
কবিতা মঞ্জরী - ১
আর কতদিন
- অনুরিমা মন্ডল দাস , বসন্তপুর, কাকদ্বীপ
আর কতদিন পৃথিবীটা ধিক্কারের যন্ত্রনাতে
শুকনো পলাশের পাপড়ির মত থিতিয়ে থাকবে!
মনের রঙিন আয়নাতে বিধবারা কেন
গাঁথতে পারবে না তাঁদের রঙিন স্বপ্ন!
পাশবিক অত্যাচারের স্বীকার হয়ে
লুটিয়ে পড়বে দেবী দশভুজা নারীশক্তি!
আর কত দিন উপহাসের বাক্যবাণ
দিয়ে জর্জরিত করবে বিপ্লবীদের প্রাণ!
ট্রেন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর
শূন্য প্ল্যাটফর্ম জীবন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে ভিখারীদের দাবী!
আর কতদিন রজনীগন্ধার
গন্ধ নিয়ে ছেলেখেলা করবে!
শূণ্য মাঠের এদিক থেকে ওদিক
সরলতার নিস্পাপতা ফিরিয়ে আনতে চিৎকার করবে!
- আশরাফুল কবীর
বাতিটা আচমকা জ্বলে ওঠে,
আলোতে ভেসে যায় ল্যাম্পপোষ্টের চারপাশ
আঁধারের নিস্পন্দতায় এতটা কাল ঢেকে ছিল যে কালো গহব্বর
আজ সে পেয়েছে দারুন গতি! মুহূর্তেই পেয়েছে ভাষা
তাইতো সময়ে অসময়ে ঘুরে ফিরে কাছে আসা।
জড়িয়ে দাড়াই
তবু যেন কিছুটা কৌণিক দূরত্ব রয়ে যায়
দ্বিধান্বিত হয় আসলে দুই কালের প্রণয়
চকিতেই বুঝতে পারি
শূণ্যতা পূরণ হয়নি
সে তো পূরণ হবার নয়।
- আশরাফুল কবীর
এমনি এক হেমন্তে পরিত্যাক্ত হয়েছিলাম।
অত:পর ঠিক সেখানটাতেই আছি, ঠিক
যেন এক প্রতীক্ষারত প্রমিথিউসের মতো
ক্লান্ত, নীরব, নিস্তব্ধ সন্ধা হতে উদয়ান্ত
অখন্ড অবসর, কতো যে দিন হয় গতো!
ইয়াত্তা নেই তার, কাল চক্রের পারাপার
কত রাত যে হয় ভোর এক নিমীলতায়,
অবসন্নতায়,ক্লান্ত প্রতীক্ষায়। প্রয়োজন
নেই দু গন্ডা হিসাব মেলানোর জটিলতায়।
একালের অথবা সেকালের, কোন কালের?
এক পৌরানিক প্রশ্ন হয়ে থাক
যদি হও শঙ্খচিল, এসো কালেভদ্রে কখনো
হারিয়ে অচেনা পথের বাক।
আমি আছি সেই একই রকম ঠিক হেমন্তের পর
সম্মুখে চির হিম বসন্ত কাটছেনা শীতের তর।
মিলবেনা হয়তো সব সমীকরন ধাপ থেকে ধাপ
শূন্য বরাবরই শূন্য, নির্জন, পরিত্যাক্ততায় রবে
আমার এফিটাফ।
বিবিকের
- বলাশাদমান আক্তার
আমি তোমার কান্নাভেজা কবিতায়
আমি তোমার আজব ভাঙা শহরটায়
আমি তোমার মিষ্টি হারানো সময়টায়
সারাক্ষন তোমাকে দেখি
আর তোমাকে হাসাই
কে বলে তুমি হাসতে পারো না
এই তো হাসছো তুমি…… বিলীন যন্ত্রণা
কেন বুঝেও নাবুঝের অভিনয়
সে তো আজ আর তোমার নয়
দূর থেকে বয়ে আসা বাতাসের
ইচ্ছে তোমাকে উড়িয়ে নিবার
বৃষ্টি নেমেছে মাত্র যাও না তুমি
দরজার বাহিরে ডাকছে দুষ্টামি।
নববর্ষা
আবার শ্রাবন এল ঘনঘটায়
নিয়ে এল সেই বিষাদ
আর সাথে বয়ে চলা স্বপ্ন ভেলা।
রিম ঝিম ঝিম নূপুরের আওয়াজ।
এবার এই নববর্ষায় নিজেকে ভাসাব না,
শুদ্ধ করে নেব যত অব্যার্থ প্রেম।
ভেজাবো নিজেকে, ভিজিয়ে নেব স্বপ্নের অতীত।
ভিজিয়ে নেব বুকের পাজরের রুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস।
এবার, শ্রাবন কে বানাবো নর্তকী
সারাদিন আদরে আদরে ভাসাব এ পৃথ্বী।
ঝম ঝম , ছল ছ্ল ধ্বনি বাজবে সর্বদা,
কদম ফুলে সাজিয়ে দেব এবারের নববর্ষা।
দোসর
- সায়নিকা দাস
চায়ের ভাঁড়ে শেষ চুমুক, হাওয়ায় লাস্ট কাউন্টারের ধোঁয়া,
শহুরে ক্লান্তির মাঝে তোর গলার আওয়াজ...
