top of page
srikrishna.jpg
কবিতা সমগ্র
sea1.jpg
সূচীপত্র
প্রদীপ সরকার 
ডালাস, টেক্সাস
প্রদীপ সরকার

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

লেখকের জন্ম বালুরঘাট, পশ্চিম দিনাজপুরে। ছাত্রবস্থা থেকেই কবিতা চর্চা করে চলেছেন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে লিখেছেন। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ডালাসে থাকেন। 

ত্রিপর্ণ

সাঁঝ

 

(১)

মি এক ছোট্ট পাখির গল্প বলি

সাঁঝ বিকেলে,

গোধূলির স্বয়ম্বরে।


(২)

দামাল সাঁঝের নীলাভ বেতাল সন্ধি,

ঘূর্ণির বাতায়নে,

আমার বিভোল স্পন্দিত মনপদ্ম।

 

(৩)

সাঁঝে বৃষ্টি মেঘ-মল্লার বীণ।

মৃদুতা, বাদল, সন্ধ্যার ঝড়,

নিপুন ধূলার কঙ্কন-চুড়ি নিক্কন।


(৪)

তৃষিত নয়নে তোর সাঁঝ নামে,

নীড়ে ফেরা পাখালি বাতাস,

সোনালি রোদ্দুর-প্রাণ আগামী সকাল প্রত্যাশে।


(৫)

স্বপ্ন ও নক্ষত্রের আলো

সাঁঝে সান্ধ্য-ইমন কল্যান,

গহীন আকাশ নীলজল সবুজ প্রবাল।

 

(৬)

মস্ত পৃথিবী স্থবীর হয়ে গেলে

বাতাস থাকে না বসে নিরুত্তর ঘাস-পানে চেয়ে;

তবু আমি ভালোবাসি ভালোবাসি সাঁঝ-গোধুলির ভাষা।

(৭)

বাই হাসতে পারে,

কিন্তু সবাই হাসাতে পারে না,

হাস্যরসের সৃষ্টি এক শৈল্পিক অবদান।

(৮)

ড় এক অদ্ভুত সময় - বিবর্ণ সাজানো দিন ক্লান্ত,

আঙ্গিনা ভরানো ছিল সুখ-ফুলে

নিঃশব্দে লুকালো তারা, ফুটিলো না আর মনদুখে।

(৯)

মার প্রাচুর্য্য, আমার অভাব, আর্তি,

আমার দেনা পাওনার বিনিময়

আমার শঙ্খনীল ওড়ার ধূমকেতু।

(১০)    

লছুট ওই রঙিন হরিণ,

বাঘের চোখ,

প্রতিবাদী ভাষা কঠিন হোক।

(১০)    

লছুট ওই রঙিন হরিণ,

বাঘের চোখ,

প্রতিবাদী ভাষা কঠিন হোক।

(১১)

জ্যোৎস্নার পারাবত ধীরগতি বয়ে যায়

অবসাদ কিছুটা দাঁড়িয়ে গেল গলিপথে

কাটাতে সময়।

 

(১২)

বিরল জ্যোৎস্না

ঢেউ লহরী ছন্দ

ঊর্বশী অনাবিল সৈকতে

 

(১৩)

চেনা সখী

তব আঁখি সুরে

ভাসে গোধূলির রূপকথা।

 

(১৪)

রোদ্দুরে পিঠ সেঁকছে নদীর কন্যা,

এবং বন্যা

গেছে সুপ্ত গুহায় নিদ্রায়।

 

(১৫)

তীব্র দহন,

বসে আছি মেঘ জলকণা তোর জন্যে,

বাদল অঝোর বিদ্যুৎ তোর জন্যে।

(১৬)

পোতীর প্রেমে মশগুল সাঁঝবেলা,

পারাবত-প্রিয়া সহজে ধরেছে মেঘ-মল্লার তান,

নীল কন্যা আকাশের গাঙে উজানে বাইছে দাঁড়।

(১৭)

ময় পালটে যায় কালের ভ্র ুকুঠিতে

কে যে আজ বাইছে উজানে

সময়ের অনন্ত গাঙ্গে।

 

(১৮)

মি চলে যাব আজ কিংবা কাল

উদিচী ঊষার অন্ত্রে

আগ বহ্নি সুখে।

 

(১৯)

