কবিতা মঞ্জরী - ৩
-
মানবতার জাগরণ - জহিরুল কায়সার তালুকদার
-
প্রকৃতির ধর্ম - জামাল ভড়
-
লোভ - শিখা কর্মকার
-
অবুজ মন - পল্লব হাজরা
শাহবাগ মুভমেন্ট
- সৌভিক দা' (ধানমন্ডী, ঢাকা, বাংলাদেশ )
এরকম অগণন ভাঙনের পর একদিন -
আকাশের ভেতর থেকে ঝরে পড়ে
টুকরো টুকরো নীল কাঁচ।
রঙ বদলে ফেলা একটি গিরগিটি
শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসহীনতায় ভুগতে ভুগতে
কী ভীষণ একা হয়ে যায়!
জানালার ফাঁক দিয়ে বিকেল গলে পড়ে হলুদ আলোয়,
চশমার ভেতরে অশ্রুবিন্দুটি আরও বিমর্ষ হয়।
মাসকলাইয়ের উঠোনে একটা ছোট্ট ফিঙে পাখি
ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে
মাঠ-ঘাট-দিগন্ত পেরোয়...
সবুজ পতাকা মেশে ধানক্ষেত:
যার ভেতরে আমরা একটি স্বদেশের জন্ম হতে দেখি!
শোয়াইব ও মেহ্জাবীনকে
- সৌভিক দা' (ধানমন্ডী, ঢাকা, বাংলাদেশ )
অবাক লাগে...
এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের দেশে,
এই অসভ্য বর্বর নোংরা স্বদেশে
এই মৃত্যুপুরীতে, সাম্প্রদায়িক পরিবেশে-
তোরা ভালই আছিস!
তোরা ভাল আছিস ~ (যাবতীয়) হত্যা, মৃত্যু, গুম অস্বীকার করে -
যেভাবে কিছু ফুল তবুও ফোটে, পাখিরা ওড়াওড়ি করে,
কিছু মানুষ বেঁচে থাকে স্বচ্ছল আগামীর সম্ভাবনা নিয়ে -
এইভাবে ভাল থাকুক সমস্ত প্রাণ ও প্রাণের উপকরণ।
ভাল থাকুক এই দেশ ও মাটি, পাহাড় ও বনবাসী, বিরাগী বাউল।
তোরা ভাল থাক্ যেভাবে ভাল থাকে শব্দহীন রাত, তারার উপমা।
এইসব শত্রু-শত্রু খেলা, রাজনীতি,
মুদ্রাস্ফীতি, ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে
দূরে থেকে সহস্র মাইল, তারার কুটিরে, স্বমহিম আপন সংসারে।
টোনাটুনি হয়ে বেঁচে থাক্ নিজেদের মত করে -
তোদের নিশ্ছিদ্র সুখ পাহারা দেবে কিছু সশস্ত্র তরুণ,
সামরিক সাজোয়া যান টহল দেবে রাতভর, উত্তাল শ্লোগান,
মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত রাজপথ পাহারা দেবে
তোদের ও তোদের আগামী প্রজন্মের।
নির্ভাবনায় বেঁচে থাক্ প্রজাপতি ও গোলাপ।
তোদের সুনীল সৌন্দর্য নিয়ে।
তোদের কোল আলো করে আসুক আগামী বাংলাদেশ!!
অনুরণন
- লালন চন্দ্র মন্ডল (ভুঁড়ি, গলসী, বর্ধমান)
কোথায় যেন একটা বিশ্বাস নিয়ে একটা লুকোচুরি খেলা,
চোখের আড়ালে কেন যেন একটা অন্ধকার
ঘনিয়ে আসছে আচমকা।
সভ্যতার ইতিহাস পরিবর্তিত হয়েছে বার বার
কখনো বা প্রত্যাবর্তন ও ভিন্ন রূপে।
কেন যেন চোরাস্রোত ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে কান্নায়,
বুকে এক রাশ বিশ্বাস ভঙ্গের যন্ত্রনা নিয়ে।
তবু আশা রাখি সব দুর্যোগের কুয়াশা কেটে যাবে
আলোর সুমিষ্ট ভাষায়, আর পাখিদের কলতানে
ভরে উঠবে অনুরণন।
কানামাছি
- আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ (জীবন নগর, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ)
আমি যেন তোমার বুকে
পাথর হয়ে আছি,
এ জীবন টা যেন আমার সাথে
তোমার চোখাচোখি!
বাস্তবতা মানতে যদি তুমি
হতো না তবে ভুল বুঝাবুঝি,
আমি তো নিজের ভুলে
ঠাঁই পেয়েছি আস্তাকূঁড়ে,
খেলছি কানামাছি!
আমরা বাংলাদেশি বাঙ্গালী
- আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ (জীবন নগর, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ)
হেফাজত আন্দোলনের পর,
আমি মনে করেছিলাম
কালো মেঘ হবে,
তারপর প্রলয়
অবশেষে হ’বে মহাপ্রলয়!
রানা প্লাজা ধসের পর,
আমি ভেবেছিলাম
সঞ্চয়িত ক্ষোভ জন্ম নেবে দ্রোহে,
অতঃপর আন্দোলন, পরে বিপ্লব হবে,
ধসে পড়বে হোমরা চোমরা সব মালিক
পাহাড় ধসের মতো!
গনজাগরণ মঞ্চের পর,
আমি আশা করেছিলাম
বাংলাদেশ হবে রাজাকারমুক্ত,
ভেসে যাবে সব দুর্নীতি, কূকীর্তি!
আমি হয়তো ভুলে গেছি
এটা বাংলাদেশ, আমরা বাঙ্গালী,
আমরা দু’ভাগে বিভক্ত!
