মোটা ঘিলু, আর যা যা চান,
রক্ত নদীর তীরে..... দিয়েছি দোকান !

*****

 

চিঠি

অস্ত্র বাড়ছে দেশে দেশে সীমাহীন,
অস্রু বাড়ছে বেদনার দিকে দিকে,
ভাঙার গল্প শেষ হলে কোনদিন,
গড়ার কথাটা চিঠিতে জানাবো লিখে..

হাজার মায়ের চোখের জলের নদী,
দিশাহারা উদ্ভ্রান্ত খালি কোলও,
কখনো সহসা জ্ঞান ফিরে আসে যদি,
আমাকে সে কথা চিঠিতে লিখতে বোলো..

কত দিন কোনো ফসলও ফলেনি মাঠে,
কত পুরু আজ হৃদয়ের সীমারেখা,
কত পিপিলিকা শোকের রক্ত চাটে,
সেসব কথাতো চিঠিতে যায় না লেখা..

এখানে যুদ্ধ। খোয়া গেছে কার কী কী?
সে কথা তোমাকে চিঠিতে কী করে লিখি।

*****

 

খনো বলিনি যা কিছু ইচ্ছা করে
এখনো বলিনি দেখবো তোমাকে ছুঁয়ে
এখনো রাত্রি সহসা তুষারে ভরে
এখনো স্বপ্ন একরোখা একগুয়ে

এখনো বুকের পাঁজরে পাঁজরে জ্বর
এখনো রঙীন স্বপ্ন পরীর ডানা
এখনো দুচোখে সন্ধ্যে নামার পর
বেহায়া পিরীতি পথচোরা রাতকানা

এখনো কার্নিশ রোদে পুড়ে পুড়ে লাল
এখনো আগুন ধিকি ধিকি বেড়ে চলে
এখনো কান্না বেঁচে আছে এত কাল
ধামা চাপা দেওয়া বেদনার কোলাহলে

*****

 

ভাগ্যি আমারে যাহা দিইয়াছে ঘটে,
তাহাকেই আমি সুখ মানিয়াছি নিদারুন অকপটে...

*****

এখনও ছোঁয়া যায় আমাকে। ছুঁয়ে তুমি দেখো না তা আর!
বুকের চারপাশে জন্মেছে সারি সারি পাতাবাহার.....।

*****

খাতার ওপর নাকের নোলোক, কাথার ওপর ঝুল,
সারা মেঝেয় বিছিয়ে আছে তোমার কানের দুল,
তুমি আছো অন্য কোথাও,
বুকের ভেতর ক্ষরস্রোতাও,
পাড় ভেঙে আজ একলা নদী রাঙিয়েছে মাস্তুল।

বনের ঘরে মনের কথা, কোনের ঘরে ঝুল,
বারান্দাটা হাতড়ে মরে তোমার খোঁপার ফুল,
দূরে তুমি আপন মনে,
হাসছো বুঝি সন্ধিক্ষণে,
অংকে আমি হয়তো কাঁচা তাই হয়েছে ভুল।

বিষন্নতা আঁকড়ে ধরে একান্তে আঙুল,
চোখের ওপর নাকের নোলোক বুকে কানের দুল...

*****

কথার ভেতর শব্দ অনেক, অন্য গানের সুর...
মেঘের ভেলায় ঘর বেধেছি, উড়ছি অনেক দূর..
ভাবছি কোথাও হারিয়ে যাব,
ইচ্ছে মত রং মেশাবো,
আমার কাছে দেখাও পাবে নতুন রামধনুর...
পাগলা হাওয়া ব্যস্ত ভারি,
নিজের তালে বেশ আনারি,
আর যা কিছু ভাসছে হাওয়ায় উড়ন্ত কর্পূর...
তোমার দিকের আয়ন বায়ু বাষ্প হতে চায়,
আমার লেখা গানের কলি ভাসছে কল্পনায়..
ভাবছি তুমি অসম্ভব'ই,
ভোরের হাওয়ার গল্প সব'ই,
বুকের উপর দিচ্ছে দেখা নতুন সমুদ্দুর,
মেঘের ভেলায় ঘর বেধেছি উড়ছি অনেক দূর...

*****

কত মন্ত্র বিফলে যায়, কত তীর ছুঁয়ে ফেলে তারা,
এ যুদ্ধ কী কী দেয়, গোটা কত মৃত দেহ ছাড়া?

*****

এ জীবন অভিমানি। চলে যায়। রাগ নেই তাও।
আমি মাটিতে মিশে গেলে, জল দেবে রোজ, কথা দাও!

*****

এ পৃথিবী পরাজিতদের। কার নামে লেখা চির জয়?
সময় ফুরিয়ে এলে আলোদেরও নিভে যেতে হয়..

*****

জানালা থেকে শুকিয়ে যাচ্ছে দিন, চুঁইয়ে পরছে কাঠ,
এখানে স্মৃতি বলে কিছু নেই, শুধুই মলাট....

ক্লান্তির দূত,
বড় অদ্ভুত...
শান্তির বাণী কই?
কালো সুতো নিয়ে
কোনো একদিন,
লাল দীঘি পেরোবোই...!
তার পর নয় বিচ্ছেদ হবে....
বিচ্ছেদ হলে হোক..
তুমি তো জানোই 
বরাবরই আমি,
বিচ্ছেদ প্রিয় লোক.....

*****

মোহনা নিঝুম আজ, অপ্রস্তুত ঢেউ,
দূরে কিছু চোরা বালি রাত পাহারায়।
জানি রাখে না কথা, রাখবেনা কেউ,
একা মন ঘিরে আছে তারায় তারায়।
শেষ নৌকা চলে গেছে ঘরে ফেরার,
আর কোনও পথ নেই জলে ও স্থলে।
এমন হাওয়াও নেই, যে একবার
অন্তত একবার থেকে যেতে বলে..!

*****

যারা চাষ করে,
মাঠে বাস করে,
যারা রদ্দুরে পুড়ে ছাই হয়,
যারা আধপেটা খেয়ে বেচে থাকে,
তারা আমার চাস্তো ভাই হয়...

*****

আসমানি মেরুরেখা সহস্র খাঁজ,
এখানে হৃদয় চেনে স্মৃতির কোলাজ..
দীগন্তে মরুভূমি মাঝে দুটো তীর..
সেদিন বন্ধু ছিলাম আজ মুসাফির...
*****

 

যা যা কিছু গোনা গেল, ভালবাসা, বন্ধুত্ব, দিন,
এখনো কথারা এখানে ঠিকানা বিহীন...
পরিখাটা অগোছালো, ঘিরে রাখা সময়ের ঘের,
আবারো সেজে ওঠে যদি, দেখা হবে ফের....
*****

 

এক পৃথিবী অন্ধকারে জাগছো তুমি একলা চাঁদ,
তোমার কাছে বাঁধাই দিলাম যাবতীয় শখ-আহ্লাদ...

*****

জন্মতো হয়, মৃত্যু আসে, সময় কিন্তু একাই হাঁটে;
বিবর্ণতাও বর্ণ খোঁজে লড়াই লড়াই এ তল্লাটে....

*****

ফাগুন পোড়ে আগুন হাসে...
এমন মরণ সবার আসে.....

যে কথাটা অক্ষরে ছোট, ভাবার্থে ঢের,
দেখা হলে সে কথাটা বলে যেও ফের...

*****

ঝোড়ো হাওয়া.....

একপাশে ঝোড়ো হাওয়া, একপাশে শ্রোতা,
মাঝে কিছু অবাধ্য না শোনানো গান;
বুকের গভীর ক্ষত আলগছে পোঁতা,
সারি সারি বসে আছে ফুলের দোকান...

এ দোকানে কে কে আসে? কারা বেঁচে ফুল?
প্রশ্ন অনেক গুলো, উত্তর কোথায়?
এ নদী এখনো একা, একা মাস্তুল,
কথা শুধু ভাঙে গড়ে ক্ষরস্রোতায়...

ফিরে দেখো ডায়েরিতে শ্যাওলার দাগ,
জমে আছে এক কোণে ভুলে যাওয়া নাম;
'ভালোবাসা গুনে বাড়ে, হয় নাকি ভাগ'
যে কথাটা শেষ খামে লিখেছিলাম.....

সময় বদলে গেছে মূহুর্তের সাথে;
বিভেদ এখনো নেই তোমাতে আমাতে..
*****

এযাবৎ কিছু ভালোলাগা ছাড়া কিছুই লিখিনি আমি,
তবু কিছু পাগলামি -
তোমার নামে আরও আরও করে যদি লিখে দিয়ে যাই,
তুমি ভেবে নিও, ছাই...
উড়িয়ে দিও কোনো অবেলায় তুষার ঝড়ের দেশে,
জলের ছদ্মবেশে...
মেঘেদের দলে ভিড়ে যাবো দেখো, ফিরে আসবার হেতু,
এখনো ভালোবাসি যেহেতু....

*****

তোমার কাছে আমার অগাধ ঋণ,
এই যে এখনো ভালো আছি, এতদিন।

*****

দুই দিকে দুটো সীমারেখা,
আবার আরেক মেয়ে 'কেকা'
বাড়িয়েছে হাত...
কাকে দেবো বসন্ত বেলা,
কার নামে দেবো অবহেলা,
বেদনার রাত!
তার চেয়ে একা যদি থাকি,
অচেনা কোনো বৈশাখী,
সঙ্গিনী হয়...
বেশ হবে নতুন কে চেনা,
বিদ্রোহ কেউ করবেনা,
থাকবেনা ভয়।
কই কিছু বলছো না তো, যে-
কেউ কী তোমার মত বোঝে,
পাগলের মন...
আরে নানা, রাগালাম তোমায়
কথা দিয়ে মিছরির বোমায়,
বেশ কিছুক্ষন।
যদি তুমি করো এতে রাগ,
তবে নেবো হৃদয়ের ভাগ-
পথে এগোবার...
তখন বুঝিয়ে দেবো আমি,
ভালোবাসা করে বদনামি-
তুমি কে আমার

*****

 

জেহাদের দেশ থেকে.

আমাদের দেশে ফুলেরা ফোটেনা,
পাখিরা গায় না গান,
আমাদের দেশে না বলা কথারা
করে না তো অভিমান।
আমাদের দেশে আমি তুমি বলে
কোথাও কিচ্ছু নেই,
আমাদের দেশে আমিই আমাতে
তুমি থেকো তোমাতেই।
আমাদের দেশ, জেহাদের দেশ
রক্তে রক্তে সুদ,
আমাদের দেশে ভালো থাকা মানে
গুলি বোমা বারুদ।
আমাদের দেশে ননভেজি সব
শুক্তে ভরে না পেট,
আমাদের দেশ, মাংসের দেশ
কচি, বুড়ো সমেত।

*****

চুপকথারা ঘুমের ভেতর, রূপকথারা জেগে..
ইচ্ছে হলেই হারিয়ে যাবো, দূরন্ত এক মেঘে...
খুঁজবে তুমি হয়তো কোথাও, হয়তো কোথাও দূরে,
কিন্তু শুধু থাকবো সেদিন তোমার হৃদয় জুড়ে...
*****

 

দূরত্ব পরিমেয়। ভালোবাসা এখনো কঠিন...
যতটুকু ভালোথাকা আছে ততটুকু জীবনের দিন....

*****

যে ছেলেটি গান ধরেছে, যে মেয়েটির সুরে,
ওরা দুজন ভিজছে এখন আমার অন্তপুরে...
বৃষ্টি থাকুক আর না থাকুক থাকছে প্রবল ধারা...
এবার বলো তাদের সাথে ভিজতে যাবে কারা?
*****

 

হঠাৎ দেখা নদীর পাশে, হয়নি পরিচয়,
পাড় ভেঙেছে আমার দিকে তোমার দিকে নয়...
*****

 

রাতপ্রহরী
----------
রাতের শেষে রাত প্রহরী ভাবে,
আর একটু পরে সকাল হয়ে যাবে,
রাত প্রহরী ভাবে।

সকাল হবে সূর্য ওঠার সাথে,
সকাল হবে সন্ধ্যে নামা রাতে,
সকাল হবে সকল পাড়া গাঁ'তে,
মিষ্টি মেয়ে ভৈরবী গান গা'বে,
রাত প্রহরী ভাবে।

দোকান পসার জুটবে এসে হাটে,
পায়রাতে ধান খুঁটবে এসে মাঠে,
একটু পরে তিনটে উনোষাটে,
সকাল হয়ে যাবে-
রাত প্রহরী ভাবে।

পাখির দলে বাঁধবে এসে জুটি,
চায়ের সাথে ভিজবে যে পাউরুটি,
একটু পরে মিলবে তবে ছুটি,
আর এক নতুন দিনের দেখা পাবে,
রাত প্রহরী ভাবে।

সকাল হবে সকল পাড়ায় পাড়ায়,
বিদায় দেবে হাজার তারায় তারায়,
ফুটবে রে ফুল সকল ফুলের চাড়ায়,
তার দুটো চোখ একটু বিরাম পাবে,
রাত প্রহরী ভাবে।
*****

চাঁদ ওঠেনা। ফুল ফোটেনা। মেঘ ডাকে না। ওই....
তুই কী আলোর ফুলকি নাকি সত্যিকারের, সই....?

*****

আমার ঠিকানা নেই। ওরা জোর করে বেঁধে ছিল তাই..
এখনো বৃষ্টি এলে আমি, মেঘেদের সাথে ভিজে যাই....

*****

কাকে আর কি কি লিখি,
কত কথা আবেগের দায়...
কলমে জব্দ হয় মন, 
কবিতারা পাতায় পাতায়....

*****

যে শিশুটা মেঘ দেখেছে, খুব পেয়েছে ভয়,
সেই শিশুটা মেঘকে আজও ভাবছে অবক্ষয়....

*****

যেখানে দূরত্ব মানে
মুছে যাওয়া দিন,
সেখানে বসন্ত রাখা কিনে,
এখনো ভেসে যাওয়া আছে
বিরহের দিনে....

*****

আজও পাঠালাম কবিতার হাতে বাঁধ ভাঙা কিছু জল,
শুধু জেনে রেখো চিরদিন আমি চিরদিন দুর্বল...

*****

রাত জেগে লিখে রাখা কবিতার মানে,
আমাকে ভিজিয়ে দেওয়া অশ্রুরা জানে...

*****

আমার কোন উত্তর নেই আর,
প্রশ্ন আছে হাজার মেঘে ঢেকে....
ফিরিয়ে দেওয়া বে'বাক হাওয়া জানে,
ঝড় উঠেছিল কোন অচিন পুর থেকে....

*****

ধাক্কা খেতে খেতে একদিন তুমিও
সর্ব শক্তিমানের কাছে হার মেনে নেবে,
তুমিও বিশ্বাস করতে শুরু করবে ভগবান আছে,
সময় তোমার রাশি ফলের সাথে সমান্তরালে ঢেউ পেরোবে...
সমস্ত নক্ষত্র, রাহু, কেতু দের
টান অনুভব করবে......
এক অদ্ভুত মেল বন্ধন...
তুমি বার বার মেনে নেবে ভগবান আছে....
ভগবান ছিল,
ভগবান থাকবে....
ঠিক আমার মতই.....

*****

একটা সময়ের পর আর কোনো শূন্যতা থাকে না,
শূন্যেরা পরিণত হয় অসীমে... 
যেমন করে একটা নীড় হারা পাখি একটা আকাশ খুঁজে পায়,
ঠিক তেমন করে....
আমাকে মুক্তি দিও না , আরো আরো শূন্যতা দাও....
আমি আর বিরহের কবিতা লিখিনা....

বলবো বলবো ভাবি,কিন্তু বলতে পারছি কোথায়?
মনের কথা বনের ভেতর মিলছে খরস্রোতায়...

 

সবকিছু ক্ষণিকের। রাগ ঘৃণা অশান্তি ক্লেশ।
জীবন খাতার মত। মুড়ে দিলে সবটাই শেষ...

 


আমার পেরিয়ে যাচ্ছে বেলা,
তোমার বাড়তি অবহেলা,
জীবন মানে মাঝ দরিয়ায়,
ভাঙা গড়ার খেলা...

আমার সন্ধ্যা নামা দিনে,
তুমি ভেনিলা আইস্ক্রিমে,
ভালোবাসা আটকে আছে
ভোডাফোনের সিমে....

তুমি এসি বাসের সিটে,
আমার জীবন পার্কস্ট্রিটে,
রথের চাকায় পিষছে খা

*****

মন ভাল নেই। বিরক্তি রাত। কিন্তু ভুলের পশমিনা চাই।
দূরের কোনো দেশ কে নিয়েই, ক্ষুরের ধারে গল্প সাজাই।

তার চে' সহজ কাব্যি করা, তার চে' সহজ রাত কাটানো...
চোখ খুলে ভোর। ক্লান্ত বাতাস। একটু দূরেই ভোরের আজান।
একলা হতে লোক লাগেনা; বাঁচতে হলে রাস্তা জানো।
ভোরের দিকেই গান ভিখারি, হালকা সুরের বেহাগ বাজান।

বেরিয়ে পড়ি, দু'চার কথায়, গল্প শোনায় রবীন্দ্রনাথ...
এমন করে কেটেই যাচ্ছে, বেঁচে থাকার দু'একটা রাত।

*****

মুখ বুঝে নেয় স্পর্শ প্রাচীন, বুক বুঝে নেয় ফন্দিকে,
আমরা কেবল কথার ফাঁকে, বাঁচাই জবানবন্দিকে...
ফেরার পরেও আকাশ হারায়,
পশ্চিমি মেঘ ঘনিয়ে দাঁড়ায়,
তোমার কাছে ফিরতে হবে, রাস্তা বলো কোনদিকে?

*****

সরকারি স্কুল
তুমি হিসেব দেখাও নদী, আমি ভাঙছি চোরাবালি-
আমার বইয়ের পাতা ভরাট কিছু অবাধ্য চুনকালি,
আমার ইস্কুলে এক পাল-
বাড়ে জীবন্ত কঙ্কাল,
তোমার মিড্ডেমিলে পেট ভরে যায়, মগজ থাকে খালি

রেহান কৌশিক
rehan.jpg
রেহান কৌশিক
পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বাংলা 

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

রেহান কোশিকের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর। সাংবাদিক হিসাবে জীবন শুরু করলেও নিজস্ব লেখার তাগিদেই সেই কাজ থেকে সরে এসেছেন। পনেরো বছর বয়েসে প্রথম কবিতা ছাপা হয় কলকাতা থেকে প্রকাশিতই 'পড়াশুনো' পত্রিকায়। তারপর থেকেই কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে অজস্র লিটিল ম্যাগাজিনে। আনন্দবাজার, দেশ, সানন্দা, গণশক্তি, নবকল্লোল, নন্দন প্রভৃতি পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছে লেখা। কবিতা ছাড়াও গানের কথা, ছোটগল্প, চলচ্চিত্রের কাহিনী ও সংলাপ লিখে থাকেন। 

ধুলোখেলা

 

ধুয়ে যায় মাটি-রং, ভেসে চলে পুতুলের খড়...

স্রোতে কি বিষাদগান? নৃত্যশীল কালের মর্মর?

কী কী তবে ধরে রাখবে ছিন্ন হওয়া শ্বাসের গোপন

কীভাবে জীবনী গ্রন্থ এঁকে রাখবে আত্মনিমজ্জন?

 

লিখে চলে শূন্য হাত মাত্রা বেঁধে শব্দে যথাযথ

পাতাভর্তি জন্ম-মৃত্যু, মুহূর্ত বাঁধানো সব পথও।

এ লেখা ধুলোর দেহ, এই ধুলো তাবৎ স্পন্দন

স্পর্শ রাখো অন্ধ হয়ে ফিরে পাবে প্রিয় বন্ধুজন।

 

এ লেখার আয়ু নেই, সুতরাং আদি-অন্তহীন

দেহময় ধুলোবিন্দু, ধুলোর শরীরে থাকা ঋণ।

মাটিধুলো, আলোধুলো, ধুলো আকাশের

ধুলোয় দৃশ্য-অদৃশ্য ঘূর্ণমান সমস্ত শূন্যের।

 

ধুলো মাখে আলোছায়া, ধুলো ওড়ে সুগন্ধী ডানায়

লেখা হচ্ছি তুমি-আমি ভ্রাম্যমাণ ধুলোর ভাষায়...

 

 (প্রবেশক)

 

ধুলোখেলা : ১

 

ছেঁড়া পালকের গায়ে জ্বলে থাকা হলুদাভ আলো

যজ্ঞের আগুন হয়ে জাগিয়ে রেখেছে ফাঁকা মাঠ।

মন্ত্র পড়বে নির্জনতা? স্বাহা স্বাহা শব্দে অন্ধকার

আত্মঘাতী হবে বলে শূন্যদেশ দিয়েছে পাখশাট।

 

অন্ধকার পোড়া ছাই মিশে যাচ্ছে ধুলোর ভিতর

বাড়ে নাকি উর্বরতা হননের আশ্চর্য সুন্দরে?

ধুলোর ধমনি জুড়ে বেজে ওঠে বীজের ছলাৎ

জ্ঞান আর হৃদয়ের চাকা হাঁটে মাটির পাঁজরে।

 

উড়ানই তো আদিপাখি, এ শূন্যের প্রকৃত পালক

এ মাটি সন্ততি তার, সময়ের একাগ্র সাধক...

 

 

ধুলোখেলা : ২

 

কে আমায় ছুঁয়ে দিল টেনে নিয়ে দূরে ও নিবিড়ে

মুঠো মুঠো জন্মঘ্রাণ ছড়িয়ে দিল রক্তশিবিরে!

 

প্রবীন রক্তের দাগ বেয়ে উঠে আসছে সেই মুখ

আলোময় তার মুখ জেগে ওঠে অনন্তের গানে!

সে তখনও দেহমাত্র, প্রণয় শেখেনি, তীব্র ক্ষুধা

হাড়ে নিয়ে ছুটে যেত বনে-বনে হরিণ সন্ধানে...

 

সে চিনেছে, চিনিয়েছে খিদের পরেই প্রিয় হয়

ফুল। ফুল জানে স্পর্শ, অশরীরী লাবণ্য-বিস্ময়...

 

সেই স্পর্শ জাগে কেন! দেবী কি ফিরেছে পুনর্বার?

এই শুকনো করোটিতে জ্বেলে দিয়ে হোমের আগুন

ফেরাবে স্মৃতিতে আজ? আনন্দে শিকার করো, দেবী,

এই তো পেতেছি পিঠ, ছুঁড়ে মারো পাথুরে হারপুন...

 

এই যত রক্তপাত, আর্তনাদ...  সব জেনো, গান...

নিজের নি:স্ব-সংলাপ ঢেলে দিচ্ছি তোমার দু'পায়ে

এই মৃত্যু, মৃত্যু নয়, শুভজন্ম, জীবিত আখ্যান...

ধুলোখেলা : ৩

 

ন্মশব্দ উঠে আসে আর খুলে যায় স্রোতে-স্রোতে

পাথরের স্তব্ধমুখ, অচল সময় দেয় লাফ

নিজের শরীর জুড়ে যত রেখা, রক্তপাত, ছাই

সুবিস্তৃত আকাশের আলো হয়ে ঝরে পড়ে নীচে!

কে নেবে যাপন দাগ পেতে রেখে মুগ্ধ করতল?

আমি তো কখনও তাকে কাছে ডেকে দিইনি বৃষ্টির

মোহন-আশ্রয় আর কখনও বলিনি আলো নাও,

অংশ হয়ে ওঠো তুমি! তোমার হাত কি কৃপাময়

ছড়াবে আবির তবু? ডেকে নেবে পুণ্যের পাঁজরে?

 

এ শরীর নৌকো হয়ে দুলে ওঠে ঘূর্ণি-জলে খুব।

village1.jpg

ধুলোখেলা : ৪

 

ন্ম, হাত দাও, ধরি। উড়ছে আজ তুলোবীজ হয়ে

সমস্ত আমার, সব কেন চলে যাচ্ছে ফেলে রেখে!