Love-lust এর দ্বন্দে তোর শান্ত প্রতিক্রিয়া,
আমার অসম্ভব তর্কে, চিবুক ছুঁইয়ে হাতে তোর অপলক দৃষ্টি দেখা...
আমার স্মৃতির ভিরে তোর এক টুকরো হাসি,
আমার প্রেমের বিরতিতে তোর বিনোদন মাখানো গল্প...
আমার পায়ের ছন্দে তোর নানান গল্প লেখা,
আমার কবিতার দ্বন্দে তোর নির্দ্বিধায় পায়ে পা মেলানো...
নাগরিক হিংস্রতায় এক মুঠো শান্তি পাই তোর পাশে হাঁটলে,
তোর মুখে নাটুকে কথাও শুনতে লাগে বেশ রোমাঞ্চকর...
রোজ কিছু মানুষের ভালবাসা যখন পড়ে থাকে রাস্তায়,
সেই দেখে ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে চেপে ধরি তোর হাত, তখন তুই সেই কষ্টেও ভাগ বসাস...
কারণ? মনে আছ হে সখ তোর নাম রেখেছিলাম দোসর।
প্রাণবান হাসি
- তামান্না সাঈদ
হাসি ছাড়া আর আছে কি?
হাসি মনে থাকি, মলিনতা দূর করে
দুঃখকে ভুলে সুখের স্বাগতম।
হাসি দাও মন খুলে
ক্রন্দনের দুয়ার কর বন্ধ।
সাফল্যের লক্ষে হাসির ভুমিকাই ফুটে
যেওনা যে ভেসে দুঃখের জোয়ারে
হাসি কোন নারীর ঠোঁটে
লাগে যে বেশ অসাধারণ
হাসি সুস্হ দেহের অঙ্গ।
অক্টোপাস
- মোঃ মুজিব উল্লাহ
তুমি ফিরছো দুঃসাহস
বেদনার শিশিরে কষ্টের সকাল
ছুঁয়ে দ্যাখ বিষের পেয়ালা
কেবলি স্বপ্নময় মানবিক চিবুক
উদাসীন আখিঁর জ্যোৎস্নাহীন রাত
ভাঙ্গনের মুখে বালিয়াড়ী নদী
কেবলি স্মৃতি রাতের বিশ্বাস
আশেপাশে ভাঙ্গন মৃত্যুর ছায়া
উদাসীন স্তনে কামনার দুঃসাহস
কেবলি উত্তাপ পরাজিত মায়া
ফ্রিজে সংরক্ষিত যৌবনের শিরা
শূন্যতার রাত্রি স্বশব্দ ভাঙ্গন
সংসার নগরে অবিশ্বাসের পলি
কেবলি চারিদিকে বিষবৃক্ষের অক্টোপাস
স্বপ্নময় ধ্বংসস্তূপে বেদনার বাসর
নগ্ন স্নায়ু বন্দরে ফিরে
ক্ষুব্ধ কামনার সর্বনাশা অপচয়
কেবলি চিরকাল ঘাতক সময়
প্রতিবন্ধী রৌদ্রের বেজন্মা উপহাস
ফিরছে দুঃসাহস ভেজা নিরবতা
কেবলি কষ্টের বিষবৃক্ষ লতা
নিঃশ্বাসের ঘ্রানে সময়ের স্মৃতি
নিরবতা ছুঁয়ে ক্ষতচিহ্নের ছোবল
কেবলি পিপাসা বিষের পেয়ালা
শব্দহীন চুমুকে ভাঙ্গনের নাম
উদাসীন আঁখি বেদনার স্রোতে
প্লাবিত যৌবন জীবনের খাম।
কবিতা
- রূপা মণ্ডল
আমি চড়ি গাড়ী
কিন্তু সরস্বতীর সাথে মোর আড়ি।
ছোটবেলায় যখন পড়তে বসতাম,
বাবার বকা খেয়ে মায়ের কোলে ঢুকতাম।
তখন ভাবিনি এমন দিন আসবে,
সবাই যখন আমায় দেখে হাসবে,
বলবে 'ঐ দেখ ফেল করা ছেলেটা,
কিনেছে এখন একটা টয়োটা
বাপের পয়সায় এত ফুটানি
নিজে কিছু করার মুরোদ নেই, জানি'।
যখন ইয়ার-বন্ধু নিয়ে রকে আড্ডা দিতাম,
রাখিকে সকাল-বিকেল কলেজ যেতে দেখতাম,
একদিন বলেই ফেললাম, 'তোমায় ভালবাসি'।
সবার মাঝে রাখি আমায় চড় মারল ঠাসি।
বলল, 'মূর্খ বামন হয়ে চাঁদে বাড়াচ্ছ হাত?
সম্পর্ক পারেই না হতে তোমার আমার সাথ'।
কাটল আমার কয়েকটা দিন, মুহ্যমান শোকে,
যেদিন রাখি বিয়ে করল ডাক্তার পাত্রকে!