আমি নিজেকে ভাঙতে পারি নি
- দীপঙ্কর বেরা
আমি নিজেকে ভাঙতে পারি নি
যেমন ছিলাম তেমনি আছি
নিজেকে একটুও ভাঙতে পারি নি।
আমি সম্পত্তির ভাগাভাগিতে লোভ দেখেছি
সেই অধিকার নিয়ে নৃশংসতা দেখেছি
দেখেছি আক্রোশের বশে হাতিয়ে নেওয়ার
ষড়যন্ত্র আর শত্রুতা।
হিংসায় জ্বলতে থাকা আগুনের লেলিহান
আমার ঘরেও এসে আছড়ে পড়ে;
কেমন করে যেন একজনের গ্রাস
অন্যজনে তার হক বলে খেয়ে চলে যায়;
চেয়ার দখলের জন্য কত রকমভাবে
ওরা সব খেলে যায়
জীবন-মৃত্যুর মিউজিক্যাল চেয়ার।
আমি দেখেছি বারুদের মত চিংগারি দিতে
রাজনীতির ধোঁয়া
আর তাতে জড়িয়ে পড়তে
আমার ভাই আমার চেনা আমার অচেনা;
কিভাবে রাহাজানি আর শঠতা দিয়ে
নিরীহ গরীব গোবেচারার রক্ত দিয়ে ইমারত তৈরি হয়
সবুজ বাগান-মাঠের অলিতে গলিতে।
কিন্তু কোথাও আমি একটুও নিজেকে ভাঙতে পারি নি,
আগে যা ছিলাম এখনও তাই আছি;
আমি সূর্যকে দেখি রোজ সকালে উজ্জ্বল
প্রাণভরে টেনে নিই সকালের অফুরান অক্সিজেন,
পাতায় পাতায় ভরা গাছের ডালে
আজও পাখিরা নাচতে নাচতে গান করে;
তারপর কর্মের উল্লাসে পৃথিবীকে জাগতে দেখে
আমিও লেগে পড়ি আমার জীবন সংগ্রামে।
আর নিজের শুদ্ধতায় ঘটনাকে বিচার করে
এগিয়ে চলি নির্মল পথে।
আশায় আছি কোন না কোন দিন
ওই সব আমার দেখা-দের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে
আর সমাজ তোমার আমার সবার মনের মত হবে।
তাই আমি আজও নিজেকে ভাঙি নি
আগে যেমন ছিলাম এখন তেমনি আছি
আর তেমনি থাকতে তোমাদের হাত
আরো কাছে চাইছি।
কান্না
- মানস মুখোপাধ্যায়
গভীর কোন বেদনা, যন্রনা
অপ্রকাশিত ছল,
দানা বেঁধে পরিণত
চোখে নামে জল।
কখন গোপনে কখন সামনে
শুধুই যেন গোয়ানি শব্দ
মহামারির মত বুকে বাধে
মন কে করে জব্দ
ভেসে আসে মনে পড়ে
কোন এক গোয়ানি
নামটা যে তার কান্না
বুকে লাগে অশনি।
ভালবাসা
- দেবাশীষ চ্যাটার্জ্জী, কলকাতা
ছোটো নদীটির তীরে হেরিয়া বাঁশরিটিরে
আনমনে কহে সেই বালা,
আরবার সুরভিয়া ওঠে মোর হারা হিয়া -
কোথা গেল মোর প্রিয় কালা।
সঞ্চিত অশ্রুরাশি যাক মোরে নিয়ে ভাসি
নিয়ে যাক প্রেমের মঞ্জর,
যেথা সে মধুর নিশি কালস্রোতে গেছে মিশি
টুটি সুখস্মৃতির পিঞ্জর।
নদী কহে কলকলি যে গেছে ফেলিয়া চলি
রাখিয়া সন্ধ্যালাজে তব,
সে ক্ষণিক সুধাধারা যত হোক মনহরা
প্রিয়তম কেমনে গো কবো!
নিরজনে প্রতি পলে রুধিরে অশ্রুর জলে
আঁখি তব দেয় গো অঞ্জলি;
সে বিষম প্রেমজ্বালা সহিছ কেমনে গো বালা
দিন যে গো যায় বৃথা চলি।
কহে বালা তটিনীরে, তবু আমি রব চেয়ে,
জানো না কি তারে ভালবাসি?
এর বেশী নাহি জানি হতে নারি অভিমানী,
ভালবাসা নেয় সব গ্রাসি।
অধি আত্ম নিবেদন
- দেবাশীষ চ্যাটার্জ্জী, কলকাতা
অন্ধকারের আবছায়াতে দীপ নেভা রাত ভরি,
মন ভরা তব ছায়াকায়াসনে পরান যাহে যে সরি।
অশ্রুত তব প্রাণগীতিমালা পরায়ে মম গলে,
কি সুখ পাইয়া এ ছায়ামাঝারে
হেথা হতে গেলে চলে?
বারেক ফিরিয়া চাহ, দেখা - অদেখার মাঝে
আজও কিছু তারা মিটিমিটি করে যে লাজে!
যদি নাহি পাহ সাড়া, আস কি কারণে অভিসার সনে?
নিশুতি নিরখি চাহ মুখপানে,
শুধু দিবে যদি ব্যাথা মনে?
শীতল কাঁকন - শিশির বিন্দু, নিভু নিভু মরা বিভা,
সময় - রবির রাঙা ও কিরণে একাকার এই শোভা!
এই শোভা মাঝে হাসি সাজে সেজে
নিভৃত হয়ে আসি,
এক বুক ব্যাথা ঢেলে দিয়ে হাসো
আঁধার - মাখানো হাসি!
প্রেম নয় ভালবাসা নয়
- সুখেন্দু মল্লিক
প্রেম নয় ভালবাসা নয়
তবু বুকের ভেতর কেমন কেমন হয়
ছোট্ট ছোট্ট ভাললাগা
ধীরে ধীরে গাঢ় হতে থাকে
খুনসুটি সব সময়ের সাথে
মনে পড়তে থাকে
নিজে নিজে বিশ্লেষণ করি
দেখি এতো প্রেম নয় ভালবাসাও নয়
তবু বুকের ভেতর কেমন কেমন হয়।
কল্পনাকে উড়তে দিই খোলামনে
দেখি কতদূর যায়
পাখনা মেলুক মুক্তাকাশে
সাজাক নিজের আকাশটাকে।
দূরে যায় – বহুদূরে
নীল দিগন্তের সীমানায় ফের নিজেকে হারায়
তড়িঘড়ি করে বাস্তব মন ঘরে ফেরে
যত্ন নিয়ে দিনকে সাজায়
হিসাব কষে পা ফেলতে চায়
তবু দেখি মনটা কেমন অবুঝ হয়
না … প্রেম নয় ভালবাসাও নয়
তবুও বুকের ভেতর কেমন কেমন হয়।
ও মনের আমি খোঁজ নিই না
নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত থাকি
ভাবি – নিজেরই তো আগে দিশা ঠিক করি
একই স্বার্থপরত …?