 

অদূরে ছড়ানো খড়্গ, বলি-রক্ত মেখে এই দেহ

পড়ে আছে অন্ধকারে, মিশে যাচ্ছে অনন্ত আঁধারে।

দ্যাখো, ছিন্ন দেহরেখা থেকে লাফিয়ে উঠছে বিদ্যুৎ

চিৎকারে কাঁপিয়ে দিচ্ছে হাওয়া মেঘ, আকাশমিনার!

 

হাত দাও জন্ম, এসো, ফিরিয়ে নাও বিচ্ছেদ থেকে।

 

 

ধুলোখেলা : ৫

 

নে হয় ভেবেছিলে সমস্ত খোঁজ বিফলে গেল

জন্ম-মৃত্যু মৃত্যু-জন্ম চক্রাকার অন্বেষণ শেষে

পড়ে থাকবে শূন্যমাঠ, ছাই-সাদা অশরীরী ঋতু

নিভে যাবে পূর্বাপর আলোছায়া একা নিরুদ্দেশে!

 

এই তো পেয়েছি দ্যাখো, তোমার আগুন জুড়ে নাচ

ঘুঙুরের শব্দে শব্দে খুলে গেছে অপার সন্ধান।

পেয়েছি মেঘের দেশে তোমার সজল পদচ্ছাপ

দাগের ভিতর আজও বেজে ওঠে অলৌকিক টান...

 

যতই আড়াল রাখো মুখরতা বিগত জন্মের,

উঠে আসে নৃত্যরত শব্দ যত আত্ম-খননের...

ধুলোখেলা : ৬

 

ব্দ নয়। রং নয়। শুধু স্থির, গতির গভীরে

যেন সে অন্ধবালক নিশ্চুপ থাকে মগ্ন চৈতন্যে!

পারো না এভাবে তুমি আলো-অন্ধকার ছেড়ে

কাছে এসে ছুঁয়ে যেতে, কথাহীন স্পর্শ রেখে যেতে?

 

আমি তো চেয়েছি শুধু দৃশ্যের বাইরে দাঁড়িয়ে একা

ডেকে নেব শব্দহীন নিরাকার শঙেখর মুদ্রায়

আর তুমি সব ডানা, সমস্ত পথ, পথের ধুলো

খুলে রেখে কাছে এসে ঝরে ঝরে যাবে স্তব্ধতায়...

 

স্তব্ধতা দু'হাতে ধরে নেমে যাব অতলের দিকে

অতল, আক্ষেপ নয়, এই দ্যাখো আমার ছায়ায়

মিশে যাচ্ছি দেহাতীত, মিশে যাচ্ছে সমস্ত আকার..

 

ধুলোখেলা : ৭

 

রাত-পাহাড়ের গায়ে যত আলো জ্বলে ওঠে আর

অন্ধকার ভেঙে ভেঙে বেজে ওঠে মাদলের গান

দূর থেকে আমি দেখি হলুদ মশাল হাতে তুমি

চূড়ায় চূড়ায় একা জ্বালিয়ে দিচ্ছ জন্ম-মশাল!

 

কে দিল আলোর কাজ, কে পাঠাল এই মৃত্যুদেশে?

 

সব ক'টি স্তব্ধ চূড়া অভিশপ্ত নারী ও পুরুষ ---

যারা অস্ত্র-নির্ভরতা ছুঁড়ে ফেলে চেয়েছিল শুধু

দেবতা দানব নয়, রেখে যাবে প্রকৃত মানুষ।

 

সংঘ বড় ক্রূর হয়। তুলে দেয় পাত্রভরা বিষ

নেভে নক্ষত্রের আলো, নিভে যায় কত সক্রেটিশ!

 

আলো আজ দুলে ওঠে। জেগে ওঠে জ্ঞানের বিস্ফার

ঝলকে ঝলকে ওঠে শুদ্ধ ধাতু, আগ্নেয় চিৎকার।

 

পোড়ে সংঘের চাতুরি, পুড়ে যায় মূঢ় অন্ধকার... 

ধুলোখেলা : ৮

 

মি কি চেয়েছি কিছু? এই মাঠ, মানুষের ছায়া?

মুঠোয় মুঠোয় দেখি উপচে উঠছে মায়াবী মোহর।

 

রংয়ের ভিতর থেকে কে এত ছড়িয়ে দেয় সুখ

সন্তানের গন্ধ চিনে কেঁপে ওঠে পাঁজরের হাড়?

কে এত লাবণ্যকণা জুড়ে জুড়ে গেঁথেছে সময়

কখনও মৃত্যুও দেখি অস্ত্র ফেলে চলে যায় দূরে!

 

আমার ভিতর তবু জেগে ওঠে ভয়, কালো-নখ

আমি যে পারিনি তাকে ডেকে নিতে অকাতর খুব...

 

 

ধুলোখেলা : ৯

 

মেঘ দেখা গেলে দূরে এখনও কি রঙিন কাগজে

নৌকো বানিয়ে দাঁড়াও? দাঁড়াও কখন বৃষ্টি এসে

ভাসাবে তোমার সব? সমস্ত বিলিয়ে চিহ্নহীন

হতে হতে মিশে যাবে কুহকিনী শূন্যতার দেশে?

 

অনচ্ছ কুয়াশা মেখে আমার সমস্ত দৃশ্যদল

হারিয়ে ফেলেছে মুখ, কোনও চিহ্ন স্পষ্ট নেই আর।

 

যতই চেয়েছি স্পষ্ট, স্পষ্টতর রেখায় তোমাকে

কারা এসে প্রতি বাঁকে, প্রতিটি পথের প্রান্তভাগে

আমার পা থেকে খুলে নিয়ে গেছে সব চলাচল!

 

সেই শেষ থেকে, সেই ভাঙা থেকে আমিও আবার

পথ জমিয়েছি বুকে। হেঁটে গেছি অস্ত্রদাগ মুছে।

 

তোমাকে চেয়েছি খুব ধুলো মুছে সুস্পষ্ট রেখার।

 

 

ধুলোখেলা : ১০

 

কী বীজ রেখেছ পুঁতে প্রতিদিন শিকড় ছড়ায়?

নেমে যেতে হয় পথে, রক্ত জাগে তীব্র হ্রেষায়?

 

তুমি নেই ভেবে যত চেয়েছি অপার অন্ধকার

বে-আদব আলো তত ঝলসে দিয়েছে এই শরীর!

আগলে রেখেছে সে-দাগ এ-দেহের অন্ধনদীতীর...

 

ত্রাণ নেই কোনওখানে, তাড়িয়ে ফিরছ বর্শাফলায়

আমিও মরিয়া ছুটি... ছড়িয়ে যাচ্ছি খোলা রাস্তায়...

 

ধুলোখেলা : ১১

 

লো, বসি। স্তব্ধ, স্থাণু। যেভাবে পাথর, নাভি জাগে

সেভাবে দু'জনে থাকি স্থির আর নীচে জায়মান

দৃশ্যকলা থেকে খুঁজি আমাদের ফেলে আসা দিন :

মিথ্যের পালক আজও কতখানি উজ্জ্বলতা নিয়ে

ছুঁয়ে আছে মোহমাটি, কীভাবে মন্ত্র আর আজান

টেনে নেয় বুকে, বিষে। এখনও কি রক্ত মাখে রাত?

ভেঙে পড়ে মানুষের গার্হস্থ-বাসনা খোলা মাঠে,

নিভে যায় একা একা আদরের আলো-অন্ধকার?

 

কে এত মিথ্যে সাজিয়ে গেঁথে তোলে সময়ের বাড়ি

অলীক বেদনাগুচ্ছে বেঁধেছে কে রক্তমাখা গান?

কেঁপে উঠে নৌকো নাচে ঘূর্ণির চূড়ায়, মিশে যায়

ভয়-মুদ্রা জলে আর ঘাতক সময় লাফ দিয়ে

ছিঁড়ে নেয় স্বর, ধ্বনি... যতকিছু গূঢ় অঙ্গসাজ...

 

স্রোতে ভেসে চলে বাসি-ফুল, স্তব্ধ খড়ের শরীর...

girl.jpg

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

rehan.jpg
রেহান কৌশিক
পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বাংলা 
village.jpeg

পথ

মি তোমার হেঁটে যাওয়ার পথে

বাঁক নেওয়া এক

অন্য পথের দেহ...

চাইলে তুমি আসতে পার একা

শর্তবিহীন ধূসর ধুলো ছুঁতে

না-হয় যদি হৃদয়ে সন্দেহ...

ডিলিট বাটন হাতেই থাকে সবার

মুছতে চাইলে মুহূর্তে সব শেষ...

কার কী হল --- কেউ ভাবে না অত

ইচ্ছে হলে হোক না নিরুদ্দেশ!

পথের কিন্তু নিয়মখানি কঠিন

নামলে তোমায় ছুঁতেই হবে অন্ত!

পথ আসলে মস্ত গোঁয়ার প্রেমিক

বাজি রাখে জীবন যেমন

তেমন রাখে মরণও পর্যন্ত!

 

নাছোড়বান্দা

কে না-খোঁজে তেমন বসত, আজীবনের ঘর?

চায় তো সবাই শুনতে কোথাও

কারও বুকের স্পর্শে নিবিড় অসংশয়ী স্বর...

এই আছো আর এই তুমি নেই --- এমনই অভ্যাসে

যতই তুমি দেখাও জাদু

ডুব দিয়েছি তোমায় ছুঁতে অনন্ত-সন্ন্যাসে...

ফুল ফুটুক আর নাই বা ফুটুক, বসন্ত আসবেই

ভাবব তুমি প্রবল আছো সমস্ত শূন্যেই!

বেহস্তে, জন্নতে...

তুমি কি সেই আছো আগের মতো?

চিনতে পারো সুদূর থেকে না-বলা সব ক্ষত?

 

নাকি, এখন অভ্যাসে ভুল শান্ত স্নায়ুময়

চিহ্নমাত্র নেই কিছু নেই... সব পুরোনোই ক্ষয়!

 

আজও কিন্তু শিউলিফুলে হিমের ফোঁটা যত্নে ছবি আঁকে

জীর্ণ সাঁকোয় একলা বিকেল স্বপ্ন ছুঁয়ে থাকে!

 

হয়তো সময় খুব স্নেহহীন, করেনি ইনসাফ

না-ভুলিয়ে রাখতে পারত সামান্য উত্তাপ...

 

যাক যা হওয়ার হয়েই গেছে, যা আছে থাক ক্ষতে

চাইলে তুমি আসতে পারো

দরজা আমার খোলাই আছে বেহস্তে, জন্নতে...

স্নান

 

কলের বুকে থাক নির্জন --- নিজস্ব স্নানঘর। 

 

পাঠালে বিষাদ কেউ একা একা স্নানে চলে যেও

জলের তুলোয় তুমি মুছে নিও অনর্থক সন্ধেদাগ যত

মুছে নিও অহেতুক ধুলো আর চিৎকারের ক্ষত...

 

বুক পেতে তুলে নিও শুদ্ধস্নান, স্নানের মর্মর…

 

তুমি তো জানোই মেয়ে, আমি সেই, সেখানেই আছি

যেখানে রেখেছ তুমি অদ্বিতীয় বর্ণমালা ক'রে

যেখানে আমার ডানা তোমাকেই ছুঁতে চেয়ে কবে

                         উড়িয়েছে দিকে দিকে স্বাধীন-অক্ষর!

 

 

জন্মকথক

খানিক লোকও এমন থাকে --- হার মানে না, হার...

যতই নাচুক ছুরির ফলায় অন্ধ-অন্ধকার।

তারা ঠিকই পার হয়ে যায় অসুন্দরের দেশ

যেমন ধরো তেমন মানুষ গৌরী লঙ্কেশ...

 

চেনা মুখও অচেনা হয়, চেনার বাকি কত!

হত্যা এখন ত্রিশূল ছুঁলেই আইনসম্মত...

যা ঘটেছে তা তো ঘটার, অন্যে আছে বেশ

এদের তুমি পড়শি ছিলে, গৌরী লঙ্কেশ!

 

রাহাজানি নিয়মসিদ্ধ বিরুদ্ধ সব মতের

স্বচ্ছ হচ্ছে গ্রাম ও শহর নিধনে সত্যের...

ঘড়ির কাঁটা উলটে গেলেও --- সময় নির্দেশ!

সোজা রাস্তায় হাঁটতে গেলে, গৌরী লঙ্কেশ?

 

যা বলেছ, সে-সব-কথার রোদ্দুরে নাও সঙ্গে

হয়তো সময় ভাসবে না আর বিষমাখা তরঙ্গে!

সব কথা কি ফুরিয়ে যায়, মৃত্যুতে হয় শেষ?

না-শেষ কথার জন্মকথক গৌরী লঙ্কেশ...

আত্মহত্যাকালীন

 

মি কি এগোব দু'পা? আর দু'কদম?

আমিও কি পাব আলো?  আলোর চেয়েও আলো? সহজ-সুন্দর?

 

মৃত্যুকাজ অন্ধকার? জলের নরম?

পেরেছে কি অন্ধকার জ্বেলে দিতে অশেষের আলো?

                  পেয়েছ কি তুমি ওই কৃপাময় ঘর?

 

বুঝিনি তখনও আমি অন্ধকার ছুঁতে তুমি ঝুঁকেছ নিবিড়!

বুঝিনি কখনও আমি --- কখন পতনখাদ

দিতে পারে শুদ্ধ-স্পর্শ কোনও একাকীর!

 

ওখানে কি অন্ধকার গর্ভে ধরে চির-আলো? গর্ভবতী হয়?

 

ভেবেছি আমার হাত --- স্বাদু-গন্ধ-অমরাবতীর

ভেবেছি আমার হাত ছুঁয়ে তুমি খুশি ছিলে খুব

                 পেয়েছিলে স্বপ্নপাঠ বিশুদ্ধ অগ্নির!

 

এখন জেনেছি শুধু রেখা থেকে রেখার ভিতর

এই হাত ---- ভুলের জ্যামিতি, অনর্গল ক্ষয়!

অপ্রেমিক

 

যেভাবে চেয়েছ তুমি সেভাবেই উড়ে গেছে পাখি

দিয়েছে শূন্যের স্তব অজটিল ঠোঁটে।

 

নদী কি জানে না ভাবো, তোমার স্বভাব!

আদিম আঙুল তার রেখে যায় ঢেউফুল স্রোত থেকে স্রোতে...

 

কবি ও লেখকও ঠিক পাখি আর নদীরা যেমন

তোমার গোপন গল্প দিয়ে

                         ভরে রাখে সুমুদ্রিত বই!

 

আমিই পারি না শুধু অনিচ্ছায় খুলে দিতে নিজেকে কোথাও

আমি-র ভিতরে অন্য যে-আমি বসত করে একা

                               আমি তারও ক্রীতদাস নই!

​​

জলের শব্দ

 

চিহ্ন তো নেই বৃষ্টি নামার, সময় ধূ ধূ মাঠ

কোথাও তবু জলের শব্দে দিগন্তে পাখশাট! 

 

হয়তো বা জল ভিতরে বয় প্রবল ভূমিক্ষয়ে

প্রকাশ্যে তার দাগ রাখে না কখনও সংশয়ে। 

 

হয়তো দূরে একলা বিকেল মুঠোয় রেখে মেঘ

রাখছে লিখে তোমার - আমার বৃষ্টি-অনুচ্ছেদ

 

আমি কী আর ছুঁতে পারি নিভন্ত এই দিনে

খণ্ডিত যে সমস্ত আজ ব্যক্তিগত ঋণে! 

 

নিকট যত দূর হয়েছে, দূর হয়েছে দূর

দাগ রেখেছে পথের বুকে নিয়ত ভাঙচুর! 

 

হয়তো এমন ভাঙতে থাকে রেখার দেহ সব

চিহ্নবিহীন মুদ্রা আঁকে ধ্বংসের উৎসব!

 

নিঃস্ব হওয়ার আগেই বোধহয় জাগে জলের কথা

সামনে যখন অচিহ্নিত প্রগাঢ় স্তব্ধতা!

 

আমার না হোক, অন্য কারও ঝরছে মুঠোয় জল

এমন ভাবেই বাসছে ভালো কাউকে অবিরল...

 

জলের কোনও শেষ থাকে না, ভেজারও শেষ নেই

আমি-র শুধু বদল ঘটে , বৃষ্টিরা নামবেই!

দূর থেকে

 

কেউ কারো দুঃখদেহে নিঃশর্তে রেখেছে কোনও হাত?

কোনও হাত শর্তহীন হয়?

সমস্ত মানুষ জানে বিজনে গভীর হয় ক্ষত

                            জেগে ওঠে অনর্গল ক্ষয়!

 

আমিও রাখিনি হাত যতটা উচিত ছিল রাখা।

 

অথচ চেয়েছি ছুঁই, ছুঁয়ে থাকি তোমার বিষাদ

কিন্তু খুঁজে দেখি সব শূন্যের ধারণা

আমার ভিতর দেশে রেখে গেছে মহর্ষি কণাদ! 

 

তোমার মনখারাপের পাশে

আজ শুধু রেখে আসি দীর্ঘ-নদীজল

অপার স্থিরতা নিয়ে দূর থেকে ছুঁয়ে থাকি একা

                                                 তোমার অতল…

 

চেনো সেই, স্পর্শ চেনো? মনে মনে জেগেছে সন্দেহ? 

তাহলে এবার যাও, ভোরবেলা নদীর কিনারে

কুয়াশা সরিয়ে দ্যাখো --- ঢেউজলে ডোবে ভাসে কার

                                                  মৌন - মৃতদেহ!

 

 

দস্যু

 

ভেবেছ তাতার দস্যু। সমস্ত লুণ্ঠন করে চলে যাই দূরে

আর তুমি পড়ে থাকো নিহত বিশ্বাস নিয়ে কোনও অন্ত:পুরে!

 

ভাবো তুমি প্রেমিক মাত্রই

সময়ের ধূ ধূ ছোঁয়া এক দিগন্তবিহীন বালির ওপর

জ্বেলে রেখে রাত্রির আগুন

                          গুণে-গেঁথে দ্যাখে লুঠের মোহর!

 

ভুল ভুল, এ কেবল ভুল...

পারে না কখনও কেউ নিয়ে যেতে সমস্তের সব

হৃদয়ের দস্যুতায় যত বেশি নি:স্ব হবে, জেনো

                       তত বেশি পূর্ণ হয় পূর্ণের উৎসব...

 

দাঁড়াও, দাঁড়াও উঠে। যেগুলো ভেবেছ অন্ধকার

স্বপ্নের আলো থাকে তাদের গর্ভেই...

 

চলো, আজ লিখে দিয়ে যাবো

এই ভিড়, নির্জনতা, এই ধুলোবালি

এ শহর, জনপদ, এ কলকাতা তোমার নামেই...

ফসল

 

ধাবমান জলের দিকেই

হেঁটে যাই প্রতিদিন সকলে, প্রত্যেকে।

 

এ ভ্রমণ অনিবার্য পাঠ

যে সময় দাঁড়িয়েছ একাকী, প্রথম

       আলোর সুগন্ধ ছুঁয়ে জলভূমি থেকে...

 

ফেরাও তো থাকে সেই জলের কাছেই

থাকে সব ভেসে-যাওয়া অন্তহীন জলের দিকেই!

 

মিশে যায় চিতাভষ্ম গতির ভিতর একা স্থির হবে বলে

প্রগাঢ় ঘূর্ণির দেশে ফিরে পাবে নিজের নিশ্চল!

 

গতির ভিতর থাকে স্থিরতার প্রিয় জন্মঘর

স্থিরতার অন্তর্গতে শুয়ে থাকে গতির মর্মর...

 

এই সূত্র খুঁজে পায় সেই

চিনেছে যে বেঁচে থাকা, আয়ুর প্রকৃত সত্য জলের ফসল...

বৃষ্টি আর অর্ধেকজীবন

 

কে বলে বৃষ্টির মানে শুধুই আকাশ-ভাঙা জল!

কখনও প্রণয়লিপি ভিতরে উজ্জ্বল...

 

দ্যাখো দ্যাখো, জেগে ওঠে উত্থান... উত্থান...

জড় থেকে মৃত থেকে শব থেকে খুলে খুলে নেয়

                              জমে থাকা আত্মঘাতী টান।

 

জল ভাঙে ধ্বংস-ঘর। মুছে যায় কালো স্মৃতিজন।

বৃষ্টি ছুঁয়ে ফিরে পায় নবজন্ম প্রেমিকের মন...

 

এই শোনো, কাছে এসো। চিনতে পারো সেই দাগি ঠোঁট?

বেছে নেওয়া মধ্যরাত, ফাঁকা রেলপথ?

চূড়ান্ত পতন সেই, সেই রক্তস্রোত?

 

আহা, মনে করে দ্যাখো... নিভে যাওয়া বৃষ্টির ভিতর

দেহহীন দু'ছায়ার নিবিড় গমন...

 

আমাদের ফেলা আসা বৃষ্টি আর অর্ধেকজীবন!

 

পাপ

 

হস্র পাপ বুকে নিয়ে আজীবন ঘুরেছি অনেক।

 

ভুলে যাই চিঠি লিখি

ভুলে যাই গানের আবিরবিন্দু রেখে আসি তোমার দু'হাতে...

 

হেমন্তের রাত্রি জ্বেলে রাখে কুয়াশার আলো

সে আলোয় আঁকতে পারিনি তোমাকে এখনও।

মধ্যরাতে আমার সারেঙ্গী পারেনি

বৃষ্টি হয়ে ছুঁয়ে দিতে আমূল হৃদয়... এভাবেই ভাবো,

ভেবেছ আমাকে তুমি সমস্ত আয়ুষ্কাল জুড়ে!

 

এই সব পাপ নয়, বলো?

এত পাপ কার কাছে গচ্ছিত রেখে চলে যাবো আমি!

 

অথচ জানে সারা শীতকাল, তোমার সমস্ত ঝরাপাতা

বুকে রেখে শব্দহীন হেঁটে যাই পথ থেকে পথের ভিতর।

জানে সব বসন্তের দিন, কীভাবে তোমার পায়ে

আরণ্যক অন্ধকার দিয়ে লিখে রাখি নিবিড় বিশ্বাস...

 

তোমার সমস্ত না-বোঝা বস্তুত গাঢ়তর পাপ

সহস্র পাপ বুকে নিয়ে আজীবন ঘুরেছি অনেক।

 

 

একজন গেরিলার স্বপ্ন

 

শেষ পর্যন্ত যখন রুদ্ধ হতে থাকে শ্বাস

চন্দন-আভা দু'চোখে লাগিয়ে নিশ্চুপে খোলে ত্রাণের শিবির!

 

এভাবেই তাকে আজন্ম চিনি...

নক্ষত্রের আলো বুকে নিয়ে কতদিন একা

                              যুদ্ধের মাঠ ফিরিয়েছে সঙ্গীর!

 

এই যে এখন রাত্রিরজনী, দিবস ও দিন

শালবন আর খনির ভিতর ছুটে যাই রোজ দিক থেকে দিকে

সশস্ত্র হাত তাক করে থাকে দখলের ইতিহাস ভেঙে দিতে...

                   নিশ্চিত জানি ফিরবে সুদিন গুণ-ভাগ-দশমিকে।

 

বিপ্লব কোনও মিথ্যের শ্লোক শেখেনি কখনও

দেয়নি স্লোগান অলীক কল্পনাতে

স্পষ্ট জেনেছে, ন্যায্য দাবির অধিকার সব

                  লুকিয়ে রয়েছে বাসস্থান ও ভাতে...

 

ফিরবে মানুষ মানুষের দেশে জীবিত অথবা মৃত

তুমি ছাড়া আর কে-ই-বা রয়েছে শহিদের এত প্রিয়!

 

মৃত হলে তুমি চন্দনে এঁকো,  জীবিত থাকলে চুম্বন ছুঁড়ে দিও...

 

 

ঝরাপাতার গল্প

 

নানা রংয়ের দু:খকথা ঝরাপাতার রূপান্তরে

আজন্মকাল জমতে থাকে ক্রমান্বয়ে ভিতর ঘরে

 

সে কি শুধুই দিনযাপন আর বেঁচে-থাকার সালতামামি!

