top of page
birds.jpg
কবিতা মঞ্জরী - ৫
নতুন জামার গন্ধ
জীবন সমীকরণ
কোথায় আছিস
ভিক্ষে পাত্র
গল্প কথা
ডোবা
গড়ের মাঠ
রাত জাগা ধুসর তারা
অন্য এক পথ
অমূল্য ধন
রান্না বুড়ি
প্রেম সংক্রান্ত
সঠিক গান
তুমি বিষয়ক
চাঁদে জোছনার আলো
সুহৃদ স্বজ্জনে
সময় বন্দনা
হেলাফেলা সারাবেলা
শিশু হবে কবি
ঈদের দিনে খুশির দিনে
রবি ঠাকুর ও শিশুপাঠ
শিরনামহীন কবিতা
নতুন দূর্গা
ক্ষেতুর দুয়ার
বিজ্ঞাপন
ঘরছাড়া পাখী
পাহাড় থমকায় না
সৌরভাভিলাষী
ভালবাসা
মাকড়সা
জীবন্মৃত
শাল সেগুন
সন্তান
অন্ধকার নামছে
সন্ধ্যা নামছে
হয়ত সেদিন
নশ্বর
ছন্নছাড়া
স্বপ্নে আমি আজও
ফিউশন কবিতা
আলব্রাটস
সুখের অসুখ
রক্তচক্ষু
মরুমহীরুহ
স্মৃতিসুধা
বিরস পারিভ্রমণ
সাঝ
Anchor 1

নতুন জামার গন্ধ

- রূপা মন্ডল

নতুন জামার গন্ধ মাখা প্যাকেটখানা নিয়ে ,

চলতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই, দৃষ্টি পড়ল গিয়ে।

ওই ফুটপাতে রয়েছে শিশু, চাহনি অসহায়!

ময়লা মাখা ছোট্ট শরীর রয়েছে আদুর গায়!

কি জানি কি হ'ল মনে দিলাম হাতছানি,

কাছে এলে দিলাম তারে নতুন প্যাকেটখানি।

অবাক হয়ে রইল চেয়ে বিশ্বাসই না হয়!

পূজোর সময়ে নতুন জামা - এ কি বিস্ময়!

সঠিক গান

-     মিজানুর রহমান মিজান

ফুল পাখি ভালবাসি

আলো দেয় রবি শশী

সকলই তোমার দান

হে চির কল্যাণ ও মহান।।

গাছ যোগায় ফুল ও ফল

মাছে ভর্তি নদীর জল

সাগর রাখছ করে অতল

নি:শ্বাস নেই বাতাসে বাঁচে প্রাণ।।

সাজাইছ পাহাড় থরে বিথরে

সোনা থাকে মাটির ভিতরে

মাটি দেয় ফসল গোয়ালা ভরে

তৃপ্তি অতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি হয়ে বলিয়ান।।

কি বলে করি শেষ

তোমারই দান সবিশেষ

আমিতো নগণ্য অশেষ

ইচছা থাকলে ও পারি না গাইতে সঠিক গান।।

হেলাফেলা সারাবেলা 
- ধীমান চক্রবর্তী 

ওরে 
তোর মেঘজোছনা হাসি, 
মনে 
যেন বাজায় উদাস বাঁশি, 
আহা 
তুই বল দেখি একবার, 
হয়ে 
যাই সপ্তসাগর পার, 
ছেঁচে 
আমি সাত সাগরের জল, 
যেচে 
তুই একবার শুধু বল, 
যদি 
না বলতে ইচ্ছে হয়, 
নদী 
মন পাগল স্রোতে বয়, 
তবু 
কিছু বললি না যে তুই, 
আজো 
আমি স্বপ্নে তোকে ছুঁই, 
স্বপ্নেই 
ভাঙা গড়ার খেলা, 
চলে 
যায় খেয়াল খুশির বেলা, 
শেষ 
রাঙা বিকেল বেলার আলো, 
তোকে 
যে বেসেছিলাম ভালো, 
আজ 
তোকে খুঁজবো না তো তাই, 
আমার 
আর খোঁজার সময় নাই, 
যদি 
কোনো যুগান্তরের পারে, 
নদী 
ধোয়া হলুদ বনের ধারে, 
আধো 
আলো মিশবে অন্ধকারে, 
সেই 
দিন আবার নতুন করে, 
যেন 
চিরদিনের জন্যে শুধু তোকেই আমি পাই।। 


(রাজীব বসু ছিল হাওড়া বিবেকানন্দ ইন্সটিটিউশন এ আমাদের সহপাঠী। মেধাবী, প্রাণচঞ্চল.. খেলাধুলোয় তুখোড় সেই রাজু ১৯৯২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার পর ছুটিতে ফুটবল খেলার সময় মাথায় আঘাত পেয়ে অকাল বসন্তে বিদায় নিয়েছিল। 
তার ই স্মৃতিতর্পণ....) 


কোথায় আছিস 

-   ধীমান চক্রবর্তী 

"কোথায় রে, মাঠেতে যাবি না ?".. তবু তোর কোনো উত্তর নেই,.. 
শেষে তোকে রেখে, রেগেমেগে.. 
নিজেই গেলাম চলে মাঠে। 

সে এক বসন্ত ছিলো বটে.. 
.. কৃষ্ণচূড়ার আগুনে জ্বলত পাতা, তার.. 
.. ডানদিকে সাইকেলে বাঁক নিতে গেলে.. পায়ের তলায়, 
.. নাগকেশরের লুটোপুটি.. 
আশেপাশে সমুদ্র কোথায়? 

শুনেছি বালিতে নাকি গড়ে ওঠে ঘন ঝাউবন, 
কিন্তু দেখেছি.. 
.. সবুজ ঘাসের সেই মাঠের পাশেই..আদ্দিকালের কিছু 
ঝাউ মাথা তুলে.. 
ঝিরঝির চামর দোলায়। 

তবু তুই মাঠেতে এলি না, 
ডাকাডাকি সার.. 
বেলাশেষে নিয়মমাফিক.. 
সন্ধে নামে.. 
মুহূর্তেরা বলে "টিক্ টিক্".. 
সবই কি ঠিক করা ছিলো?.. 
.. না কি সবই বেঠিক? 

অনেক বসন্ত আসে .. 
তোকে ডেকে ডেকে.. 
.. ফিরে যায় উত্তর না পেয়ে 
ঝাউপাতা দিয়ে মুখ ঢেকে। 

আজও এলে ঝিরঝির দুপুর.. বিকেল , চৈত্রের ফাঁকা মাঠে.. 
আজও তোকে ডাকি,.. 
" কোথায় রে, মাঠেতে যাবি না?.. 
শুনছিস, তোর হলোটা কী? " 

কী যে হলো.. কী যে হয়েছিলো.. 
.... কোন অভিমানে?.. 
... মেলে না উত্তর, আজও 
তার ই সন্ধানে.... 

হাঁক পাড়ি.. 

" রাজুউউউউ.. তুই কোথায় আছিস?" 
যুদ্ধে ছিলি, আমাদের... 
.. স্বপ্নেও থাকিস ।। 

গড়ের মাঠ

স্বরূপ মণ্ডল (বিবর্তন)

বাগডাঙ্গা, কান্দি, মুর্শিদাবাদ

আমাদের বাড়ির অনতিদূরে গড়ের মাঠ ।

উত্তর-দক্ষিণে লম্বা মাঠখানির একদিকে গড় অন্যদিকে দমু ।

দমুর গাবায় বরুল আর গাব গাছের বাদার ।

মাঠময় ঝিঁঝিটি আর চোরকাঁটার ঝোপ ।

উত্তরে বাঁশবন । বাঁশবাদারের ওপাড়ে ঝখাডাঙ্গা ।

ওইখানে মুসলিমদের বাস । যেন একঘরে ওরা !