তবে তাই।
কিন্তু সত্যি যদি তাইও হয়
তবেও একটা দিক তো পরিষ্কার হয়
এ টান সত্যি কোন টান
না বয়সের দোষে কোন ইনফ্যচুয়েশা ?
ভালমন্দ সব বিচার করি
নিজের সাথে লড়াই করি
উত্তর পাই না মনের মাঝে প্রশ্ন জেগে রয়
যদি প্রেম নয় ভালবাসাও নয়
তবে কেন বুকের ভেতর কেমন কেমন হয়?
কেন এলো সে!
- সঞ্জয় রায়
কেন এলো সে এতকাল পর
হঠাৎ ভোররাতে স্বপ্নের মাঝে,
চমকে দিলো আমাকে গভীর ঘুমে
চল্লিস বছর পর, সদ্যকৈশোর প্রেম!
বিস্মৃতির আভরণ ছিরে সেই সাহসী ভঙ্গিতে
কাছে এসে বল্ল - কি চেনা যাচ্ছে?
অপলক অবাক বিস্ময়ে শব্দহীন আমি
মনেমনে বলি কেন এলে তুমি?
তার সেই দীপ্ত স্বর্নকান্তী মুখে
উজ্বল শ্রান্ত কামনময় চোখে
সেই না বলা প্রেমব্যাকুল কথা
চমক পাঠাল আমার হৃৎপিন্ডে!
হঠাৎ নজর গেল তার নিরাভরণ
বাম বাহুতে, চমকে উঠলাম আমি,
এক রক্তজমা গভীর ক্ষতদাগে।
কি হয়েছে ওখানে শুধালেম তাকে,
ও কিছুনা বলে ঢাকল ওড়না দিয়ে।
হঠাৎ বেজে ওঠে দূরভাস কিছু দুরে,
টুকরো কথা ভেসে আসে কানে
ক্যান্সার, কেমো, রেডিয় থেরাপী!
ফিরে এসে বলে আমার
ব্যথাভরা চোখে কোমল দৃস্টি হেনে,
ও কিছুনা, ঠিক্ হয়ে যাবে সব।
চমকে উঠে স্বপ্ন ভাঙ্গল আমার,
কেন এল সে এত যুগ পর
এ ভয়ঙ্কর বার্তা নিয়ে।
জানানেই তার ঠিকানা যে,
কেউ কি দিতে পারোনা তার হদিস?
পারোনা কি কেউ ফিরিয়ে নিতে
আমাকে সেই বছর চল্লিস আগে?
ফুটপাত
- সুদীপ্ত বিশ্বাস
খাচ্ছে তারা ব্যাকটিরিয়া
খাচ্ছে তারা ছাইপাঁশ
এসব নিয়েই বাঁচছে তারা
গোটা জীবন দিন মাস।
ফুটপাতেতেই বাঁচছে তারা
ফুটপাতটাই ঘর
ফুটপাতটাই আপন শুধু
আর সবটাই পর।
ছেঁড়া কাঁথা ইটের বালিশ
হাজার লোকের হিসু
এসব নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে
এ 'কলকাতার যীশু'।
ঘুমের ঘোরে রাতদুপুরে
উঠলে গায়ে গাড়ি
পুলিস এসে পেটায় কষে
দোষটা যেন তারই।
হাজার বারও ভাবে যদি
ফুটপাতটাই ঘর
ফুটপাতটাও অন্য কারও
ফুটপাতটাও পর।
ঝরা পাতা
- পার্থ ঘোষ, নারকেলডাঙা রোড, কলকাতা
যেতে হবে একদিন এপার ছেড়ে, আমায় ঐ দুনিয়া- এ
সাদাকালো আবছায়াতে যখন এ চোখ দুটো বুঝে যায়ে।
সবার কাণ্ণা-সবার স্বপ্ন-সবার হাসি হয়ে,
হেঁটে চলে যাবো কোনও একটা দিন,
স্বপ্নের লাশ হয়ে।
সোনার রথে বসে আমি, দেখবো গোটা বিশ্ব জুড়ে,
শেষ বিদায় দেবে সবাই, যখন এই জীবন্ত দেহটা যাবে পুড়ে।
আবার একটা নতুন জগত, খুঁজে পাবো আমি
এ জগত থেকে তখন আমার পরিচয় হয়ে যাবে বেনামী।
কত ইচ্ছা কত স্বপ্ন ছিল এই জীবন ঘিরে, তবুও ডাক আসতে- ই
নিতে হল বিদায়, নৌকা ভাসিয়ে ঐ নদীর তীরে।
আমিও হয়তো এসেছিলাম শিবের জটা হতে,
গঙ্গা দিয়েছিল স্থান পৌঁছাতে মায়ের গর্ভে, তাঁর বেগের স্রোতে।
আবার হয়তো তাঁদের ডাকে, যেতে হবে আমাকে;
শেষ অস্থি খানি ভেসে যাবে আমার, ঐ গঙ্গার বুকে
তারপর…………………
তারপর কত না অজানা–অচেনা-চেনাদের ভিড়ে,
আমি ঘুরবো ওপার জুড়ে, মিলিত হবো সবার মাঝে হারাতে।
আবার আসব আমি এ চেনা শহরে, কত না রূপ নিয়ে,
চিনবি না তোরা আমাকে আর, আমার অতীত স্মৃতি রয়ে যাবে
এখানে ঝরাপাতা হয়ে।
ভাঙা আয়না
- শান্তনু সান্যাল
কিছু বিশেষ ছিল না, বলার জন্য -
তাই আরশিকে দিলাম বিদায়,
আসলে, অনেক সময়ে
ওই গলাগলি
ভাবটাই
ডেকে আনে সহজ জীবনে তিক্ততা,
খুব নিখুঁত ভাবে আত্মীয়তা
গড়তে গিয়ে দেখি, ওই