দূরের থেকে কাছে এবং কাছের থেকে দূরগামী

 

যে-সব স্পর্শ খুব গভীরে অবিচ্ছিন্ন দাঁড় টানছে

পৌঁছে যেতে ব্যক্তিগত রহস্য আর রোমাঞ্চে...

 

ক'জন চেনে নিজের মধ্যে মুখ-লুকোনো মহল্লা কে?

ক'জন জানে নিজের ভিতর চেনা পথের অন্য বাঁকে

 

দাঁড়ায় যখন নিজের চাওয়া,  সে কি তখন নিজেও বোঝে?

চেনা এবং না-চেনার এই দ্বন্দ্বে মানুষ খণ্ডিত যে!

 

আবহমান দ্বন্দ্ব ছুঁয়েই উঠছে গড়ে দু:খদেশ

কেউ চিনি আর নাই বা চিনি, পাতা ঝরার নেই তো শেষ...

 

 

প্রত্নকথা

 

দেখেছ পাথর শুধু, দ্যাখোনি তো প্রত্নের বিস্ময়

কীভাবে ছড়ায় আলো অন্তর্গতে তার

                                   শিরা আর উপশিরাময়!

 

বিগত ঝড়ের নীচে মরাপাখি বুকে ধ'রে আজও

বসে আছে কোনও এক দু:খী সান্ধ্যকাল।

এমন বিষাদ-সন্ধে, সমাহিত শোক

জয় করে সন্তদল হেঁটে চলে ধুলো পায়ে খুলে দিতে পথের আড়াল...

 

শব্দহীন সমাধিতে থাকে কত বৃষ্টিপাত, জল

কত দীর্ঘ বালিয়াড়ি, ঢেউয়ের উত্থান

সে সব প্রকৃত স্পর্শে জেগে উঠতে জানে

                      জানে স্রোত-ঘূর্ণি, জানে টান!

 

সমস্ত নিশ্চল ভেবে দূরে থাকা ভালো?

নিজেকে জ্বালাও আর স্তব্ধ তাকে বুকে নিয়ে জ্বালো...

 

দেখেছ পাথর শুধু, দ্যাখোনি তো প্রত্নের বিস্ময়

কীভাবে ছড়ায় আলো অন্তর্গতে তার

                                   শিরা আর উপশিরাময়!

আসাদুজ্জামান চৌধুরী
Md. Ansu.jpg
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর, বাংলাদেশ

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর এ দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি যেমন অবদান রেখে চলেছেন তেমনি সৃষ্টিশীল লেখার ক্ষেত্রেও তাঁর পদচারণা। তিনি মনে করেন বিজ্ঞান চর্চা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অন্যের পরিপূরক। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, গবেষক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, কবি, গীতিকার, নাট্যকার, সমাজ সংস্কারক ও সাংস্কৃতিক কর্মী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনে বিশ্বাসী এই মানুষটির ছোটবেলা থেকেই লেখায় হাতেখড়ি। কৈশোর ও তারুণ্যে তিনি বাংলা একাডেমি, খেলাঘর,  কঁচিকাচার মেলা সহ বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছেন। এই সময় তাঁর প্রবন্ধ, কবিতা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকৌশল বিদ্যা অধ্যায়নের সময় তিনি প্রগতিশীল কর্মী হিসেবে কাজ করে সহিত চর্চা করে গেছেন। এ সময় তাঁর লেখাগুলো বিশ্ববিদালয়ের ম্যাগাজিনে এখনও সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও অনেকদিন ধরেই তিনি দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। বাংলা ও ইংরেজি দুই সাহিত্যেই তাঁর সমান দক্ষতা রয়েছে। সমাজ, রাষ্ট্র, প্রকৃতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, পরিবর্তন, সম্ভাবনা ও মানুষ তাঁর লেখার মূল উপজীব্য বিষয়।  তিনি একজন ভাল বক্তা। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক্ শো সহ বিভিন্ন সৃজনশীল অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি হিসেবে দেখা যায়। ভারতরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী অজিত কুমার পাঁজা কলকাতা দূরদর্শনের একটি প্রতিযোগিতায় তাঁর প্রেরিত প্রবন্ধে মোহিত হয়ে নিজ হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সে সময় সম্প্রচারিত হয়। এই খবরটি আজকাল, সংবাদ, বাংলাবাজার সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিনি ফিলিপিন্স, চীন, বি-টিভি  সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন পুরুস্কারে ভূষিত হন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের একজন কর্মী হিসেবে তিনি কাজ করে চলেছেন। 

নিজের শব্দহীন অস্তিত্ব


পরিচিত একটা শহরে এসে থমকে গেলাম
চারদিকে কেমন যেন দম বন্ধ হওয়া নিস্তব্ধতা 
থম থমে ভাব যেন নির্বাক এক স্থবিরতা।
ভাবনাগুলো পাখি হল 
দৃষ্টির বৃষ্টিরা ফিকে ফিকে রং হয়ে উড়াল দিল
কোন এক বৃক্ষহীন অরণ্যে, 
কারা যেন লাল গালিচায় মুখ চেপে বোবা হয়ে গাইছিল
ধন ধান্যে লাল নূপুরের একটুকরো চিলতে পরা
মানবতার জন্যে।   
মানুষগুলো জীবন্ত না মৃত 
শিয়াল আর শুকুনির লাল চোখে 
নীলাভ অন্তঃরাত্মা কম্পিত স্পন্দিত,  
তারপর নন্দিত নিন্দিত তপোবনে 
কি একটা কর্কটক্রান্তির শিহরণে,  
তোলপাড় মন দেখতে পেল    
একটা ধ্বংস স্তূপে ভাঙাচোরা দূরবীনে 
দাঁড়িয়ে আছে গোরস্থান।
পুরনো বেলে মাটি খসে খসে পড়েছে 
যেন অবহেলার শুষ্ক গন্ধে খুশবু বিছানো অভিমান  
একটা আস্তিনে ঢাকা ঝাপসা কুয়াশার মত
লাশের কবর, 
যেন জিন্দা লাশের কাক ডাকা 
অথিতি নিয়ে এসেছে পড়ন্ত বিকেলের খবর।
কিন্তু কেন তারপরও 
খুব চেনা মানুষের কবর বলে ওটাকে 
মনে হতেই শরীরটা যেন হয়ে গেলো কঙ্কাল,   
আত্মাটা ফুড়ুৎ করে বজ্রপাতের আঘাতে 
দেখতে পেল শব্দহীন লাশের পঙ্গপাল।
আর ওখানে ওটা আর কারো নয় 
আমারি কবর যার মৃত্যু হয়েছে আজ নয়তো 
কবে কেউ জানেনা। 
সব যেন রহস্য আর সাদা কাপড়ের ভিতর 
নিজের অস্তিত্ব।
থমকে দাঁড়িয়ে বলে পুনর্জন্ম নাকি 
বেঁচে থাকা কিংবা মরে যাওয়া 
এখনও অনেকটা পথ ঢেকে রাখি 
যদি আবার আসি ফিরে, 
ঐ পঙ্গপালের ভিড়ে,  
নূতন করে ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন পুরুষদের 
অভিশাপের বিষে তৃষিত আবেশে। 

 

 

নিথর দেহে প্রাণ

 

মকে গেলো জীবন
যেমন থমকে আছে মায়াবতীর মায়াবন,  
যেমন থমকে আছে হিমাদ্রির ক্ষত বিক্ষত দেহ, 
নর পিশাচদের তাণ্ডব নৃত্যে 
মনে হয় সব যেন  রক্তের হোলি খেলা 
অগ্নির তীব্র দ্রোহ বিদ্রোহের 
ঘাতে প্রতিঘাতে 
ছিন্নপত্রের বর্ষণ  অবগাহন।
কি যে হল সব যেন বদলে গেল নিমিষেই 
আলাদীনের জাদুর চেরাগের মতো   
যেন টেমস নদী হয়ে গেল মহাসাগর 
তারপর ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে 

cremation.jfif

আলেকজান্ডারের বিশ্বজয়ের মতো পথ হারালো কলম্বাসের ভ্রান্ত যাত্রাআঁকা বাঁকা কোন শঙ্কিত গলিপথে।

রুখে  দাঁড়ানোর শপথ নিলো ওরা

প্রতিবাদী কণ্ঠ ভেঙে ফেললো কাঁচের দেয়াল বলল উচ্চকণ্ঠে, আমরা মানুষ, আমরা নারী আমরাই পৃথিবীটা বদলে দিতে পারি খামোশ শয়তান বন্ধ কর তোদের অযাচিত খবরদারি।প্রতীক্ষার স্বপ্নঘুড়ি উড়ে দিন যায় সময় বদলায় মুক্ত হয় বদ্ধ খাঁচার অবরুদ্ধ পাখি কোনো এক দূর আকাশে না বলা অনেক কথার মিছিলে

কিংবা জোছনা রাতে তারাদের ভিড়ে।

খণ্ডিত স্বপ্ন

 

কটুকরো পোড়া মাটি হাতে 
দাঁড়িয়ে ছিল একটা কঙ্কাল
নির্বাক চোখ আর অন্তঃসারশূন্য অস্থি মজ্জা  
যেন মৃত মানুষ,  জীবন্ত একটা লাশ।
পৃথিবীতে এসে 
কলঙ্কিত করল মানব সভ্যতাকে,  
চেনা আয়নায় চড়া দামে বাজার থেকে 
কেনা ক্রীতদাস মনে হলো তাকে, 
কিন্তু অচেনা তার বৃষ্টির জল 
পাহাড়ে ধসে পরা কোনো আদম সন্তানের উপাখ্যান 
কিংবা পিষে যাওয়া শোষিত বঞ্চিত মানুষ। 
ভাবনা যেন স্বপ্ন হলো উড়াল দিল 
সাত সাগর তেরো নদী পার হয়ে দেখা পেল
এক রাজকন্যার, 
যার রেশমি চুরির ঝংকার আর স্বর্ণলতা
মনে দাগ কাটল পিরিতের যন্ত্রণার দাগ 
আর মস্তিষ্ক মাংসপিণ্ড হয়ে মানচিত্র দিয়ে 
বুলেটের আঘাতে যেন হল অবাক 
কিন্তু থাকলনা বেশিক্ষণ,    
রূপের রঙ্গ ভেঙে পড়লো মাথার উপর
বাস্তবতা কড়া নাড়ল কল্পিত রূপকথায়।      
তারপর হিমালয়ের হিমশীতল ঠান্ডায় 
কম্পিত হল মন ভূমিকম্প নেমে এলো ধরিত্রীতে 
বাস্তবতা ক্ষুধিত পিশাচের অগ্নিমূর্তি হয়ে 
চেপে ধরলো গলা 
আর বললো তোমাদের ঠাঁই নেই 
মানুষের আধুনিক সভ্যতায়।
এখনো কান পেতে শুনি তার আর্তনাদ 
অশরীরী আত্মা বিলাপ বারবার যেন 
বলে উঠে 
এবার সময় এসেছে আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার।

তুমি আছ বলে

 
তুমি আছ বলে আজও বাজে মনের নূপুর
ছবি আঁকে তৃতীয় নয়ন শ্রাবণের
বৃষ্টি ঝলসানো মধ্যদুপুর।
তুমি আছ বলে
আজও রাতের তারারা উল্কাবৃষ্টির খোঁজে
সেতারে সুরটানে নিরন্তর আলোর আকর্ষণে।
তুমি আছ বলে আজও চোখের দৃষ্টিসীমা
কবিতা লেখে মনের ভাষায়
কোন এক লক্ষ্যহীন লোকান্তরে।
তুমি আছ বলে আজও আমার ধমনিতে
রক্তের স্রোত বিস্ফোরিত হয়
আবেগের বিস্ফোরণে
স্থান কাল পাত্র মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়
তোমার লাল বেনারসির মহাসিন্ধুর মহাকাব্যে।

দুঃখ নেবে দুঃখ

 

দুঃখ নেবে দুঃখ
দুই পয়সার আলতা কেনার
সুখ দুঃখের দুঃখ 
আঁধার আলোর দুঃখ
জীবন যেথায় থমকে দাঁড়ায়
রুক্ষ পথের দুঃখ।
দুঃখ নেবে দুঃখ
দুখী মায়ের কান্না ভেজা
কষ্ট ঢাকার দুঃখ।
দুঃখ নেবে দুঃখ
জীবন গড়ার দুঃখ
জন্ম থেকে জ্বলছে যারা
তাদের পোড়ার দুঃখ।
দুঃখ নেবে দুঃখ
মা হারানোর দুঃখ
জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া
শৈশবেরই দুঃখ।
দুঃখ নেবে দুঃখ
দুঃখ থেকে জেগে ওঠা
শেষ বিকেলের দুঃখ।

 


অন্তহীন বিজয়


মি বিজয় দেখিনি আমি 
দেখেছি জ্বলন্ত রাজপথ
দেখেছি মিছিল, বিপ্লবী অবরোধ।
আমি দেখেছি
রক্তে ভেজা শহীদের নিথর 
দেহে  বাংলা মায়ের মুখ  
আমি বিজয় দেখিনি আমি
দেখেছি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার
আগামীদিনের স্বপ্ন জাগার সুখ।
আমি বিজয় দেখিনি আমি       
দেখেছি বীরাঙ্গনার
কালজয়ী এক কিংবদন্তির
চাপা কান্নার দীর্ঘশ্বাসে
দূর্গা দুর্গতিনাশিনীর          
সংগ্রামী এক রূপ।
আমি বিজয় দেখিনি আমি
দেখেছি বর্বর গণহত্যা
শহীদ বুদ্ধিজীবির লাশ।

অন্তহীন পদ যাত্রা


নিস্তব্ধ তাকিয়ে থাকি অন্তহীন দৃষ্টিতে
জীবনের কোলাহল খুঁজি নিভৃত
এক চন্দ্রালোকে
তারপর থেমে যাই
কোন এক লোকালয়ে
যেখানে মানুষ ক্রীতদাস হয়
অশুভ শক্তির ইন্দ্রজালে
যেখানে হিংস্র দানবেরা নগ্ন নৃত্যের
উন্মাদনায় কম্পিত করে ধ্রুম্রজাল।
তারা বলে
সবচেয়ে খেতে ভাল মানুষের রক্ত
আর শুকুনির মতো ব্যবচ্ছেদ করে
মানুষের খন্ডিত মাংসপিন্ড।
অবিরত লড়াই করে মুক্ত চিন্তা
স্বপ্ন দেখে ভেঙে পড়েছে
সংকীর্ণতার অবরুদ্ধ শিকল
জেগে উঠেছে মানুষ
আলোকিত প্রভাত ফেরির

বিরামহীন পদযাত্রায়।

অনুবাদ
প্রদীপ সরকার 
ডালাস, টেক্সাস
প্রদীপ সরকার - অনুবাদ

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

জনৈক নিগ্রো দলনেতাকে

(TO CERTAIN NEGRO LEADER by Langston Huge ভাবানুবাদ)

 

বুনো থাবা বাড়িয়ে

শব্দের ক্লেদাক্ত নিনাদেরা উঠে আসে

শ্বেতাঙ্গের সরীসৃপ জিভে –

ওরা প্রত্যেকে তীক্ষ্ণ ও স্বতন্ত্র এক একটি টঙ্কার তোলে -

 

“হে আমার প্রিয় কালো চামড়ার দাসেরা

তোমরা ক্রমশ বিনয়ী ও নম্র হয়ে ওঠো

বেশি চিৎকার কোরোনাকো আর

পুঞ্জীভূত শক্তির মতোন”।       

(সেপ্টেম্বর ১২, ১৯৮১)

প্রাণ তো এমন ভালবাসার হয়

(LIFE IS FINE by Langston Huge ভাবানুবাদ)

 

মি নদীর কাছে গিয়েছিলাম চলে

বসে ছিলাম স্তব্ধ হয়ে তীরে,

ভাবার চেষ্টা বিফল হয়ে গেলে,

ঝাঁপিয়ে পড়ে ডুব কি দিতাম আমি!

 

একটি মাত্র বার এসেছি হেথা,

বজ্র ভরে তুলেছিলাম গলা,

আবার এলাম, কন্ঠ দিলাম ছাড়ি,

জলটুকু কি একটু ছিল তুহিন!

আমি এখন ডুবতে নাহি পারি।

 

শীতল ছিল জলের নরম হাত, 

তুহিন ছিল বহতা নদীর জল।

 

আমি এখন অনেক উঁচু থেকে

ওপর থেকে নীচের দিকে দেখি

আমার মনে আমার শিশু আসে,

ঝাঁপ দেবো কি? ভাবতে আমি পারি?

 

আমি এখন অনেক উঁচু থেকে

নীচের দিকে আমার স্বপ্ন দেখি।

 

আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি হেথা,

কন্ঠ ভরে শব্দ আছে গাঁথা,  

এটা যদি একটু নীচু হত -

ঝাঁপ কি দিতাম? মৃত্যু হত না কি?

 

আমি ছিলাম খানিক উঁচু হেথা,

স্বপ্ন ছিল উচ্চ রাগে বাঁধা। 

আমি এখন এই কুঁড়েতে থাকি,

আমার এখন এই ঘাসেতে বাস,

আমি একে ভালবেসেই থাকি,

ভালবাসার জন্যে জীবন দেই।

 

যদিও তুমি আমার আওয়াজ শোনো,

যদিও তুমি কাঁদতে দেখো মোরে,

আমি তোমায় ভালবাসি জেনো,

আমার মরণ যদিও দ্যাখো তুমি।   

 

জীবন আমার শস্য ভরা গৃহী,

জীবন আমার রৌদ্র সোনার মদ,

জীবন আমার হালকা বুনোট কথা,  

জীবন আমার দামাল ঝড়ের রাত।       

 

এখন আমি ডুবতে নাহি পারি,

এখন আমি ভাবতে থাকি শুধু,

এখন আমার ভালবেসেই থাকা,  

জীবন আমার হালকা বুনোট কথা।  

(মার্চ ৪, ২০১৬)

পার্ক বেঞ্চ

(PARK BENCH by Langston Huge ভাবানুবাদ)

 

মি থাকি পার্কের সীটে,   

আর তুমি? তুমি থাকো পার্ক অ্যাভিনিউ -   

কতটুকু দূরত্ব বটে! 

তুমি আর আমিও তো আছি, মাঝখানে দূরত্ব বধির।  

 

আমার ভিখারি হাত চেয়ে নেয় দশ সেন্ট - রাতের খাবার,

তোমার সেবিকা আছে, আর বাটলার।

দেখ - আমিও উঠছি জেগে এই ঘুম ভেঙে!   

চুপ কেন? তুমিও কি ভীত নও এতে? 

আমিও তো যেতে পারি হয়তো বা -

এইবার নয়তো বা পরের বছর – পার্ক এভিনিউ?

তাই নয় না কি!

 

 

ব্যাথারা চলে গেলে প’রে

(AFTER GREAT PAIN by Emily Dickinson ভাবানুবাদ)
 

ব্যথারা চলে গেলে প’রে,

ফিরে যে আসে অনুভূতি,
স্নায়ুরা বসে থাকে চুপ

নীরব কবরের স্তূপে!
তবুও ব্যাকুল মন খোঁজে,

শুধায় শুধু সেই মন,
“এখানে ছিল নাকি সেই,

সেই কি ছিল প্রিয়জন?
ছিল কি সেও গতকাল,

কিংবা অযুত যুগ আগে?

অলসে কেটে গেছে ক্ষণ

বোঝেনি খোয়ানো এই মন।   

 

পথিক ঘুরেছে তার পথে

নিছকই যান্ত্রিকভাবে

অরণ্য, সমীরণ ছুঁয়ে

কখনও চুমে গেছে মাটি,

স্বচ্ছ স্ফটিকেরও মাঝে  

ধূসর  কঠিনতা থাকে

ব্যথারা শিলায়িত - মূক  -  

ফোটেনা পাথরে কোনও ফুল -

অজানা বাহুপাশে বাঁধা -

প্রাণেতে কাঁপন কেন নাহি!

জানিনা কোথা এ পথ যাবে  

সহজে ছাড়ানো নাহি যাবে

যেমনই হোক সে যে সখা -

চলেছে জীবন ছেড়ে খনি।     

 

দিকচিহ্নহীনা নদী

যতিতে বেঁচে থাকা ধারা

আবার দৃষ্টি ফিরে পাওয়া

          বাতাস ঝলক ফিরে আসা

 

এখনই সময় এগোবার -

স্মৃতিতে চিরায়ত ক্ষণ –

বাতাসে ক্রমশ শাদা হিম -

          ব্যথায় রোদন কেন নেই!

মৃত্যু তুহিন শীতলতা -  

ক্রমশ নিথর হয়ে যাওয়া -   

একেও যেতে দেই শেষে

আঁধারে বোবা ম্লান রই –

দেখিনা কিছু আর আমি –

শান্ত সমাহিত হই।  

 

 

অনস্তিত্বই আমাদের অস্তিত্ব

(I’M NOBODY! WHO ARE YOU? By Emily Dickinson – ভাবানুবাদ)

 

মি কেউ নই। তুমি কেউ না কি?

না কি তুমিও কেউ নও! 

তা’হলে তো আমরা যুগলবন্দী - বলো না কখনই তুমি –

ওরা যে নির্বাসনে দেবে - যুগলে পাষান হয়ে যাবো!

কেন যে জানোনাকো তুমি!

 

কতটা হতাশ লাগে, বলো! – এমনই একজন হতে –

কতটা জনমত পাবে -  

তোমাকে মান্য যারা করে - তাদের কাছে যদি তুমি

সারাটা দিনরাত ধরে তোমারই নাম যদি বলো?   

cremation.jfif

যুদ্ধ থেকে ফিরে এলেন তিনি

(HOME THEY BROUGHT HER WARRIOR DEAD – by Lord Tennyson – ভাবানুবাদ)

 

যোদ্ধা যখন তোমার এলো ফিরে

মৃত্যুমাখা ঠান্ডা কফিন-সাজে

মূর্ছা কিংবা কান্না আসেনিকো

মনের গভীর কিংবা নয়নজলে।

যত তোমার বান্ধবীরা ছিল,

দেখেছিলো, বলেছিলো উঠে -

‘একটু তুমি ফুঁপিয়ে উঠে কাঁদো,  

নইলে তোমায় মরণ এসে ছোঁবে’।   

 

‘শৌর্য্যে তোমার যোদ্ধা ছিল মহান,

ঝলসে ছিল উচ্চ বীরগাঁথায় -  

বিপ্লবী সে স্বদেশপ্রেমী ছিল,

দু’চোখ ভরে স্বপ্ন ছিল মাখা,

সত্যিকারের বন্ধু ছিল সখা,

শত্রু এলেও আলিঙ্গনে বাঁধে

দরাজ হৃদয় দরাজ ছিল সেনা’ - 

তবুও নারী বললো নাকো কথা, 

মৌনী থাকে, উহ্য থাকে ভাষা,

নড়লোনা সে, আঁধার শুধু কাঁদে। 

 

তখন তোমার প্রিয়তমা সখি

        আস্তে ওঠায় যোদ্ধা-মুখের ঢাকা -

‘দেখলে না কি! দেখলে না কো তুমি!

তোমার সৈন্য শান্ত মুখমালা   

প্রীতম মুখ ও চিতায় সাজা দেহ !

কোথায় তোমার প্রগাঢ় ভালোবাসা 

এমন তো নয় লুপ্ত ভাষার লিপি’ -

তবুও নারী শব্দহীণা থাকে

চিকচিকে জল আঁখির কোণে নাহি,

স্তব্ধ শরীর, হারালো কোন সুধা!  

ঝঞ্ঝা এবং বাদল এলোনাকো

        চোখ ভাসেনি উজান খরস্রোতে।

 

নয়-দশকি ধাত্রী তখন এসে

        নারীর কোলে নামিয়ে দিল শিশু -

ছোট্টো হাতে ছোট্টো শিশুর খেলা

মায়ের কোলের নরম উষ্ণ ওমে

ছোট্টো শিশুর সরল ডাগর আঁখি

        ঠোঁট খুলে সে “মা” বলেছে না কি! 