আমার রেজাল্ট দেখে বাবা বেজায় হতাশ হ'ল
বন্ধুকে বলে কয়ে আমায় চাকরী করে দিল।
কিন্তু যেদিন সেথায় বিদ্যার দৌড় ধরা পড়ল,
চাকরী খুইয়ে আবার সেই রকেই ঠাই হল
তখন থেকেই মস্তানি, আমি হলাম রকবাজ,
এলাকার ত্রাস আমি, লোকে বলে 'তোলাবাজ'।
একদিন সাথে যারা একই স্কুলে পড়ত,
তারাই মুখ ঘুরিয়ে চলে সামনে যখন আসত।
অনেক টাকা নগদ নিয়ে বাবা দিল বিয়ে
নামে সে সুধা হলেও অতি মুখরা মেয়ে!
ঘরে সুধা আছে, শান্তি নেই, বিধি মোর বাম!
কেউ বলে না ভাল আমায় সবখানে বদনাম!
ভাল ছেলে নই কো আমি, আমার সাথে তাই,
সম্পর্ক ছেদ করেছে আমার আপন ভাই
দলের নেতার সাথে আমার নিত্য উঠা-বসা,
ইলেকশনে জিতিয়ে দেবে - এই তার আশা!
রাখি এখন অতি সুখি স্বামী সন্তান নিয়ে,
করেছে সেটল তারা আমেরিকা গিয়ে!
আজকে আমার পরিচয় ভাড়াটে এক গুণ্ডা,
হয়ত আমি মানুষ হ'তাম দিলে পড়ায় মনটা!
বৃষ্টির ছড়া
- আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ
ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি নামে
দস্যি ছেলে লাফিয়ে ওঠে,
বৃষ্টি হবে বৃষ্টি মেখে
বৃষ্টি সুরে বাইবে নাও,
নৌকা চলবে পাল তুলে
বৃষ্টি ঝড়ে দুলছে ঢেউ ;
দস্যি ছেলে হাঁপিয়ে ওঠে,
নৌকা চালিয়ে উলটা বাও।
কালো মেঘ
-আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ
হৈহৈ হৈহৈ
বৃষ্টি বুঝি এই এলো,
রাগ করেছে মেঘলা আকাশ
মুখখানা একটু কালো। বৃদ্ধ নাপিত নড়ে বসে
কখন বয় দমকা বাতাস,
শঙ্কায় তার মন উতলা
ভাঙে কখন স্বপ্ন আবাস!
লাল সীমানায়
- সবুজ
অজানায় পাড়ি দেয়
হাজারো ব্যথাতুর স্বপ্নেরা।
রঙিন আশা বুকে,
বাঁচার নেশায় ছুটে চলে
ধ্রুব তারার পিছে।
নীল জল চিরে
দিন রাত একাকার
নেই ঘুম নির্বিকার - লক্ষ্য
কোনও এক সোনালী আলোর দেশে।
দিন যায় দিন আসে
কত চাঁদনিরা এসে ফিরে যায়
বিমর্ষ হয়ে
জোনাকিরা ফিরে যায় আপন পথে।
অন্ধকার ও হার মানে এ ছুটে চলাকে।
কত শত আশাহত মুখ আর
রাশি রাশি সমুদ্র নীল ঘাতক।
সোনার তরীর হাল ভেঙ্গে তাই
নিশ্চুপ নাবিক বিধাতা।
লাখো প্রাণ আজ সুদিন খোঁজে।
হাতের রেখা আর কপালের ভাজে ,
এত এত স্বপ্নগুলো ভিড়বে কি কিনারায়?
দিকে দিকে আজ রব ওঠে বিশ্ব মানবতার।
স্বর্গ থেকে যখন অট্টহাসে লাখো কোটি আয়লান
বল শাহেন শাহ্ একটুও কি তোমার
কাপে না মহা দরবার?
আমার পাগলী
- সৌভনিক চক্রবর্তী
পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লী, শিলিগুড়ি
আমার যখন ভীষণ অভিমান হয়
ভাবি ঐ বুঝি আকাশটা কাঁদবে
আমার যখন ভীষণ ভাল লাগে মনে
ভাবি ঐ বুঝি নদী কাছে ডাকবে।
স্রোতস্বিনী গঙ্গা যখন আপন বেগে
অজানার পথে বইছে
মনে হয় পাগলী আমার না জানা
কত কথা যে কইছে।
মেঘলা দুপুরে যখন সূর্যের মুখটা
থাকে থমথমে ভার
মনে হয় পাগলী আমার রাগটা ভারি
তাই তো অন্ধকার।
মাঝে মাঝে ঋতু – মন্দিরা ফোন করে বলে
‘চলে আয় না – ভারি হয়েছে না তোর পা’
বলতো কেমন করে বোঝাই ‘ওরে – পাগলী –
তো সেই আমার বিদেহী প্রেমিকা’।
ঋদ্ধিমান মাঝে মাঝেই বলে এই বল না বাপু
তোর পাগলী থাকে কোথায়?
বলতো বাপু কেমন করে বোঝাই তোকে
পাগলী আমায় জড়িয়ে আছে ব্যথায়।
দুর্বুদ্ধ
- গুরুপদ চক্রবর্তী
জীবন প্রভাতে আশ্চর্য চোখে দেখা পৃথিবীকে
প্রশ্ন করেছিলাম
কী তোমার পরিচয়?