সমস্ত চেনা মুখ
দাঁড়িয়ে
আছে ঠিক উঠোনের পারে, হাতে -
নিয়ে জ্বলন্ত মশাল! যাকে
বলে হাতায় লুকোনো
সাপ, বিভীষণের
সগোত্রীয়
মানুষ, আমি অথবা তুমি কেউ নয়
এখানে ব্যতিক্রমী, সবাই যেন
মৌসুমের সাথে জড়িয়ে
আছে আবরণের
ভিতরে
আর একটা আবরণ, ওই দেউলের
ঘাটে কিংবা সুদুর আকাশের
তারক ভরা হাটে, খুঁজে
পাই নি তোমায়,
মনে হয়
জেনেশুনেই দিয়েছিলে ভুল ঠিকানা।
রিক্ত
- ঐন্দ্রিলা ব্যানার্জী দে, কলকাতা
আবার কিছু ভাবনা এলোমেলো অগোছালো
ইচ্ছেরোদ ফুরিয়ে আসে
শ্রান্ত বিকেল নামে
সমুদ্র সৈকতে আমি একা তুমিহীন
জানি তোমার হাত ধরে,
সমুদ্র দেখা আমার হবেনা,
তোমার চোখেই সমুদ্র দেখি
সে চোখের জল বড় নোনতা
বালি ভর্তি মুঠো একটু একটু করে আলগা হচ্ছে....
আবার আমি সমুদ্র সৈকতে
সমুদ্র এখন তুমিহীন
আমি এখন তুমি।।
মানবতার জাগরণ
- জহিরুল কায়সার তালুকদার , বাংলাবাজার, ঢাকা, বাংলাদেশ
[নির্যাতিত ও নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের উৎসর্গে]
বর্ণবাদে মত্ত ওরা... ধ্বংস হানে সভ্যতায়,
সর্বনাশে লিপ্ত হয়ে অশ্রু ধরে সু’চি-তায়।
নারীকুলে যজ্ঞ করে বক্ষছেড়া যৌনতায়,
চুপিসারে সঙ্গ বাঁধে, কেউ বা থাকে মৌনতায়।
প্রাণে প্রাণে রক্ত ঝড়ে, ভিটে জ্বলে দাবানল,
রমণীতে তৃপ্ত করে কামে ভরা প্রাণবল।
প্রতিবাদে ফাটে কেউ, কারো চোখে নাফের জল,
কাঁটাতারে অঙ্গ ছিঁড়ে পালিয়ে বাঁচে শত দল।
বঙ্গমা’তে তৃষ্ণা মেলে হারিয়ে তবু সর্বধন,
দেয়া-নেয়ার অংক কষে সার্বজনীন বিশ্বজন।
স্বল্প ত্রাণে কাড়াকাড়ি, কোলে কাঁদে শিশুমন,
যুদ্ধ জয়ে ক্ষান্ত কর, শান্ত কর বার্মাবন।
সভ্যতার কান্না
-- মিজানুর রহমান মিজান,বিশ্বনাথ, সিলেট, বাংলাদেশ
আমি আজ প্রতিষ্ঠিত
যেহেতু আমি মহানন্দে ভালবাসতাম
পাপ ও পাপীকে
সত্যের আচরণ টেনে করেছি অভিনয়
কিন্তু অসত্যের নগ্ন পায়েই আমার যাত্রা।
ঘৃণা করেছি হৃদয়ের কোমল বৃত্তিকে
কেননা ওটা বাউলের স্বভাব।
কামনা ছিল নিষ্ঠুর পৈশাচিকতায়
মানবের চরম পরিণতি
আমার সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।
তাই তোমাদের মাঝে
আমি আজ প্রতিষ্ঠিত।
প্রতিবাদী
- মোঃ জাহেদুল ইসলাম সমাপ্ত
জীবনের সাথে যুদ্ধ করে
চলছি আমি প্রতিদিন,
জীবন আমার থমকে যাবে
কে জানে কোন দিন।
জীবনের মায়া করিনা আমি
চলি সত্যের পথে,
অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করি
কোন না কোন ভাবে।
প্রতিবাদের মাঝে পাই
তৃপ্তি, ভালবাসা-
প্রতিবাদী হয়ে থাকবো আমি
জীবনে আসুক যতই বাধা।
মৃত্যু এলে মরবো আমি
বীরত্বের সাথে,
কাপুরুষের মত বাঁচতে আমি
চাইনা এ পৃথিবীর বুকে।
লোভ
- শিখা কর্মকার
অভিমানে সরে গেছে শালের জঙ্গল,
সরে গেছে কেন্দ, মহুয়ার গাছ,
বাঁদর সাপের দল, পাল পাল হাতী,
ঝাঁক ঝাঁক টিয়া, কাক, কোকিলের দল,
এমনকি চড়ুই আর সোঁদাল পোকা!
সরেছে ঝরনা নিয়ে নিশ্চিত ছন্দ!
মুছে গেছে কুয়ো, নদী, পুকুরের সংসার,
মাঝ রাতের ঢাক, বাঁশি, মাদলের তাল,
চলে গেছে মানুষেরা ভালবাসা বুকে নিয়ে
দুঃখ পেতে পেতে, পেতে পেতে হয়েছে নিশ্চিহ্ন!
কে আর থাকলো তবে,
কি আর থাকলো?
সব জেনেও কেড়ে নিচ্ছি শেষ অরণ্য,
মায়া ও আশ্রয়!
সব জেনেও পথ আটকালে বুনো হাতী,
বের হয় নির্লজ্জ বন্দুক
হাজার হাজার বোবা চোখ চেয়ে থাকে
সীমাহীন শূন্য প্রান্তরে!