ঝড় নিয়ে তাই কালবোশেখি এলো

নয়নজোড়ায় বানভাসি জল খেলা

‘ছোট্টো সোনা তোর জন্যেই বাঁচা,  

তোর মধ্যেই পিতৃপুরুষ বেঁচে

তোকে ঘিরেই আমার নিবিড়তা

বিলাপ ভুলে স্রোতস্বিনী চাঁদা’।  

‘তোর জন্যেই আমার জীবনখানি, 

তোর জন্যেই আমার নয়নপানি,

তোর জন্যেই হাজার জোনাক ছোঁয়া,

আঁধার হলেই মৃত্যুকে আজ ভাঙা,

তোর জন্যেই বাঁচতে শিখি আমি, 

তোর জন্যেই চাঁদপানা মুখ চুমি,

তোর জন্যেই রৌদ্র ঢাকি ডানায়

তোর ও মুখের হাসি দেখি ছায়ায়

তোর জন্যেই পাঞ্চজন্য মুখে

হৃৎপিণ্ডে বাজাই বাঁশি সুখে,

তোর জন্যেই ধ্বংস ছিঁড়ে ফেলি, 

সন্ধ্যা-প্রদীপ আবার নীড়ে জ্বালি, 

তোর জন্যেই রোদ ছড়ানো দানা, 

তোর জন্যেই মাটিতে আলপনা,

তোর জন্যেই ঘুঙুর রাখি বুকে,

ভালবাসার আঁচল ঘিরি শোকে,

তোর জন্যেই রঙ ও তুলির হ্রেষা,

তোর জন্যেই নদীর বুকে ভাসা, 

তোর জন্যেই নিভৃতে ক্রোড় রাখি,  

তোর জন্যেই ভ্রুক্ষেপে নেই উঁকি 

তোকে ঘিরেই সূর্য্যতনয় গড়া -

তোর জন্যেই আবার আমার বাঁচা’। 

 

নৈশগানে চাঁদ ছুঁয়েছে আলো (১) 

(NOCTURNES AT THE WINDOW  1# - by Frederico Garcia Lorca ভাবানুবাদ)

 

ন্দ্র যখন উঠছে ক্রঃমে - আকাশ সোনার মাঠ -  

নীচের পানে বইতে থাকে বায়ু -

আমার সুদূর দৃষ্টি তখন ব্যস্ত 

       আনমনা ওই আকাশ আবিষ্কারে। 

নৈশগানে চাঁদ ছুঁয়েছে আলো।                

 

চন্দ্র  যখন জলের কোলে ভাসে,

বায়ুর নীচে চাঁদ - 

মাটির সে ঘ্রাণ আবিষ্কারেই মগ্ন আমি,  

মত্ত আমার প্রাণ -  

ঠিক তখনই দুই তরুনীর মিষ্টি সুরেল সুর  

বাজলো কানে – উতল আমার মন –

খুঁজতে থাকি গোপন রাখা মানস খরস্রোত -  

উন্মাদনায় জ্যোৎস্না আনি মনে।

নৈশগানে চাঁদ চুঁয়ানো আলো।

 

সহজভাবেই ছাড়ি তখন জলের চন্দ্রলোক –

আকাশভরা জ্যোৎস্না ছুঁয়ে চাঁদের দিকে যাই।

(অক্টোবর ১৩, ২০১৭) 

নিশীথের বাহুডোরে 

(NOCTURNES AT THE WINDOW 2# - by Frederico Garcia Lorca ভাবানুবাদ)

 

মার জানালা দিয়ে রাত্রির বাহু

জলের গহনা পড়ে গাঢ় নৈশরাতে  

খেলে গেছে নীল স্বচ্ছ স্ফটিক-সংগমে 

অস্পষ্ট নদীটির বুকে  -

মুহূর্তের ক্ষতস্থান দিয়ে বয়ে গেছে সময়ের ঘড়ি

ব্যস্ত ত্রস্তপায়ে -  

 

স্বপ্ন কিছু হয়ে গেছে ফিকে লহমায়।

 

 

 

স্বপ্ন

(DREAM - Langston Huges ভাবানুবাদ)

স্বপ্নের দ্রুতগতি ধরে থাকো হাতে।

স্বপ্নেরা যদি মৃত হয় -

ডানাভাঙা পাখিটির মতো

উচ্ছ্বল প্রাণ - ওড়েনা কখনো ।

 

স্বপ্নের দ্রুতগতি ধরে থাকো হাতে।

স্বপ্নেরা হারালে একবার

প্রাণ তার রসদ ফুরায়

অনুর্বর হিমায়ত তুষারের মাঠ ফসল বোনেনা।  

আজ রাত্রে লিখে যাবো আমি যত সব দুঃখতম লেখা

(TONIGHT I CAN WRITE THE SADDEST LINE – by Pablo Neruda)

 

রে নাও আজ রাত্রে আমি লিখে যাবো যত সব দুঃখতম লেখা।

 

লিখে যাবো, ধরে নাও, যেমন –

এ রাত্রি ভরে নক্ষত্রেরা ফুটেছে অস্ফুটে -  

নক্ষত্রেরা নীল -

নক্ষত্রেরা কেঁপে ওঠে কালো অন্ধকারে - অতিদূর থেকে। 

 

রাত্রি ভরে গান গেয়ে বেড়ায় বাতাস, সারাক্ষণ।

 

আজ রাত্রে আমি লিখে যাবো যত সব দুঃখতম লেখা।

আমি তাকে ভালোবাসি –

কখনও সেও কিছু ভালোবেসেছে আমায়।

 

আজকের রাত্রির মতো সারারাত আর সেই রাতে

সেও ছিলো এই বাহুডোরে -

বক্ষলগ্না  -

খোলা এই নির্মেঘ আকাশের নীচে -  

ঠোঁটে ঠোঁট কোলে কোল নিশীথের পাখিদের মতো – ফুরোনো আকাশে।  

 

আমি তাকে ভালোবাসি, কখনও সেও কিছু ভালোবেসেছে আমায়।

অমন অতল আঁখি ভালো না বেসে থেকেছে কি কেউ কোনো গোধূলিবেলায়!  

 

আজ রাত্রে আমি লিখে যেতে পারি যত সব দুঃখতম লেখা।

আমি ভেবে যেতে পারি - আমি যেন হারিয়েছি তাকে  -

সে যে নেই নিকটে আমার –

 

আজ রাত্রে আমি শুধু শুনে যেতে পারি এ গভীর রাত্রির কথা –  

গভীর গভীরভাবে তাকে ছেড়ে –

কবিতার ছন্দোময় স্তবকেরা আত্মার সাথে

এক হয়ে মিশে যায় –

শিশিরের ধ্রুপদী ফোঁটা প্রসারিত প্রান্তরের ঘাসেদের বুকে একসাথে লিখে যায় –

আজ রাত্রে আমি লিখে যেতে পারি যত সব দুঃখতম লেখা -

আমি শুনে যেতে পারি রাত্রির ঘনিষ্ঠ কথোপকথন। 

 

আজ রাত্রে নাই যদি থাকে তার ভালোবাসা, হাসি, ঘন ভ্রূ –

মৃদু অনুযোগ -

মেয়েদের মেয়েলি শরীর -

নিশীথের হরিনীর মতো কালো চোখ - আচমকা হারানো চুম্বন -  

তবুও তো নক্ষত্রেরা আছে – শুধু নেই তুমি – তুমি – শুধু তুমি প্রিয়তমাসু।

 

এটাই তো সব কিছু –

দূর থেকে প্রিয় সেই নারীটির গান –

সেই কবে উড়ে গেছে - দূর থেকে – মসৃণ বাতাসে –

বন্ধ হয়ে আসে চোখ – মন – আয়েশে – নিবিড়ে -

তবুও তৃপ্তিহীন মন – বোঝেনি এখনও - সে যে আর নেই কাছে।

কাছে নেই পিউ কাঁহা – রজনীগন্ধা আর শাদা বৃষ্টিপাত।

 

এই সেই একই রাত, একই জ্যোৎস্না - রাতের বনানী – 

আমরাও সেই রাত, সেই জ্যোৎস্নায় আছি – থেকে যাই -

তবুও একাকী -

 

আমি জানি, আমি আর কখনই ভালোবাসিনাকো তাকে –

নিশ্চিত –

আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম কোনও একদিন

ওই আঁখিপানে চেয়ে –

আমার আখরগুলি কতদিন কতদিন ছুঁয়ে গেছে বাতাসের গতি –

প্রতীক্ষায় থেকেছি কত দীর্ঘশ্বাস নিয়ে -  

আকুল হয়েছি কত কন্ঠস্বর চিনে নিতে তার –

ফিরে আর আসেনি কখনও।     

 

এখন সে অন্য ঘরে যাবে - 

এখন সে অন্য হয়ে যাবে –

এখন সে অন্য কারো – অন্য কারো কন্ঠলগ্না হবে –

আমার চুম্বনের আগে ঠিক সে যেমনটি ছিল –

হারানো কঠিন বড় সেই চোখ – সেই সুর – সেই কন্ঠস্বর –

সেই মৃগনাভি!   

 

আমি আর এখন যে ভালোবাসিনাকো তাকে –

নিশ্চিত –

তবুও যে একদিন আমি ভালোবেসেছি তোমায় –

ভালোবাসি এখনও তোমায়! 

জানিনা কেমন করে – তবুও – অস্থির –

ভালোবাসা! সে তো জানি ক্ষণিকের জন্ম নিয়ে আসে –

কিন্তু ভুলে যাওয়া? সেও কেন দীর্ঘস্থায়ী হয়!    

 

আজকের রাতের মতো সেই রাতে সেও ছিল বাহুলগ্না – ঘনিষ্ঠ আমার –

তৃপ্তিহীন মন – বোঝেনি এখনও - সে যে আর নেই

আর নেই এত কাছে। 

 

এই মোর শেষ যন্ত্রণা -

এই মোর শেষ কিছু কথা -

আজ রাত্রে এই মোর শেষ কাব্যকথা।

 

আজ রাত্রে আমি লিখে যাবো যত সব দুঃখতম লেখা।

(অক্টোবর ২৯, ২০১৭)

 

 

বৃন্তছেঁড়া গোলাপ

(NOBODY KNOWS THIS LITTLE ROSE - Emily Dickinson)

 

ই যে দেখো ছোট্ট গোলাপ পথের ধারে –

একলা পড়ে অন্ধকারে

কেউ কি চেনে কেউ কি জানে এর কাহিনী?

 

হয়ত -

তীর্থ থেকে ফেরার পথে লুঠতরাজে হারিয়ে গেছে ছোট্ট পথের গোলাপখানি –

সঙ্গীহারা বৃন্তচ্যুত ধূলোয় লুটোয় পাপড়িগুলি -  

 

হয়ত –

আমিই সেদিন সন্ধ্যেবেলায় ফেরার পথে ঘরের দিকে

গোলাপ কিনে, সুবাস দিয়ে ভরিয়ে দিতে তোমার বাসর

মুগ্ধ হবার খানিক পরেই ছিন্ন বাসরশয্যা শেষে

পথের ধারে রেখেছিলেম আঁধার রাতে – ছোট্ট এমন গোলাপখানি –  

 

কেবল শুধু –

হতাশ হওয়া মৌমাছিটা – যেটা এটার বন্ধু ছিল –

খুঁজবে অনেক সময় নিয়ে –

“কোথায় গেলে বন্ধু আমার – আমায় ফেলে  

বৃন্তচ্যুত গোলাপ তুমি – তোমায় আমি খুঁজছি কত

সোনার রোদের গন্ধ নিয়ে -

ফুল বাগিচায় আর দেখিনা –

হারিয়ে গেলে বন্ধু আমার –

নিষ্ফলা এ জীবন আমার তোমায় ছাড়া”।

 

কেবল শুধু –

নীল-তুঁতে সেই প্রজাপতি – যেটা ব্যস্ত দিনের পরিক্রমার

কর্ম শেষে বসতো এসে ছোট্ট গোলাপফুলের বুকে -

গন্ধ নিত আয়েশ ভরে – ক্লান্তি তখন হারিয়ে যেত

দুপুরবেলা ফুল বাগিচায় – অনেক সময় হারিয়ে যেত –

মৌমাছি আর প্রজাপতি - ছোট্ট গোলাপ আড্ডা দিত

ফুল বাগিচায় -   

 

কেবল শুধু –  

সেই পাখিটা একাই যেটা দেখতো বসে উঁচু তরুশাখার থেকে  

অবাক চোখে ভাববে বসে

কোথায় গেলো সেই গোলাপী ছোট্ট গোলাপ হাল্কা কচি পাতার ফাঁকে

এদিক ওদিক দুলতো যেটা –

বাতাস যাকে আদর করে বুলিয়ে দিত স্নেহের পরশ!

 

কেবল শুধু –

সেই বাতাসই দীর্ঘশ্বাসে কাঁদবে বসে নিথর হয়ে

স্বপ্নে গোলাপ পাপড়ি নিয়ে

“কোথায় গোলাপ নির্বাসিত চৈতি রাতে”।

 

ছোট্ট গোলাপ – মৃত্যুবুকে পথের ধারে অবহেলায় অনাদরে। 

এতই সহজ তোমার মলিন নশ্বরতা।

(অক্টোবর ৩১, ২০১৭)

সজল খোরশেদ
সজল খোরশেদ

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

womenday.jpeg

অগ্রহায়ণের শরীর
 

কিশোরীর দুটো প্রজাপতি এখন আমার
পঞ্চতাল লয়ে তুলিতেছে কাল বৈশাখী ঝড়,
বিধি-নিষেধ, ধর্ম- শাস্ত্র, কর্ম পুঞ্জিভূত
আবহ ঘিরে তোমার স্তনে গিরগিটি কাব্য।

মৃদু মৃদু দুলোনী আর মাদকতা মোড়া তপ্ত
প্রশ্বাস কামিনী গন্ধা শরীর দুটো শুক্রাণুর
চাদরে ছড়ানো ছিটানো বর্ণমালার মতো
শরীরি ঘ্রাণে যখন তোমার মথিত মতি।

ভুলগুলো তাই প্রকাণ্ড আঁকড়ে আদিম পোকার
সম্ভাষণ শরীরে তোমার, উন্মত্ত শিল্পীর
অগোছালো ঢেউ-এর তালে ঊষাদর
এবং নিয়ে গেছো তুমি ঠোঁটের উষ্ণতা আমার।

স্নান করার রত্ন সম্ভার নিয়ে একা একা
গহিন অরণ্যে এসো অগ্রহায়ণের শরীর।।


নতুন একটা জন্ম

নূপূর বাঁধতে জানে না কিশোরী
মুঠি চেপে খেলছে, উপছানো হল্লা
ঘাম ঝরে চেতনার নদী তবুও ক্ষীণ
স্রোতে ভিজছে দূ’কুল সহস্র নব জন্ম
কবিতার কফিনে সাঁতার মগ্ন সভ্যতা
বিবর্তন রোগা ঈশ্বর; গতকাল শ্রাদ্ধ।
কিশোরী খেলছে; নূপূর বাঁধতে জানে
মাথায় লাল ফিতার বেণী, জরাগ্রস্থ মৌনতা
স্বল্প শিহরণ কাশবন দুলছে নিত্য,
মশারী খাটানো জানালায় পর্দা গুমোট ঘড়
উর্ণনাভের কৌশল, জোছনায় মেতেছে রাত
ঘেমে উঠছে শব্দ, ঘেমে উঠছে স্বপ্ন ভেলা
ছন্দ মৃন্ময়ী প্রভাত, একটা নতুন জন্ম;
দুটো হাত সঠিক কাঠামো প্লাবিত ভ্রূণ

নূপূর বাঁধতে জানে কিশোরী বেণীচুলো

 

 

বেষ্টনী
 

রক্ত মাখা ন্যপকিন ছুঁড়ে ফেলে কিশোরী
বসন্তের প্রথম সূয্যরশ্মি শরীরে  এখন

পৃথিবীর বিস্তর বুকে নারীর ছায়া

রাশি রাশি বাতাসের ঢেউ ভেঙ্গে উড়ছে
মৌমাছি ও মানুষের দল, মধু – সত্য এবং
সৌন্দ৲য্যের  উদ্দেশে গন্তব্য নিদিষ্ট

গুয়ান্তানামো বে র বন্দি শিবিরে কবি তুমি
মেলে ধর তোমার শ্রেষ্ঠ কবিতাগুচ্ছ তোমার
আত্ম প্রশান্তির রূমালে মুড়িয়ে দাও ওদের

শাদা হয়ে যাচ্ছে বিড়ালের গোঁফ ক্রমাগত
তন্ত্র আর মন্ত্রমুগ্ধ ষড়যন্ত্রের বৈরী শিকার
স্বপ্নের জগৎ আমাদের রঙধনুর বন।

 

দৃষ্টির পেখম
 

র্ণমালার পেখম ঝলসে উঠছে
অধরা অবয়বে আনন্দের হাসি
শূন্যের ভারাক্রান্ত অবস্তগত উদাসী
নীল চোখ চোখ দুটো আকাশে দুলছে

আমি- তুমি, তুমি-আমি, স্বরবর্ণের কার্নিশে
হরফ পরিচিতির চৈতন্য মুখরা সভ্যতার শিশু
তোমার আমার প্রেম চন্দ্রবিন্দুর বালিশে

ক্ষুব্ধ নদী না ধরে জল, তো না ধরুক বুকে
পুষ্প কানন বিমুখ হোক না মাধুকরীর দল
পেখম ছায়ায় দুর্ভেদ্য তোমার বল
চেয়ে আছি আমি সে-ই অন্য সুখে।

 

কলান্ধ


কেউ নেই এখানে, একাকী একাত্মবোধ ওখানে

শ্রাবণের মৃদু মেঘ সিক্ত করছে ভূ
শ্রাবণী স্নানে সবুজাভ গালিচায় এক চিলতে রোদ
তোমার হাসির কলধ্বনি গাঁয়ের পাশে আঁকাবাঁকা
নদীটার শিয়রে।

পৃথিবীকে ভালোবেসে কুজ্ঝটিকা শিহরণী উষ্ণতায়
ক্রমাগত ঝাঁক ঝাঁক সুনিপুণ শুভ সকালের ঝড়
শরতের কামিনীগন্ধা স্পর্শে মেতে ওঠে ধী
সিংহের নখরে, রেগে আছো কিন্তু  তুমি তবুও!
প্রেমকিটাক্রান্ত অভিমান।

গাঙচিলের উড়ন্ত গাঙে সহস্র কোটি চিতা তারুণ্য
রঙের আবরণভেদী ঔজ্জ্বল্য পশরা পাটাতনে
ঊর্মির খেলা খেলে পুরুষ নারী কলামুগ্ধ
দাম্পত্য ব্যালকনি।

প্রাণেরা প্রানাবরণে সৃষ্টির শিরা উপশিরায়
সৌন্দর্য সত্য উৎসুক, তোমার শরীরে আমি তাই

 

 

তানপুরা
 

ত্নগর্ভা অনুভূতিগুলো দুলছে শরীরি স্বত্বায়
পানকৌড়ি খুঁজে পেয়েছে মাছ জোৎস্না রাতকে
শৃগালের অভিবাদন, এশিয়ার কোন গাঁয়ে দ্বিপ্রহর
বেলাতে বসেছে নুড়ি কুড়ানোর পশরা

ছড়ানো ছিটানো খেলনা নিয়ে ব্যস্ত কিশোরী
রঙধনুর সাত রঙের একীভূত দ্বিধাহীন চিত্ত
আন্দোলন কী সব বিস্তর মহাশূন্যে; অতঃপর মোহনীয়
প্রেমাতুর করতে পারো একে অন্যকে অতএব-
টেড হিউয়েজ এর ‘কাক’ পর্দার ওপাশে স্বর্ণালী
আসর জলরাশির বিস্তর ভাঁজে খুন কণিকায় শিহরণ,
পৃথিবীর ফুসফুসে অগ্নিকাণ্ড – অপরাধী আমরা;
আমৃ্ত্যু বেঁচে থাকি মৃত্যুতে মৃত্যুকে পরাজিত করে

নূপূরের যে শব্দ এ অনুরণন জানালায়
নিয়ে গেছে তানপুরা কোথায় কে জানায়

 


আক্রান্ত শৈলী
 

বিতার শরীর ভাঁজে অনেক রাখতে রাখতে
আমার ‘এক’ হারিয়ে গেছে
বহুত্ববাদীর মতো ক্রমাগত শিশির উদ্যান এখন
বেদি মলে উপঢৌকনের নানাবিধ স্থাপত্য শৈলী

কেউ নেই। রয়ে গেছো তুমিই একমাত্র কবিতা
যার শাখা প্রশাখা সালোকসংশ্লেষক শিহরণ
মলয়ানুভুতি মূল কাণ্ড শিরা উপশিরায় একীভূত
আত্মাকে আবিষ্কার করি নতুন সকালের জন্য

গহ্বর ফণীতে বেঁধেছ কিন্তু; মৃত্যুর অববাহিকায়
বরফ গলা নদী  ক্রমক্ষয়িঞ্চুমান অবয়ব ধূসর
আত্মার রঙে রঙ্গিত চির সবুজেশ্বর ও তুমি
প্রেমাক্রান্ত বাতাসের অগ্নিময়তায় আমাদের বাসর

যদি তোমার একটা শব্দও হতে পারতো আমার শ্বাস
প্রশ্বাস ক্রিয়াতে, তেলাপোকা গিরগিটি পিঁপড়ে মরুক

আকঁড়

 

হাঁসেরা  জলউপরিভাগে  ভাঁসছে  তাই-

বন্ধু নেই আমার, স্বরস্বতির বেদীমল

উপঢৌকনাকীর্ণ চন্দ্রশেখর কোন ধর্মের গাঁয়ে

নিজেকে ভেসে দিই; পাগলের এক চিলেকোঠা

 

সকল দৃষ্টির গোচরীভূত পুষ্পের প্রেমনাথ বীশি

নচৎ এগ্রহ আবরণ স্পন্দনহীনা কী বিভৎস চৌপাশ

ভূ-প্রানচরা, জোনাকীর আলো ঊষাকাশের সাথে

রোদেলা আমেজে মেতে আছে বঙ্গের উপকরণ

 

রঙধনু তোমার রঙের শিঁয়রে মিটিমিটি স্মিত হাস্য

প্রেম নেই তবুও রাঙিত হতে হয় মনরাগিণী বহ্নি

আত্নহরা আত্নাতে আত্নারা, এমনই আমার জন্ম

মর্তের কাছে- স্বর্গেরা; দর্শনেও সেই একই রকম

 

শরীরে বাতাস লাগছে না-  সে মতও নয় ঠিক

চৌদিকে ঊষাস্মরনীয়া  প্রেমতি প্রেমমগ্না আকঁড়।

 

বঙ্গরাজ

 

খেলারাম খেলে

প্রেমের গর্ভের জলে

এই মাস শ্রাবণ

বাজে অধরা কাঁকণ

ঐ সজনে গাছের পাখি

আজও উঠছে ডাকি

খেলা-রাম খেলে

পঞ্চ পেখম মেলে

চোখে আসে জল

স্বপ্নের পায়ে মল

অজড় অমর অক্ষর

কবি ও কবির কর

এই আমার খেলারাম

নাগেশ্বরীর জলে আরাম

আজন্ম চলছে খেলে

আত্না আত্নায় এলে

আর কী নিস্তার যাওয়ায়

এসে পরো শ্রাবণী হাওয়ায়

অক্ষর শব্দ এই

তুলছে স্বপ্নের খেই

আর তাই তোমাকেই

‘কবিতা’ তুমি সেই

নামহীন তুমি কবি

শব্দ ও শব্দের ছবি

প্রেমের গর্ভের জলে

খেলারাম খেলে চলে

এই শ্রাবণের আকাশে

‘শর্করা’ সবুজ ঘাসে

ষড়ঋতুর বারো মাসে

চাষী আর চাষে

আছো তুমি প্রতিদিনই

কাব্য নয় কবি-ই ঋনী

এই প্রেমের গর্ভের জল

আমার এ স্বপ্নের দল

খেলারাম এখন আমার ঘড়ে

ওড়ে, এ শ্রাবণ ওড়ে

তোমার শব্দে

তোমার ছন্দে

উঠি আমি গেয়ে

বঙ্গরাজ কবি বেয়ে।।

 