জাদুকরের দূর্বুদ্ধ হাসি হেসে
দিয়েছিলে উত্তর
চিনবে না আমায়।
এরপর আরো কত বর্ষ হয়ে পার
কিশোর আমার মন
করল জিজ্ঞাসা তারে
কি তোমার পরিচয়য়?
পৃথিবীটা হাসল নিরুত্তর।
বড় হলাম আর
অর্থনীতি, সমাজনীতি
কামসূত্রও, মনস্তত্ত্ব
কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স -
সাইন্টিফিক চিন্তাধারা –
বিশ্বাসে ভরপুর।
ফের জিজ্ঞাসা করি, -
জগতের পরিচয় -
তবু এক পৃথিবী
দিল না উত্তর
এরপর অনেক বছর হল পার
লঙ্গাই, কুশিয়ারা
জলের ধারা
অনেক গিয়েছে চলে
স্ত্রী-পুত্র সংসার,
ব্যবসা ও রাজনীতি
সাফল্য আমার হাতে আজ।
জীবন সায়াহ্নে
হাজার অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ আমি
করেছি আবার জিজ্ঞাসা তারে-
কি তোমার পরিচয়, দেবে না জানতে?
আবার দূর্বুদ্ধ হাসি হেসে
দিল সে উত্তর
আমায় চেনে নি কেউ, চিনবে না তুমি।
এ কেমন আমি!
- আশিস চক্রবর্তী
নন্দননগর, বেলঘরিয়ে
যা ক্কলা আজ ভাল করে নাইতে ভুলে গেছি!
কালকে রাতের কলঙ্ক পাঁক,
গভীর নেশার ভীষণ দেমাক,
আসক্তির ছোপ ছোপ দাগ,
আজ সকালে ঘষে ঘষে তুলতে ভুলে গেছি,
যা ক্কলা আজ ভাল করে নাইতে ভুলে গেছি!
দেওয়াল ভরা মুখোশগুলো খোশমেজাজই বড় –
হাব-ভাব সব আলগ আলগ,
লাগ ভেল্কি লাগ লাগ লাগ
আমির সাথে আমির ফারাক
রূপ বদলেই বাজার গরম, নয়তো জড়সড়
শতেক রকম রূপের মুখোস খোশমেজাজী বড়।
বিবেক বেবাক ব্রেক কষেছে নড়ন চড়ন- নট
পুণ্যগুলোর দৈন্য দশা,
আমার পেশা, ‘আমির নেশা’
লক্ষ্মী যখন ঘটে ঠাসা,
কি আসে যায় আমার নাচন শালীন বা উদ্ভট!
তাই-বিবেক বেবাক ব্রেক কষেছে নড়ন চড়ন- নট
ফোলাতে চাও ফোলাও তুমি গালকে হাতে রেখে-
মন বুঝেছি চক্ষু বুজে
গরল পথে সরল খুঁজে
ভুল করিনি নিজে।
বাজি রেখে ভুল করেছি ভুলকে ভুলতে দেখে
ভেবে ভেবে ফোলাও তুমি গালকে হাতে রেখে।
তবুও তোমার ফালতু সময় একটু যদি থাকে-
নিভে যাওয়ার ইতিহাসে
বয়ে যাওয়ার এই প্রয়াসে,
জ্বলতে থাকা স্বর্গবাসে
দীর্ঘশ্বাসের অশ্রু ফোঁটা খানিক দিও এঁকে
যদি তোমার হাতে একটু ফালতু সময় থাকে।
রঙ তুলিতে আঁকা
- এন এস সবুজ, মিরপুর, বাংলাদেশ
মেঘ রোদ্দুরের মাঝে
দেখেছিলাম –আমি দেখেছিলাম
আলগা পায়ে নূপুর পরা এক
শ্যাম বালিকা।
এলো চূলে কাজল এঁকে চোখে
মিষ্টি হাসি লেগে ছিল তার মুখে।
দুধ সাদা রং আলতা পায়ে
করছিল কাদায় মাখামাখি,
সারা অঙ্গে বৃষ্টির খেলা,
খুশি কাজল আঁখি,
দেখেছিলাম আমি
সাক্ষী অন্তর্যামী।

- যতিরেখ্ বিশ্বাস
অতৃপ্তির বিষাক্ত ফলা
খসে পড়ছে... সুতীব্র প্রেমের কাছেএ সে
নিষ্ফলা জমির কোলে
ফসল ফলছে... জল সেচের সৌরভে
আমরা এগিয়ে যাচ্ছি...
হাতে হাত ধরে আল পথ বেয়ে
আকাশের কোল ভরেছে মেঘে
বৃষ্টি আসছে... চলো কোথাও আশ্রয় নি
সম্পুর্ন অকেজো
- পলাশ দে
এদিকটায় দেখছি অসামরিক কারুকার্য,
আরেকদিকে রবার্ট ক্লাইভের অ্যাডভ্যাঞ্চার...
চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে -
যুদ্ধের বাকী অস্ত্রগুলো।
বাদবিবাদের সমারহে আজ দেখি
সম্পুর্ন অকেজো হয়ে পড়েছে মার্ক্সের প্রথা...