ব্রেকিং নিউজ
- সৌভিক দা' (ধানমন্ডী, ঢাকা, বাংলাদেশ)
সামগ্রিক কূটচালে
ইদানিং ঈশ্বরে ভয়ানক ঈশ্বর-ভীতি দেখা গেছে,
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় -
আজকাল অস্তিত্বের সংকটেও বেশ ভুগছেন তিনি।
ব্লাড প্রেশার বেড়েছে,
চিন্তায় চিন্তায় ইনসমনিয়ায়
আক্রান্ত ঈশ্বর, ঘুমের অভাবে
কিছুটা ফ্যাসীবাদীও হয়ে পড়েছেন
বলে জানা যায় গোপন সুত্রে।
এদিকে ঈশ্বরী, অন্দরমহল ছেড়ে যাকে
এখন পর্যন্ত বহির্বিশ্বে দেখা যায়নি -
তিনিও সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন
তার উদ্বেগের কথা।
বন্ধুগণ ! আসুন...
আমরা কিছুক্ষনের জন্য
ঈশ্বরকে কারাগারে বন্দী করে
নিজেদের নিয়ে খেলাধুলা করি ।।
আলেয়া
- সুখেন্দু মল্লিক
আলেয়াকে সত্যি ভেবে
ঘুরে মরি মিছে,
ভাবি, দারুচিনি দ্বীপের ভিতর
যদি পাই দেখা – সবুজ অরণ্যের
মরুভূমিতে ক্লান্ত আমি মরূদ্যানের খোঁজে।
ঠিক - ভুল জানি না
পথ্ হাতড়ে বেড়াই
যত ঠকি, ঘা খাই, পথ না পাই
ভাবি – সমৃদ্ধ হচ্ছে জীবন,
অনুভুতির সূক্ষ্মতারে বাঁচিয়ে রাখি
ঘোর কাটলে দেখি
সে বড় ভোঁতা, পাথরের মতন।
মাঝখানে টানা হই জীবনের ভুলে
কখনও এদিক কখনও ওদিক
স্রোতের টান খেয়াল করি না
মনের টানে নৌকা বাই
তরী আমার লাগে না তীরে
তাই . . .
মনে যা আসে শুনিয়ে বেড়াই।
কতজীবনকে ছুঁতে চাই আর কটাই বা পারি
সবকিছুতে হাত লাগাই
আবার যদি সুযোগ না পাই
নিকোটিনে আমি বুঁদ হয়ে থাকি
রক্তে মেশাই বিষের খনি
আলেয়াকে ফের সত্যি ভেবে
টান্তে থাকি জীবন ঘানি।
গ্রীষ্মকালের প্রেম
- সুদীপ্ত রায়
১
একটা ঘামে ভেজা চকচকে পীঠ,
মুক্তির পথ বাতলে দেবে অতীত
শহর হাসে, রাত ঘনিয়ে আস
তৃপ্ত ঘামের ফোঁটা – সিক্ত অহংকার,
যুক্তির শেষ প্রান্তে আমার অঙ্গিকার
শহর ছোটে, না জানা nostalgia-র স্রোতে
কেউ দৌরে, কেউ হেঁটে, কেউ লাফিয়ে, কেউ খুরিয়ে
– কোথাও পৌছাতে চায়,
নির্দিষ্ট কিছু পেতে চায়|
কখনও একটু বিশ্রাম, আবার সেই দৌড় –
একটু থমকে গেলেও,
হারের গ্লানিকে পেছনে ফেলে অগত্যা এগিয়ে জেতে চায়
আমিও ছুটি, ঘামে ধুলোয় লুটোপুটি
যুক্তির বিপক্ষে, মুক্তির লক্ষে
২
অপরিচিত ঘামে ভেজা পীঠ, কবিতার ছন্দ বেমালুম হারায়
সারাদিনের ক্লান্তি, সারাদিনের তৃষ্ণা – অবলীলায় ভুলিয়ে দিয়ে যায়
কি? শুধুই কি শরীর, নাকি জীবন মানে আরও বেশী কিছু?
সে হাসিনার সিক্ত পীঠের স্বাদ, আমার পাসিনার মতোই নোনতা
সে ফিরে তাকায়-না বুধবার, শুক্রবার, রবিবার, আজও ফাঁকা মনটা
নীল, কখন লাল, কখন ধুসর রঙের খাম খেয়ালি ওড়নাগুলো
বিকেলের অজুহাতে,
কখন দমকা হাওয়ার আশকারায় আমাকে ছুঁয়েছিল
কি? শুধুই কি শরীর, নাকি মুক্তি মানে আরও বেশী কিছু?
৩
একটা রূপকথায় মোড়া,
অনিশ্চয়তা দিয়ে ঘেরা সুন্দরির বর্ণনা দিল তার পীঠের ঘাম
শহর গুটিসুটি, অস্থির hair-style যেন বাতাসের খুনসুটি
বাস-এ, ট্রাম-এ, ব্যাস্ত জ্যাম-এ সে ভুবন ভুলিয়েছে,
জুড়িয়েছে ক্ষত
জানি মুখোমুখি হলে তার, ইচ্ছেরা আরও অবাধ্য হত
ঘামে ভেজা পীঠ, Hot – গরম – Heat, May যখন অতিষ্ঠ
তার যুদ্ধ করার ক্ষমতা - romanticism শিখিয়েছিল যথেষ্ট
রাজপথ আবার নির্জন জীবন celebrate করে
আমিও ঘামে স্নান, শরীর আক্রান্ত জ্বরে
৪
চাঁদের আলো কখন আবছা, ছন্দ নাকি ধন্দ বাড়ায় অবচেতন ইচ্ছা
কবিতায় ছন্দ মানেই কি crime,
আসলে অপরিণত সুখী ছড়া মনের digestive enzyme
সে নারী, অনিশ্চিত তার বাড়ি –
তাবোলে কি অবহেলিত হবে বাসনা?