এক অন্য আমি

ক্ষুব্ধ বিকেল ক্ষিপ্ত সকাল

অপমান সইতে নারি।

 

(২০)

মৃত জীবের গন্ধ বয়ে আনে ভয়াল সংকেত।

মৃত্যুর গন্ধ বয়ে আনে বিপদের সংকেত

গুঁড়ি মেরে দিন এগোচ্ছেঃ  প্রতিশোধ।

 

(২১)

দুইটি মূর্খ তখন উঠিয়াছে জেগে

ঘুরিতেছে তপোবন মাঝে।

 

(২২)

তোমার চোখে নিদ্রা এলে দুঃখ পেল চাঁদ।

আর দুমুঠো ভাত দিবি মা,

পেটের খোলের কোনে।

 

(২৩)

ক্ষীণায়ু সন্ধ্যায়,

প্রিয়তমা নিয়ে এস সমুদ্রে প্রলয়

উপত্যকা জুড়ে আনো মেঘের কুয়াশা।

 

(২৪)

নিরাপদে নীড় বাঁধছে মেঘের কন্যা

ঢুকছে দ্বীপে মৌসুমি প্রিয় বায়ু।

 

(২৫)

তুমি আমার মন ছুঁয়েছ,

আমি তোমার মন ছুঁয়েছি গভীরতায়।

 

(২৬)

ফিরে এস বৃত্তে আবার,

এস থাকি এক সাথে বৃত্তের ভিতরে,

নিয়ামক বৃত্ত ঘোরে শ্বাশত জ্যোৎস্নায়।

 

(২৭)

লাবদ্ধ নিম্ন ভূমিরা বাড়ছে।

সরল আদিমতা জানে নাকো, খোঁজে নাকো পথ

কেমনে দমিয়ে রাখা যায় কামনা ও প্রবৃত্তির স্রোত।

 

(২৮)

লোভী এক সমুদ্রের ঢেউ ছুঁয়ে দিল বালুকাবেলা,

আর শঙ্খ হেসে সরে গেল আরো একটু দূরে

গোধূলির বাতাসের সাথে কবোষ্ণ রোদে।

 

(২৯)

ন ছাড়,

সে গতি কতটা দ্রুত হবে তুমি জানো।

অন্ধকারে ডুবে আছে মৃত হাঙরের ফিন্।

 

(৩০)

মুদ্রের উপকূলে বাস, সমুদ্রের তীরে ঘাস ঘর,

সামুদ্রিক হাওয়া, মধ্যাহ্নে হাজার বছর

রূপকথা হয়ে যায় কাঁখে করে নিয়ে আসা জল।

 

(৩১)

ক দীর্ঘশ্বাস গভীর, অচেনা অন্তর,

এক বুক সতেজ বাতাস, উপকূল ঝড়,

এক বুক আমার প্রশ্বাস।

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

প্রদীপ সরকার 
ডালাস, টেক্সাস

চতুর্ষ্পর্নী

(১)

দৃশ্য আঁধার ভাসে,

অভিমানী স্বপ্ন ভাসে,

এসে যায় নিশ্চিন্ত রাতের আড়ালে,

মেঘলিমা কোমল কঙ্কনে।

 

(২)

কুঁড়ে ঘর ছাদে খড়ের আড়ালে চাঁদ যে লুকালো মুখ

ঝোপে ঝিঁঝিঁ ডাকে সাঁঝের বেলাতে,

শিউলি ফুটবে কাল,

এই নির্জনে তুচ্ছ প্রেমের সুখ।

 

(৩)

শ্চর্য্য মানুষের সাথে পরিচয় হলে পরে

আলাদীন আশ্চর্য্য প্রদীপ

আশ্চর্য্য কিছু অভিজ্ঞতা জড়ো হয়

মনের অলিন্দে, আনাচে কোনাচে।

 

(৪)

ভালোবাসা এক সবুজ প্রাণের ক্ষেত,

স্বর্নের বেলাভুমি,

আলো-আঁধারির আবছায়া মাখা

গোধুলির ধুলিকণা।

 

(৫)

তুমি কি সেই তরুণ ফাল্গুনী 

এস আজ গান শোনা যাক

অন্য এক নিথর

অথচ সবাক শূণ্যের কথকথা।

 

(৬)

ময় কিছু ভুল ছিল

তাই আলগা বাঁধন,

সময় কিছু ভুল ছিল

তাই মিলনহীনা।

 

(৭)

লস সময় জাবনা কাটে

নদীর ধারে

বাদল মেঘ বৃষ্টি ধরে

জলকন্যার আঁচল ভরে।

 

(৮) ।।প্রেরণা তুমি।।

মার প্রেরনা ঘুরে ফিরে দেখে

চোখ মুখ অবয়ব,

হারানো ডানার সুর ফিরে আসে

কোটি কোটি সময়ের পর।

 

(৯)

সেই কবে থেকে

ঘুম আসেনাকো চোখে!