** শ্রদ্ধেয় কবি লেখক নাট্যকার সৈয়দ শামছুল হক মহীরুহ কে উৎসর্গ তাঁর মহাপ্রয়াণে ।   

                                                                                                                               

নৌ-মাছি

           

মার নদি নামো যদি

জল ধরেনা গায় কাদা ভরেনা পায় 

ঢেউ খেলে দেখো মেলে

মাছ কাঁকড়া বক প্রচুর থক্ বগ্।।

আমার নদি থামো যদি

ওকূলে কাশবন ওকূলে সবুজবন

শরৎ ছাওয়া গ্রাম্য হাওয়া

সিক্তস্বিনী রমণী দেহ

পোপ ও পাপ সেও।।

আমার নদি

অনন্ত অব্দি

ঢেউ বন্যা ক্ষরা

কাব্য ছন্দ অন্তরা

কবি ধরা গীতি গড়া

                                                                    কালে জ্বালে মহাকালে                                          দর্শন ধর্ম এপালে

আমার নদি চিরন্তন গতি

শ্রোতের ধারায় বৃক্ষ গজে

বিজ্ঞান শৈবাল নিত্য মজে

                                                                     ভূগোলে স্তূপ রেখারা চুপ

ওরা সীমা টানে

রাজা রাজ্য আনে

নদি নদে নদি ‘ম’তে

‘ম’তে মা ‘ম’তে মায়া

‘ম’তে মধূ ‘ম’তে মৌমাছি

নদিতে আছি নৌ-মাছি।।

কাব্যতেষ্ঠা

          

তেলাপোকা, ইদুর, টিকটিকি, গুগরী পোকা

তুমি জানো না এসব এখানে- ওরে বোকা

কবিতা যে নেই এঘড়ে

বাঘে ধরে

কুমিরে গায় জাতীয় সংগীত

চৈত্রের কুয়াশা জৈষ্ঠের শীত

 

প্রভাতের পেটে হজম হলো বর্ণমালা

স্বরচিহ্নগুলি সাঝেঁর জোস্নাতে নালা

 বেয়ে তিমিরে

হাওয়া শিরশিরে

এই বুঝি কবিতা এলো

রাত শরীর খুলে দিলো;

শুঁয়ে আছে কংকাল মরার খুলি

কুমিরের মুখ বিস্তর খুলি

 

কবিতার জন্য দেই ভোট

গুগরি পোকা ডাকে, টিকটিকির ঠোঁট

বর্ণ খায়, তেলাপোকা চাটে চিহ্ন

সাদা পাতা ইদুরে ছিন্ন ভিন্ন

কবিতা নেই তাই যুদ্ধ

রক্ত মৃত্যু স্বর্গ নরক বুদ্ধ

 

কবিতার মন্ডু নিয়ে স্তব্দ কবি

সিংহাসনে সভাসদ নিয়ে হাম্বুরাবি,

 কে দেবে কবিতা আমায়

কে সময় বানায়

 

কাব্যরাগ

 

যামিনির কামিণী

রাখিনি গাঁথিনি

ওখানে নামিনি

 

আকাশে বাতাসে

এপাশে ঐপাশে

ছায়াটা ওপাশে

শিশিরে শিশিরে

মিশিরে পিষিরে

বর্ণের তিশিরে

 

রুয়েছি নুয়েছি

খুয়েছি ধুয়েছি

শব্দেই শুঁ’য়েছি

 

সকালে অকালে

কপালে ঠকালে

রৌদ্রেই শুকালে

 

আঁকিনি মাখিনি

আনিনি  চাপিনি

স্বপ্ন শানিনি

তাই জানিনি

তুমিই পানিণী

কাব্যের রাগিণী।

কাব্যগ্রন্থি

                        

তোমার বক্ষবন্ধনির হুক

আলগা হয়ে গেলে

কবিতার শরীর মেলে

ন্যাপকিনের সাথে

কবিতার তরুত্তাপে

গৃষ্মের বর্ষা দেখা

বহুমত্রিক সরল রেখা

 

মেনোপজ আক্রান্ত শরীর ধোঁয়া জল

               দাম্পত্য শিঁয়রে

              প্রজাতি ভিরে

একীভূত তুমি ও আমিতে

ক্রমজোমের নাভীতে

কাব্যিক শিশু

         বৃন্দাবণ

           তরঙ্গরণ।

 

কালে মহাকালে

         এভাবই তরঙ্গঢালে

           এ নয়নভিরাম দ্বিজ;

 

ততক্ষনে অনেক সভ্যতার

         স্বর্ণালী আঁকড়

       আমিও

       তুমিও।

 

মন

র্মাক্ত নাভীমূলে নিয়মের বলিরেখা ধূসর

কেমন আবর্তিত হতে থাকি তোমার নিতম্ভকূলে

চঞ্চুর ঊষ্ণাভ প্রকৃতি মলয়ে একীভূত আমরা; দুলে

ওঠে স্বর্গ-নরক, ঈশ্বর যিহোভা ভগবান আল্লাহ্ মূখর

দক্ষিন এশিয়ার আকাশে সেই কখন থেকে

নক্ষত্র ঘেমে ওঠে - ওড়নার প্রজাপতি এঁকে

চলে সবুজ অরণ্যানী; শব্দ ছড়ানো হাতে

তোমার দেওয়া রংধনূ আর হেমন্তের রাত

 

কাব্যর গুহা গহ্বরে দূর্ভেদ্য তিমির স্বজন

এক আঁজলা ফুলের সুবাস পৃথিবীর বাতাসে

 বাতাসে যা কীনা আমারই প্রশ্বাসে

এসে তুমি যা দেখলে এখন

কোন উচ্চাশাতে দুলছেনা কাশবণ

শিহরীত করে শুভ্রসিতা এখনো তোমার মন।

 

 

কেশবিন্যাশ

 

তোমার এখন্ড লম্বাচুল আজ অব্দি বেঁধে রেখেছি

অবাঞ্চিত বর্ধিষ্ণু মাংশ খন্ডে, তবে কী অক্ষমতা

নাকী ক্রমবর্ধমান শক্তির কাছে শাওয়ার সভ্যতার শরীর

ভিজছে ক্রমশ গড়িয়ে যিচ্ছে জল রাতের গর্ভে ঊষাভ্রূণ

 

যা কিছুই শরীরের অংশ ভাষার ব্যাকরণ নৈবদ্য

কেশবিন্যাশ পরিপাটি একগুচ্ছ স্পার্টাকাস এথেন্স

অতঃপর যমজ হলো এ গ্রহ- শৈবালে যুদ্ধ

আমার কৃষ্টির নুপূরগুলোর ভগ্নাবশেষে চন্দ্রমাভা

 

চন্দ্রকরোজ্জলা এঘড়ে আমার ও চন্দ্রের একই রূপ

মনোহরা নাবিকের ধূপধোঁয়া আর পরিবর্তনে মজ্জা মাশ

বড় বড় বৃষ্টি ফোটায় আরক্তিম জেগে ওঠে বিপ্লব

কচি হাতগুলো নিড়াণী সাথে সিলেবাসে উঠছে ভেসে

 

উঠোনের শালিক শিল্পের নুড়ি করছে খেলা

এমন দিনে শুভ্রসিতা কী আর এমন কেশ মেলা।

নবো’দয়

                                

রিভ্রমনের দৃষ্টিবলয়ে রাশি রাশি অববাহিকা

নোঙর প্রবণা মনভোমরা প্রতাশ্রয় প্রয়াশি

রাত ও দিনের কাছে ধর্ম ও কর্ম উদাসী

প্রেমবেষ্টনী অনূভবের তটিনী ঘেঁসে প্রলয়বিভা

 

বক্ষবন্ধনীর হুক থেকে নির্দিষ্ট দূরের দুটো হাত

রেলিঙের বাতাসে দুলছে প্রজাতী প্রকরণ শৈলী

গত প্রহরে যে সব ছন্দে ও রঙে মৌয়ালী

শুধুমাত্র একটা সুন্দর সকালের অবগুন্ঠিত স্নান

 

দ্বি-প্রহরের স্বর্ণকরোজ্জলা রশ্মিতে অনূজের নবোদয়

ঠিক সেই রকম দূটো অতলান্ত চোখের গুহায়

সোমপুর, খাজুরাহো, অজান্তা, ইলোরা, আফ্রোদিতি পার্থেনন প্রভায়

নিঃষ্কণ্ঠক অব্যয় অপভ্রংশে পঞ্চসতির বিছা-মল ময়

 

গ্রীক সুরাপাত্রের জন্মভূমী নিদিষ্ট সীমার জেলি

আমাদের কাছে আমাদের এসো পাঁপড়ী মেলি।

 

 

প্রবৃত্তি

বেঁচে থাকার প্রবনতাগুলোই আমাকে আমার মতো

করে গড়ে রেখেছে উপকরণ শৈলীর ক্ষুদ্রাংশ

প্রতিবিম্বে বৃহদাংশের যা তোমার চুম্বনের উষ্ণতার

পাটাতনে যা সভ্যতার শিঁয়রে স্বল্প স্বল্প গাঁথুনি

 

ঝলসানো আরক্তিম জানালায় নিতম্ভমূলে স্বপ্নের

প্রেম আর কাকাতুয়া,মৃত্যু আর উদ্ভাবনী অস্ত্র কৈলাস

বিন্দু সমারোহের বরেণ্য কোল্ললে সুন্দরীতমা

উপঢৌকনের নোলক বসন্ত বাঁশরী দ্বী চরা

 

দৈব্য অদৈব্য আনন্দ পরাভূত ব্যবস্থা প্রবন রাষ্ট্র

ঘোড়ায় বিস্কুট খায়, ঘোড়ায় কবিতা খায়

মিছিলে মিছিলে দ্রোহের রঙ পাল্টাতে,

কিশোরী সাজ ঘরে খুলছে বিছা মল বন্ধনি

 

আদিম প্রবৃত্তি প্রবণ নারী নাচে ঠোঁটের ডগায়

ছন্দ ও গন্ধ মহতি কাব্য আলয় নিঙরে নেয় ।

 

 

প্রেমমাখা

 

মেঘ জমানো শরীর কামগন্ধা চৈতন্য শুভ্রসিতা

রক্তগুলো উঠে আসছে উপরিভাগে ,

ঠোঁটে নাভীর অববাহিকায় জন্ম আঁকে

প্রবাল পেলবতা ও গণতন্ত্র; ইউরোপ আস্ফালনচেতা

 

সাক্ষর ঈশ্বর সম সাক্ষর পড়ছেনা –বেকার

া-কার ও নিরাকার সেতুতে ক্লান্ত পথিক

মহত্তম আঁচড়টা ফিদা হুসেনের রঙের বাটিতে

এলিয়ে পরে আছে সৌন্দর্য ও সত্য -জ্বলছে নেত্র

 

ছাতিমের ঘ্রাণ এসে হুমড়িয়ে আপামদস্তক

আবর্তিত আর তুমি, প্রেম শিখে নেয় আত্না

অতপর সুরেলা আত্নজ হলো পৃথ্বি, ভুলেরা

এসে পাটাতনে তোমার মৃদু মৃদু দুলুনি –আর

 

বহুরূপি বিচিত্র সভ্যতা হন্তক ইউরেনিয়াম ও শিশু

খেলনাতে একাগ্র; আরও একটা চুমু বেশি তাই

শাহবাগ

 

শাহবাগের মোড়ে

ধুলি নেই ধোঁয়া ওড়ে

ক্ষুদ্র মুদ্রা নয় ডলার ঘোরে

কোকিল নয় কাক ভোরে-

রাতেও ডাকে, কদম জোরে

ফেলে চলে সূদর্শনা রোবট মুড়ে

এক একটা মানুষের মতো;

 শাহবাগে গর্ত কতো

ছিলো- নগরবীদদের নকশায় সেতো

খুজে পাবেনা তুমি, এতো

অন্য নক্ষত্র

আজব ক্ষেত্র

মেলো চুপে নেত্র

হাঁটে একই পথে শত্রু মিত্র,

এ মোড় সত্যে মিথ্যে মেলানো

পাশ্চাত্যে হেলানো

সুরা পাত্রে গেলানো

বেজে চলে পিঁয়ানো

হারিকেল রাঢ় পূণ্ডর্ধনে হারানো

একটি শব্দ খুজি এখনো

এখানে, এ শাহবাগে

ডাকে আমাকে

মেঠোপথ ধানক্ষেত ভাঁটফুল যাকে

স্বাগত জানায় বৈশাখে

পাতা ঝরা, মাঘে খেজুর রসপিঠার ঘ্রাণ মাখে

যে গাঁ,শিমের মাচায় পূঁইশাকে

ডগায় দোয়েল ছবি আঁকে

 

শাহবাগে

 

ন্দ সাঁতরায়

বর্ণ  হাতরায়

শব্দ খায় খায়

স্বপ্ন যা –ই পায়

ডাষ্টবিনে যায়

পরিচ্ছন্নকর্মী গাড়িতে ওঠায়

এরপর বুড়িঙ্গায়

 

আসে নতুনে আঁকায়

কালের পাখায়

মহাকালের শাখায়

চূর্ণ –বিচূর্ণ যাঁতায়

শাহবাগ কবিতা খায়

শাহবাগ কবিতা চায়

শাহবাগ কবিতা পায়

শাহবাগ কবিতার নায়

বৈঠা হাতে কবিরা শাহবাগ বায়

 

ডাকে আমায়।।

দৃষ্টিভঙ্গিমা

                

তোমাদের ঘৃণার কোল ঘেঁসে অবজ্ঞার লালায় তিরস্কারের জেলিতে

স্বপ্নের এ্যামাজন আমার; একঘড়ে থেকেও দেখনা কেমন

উচ্ছসিত দৃষ্টি আমার। তোমাদের ঈর্ষার আকস্মিক  সমাপন কাংখিত নয় তাই, জীবন আমার সহস্র বর্ষের হর্ষ গীতে রূপকুমারীর রূপ আর স্বরস্বতির আঁচল

 

ঝাঁক ঝাঁক কাব্যকৌড়ি এখন নিউরণের কোষে কোষে

পেলবতা মুড়িয়ে থাকে তুলি; একাধিক মুদ্রাদোষে

মানুষ হয়ে উঠতে হয় আমাকেও প্রতূষ্যে খাদ্য সন্ধানরত

বিহঙ্গের মতো, গ্রহ ‘পরে প্রজাতি এক এই অবনত

 

বিশেষণের পশরা কাঁধে ভারাক্রান্ত নীতিনর্ধারক সমাজ

 

নচেৎ গোত্রভূক্ত হয়ে যেতাম আমিও আবাবিলের ঠোঁট

অতঃএব  ঘাসফুল । দলে পৃষ্ট করো তুমি-পথিক

প্রতি পদে পদে পূণঃ পূণ আসব নিয়ম অনিয়ম মাফিক

ঈদহর্ষ এখন চৌদিকে নমঃ নমঃ গনতান্ত্রিক ভোট

বিপক্ষ

 

বিতা  আর তুমি

মরুভূমি

হয়ে যাই

তৃতীয় পক্ষ এসে যাবে

তুমি আর কবিতা

নয়ণাভিরামে প্রেম অত্যাসন্ন

নুপূরের বর্ষাতে

নুপূরের বর্ষাতে ভেসেছে

গুগরী কেচোঁ

প্রাগঐতিহাসিক মেছো

আমাদের মনূষ্য প্রজাতি

হাতে সভ্যতার ছাতি

তুমি আর তুমিতে

প্রকৃতির ষড়কলা

ষড়নৈবদ্য

মত্ত মত্ত

পৌষের পিঠা

কবিতার মিঠা

আর তোমার ঐশীস্মিতা

উষ্ণ পরশ

মহৎ-ই স্বরস শরীর ছড়ায় শরীরে

কবিতা ও মৃত্যুকে ঘিরে ।

হাড়

র্তে পরে গেছি ফণীমনসার ঝাড়

কূসংস্কারের হুকে সেটে আছে দু’চোখ

লালা ঝড়ছে ক্রমাগত ঝড়ছে লালা মুখে, উৎসুক

দু একজন এ পথে এখন মরার হাড়

 

প্রেম নামক পেলবতা মসৃন অনূভুতিরা নিঃস্ক্রিয়

কলিঙ্গ যুদ্ধে নিহত যোদ্ধার মূড় মূড়ে হাড়ে

দৈত্যটা এসে দাড়িয়েছে এ হাড়ের উদিয়

আলোকচ্ছটায়; লড়াইয়ে সভ্যতা কী হারে

 

বাবার জায়নামাজ তসবীহ্ ই যুদ্ধের কারণ

ধ্বংসের আঁকড় মৃত্যুর বিশাল সারি

১৭৫৭ এর কাকাতুয়া উঠোনে এখনো আমারি

ঠোঁটে স্বর্গের নূড়ি পালকে রত্নের প্লাবন

লাউয়ের মাচায় টিয়া হলো কাকাতুয়া

ভবিষ্যৎ আমাদের শিখছে নব নব সুরা

 

আমার দেহের পশ্চিম খন্ডে ওড়ে যা

 মেলেনা পূর্ব খন্ডের সাথে- আমারই

 পূর্ণাঙ্গ অবয়ব তবু একত্রে দেখা যায়

হাড়ে হাড়ে হাড্ডাহাড্ডি করে হাড়ে রা

ইচ্ছামতি

 

চ্ছেগুলো একেঁবেকেঁ গেলেও কেমন তোমাকে ধরি

আসলে-ই ধরি না হয়তো, এসে ধরা দাও

স্বপ্ন ও প্লাবনের গাঁও, কন্ঠ তুমি ধাও

এ নাঠাইয়ে কেমন ছায়াটা পড়ছে নড়ছে,

কবির তীরতনূ প্রগতিতে কেউ ক্ষোভ স্মরি

বেকনের মৌমাছি উত্তরসূরী

তাই এ ইচ্ছের কোন বর্ন নেই- চে’গুয়েভারার

প্রশ্বাস; জাতীয়তাবাদের কথাও ভুলছিনা

বেমালুম। এবং আমার দরজার হুকও দৃঢ়

হাতে বন্ধ করি কিন্তু;

প্রিয়তমা আধফালি চাঁদ স্বর্ণকরোজ্জলা সিন্ধু

কোনই বৈচিত্র নেই- শুধু জন্মৌৎকর্ষে

ওভেনের শিখা জ্বলছিলো প্রেমও বিমর্ষ

ঝলসে উঠছে সিল্ভীয়া প্লাথ

 

যেনো ধ্বংসের মাঝেই অন্কূরোদ্গম ঘটে

এ যেনো ইচ্ছের সাথে ইচ্ছের সংঘর্ষ তটে।

 

নতুন বাজার

 

তিন শতাব্দীর কালো রাত তাড়ালাম আমরা

আধফালী চাঁদে তিন দশকের সুবহে কাযিব- অতঃপর

মস্তক অবনত করে তারাও ফিরলো ঘড়ে

রঙধনূ সূর্য উঠলো আমাদের আকাশে

                          গর্ববোধের ভ্রূণ

 

সরাইখানার শুন্য কলসীকে ঘিরে

মাছিদের এক দর্শণীয় পালাগান সে,

গতকালও যারা এসেছিলো এখানে- এখন

চোখ ধাঁধাঁনো আলোয় কাচে মোড়া বারে

ভিন্ন আলোতে অনন্য স্বাদে মত্ত তারা

 

রাষ্ট্রীয় স্বল্পমূল্যের বাজারে সারি বেঁধে

দাড়িয়েছে সহস্র হাড্ডিসার দেহগুলো,

চামড়ার প্রলেপযুক্ত হাড়গুলোর মাঝে আমি

খুঁজতে থাকি হয়তো স্বাধীনতাকে হয়তো জাতীয়তাবাদকেও

কিন্তু দেখি এই সারিতে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

বৃদ্ধ কৃষক মাতাঙ্গিণী হাজড়া মাষ্টার দা সূর্যসেন

এবং সাত বীরশ্রেষ্ঠ’র সাথে তারামন বিবি

দেখি স্মৃতিসৌধের কবর থেকে সব মুক্তিযোদ্ধারাও

এই লাইনে—সাবাস কাকাতুয়া সাবাস ।

প্রকরণ

 

ওরা সবাই অতিথি অনেক চায় ভূ-তটে

সভ্যতার অন্কূরোদ্গম ঘটেছিলো – ঘটছে

প্রতিনিয়ত; সবাইকে হাসিখুশি সুন্দর রাখতে

কী প্রানান্ত উচ্ছাস – মাতোয়ারা আমি

 

নব্য নব্য ঊপকরণ সত্য এবং বণ্টনরীতির চৌকশে

কৃষ্টি কিরণ, কুয়াশা এলে তুমিও হয়ে যাও

অচেনা এর মতো; জাতীয়তাবাদী মৃত্যুগুলো নৃশংস

অপচয় তবু কী বীভৎস পেয়ালা মুখে ন্যাটোদল

 

পরিবর্তন শব্দটাকে খুব বেশি নাড়া চাড়া করছো তুমি

হে ষড়যন্ত্র গনতন্ত্র মোড়ল কুমার ‘সময়’ এবং ‘ইতিহাস’

কারো পূজোর অর্ঘ লিস্পা রাখেনা, আদ্যোন্ত

ক্লান্তির অবসাদে মৃত্যু তোমাদের মৃতই করবে বৈ কী

 

দোলনার শিশুই নির্দিষ্ট সাজে সজ্জিত করবে – করছে

আপনার রঙ সুর এবাদৎ ও জীবন প্রনালী

 

নবো’দয়

 

রিভ্রমনের দৃষ্টিবলয়ে রাশি রাশি অববাহিকা

নোঙর প্রবণা মনভোমরা প্রতাশ্রয় প্রয়াশি

রাত ও দিনের কাছে ধর্ম ও কর্ম উদাসী

প্রেমবেষ্টনী অনূভবের তটিনী ঘেঁসে প্রলয়বিভা

 

বক্ষবন্ধনীর হুক থেকে নির্দিষ্ট দূরের দুটো হাত

রেলিঙের বাতাসে দুলছে প্রজাতী প্রকরণ শৈলী

গত প্রহরে যে সব ছন্দে ও রঙে মৌয়ালী

শুধুমাত্র একটা সুন্দর সকালের অবগুন্ঠিত স্নান

 

দ্বি-প্রহরের স্বর্ণকরোজ্জলা রশ্মিতে অনূজের নবোদয়

ঠিক সেই রকম দূটো অতলান্ত চোখের গুহায়

সোমপুর, খাজুরাহো, অজান্তা, ইলোরা, আফ্রোদিতি পার্থেনন প্রভায়

নিঃষ্কণ্ঠক অব্যয় অপভ্রংশে পঞ্চসতির বিছা-মল ময়

 

গ্রীক সুরাপাত্রের জন্মভূমী নিদিষ্ট সীমার জেলি

আমাদের কাছে আমাদের এসো পাঁপড়ী মেলি।

 

প্রভাকরণ

 

পাপ আমাদের কাছে আমাদের নয় কোন

রন্ধন প্রক্রিয়ার শৈলজ ‘আমি’ একটা প্রজাতী

দ্রুতিতরুর অনন্য প্রানাবরণ সীমাহীন কল্প-ধী

ফেনিল আত্নরতিকায় প্রবাশী এক একটা অবয়ব তোমার

 

নির্বাণের গূঢ় নিরবতা এঁকে যাওয়া ‘ইমন’ ‘রা’