মাঠের মধ্যিখানে মস্ত একটা বেলগাছ ।

মোড়ল পাড়ার গরুগুলো চরাট সেরে বেলগাছের ছায়ায় বসে জিরতো ।

দক্ষিণ-পশ্চিমে মণিদাদুর আমবাগান ।

ডাঁশা-পাকা আমের থগি ঝুলে থাকতো মাথার ওপর ।

ঢিল ছুঁড়ে আম পাড়তাম আমরা ।

তোত্‌লা সমুকাকা তেড়ে আসতো আমাদের দিকে ।

ততক্ষণে আম কুড়িয়ে পগার পার !

 

ঘূর্ণি দুপুরবেলা । বাতাসে আগুনের হলকা ।

চাটুজ্যে বাড়ির দরজা-জানলা সব বন্ধ । খেয়ে-দেয়ে ভাত ঘুম দিত ওরা ।

আমরা তখন কাজে মত্ত ।

মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত রিলের সুতো ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমি আর কালু ।

বরুলের আঠায় কাচের গুঁড়ো মিশিয়ে সুতোয় মাঞ্জা দিতে তোমরা ।

মুখে বলতে, “খুব কড়া হবে !”

 

সতুর সঙ্গে একবার ঘুড়ীর লড়াই লেগেছিল তোমার ।

ঘুড়ী ওড়ানোয় সতুর ছিল পাকা হাত ।

সুতো কেটে আমাদের ঘুড়ীটা মাথা নাড়তে নাড়তে মাঠ ছাড়িয়ে কোথায় যেন চলে গেল ।

তাই দেখে আমার সে কি কান্না !

তুমি আমাকে শান্ত করে বললে, “কাঁদিস না নীলু, আমরা আরও বড় ঘুড়ী বানাবো ।”

 

জানো, পীরুটাও ঠিক আমাদের মতো হয়েছে ।

দিনমান খালি পড়া, আঁকা আর কম্প্যুটার !

ওর একটুও ভাল লাগে না ।

ও চায় খেলতে, হাত-পা ছড়িয়ে বাঁচতে ।

কিন্তু উপায় কোথায় !

গড়ের মাঠ আজ শিশু আর সেগুনের বাগান ।

যীশুকাকা লিজে নিয়েছে ।

দামী কাঠ হবে, কত লাভ হবে !

খেলার মাঠের কি প্রয়োজন বল ?

রাত জাগা ধূসর তারা
    -ইউনুস হোসেন

রাতের অন্ধকার,যখন;
নিজের বসতি স্থাপন করছিল।
দূর্বা আগায় সদ্য দু-এক ফোটা;
                        হিমেল আবেশ।

এত কোটি নক্ষত্রের ভিড়ে,
দূর কোন এক দেশের তারা ধূসর ভাবে
চেয়ে আছে; যে পালকি,পথ চলেছে
                                   অন্ধকার খুঁড়ে।
নববধূ;
অনাকাঙ্খিত স্পর্শ বিশীর্ণ বিবর্ণ হয়ে,
                       চারিদিক ভর করেছে।
হঠাৎ এক লক্ষ্মীপেঁচা ডেকে উঠলো,
একটা রুদ্ধ বিষাদ;অনিচ্ছা-পরিণয়।
পাল্কি বাহকদের দাম্ভিক পা গুলো
মেঠোপথে এঁকে চলেছে;
                   বিচ্ছেদের আলপনা।
অঘ্রানের রাতে চোখ ভেজে,
                নীল সমুদ্র জলে।
নিম বনে ঢাকা পড়ে দিগন্ত আকাশ,
ধূসরতা ঝরে; মেদুর হয় ওপাড়।

রাত জাগে তারাটি ধূসর চোখে,
প্রতিচ্ছবি মিশরের নীলনদে।

রাত জাগে তারাটি মহুয়ার বনে;
নীল কালো নক্ষত্রের দেশে।

অন্য এক পথ 

- শ্রীকান্ত দাস 

 

এক অজানা স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছি আমি  । 

এ বোধহয় অন্য এক পথ । 

তবু মনে হচ্ছে এ পথে হেঁটেছি আমি । 

ওই দুই পাহাড় এর ধারে , 

প্রকৃতির গন্ধ আমার চেনা । 

এই বৃষ্টি আর উষ্ণতা আমার 

শরীর ছুঁয়েছে বহুবার । 

এই লাবন্য চাওয়া পাওয়াকে  বিদির্ণ করেছিলও সেদিন । 

হাড়হীম দেহে আগুন জ্বলেছিল

এমন এক পথের আঁকে  বাঁকেই । 

নিস্তব্দতায়  শুনেছিলাম ...

চেনা নিঃশাস এর শব্দ । 

আর মাটির সে গন্ধে সেদিনও 

জুড়িয়েছিলাম প্রান । 

ফিরতে পারবনা জানি সেই পথে ,  অভিমানের বনে হারিয়েছে সে পথ । 

তাই অজানা স্টেশন ছেড়েযাচ্ছি আমি । 

এ বোধহয় অন্য এক পথ ।

"অমূল্য ধন "
-   পীযূষ কান্তি দাস 

 

ভোরের পাখিরা কিচিমিচি করে 
বলে তারা সব ডেকে , 
"ওঠো ওঠো সবে বেলা যায় বয়ে 
ওঠো রে ঘুমের থেকে । 
অলসতা হলো বড়ো শত্তুর 
ত্যাজো তারে এইবেলা , 
সময়ের কাজ সময়ে সারতে 
কেন করো  অবহেলা "? 
সময় সব'চে অমূল্য জেনো 
গেলে আর ফেরে নাকো , 
আফসোস ছাড়া জুটবেনা কিছু 
পরে তারে যতো ডাকো । 
সেইজন শুধু  হয় রে সফল 
যে বোঝে সময় দামী , 
সময় দেবতা তোমার চরণে 
প্রণাম জানাই আমি ।।

ঈদের দিনে খুশির দিনে
- আবু আফজাল  সালেহ

ঈদের দিনে খুশির দিনে
সকাল বিকাল ফুর্তি
পাঞ্জাবি আর নতুন জামায়
আতর-টুপি-কুর্তি।
মিষ্টিমুখে সবাই মিলে
করব কোলাকুলি
বিভেদ বড়াই ভুলে গিয়ে
পরাণ খোলাখুলি।
গরুর গোস্ত মুরগি-খাসি
আছে ঘ্রাণের পোলাও
খেয়েদেয়ে দিই বিলিয়ে
হাতে হাতে মিলাও।
বন্ধু-স্বজন পাড়ার লোকে
মিলব ভেবে বুকে
ছোটবড় নেইতো তফাৎ
দুখ কিবা সুখে।

একটি নাম
আবু আফজাল সালেহ

একটি নাম সাহস যেন
একটি নাম অভয় দিল
একটি নাম মন্ত্র যেন
আড়মোড়া  ভেঙে জেগে ওঠা
যুদ্ধে যাবার।
একটি নাম আশার প্রদীপ
একটি নাম ভরসার প্রতিক
একটি নাম জ্বলজ্বলে
অস্ত্র নিয়ে একজোটে
ঝাঁপিয়ে পড়ার।

একটি নাম লাল-সবুজের
একটি নাম ইলিশ-দোয়েল
একটি নাম রেসকোর্স
ছিনিয়ে নিয়ে দানব থেকে
সঠিক পথে বহমান।
একটি নাম ঢাকা-খুলনা
একটি নাম পদ্মা-মেঘনা
একটি নাম প্রাণে প্রাণে
মিলেমিশে একাকার
মুজিবুর রহমান।

শিশু হবে কবি
- আবু আফজাল সালেহ

রবি রবি
আঁকেন ছবি
শিশুর।
কবি কবি
আঁকেন ছবি
যিশুর।
ছবি ছবি
রবি-ছবি
দুয়ে মিলে
রবির স্বপন
তরী ভাসান
নদী-বিলে।
শিশুর স্বপন
পাখা মেলে
ওড়ে ছবি
শিশু-ভাবনা
খুলে ঢাকনা
হবে কবি।

শিরনামহীন কবিতা

- নিলাদ্রী দেব, কোচবিহার 

১)