শীতের চত্বরে
- রাজকুমার পাল
রঙ্গময়ী বঙ্গভূমির ঋতুর আঙিনায়
ম্রিয়মান তাপসী কুন্দের শুভ্র বৈরাগ্যের বেদনায়,
ধূসর বার্ধক্য আর রিক্ততার নিঃশব্ধ চিত্রগীত
দেয় শীত শীতল হস্ত সুদূর প্রসারিত।
কুহেলী হিমানীর কাফন বিছায়ে
শীত খর্জূর বীথি শিশির সিক্ত করে,
সীমাহীন প্রান্তরে পেতে শূন্য আসন
সরবরিক্ত উদাসী সন্ন্যাসী করে ধ্যান।
নিঃশ্বাসে ভরে বায় কুয়াশার আবরণ,
ত্যাগের অপরূপ মহিমায় তার সর্বাঙ্গ ভাস্বরণ;
একতারা হাতে লয়ে উত্তর বায় তোলে বিষণ্ণ ঝঙ্কার।
পত্রের অকাল পতনে পাণ্ডুর বনবীথি শঙ্কে
মানব আশ্রয় লয় কাথা-কম্বলের কবোষ্ণ অঙ্কে;
হিমেল হাওয়া নৃত্য করে আমলকীর ডালে,
শিশির সিক্ত ঘাসের মাথায় মুক্তমানিক জ্বলে,
কাকের কর্কশ ধ্বনি মোরগের জাগরণী সুর
করে শীত ঘুম দূর।
আমের গন্ধে আমোদ করে শতক মৌমাছি,
বাচ্চা-যুবা শীতের পরশে করে হাঁচাহাঁচি।
সূর্যমুখী গাঁদা অতসীর রূপ গন্ধ ছোটে,
লাউ কুমড়ো শ্যামল বাগিচায় লকলকিয়ে ওঠে;
খেজুর গাছের মাথায় মাটির ভাঁড়ে
সঞ্জীবনী সুধা মিটেল রস টিপিটিপি ঝরে।
নলেন গুড়ের মিশ্তি-মধুর আমেজ ধরে
মৌঝোলা গুড়ের পীঠে-পায়েসে মন ভরে।
গভীর ঘুমে ক্যামন করে বেড়ে চলেছে মহাকাল
- সত্যব্রত আচার্য
এখন পৃথিবীটা একা একা বাড়ছে
সূর্য থেকে সূর্যে,
মহীরুহ গাছের পাতা ও লতা
জড়িয়ে রয়েছে ভেজা দেওয়ালে
দেওয়াল ফেটে বেরিয়ে পড়েছে ফুসফুসনালী
আমাকে নিয়ে আর তোমরা চিন্তা কোরো না,
অমিতো এখানে নেই !
বিমর্ষ নি:ঝুম বোকাবোকা অদ্ভুত যত দ্বন্দ্ব
সব বিছানাপাতি গোছাচ্ছে চলে যাবে বলে
পরাজিত হলে ওরা আর
ফিরে আসে না
বিবর্ণ, ছেঁড়া, বিলীয়মান
মধ্যে প্রাণ ছিল না কখনো, তাই -
স্ব-অস্তিত্বে জেগে ওঠার
বাসনা ও কামনা ওদের নেই,
ওদিকে একটা স্থলপদ্ম নিজের মাঝে
নিজের চেহারায় ও বর্ণে ফুটছে,
আলোটাকে অর গায়ে লাগতে দিতে হবে
শিকড়টাকে হতে হবে দৃঢ়
উপশিকড়মণ্ডলীকে একাত্ম করে,
তবুও তো ওই পাপড়িতে
পোকামাকড় বসে, ক্ষতি করে -
করুক।আমি ক্ষয নিবারণ করব না,
আজ বসন্ত, বসন্ত -
ঋতুপূর্ন নির্লোক, অলীক ভীষণ ও সুন্দরের এক নিরুপম -
তোমাদের নিয়ে আজ আমি
শিকড়সমেত সআকাশ ও দিগন্তের স্থলপদ্ম,
এই একমাত্র সম্বল -
যেটুকু রং এখনো সূর্যের আলো নিয়ে
পড়ে আছে পাপড়িতে -
ঐটুকু ---- অসীম,
বিতৃষ্ণার মতো একটা বড় আকাশ
নিরুৎসাহের মতো একটা বড় গহ্বর
ক্ষতির মতো একটা বড় স্বীকার -
কোন তীব্র বাসনাকে খোঁজ করে?
কোন চেতনার গোকুল গন্ধে তীব্র সময়
জন্ম দিয়েছিল দেবতার !
দেবদেবীর ঠোঁটে ক্যানো জ্বলজ্বল করছিল
বার্ণিশের তীব্র রং?
আমাকে শান্ত করে দেবে বলে !
ক্ষয়মান পরিবেশে আমরা সবাই
চঞ্চল বলেই কি, জোর করে চেষ্টা করছি
একটু বেশী শ্বাস নেওয়ার!
ওহে দ্বন্দ্ব-যুদ্ধ, ত্যারচা-তরবারি, ঝুলন্ত-স্নায়ু
তোমরা জানো কি
গভীর ঘুমে ক্যামন করে বেড়ে চলেছে মহাকাল!