অনেক দিন,অনেক রাত,

অনেক প্রহর  ধোঁকে। 

(১০)

যাজ্ঞসেনী, সাদা পোষাকে

তোমাকে দারুণ লাগে,

লাগে দারুন তোমার অমন

সাদা দাঁতের হাসি।

 

(১১)

নমনে উড়ে চলা পাখি

মুছে ক্লান্তি সব 

সূর্য্যের অলস উত্তাপে,

মন তোকে ফেরাবে রোদ্দুরে। 

 

(১২)

পাগলাঝোরা কল্পনাতে সকাল বিকাল,

মেঘলা দিন কেমন হবে, উড়বে ময়ূর,

পাহাড় গ্রীবায় ‘শাঁওলী’-নামী কন্যা কেমন,

সহজ কথার উপাসনা শূণ্য প্রতীক।

 

(১৩)

নের মিল তোমার আমার সখি,

উড়ে যাওয়া, ডানা মেলা এক পাখি,

ইতি টানব তোমার আমার কথায়?

সে তো ক্ষণস্থায়ী সময়ের প্রলাপ।

 

(১৪)

কটা বিন্দু বৃত্ত ঘুরছে গতিময় কাব্যের মত,

ক্রমশঃ ভেসে উঠছে পূর্ণিমা চাঁদ,

নীল শিখা কাঁপছে, নড়ছে, ব্যাপ্তিতে ছড়িয়ে পড়ছে

ব্রহ্ম মানসে।

 

(১৫)

লবায়ু, জলাশয়,

বেলে হাঁস, জলের ডাহুক,

রাজহংসী বসে আছে সুর্যাস্তের শেষে

জলাভূমে রাজার টিলায়।

 

(১৬)

গুনের তাপ ঝলসে দেয় মনআর পুরানো অতীত,

আগুনের তাপ নিয়ন্ত্রণ জোগায় উত্তাপ ও অন্ন,

অথচ সেই পাবক হয়ে ওঠে দারুন দাহক

যদি না তাকে বশ মানাতে পারো।

 

(১৭)

রূপকভাবে লিখছি,

তবু তুমি তো কিছু বলছ না।

ব্যস্ত আছ বুঝতে পারি,

অলীক কথা ভাবছি না।

 

(১৮)  ।।তুমি।।

জকে তুমি বইছ অন্য স্রোতে

পৈঠা আছে অন্য হাতেতে আলগা, 

পশমী মেঘ উড়ছে, খেলছে, দুলছে,

নীল কাব্যে বসছে শিকড় একটা।

 

(১৯)  ।।মন।।

র্ণরেখায় ভরিয়ে দিচ্ছে মন,

আমার সুজন জন।

আমার আপন জন,

মনের থেকেও প্রিয় আমার জন।

 

(২০)

ঘেঁটে দেখে নিও ছাইয়ের ভিতর

আগুন কিছু থাকল কি না। 

থাকলে আগুন, আঁচও আছে,

হাপর নিও ফুলকি হবে।

 

(২১)

দুলকি চালে চলতে পারো

অতীত বাতায়নে,

দুরন্ত ঝড় ছড়িয়ে দিও

দীর্ঘ ঘুমে তুষার চিরে দিয়ে।

 

(২২) ।।ভোর।।

খন রাত প্রায় শেষ হয়ে আসে,

ক্রমে সূর্য্য এই প্রায় উঠে এলো পুবের সীমায়,

ছুঁয়ে ফেলি দিকচক্রবাল

এ সময় মসৃণ সময়।

 

(২৩)  ।।সময় কম।।

তোমার এখন সময় আছে ঘৃণা করার?

জীবন এত প্রচুর না কি যুদ্ধ হবে?

তোমার এখন সময় আছে ভালবাসার?