প্রতিটি সীমান্তের গার্ডওয়ালে আদিমতা লেগে থাকে

আমরা জানি,

কিন্তু খেয়াল করি না জুলাইয়ের মন খারাপে কিংবা

ঝোরো বিকেলের বিষণ্নতায় কোনো হাওয়া মোরগই চোখে চোখ রেখে ডাকে না ডাকতে পারে না পরিচয় ক্ষিদে জোরালো হয় ঠিকই ... ঝাপসা চোখে পিঠের পেছনে এক অপরিচিত পাড়া,

আসলে কলোনী ক্রমশ এগিয়ে যেতে হয়

কোনো এক সীমান্ত অপেক্ষায় থাকে

২)

প্রতিটি বৃষ্টি কণায় অনেক অনেক বারুদ লুকিয়ে থাকে।

জমাট বারুদ।

যা প্রেমের কথা বলে।

কখনো প্রেম বহির্ভূত সমীকরণের কিংবা স্বপ্নের।

বারুদমেঘ ছোঁয়া জলে নাভি বিন্দু ভিজিয়ে নিলে জেগে ওঠে শৈশব। বানভাসি মাছের মত স্কুল কামাই।

সুপুরি গাছের গায়ে পরজীবী পানপাতায় পিঁপড়ের ডিম।

দোলা বাড়িতে পাটফুলের নির্বিকার চেয়ে থাকা।

কখনো সখনো লজ্জাবতী গাছের যুবতী হবার চেষ্টা।

ইত্যাদি।

প্রভৃতি।

এরপরও নীরবতা ভাঙলেই আমরা স্মৃতি ছেড়ে বারুদ বিক্রি করি।

ভালোবাসা

- ঋতর্ষি দত্ত

 

মনের নিবেদন নয়, শরীরের আবেদনে

হৃদয় দেয় সাড়া-

সঙ্গ নয়, অনুষঙ্গ খুঁজে ফেরে

বিরহের নায়ক, মেতে ওঠে মরীচিকার ঝলকানিতে!

বিষাদের তীব্র নেশা বাধ্য করে

অন্তসারশূণ্যতাকে সফরসঙ্গী করতে;

কবিতার ছন্দে, ভাষার কারচুপিতে

বাসনা থাকে সুপ্ত-

অমরত্বের লোভ, মহত্বের হাতছানি আর

প্রেমের বিলাসিতায় ভালোবাসা প্রায় লুপ্ত!

 

  

মাকড়সা

- ঋতর্ষি দত্ত

 

মিথ্যে বুনে মিথ্যে বুনে

বানাব এক স্বপ্ন জগৎ;

সহজ ভাবে মিশবে মানুষ

নীল আকাশে উড়বে ফানুস-

দিনের আলো মিলিয়ে গেলে

জ্বালিয়ে নেব রুপোলি আলো,

উচ্ছ্বাসে আর উল্লাসে সব

হারিয়ে যাবে মনের কালো।

 

হঠাৎ দেখি গিয়েছে সব

‘ব্যাধ’ বলে তুলছে রব

আসলে সবই মনের ভুল

সুতো নয় তো; শুধুই ঝুল

হঠাৎ এসে ধরবে টুঁটি

বলা হবে না, হতে চেয়েছিলাম রেশম গুটি।

 

 

জীবন্মৃত

- ঋতর্ষি দত্ত

 

কাব্য হরণ,

ঝর্ণা কলম শুকিয়ে গেছে, খেরোর খাতা-

শূন্য দোয়াত, হয়নি লেখা জীবন কথা।

 

ছন্দ পতন,

স্বভাব কবি শব্দ খোঁজে, ব্যর্থ প্রেমে

ধুঁকছে জীবন, গল্প থেমে।

 

মৃত্যু বরণ,

পরম গুরুর অভাব বোধে-

কবি এখন জীবন্মৃত,

ছন্দে ছড়ায় মনের কথা হয় না বলা আর।

 

সন্ধ্যা নামছে যখন

-সাত্যকি, বারাসাত, উঃ চব্বিশ পরগণা 

সন্ধ্যা নামছে যখন

রেললাইনের পাশে কিছু মাথা

ওরা ট্রেন ধরবে সবার আগে

ওদের রোজই দেখি

              মুখ চেনা

ট্রেন ঠিকঠাক সময়েই কারশেড থেকে বেরোচ্ছে

পাশের রাস্তায় মানুষ , ফুচকার স্টল

                         আলো গমগম

দ্রুতগতিতে ছুটছে তিন চাকা যান

আমিও যাত্রী পাশের রাস্তায়

একটা অমিল চোখ চেপে ধরছে

সন্ধ্যা আজ বড় তাড়াতাড়ি নামছে

             রেললাইনের গায়ে.........

                               

ঘরছাড়া পাখী

- ভাস্কর সিন্হা

 

ঘরপাখী ঘরছাড়া বহূদিনের তরে-

করে মন আনমন, আকাশীজ্বরে।

শীত ভুলাতে দিয়েছে পাড়ি,

শত সহস্র যোজন-

ডানায় পালকে নিয়েছে শুষে

কিছু রোদ্দুর আর শ্রম।

ছোট্টো নীড়, মরমি লতা

দুয়ার জুড়ে। গৃহসজ্জায় কতশত আলপনা।

 

 

আর কি ফিরিবে? কভু জিজ্ঞাসিত মনে?

দেশে দেশে, দশে দশে, মিশিয়া

রহিছে প্রাণ। বিকশিত শাখা প্রশাখা।

আধাঁর ঘনালে তবু, নদীপারে গুল্মবনে

জোনাকি জ্বলে ওঠে। মূল দেয় টান,

নাভির ভিতর, হৃদয় কি চমকিয়া ওঠে? দুরুদুরু বক্ষে।

 

  

পাহাড় থমকায় না

 - ভাস্কর সিন্হা

জানালার পাশে ঘুমে আছে পাহাড়।

ক্ষণে ক্ষণে সঙ্গোপনে

                    নিশিযাপীদের অর্ধ উল্লিখিত, অস্পট উচ্চারণ।

আধাঁর জড়ালে ওই অসীম সোহাগে

                     গাঢ় সবুজের গানে।

কোনে কোনে, টিলাপারে

জ্বলে যেন কিছু বাতি।

মায়াময় নিকষ মোহময় অসীমে

          যেন সুমেরুতারা দেয় ফাঁকি।

 

এইখানে মাঝরাতে খাদপরে

           পিছলে পড়েছে তিনপ্রাণ।

জানবে জাগতিক রীতি- বোধ

যখন স্বর্ণরবি নিশাশেষে

 জাগরুক বাতায়নে। নিস্করুন সবল অভিঘাতে।

অন্ধকার নামেছে যেখানে ......

-সাত্যকি, বারাসাত, উঃ চব্বিশ পরগণা  

উজ্জ্বল কয়েকটা চোখ

হাতের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে চামড়ার ভাঁজে

দারিদ্রের বিবর্ণ  রঙ লেগে আছে

কড়িয়ে  নিচ্ছে আধপোড়া আতসবাজি

হয়তো তাদের অর্ধেক জীবনের প্রতিনিধি হিসাবে

পকেটে ব্যাগে যেখানে পারছে

লোকচক্ষু থেকে আড়াল করতে

দেখছে এদিক-ওদিক

কয়েকটা উজ্জ্বল চোখ

যাদের ভবিষ্যত হতে পারত শহুরে

দীপাবলির মাইল জোড়া আলোর নদী

কিন্তু ওরা

আস্তে আস্তে গাছের শুকনো শরীরের

পাশ থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে

সূর্য ডোবা লাল আলোর পিছনে।         

 

 

হয়ত সেদিন

- রীনা নন্দী, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রিট, কলকাতা 

 

যত দিন পারো কুসুম-রোদ্দুরে

হাত পা সেঁকে নাও।

কে বলতে পারে

কবে আছে কবে নেই !

সময় বদলালে রোদ যদি

কাঠ ফাটা হয় !

জলন্ত পৃথিবীতে হয়ত একদিন

কুসুম-রোদ্দুর শুধুই গল্পকথা !