সাদা কখন কালো –
সিক্ত পোশাকের আড়ালে লক্ষণ রেখা দেখা দিল
দুঃসাহসী মন বলে, 'থাম – গলার ঘাম, তুই রাবণ হলে আমি রাম'
হারায় আবার সাহস, শুকিয়ে আসে গলা,
মিলিয়ে যায় ভোরবেলা সে স্বপ্ন কত ভিড়ে
মুক্তির আলপনা, এড়িয়ে যুক্তির জাল বোনা
– স্নিগ্ধ ভেজা পীঠ চায় যৌনতা জাল ছিড়ে
জানতে নিশ্চিত কি বাড়ি ফেরা –
নারী তোমার আঁচল যে বড়ই আনমনা
৫
সে ফিরে তাকাল যখন, আমি রাস্তার ওপারে তখন – কেটেছে অনেকটা গুমট ভাব
কিছু অভিশপ্ত মুহূর্ত বাষ্প হয়ে যায় –
সেও হয়ত ছুঁতে চেয়েছিল আমার হাত
তার লজ্জা কে আগলে রাখত যদি খলা চুল,
পোশাকের পরিধি ভাঙলেই নাকি মস্ত বড় ভুল
ঘাম শুকিয়ে আসে, শীতল হাওয়ায় ঠাণ্ডা হয়েছে পীঠ
– আমার নিঃশ্বাস এখন অতীত
শহরে রোজ নিগৃহীত হয় অনেক লজ্জাবতী ভালবাসা
তারা যে নারী, হয়ত তাই এতটা কোণঠাসা
আমার পথের সহযাত্রী, মসৃণ ভেজা পীঠ –
হাসিনার পাসিনা যদিও নোনতা
যা খুঁজবে প্রেমিক হাজার বছর পরেও,
আমি খুঁজে ফিরি সেই বুধবার, শুক্রবার, রবিবার,
আজও ফাঁকা মনটা
শৈশব মানে
- আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ
শৈশব মানে স্বাধীনতা
আনন্দ এবং আশা
শৈশব মানে হার না মানা
অন্যায়ের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য,
নৈ্তিকতায় হিমায়িত রক্ত!
শৈশব মানে যুদ্ধক্ষেত্র,
কঠিন জীবনের আগে সহজ জীবন-
খাপ খাওয়াতে শেখা।
শৈশব মানে সবুজ বাগান,
অতৃপ্ত বাসনা আর অবাস্তব কল্পনা।
শৈশব মানে ব্যস্ততা,
ক্লাশওয়ার্ক আর হোমওয়ার্কে ভরা,
মধ্যে প্রেমে হাবুডুবু!
শৈশব মানে হলিডে,
সময় কাটে না আলস্যেও,
পিতামাতার সাথে ঘুরাঘুরি।
আমার শৈশব ?
-শুধুই স্বৃতি !
অবসাদ
- দেবাশীষ চ্যাটার্জ্জী, কলকাতা
জীবন স্রোতে ভাসিয়েছিলেম
আপন তরিটিরে,
সাধ ছিল মোর দেখব সাগর
নয়ন ভরিয়ে।
উজান বেয়ে কেবল চলি ,
অন্তরে সাধ ভরিয়ে তুলি,
বুঝি নাই মোর লেগেছে যে ঘোর
সাধ্য উহার নাহিরে;
বৃথাই ভেলা ভাসিয়ে ছিলেম
আশার পাথারে।
ভাঙল যখন আশার ভেলা
সাঙ্গ হল মনের খেলা,
আবার যখন ফিরল তরী
জীর্ণ নদীর কুলে,
ভেঙ্গে দিলেম স্বপন যে মোর
আপন মনের ভুলে।
আজিকে হটাৎ চেয়ে দেখি
স্বপন জেগে উঠলো একি –
চলল ভেসে আপন মনে
সে তরী ভাসায়ে
ভাঙ্গা সাধের কান্না - হাসির
স্মৃতিরে কাঁদায়ে ।
কনে দেখা আলো
- দেবোপমা মিশ্র
আকাশে যে গলছে সোনা
পড়ছে চুঁয়ে চুঁয়ে,
সারা আকাশ দিচ্ছে ঢেকে
যাচ্ছে সোনা ছুঁয়ে ।
আকাশ থেকে পড়ল সোনা
পড়ল আমার ছাদে,
ঘিরল সেই আকাশ সোনা
আমার শরীর মাঝে ।
সূর্যখানি পশ্চিমেতে
হালকা টিপের মতো-
নারকেলের ঐ গাছের মাঝে
দিচ্ছে উঁকি যত ।
সোনা নিয়ে করছে খেলা
সারা আকাশ জুড়ে,
সেই সোনাতেই পাখনা মেলে
যাচ্ছে পাখি উড়ে ।
একটু পরেই সোনার রঙে
মিশে যাবে কালো,
হারিয়ে কোথায় যাবে যে এই
“কনে দেখা আলো ।"
কবিতা
- ডঃ মহুয়া দাসগুপ্ত আদক, সার্ভে পার্ক, কলকাতা
(১)
ঠোঁটে রং মেখে খদ্দের খোঁজা ঐ মেয়েগুলো অপ্সরা নয়,
সকাল দুপুর কি বিকেলে কবিতার নীরা,বনলতা,নীলাঞ্জনার মতো
ওরাও আমাদের চোখের সামনে দিনগত পাপক্ষয় করে চলে।
কাঁপা ঠোঁটে, ভাষাহীন চোখে বুঝে নেয় নিসর্গ বেদনা।
ভালো লাগার ঝড় উঠলে এলোচুলে বিদিশার নেশা ছড়িয়ে
হয়তবা ওরাও এক একটা কবিতা হয়ে সেজে উঠতে পারতো।
আসলে কবির কলম মেয়েমানুষের মন বোঝে না।
(২)
সাদা পাতায় কালো অক্ষর সাজিয়ে কোনোদিন চিঠি লিখিনি
যাহ, মনের কথা কাগজে লেখা যায় নাকি, লজ্জা করে না?