নিঃষ্কন্ঠক যাতা কৈলাশী অব্যয়টুকু জোড়া

শালিকের পাখায় রৌদ্রস্নান ও ঘাম

প্রজাতী প্রকরণে দূরাবিভূত জলি তন্ত্র ও এথেন্স

 

একজোড়া খয়েরী চোখ তখন সবুজ নীলিমা

স্বপ্নরা যখন ছূঁয়ে আসে তোমায়- নাব্যতা

নাইয়রে কলম সুর ছন্দ র তনূদেহে ঔজ্জল্য

জ্বলছে সাঁতারের বিম্বিত রঙ- আর কী ঈশ্বরে

 

আত্নগন্ধা বলয় প্রভাতিচরে কাব্য উপকরণ

রত্নস্বী প্রেম অন্ধত্ব দোলনার কাছে শুঁয়ে আছে প্রভাকরণ ।

 

কিশোরীর প্রেম

 

তোমার উষ্ণ আহ্বান তোমার উষাদর

প্রেমৌষ্ণ রতিকায় দুলছে তোমার ভগবান ঈশ্বর

আল্লাহ্, তোমার কিন্নরী তনূদেহ তটে

মনভোমরা ঝেঁকে বসেছে যৌবণাফুলে

 

বলিরেখা ধূসর মত্ত্বতায় মেতে আছে মতি

আপাততঃ তুলে রাখো ভাষার নিয়ম রেখা যতি

সৌন্দর্যের প্রনালীতে আত্নহন্তকদল আমি অবিভূত

তোমার উষ্ণতাকে ঘিরে স্পর্শরা একীভূত

 

আমাদের কাছে আমাদের উষ্ণতাকে পোড়াতে হয়

মেলে ধরতে হয় রোদে, পৃথিবীর প্রিয়তম রোদ

সে না হোক ,তবুও তোমার উনূণ এখানে এই

আমার কাছে, আমারটা তোমার দেহে নিত্য প্রদাহমান

 

তোমার আদরের কলা নৈবদ্য পথ্যের শুক্রাণুতে

আমাকে খুঁজে নাও তুমি, তোমাতে ছড়ায় আমায়

 

বৈভব

       

খন বভবী হয়ে উঠি তোমাদের রুমালের ভাঁজে

প্রবাহমান বতাসের রেণুতে রোদেলা আমেজ এসে

জেগে তুলে বলে- আমার এ ধারা অব্যয়ী হে

তোমার  জন্য তোমার অনাদি জন্ম ঊষা’কাশের

 

পারফিউমের ফোয়ারায় আদ্রস্ব কিন্নরী তণু

বিশ্বায়নের প্রশ্বাস শৈলীতে নৃত্যরত চার্বাক

ভিন্ন অন্য আরো একটা ভোর চাই তোমাকে

অনণ্যোপায় হয়ে তোমাকে-ই ভালোবাসতাম শুধু

 

এইচ আই ভি  তে ডুবানো থাক আমাদের

প্রনালী প্রেম; গহ্বরে মৃত্যু নিঃশেষ মৃত্যুকে দিয়ে

ক্ষুদ্রতর নয় আমাদের জীবন, এমন ঘী এ

জ্বালিয়েছে আগুন যে দৈত্যটা শত্রু সে  সভ্যতাদের

 

শুধু তোমার চুম্বনে টেমস্ জেগে উঠলো আর-

শরীরে জড়ালে বহর নহর ওমঃ হর তার

 

 

রঙ

         

পাপেরা – তুমি জানো কী পাপগুলো সব

মরে গেছে, বলেই আমরা আরও বেশি

মেলাতে পারি, যতোটা না নিজে কল্পনা

করা যায়। নিষেধের চক্রবালে ঘেরা রোমকূপ

 

জন্মদিনের ভোরের কাছে সব শিল্পীত শৈল্পীক

সমাহার শৈল্পীক মন পরাজিত,

মহুয়া মেলায় প্রগতির জন্ম হলো, অনঅভিপ্রেত

দূর্যোগেরা এক একটা নবতর উপ-যাজকীক

 

আগামীর ভোর মোল্লাতান্তিক ভ্রুণ দিয়ে নয়

উপ-অবৈতনিক মতবাদগুলো নয় শুধু প্রেম

ঐ পানশিটার একমাত্র অব্যয়; আর তাই

এ রঙে কোন নেই রঙের নহর; কামুকী শহর

 

খাজুরাহোর কথা বলছি না এমন রঙে মোড়া

যৌবণের আলো গুলো কী সব তীক্ষ্ণ ।

 

ওঝা

          

ঠে এলো বেড কভারের ফুলগুলো সব

জীবন্ত ফুলের রাজ্যে; পৃথিবী ফুলময় এখন

দির্ঘাকৃতির ছায়াটা ক্রমশঃ হারিয়ে যাচ্ছে

 

স্বল্প উৎপাদন ফুল অপেক্ষা ভ্রমরের

পশ্চিমে জ্বলন্ত চিতায় সূর্য যখন জ্বলছে

দরজা ও জানালার পর্দা থেকেও পালিয়েছে ফুল

প্রেমিকদের সারি এখন ফুল বিক্রেতার দোকানে

 

সংকট নয় এ প্রাচূর্য তাও নয় আমার জন্য

যদি না দেখতাম ফুলে ভরে যাচ্ছে দুধের বাটি

দুধগুলোও প্রতিবার হয়ে যাচ্ছে ফুল

 

অন্য খাবারে অনভ্যস্থ চিরকালের বিড়ালটা আমার

মি-ই-ই-ই উ  মি-ই-ই-ই উ ডাকছে, শুষ্ক চোখে কেমন

তাকিয়ে আছে টেবিলের দিকে

 

নেই সামান্যতমও বৃষ্টির লক্ষণ মেঘের ভাঁজে

 

আপন গৃহে ফেরেন এ পথেই সমাধানকারী ওঝা

পথই যার জন্ম শুক্রাণু ,পথ যার গর্ভাশয় -

ধর্মালয় তাও পথ এবং সম্পূর্ণ পথ হবে একদিন

অস্থি মজ্জা ও পরিধেয় পোশাক তার; আমি বসে আছি

 

চার্বাক

     

মোঘনীতি বাতাসের সাথে দুলছে – আর শরীরে

অনূভব তটিনী ঘেঁষে জন্মেছে প্রেম আমার

দিনের আলোয় নিঃষ্কণ্ঠক ছিলো না এমন

তোমার রত্নস্বী প্রজাপতি ছন্দে মাতম আমর গাঁ

 

দুটো অবয়ব অধরা ধূসর কিছুটা স্পর্শাতীত

আমাকে নিয়ে আমার মাতঙ্গি মনহরা অনুরণ

যুদ্ধ নেই এমনটা হতো যদি একবারও; তোমার

নিরব শ্রান্তিভেজা দোলনাটা দোদুল্যমান নিত্য

 

তরুণ টগবগে খুনলহরী প্রবাহিত আমার চত্তর

প্রাচীন বঙ্গ তো দ্বিধান্বিতা রমণীর মতো

চেয়ে আছে; শুধু দেশের মাটিতে কাকাতুয়া ঠোঁট

শকুণের মতো ছিঁড়ছে মৃত গো-মাংস সাধে

 

দুটো আস্তিন ঠিক আছে পোশাকে অতি

একবারও এমন ভোগবাদী হতে পারতাম যদি

শাব্দিক

 

ব্দগুলো শব্দমুলো শব্দধুলো শব্দছুলো

আঁতুড় ঘড়ে

শব্দ ঢিলে শব্দ চিলে শব্দ নীলে শব্দ মিলে

কবির চরে।।

শব্দ খাই শব্দ গাই শব্দ পাই শব্দ নাই

স্বপ্ন ভরে 

শব্দ ভোরে শব্দ ঘোরে

শব্দ ওড়ে শব্দ  পোড়ে

ওঝা ঝরে।।

শব্দ করে শব্দ নড়ে

শব্দ মরে শব্দ ধরে

তন্ত্র লড়ে

শব্দ আমি শব্দে নামি

শব্দে ঘামি শব্দে থামি

মন্ত্র ছেড়ে।।

শব্দ শাওয়ার

শব্দ পাওয়ার

শব্দ হাওয়ার

শব্দ চাওয়ার

শব্দে শব্দে শাহওয়াৎ ।

ক্যূ- স্বপ্ন

                  

প্রার্থনার পূর্ব রাত

        আগামীকালও ঐরূপ হবে

         হয়েছিলো যা

গতকাল

গতশতাব্দী

৫৭০ খৃষ্টাব্দ অবধী ।

 

ঈশ্বর ইতিহাসের ভাড়াটে খুনী

     আল্লাহ্’র রসে

        মেসোপটেমীয় ধ্বসে

         ঈশ্বর বসে

       ভগবানের পৈত্যে যায় ছিঁড়ে

 

ডারউইন অতঃপর

কুমারিত্ব খোয়া যায় ডব্লিউ এইচ হকিং এ

 

আমাদের এ গ্রহ যু্দ্ধের নয় কোন

মৃত্যুর নয় ধ্বংসের নয়, নয় আণবিক চুল্লীর

 

মসজিদ মন্দির গির্জা প্যাগোড়া সব

একীভূত হবে আগামিকাল কাব্যনিলয় এ

কাব্যধর্মে লীন হবো

আর তাই  করি পালন আমরা

কাব্যতিথী ।

 

 

শিল্প

                         

টুকরো টুকরো মৃত্যু এসে ছুয়ে

যেতে পারে আমায়

মরণশীল তাই আমি

এমনই বিশ্বাস তোমার প্রিয়তমা

সৌন্দর্য্য অবগাহনের দৃষ্টি

সত্যের মৃদূ তান  লয় ঝংকার

ভয়ঙ্কর দূর্বল মৃত্যু

 

টিকটিকি গতরাতে পোকায় মিটিয়েছে ক্ষুধা

নিভে গেলে দিনের আলো আবারও সে

 

বাঁশি, কৃষ্ণ, বৃন্দাবন, রাধা, ওখানে ।

প্রেমারণ্য

 

বাতাসের প্রবল ঝাপটে

কাকের পালক

                          ডাষ্টবিনের নোংরা আবর্জনা উড়ছে

মিউনিসিপার্লিটির গাড়ি আসে

                      নিয়ে যায় ময়লার অরণ্যে

                           পরিবর্তনকে ভালোবাসো তাই

গোপাল রাজা হয়েছিলো

এবং বঙ্গের স্বর্ণালী মূখ

স্বর্ণোকরৌজ্জলা তরুণ

তোমার ওড়নাতে বাতাসের

প্রকট আধিপত্য

আমিও উন্মাদ

আদ্র বক্ষবন্ধনী ঘিরে

 ঝাঁক ঝাঁক মক্ষীরাজ

আমি তুমির বৃন্দাবন

সুরের মাঝি ও নৌকা

তট ছেয়ে আছে

শুভ্রসিতার অধরা দেহ

নুপূরের পাটাতনে

আসতে হয় এখানে,  এখানেই আসে

প্রেম ও প্রিয়া, প্রিয়া প্রেমিক প্রেমারণ্যে ।

 

 

 

 

আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ
আবু আফজল মোঃ সালেহ

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

মার্চ মানেই
 

মার্চ মানেই অগ্নিঝরা
রাখি উঁচুতে শির,
মার্চ মানেই জানান দেওয়া
জাতি আমরা বীর।

মার্চ মানেই উতাল হওয়া
করতে প্রতিবাদ,
মার্চ মানেই মুক্তি পাওয়া
স্বাধীনতার স্বাদ।

 

বসন্তের ফুল
 

লাশ বনে আগুন ঝরে
আগুন মেলায়,
কৃষ্ণচূড়ায় মনে জুড়ায়
ফাগুন খেলায়।

কাঁঠালচাঁপায় গন্ধে ভরায়
সাঁঝের বেলায়,
গাঁদা ফোঁটে থরে থরে
থেকে হেলায়।

অলি মাতাল বন মহুয়ায়
সন্ধ্যা কালে,
কানন ভরে ফুলে-ফলে
সাত সকালে।

বসন্তে লাল বন-বাদাড়ে
শিমুল ডালে,
ছোট্ট সোনা ছবি আঁকে
খুকুর গালে।

মুজিব ভাষণ স্বপ্ন
 

মুজিব মানেই মিষ্টিঝরা
সতেজ ভাষণ,
বাংলা থেকে বিশ্বসভায়
নেয় সে আসন!

মুজিব মানেই ছোট্টশিশুর
স্বপ্ন বুনন,
দুলতে থাকা স্বপ্নগুলো
পায় তা গুণন!

মুজিব মানেই শিক্ষা দেওয়া
নৈতিকতার,
অটল মন কুসুম নরম
স্বদেশ যে তার!

স্বাধীনতা আমার
 

স্বাধীনতা আমার মায়ের
খালি করা এক বুক,
ক্লান্ত করে আমার বোনের
কেড়ে নেওয়া সব সুখ।

স্বাধীনতা আমার বাবার
অসহায় করা মুখ,
আমার ভায়ের ভরে যাওয়া
জ্বালা ব্যথা আর দুখ।

স্বাধীনতা আজ অমলিন
উজ্জ্বল করা একদিন,
ভায়ের মায়ের বোনের বাপের
রক্ত লালে রঙিন!

একুশের জয়


বাহান্ন সালের ফেব্রুয়ারি
তারিখ ছিল একুশে,
বীর বাঙালি উঠল জেগে
বাংলা ভাষার দাবিতে!
চারদিক স্তব্ধ মিলিটারি যত্রতত্র
গর্জে উঠল বীর বাঙালি
চুয়াল্লিশ ধারা ভেঙে রে!
ঢাকার পিচ লাল হল
শফিক রফিকের রক্ততে!
উঁচু রাখল বাংলা ভাষা
সালাম বরকতের জীবন দানে!
বাংলা ভাষার বিশ্বজয়
এপার ওপার সবখানে!


একুশে ফেব্রুয়ারি
 

জিন্নাহর ঘোষণা
মায়ের ভাষা
থাকবে না!
বীর বাঙালি
উঠল গর্জে
জিন্নাহর দাবি
মানবো না!
বীর বাঙালি
করল মিছিল
বাংলা ভাষার
দাবিতে!
কালো পিচ
করল লাল
ফেব্রুয়ারির
একুশে!

এলো যে বসন্ত
 

মিষ্টি বেশ বেশ আভা আভা শীত
চারিদিকে শুনি কোকিলের গীত!
মৃদু সমীরণ এলোমেলো বায়ু
লাগে শিহরণ দুলে যায় তনু!
আহা বসন্ত যে এসে গেল!
চারিদিক লাল কৃষ্ণচূড়ার রঙ
রক্ত জবা যেন পলাশের বন!
শালিকের খেলা শিমুলের লালে
প্রেম জেগে ওঠে দোলা দেয় মনে!
আহা বসন্ত যে গেল এসে!
দেখি ওড়াউড়ি ভ্রমরের সুর
মিষ্টি সুরে গায় করে সুমধুর!
হলুদের রঙ সরষের ক্ষেতে
মৌমাছির গুন চলে মাঠে মাঠে!
আহা বসন্ত যে গেল এসে!

 

পালাবদল 

 

শীতকালে নাই শীত

মাঝে মধ্যে কনকনিয়ে!

গ্রীষ্মকালে নাই তাপ

মাঝে মাঝে ঘাম ঝরে!

বর্ষাকালে নাই বৃষ্টি

অতি বৃষ্টি, ফ্লাড আসে!

বিশেষজ্ঞগণ বলছেন আবহাওয়া খুব চেঞ্জ রে!

আম জনতা আমরাও বুঝি

চাতক চেয়ে পাই অসময়ে!

 

 

রাজধানীর ফাঁদ
   

শমা পরা মেয়েগুলো
শুধু শুধুই ভাব মারে!
রাজধানীর ফুটপাতে
প্রতারণার ফাঁদ পেতে!
সরল-সাদা যুবা বুড়া
পড়ে তাদের খপ্পরে!
বুঝে ওঠার আগে আগে
সর্বনাশটা ডেকে আনে!

কাঠবেড়ালি
 

কাঠবেড়ালি কাঠবেড়ালি
বাঁকা করে ধরেছো ডাল,
চুপটি মেরে বসে আছো
ফুলিয়ে মুখ করেছো গাল।

গোমড়া মুখে ভাল্লাগেনা
পাতবো না আর কারেন্ট জাল,
বাতাবি খাও ইচ্ছে মতো


প্রজাপতি
 

প্রজাপতি প্রজাপতি
রঙিন তোমার ডানা,
খোকা-খুকির মন খারাপ
উড়তে তাদের মানা!

দেখতে সুন্দর রঙিন কালার
বাহারি সাজ পরে,
রঙিন পাখে দিয়ে মেলে
প্রজাপতি ওড়ে!

প্রজাপতির রঙিন ডানায়
মন হয় তাদের রঙিন,
রঙিন ডানা পায় না ছঁতে
মাঝপথে হয় সঙিন!

খোকা-খুকি প্রজাপতির
ছুট দেয় পিছে পিছে,
থামে একবার উড়ছে আবার
দৌড় দেয় মিছে মিছে!

সঠিক কাজে নেই লাজ
 

ঘোর বিপদে স্বজন দারা
করবে তোমায় ঠাট্টা!
সুসময়ে আসবে ফিরে
নিতে চাবে বাট্টা!

বিপদ তোমার হয় না উদ্ধার
তারা নাকি সাচ্চা!
হাসবে ভেবে মিটমিটিয়ে
তুমি নাকি কাচ্চা!

চিন্তে ভেবে করবে কাজ
বলুক না লোক আন্ডা!
সঠিক কাজে নেইকো লাজ
কিনে খাবে মান্ডা!

 


মস্ত বড়ো সাপুড়ে

গেন ওঝার মিষ্টি কথা ফোটে
মস্ত বড়ো সে সাপুড়ে!
নাছোড় হরি মিলে ফরিদ বলে
খেলা দেখাও বাপুরে!
পুকুর ঘাটে ঢোঁড়া দেখে চিল্লায়
বাঁচাও তোমরা কাকু রে!
সামলে নিয়ে জ্ঞান ফিরে পালায়
প্রণাম ঠোকে ঠাকুরে!

ফাগুন ইচ্ছে

মি তো প্রজাপতিই হব
চারিদিক শুধু রঙ বেরঙ
সাজবে প্রিয়া আগুন রঙে
অন্য ঢঙ!
আমি তো হালকা শিশির হব
জড়িয়ে যাব প্রিয়ার পায়ে,
আলতা পায়ে রাঙবে সঙ! 
আমি তো প্রিয়ার আঁচল হব
ঢেকে রাখব স্তন যুগল,
ছড়িয়ে দেবো বুকের ঘ্রাণ!
আমি তো সুগন্ধিই হব 
প্রিয়ার মাথায় ছড়াবো বাস,
ঝুমকো জবায় দুলবে দুল!
আমি তো রঙ বেরঙ বেলুন হব
প্রিয়ার খোঁপায় গুঁজব ফুল,
নাকফুল!
ফাগুন দিনে উড়াবো ঘুড়ি,
ফাটাবো বেলুন, পরাবো ফুল!
আমি তো ভ্রমরই হব
প্রিয়ার হাতে ফুটাবো হুল,
চারিদিক হুলস্থূল!


একুশের রক্ত
 

কুশ মানেই
বঞ্চিত আর
কষ্ট!
কালো পিচে
ছোপ ছোপ
রক্ত!
রক্ত লাগে
ক্ষমতা আর
যুদ্ধে!
রক্ত ঝরে
প্রতিবাদে 
বিগ্রহে!
রক্ত লাগে
করতে জয়
ভূখন্ড!
রক্ত লাগে
রাখতে দেশ
অখন্ড!
রক্ত লাগে
মুমূর্ষু রোগীর
জন্য!

ভাষার জন্য
লাগে রক্ত?
বিশ্ব দেখেনি
আজো!

একুশের বই মেলা

ই মেলায় সবই আছে
ক্রেতার সাথে বিক্রেতাও,
শিশু আর শিল্পীরাও! 
মিলে মিশে একাকার
কবি প্রাবন্ধিক গল্পকার!
মাস্তি চলে উন্মোচনে
বিপুল শ্রোতার করতালে!
গান ঘোষণা বিনোদন
ফুসকা খাওয়ার আয়োজন!
বাদ যায়নি কোনটার
আয়োজন বড়ই চমৎকার!

 


প্রিয়ার ফুল
   

প্রিয়ার মাথাতে গুঁজে ফুল 
বুঝতে পারি নিজের ভুল!
যখন দেখি সিঁথির কানে
কালুর দেয়া দুলছে দুল!

প্রিয়া যখন আদর দিয়ে
বলে পাগল, লাভ বকুল!
পুরাই মাথা গন্ডগোল!
ভেবে না পাই কোনই কুল!

বলি যখন, দুল সে কার?
বলে তখন, ছোট্ট বেলার!
তাজ্জব তো! ব্যাপার একি!
চোখখে দেখি সরষে ফুল! 

girl.jpg
ঋষি সৌরক 
ঋষি সৌরক

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

(১)

(অতন্দ্র)

বশেষে কবি চাকরি পেলেন
জেগে থাকার চাকরি;
দিন-রাত জেগে থাকতে হবে -
বিনিময়ে তিনি পাবেন 
"সময়মত যশ-খ্যাতি এবং মৃত্যু" 

বেশ, খুশির খবর ...

প্রথম দিনেই কবির পা'দুটো গ্যালো 
ট্রেনিং পিরিয়ডে হাত -
চাকরি যখন তুঙ্গে 
মাথাটা খেলো নিলামে 
তারপর,

ধীরে ধীরে চিন্তা-ভাবনা-মন-ইচ্ছে-অনুভুতি সব সব ...

শুধু চোখগুলো ঝুলিয়ে দেওয়া হোলো 
ভ্রু এবং উপপল্লবহীন
কারণ, চাকরিটা জেগে থাকার -

তন্দ্রা-মৃত্যু-পুনর্জন্মহীন কবি 
জেগে আছেন তো আছেন-ই 

দুটো চোখ এখন শাশ্বত আইকন ... 

(২)
(মধ্যমা)


নিভে যেতে যেতেও
জ্বলে আছি
ফসকে যাওয়া দেশলাইয়ের
একবিন্দু
তেজি বারুদে!

ফুসফুসে আমার
চাপা দুঃখের হুঙ্কার
আর
শিরায় শিরায়
কালোপেট্রোল-গুঞ্জন...
প্রতিশোধের বার্তা স্নায়ুতন্ত্রে,
মেরুদন্ডে...
একাকিত্বের উদ্ভ্রান্ত ফ্ল্যাগ

আমি নিজের মাঝেই
খনির খোঁজ ....হতাশ স্বপ্ন নির্বিকার ....গিটার

আর সততার
পর্ণমোচী পদধ্বনি...
আদি অব্দের কোনো খ্রিষ্টে
ছায়াহীন আঁধারে আষ্টে-পৃষ্ঠে
আমার অন্ধ কান...অবসান....চায়...
ছিঁড়তে
মস্তিস্ক আর অনুভবের সংযোগ....

বিছিন্ন এসব পরিচয়
ঘেন্না করি তোর উপহার .....
আমায় দেওয়া চেহারা
আর কেড়ে নেওয়া আকুতি ...
কেয়ার করি না........ব্ল্যাআআআআঅ....

যারা উপহাস করেছিল
পিষে গেছি তাদের


 

তীক্ষ্ণতম দৃষ্টান্তে প্রগতি আর সভ্যতার মুখে ওয়াক বা মধ্যমা আর ক্ষমা নয়
শাস্তি চাই
প্রতারকদের কর হালাল.....