 

নশ্বর

 - রীনা নন্দী, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রীট,  কলকাতা 

 

একদিন হেঁটে যেতে যেতে

ছিটকে যাবই –

অথচ এই মঞ্চ-রূপায়ণ,

টিকিটঘর, বাজার সব থাকবে

লুকনো সঞ্চয়ে থেকে যাওয়া

ধাতব কয়েনও অবিনশ্বর।

 

সামান্য গন্ধটুকু আমার

রয়ে যাবে এক কোণে

ধুলো জমতে জমতে

একদিন সেটুকুও উবে যাবে

হাওয়ার সাথে সাথে।

স্বপ্নে আমি আজও
- ধীমান চক্রবর্তী

এখনও সে বৃদ্ধ গাছ..
মাথা উঁচু রয়েছে দাঁড়িয়ে..
ঘাসের চাদরে,

ভাঙা চোরা স্বপ্নেরা..
জোনাকি, পরাগরেণু অথবা শিশির কণা হয়ে..
টুকরো ভাঙা সময়ের
আয়নার মতো..
নতুন স্বপ্নের বিচ্ছুরণ
করে যায় পরম আদরে।

প্রত্যেক নতুন ভোর..
আসে যার শিরায় শিরায়
রন্ধ্রেতে বিষাক্ত পরমাণু..
মিশে আছে গভীর তন্ত্রিতে..
দগ্ধ, তবু পরিতৃপ্ত ভালোবাসা হয়ে..

নিদাঘ গ্রীষ্মের দিনে
হেমন্ত বিকেল শেষে
কখনো বা অঝোর ভাদরে।।

 

আলবাট্রস 

-   দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা 

 

সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছিল নাবিকেরা

দুটো  আলবাট্রস  এসেছিল তাদের সঙ্গে। 

নাবিকেরা খুশিতে ডগমগ

দুদন্ড শুঁড়িখানাতেও বসল না,

সোজা  সাগরপারের পথ ধরে  হাঁটা দিল

বউ আছে ঘরের কপাট ধরে দাঁড়িয়ে।।

সুখের অসুখ

- ঐন্দ্রিলা ব্যানার্জ্জী দে, কলকাতা 

সুখের ঘরে সীঁধ কেটেছে অসুখ,

ধুলোমাখা নরম দুটো হাত দিন পেরিয়ে রাতের কড়ানাড়া

অলস কিন্তু অবাধ যাতায়াত।।

ইঁট কাঠেতে ঘূণ ধরেছে বেশ

চিলেকোঠায় অতীত স্তুপাকার দেওয়াল জুড়ে মনপাহাড়ের দেশ নাছোড়বান্দা স্মৃতি একাকার।

হলদে খামে ধূসর আঁকিবুকি

ছাদের ঘরে হাত ছোঁয়ানো সুখ

সিঁড়ির বাঁকে এলোমেলো রাত

সিলিং জুড়ে ছায়ারা উন্মুখ।

নেশার বিষে উলোটপুরান ক্ষণ

ভেজা চোখে মিশকালো সেই রাত

অবাধ্য মন আলগোছেতে খোঁজে

আগলানো সুখ আসবে অকস্মাৎ ।।

মরুমহীরুহ

ভাস্কর সিন্হা

 

পশ্চিমের না কি, উত্তরাগত সেই হাওয়া?

সব এলোমেলো, খেঁজুরে পাতার

অবিন্য়স্ত রূপে পাওয়া। থমকে এসে দুয়ারে

শুষ্ক নিম ডাল, আধো ভঙ্গুর, হতভাগ্য় পাতা।

উত্তরের সাগর মুকুটে, পূর্বে জনপদ,

এই মরুদেশে পথহারা তাই, ঢুঁড়ে মরেছি

যোজন বিস্তর। খুঁজে ফিরি সুবর্ণ মরীচিকায়

ঘুমে- আধোভ্রমে, গৃহস্থ মোরগের সুপ্রভাতীয়

বন্দনায়। কুয়াশাময় সেই প্রহেলিকা-

আদ্য়ন্ত নগ্ন যে, বাহুডোরে আগলে রেখেছে

নগ্নিকারে। রসায়নে সিক্ত হয়ে জন্মিছে আখ্য়ান-

প্রেমে, আবেগে, আবিষ্ট বীজ মন্ত্র যে মহীরুহতার।

শাখা-প্রশাখায় আকাশ চুম্বিবে, ধর পাকড়ে

চন্দ্র-তারা। মূলস্থ সজীবতার সন্ধানে, গহন মৃত্তিকায় আপনহারা।

বিরস পারিভ্রমণ

ভাস্কর সিন্হা

 

শুভাকাক্ষী হে, অতি বিরস এ চলা। কলাপত্রে পাত পেড়ে

দুই দলা কিছু জ্বালা। মদিরতার মোহ নেই যে সুলভ সুরায়-

আছে যা বিবশতায়, স্মৃতিবিবাগীতায় বা অন্তে রিক্ত বিবমিষায়।

স্বার্থকামী, স্বভূমে গগনব্য়াপী লালসার হোমযজ্ঞে নিঃস্বের আহূতি।

প্রোজ্জ্বল যেন শীর্ষে মুকুটখানি আর অপরিবর্তনীয় সুশ্রী

কর্মকুন্ঠ সেই সিংহাসনী। নিষ্প্রভ রিক্তের চকিত পশ্চিমা নিঃশ্বাস,

চতুর্দিকে হারায়ে গেছে যে কবে। ক্লেদাক্ত, মৃতপ্রায়, সর্বহারাগন উচ্ছিষ্টে খুঁজে

মরে যে জীয়নকাঠি। চার্চিলে হায়, আকাল কখনোই দেখে নাই কালাপানির পাড়ে।

 

কোন উপায়ে এই বাঁচা? সহজিয়া আলো, বাতাসে আর জলের সন্তরণে বাঁচা যে

অভিসম্পাতময়, পরিশ্রুতের সুদৃশ্য় বিপননে দীনচেতন গেছে যে হারায়ে।

ফুরিয়ে যেতে- যেতে, প্রান্তিক হতে- হতে, খামের রোগে মাথা কুটে মরা;

হয়তো বা মরিচঝাঁপির ছাউনিতে দুঃসহ এক দমবন্ধের দানবীয় লীলা।

জালিয়ানওয়ালাবাগ বলে যে, বা ইহুদিবস্তির নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ-

মানুষে- মানুষের সাংঘাতিক শত্রু এই শুধু নিশ্চিতরূপে বলা।

হিজিবিজি

ভাস্কর সিন্হা

 

সরস সবুজাভ ডালে ব্য়স্ত পাতার কারিকুরি,

ইষৎ সবুজ বোঁটায় হলুদ ব্য়াপ্তিতে মৌমাছির মধু চুম্বন।

বাউন্ডুলে সূর্যিজ্য়াঠা যবে পশ্চিমে দেবে পাড়ি, সধবার একাদশীতে

তবে চন্দ্রিমার ব্য়াকুলিত সম্ভাসন। সিক্ত জমির বীজে ফসল

দিয়েছে উঁকি, গোলাখানায় আজ আর নেইতো কিছুই ফাঁকি।

পেলব হস্ত ও শুভ্র শঙ্খগুলি যেন হর্ষিত কমল বনে, দূরাবাসে এসে

ক্ষনিকের স্মৃতিপটে অবিরল ছবি জন্মায় যে মনে। আবছায়ারা

খালি কথাই বলে ভোরের রাতে এসে। আধোভ্রমে, আধোঘুমে,

অধরা, নাধরা বাক্য়বুলি কোথায় হারায় যে হেসে। বেড়ার কোন গলে,

কার্নিসের ফাঁক পেলে, শীত ঘিরে আসে, শিশির ঝরে পড়ে সঙ্গোপনে।

ঘাসের বুকে নিম ফুলের সুঘ্রাণ, ইতি- উতি ঝরে পড়া, রহস্য়ের আবিলতা।

মিলিয়ে যায়, হারিয়ে যায় অজানা বুনো পথের মতো। চকিত ঝোড়ো

আবহাওয়ায় যদি ফিরে আসে কিছু হারানো বাস, ধূলিধূসর কিছু ব্য়থা। নিজস্ব

প্রাপ্তিযোগের স্মৃতি- সততই মেদুর। খুঁজে ফেরা যার রঙমশাল আর হারানো সুর।

চাঁদে জোছনার আলো

-     মিজানুর রহমান মিজান

নিত্যদিন ভোরে উদয় পূর্বাকাশে

ঘুম তাড়িয়ে আলোঝলমল বেশে

ছড়াও মিষ্টি রোদের আলো।।

দিনমান চলো হেঁটে হেঁটে

প্রখরতা কড়া কখনও বা মিটে

রাঙিয়ে আকাশ ভুবন ভালো।।

স্রোতের মতো গড়াও হাসি

হাঁটে মাঠে ঘাটে রাশি রাশি

সাজুগুজু নিপুণ ঝলোমলো।।

স্বপ্নময় ছবি আঁকো রাতদিন

ঘুমালে রাতে পৃথিবীর বাড়ে চিনচিন

সূর্যিমামা ফোটাও চাদে জোছনার আলো।।

সুহৃদ স্বজ্জনে

-   মিজানুর রহমান মিজান

 