শুধু অলস চোখে নিরিবিলিতে দেখে গেছি
প্রেমের উন্মত্ততা, প্রেমে – অপ্রেমে শারীরিক বিলাস।
অবসন্ন বিকালের মুগ্ধ-করা নীরব সুখ খালি বলে গেল,
ও হতভাগী, দেহের আগল ছিঁড়ে মন যে বিবাগী হয়ে গেল,
কই রে, তোর চিঠি পাঠালি না তো তাকে!
(৩)
অলির গুঞ্জনে,পাখীর ডাকে পাপড়ি মেলে কৃষ্ণচূড়া,
নরম পাপড়ির ভাঁজে লজ্জারাঙা মুখ,
কি কথা রলিস সই, ওই ভোমরার সাথে?
অলিতে ফুলেতে, পরাগে ভ্রমরে, এ যে প্রেমের খেলা,
খুনসুটি সেরে আনমনে যেই ঝরলো কৃষ্ণচূড়া,
ভাসলো অলি পরকীয়া প্রেমে, মধুতে মগ্ন ভোমরা.
কবির প্রত্যাবর্তন
- সুদীপ্ত বিশ্বাস, পুনে , মহারাষ্ট্র
জীবনানন্দ কবিতার কারিগর
এই বাংলার ধানসিঁড়িটির তীরে
হয়তো বা হাঁস নয়তো অন্য রূপে
বাংলার কবি ঠিক আসবেন ফিরে।
যেখানে সবুজ যেখানে কাঁঠাল বট
জারুল হিজল চিল শালিখের ভিড়
কুয়াশার বুকে একদিন তিনি ঠিক
ফিরে আসবেন ধানসিঁড়িটির তীর ।
ঘন কুয়াশায় হাজার বছর হেঁটে
কাঁঠাল ছায়ায় মাঠ ঘাট ভালবেসে
নীলাভ আকাশে সজিনার ফুল নিয়ে
ফিরে আসবেন কবিতার এই দেশে।
মাঝ রাত্তিরে যখন ঝরবে ধান
চড়ুই যখন কাঁঠালি চাঁপার নীড়ে
সোঁদা সোঁদা জলে শিশির গন্ধ মাখা
কবি ফিরবেন ধানসিঁড়িটির তীরে।
গুগলি, শামুক মলিন শ্যাওলা মাখা
গ্রাম বাংলার অনামি পুকুর পাড়,
মাঠের ইঁদুর ফণীমনসার ঝোপ
উপাদান হবে তার সব কবিতার।
মধুকর ডিঙা যাবে চম্পার কাছে
ভোরের দোয়েল আবার শোনাবে গান
অক্ষর দিয়ে কবি আঁকবেন ছবি
মায়াবী ছন্দ একটানা যার তান।
রূপসার জলে হয়তো কিশোর হয়ে
শাদা ছেঁড়া পালে ডিঙি তিনি বইবেন
হয়তো আবার আসবে শান্তি নিয়ে
নাটরের মেয়ে সেই বনলতা সেন...
জীবনানন্দ কবিতার কারিগর
এই বাংলার ধান সিঁড়িটির তীরে
হয়তো বা হাঁস নয়তো অন্য রূপে
বাংলার কবি ঠিক আসবেন ফিরে।
যেখানে সবুজ যেখানে কাঁঠাল বট
জারুল হিজল চিল শালিখের ভিড়
কুয়াশার বুকে একদিন তিনি ঠিক
ফিরে আসবেন ধান সিঁড়িটির তীর ।
ঘন কুয়াশায় হাজার বছর হেঁটে
কাঁঠাল ছায়ায় মাথ ঘাট ভালবেসে
নীলাভ আকাশে সজিনার ফুল নিয়ে
ফিরে আসবেন কবিতার এই দেশে।
মাঝ রাত্তিরে যখন ঝরবে ধান
চড়ুই যখন কাঁঠালি চাঁপার নীড়ে
সোঁদা সোঁদা জলে শিশির গন্ধ মাখা
কবি ফিরবেন ধান সিঁড়িটির তীরে।
গুগলি, শামুক মলিন শ্যাওলা মাখা
গ্রাম বাংলার অনামি পুকুর পাড়,
মাঠের ইঁদুর ফণীমনসার ঝোপ
উপাদান হবে তার সব কবিতার।
মধুকর ডিঙা যাবে চম্পার কাছে
ভোরের দোয়েল আবার শোনাবে গান
অক্ষর দিয়ে কবি আঁকবেন ছবি
মায়াবী ছন্দ একটানা যার তান।
রূপসার জলে হয়তো কিশোর হয়ে
শাদা ছেঁড়া পালে ডিঙি তিনি বইবেন
হয়তো আবার আসবে শান্তি নিয়ে
নাটরের মেয়ে সেই বনলতা সেন...
কবিতা
- শ্রীয়া দাশুগুপ্ত
দেহে যখন উথলে ওঠা জোয়ার ভরা শ্রান্তি,
জীবন যখন ধূসর কালো,
কালোর মাঝে না জ্বলে আলো
মনের তারে বাজে শুধুই ক্লান্তি!
‘অন্ধ তামস’ না যদি টুটে
ঊষার আলো না যদি ফুটে
জীবন মাঝে যখন নেভে সঞ্জীবনী শিখা,
তখন তমার কথায় গানে
জগত মাঝে সব পরাণে
উদ্যম যে মেলে নয়ন
মানবজাতি করে চয়ন
হৃদয়-তলে ফুটে ওঠা জীবনেরই শিখা।
রবি ঠাকুর আজও আছে
ভারতবর্ষে সকাল-সাঁঝে
কবি ঠাকুর যায়নি চলে বাইশে শ্রাবণে,
রবীন্দ্রনাথ রইলে বেঁচে হৃদয়ে-প্লাবণে।।
নিভৃতে
- সপ্তর্ষি রায়বর্ধন, কলকাতা
কখনো রাতপরী নামে চুপিসারে
যায় চাঁদ মেঘ অভিসারে
পায় খুঁজে অন্ধকারের ফুল
সাহসী রাত সাজে চুয়াচন্দনে।
হাত রাখে বড় সাবধানে
এমন এ রাত জানে ভালবাসাবাসি,
দূরে বাজে জাহাজের বাঁশি....