অজুহাত নির্বিশেষে
সমর্পিত যত ঠুনকো বিশ্বাসের ঘাড়
ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে
যার নির্মম কামড়ে,
তার নখ-থাবা-হাত-পা কেটে
সারা শরীরে ঘষে দাও শিশু বিপ্লবের টোটকা ,
আর উল্টো টাঙ্গিয়ে সেই শয়তান-শরীর
ঝুলতে দাও অভিকর্ষ হীন প্রজাতন্ত্রে
তির্যক পেন্ডুলামের মত.....
এক-দুই-তিন ........
যতক্ষণ না ধীরে ধীরে যবনিকা নেমে আসে,
তার কেটে ফেলা হোক চোখের পাতা......
চোখ ঠিকরে আসুক ......সে চেয়ে দেখুক .....
পৃথিবীর উল্টো প্রতিচ্ছবি.....
কতটা
বিভৎস
হতে
পারে!
আর ভিজে দেশলাই ও
মাঝে মাঝে
মশালের
মত গর্জে ওঠে.......দৃষ্টান্ত হয়ে

(৩)
(থুহহহহ)

 

কাশে থুতু দিলে 
গায়ে লাগে। বাজে কথা

জীবন হজম স্লিপিং পিলে 
সেক্সচ্যাট-অনায়াস নীরবতা 

গুঢ় কথা। ছদ্মনাম। বয়স গিয়েছে ধসে

আসল মা-বাবার সুদে আমরা কষেছি

সময়ের স্বাদুটান ...চলি ভেসে ভেসে 
মুখচোরা। একা-বোকা। পসেসিভ ...

 

বাজে কথা। গায়ে লাগে 
থুতু লাগে অপরের গালে

সোজা শ্ল্যাংগ বাতাসে বেঁকে
গ্র্যাভিটি এনেছে নাগালে 


(৪)(খুন একটা আর্ট)


কাউকে মেরে ফ্যালা অত সোজা না-
ইনফ্যাক্ট কোনো শিল্পের মজা সেখানেই
যখন সেটাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা যায়
স্বাদের ইপ্সা ঝোলে অতৃপ্ত রসনায়

ধরো তোমাকে সোজা মৃত্যু দিলাম না

একটু ভেঙ্গেচুরে দেখালাম

 

ডানহাতের জায়গায় বাঁ পাটা
জুড়লাম-দুই আঁচড়ানো খোবলানো স্তনে
দু দু’টো কান।

হিম-শীতল রোমকূপ এফোঁড়-ওফোঁড়
পায়ু দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে এলাম গলায় -
ছিঁড়ে ফেললাম যত স্নায়বিক সংযোগ
ইচ্ছে মতন হর্মোন দিলাম ঢেলে

জ্যান্ত হার্ট তুলে নিলাম বুকের গভীরতা ভেঙ্গে

আর নাভি উপড়ে চাটলাম কপালে

দুগালে অজস্র চুম্বন-ছোয়াচে রোগ আর নি;

শব্দক্ষত ঠিক যেন সাবলীল অ্যাবস্ট্রাক্ট

যেভাবে ভালোবাসা আসে

কি ভীষণ যন্ত্রনা - তবু ভালোবাসি, কারণ

খুন একটা আর্ট -

খুব কাছাকাছি মৃত্যু ও আমি বিরামহীন

কোলাজ কোলাজ

অ-মৃতা

দানিং তোকে ছুঁলে তড়িদাহত হই না

আগের মত। গল্পবিহীন রং-

চঙে বায়স্কোপের মতই প্রতিক্রিয়াহীন মনে হয় ...জোলো...তিক্ত...থিতু অথচ তুই ভীষণ

নিষ্পাপ এখনো,

আমি জানি শেষ এবং শুরুর মাত্রাগুলো বৈচিত্রহীন-ঈর্ষান্বিত-বৈমাত্রেয়।

বারবার-বারবার একই ডেনজার জোনে চুমু খেয়ে খেয়ে বিধ্বস্ত আমি-মৃত ...

ও ঠোঁটে-চিবুকে-কোমরে-বুকে-জঙ্ঘায় জাহান্নামের বিষ, অথচ কি এক জাদুকরী সম্মোহনে নেমে চলেছি আমি...নেমেই চলেছি....আরো নীচে...নেশাতীত ...আপাদমস্তক অসুখের চারু কারুকাজ কিলবিলিয়ে ওঠে...

নরমভোগ-চরম ভোগ-পরম ভোগ-দেহের সব ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসছে চটচটে অনুতাপ।

ভীষণ সাবধানে নামি রোজ,

অমৃত খনির ভার্জিন নীচু ছাদ আমাকে পিষে ফেলতে চায়,  মিশিয়ে দিতে চায় মাটিতে।

অতল পাতালে প্রেম প্রেম মেহেফিল উড়ে-আতর-ধুপ-ধুনো-অগুরু ...

গা গুলিয়ে ওঠে...আমি খুঁড়তে থাকি

...উলঙ্গ তাকতে ...উঠে আসে রাতুলের ফ্যাকাশে মুখ, হাজার হাজার বছর আগে এখানেই

ওর প্রতিটা দেহ আলাদা আলাদা করে সমাধিস্থ করেছিলাম ছেনাল ঔদ্ধত্যে;

আমার গার্হস্থ্য শেষ,

চৌকাঠে প্রেত-চক্রের বিকৃত শিল্যুট।

তুই বরং রাতুলের প্রেমিকাই থাক,

আর আমি এভাবেই ধর্ষণ করি তোর অশরীরি

চেতনা-শোষণ করি জলবততরলং অহং

-লুটে-পুটে-খুঁটে নি ডায়েন-যৌবন-নজর লাগা স্বাদু মাংস খুবলে খুবলে সেদ্ধ করি খুনে যন্ত্রণার জান্তব উত্তাপে-

থাক তুই রাতুলের প্রেমিকা-

একটু একটু করে আমাকেও নিয়ে চলেছে সময়ের কাল্গর্ভো ...

গভীরে ...আরোও গভীরে পিছলে যাচ্ছে নেশা ... 

- জড়ভরত অবশেষটুকু না হয় নিয়ম মাফিক পুঁতে যাবো হাজার বছর আগের সেই এপিটাফেরই কাছাকাছি একটা কোথাও 

কবি নাজমুল হক
নাজমুল হক

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

sadhu.jpg

তীর্থে চলো সুদর্শন

 

খনই কিছু বলতে যাই তুমি শুধু রাঙাও চোখ

মনে হয় আজ তাবৎ পৃথিবীর পরিত্রাণের ভাষা

আমার কাঁধে তুলে দিয়েছে সমস্ত লোক।

আমি যেন যীশু, বুদ্ধ কৃষ্ণ মোহাম্মদ কিংবা মুসা

সংস্কারে নামবো ভাঙ্গবো আঁধার সব!

 

আমি তো কবি হাতে দন্ড নেই, দন্ডাদেশ নেই

দেখি লোকালয় জুড়ে কেবলি কোলাহল কলরব

শকুনের পাখার শব্দ ছাড়া আর কিছু নেই।

 

আমি বলতে পারবো না নুহের প্লাবন হবে কী, আর

কুরুপান্ডব যুদ্ধ, রুক্ত নামবে কী না ফোরাতের তীরে

তবু বুঝি একটা কিছু হবে এবং হওয়া দরকার

শুদ্ধি অভিযানে সুদর্শন হাসবে ঘরে ঘরে।

 

দীর্ঘকাল অনাবৃষ্টি

 

জ তো আমার সেই সময় যখন জন্মদাতাকে

মনে হয় পরম শুত্রু

কামুক রমনীর কাছে

মুখস্থ করতে হয় ভালবাসার পাঠ।

 

এ সময় আমাকে কেউ কবিতা লিখেতে বলো না

আজ তো দেশপ্রেম আনে শ্লোগানের ভাষা

বিদ্যালয় শেখায় শব ব্যবচ্ছেদ

মানুষেরা চোখে দেখে না

রঙিন চশমা ছাড়া

তুচ্ছ আজ সভ্যতা রক্ষায় প্রজনন।

 

এ সময় আমাকে কেউ কবিতা লিখতে বলো না

আমি তো ভুলে গেছি গীতি কবিতায় সন্বোধন

আমি তো ভুলে গেছি বনে বনে পাখির শিস

ঝর্ণা জলের বাঙময়

ভালবাসার মতো ত্রিপল্লীর মাধবীকে

আজ আর মনে পড়ে না একদম মনে পড়ে না।

 

এ সময় কবিতা হবে একেবারে গদ্যময়

শব্দ হবে গ্রেনেড ফাটার মতো সুন্দর

এ সময়ের তাই শ্রেষ্ঠ কবি হিটলার।

 

 

মাছরাঙা

 

মাছরাঙা স্বপ্ন পড়ে আছে নদীতটে

দখিণা বাতাস জায়গা বদল করে বধ্যভূমে

গুন্ডা ছেলেরা বলে বেড়ায় সুন্দর দিগম্বর।

 

আপনারা হয়তো খবর রাখেন

নেত্রীর আজকের সফর তালিকা

উপদ্রুত অঞ্চলে

কতোবার নামবে উঠবে বাসনার বিমান

ত্রাণসামগ্রী ঘোষণার অনবদ্য পাঠ।

 

অথচ বাংলাদেশ জানে না তৃতীয় বিশ্বে

কেমন আছে

বেহুলা লক্ষ্মীন্দর।

 

 

শহীদ মিনার

 

ন্ডরা বলে তুই ইট বালি নিকষ পাথর

আমি বলি তোকে অশোক স্তম্ভ

খোদিত ওইখানে বাংলার সিংহ শাবক।

 

আমি বলি শোকের প্রচন্ড - গর্জন

           শকুন তাড়ানো শালগ্রাম শিলা

শুনি অহিংসার পদাবলী, একজন বুদ্ধ দাঁড়িয়ে

           ইতিহাস আর পুরাণ

           আমি বলি আদিম সেই পাঠ।

 

ভ-রা বলে তুই ইট বালি বোবা পাথর

আমি দেখি উনচল্লিশ নওজোয়ান

আমাকে দিয়েছে অনন্ত যৌবন

আমাকে নিয়েছে বহুদুর

            আপন স্বরগ্রাম।

যেখানে আমার যাবার, আজন্ম সাহস।

সেই নুপুর

 

তোমার জন্য দুঃখ হয় আমার হলে না তুমি

তৃষ্ণার ভেতর এতো চাষবাস

হৃৎপিন্ডে চড়ালে পেশীর কতো যে কাঁপন

বুকে রাখলে বুক আমার হলে না তবু।

 

যুবকেরা নগ্ন ছবি দেখে মিটিয়েছে সাধ

ঘুম ভেঙ্গে নাবালকেরা বলেছে তোমার নাম,

প্রবীণেরা আফসোসে কেবল ফাটায়েছে বুক

চারিত পাখির মতো বলেছে কতোবার

কোথায় নামই বলো এই বয়সের ভার।

জানি না তবু কোনো শরীর হলে না নুপুর

স্বপ্নের ভেতরে চষে স্বজনের আবাস নিবাস

বুকে রাখল বুক

তবু আমার হলে না তুমি।

 

বন্টন দলিলের শর্তাবলী

 

কেবল কষ্টগুলো পুরোটাই এই ভাগে

সুখগুলো থাক তোমার,

স্বপ্নের পালকি চড়ে আমি আসি যাই

শরীরটা যে তোমার।

 

জোছনার আকাশ সবটুকু তোমার থাক

আমার জানালার গ্রিল,

কদম্ব তলায় তুমিই বীজ পুতে রাখো

আমার সবুজ মিছিল।

 

গোলাপের কানে তুমি বলো সব কথা

আমার জন্য যে ডাল,

চোখ খোলা থাক, চুম্বনে সোহাগে

তুমি হবে শুধু লাল।

 

যেমন ইচ্ছে রাখো ওই শাড়ির আঁচল

শুধু দক্ষিণে আমি,

নুপুর বাজিয়ে যতো ইচ্ছে নাচো গাও

নাটাই ঘোরাবো আমি।

শোক বয়ে যাই

 

বুকের পাঁজর খুলে দিচ্ছি

বানাও তরবারি,

অনেক শোকের ভেতর থেকেও

একটু যদি হাসতে পারি।

 

চোখ দু’টো তো লাল হয়েছে

হাজার চোখেল জন্য,

এই তো হৃদয় বিলিয়ে দিলাম

তোমার পাবার জন্য।

 

আমি জানি বুকের আগুন

ব্যথার আগুন বড়,

সেই আগুনের অগ্নিদাহে

দেশের মানুষ জড়ো।

 

ক্রোধের মানুষ কান্নার মানুষ

নির্যাতিত উল্লাস করে,

রাজপথে দাবীর মিছিল

কে ঠেকাতে পারে!

মানুষের ছায়া পেলে

 

কদা গোলাপকে বললাম বড়ো হবো

বললো সে-

দু’হাতে ছুঁয়ে যাও মাধবীর শরীর।

 

একদা মাকে বললাম বড় হবো

বললো সে-

মানচিত্র আগলে নাও বুকের ভেতর।

 

একদা নদীকে বললাম বড় হবো

বললো সে-

আবাদ করো এই উত্তাল জনপদ।

 

এই ভাবে পাখি আকাশ চাঁদ

শুধাই যতোবার

ততোবার-ই বলে

মানুষের ছায়া পেলে তুমি বড় হবে।

 

 

যদি ফিরে আসে

 

দি সে ফিরে আসে ঠিকানায়

ভেঙ্গে ভুল

কিম্বা একান্ত ভালবাসায়

এমন কি খেয়ালের বশে।

 

তাহলে তারে ডেকে বলে দিওঃ মিলন

এই নাও কাস্তে শাবল

                প্রয়োজনীয় খড়কুটো

রাস্তার দু’ধারে গড়ো দেবলায়।

আত্মকাহিনী ও সুসংবাদ

 

ন্ধের কাছে ক্লিওপেট্রাও অন্ধকার

মাধবীর বেণী গোখরো সাপ

রোদে ভিজে ভিজে যতেই করুক স্নান,

রাজপুত্তুর  আনে নোনা জল

মধ্যাহ্নের সূর্য তাই বয়ে যায় পাপ।

অতএব বিনীত প্রার্থনা আর অন্ধ কোরো না

মাধবীকে দেখি চাঁদ সভায়

আর এই বাঙলায়

          দিবালোকে দেখি অজস্র মানুষ

কেবলি শঙ্কাহীন।

 

 

প্রেম বিজ্ঞাপ্তি

 

প্রেম দেবে না শ্রীমতি

রাঙাও কেনো চোখ,

চোখ টিপে জড়ো করবো

সাত গাঁয়ের লোক।

 

কসমেটিকে যতোই সাজে

যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ,

মুখ থেকে যায়নি মুছে

আমার চুমুর দাগ।

 

আবার ছাড়পত্র

 

একদিন ভালবেসে কমলা গলায় দিয়েছিলো বকুল

এখনো সেই আমিরুল

              বকুল ঘ্রাণে

              তাই চুমু খায় বার বার।

 

মাতৃগর্ভের দশ মাস দশ দিন

এখনো সেই কমলা

কোনো মা এলো

স্বদেশের মতো নতজানু করে তার মাথা।

 

তুমি দিলে লাল সূর্য খচিত প্রিয় পতাকা

তুমি দিলে প্রিয়তম স্বাধীনতা

আরো দিলে

জন্মে জন্মে কাঁধে রাখার কঠিন গুরুভার।

 

অথচ অদ্ভূত অন্ধকারে আজ মগ্ন এই দেশ

দিয়াশলই কাঠি জ্বালাতে তাই

ডজন ডজন সুকান্ত চাই

শেকল ভাংগতে চাই

আরো আরো বিদ্রোহী নজরুল।

 

 

নোনা জলের বাসিন্দা

 

ফুল ফুটেছে, জোছনায় ফর্সা আকাশ

কোকিল গাইছে গান

তবু আমি বলতে পারিনা আজ বসন্ত

           বলতে পারি না এখন যৌবনকাল।

 

শকুন দৃষ্টিতে আজও প্রচন্ড খরা

কসাইয়ের পদচারণায় লন্ডভন্ড বাগান

রাজপথে হট্টগোল

            সংসদে সভায় হাতাহাতি,

একমাত্র এফডিসি ছাড়া

কোথাও শুনি না ভালবাসার কোনো গান।

 

ফুল ফুটেছে জোৎস্নায় কতো ফর্সা আকাশ

তবু আমি বলতে পারিনা আজ বসন্ত

           বলতে পারিনা এখন যৌবনকাল।

 

কারাগারের গোলাপে উদোম শরীর ছাড়া

কোনো ছন্দ নেই।

ঘণিকা জোছনায় উজ্জ্বলতা ছাড়া

গৃহপালিত হয় না।

কোলাহলের ভেতর মরমী কন্ঠের ভাটিয়ালী

কেবলি যন্ত্রণা ধ্বনিত হয়।

 

ফুল ফুটেছে জোছ না ভরা আকাশ

কোকিল গাইছে গলা ছেড়ে গান

তবু আামি বলতে পারি না বসন্ত,

এই দেশে কী শুধু প্রেমিকার আকাল!

 

 

কথা ছিলো

 

থা ছিলো রাত পোহালে ডাকবো

ঘুম ভাঙ্গলো

মানুষের কোলাহলে।

 

কথা ছিলো গান গাইবো

মিছিলের কথাগুলি

গান হয়ে ফিরে  আসে।

 

কথা ছিলো জোয়ার এলো ভাসাবো নাও

প্লাবনে ভেসে গেল ঘর

হাতের বৈঠা মুড়ো ঝাড়ন।

 

কথা ছিলো ফুল দেবো

তুমি আসোনি পাখি ডাকেনি

 ফোটেনি কোনো গোলাপ।

মৈনাক দত্ত 
মৈনাক দত্ত

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র


বিকেলের আলো আঁকে ছায়াপথ
ঘুম ঘুম শহরের শরীরে
নিঝুম আধোচেনা জনপদ
আমিও তুলে রাখি কুড়িয়ে,
(তোর সাথে দেখা নেই একযুগ
তবু তোর মুখ খুঁজি রোজ রোজ
সূর্য তাই দেখে বুঝি দেয় ডুব
মেঘেদের কাছে চলে তোর খোঁজ,)
বিকেলের আলো বড় মায়াবী
শহরও জানে তা আলবাৎ
তাই সে মেখে নেয় যত পারে
আমিও ভরে নিই দুই হাত,
(তোর সাথে কথা নেই আট মাস
তবু তোর কথা শুনি বাতাসে
বিকেলের আলো বড় মায়াময়
ছায়াছবি এঁকে চলে আকাশে)।


ঙ তুলি ক্যানভাসে বেশ হয়
ছবি লিখে কবিতার দেশ হয়,
কিছু কিছু গল্পের রেশ রয়
জল ভেজা দিন যবে শেষ হয়।



নেক সুখস্মৃতির ভিড়ে
হারিয়ে যাওয়া ছবির মাঝে
হঠাৎ তোর চিরকূট পেলাম
এক পুরোনো বইয়ের ভাঁজে, তোর চুলের গন্ধ পেলাম
কাঠগোলাপের ভোর
এক মুখ আকাশ পেলাম
রেশমী সুতোর ডোর,

অনেক ছবির মাঝে
হঠাৎ তোর চিরকূট পেলাম
এক পুরোনো বইয়ের ভাঁজে। 



ল্ হেঁটে যাই বিকেলের পথ
আদুরে আলোয় মাখা
দিনশেষে আরও একবার
তোর সাথে একা
গাছেদের কথা ফিস্ ফিস্ 
ঘাসের জলজ ঘ্রাণ 
চল্ হেঁটে যাই আরও একবার
আদুরে আলোয় করি স্নান।


র পর ত ‘বর্ষামঙ্গল’ লিখে ফেলবি” — বলেছিল সে। মুখ টিপে হেসে। সবে মাত্র তাকে শুনিয়েছি এক শহুরে বর্ষামুখর গান। “তা নয় হল,কিন্তু তাতে কি বরষা আমার প্রেয়সী হবে? তার কতো প্রেমিক তুই জানিস্? কত যুগ ধরে কত কবি গেয়ে গেল তার গান। কত আঁকিয়ে তুলির টানে তাকে সাজালো। আমি আর কি এমন।” খানিক অভিমান নিয়ে বলেছিলাম। সে কি বুঝেছিল কে জানে।
“ওই দ্যাখ্!” বলে সে আমায় দেখিয়েছিল এক শ্রাবণ বিকেলের পশ্চিমাকাশ। এক পশলা বৃষ্টির পর অস্তগামী সূর্যের গোলাপী হলুদ গেরুয়া আভা যেন আঁকছিল এক রূপকথা। আর সেই রূপকথার খানিক ছোঁয়াচ এসে পড়ছিল তার কপালে গালে চিবুকে। আমি আরেকবার ঝিরঝিরে রুপালী জলবিন্দু হতে চাইছিলাম ভীষণ। শুধু তার হয়ে থাকবো বলে। আমার বরষার।


বৃষ্টি ভেজা দিনদুপুরে 
কার লাগে ভালো বল্
ভাঙা ছাতা আর নিঝুম বাসস্টান্ড 
হাঁটুর কাছে জল,

বৃষ্টি ভেজা দিনদুপুরে
কার লাগে ভালো বল্
রেলিং ঘেঁষে গোলাপ ভেজে
চোখের কোণে জল,

বৃষ্টি ভেজা দিনদুপুরে 
কার লাগে ভালো বল্।



লে ভেজা জানালার কাঁচ
দেখছিল শ্রাবণের সাঁজ
ল্যাম্প পোস্টের হালকা আলোয়
বিন্দু জলের স্বপ্ন ছোঁয়াচ।



ঠাৎ করেই ভাবতে বসি
মুষলধারে বৃষ্টি হবে
শুকিয়ে যাওয়া আমার শহর
আবার বসে ভিজবে কবে।

১০
ল যাই তবে আমি আর তুই
আজ সাঁজের আকাশ ভরে রই,
তোর ঠোঁটে আঁকি ময়ূরপঙ্খী গান
আর কপালে এক চুম্বন, ইলিয়ট সমান।


১১
জোনাক আলোয় হোক খাক্
তোমার আমার রাত
তবু এসো রাত্রি বেশে
শুধু আমায় ভালোবেসে


১২
হর এঁকে যাও জলরঙ 
বিকেলের সাথে হোক
সন্ধ্যের আলাপন।

১৪
ঠিক যেমন জিউকবক্সে পড়লে আধুলি
সেভেন্থ স্ট্রিটের প্রান্তে অফিসারদের ক্লাবে
এরিক ক্লাপটন গাইতেন গান 
রোজ সন্ধ্যেবেলায়, 
ঠিক তেমনি তোর রক্তিম মুখ,
আরশি জুড়ে সলাজ চোখ,
রোদে পোড়া শরীর জুড়ে আমার
আঁকে আনাবেলের ছবি—
তুই যেন রুপালী আলোয়
ডিঙি নৌকোয় দিয়েছিস্ পাড়ি
আর আমি মেঘের ভেলায়।


বৃষ্টির সাথে ভাব  না করে  উপায়  আছে ?একটু কথা  কাটাকাটি হল কি হল না, অমনি সে জুড়বে কান্না, আর সে যদি একবার উল্টিয়ে ঠোঁট  ধরে মেঘমল্লার তাহলে আর দেখতে হবে না। বাড়ির উঠোন ছাপিয়ে তার কান্না পৌঁছোবে এক্কেবারে বাগানে। সেখানে  জল থই  থই।  তারপর আম, জাম, কাঁঠাল গাছেদের কাছে নালিশ শেষে সোজা রাজপথ। তারপর রাস্তা ধরে এপাড়া ওপাড়া ঘুরে শেষ মেষ নদীর সাথে দেখা করে সব রাগ অভিমানের উপযুক্ত বহিঃপ্রকাশ। বৃষ্টি আর নদী। দুই মহা অভিমানি মেয়ে। এদের যারা কাছ থেকে দেখেছে, হাজার ভয় সত্ত্বেত্ত এদের ভালোবেসেছে। এক দুর্নিবার আকর্ষণে ছুটে গেছে ওদের কাছে। জলে ভিজে একাকার।  জলের স্পর্শে কেঁপেছে। তবু জলকেই ভালোবেসেছে আর গেয়েছে প্রাণ ভরে বরষার গান। জলমগ্ন শহরে নৌকার দাঁড় হাতে সেজেছে মাঝি। জলের ওপর আলোর ছবি আঁকা দৃশ্য তখন হয়েছে তার স্বপনের চাবিকাঠি যা দিয়ে সে দিয়েছে পাড়ি তার ভালোলাগার জগতে। বৃষ্টির সাথে ভাব না করে উপায় আছে?