বাবার কথা হলে স্মরণে

অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরে দু’নয়নে।।

বটবৃক্ষের ছায়া ছিলে জীবনে

হারিয়ে কাঁদি ঘুরি বনে বনে

খুঁজি আদর্শ অনন্যে।।

সরল সোজা পথ ছিল ধ্যানে

আঁকড়ে সে আদর্শ গেলে অবসানে

আছি মশগুল সর্বদা অনুকরণে।।

মানুষকে ভালবেসে আনন্দ দিলে গানে গানে

আজো ভক্ত অনুরাগী ভাবে নন্দনে

জান্নাত কামনা সাথে নিয়ে সুহৃদ স্বজ্জনে।।

ময় বন্দনা

নাজমুছ - ছায়াদাত ( সবুজ )

 

সময় কত সুন্দর।
সাবলীল তাঁর বিচরণ
বহমান নদীর মতো
সকাল থেকে সন্ধ্যা
টিক টিক টিক ।
বেজে চলে-
কারো মন মন্দিরে
কারো কর্ণ কুহরে।
কারো করোটিতে করে করাঘাত ।
সময় কেটে যায়-
সেকেন্ড মিনিট ঘণ্টায় ।
সময় পালায় ।
যখন তোমার অবয়বে আমি
ডুব সাঁতার খেলি ।
সময় হারায়
একটা ধুলো মাখা পথে ,
রোদ বৃষ্টি আর
কুয়াশার ধোঁয়ায় ।
একটা পায়ের ছাপ
তাঁর উপর আরেক টা,
এভাবে কাটে স্বপ্নদিন ।
একজন অপলক
জলজ চোখে ভাসে
তাঁর স্বপ্ন অতীত ।
আহা সময়
কত নিষ্ঠুর ভাবনাতিত ।
সময় ওহে,
তুমি কোমল তুমি কঠোর
কি বা বিশেষণ !
আপন সুরে বয়ে চল
ইহাই তোমার পণ ।

গল্পকথা

-  স্বরূপ মণ্ডল (বিবর্তন)

বাগডাঙ্গা, কান্দি, মুর্শিদাবাদ

 

আমি উদুম গায়ে দাঁড়িয়েছিলাম ঘাটের পাড়ে ।

ঘাটে কাপড় কাচছিল মা ।

বৈশাখ মাসের শেষ । ছুলু-বুলু জল ।

পুকুরের ওপারে চৌধুরীদের বাগান ।

কালো কুচকুচে রসালো বনজামগুলো ডাল-পাতাসহ নুইয়ে পড়েছিল জলের ওপর ।

যেন ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা খেলছিল ।

পাড়ার জো টি ছিল না; বাপ্‌ রে বাপ্‌, কি শাসন !

তোমার ভয় ছিল না মোটেই ।

ভুস্‌ করে একটা ডুবকি লাগিয়ে এক নিঃশ্বাসে চলে গেলে জাম গাছের তলায় ।

কেউ টেরটিও পেল না ।

ডাল-পাতা সমেত বনজামের থগা এনে বললে, “ এই নে নীলু খা,”

আমার যে কি আনন্দ হয়েছিল তা তোমায় কি বলবো !

 

সাত সকালে তুমি আর আমি রায়বাবুদের বাড়ি যেতাম সাবান-জল আনতে ।

পচা গন্ধে ম ম করতো বাড়িটা !

কেমন যেন গা ছমছমে ভাব ।

রায়েদের বাড়িতে তৈরি হতো কাপড় কাচা সাবান ।

আমরা বলতাম ‘বাটি সাবান’ ।

সার দিয়ে সাজানো থাকতো সাবানগুলো ।

কি যে ভাল লাগতো দেখতে !

কোনোদিনের তরে একটা সাবানও কিনি নি ।

তুমি বলতে, “ অনেক দাম !”

মোড়ল পাড়ার পচাকাকা কাজ করতো ওদের বাড়িতে ।

একটা নয়া পয়সা দিতে তুমি ।

চোঙে করে দু-চোঙ সাবান-জল ঢেলে দিত পচাকাকা ।

লম্বা একটা অ্যালুমিনিয়ামের কৌটায় করে নিয়ে এসে দিতাম মাকে ।

মা বলতো, “ এত কম কেন রে ?”

 

আমি তখনও ইস্কুলে যায় না ।

মাঝে-সাঝে বামুনদের ইতুপিসি সখ করে ইস্কুলে নিয়ে যেত আমায় ।

কত্ত ছেলেমেয়ে !

চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চি, বই-খাতা আরও কত কি !

সাদা্ ধবধবে ধুতি-পাঞ্জাবি পরা, লম্বাচওড়া, ছড়ি হাতে লোকগুলোকে দেখতে কি ভয় লাগতো !

 

সুয্যি তখন মাথা ছাড়িয়ে পশ্চিমে ঢলতে শুরু করেছে ।

তুমি ছুটতে ছুটতে বাড়ি এলে, হাতে পাউরুটির টুকরো ।

ইস্কুলের ঘর ঝাঁট দিয়ে দিয়েছিলে বলে সীমা দিদিমণি তোমায় বাড়তি দিয়েছিল ।

আমার হাতে দিয়ে বললে, “ নে খা নীলু,”

আমার আর আনন্দ ধরে না !

 

এই তো সেদিন পীরুকে বলছিলাম সেইসব কথা ।

ও কিছুতেই বিশ্বাস করলো না, ভাবলো মনগড়া গল্পকথা ।

সত্যির যে কোন অতীত-বর্তমান থাকে না ।

ও কি করে বুঝবে বলো ?

ডোবা

স্বরূপ মণ্ডল (বিবর্তন)

বাগডাঙ্গা, কান্দি, মুর্শিদাবাদ

 তোমার মনে পড়ে ?

আমাদের বাড়ির দক্ষিণদিকে একটা ডোবা ছিল ।

কি কুচকুচে কালো তার জল !

ডোবার চারধারে বাঁশঝাড় আর বিষকরমচার বাদার ।

তুমি ছিপ নিয়ে বসতে ডোবার পাড়ে ।

খলাৎ করে কই মাছ লাফাত ।

লোভ সামলাতে পারতে না তুমি ।

আমাকে ডেকে বলতে, “ নীলু, ক’টা পিঁপড়ের ডিম খুঁজে আনতে পারিস, কই মাছে খুব খায় !”

আমিও কাজ পেতাম ।

কাটা বাঁশের গুঁড়ির ওপর ঝুরঝুরে মাটির ঢিবী,

সেখানে ডোরা পিঁপড়ের বাসা ।

কত কামড়ই না খেয়েছি !

হাত-পা চিনচিন করতো ।

নারকেলের মালায় করে ডিমগুলো তোমার হাতে দিয়ে বলতাম, “ আর লাগবে ?”

তোমার দৃষ্টি তখন ফাতনার দিকে –

টপ টপ করে টিপচ্ছে ।

এক পলক চেয়ে বলতে, “ এতেই হবে ,”

 

বর্ষায় টাবটুব করতো ডোবাটা ।

উজানে ঘাট বেয়ে উঠে আসতো কই, মাগুর, শিঙি, শাল, শোল, চ্যাং, ছিমড়ি ।

একবার তোমায় মাগুর মাছে কাঁটা মেরেছিল পাউসে মাছ ধরতে গিয়ে ।

কি হনহনিয়ে জ্বর !