জীবন আমার অল্প, খানিক ভালবাসো। 

 

(২৪)

মি এক রাজার নীরব অট্টহাসি

পাগলাখাকি জ্যোৎস্না ভেজা ভগ্ন বাঁশি

আলোর রেখা প্রাণ আঘাতি ঝর্ণাতলা

মাটির কলস শুষ্ক পুরুষ, আগুন গোলা।

 

(২৫)  ।।জীবনের সত্যি কথাগুলি।।

রূপকথা

এই সব জীবনের সব সত্যি কথা

ঘুরে ফেরে কালজয়ী হয়ে

বন্ধ্যা স্বপ্ন জন্ম নেয় নতুন বিকেলে।

 

(২৬)

সোনার ক্ষেতের ধান

ফুরিয়েছে অঘ্রাণের মাঠে, 

জীবন বিষন্ন হ’লে

নীল ডিমে ঢেকে রাখো বিষ।

(২৭)

পকূলে উদাসীন হাওয়া কিঞ্চিত হারায় উৎসাহ।

তাই, বঙ্গোপসাগরের থেকে কে জানি

এনেছে বয়ে উদ্যমী ঈশানি বাতাস।

সন্ন্যাসিনী সূর্য্য দেখে সভ্যতার প্রথম ভোরেতে।

কবিতা সমগ্র ।। মতামত ।। সূচীপত্র

প্রদীপ সরকার 
ডালাস, টেক্সাস

(১)

আগুন কেমন আগুন!
দগ্ধ করো ফাগ বাতাসে 
উষ্ণ ডানায়!
দুখীর তারায়, আর্তি-হারা
স্বপ্ন মাখা বালুর চরা
স্রোতের টানে
সাঁঝ বিকালে দহন পাখায়।

 

(২)   
।।জ্যোৎস্না।।

জ্যোৎস্না অমন অবিশ্বাস্য ভালো,
ঝরনা জলের স্পর্শে ভেজা ঝিরঝিরে সন্ধ্যায়।
মিহিন বাতাস ফুরফুরে উল্লাস,
উড়ায় কাহন একতারা হাতছানি।
শ্রবণ স্নিগ্ধ মুগ্ধ নিশির ডানা
আঁধারে জ্যোৎস্না আলোর তরল ধূম।
নির্ঝর ঝড় আলোর তরুণ তরু,
বোধন মায়ায় উদ্ভাসই গুন্ঠন।
 
(৩)

ন্ধ্যা শেষ,
নিথর একাকী রাত;
খেয়ালি বাতাস
প্রত্যয়ী প্রণয়ে
ডানা মেলে ভাসে আদুল আহ্লাদে,
অন্তহীন উদোম চাতাল।
 
(৪)

বাষ্পীয় জল নদীর ওপর ঊর্ণনাভ,
এলানো নদী,
গড়ানো জল,
ইচ্ছামতীর হালকা বায়,
রূপালি ঝিলিক জলের ঢেউ,
আকাশ এখন সোনালি রোদের উষ্ণ প্রস্রবণ।
 
(৫)

শৈত্য তুহীন ঠান্ডা জোনাকি রাত,
ধীর পায়ে গত রূপালি বরফ নিশা,
বসন্ত আজ তরুণ বুকের খুন
রোদ্দুরে পিঠ সেঁকছে তুষার চিতা,
হরিণী-বালার উদ্দাম হুটোপুটি,
নীল অম্বরে উথালি সোনালি ঢেউ,
চেনা কুয়াশা উধাও বিলীন ভোরে,
উষ্ণ রোদেরা কিঞ্চিৎ ফুরফুরে।
 
(৬)

শ্বর দিয়েছে ডুব অনন্ত সমরে,
প্রান্তর, মরু, ডোবা, খাল, বিল, আসমুদ্র পাহাড়,
ধু ধু আর শুধু ধু ধু বারুদ আঘ্রাণ,
স্বচ্ছ-নীল প্রলেপিত ধোঁয়ার বলয়,
ছমছমে তল্লাট,
নেমে আসে কালো শঙ্কা পাঁশুবর্ণা ছাই,
যুদ্ধের প্রলম্বিত দীর্ঘ শ্রান্ত নিঃশ্বাসের মতো,
বিষণ্ণতা পূরবী সন্ধ্যায়।
 
(৭)