বিষ
- শিবাজী দাস ,ব্যরাকপুর, কলকাতা
যাযাবর মন বলছে তোকে,
সংগী হবি, ধরবি আমার হাত....
মিনিস্কার্টে সুর্পনাখা... বল সকলে,
কেয়া বাত! কেয়া বাত!
শরীর খুঁজিস, শরীর মাঝে....
সোহাগ করিস, নাটক করিস কত
রাত ফুরোলে ফেলিস ছুড়ে,
আস্তাকুঁড়ের আবর্জনার মত।
আতরমাখা ভালোবাসা....
চিন্হ রাখে বলবি তাকে স্বেচ্ছা,
রঙিন শহর জনম্ দিল,
আবার কোন, 'বাজে - মেয়ের কেচ্ছা'
ভাবিস বুঝি, আমায় নিয়ে
জানিস, আমি তোর কারনে কাঁদি,
স্ব্প্ন দেখি বলবি এসে....
ঘর বাঁধবি, করবি আমায় শাদি।
১৫ই আগস্ট, ২০১১
- প্রতাপ সেন চৌধুরী ,বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ
আজ স্মরণ করি সেই সব শহিদদের
যারা অক্লেশে প্রাণ দিয়েছিল -
স্বপ্ন দেখেছিল স্বাধীন এক ভারতের -
শৃংখলমুক্ত করেছিল বিদেশী শাসন হতে -
ভারতকে অর্পন করেছিল উত্তরসূরীদের হাতে
এই দিনটিতে, আজ ১৫ই আগস্টে -
চৌষট্টি বছর আগে যখন এই স্বাধীনতা দিবসে
কোটি কোটি ভারতবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে
তেরংগা ঝান্ডা হয়েছিল ঊড্ডীন -
তখন ভাবেনি কেউ এই দেশমাতৃকা লুন্ঠিত হবে -
নির্দয় দূর্নীতিপরায়ন শাসকদলের হাতে।
ইংরেজ, পর্তুগীজরা ভারতের ধনসম্পদ লুন্ঠন
করে নিজের দেশকে করেছে সমৃদ্ধ।
আজ কোটি কোটি মানুষের নির্বাচিত দেশনেতৃত্ব -
দেশের ধন বিদেশে পাচার করে
দেশমাতৃকাকে করছে লুন্ঠিত।
কেউতো ভাবে নি দেখতে হবে -
ভারতের এই দূর্দিন।
একদিকে লাগামছাড়া মুল্যবৃদ্ধি -
অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা
কথায় কথায় জঙ্গীদের বোমা বিস্ফোরণের উৎপাত -
পিপীলিকার মত শত শত মানুষের মৃত্যু -
অর্ধাহারে অনাহারে থাকা কোটি কোটি
দরিদ্র ভারতবাসীর নেই নিরাপত্তা, নেই সুস্থভাবে বাঁচার-
ন্যুনতম অধিকার।
আজ তাই প্রতিবাদ, লক্ষ লক্ষ মানুষ পথে নেমেছে -
আন্না হাজারের হাত ধরে, ভারতবাসীর প্রতিবাদের
ভাষা মুর্ত হয়েছে দূর্নীতির বিরুদ্ধে, অনাচারের বিরুদ্ধে -
আন্দোলনের পথ হয়ত বা ঠিক নয় -
কিন্তু কোটি কোটি ভারতবাসীর মনের ভাষা
বিমুর্ত হয়েছে আন্না হাজারের নেতৃত্বে -
এই স্বাধীনতা দিবসের প্রাঙ্গনে -
শপথ নিতে হবে, গণতন্ত্রের মুখোসের আড়ালে
গড়ে ওঠা এই দূর্নীতিপরায়ন স্বৈরাচারী ব্যবস্থাকে -
ভেঙ্গে ফেলে নতুন ভারত গড়তে হবে -
আনতে হবে সত্যিকার স্বাধীনতা।
স্বপ্নের দেশ (শিশুদের ছড়া)
- গৌতম ঘোষ (মুম্বাই)
একটা মাঠ, হোক না যতই ধুলো বালি ভরা
শিশু যত খেলছে সেথায় মনের বাঁধনহারা...
সবাই তারা বন্ধু, সবাই আপনজন,
নেই কোনও ধনী গরীব - এমন ব্যবধান।
দেওয়া নেওয়া হচ্ছে কত ধুলো আর নুড়ি,
তবু, থাকত যদি সেথায় এক গল্প বলার বুড়ি...