সারা রাত তোমার শিয়রে বসে আমি আর মা ।

খুব বকা খেয়েছিলে বাবার কাছে ।

 

আজ আর ডোবাটা নাই ।

নাই বাঁশবন, বিষকরমচার বাদার ।

সেখানে উঠেছে এক বহুতল ফ্ল্যাট-বাড়ি ।

তুমি থাকো পাঁচ-তলার ফ্ল্যাটে ।

মীরা আমার বৌঠান, পীরু আমার ভাইপো ।

সাজানো সংসার তোমার ।

জানো, আমি আজও খুঁজে বেড়াই সেই ডোবাটাকে

আর খুঁজি হারিয়ে যাওয়া তোমাকে ।

 

 

জীবন সমীকরণ

- সুস্মিতা দত্ত 

জীবনের সমীকরণ বদলে যায়,

ফলাফল কখনও ধনাত্মক,

কখনও কখনও বা ঋণাত্মক,

সরলীকরণ জটিল অঙ্কে দাঁড়ায়।

 

ভালবাসা হার মেনে যায়

ঊষর মরুর তপ্ত বালুকা বেলায়,

গোধূলির রঙ অসীম নীলে মিলায়,

পরিচিতি মহাশূণ্যে পথ হারায়,

দীর্ঘ বন্ধন খন্ডিত হয়

বজ্রাঘাতের অবিরাম তরঙ্গমালায়।

 

ইচ্ছেগুলো মহাসমুদ্রের অতলে তলায়,

নির্জনতা এসে করাল গ্রাস বসায়---

মৃতপ্রায় জীবন মরণের সীমানায়

হয়তো বা স্বপ্ন দেখে আলোর আশায়।

 

ভিক্ষে-পাত্র

-   প্রত্যুষা ব্যানার্জী চক্রবর্ত্তী (রিয়া)

খালি পেটে,বাটি হাতে,
বসে আছি ভর দুপুরে,
তোমার দিকে তাকিয়ে,
দুটো ভিক্ষের আশাতে;;

        তোমরা কবি অথবা লেখক,
         তোমরা অতীব ভদ্রলোক,
          অথবা তোমরা গায়ক,
         ভালোবাসার খাদক!!

একটু তাকাও রাস্তার দিকে,
একটু কিছু দাও পাত্রে,
অপচয় হল,ভাবলে,
তবু অজান্তে হাসি ফোটালে;;

         আমরা সমাজের ক্যানসার,
         অধিকার নেই ভালো থাকার,
         সময় নেই আমাদের কথা শোনার,
          দূরস্ত আমাদের নিয়ে লেখার!!

ভুল করে ফেলো একটুকরো,
একবার যদি পারো,
ভরবে ভিক্ষে-পাত্র,
তাতেই আমরা সন্তুষ্ট!!

(ছড়া) 

রান্না বুড়ি

 নাজমুছ- ছায়াদাত (সবুজ)

ছোট্ট বুড়ি টুনটুনি!

হ্যাচ্ছ!

কি, তুমি কি রাঁধছ ?

আদা,রসুন ঝাল বাটা ,

পেঁয়াজও দেখি কাটছ ।

ও মা আমার 

চোখ জ্বলে যায় ,

একি !তুমিও তো কাঁদছ ।

চুলার উপর তেলের কড়াই ,

দিছ তুমি মশলা চড়াই ---

কি? রুইয়ের মুড়ো রাঁধছ ।

হ্যাচ্ছ ।

হাঁড়িপাতিল গান ধরেছে

ঝনঝন নিয়ে বেজে ,

টুনি বুড়ি রাধছে তাই –

কোমর বেঁধে নিজে।

 

 

প্রেম সংক্রান্ত অধ্যায়

      নাজমুছ- ছায়াদাত ( সবুজ )

 

আমার প্রেম সংক্রান্ত

যে অধ্যায় টা ছিল,

জীবনে তা বোধ করি

পর্দার আড়ালে রয়ে যাবে ।

আসবে না হয় ত

একরাশ ভাল লাগার পরশ হয়ে –

পাদ প্রদীপের আলোয় ।

মায়ের সাথে ভালবাসার যে পর্ব,

তার অন্ত নেই

নেই সীমারেখা।

মাগো ভালবাসি ।

কত সুন্দর হয়ে গেলচা!

বা লেখা হয়ে গেল কলমের খোঁচায়।

শুধু বলা হয়নি-

বুকে জড়িয়ে ধরে

বা কোলে মাথা রেখে

কোন এক ফিনিক ফোঁটা জস্নায় ।

আফসোস! কত অভাগা এই আমি।

বুকের বা পাশে

এই মাত্র হাত রেখে অনুভূত হল-অচিন ব্যথা ।

চিৎকার করে কেউ যেন ডাকে ।

মা মা ।

 

তুমি বিষয়ক

- নাজমুছ- ছায়াদাত ( সবুজ )

 

প্রিয় একজন।

আমার অগোছালো

এই জীবনে সোনায় সোহাগা হয়ে

যে এসেছিল ,

আছে আমার সকল চেতনায়।

পাওয়া না পাওয়া

সব বেদনা বা সুখ,

অংশীদার শুধু সেই ।

নীরবে পথ চলা সেই মানুষটিকে,

এই বৃষ্টির দিনে

যদি বলতে পারতাম

কত ভালবাসি!

বলতে পারতাম

যদি তাকে অই হিমালয়

কিছু না আমার কাছে

তুমি শুধু আছ পাশে তাই।

সপ্নদিন তুমি লিখে রাখ

তোমার নীল মলাটের ডাইরিতে।

আর আমি মনে মনে রঙ মাখি

ছুটে যাই সুমদ্রে,

দুজনে হাত ধরে হাটি

ঢেউ গুলো তোমার পা ছুয়ে

সেকি হিল্লোলে মাতে।

আমি ভাবি।

মাঝে মাঝে তোমাকে আমি

লুকিয়ে দেখি,

তুমি সেটা জানবে না হয় ত বা।

কি মায়া ময় নিস্পাপ মুখ

তার এযে  স্বভাব- লাজুক,

জানিয়ে দিলাম এই বরষায়

লক্ষ বৃষ্টি ফোঁটায়-

অর্ধাঙ্গী  তুমি

আমার পূর্ণতা

ভালবাসি-ভালবেসে ঘুরে বেড়াও

আমার আঙিনায় ।

রবি ঠাকুর ও শিশুপাঠ
- আবু আফজাল সালেহ

চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
জন্ম নিয়ে রবি
দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বসভায়
সুনাম ছড়িয়ে কবি।
সুয়োরানি দুয়োরানি
বৃষ্টি টাপুর-টুপুর
শ্রাবণধারা বৃষ্টি ফোটায়
পানি ভরা পুকুর।
শিশুপাঠক নেচে বলে
'আজ আমাদের ছুটি'
নোভা-প্রভা অরুণ-বরুণ
হেসেই কুটিকুটি।
তাদের হাসি দেখে ব্যাঙে
ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ
খুশি হয়ে ইঁদুরছানা
খোঁজে সোনাব্যাঙ।

নতুন দুর্গা

- দীপান্বিতা গঙ্গোপাধ্যায়

 

আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে , সুয্যি ঢলে পড়ে

ক্লান্ত মুখে ওই মেয়েটা , একলা  ফেরে ঘরে।

পাগলা আকাশ মত্ত হাতি দস্যি দামাল ছেলে

বাজের শব্দে শহরের বুক উঠছে কেঁপে দুলে।

অকাল সন্ধ্যে নামিয়েছে কোন খুনীর হাতের ছুরি

জীবন যেন পথ হারিয়েছে  ভোকাট্টা এক ঘুড়ি।

 

শূন্য রাস্তায়ে বৃষ্টিরা কথা কয়

একটানা যেন বর্ষার বিউগল বেজে যায়

তবুও গাছেরা নিঝুম প্রহরী একা উদাসীন

সাক্ষী হয়ে থাকে একা মেয়ের অন্য এক কাহিনীর ।

 

থরে থরে হাতে তার তুলে দাও রণসম্ভার

অসুরের বুক ফুঁড়ে চালিয়ে দিও ত্রিশূল তার

বেদনার সানাই থামিয়ে জয়ের উল্লাস দাও ঠোঁটে

অকাল বোধনে ওই মেয়েটা যেন দুর্গা হয়ে ওঠে।

        আজ মহালয়া। একটু পরে শুরু হবে মহিষাসুরমর্দিনী । বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বরে। তারপরে টি ভি-র হরেক চ্যানেলে হরেক বেশে সজ্জিত হয়ে বিচিত্র দৃশ্যের অবতারণা করবেন হরেক অভিনেতা-অভিনেত্রী।

ক্ষেতুর দুয়ার

স্বরূপ মণ্ডল (বিবর্তন)

বাগডাঙ্গা, কান্দি, মুর্শিদাবাদ

ক্ষিতিবাবুর প্রকাণ্ড বাড়ী!