শেষ হল ভাসানের হাসি গান,
অবুঝ দুহাত শুধু হাতড়িয়ে ফেরে
ফুল ওড়ে অকাল বাসরে।
রাতপাখি বন্দর ছেড়ে যায়
আমাকে নাও....
এসেছে শরৎ
- গৌতম ঘোষ, মুম্বাই
প্রবল বরষা থেমে,
শরৎ এসেছে নেমে
মেঘের ভেলায় চড়ে
নীলাকাশ জুড়ে।
সোনালি রোদের বেশে
বলাকার ডানায় মিশে,
বাতাসে লাগিয়ে দোলা
কমল পল্লবে করিছে খেলা।
সরোবর পূজোর গন্ধ ছড়ায়,
ভ্রমরও তারই গান গায়,
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে
শারদ চিত্রপট জুড়ে।
শিউলিরা সৌরভে
দোলা দেয় অনুভবে,
সাঁঝের আঁধার মেলে
শিশির ঝরে নূপুরের তালে।
গভীর রাতের নীরবতায়
ঝিঁঝিঁদের মুর্ছনায়,
শশী ভাসে স্বপ্ন মায়ায়
তারাদের বিছানো দোলায়।
সোনালী মেঘের ডাক
- নাজমুছ - ছায়াদাত (সবুজ), ঢাকা, বাংলাদেশ
ব্লাকহোলে পড়ে থাক
হয়ে সব কালো কাক,
ছিপ ফেলে বসে থাকে
মহাকাল- উজবুক।
এভাবে যে কত গেলো
আরও কতকাল যাবে,
ব্যথাতুর পাখি গুলো
কখনো কি সুখ পাবে?
মেঘের আড়ালে তাই
ছুটে যায় দুটি চোখ,
জানালার গ্রিল ধরে
চেয়ে থাকে অপলক।
ফিরে আসুক বৃষ্টি
কেটে যাক জরা সব
আহত পাখিরা সব
করুক কলরব।
প্রকৃতির ধর্ম
- জামাল ভড়
একদিন ইস্কুলে গিয়ে দেখে অর্ক
দুইদলে বেধে গেছে বড় জোর তর্ক ;
তর্কের কেন্দ্রে ছিল শীত গ্রীষ্ম
তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ভয়ানক দৃশ্য ।
গ্রীষ্মের বিরুদ্ধে ছিল এই যুক্তি
হাঁস ফাঁস করা থেকে নেই কোন মুক্তি;
খাদ্যেও সুখ নেই খেয়ে নেই স্বস্তি
খেয়ে-পরে-বসে-শুয়ে শীতে সুখ ‘অস্তি'।
হাড়-কাঁপা ঠাণ্ডায় ভোরে ওঠা শক্ত
বাইরে গেলেই যেন জমে যায় রক্ত;
হাত পায়ে টান ধরে খসখসে গাত্র
টের পাবে হাড়ে হাড়ে জলে নামা মাত্র।
কাঁঠালের দেশে পাবে আম জাম বিল্ব
রসে ভরা ফলগুলি গরমেতেই মিললো;
সরবতে স্বাদ পাবে, সুখ দেবে লস্যি
রসনা তৃপ্ত হবে হও যত দস্যি!
শীতকালে পাবে তুমি যত শাক সবজি
পেট ভরে খেতে পার ডুবিয়ে ঐ কব্জি
খেজুরের রস পাবে নলেনের সন্দেশ
পার্বণী পিঠা পাবে খেতে পার কমবেশ।
সবদিক শুনে বুঝে হেঁকে বলে অর্ক
খুব হলো থাম দেখি থামাও বিতর্ক;
শীতকালে শীত ভাল গ্রীষ্ম ঘর্ম
সমতালে তাল রাখা প্রকৃতির ধর্ম।
অবুঝ মন
- পল্লব হাজরা
বর্ষার প্রথম বৃষ্টির মতো ছিল
অশ্রু যেন খুশির ঠিকানা দিল
সময়ের সাথে বর্ষা এল ধেয়ে
আবেগে অশ্রুও যাচ্ছে বেয়ে
উষ্ণতার খোঁজে ভাবুক মন
সবার আড়ালে রয়েছে আবেগপ্রবণ
অতি উষ্ণতা অসহ্যের কারণ হল
নতুন স্বপ্নে আবার বর্ষার পিছু নিল
সুন্দরতার মোহে পড়িয়া
কাঁটায় বিঁধল বুক
গন্ধের দিকে বাড়িয়া পা
আজ রক্তে লেখা সুখ
আলোর আঁধার ভাবিয়া
প্রদীপ কে করিলাম আপন
কে জানিত, অল্প সময়ের সাথী
এই কথা আঁধারে করিয়াছে গোপন
আজও যদি চোখে পড়ে গোলাপ
ফিরিয়ে দেয় স্মৃতি ভরা আলাপ
ক্ষণিকের জন্য আঁখি হয় স্তব্ধ
জন কোলাহল এক নিমেষে বন্ধ
স্মৃতিভরা দিন যায় মনে পড়ে
অশ্রু আনে জল আবেগ প্রবণ হয়ে
খানিক বাদে জীবন আবার নবপথে
পথ চলা শুরু একাকীত্বের সাথে
অতি সক্রিয় কঠিন বাস্তব
ভারসাম্য হীন সমাজ শুধুই নিরব
কানে ভাসে সত্যের জয়গান
তবুও আখিঁর কাছে সবই ম্লান
অর্থ আজ মানবের পরিচয়
সভ্য সমাজ নিচ্ছে মেনে পরাজয়
অন্তরের ভাষা আসে না মুখে
কষ্ট তাই পড়ল চাপা বুকে
সমাজ আজ অর্থের দাসত্ব নিলো
কবে নতুন ভোরের আলো ফুটবে বলো?
Please mention the "name of the articles and the authors" you would like to comment in the following box... Thank you.