পাথরের বুকে ছেয়েছি আমার
সবুজ ঘরোয়া গান,
জল কল্লোল লহরী মেশানো
আকাশের খেলাঘর,
বালুচর, নদী, দূর দিগন্ত
জংলার কিংখাব।
 
(৮)

নির্জনে বেরিয়ে জাগে ক্রমশ সাঁতারু রোদ্দুর,
ঋজুরেখা টিকালো
শব্দহীনা ডানার দাপটে
বিনম্র আস্তিনে
ঝড় নামে ঠুনকো ঝিলিকে।
পুষ্প ফোটে বিদ্রোহে পরিচর্যাহীন।
 
(৯)

হাজার বছর,
ভেজানো পাথর,
প্রাচীন ঘ্রাণ,
পুবালি বায়,
চৈতি রাত,
গুহাচিত্র, গোলানো রঙ,
পাতা ঝরা পথ,
আদুরে দুপুর,
জিরোনো স্বেদ,
আদুল গা।
শিস দিলো দিল,
ছেঁড়া দুন্দুভি,
ডানা ঝাপটালো পাখীর ঝাঁক।

 ​

​(১০)

স্বপ্নের অঙ্কুর মাটি ফেটেকুঁড়ি আর কোলাহল প্রজাপতি হয়ে যায়। 

অগ্নি-গিরির বুকেপাথরের পাষাণী মায়ায়ফুল ফোটে স্বপ্নের

মনের গানে, কবিতায়।

(১১) 

।।বোঝে না সে।।

পূর্ণিমা রাত,প্রেমিক চাঁদমেঘ আঙ্গিনায় ভাসল,

ভাসল মেঘের ডানার কোনায়

জ্যোৎস্না রাতে হাঁটল,

বেচারা চাঁদ হাজার যোজন হাঁটল,

আকাশ জুড়ে হাজার তারা, নীহারিকায়,

মেঘের ছোঁয়ায় নিশীথ রাতে

নৌকা হয়ে নীরব অভিমানে

শূণ্য হৃদয় বাইলো।

(১২)

চেনা মুখখানি ছায়ায় লুকোনো

হারানো সুরের গানে,

হারানো মনের ছন্দ,

তবু হাসি মুখ মনে পড়া আঁখি

পুরোনো দিনের দ্বন্দ্ব।

(১৩)
র্ণমালায় হারিয়ে যাচ্ছে দিন,
ভাবছে বসে ডুবুরি এক পাখি,
নাইছে রোদে সজল চুলে মেঘমল্লার বীণ
বাল্যকালের প্রাচীন উপত্যকায়,
গাইছে পাখি জলের কণায় বিবর্তনের গান।
 
(১৪)   
।।মৃত্যু এক রোমাঞ্চের বীথি।।

পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যাওয়া আজ আর মৃত্যু নয়,
মৃত্যু আজ সত্য নয়, দিগন্তের ইমন ভূপালি।
মহাকাল উজানের ডানায় ভাসিল চেতনা-মন–প্রাণ।
সৌরলোক ছায়াপথ
হাজারটি পরিপাটি
করে রাখা নীহারিকা অঙ্গুরীমালা,
পুঞ্জীভূত ঝিকিমিকি নক্ষত্র-সম্রাজ্ঞী
দেহহীনা আত্মার রাতচরা দিশাহীন পাখি,
কানাকানি না কি হাতছানি,
অজানার রোমাঞ্চকর অন্ধকার বীথি।
 
(১৫)  
।।মৃত্যু এক সন্ন্যাস।।

মৃত্যুকে ভয় পাও তুমি!
মৃত্যু থাকে ঘাসের নিবিড়ে
আস্থা-নীড়ে
ঘুমন্ত গভীরে।
মৃত্যু এক উদাসী সন্ন্যাস।
 
মৃত্যু কোনও যন্ত্রণায়
মূঢ় তূর্য নয়,
তিনি এক উড়ন্ত মিতভাষ,
তিনি এক একাকী হদিস,
গূঢ় ব্রহ্ম কালের স্বনক।
মৃত্যু এক অযুত দিগন্ত
বৈতালিক শুণ্যতার গান,
অনন্য শান্তি,
মৃত্যু এক প্রতীক্ষিত অহল্যা তাপসী।
 