 

ঠিক যেন রাজপ্রাসাদ।

রাস্তার দিকে খোলা বারান্দা।

সবাই বলতাম ‘ক্ষেতুর দুয়ার’।

ছুটির দিন জলখাবার বেলা আমরা সবাই জড়ো হতাম সেখানে।

বারান্দায় ছক কেটে ষোলো ঘুটিং খেলতে তোমরা।

সোৎসাহে খেলা দেখতাম তোমাদের।

মিলুকে হারিয়ে দিতে তুমি।

মাথাটা ঝাঁকিয়ে নিয়ে আবার খেলতে বসতো ও।

এই বারে তোমায় হারাবেই। যেন ধনুক ভাঙা পণ!

বার কয়েক হারার পর সাধ মিটতো ওর।  

ইস্কুলের আশুবাবুর গলা নকল করতো কানুদা।

এমন কি মুখের ভঙ্গিটুকুও!

হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেত আমাদের।

মাঝে-সাঝে হাটুই বাড়ির রতিদাদা এসে বসতো বারান্দায়।

মজার মজার গল্প বলতো। আমরা সবাই মন দিয়ে ওর গল্প শুনতাম।

ভাতখাবার বেলা ডাক পড়তো আমাদের।

চান সেরে কোনোরকমে নাকে মুখে গুঁজেই দিতাম ছুট।

ওরই মধ্যে দু-চার জন এসে জুটত।

 

আমরা সবাই বারান্দায় বসে।

দুপুর বেলা। হাঁসফাঁসানি গরম।

হঠাৎ একটা মেঘ উঠল বাঁশবাদারের ওপার থেকে।

দেখতে দেখতে কালো মেঘে ছেয়ে গেল আকাশটা।

শন্‌শন্‌ বেগে উঠল ঝড়।

গাছগুলো ভেঙে পড়ছিল এ ওর ঘাড়ে।

মেঘের সে কি ললপানি!

চেয়ে দেখি তুমি নাই।

তুমি তখন চৌধুরীদের আমবাগানে।

গোপালভোগ আম কুড়াচ্ছো আপন মনে।

কি ডাকাবুকোই না ছিলে তুমি!

 

ক্ষিতিবাবু আজ আর নাই।

ক্ষেতুর দুয়ার আজ গ্রিল দেওয়া ঘেরা বারান্দা...  

সৌরভাভিলাষী

- ভাস্কর সিন্হা

সৌরভটুকুই থাক বলি।

যদি হয় এতটুকু উঁচা-

থেকে যায় বেশ কিছুদিন,

যদি হয় অবুঝ ক্ষীণ-

মিলিয়ে যে যায় কিছুক্ষণেই।

যাবই সে তো সত্য়-ই

         এ এক চরম নিদান।

         

শুধু মনে রাখা

                 এই চিত্রময়-

         মনপৃষ্ঠায় কিছু আঁকাজোকা;

গাঢ় তুলির টান, উজ্জ্বল রঙিন পরত

চকিতে আসে মনে, ক্ষণে

কিছু রয়ে বসে বিবর্ণ, ধূলিময়,

অনাবিল এক ভুলিমনে।

শাল সেগুন মেহগনি
- শক্তিপ্রসাদ ঘোষ,রবীন্দ্রনগর,নিউটাউন,কোচবিহার


শাল সেগুন মেহগনি
হাতে হাত
ছায়ার মাদুর পাতা
ফুটে আছে খুকি ফুল
পড়ে কানের দুল
কমলাবাগান রমণী 
চেংমাড়ীর চেংম্যান
ডুব দেয় চা বাগান 
পাহাড়ের গান শোনা যায়
ঝিঁঝিঁ ডাক,টুপটাপ
ধান বোনে বৃষ্টি
ছুপছাপ খলখল
ছিপ হাতে রায়ডাক 
দেয় ডাক দেয় ডাক.....
কৃষ্ণকলি  মেয়েটার
 বুক কাঁপা হয় শুরু 
বিহুগান দুরুদুরু। 

 

 

সন্তান  

-সাত্যকি, বারাসাত, উঃ চব্বিশ পরগণা 

মা চলে গেছে

অনাথ পড়ে আছে সন্তান

ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে

গায়ের জামা ছেঁড়া মাদুর

ছড়ানো খই নিয়ে খেলে আর

পিঁপড়ের ডিমের মতো খুঁটে খায়

আরো কালো হয়ে যাচ্ছে গায়ের রঙ

সামনে থালা শুকনো চাল গম ছিটিয়ে

দেখে অভুক্ত সন্তান

কর্মহীনতায় আগুন জব্লে না চুলায়

পেটে ধিকিধিকি

অগ্ন্যাশয় থেকে ঝরে আগ্নেয়গিরির লাভা

হাত-পা মুষ্টিবদ্ধ করতে চেয়েও

নাগালে আসে না সব কঞ্চির মতো আঙুল

শুকনো ঠোঁট মাথায় উষ্কখুষ্ক বাদামি চুল

চোয়ালে কালো কান্নাজলের দাগ

পশ্চিম সূর্যের আলোয়

হাত পায়ের ছাপ পড়া মাটিতে

ওঠে অস্পষ্ট রক্তিম বিরোধের সুর

ছন্নছাড়ার  ছিন্নছড়া 

-  দিলীপ মজুমদার, পর্ণশ্রী,কলকাতা 

 

১.

স্পর্শকাতরতা ঢাকে চুল্লির আগুন

প্রেম-প্রীতি-আবেগাদি হয়ে যায় খুন

২.

ইগো খুব ছেলেটির ইগো ধুয়ে খায়

এ ইগোই করে তোলে তাকে নিঃসহায়

৩.

নিউরো সার্জারির ফলে ভ্রষ্ট হল স্মৃতি

সদানন্দ সে এখন বেদনা-বিস্মৃতি

৪.

নীতি নেই নেতা আছে নির্বাক জনতা

বাচাল ভাঁড়েরা শুধু করে কথকতা

৫.

হৃদয়ে পচন ধরলে সার্থক মানুষ

বৃত্তের বাইরে তার নেই কোন হুঁশ

৬.

রামনাম পুঁজি করে নামো পথে ভাই

সে জাদুতে ভুলে যাবে কলকাতা মুম্বাই

৭.

লতা-পাতা গাছ-পালা বিষম জঞ্জাল

অথচ এসব ছাড়া আসে রুদ্রকাল

৮.

গোমাতার মাংস খায় কোন নরাধম

বরং মনুষ্যমাংস অতীব উত্তম

৯.

চাহিদার শেষ নেই ব্যাপ্ত চরাচরে

ছিন্ন হই ভিন্ন হই তারই তো নখরে

১০.

নোটবন্দি জিন্দাবাদ ভোটবন্দি তাই

তাহলে কোথায় যাবে জগাই-মাধাই

১১.

নাম-না-জানা মানুষটিকে নমস্কার

ধরে দেখি হাতটি বড়ো উষ্ম তার

১২.

শ্রেণিসংগ্রামের ধার তেমনটা নেই

কোথায় কেমন করে হারাল যে খেই 

১৩.