উঠত ভেসে সবার মনে স্বপ্নের এক দেশ,
যেথায় হত তারাই রাজা, দিত তারাই আদেশ।
এমন হলে সাজত সে দেশ নানান রঙ্গিন ফুলে,
থাকত সবাই একই সাথে, উচ্চ নীচ ভুলে।
রাস্তা হত সোজা সোজা, ধুলোবালিহীন,
দুইধারেতে থাকত শুধুই সবুজ প্রাঙ্গণ।
সময় ভুলে খেলত সেথায় যত শিশুর দল,
সন্ধ্যা হলে বলত না কেউ, এবার বাড়ি চল।
আঁধার মুছে আসত সেথায় চাঁদের থেকে আলো,
মিটিমিটি হাসত কেবল দূরের তারা গুলো,
আসত বয়ে দূরের হাওয়া রাতের পরীর ডানায়,
গল্প বলে তারাই আবার রাতে ঘুম পাড়ায়।
এমন করেই পেড়িয়ে যেত রাত আর দিন,
সত্যি যদি হত সবাই কেবল নিজের অধীন।
ঘুমের মাঝেই স্বপ্ন দেখা যায় যে কেবল টুটে,
সকাল হলেই যখন আবার দিনের আলো ফোটে।
মায়ের ডাকে হারিয়ে যায় স্বপ্নে দেখা দেশ,
গল্প বলার বুড়ি – আজ তারও গল্প শেষ।
শ্রাবণের বৃষ্টি
- আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ
নামলো যখন বৃষ্টি
কী অপরূপ সৃষ্টি!
পড়ছে ফোঁটায় বৃষ্টি
ঘাসফুলে মুক্তা-মণি!
ফুল ফুটছে বর্ষায়
মাতছে বন ভরছে মন
নার্গিস বকুল চালতায়!
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে
বন্ধ হোক স্কুল যে!
ভরে যাক সব পথ-ঘাট
শ্রাবণের ধারায়!
বৃষ্টি ছুটির বন্ধে
ডাকছে আমায় কেয়া যে!
ভাল্লাগেনা স্কুলেতে
টানছে কদম গন্ধে!
বর্ষা কালে
- আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ
বর্ষা কালে বৃষ্টি মানে
বৃষ্টি পড়ে ঝিরঝিরিয়ে
মাঝে মধ্যে দমকা বাতাস,
বেরিয়ে পড়ে ছোট্ট ছেলে
বৃষ্টি থেমে করে হতাশ!
বর্ষা কালে, বৃষ্টি ফোঁটায়
সবুজ করে চারদিক,
নদী-নালা টইটম্বুর,
দস্যি ছেলের হৈ হুল্লোড়
দুরন্ত বালিকার পায়ের নূপুর!
বর্ষ কালে ভালো লাগে
খিচুরির সাথে মুরগি ভুনা,
রতন বাবু চেঁচিয়ে ওঠে
“করে দিলাম কিস্তিমাত”!
ভাল্লাগে না আর কোন কিচ্ছু
সয় তাত সয় না বাত!
অনুভূতির ছড়া
- আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ
বাগিচায় ফুল
লাল লাল
সাদা সাদা
থোকা থোকা।
লোকটা দেখতে
কালো কালো
বোকা বোকা
হাবা গোবা।
শিশুটি বড়ই সুন্দর
তুলতুল
নরম নরম।
শাহী জিলাপী খেতে
মজা মজা
গরম গরম
আমি হব ইতিহাস
- মৌ দাশগুপ্তা
শ্রয়াবস্তির শিলালিপিতে যখন সময়ের পদক্ষেপ
বিদিশার ভগ্ন সৌধে যখন ঝরছে সময়ের কালঘাম
জীর্ণ দেবদেউল মহিমা হারিয়ে ভাঙা ইটের পাঁজা
বহতা নদী গতি হারিয়ে, পথ ভুলে ফল্গুপ্রায়
জীবনের মাধুকরী অন্বেষণ শেষে আমি হব ইতিহাস
আমার প্রিয় শাড়িটি ডানা ছড়াবে কল্কি কাঁথায়,
কানপাশাটি শোভা পাবে আমার সন্তান বা তার সন্তানের কানে
বাহারী ফুলদানীটি চুল্লিতে অবয়ব হারিয়ে হয়ত অন্যকিছু
অসময়ের সঙ্গী কলম আর সখের কলমদান জুড়ে সময়ের জং
সেই নবীন সৃষ্টি পসরায় আমি হব ইতিহাস
আমার লেখায় সময়ের অদৃশ্য কালির ছোপ, জীর্ণ হলুদ পাতা
একই নামের সপ্তদশীর চোখের তারায় অন্যকিছু মুখ
পৃথিবী আপন কক্ষপথে পাক খেয়ে গেছে কত শতবার
আমায় ছুঁয়ে যাওয়া হাওয়া, সে ও কি পথশ্রান্ত, দিকভ্রান্ত
সেই অনাদরের রূপকথায় আমি হব ইতিহাস
ধুলোয় ঢাকা, ঘুণ ধরা, ফ্রেমে আঁটা আমার ছবি,
অনাদরে চিলেকোঠায়
বড় আদরের, সোহাগের আমার সংসার আর আমার নয়
আমার স্বপ্ন বিলাস চাহিদারা চুপিসারে মূল্য হারাবে সময়ের কাছে
ভুলে যাওয়া গানের কলির মত হারিয়ে যাবে আমার উপস্থিতি
জীবনের ভণিতা পর্বেই হারিয়ে যাওয়া আমি হব ইতিহাস।
আঁধার
- শুভঙ্কর পাল
সন্ধ্যে হ’লে কাজল আঁকা আঁধার
ধেয়ে আসে তুষারপাতের মত
গাছের পাতার ওপর, ঘাসের গায়ে।
আঁধার এলে উষ্ণ শরীর থেকে
বাষ্প বেরোয় গরম চা’য়ের
শীতল হাওয়ার মত।
শীত লাগলে চাদর মুড়ি দিয়ে
শুয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়
শিকারের পানে চেয়ে
ওৎ পেতে বসা
ক্ষুধার্ত সিংহের মত।
খিদে পেলে বিধিনিষেধের
হিসেব নিকেষের কেই বা হিসেব
রাখে?