(১৬) 
।।মুক্তির গান।।

ক্ষী ও পক্ষিনীর রূপকথা
ডানার গভীর প্রত্যয়ে
স্বচ্ছ ও স্বাধীন সুন্দর।
 
খাঁচাহীন বন্ধহীন বাধাহীন
রৌদ্রনীল মসৃণ
বহুদূর দিগন্তের গানভাসি দিকচক্ররেখা,
আকাশেরও নামকরণ হয় বুঝি
কবিতার প্রেয়সী আহ্লাদে।
পাহাড়ে প্রতিধ্বনি ফেরে
এ গান কল্লোলিনী উচ্ছ্বসিত মুক্তির গান।
 
(১৭)   
।।ঝড় ও স্বপ্ন।।

শাণের কোণে দূরভিসন্ধি মেঘ,
দূরন্ত ঝড়,
ধূলায় ঢাকবে ঘর,
আগুনের পাখি ঝলক দেবে কি জানো?
ঘূর্ণি-সায়র সৌখিন ‘ফিবোনাসি’,
যাযাবর নাকি স্বপ্নের ডানা মেলে!

(১৮)     

।।রইবে না আর।।

ইবে না আর আমার কথা তোর ঘরে,

দীর্ণ আশা এক পলকে যায় সরে।

প্রহর ফুরায়, বাতাস আসে আনমনে,

আমার তুমি, তোমার আমি, ক্রন্দনে।

ক্লান্তি শেষ, অস্থি ঘুমায় চিৎ শুয়ে,

যুদ্ধ শেষ, রণের ভূমি রয় চেয়ে,

নিষ্পলক, একপেশে,

লজ্জাহীন শর শয্যা দর কষে।

 

(১৯) 

।।দু’জনায়।।

ভেঙ্গেছি পাথর, ভেঙ্গেছি আগড় একসাথে

তাই ভেঙ্গেছে ঘর।

দেখেছি যে ঝড় উথাল পাথাল

কলকল্লোল একসাথে

তাই বেঁধেছি ঘর।

দেখেছি দুজনা স্রোতস্বিনী, পাহাড়ি পথ,

হেসেছি দুজনা, খেলেছি দুজনা একসাথে

তাই স্বয়ম্বর।

ভেঙ্গেছি ঘর, বেঁধেছি ঘর, স্বয়ম্বর।

 

(২০) 

।।ভালবাসা চয়নিকার ছলে।।

ভালবাসা চিরন্তন অন্তহীন পাখি

দুরন্ত সকাল কিংবা

অর্থহীন বিকেলের ক্লান্তিহীন সখি,

হিরণ্য ঝলক,

অনাবিল বহমান স্রোতস্বীনি

তটীনির উজানেতে ভাসা,

বাউলের দার্শনিক তথ্য-কথা

মেঠোপথে একতারা গান,

ছন্নছাড়া ছন্দ-কোলাহল,

তূর্যনাদ,

বেদুইন, উড়ন্ত ডানা।

(২১)

জেনো, সত্যি জেনো,

আমি লিখেছি তোমার জন্যে,

নির্জনে ঝরা একাকি ঝর্ণা

ঝরেছে তো কারো জন্যেই।

তাই এ থাক তোমার আমার প্রিয়তমাসুর কাহিনী।

 

(২২)

মুদ্রের গভীর শয্যায়

ক্ষণস্থায়ী ওঠা-নামা বালির অতলে,

কোটি অশ্রু, প্রেম ভালবাসা,

লড়াই-এর অবশেষগুলি

জলে ওই দেবতার বরুনের শান্ত সমাহিত

কবরে শায়ীত তারা।

অক্ষৌহিণী বছরের

মৃত ইতিহাস।

অবহেলে মানুষের অধুনা সভ্যতা

ভুলে গেছে তাহাদের নিস্তব্ধ অতীত।

(২৩)   

।।প্রতীক্ষা।।

প্রতীক্ষায় ছিলাম তো আমি,

তুমি বুঝলে না,

তুমি এলে না।

ক্লান্ত প্রহরগুলি চলে গেল,

ঝরে গেল

প্রত্যুষ ও গোধূলির বিরহী সময়

ঝিরিঝিরি উদাস ডানায়।

ভালবাসা ধূসর খানিক

বকুলের গন্ধ নেভা সাঁঝে।

ভালবাসা কি বাল্যখিল্য বালির পুতুল!