সিরিয়ালগুলো সব দ্রৌপদীর শাড়ি

শেষ হয়ে শুরু হয় সাত তাড়াতাড়ি

১৪.

ফেসবুকে হোটাস-আ্যপে নিমগ্ন হৃদয়

চুরি হয়ে যায় তার আত্মপরিচয়

১৫.

মহানাগরিক হল মহান নাগর

কে-ই বা হিসেব রাখে কে আপন-পর

বিজ্ঞান নাকি বিজ্ঞাপন

-অনিকেত

 

রক্তিম সূর্যের সদরে

মাথা নত করে সকলে, কিন্তু

আঁধারে ত্রস্ত্র রাধাপদ্ম লড়ে যায়

হার মানায় তীক্ষ রশ্মির বর্শাকে¦

 

ঠিক তেমনই শুনেছি নাকি,

বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের কুটুম্বিতা¦

ধর্ম চায় আকাশ ছুঁতে,

বিজ্ঞানের ধ্বজা ভেঙে,

হয়তো জিতে যাবে..

যুগতো এখন বিজ্ঞানের নয়,

যুগ বিজ্ঞাপনের¦¦

ফিউশন কবিতা বা  স্বপ্ন লোকে উজ্জয়িনী পুরে

- শ্রী রণেশ চন্দ্র মজুমদার
( রবীন্দ্রনাথের “ স্বপ্ন” কবিতাটির কয়েকটি ভাঙা লাইনের সঙ্গে আমার  লেখা কয়েকটা লাইন ফিউশন করে বাঙলা ফিউশন কবিতা ধারায় আমি বাল্মিকী হলাম ।আশাকরি সদ্য প্রয়াত কালিকা প্রসাদের মনগড়া ফিউশন মিউজিকের মতই , উপযুক্ত দক্ষিণা পেলে , আমার মনগড়া ফিউশন কবিতাদিয়ে  বাঙলা বিনোদন মঞ্চে মাতন তুলতে পারবো । পরীক্ষা প্রার্থনীয় ।)


মোরে হেরি প্রিয়া   
ধীরে ধীরে স্বর্ণদীপ দ্বারে নামাইয়া 
আইল সম্মুখে, মোর স্কন্ধে হস্ত রাখি।
শুধালো, আসবারক্ত ঘূর্ণ্যমান আঁখি ।।
“হে মিন্সে, এনেছো কড়ি ?”তার পানে চাহি।
কথা কহিবারে গেনু, কথা আর নাহি।।
“এবারো ভুলিয়া গেছি”  অস্ফুটে কহিনু ।
বঁধুয়ার মুষ্ট্যাঘাতে জর্জরিত তনু।।
রক্তাম্বর আধেক ছিঁড়িয়া ।
তোরণের স্তম্ভে মোরে ফেলিল বাঁধিয়া।।
পূতিগন্ধী, শ্রুতি কটু গাল দিতে দিতে ।

পলাশের শাখাধরে সুকঠোর হাতে।।
“সপাসপ সপাসপ, ”চাহি ধনি পানে ।

অঝোরে ঝরানু অশ্রু, নিষ্পন্দ নয়ানে।।
পলাশের শাখার প্রহারে।

ত্যাগ করিলাম প্রেম চিরকাল তরে।।
দূরে, অতিদূরে, কল্পলোকে রেবা নদী তীরে ।
খুঁজিতে যাবো না কভু ।

কোন জনমের কোনো প্রেয়সীরে।

রক্তচক্ষু
- সন্দীপ ঘোষ

রক্তচক্ষু মুদিলে ক্ষণিক 
শান্তি একটু শান্তনীড়ে |
    মুদিত নয়নে ভাবিয়া ভাবিয়া সারা,
বিনাকবচে কবে লুটাইয়া দিবে উন্মত্ত   কালবৈশাখী ঝড়ে |

আসিছে উত্সব, দেখিছে জনতা, 
কি হয় ! কি হয় ! কি হয় !
প্রকৃতির মাঝে খাদ্য খুঁজিয়া মরে,
না-- আজ আর হয়রান নয় |

আসিছে উত্সব, আসিছে উত্সব---
তন্ত্রে তন্ত্রে হইতেছে ধ্বনি,
সঠিক ঠিকানায় পৌঁছিয়া যাইবে 
              অনেকেই তাহা জানে |

অভিনব ভাবনার নাই কোন শেষ,
       কলিকালে  আছে তা যে,
নিশানা ঠিকানা নিশানায়
             হইলে অনুর্ত্তীন,
রক্তচক্ষুর দহনে পুড়িবে ঘিলু---
        ঘিলু আর রহিবে না মগজে |

স্মৃতিসুধা

ভাস্কর সিন্হা

 

তালডিংলি পেরিয়ে, ময়নাগুড়ি এড়িয়ে, তিস্তাপাড়ের মংপোতে

হয় দেখা। ইল্শেগুড়ির মতো বৃষ্টি ছিলো সেসময়। মূর্তির জলে

মিলিয়ে যখন যায় চাপরামারি আর গোরুমারার আরণ্য়িক কুহকতা।

হাজারো পক্ষীর ঐক্য়তানের আবেশ, মনভরা রঙ্গিন সে উচ্ছ্বাস।

টিক, শাল, শিমূল, শিরীষ আর খয়েরের উদ্দামতা পেরিয়ে,

বিষহারা পালায় রাজবংশী নৃত্য় শেষে, মাগুরমারির করমে।

বন্য়েরা বনেই আনন্দিত, দেখতে দেখতেই দামাল ঐরাবতে বস্কাদ্বার

যায় যে পেরিয়ে। চালসা- খুনিয়া- ঝালং পথে বিন্দুপ্রান্তে সিন্ধুমাখা

কাঞ্চনজঙ্ঘা। পুণ্য়ব্রতা তোর্সায় অবগাহনে সিদ্ধপ্রাণা। চায়ের মেজাজী

আবেশ বয়ে চলে ভিজে, শীতে মোড়া ইংরেজী বাংলোয়। প্রথম প্রেম

শুরুর পথে- প্রথম কর্মে আসা, এইস্থানেই। ভোলার নয় লখুয়ার

শীতের ক্ষণেক রোদে নিস্পাপ সেই হাসি। কেবল সাহেবের জুতাছাপ

শুকিয়ে যায় যে তার পিঠে। আর নাম না জানা এক সুবেশী নেপালী গুড়িয়ার

উচ্চকিত হাস্য় খালি ডানা ঝাপটে নামে সমতলের মেদুর পথে।

 

সাঁঝের পলাশ

ভাস্কর সিন্হা

 

ফুটপাত জুড়ে ঝেঁপে নামে সাঁঝ, আঁধার

ঘিরে ধরে দিবালোকের গ্লানি। টিমটিমি জ্বলে

তারাবৎ কিছু বাতি। দগ্ধোদর কৈশোরের জ্বলৎ

স্বপ্ন মিশে যায় কুয়াশায়, পোড়া ছাই ছন্নছাড়া

দিগ্বিদিকে, যেদিকে খুশী- হাওয়ায় ঘুড্ডি ওড়া।

কিছু দলা ভস্ম জেদী, আঁকড়ে থাকে যেন

পুঁটুলির পাশে। দুদিনের এই রাগ, ক্রোধ, আবেগ 

প্রশমিত যবে রমনে, লোভে, হীনতায়- সাধারন মানে।

 

দুহাতে কুশ্রীতা মেখেছি কতো? জানে কি এক ভারতেই

শত কোটি ভারত? নিরন্নের, বাদীর- বিবাদীর, জাতির- বেজাতের,

ধর্মের- অধর্মের, উচ্চ- নীচের, ভাবের- অভাবের, দুঃখের- সুখের-

কারে ছাড়ি- কারে যে ধরি? হায় রে, সব যে বসে আপনার সনে।

কখনো নিজের তরে তোমারে মানিনি। ছিনিয়ে নিয়েছি-

যত কুরুবিন্দ, ফিরাই দিয়াছি তব শুধু কুরব আর কুরন্ড।

***

Please mention the "name of the articles and the authors" you would like to comment in the following box... Thank you.

bottom of page