১৩

ভেবেছিলাম একটা প্রেমের কবিতা লিখব।  বেশ আটপৌরে।

লম্বা এক ঝুলবারান্দা আর তার ঠিক গা ঘেঁষে একটা ছিপছিপে তেঁতুল গাছ।  বারান্দায় উড়তে দেখা যাবে এক লাল টুকটুকে সোনালি  পাড়ের শাড়ি। কোনো এক বসন্তের সকালে সেই বাড়ীর পরম আদরের মেয়ে বারান্দায় আসবে আনমনে গানের কলি গাইতে গাইতে। ওই বাড়ীরই একতলায় সেই অষ্টাদশী মেয়ের কাকার ঘর থেকে ভেসে আসবে আকাশবাণী কলকাতার প্রাত্যহিকী। মেয়েটি হঠাৎই দেখবে ঢোলা পাজামা পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবক চলেছে দ্রুত সাইকেল চালিয়ে রাস্তা দিয়ে। সকাল আটটা আটের ট্রেন তার মানে এখনো যায়নি, ভাববে মেয়েটি। আর নিজের মনেই বলবে ‘কবে যে একটু কায়দার পোশাক পরতে শিখবে বকুরাম’। বলেই সে মুখ ঘুরিয়ে বারান্দায় ঝোলানো দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকাবে আর বলবে ‘দুগ্গা দুগ্গা’। ছেলেটিও একটিবারের জন্যে ওপরের দিকে তাকিয়ে চাপ বাড়াবে সাইকেলের প্যাডেলে। ‘আজ বিকেলে ফেরার সময় চৌরঙ্গীর এম বিশ্বাস এ্যান্ড সিম্ফনি থেকে এলপিটা কিনতে হবে। সেই এলপিটা যাতে আছে বড়ে গোলাম আলীর গান। ’ছেলেটা ভাবতে ভাবতে পৌঁছোবে স্টেশনে। ‘ইস্ সেদিন রুম্পাদের বাড়ীতে কি সুন্দর গেয়েছিল বকুরাম। ’মেয়েটা ছেলেটির চলে যাওয়া অবয়ব দেখতে দেখতে ভাববে। ছোট্ট শহরটায় বসন্তের সকাল তার শান্ত স্নিগ্ধ আলোর পশরা নিয়ে বসবে। ভেবেছিলাম এমনই এক প্রেমের কবিতা লিখব।
 

প্রদীপ চক্রবর্তী
প্রদীপ চক্রবর্তী

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

তবু কবিতা লিখি

 

টাটা রোড বোঁ বোঁ করে গাড়ি ছোটে,

দূর আব্দি আওয়াজ আসে কানে।

পাশে বাথরুম, প্রবেশ করে কোন আদিবাসি মহিলা,

রাত ১২:০৫।

ঝুল বারান্দার একেবারে প্রান্তে দুটি আরামকেদারা,

মাঝে দুটি, আমি আর খাতা।

মশারা আমাকে দোসর ভেবে গান শোনাই।

পায়ের নীচে বিষ, কূন্ডলি পাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে,

গাড়ির কন্ঠস্বর তখনও বন্ধ হই না।

বেশ কয়েক কিলোমিটার চোখের আন্তরে প্রবেশ করে,

তাতে শুধু গুটি কয়েক জানালা দিয়ে প্রকাশিত আলো দেখে যাই।

কোন মানুষ নেই।

সবাই যেন ঘর বন্ধ করে নিরুদ্দেশের পথে।

গাড়ির শব্দ আমার ঘুমকে তাড়িয়ে বেড়াই,

তবু আমি কবিতা লিখি।

 

এটাই হয়

যে হ্রদয় নদীর মত প্রবাহমান, স্বপ্নের মত বাধাহীন,

যে শরীর মেঘের মত অজগর, ঠাকুর ঘরের মত শুণ্য

তাকেই আমি বঽন করে চলেছি দীঘ ২৪ বছর.

কোথাও সময়ের বেশী থেকে উদ্ধার করেছি,

কবিতা লেখার নেশা, গল্প বই পড়ার ইচ্ছা আর কর্তব্য এড়িয়ে চলতে।

আমি অগণিত তারাদের ভিতর ঢুকে পড়ি

স্বপ্ন দেখার অভিনয়ে, মেকাপ ছাড়াই।

সব সময় কি যেন খুঁজে বেড়াই,

যেখানে থাকে না ছন্দ, রং, গন্ধ কোন কিছুই।

কখনো বা মোবাইলে টাইপ করি-

‘‘সেই তো ঘরে ফেরা’’ আবার কোন সময় আধময়লা চিরকূট কুড়িয়ে লিখে রাখি- ‘বার্ধ্যকের বারানসী’।

সব কিছুই সম্প্রসারিত করে ফেলি

সবার আপনকেই।

সকাল হতে না হতেই উদবাস্তুর মত

নূতন আবিস্কারের পথ চলা। 

 

একা

গেস্ট হাউস, ছোটুর রান্না, ন’টা কুড়ি,

হাত ধুয়ে রোজ নিজের চৌকিটে,

সঙ্গে অবৌধ চারমিনার, ট্রেনের টিকিট

বিছানার নীচে গেলাস,

সম্মানিত চপ্পল আর বিড়ি রাখার পাত্র,

দেওয়ালে সিডুল, অন্ধকার নীচে,

বিরসা মুণ্ডা, কলের বমি করার শব্দ ও

লুডো গুটির আওয়াজ।

মাইনে পেলে

মাইনে পেলে,

হোটেলে মাংস খাই,

বিড়ির স্থানে গোল্ড ফেলেক।

সে দিন ট্রেনে টিকিট কাটতে ভুলি না,

ভুলিনা রিক্সায় চাপতে।

মাইনে পেলে,

সেলে শার্ট কিনতে ভুলি না,

ভুলিনা বিকালে রেস্টুরেন্ট।

ভুলিনা সুতপাকে ডাকতে,

এক সাথে সিনেমা দেখতে।

মাইনে পেলে,

ফুচকা খাই পেট পুরে

চপ খাই আনেক।

ভুলিনা মিষ্টি হাতে বাড়ি ফেরা

অথবা ভাইঝির চকলেট।

মাইনে পেলে

কিন্তু  ইচ্ছামত বৃষ্টিতে নামাতে পারি না।

দিনের শেষে

              

রে কবিতা হবে লিখছি,

তোমার আমার চোখ, অর্জুন গাছের শেষ প্রান্ত

আর আধ ফলা চাঁদ, সবই পাহাড়ের ধার বরাবর

এক সরলরেখা।

কুইতুকো থেকে বণ্ডি মাইল দুয়েক,

গাছ আর গাছ পাহাড়ের চাদরে।

ক্যামেরা কেনার সফলতা আসত বলে মনে হয়,

সবই বাঁধ বরাবর।

আমি রুমে, চোখ রাখি মোমবাতির দিকে

আর মনে আসে-বাগমারার চার-মোড়ের কথা।

সারি দিয়ে বৃদ্ধ সাঁওতালি মহিলার দল,

কাটুরি হাতে হাঁতে হাঁড়িয়া পিতে মত্ত,

আপন ভাষাই গিজির গিজির শব্দ ও…

আমি মনে করতে চাইছিলাম না।

ছয় নভেম্বর                            

সুট বুট পরা পুরুষ, পাত পেড়ে খাওয়া,

লোভের একটা বড়ো উদাহারণ, খেঁকুড়েদের ভয়।

সংস্কৃতি যাত্রা, ব্যাপক প্রচার, নাকচ করল আদালত।

ঘরে কিংবা বাইরে, চোখ মুখ ধুয়ে নাও।

দাড়ানোর সীমারেখা, সরকারের টাকা কেক,

আসপাশে রাজি নন মমতাদি, ডিজেল থেকে গ্যাস,

রান ওয়েতেই থমকে গেলো আমার ভালোবাসা।

কচি বয়সের শকুন্তলাকে বলেই ফেলি এবার কথাটা,

বস্তিবাসী, যেখানে থাকেন পরিবেশমুক্ত বাসগৃহ,

কালীমন্দির থেকে পুলিয়া পাড় হয়ে গেস্ট হাউস,

চাকা ঘোরাতে ঘোরাতে ঘরে প্রবেশ,

একটু ফেসওয়াস নিয়ে চাপা কলের পাশে,

গরম জল গিলতে গিলতে বলেই ফেলি এবার কথাটা?

আপসে পিয়ার হো গিয়া।

  

 

স্বচ্ছ প্রেম

নিকা মাকে বলেনি ঠিকই, টুবাইকে ভালোবাসে।

মেয়েরা যেটা চাই-কোন এক ব্যাক্তি আমাই সব থেকে বেশি ভালো বাসুক,

মা, বাবাকে বলে ফেলে ছিল, পরিণতি সেই . . .

পাড়ার দুটো বন্ধু ও যে এই ঘটনাটা জানে না,

কে বিশ্বাস করবে।

সত্যিকারের প্রেম বলা যেতে পারে।

কিছু দিন আগে পর্যন্ত, তোমার বাবা আমার বাবা দোসর ছিল,

আজ সেটা রবিবারের গেস্ট হাউস।

ছেলের সাথে যোগাযোগ বলতে-

ওই নোকিয়ার একটা সাদাকালো মোবাইল।

আনুমানিক তিন বছর পেরিয়ে. . .

মাস্টার ডিগ্রী করে ফেলেছে,

চাকরির জন্য ছটফট করছে, মেট্রোবাসি ছেলেটা।

হঠাৎ করে শুনলাম, ‘মনিকার’ বিয়ে হয়ে গেছে

বড়ো লোক বাপের এক মাত্র ছেলের সাথে।

আমার কিছু করার ছিল না,

তুই চাকরি পেতে অনেক দেরী করে দিলি।

ধ্বংস

০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী ধ্বংস হলে

আমার উচিত ছিল গুরুজনদের প্রণাম করে নেওয়ার

কিন্তু করিনি।

আমার উচিত ছিল এ.টি.এম এর ব্যালান্স শূন্য করে রাখার

কিন্তু করিনি।

আমার উচিত ছিল পেট ভর্তি গাঁজা খেয়ে নেওয়ার

কিন্তু তাও করিনি।

আমার উচিত ছিল সমস্ত বন্ধুদের সাথে দেখা করার

কিন্তু তাও করিনি।

ঐইগুলো কেন করিনি, জানতে চাও?

আমি চাই,

পৃথিবী আরও ১০০০ বছর পরে ধ্বংস হোক।

 

 

বসন্ত

কালের ঘুম ঠেলে, রবিবারে ন’টাই,

শীত ঠেলে দিয়েছে বসন্তের দিকে।

কোকিরগুলোও ডাকতে শুরু করেছে,

আর আমের মুকুল ঝড়তে লেগেছে,

আম বাগিচার সমস্ত আমগাছে।

এই মাত্র শোযনের ফুল ঝড়া শেষ,

তারা আকুল কখন হবো উপযোগি।

বসন্ত মেনেই বসন্তোৎসব,

পলাশ ফুলের পাপড়ি।

চাদর মুড়ি দিয়েও কোন বিদেশিনী

শান্তিনিকেতন এসেছিল সেদিন।

দেশ বিদেশের ক্যামেরাও. . .

পড়ন্ত বিকালের মত কোনদিন,

বসন্তও ঠেলে অন্য কারোর দিকে।

 

একাকিত্ব

ইংরাজি টিউশটা নিয়ে,

সকাল ৫:৩০ প্রত্যেক দিন এলাম দিলাম।

প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন ক্লাসেও গেলাম,

আবার সেই একাকিত্ব।

সকালের স্নান, দুগ্রাজির ৫ টাকার এক পেকেট আমুল,

আর কম দামের কয়েক গেলাস জল।

এবার তো সন্ধ্যা নামে এল,

কে ছাড়বে পয়সা গোনার লোকটাকে;

হাওয়া খেতে, আমিই গেলাম মধুবাজারে।

সন্ধ্যার রুটিন, বিদ্যুৎ যখন মেনে চলে,

তখন আমি স্বপ্নের জাবর কাটি।

আবার সেই একাকিত্ব।

বেডের উপর যে ছাদটা রয়েছে, সেটার চাবি

ওদের কাছে নেই।

তাই, আজকের চাঁদের

ঝড়া জল দেখা হলো না।

ছোটুর ছয়টা রুটি দিয়ে-বেডটাকে ঝেড়ে,

শীতের চাদরটা’ পায়ের নীচে রেখে,

ঘুমতে যাওয়ার চেষ্টা করি।

একাকিত্বই আমাকে প্রশ্ন করে হাজার।

কাব্য

 

সেই তো আবার পথ গোনা,

প্রতীক্ষার দিন।

সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে,

পায়ের নখ ছোট।

দিনের পর দিন পেনের কালি শেষ হয়,

ভর্তি হয় কাগজ,

পায়খানার চেম্বারও।

যে দিনটাই অন্ধকার নামে এল

তারই শুধু মনখারাপ।

আর যে উঁকিঝুঁকি মারছে,

সেই তো সৃষ্টি করবে কাব্য।

 

 

পূর্ণিমার রাতে 

 

ল শূন্য ড্রাম, নিজের ছায়া,

লম্বা লম্বা বাঁশ, আর তিনটে টাওয়ারের আলা,

আমার চোখ আকর্ষণ করছে।

পূর্ণিমার রাতে।

কবি ফোন রিসিভ না করাই,

কানে আসলো এম্বুল্যান্সের শব্দ।

কাল সুকান্তদার চাইবাসা বিদাই,

পাহাড়ের মাঝে মদ।

আর স্টোরে লেবারদের সাথে ঝামেলা,

পূর্ণিমার রাতে।

কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ - এখনো কত ঘরে,

মানুষের আনাগোনা।

এই পূর্ণিমার রাতে।

 

 

স্বপ্ন

                          

মানুষ, নেশা করলেই মনে হয়,

নিজেকে দেখতে ইচ্ছা করে খুব।

দেখতে তো পেলে না নিশ্চয়;

দেখতে দেখতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেলাম।

ঘুমের ঘোরে

আপিস যাওয়া, ১টা বাজলেই পেট,

৬টা বাজার সাথে সাথেই

গেস্ট হাউস এর কথা মনে পড়ে।

রাত্রি ৯টা ছোটুর চারটে রুটি,

গামছা দিয়ে বেড টাকে ঝেড়ে,

আবার ঘুমিয়ে গেলাম।

এ ঘুম আর সেই ঘুমের টানাপোড়ানেই,

আমরা নকশা আঁকতে শুরু করলাম।

সন্ধ্যার পড়ে বিদ্যুৎ চলে গেলো,

আমরা কবে শেষ করবো গো. . .

সে দিন, হইত আমার বয়স কম থাকবে।

 

 

রসি

 

মেরা বিশ, বলে একশত টাকার একটা নোট

দুভাঁজ করে ফেলে দিল,

হরতনের উপর।

মাঝে বগ্রাকৃত এক বড়ো ডালা।

তখনই নাকে এসেছিল

হাঁড়িয়া আর কাঁচা মাছের সুবাস।

সেদিনই আবিস্কার করেছিলাম,

মানুষ পিঁপড়ে খাই।

এদেশেরই মানুষ অবাক হবার কিছু নেই,

যাকে বলে চিটা চাঁটনি।

তবু মেয়েরা হাঁড়িয়া বেচে, পকোড়ি আর টাটকা সব্জি,

বড়ো বড়ো মুলো, পোনকা শাক, রংবিহীন পটল।

বৃহদাকার সন্ধ্যা নেমে আসে দেরীতে,

তবু জুটি মেলে না যোদ্ধা লোকের মুরগির।

বগলের মধ্যে আঁটকে রাখে,

পরের রবিবারের জন্য।

দু গেলাস রসি।

 

 

তবু আমি 

 

সারা জীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে সপ্তষী মেষ,

কোন দিনও ভুলতে চাইব না, সেই সব দিনের কথা।

যেখানে ভাই আর আমি এক সাথে. . .

পথে ভাগনে কোথাই হারিয়ে গেলো,

নূতন বন্ধু পেয়ে।

তবু মনে পড়ে সেই মামা ডাক,

ফদনা বিলীন হয়ে গেলো, হাট জমবার আগেই,

তবু আমি ছিলাম নায়েক পাড়ার মেষে।

মাঝে কত বাবু সেন এলো আর গেলো,

মেষ চালাতে এসেছিল মোদকদা।

তবু আমার প্যান কার্ড করা হলো না।

সুপ্ত কবিও হারিয়ে গেলো কোনো সময়,

ঘর ভাঙ্গা পরিবার ও আশ্রয় নিয়েছিল সেদিন।

তবেই তো আমি ইউনিলিভার।

সে তো এক দূর্ঘটনা

শান্তিনিকেতনে কাঁঠাল আর কুল খাওয়া

চাদর মুড়ি দিয়ে।

তবু আমি নায়েক পাড়ার মেষে।

অভিজিৎ দাশগুপ্ত দে
অভিজিৎ দাশগুপ্ত দে
picture-abhijit.jpg

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

কবি অভিজিৎ দাশগুপ্তের জন্ম ১৯৭৬ সালে কলকাতায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। এখন কবি কলকাতাতেই বসবাস করছেন। পিতা  অরুণ কান্তি দাশগুপ্ত পেশায় শিক্ষক ছিলেন। পিতার অনুপ্রেরণায় বর্তমানে কবি শিক্ষকতার মহানব্রতে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। কবি ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর একে একে বি.এড, এম.ফিল শেষ করে শিক্ষাবিজ্ঞান এ দ্বিতীয় বার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক গবেষণায় রত এবং সমাজ কল্যাণের বিভিন্ন কাজে লিপ্ত। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'Whirligig Of Life' ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়। ঠিক তার পরের বছর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'শূন্য এ বুকে' প্রকাশিত হয়। তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়।

অভিন্ন হৃদয়                

খো, কথা বলো না

আমার চোখ তোমার শব্দহীনতায়

মুগ্ধতা খোঁজে।

দেখো, স্মৃতি নিও না

আমার হৃদয়ে তোমার সুখস্মৃতি

চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে।

দেখো, ওভাবে তাকিয়ে না

তোমার নরম দৃষ্টিপাতে

এন্টার্কটিকার কঠিন বরফে

গভীর গিরিখাত তৈরি করে।

দেখো, আমার গহন

তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতির

রাসায়নিক বিক্রিয়ায়,

বৈপ্লবিক অভিযোজন ঘটিয়েছে।।

সাদা পাতায় অদৃশ্য অক্ষর    

        

ইয়ের সবকটা পাতা সাদা

একটা শব্দেরও অস্তিত্ব নেই----

অদৃশ্য অক্ষরগুলোর

নির্বাক চিৎকার জানান দিতে ব্যর্থ।

সাদা রঙের ভিড়ে

কালো কালো অক্ষরগুলো

হারিয়ে যেতে বসেছে;

অক্ষরগুলোর অব্যক্ত ব্যথা,

কালো কালো চোখের জল,

অসহায় আত্মসমর্পণ,

হৃদয়বিদারক আর্তনাদ

যেন সাদা ক্যানভাসে রক্ত ঝরাচ্ছে।

এ রক্ত নিশ্চয়ই একদিন কথা বলবে,

শিরদাঁড়া সোজা করে বলবে----

এবার প্রতিরোধের সময়;

তোমার সাদা ক্যানভাসে

বলিষ্ঠ কালো কালো অক্ষর

শব্দ হয়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলবে।

তখন সেই তুফান সামলাতে পারবে তো????

 


আজও আমরা একা                      

 

মাজ সমাজ খেলা খেলতে

আমাদের দারুন পছন্দ;----

অথচ খেলার শর্ত আমাদের অজানা।

কি খেলছি, কেন খেলছি, প্রতিপক্ষ কে---

সবই কালো ধোঁয়ার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

কতো আর খেলার অভিনয় করা যায়!!!

সবাই বুঝি, জানি-----

খেলার চেয়ে খেলার অভিনয় আরো কঠিন।

তবুও খেলতে তো হবেই

না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে।

সমাজের অংশীদারী কারবারে পুঁজি লাগিয়েও ব্যবসায়ে মতি নেই;

আমাদের মস্তিস্কে সমাজের জোরালো প্রতিচ্ছবি মননে সামাজিকতা নেই।

প্রাগৈতিহাসিক সময় আমরা একা ছিলাম,

এখনো ঠিক একই রকম একা আছি।

একা থাকা আমাদের রক্তে,

সমাজ চেতনা তো খোলস মাত্র।।

ক'জন আঁধারে আলো হতে পারে

 

ভাবছি আজ সারা রাত জাগবো;

রাতের কালনিদ্রাকে নদীর ওপারেই

পরাজিত করবো।

অন্ধকার আমার ভালো লাগে না।

নিজেকে চিনতে ভুল হয় বারংবার।

নতুন সূর্যের অপেক্ষায় আছি----

প্রত্যুষের আলো গায়ে মেখে

আবার চলা শুরু করতে চাই।

এবার আমার হাতে চাই তোমার হাত,

শব্দহীন কথোপকথনে

তুমি আমার পাশে থেকো।

পাশে থাকতে পারা বড় দরকার।

ক'জন অন্ধকারে হাত ধরতে পারে,

ক'জন আঁধারে আলো হতে পারে।।

জীবনকথন              

শুকনো মাটির বিছানায়

গরম পিচের মোটা আস্তরণ,

কালো পিচের কবরে চাপা

শতশত কণিকার ফুঁপিয়ে কান্না,

প্রাচীন হাহাকারে

সজীবতার তির্যক ছোঁয়া।

নির্বাক মাটির নির্বাক ইতিহাস,

কান পেতে শোনা যায়

হারিয়ে যাওয়া গল্পকথা।

এ গল্পকথা

তোমার আমার,

আমজনতার।

এর মধ্যে বাঁচা, এর মধ্যেই মরণ,

বাঁচা মরার দোলাচলে জীবনকথন।।

 

 

অন্তর্জলি যাত্রা

মৃতদেহগুলো শুয়ে আছে মাটিতে,

পচন ধরে নি, মৃত্যঘ্রাণে বাতাস ভাসে নি;

জানি কিছুক্ষণের মধ্যেই

জেগে উঠবে লাশগুলো,

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অবিকল 

জ্যান্ত মানুষের মতো বলবে----

তোমরা যা শিখিয়েছিলে

সব আত্মস্থ করেছিলাম আমরা।

এখনো মরা কোষে সে শিক্ষা বেঁচে আছে।

শেখানো যতটা সহজ,

শেখা আরো অনেক বেশি কঠিন ছিল।

তবে তোমরা ভুল শিখিয়েছিলে,

আর আমরাও ভুল শিখেছিলাম।

মৃত্যু-চিতার কাঠে শিক্ষার অন্তর্জলি যাত্রা।।

প্রতীক্ষা

 

বাতিস্তম্ভের নীচে তুমি দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ,

আমার জন্য প্রহর গুনছো,

লজ্জা, ভয়কে অন্ধকারের চাদরে ঢেকে।

তুমি ফিরে গেলে আমায় না দেখতে পেয়ে।

আবারও তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে

অন্য কোনোদিন অন্য কোনো বাতিস্তম্ভের নীচে;

সে দিনও হয়তো কথা রাখতে পারবো না আমি।

তবুও তুমি তোমার বিশ্বাসকে

কালো মেঘের কাছে পরাজিত হতে দেবে না।

জানি তোমার বিশ্বাস তোমার অলংকার।

বারংবার আমার জন্য তোমার প্রতীক্ষা

বহু দূরে থাকা দুটি ছিন্ন শিকড়কে

একদিন ঠিক বটবৃক্ষের মূল শিকড় রূপে

মাটির গহনে প্রবেশ করাবে।।

Please mention the "name of the articles and the author" you would like to comment in the following box... Thank you.

মতামত

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

bottom of page