প্রতীক্ষিত ফিরে গেল

অগোছালো পুরোনো সে আকাশের বাঁকে।

(২৪)

ভালবাসা পান্ডুলিপি তরুণীর খোলা এলো চুল

ধূসর বাগান,

আনমনা আঁখি আর আখরের

অনবদ্য

স্বরচিত প্রত্যয়, প্রতিশ্রুতি ও নতুন ঠিকানা,

সময় মানে না মানা।

বহু ভাষ্য শীতের শিশির

প্রত্যুষের মিহি রোদে শিল্পী সাজে,

ঈষদুষ্ণ কারু-কন্যা কাহার দুহিতা!

(২৫)

ঠোনে দিয়েছি ফুল,

ঝড় এসেছিল,

বাতাস কুড়িয়ে নিল ফুল,

ছিল ভুল –

ছড়ানো ঝড়ের দিনে

শিলা বৃষ্টি পাংশু আকাশের মেঘে ছড়ানো আমার বকুল।

 

(২৬)

ক্ষিণ সমুদ্রের তীরে

নিসর্গ কবিতা শুরু মাঝরাতে

জলের প্রবাহে ।

থমথমে মেঘের ওপর দূরে বহু দূরে

অনিপুন অবিন্যস্ত স্বপন তখন ঘুমায়ে

ভগ্নস্তুপে কারুকার্য করে,

বর্ণ আনে,

গান বাঁধে,

বাহ্যজ্ঞানশূণ্য হয়ে কাহার গহীনে

খুঁড়ে আনে কবিতার আরণ্যক দ্যুতি

বিনয়ী নম্রতায়!

 

(২৭)

পাখির পালক ডুবসাঁতারেতে

মগ্ন নাকি হয়েছিল কোনো এক কালে!

দুর্গম পাহাড় নাকি শুনেছিল 

প্রাচীন পৃথিবী থেকে অপরাহ্নে সবুজের গান,

অঝোর বৃষ্টিরধারা কখনো কি বুঝেছিল অশ্রুর ভাষা! 

 

(২৮)

দিনের প্রয়োজন খেয়ে ফেল বুভুক্ষু সময়,

তুমি কিছু রেখে যেও ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট পশ্চিমের আলো।

ফেলে যেও কিছু আলো গোধূলির মরুভূমি থেকে।

আমি সেই আলো জড়ো করে জ্বালাবো আগুন,

রেখে দেব সেঁকার জন্যে শীতের সকাল।

কিছু দেব মেঘকে আগুন ।

 

(২৯)

তুমি কোন মূর্ছনার দ্বীপে ছিলে,

তুমি কোন সায়রীর কারুকার্য্যে

নাবিকের গতিপথে সমুদ্রের গন্ধঘন

কৃষ্ণকুমারীর মতো লবনাক্ত বাতাস ছোঁয়ালে, 

কেন জানি মনে হ’ল

ঝলসানো জলদস্যুর তরোয়ালের মতো

ঠিকরানো অদ্ভুত চাহনি তোমার, মহুয়া।

 

(৩০)

সাগর বেসেছ ভালো?

উড়ে এল শঙ্খ আরো কিছু কাছে,

ভেসে এল সমুদ্রের ঢেউ

বালুকা কন্যার তটে আরো একবার। 

 

আমার প্রেমিকা হতে গেলে

অল্প পরিচয়ে,

নীল শূণ্যে শঙ্খচিল হয়ে

আরো কিছু বালুকণা দিয়ে

বাতাসের গতিপথে লেখিকা লিখিও তব নাম।

 

(৩১)

সেদিন তুমি আমার চেনা হ’লে,

সেদিন তুমি আমার দ্বারে এলে,

সেদিন তুমি অল্প খানিক করে

আমার চেনা হলে।

 

সেদিন তুমি মেঘ সরিয়ে ফেলে,

আমার কাছে এলে,

সেদিন তুমি ভুল সরিয়ে ফেলে, 

তুষাররাতে ঊষ্ণ হয়েএলে,

ফুল ফুটিয়ে এলে,

সেদিন তুমি আমার চেনা হলে।

(৩২)

।।বৃত্ত।। 

মাদের সবারই সংসার আছে,

আমাদের নিজস্ব সংসার,

তা একটি বৃত্ত দিয়ে ঘেরা,

এ কোন স্থির বৃত্ত নয়,

এ বৃত্ত গতিময় সত্তা।  

একটা দু’টো করে বৃত্তের কিছু অংশ

কখনো কখনো ছিটকে বেরিয়ে