বেহিসেবি হলে উৎশৃঙ্খল হ’তে
ইচ্ছে হয় দিনের পর দিন
লোলুপ দাবানলের মত।
দাবানলের ধোঁয়ায় দিবালোকেও
আঁধার নেমে আসে নীলাকাশ
জুড়ে স্নায়ুকোষ
আমাদের ইচ্ছেয় তিরী করা
আমাদের দিবানিশির আঁধার।
এই আঁধার আমাদের
চুরি ক’রার জন্য
ডাকাতি ক’রার জন্য !
শুশ্রূষা করার নামে
ব্যবসা ক’রবার জন্য !
সকলকে পুড়িয়ে ছারখার ক’রে
দেবার জন্য!
স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে যার।
‘শচীনের’ ব্যাটের ছোঁয়ায়
- গুরুপদ চক্রবর্তী
নির্জন এক বালুকাবেলায়
স্মৃতিরা শুধু সঙ্গ দেয় আর...
ঐ এক রত্তি ছেলের ভারী ব্যাটের যাদু
ওয়ার্ল্ড কাপে আজও পাকিস্তানকে হারায়।
কত শিশুর কান্নায়ে
কত প্রেমের আহুতিতে
কত শত নির্জলা উপবাসে
কত মায়ের আকুল প্রার্থনায়ে ...
গাঁথা এক মহীরুহর জীবন কাহিনী।
আমরণ বাজবে কানে ওই শচীন, শচীন বাণী,
ঐ ৫-ফুট, ৬ ধরবে না আর ব্যাট
‘শচীন’ হারা আজ বিশ্ব ক্রিকেট মাঠ।
নিষ্ফল হার-জিৎ আজ ক্রিকেট রণে,
তুমি ছাড়া-
অপূর্ণ জীবনেরই মানে...
আসছে পুজো.......
- রূপা মণ্ডল
আসছে পুজো, বাজছে ঢাক,
ফুটছে পদ্ম, দুলছে কাশ।
থামছে নাকো কুমোর-চাক,
গড়ছে দুগ্গা, এক নিঃশ্বাস !
নতুন জামা, নতুন সাজ;
সবাই যাচ্ছে দুগ্গা-মাঠ।
মা-দুগ্গার ডাকের সাজ,
মন্ডপেতে চাঁদের হাট!
শপথ
- গৌতম ঘোষ, মুম্বাই
শিশু তুমি জন্মেছ এই বিরাট পৃথিবীতে,
চারিদিকের এত আলো ছড়াক তোমার চিতে।
দেখো চেয়ে ফুলের বাহার,
সেথায় কত রঙের সমাহার!
দেখবে তুমি খেলার ছলে
তাদের মাঝে গেলে
হয়ে যাবে তাদেরই একজন,
পূর্ণ হবে ফুলের বাগান।
আকাশ পানে হাত বাড়ালে,
নীল আলিঙ্গন ডানা মেলে
ডাকবে তোমায় কাছে,
স্বপ্নালোকের মাঝে।
রাত্রি যখন ঘোমটা পড়ে
তারার আঁচল মেলে ধরে
তোমায় লুকায় তারই বুকে,
ঘুমিয়ে পড় সুখে।
এমন করেই দেখবে,
চলছে খেলা এই ভবে।
সেথায় নও তো তুমি একা,
বিশ্বজোড়া সবাই সখা।
তাদের নিয়েই এই জীবনে
সকল বাধা তুচ্ছ মেনে
চলতে হবে ভবিষ্যতের পথ,
তারই লও শপথ।
মৌন মহীরুহ তোমাকে
- দীপান্বিতা ব্যানার্জী
বিপদ সীমার উপর দিয়ে জল বয়ে যায়
প্রতিদিন, পল, মুহূর্তে বদলে যেতে যেতে
বলে যায় কত স্থবির তুমি।
মহীরুহ, শিকড় চলে গেছে কত গভীরে
সেখানে তোমার আশাকে যত্ন করে
রেখেছো গভীরে আরও গভীরে
বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছ
নড়ার ক্ষমতা কবেই হারিয়েছ
রোজ ভাবো আজ সেই দিন
এক পা এগিয়ে তো দেখাও ! কত দূর
তোমার যাওয়ার ইচ্ছা
তা না হয় অন্য আর এক দিন...
শিকড় অনেক গভীরে, শাখা প্রশাখায় বিস্তৃত
কিন্তু মাথা আকাশ ছোঁয়ার ভ্রম নিয়ে
রোজই ডালপালা বিছিয়ে ধর চাঁদ ঝুম রাতে
প্যাঁচা-ডাক, কালবৈশাখী, বৃষ্টির রিমঝিম
সব, সব মাথার মধ্যে পুরে---ভাবো,
জল বিপদসীমার উপরে
স্থবির মহীরুহ।





Please mention the "name of the articles and the authors" you would like to comment in the following box... Thank you.